আমার বর,পর্ব:০৩
লেখা : মিশু মনি
তন্ময়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রান্নাঘরে এলাম।
মা অনেক নিষেধ করার পরও রান্নার কাজে যোগ দিলাম। কিছুই ভালো লাগছিল না।মনটাকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
রান্নাঘরের কোথায় কি রাখা আছে মা সব বুঝিয়ে দিলেন। আমি উতসাহের সাথে রান্না করতে লাগলাম।
.
ছোটবেলা থেকেই শখের বশে রান্না শিখেছি মায়ের কাছে।রান্নার অভ্যাস আছে।নতুন বাড়িতে এসেও সহজেই মানিয়ে নিয়ে রান্না করতে লাগলাম।
এ বাড়িতে মা বাবা ও তন্ময় ছাড়া আর কেউ থাকেনা।একজন কাজের মহিলা আছে যিনি রোজ এসে কাজ শেষ করে বাসায় চলে যান।বিয়ে উপলক্ষে কয়েকজন আত্মীয় এসেছেন। উনারা দুপুরের খাবার খেয়েই চলে যাবেন।
.
রান্না শেষ করে সবাই মিলে একসাথে বসে খেলাম।তন্ময় আমার পাশেই বসেছিল। সকলেই রান্নার অনেক প্রশংসা করলেও তন্ময় চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেল।
.
আত্মীয় গণ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বাড়ি একদম শুন্য শুন্য লাগছে।
.
রুমে এসে দেখি তন্ময় সাজগোজ করছে।কিন্তু একটা গু কালার শার্ট পড়েছে। একদম ই ভালো দেখাচ্ছে না।
বললাম,কোথাও যাচ্ছেন?
– হুম।বাইরে যাবো একটু।
– কিন্তু গু কালার শার্ট পড়েছেন কেন?আপনাকে মানায়নি একদম।
– কি কালার বললা?
– গু কালার
– এই নামে কোনো কালার আছে বলে তো জানা ছিল না।
– হুম।এই হলুদের মত রঙ টাকে গু কালার বলা হয়।আপনি জানেন না?
– নাহ।তোমার কাছে কত কিছুই জানলাম। আমিতো ভাবছিলাম তোমার রান্না কেউ খেতেও পারবে না।কিন্তু তুমি তো দেখছি পাক্কা রাঁধুনি।
আমি হেসে বললাম,থ্যাংকস।
.
তন্ময় আকাশী রঙের টিশার্ট পরে এসে বলল,এইবার ঠিক আছে?
– হ্যা।
– বাবাহ! কি নাম,গু কালার!
বলেই হাসতে লাগল।
তারপর বলল,আমার মোবাইল টা দ্যাখো তো।
– কেন?
– আম্মু বলেছে তোমাকে একটা ভালো iphone কিনে দিতে।আমার টাই নিবা নাকি নতুন কিনে দিবো?
– আমার ফোন লাগবে না।
– ফোন রেখে যাচ্ছি।দেখো, ভালো লাগলে এটাই নিও।আর ফ্রিজে ভ্যানিলা আইসক্রিম আছে।আব্বু আম্মুর দিকে খেয়াল রেখো। আসি।
তন্ময় বেড়িয়ে গেল।আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি! এত সুন্দর আমার বর টা! কত ভালো একটা মানুষ! কিন্তু মাঝেমাঝে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ও যাই বলুক,বিয়ে যখন হয়েই গেছে আলাদা হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা।আলাদা হওয়ার জন্য কেউ বিয়ে করেনা।যদি আলাদাই হবে,তাহলে ও বিয়ে করত না।যত কষ্টই হোক,সম্পর্ক টাকে টিকিয়ে রাখতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
.
ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
ঘুম থেকে উঠে মা বাবাকে চা করে দিলাম।
মা বললেন, কয়েকটা কথা বলব মা?
– হ্যা মা বলুন।
– মন দিয়ে শোনো।তন্ময় একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করে সেটা আমরা জানি।মেয়েটাকে আমি দেখেছি,কথা বলেছি।কিন্তু ওই মেয়ের সাথে বিয়ে হলে বেশিদিন সম্পর্ক টিকত না।কারণ সব মেয়েরা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেনা।সব কষ্ট সহ্য করে একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অনেক কষ্টের।আর তন্ময়ের বাবা অনেক গরীব ছিলো। আমরা দুজন মিলে আজ এতদূর আসতে পেরেছি শুধুমাত্র নিজেদের চেষ্টায়।আমার এত কষ্টের সংসার টাকে কি করে নষ্ট হতে দেই বলো?
আমি চুপ করে শুনছি মায়ের কথা।মা আবারো বলতে শুরু করলেন, দেখো সুন্দর হলেই হয়না,মানসিকতা ভালো হতে হয়।সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়।আমরা তোমার কথা,আচরণ দেখেই বুঝেছি তুমি সংসারী মেয়ে।সব দায়িত্ব তোমার হাতে দিচ্ছি।সামলে রেখো। আমরা দুজন দোয়া করব শুধু।
মায়ের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।এত সুন্দর করে কথা বলতে পারেন! আমি অনেক তপস্যা করলেও হয়ত এত সুন্দর করে কথা বলে কাউকে বোঝাতে পারবো না।
মা বললেন, তন্ময় খুব রাগী। আর একটু পাগল পাগল। ও একবার রাগ হলে আরেকবার খুব যত্ন করবে।তুমি কষ্ট পেও না।ভরসা রাখো।
আমি মায়ের কোলে মাথা রাখলাম। আমার নিজের মা মনে হচ্ছে।আল্লাহ যা করেন,ভালোর জন্যই করেন। তন্ময় সম্পর্ক রাখুক বা না রাখুক, আমি মা বাবাকে ছাড়বো না।
চোখে পানি এসে যাচ্ছে।
.
তন্ময় রাতে বাসায় ফিরল।
আমাকে দেখে বলল,কেমন আছো?
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। এটা কেমন প্রশ্ন!
– কেন? কেমন আছো জিজ্ঞেস করতে পারিনা?
– হ্যা।খুব ভালো আছি।
– আমার মোবাইল টা কই?
– ওটার কথা মনেই ছিলনা।যেখানে রেখে গেছেন সেখানেই আছে।
তন্ময় মোবাইল নিয়ে শুয়ে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, খাবেন না?
– না।
– খেয়ে এসেছেন?
– না।খেতে ইচ্ছে করছে না।
কয়েকবার খাওয়ার জন্য জোর করতেই ও রেগে গেল- বউ হয়েছ বলে সব ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবা না।
আমি চুপ করে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর তন্ময় নিজেই বলল,চলো খেতে দাও।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। ছেলেটা কখন কি রুপ ধারণ করে বুঝতে পারছি না।তন্ময়কে বুঝতে পারা অনেক কঠিন!
.
খাবার শেষ করে মা বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমাতে আসলাম।
তন্ময় বলল,প্রতিদিন কি এই ঘরেই ঘুমাবা?
– মানে? আমি কোথায় যাবো ঘুমাতে?
– এত বড় বাড়িতে ঘুমানোর জায়গার অভাব হবেনা।আব্বু আম্মু চলে গেলে আলাদা ঘুমাব।
– এখন কি একসাথে ঘুমাচ্ছি?
তন্ময় হাসল।আমি লজ্জা পেয়ে চুপ করে আছি।
.
ও ফেসবুকে ব্যস্ত।কিন্তু আমি কি করবো? আমার তো ঘুম আসছে না।
কিছুক্ষণ পর তন্ময় বলল,কি কি খেলতে পারো তুমি?
– ক্লাস অফ ক্লান,কার রেসিং,ভাইস সিটি…
– এগুলা না।তাস,লুডু,ক্যারম,দাবা?
– সবগুলাই পারি।কেন?
– wow! great!
তন্ময় উঠে তাস নিয়ে আসল।আমার হাসি পেল।
অনেক্ষন দুজনে বিছানার উপর বসে তাস খেলছি।
ও বলল,আব্বু আম্মু জানতে পারলে খুব বকবে।
– কেন? আমরা তো জুয়া খেলছি না।তাস খেললে কি হবে?
– খেলায় তো বেশ পটু দেখছি!
– হুম।সব গুনই আছে।
– সব গুনই আছে।শুধু হাইটে খাটো।
আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল।খেলার মুড টাই নষ্ট হয়ে গেল।চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম।
চলবে