প্রেমময়_প্রদীপ #পর্ব_৭

0
800

#প্রেমময়_প্রদীপ
#পর্ব_৭
Saji Afroz

.
সাফার দরজায় নক করে সামিনা রশিদ দরজা খুলতে বললেন । তাড়াহুড়ো করে প্রেমকে প্রদীপের মাঝে ঢুকিয়ে দরজাটা খুললো সাফা ।
সামিনা রশিদ তার দিকে মোবাইলটি এগিয়ে দিয়ে বললেন-
ডাইনিং টেবিলের উপরে রেখে এসেছিস এটা । ফোন এসেছিল ।
-ওহ, দাও ।
.
সামিনা রশিদ যেতেই সাফা মোবাইল চেক করে দেখলো, তাইফের ফোন এসেছে দুবার ।
এই সময়ে তাইফ ফোন কেনো দিলো?
ভাবতে ভাবতেই কল ব্যাক করলো সাফা ।
তাইফ ফোন রিসিভ করতেই সে বলল-
এত রাতে ফোন দিলে কেনো?
-দশটায় বুঝি এত রাত হয়?
-বাবাহ! উল্টো প্রশ্নও করতে জানো তুমি?
-আসলে তোমাকে আজ কলেজেও বলতে চেয়েছি একটা কথা, সাহস হয়নি ।
-ভালোবাসার কথা শোনার মুড আমার নেই এখন ।
-ভালোবাসার কথা নয় ।
-তবে?
-কাল আমার জন্মদিন । কাল তোমাদের লাঞ্চ করাতে চাচ্ছিলাম ।
-আমাদের বলতে ?
-তুমি, রাইমা, তমাল, শফিকুল । ওরা রাজি হয়েছে ৷ তুমিও প্লিজ না করোনা । কলেজের পাশেই কোনো রেস্টুরেন্টে বসবো আমরা । প্লিজ?
.
খানিকক্ষণ ভেবে সাফা বলল-
ওকে । কাল দেখা হবে ।
.
ফোন রেখে প্রদীপ ঘষতেই প্রেম বের হয়ে এলো । সে জানতে চায়লো সাফার দ্বিতীয় ইচ্ছে কি ।
সাফা বলল-
কাল তাইফের জন্মদিনে যাওয়া ।
-আচ্ছা নিয়ে যাব ।
-ও হ্যালো? আপনার নেয়ার দরকার নেই । সে আমি নিজেই যেতে পারব ।
-আমি ভেবেছি এটা আমাকে বলে ইচ্ছে পূরণ করতে চায়ছেন ।
-আপনি যদি আমাকে একশোটা ইচ্ছে পূরণের সুযোগ দিতেন, তবে নিশ্চয় বলতাম ।
.
সাফার কথা শুনে হেসে ফেলল প্রেম ।
সাফা সেদিকে লক্ষ্য না করে, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো । প্রেমের মুখে হাসি দেখলে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে ।
.
প্রেম বলল-
তাইফ টা কে? বন্ধু?
-নাহ তবে আমার ক্লাসেই পড়ে । আমাকে পছন্দ করে ।
-আপনি করেন?
-নাহ ।
-সে জানে?
-না ।
-জানান নি কেনো?
-সে যদি জানতে পারে আমি তাকে ভালোবাসি না, তবে সে আমার পেছনে আর ঘুরঘুর করবে না ।
-ছেলেদের পেছনে ঘুরাতে ভালো লাগে?
-হুম । অনেক কাজে লাগানো যায় এসব ছেলেদের ।
-মানুষের ফিলিংস নিয়ে খেলা ঠিক নয় ম্যাডাম । সে হয়তো আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন সাজাচ্ছে ।
যখন সে সত্যিটা জানবে, এক নিমিষেই আশা ভঙ্গ হবে তার । আপনি ভালো না বাসলেও সেতো বেসেছে । সত্যিটা জেনে সে কি তখন সহ্য করতে পারবে এসব?
.
প্রেমের কথা শুনে সাফার কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো । এভাবে কখনো ভেবে দেখেনি সে ।
তাইফ শান্তশিষ্ট একটা ছেলে । তার সাথে এসব করা সাফার উচিত হচ্ছেনা ।
.
প্রেম বলল-
কি ভাবছেন ম্যাডাম?
.
প্রেমের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো সাফা ।
.
সে বলল-
তাইফ কে সত্যিটা জানিয়ে দিব ।
-তাই করুন ।
-কাল ওর জন্মদিন । কালই জানাব । সত্যিটা জানায় হবে, ওর জন্য বেস্ট গিফট ।
-এবার আপনার দ্বিতীয় ইচ্ছে বলুন ।
-এখন কোনো ইচ্ছে পূরণ করতেই ইচ্ছে করছেনা । কাল তাইফকে সব জানানোর পরই আমি শান্তি পাব ।
-তবে গল্প করা যাক?
-মন্দ হয়না ।
.
.
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো সাফার ।
ঘুম থেকে উঠেই ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো, আজ অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে ।
প্রেমের সাথে গল্প করতে করতে কখন যে চোখটা লেগে এসেছে টের পায়নি সে ।
তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লো সাফা । ফ্রেশ হয়ে কলেজের ড্রেস পরে বেরিয়ে আসতেই প্রেমকে খুঁজতে লাগলো সে ।
যতটুকু মনে আছে, প্রদীপ ঘষেনি সে আর । তার পাশেই থাকার কথা প্রেম । তবে গেল কোথায় সে!
ওয়ারড্রবের উপরে চোখ পড়তেই হেসে ফেললো সাফা । সেখানেই প্রেম পরম আবেশে ঘুমোচ্ছে । প্রেমের ঘুমটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করলো না সাফার ।
খাটের নিচে প্রদীপটা রেখে বেরিয়ে পড়লো সে ।
.
.
আরো একটা ক্লাস বাকি আছে সাফাদের । এরইমাঝে তাইফ এসে তাদের রেস্টুরেন্ট যাওয়ার জন্য ডাকলো । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সবাই তাইফের সাথে কলেজের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আসলো ।
ছোটখাটো হলেও আশেপাশের পরিবেশটা অনেক সুন্দর রেস্টুরেন্টটির ।
একটি গোল টেবিলে বসলো সকলে ।
সাফার মন আকুপাকু করছে তাইফকে সত্যিটা জানানোর জন্য । কিন্তু কিভাবে শুরু করবে সে বুঝতে পারছেনা । আর সকলের সামনে বলাটাও কি ঠিক হবে?
এসব ভাবতে লাগলো সাফা ।
খাবারের অর্ডার শেষে তাইফ হুট করেই একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বসলো ।
একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে, সাফার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল-
অনেক কষ্টে জেনেছি তোমার পছন্দের ফুল রজনীগন্ধা । অনেকটা সাহস জুগিয়ে তোমাকে বলছি সাফা, আমি ভালোবাসি তোমাকে । তুমি আমাকে ভালোবাসো এটি জানিয়ে, জন্মদিনের বেস্ট গিফট টা দিয়ে দাও আমায় ।
.
তাইফকে নতুন রূপে দেখে
বন্ধুবান্ধবরা হাততালি দিলেও সাফা কি করবে বুঝতে পারলোনা ।
সে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল-
তাইফ তুমি উঠে বসো ।
-আগে বলো ভালোবাসো কিনা?
-চারপাশে সবাই দেখছে । পরিচিত কেউ থাকতে পারে । প্লিজ উঠো ।
.
তাইফ উঠতেই সাফা বলল-
আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি ।
.
সাফা হনহনিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো । প্রেম ঠিকই বলেছে, সে আসলেই তাইফের সাথে এসব করে ভুল করেছে । ছেলেটার জন্মদিনের দিন এসব বলে এখন কষ্ট দিবে কি করে সে!
.
.
সাফা যেতেই শফিকুল বলল-
সাফার মতো মেয়েও লজ্জা পায়! আসলেই লজ্জা নারীর ভূষণ ।
.
তাইফ বলল-
সাফা কি লজ্জা পেয়েছে?
-তাই তো ও ওয়াশরুমে ছুটে গিয়েছে । তুই এটাও বুঝলি না পাগল!
.
তাইফের মুখ দেখে হেসে উঠলো সকলে । হাসির কারণটা বুঝতে পারলো না সে ।
হঠাৎ তারা চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলো । কি হয়েছে দেখার জন্য পেছনে তাকাতেই চমকে উঠলো তারা ।
কিচেন রুমে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে দেখে ঘাবড়ে গেল সকলে ।
রেস্টুরেন্টে যারা ছিল সবাই ছুটাছুটি করে বেরিয়ে যেতে লাগলো ।
.
শফিকুল সবার উদ্দেশ্যে বলল-
হা করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস! চল চল বেরিয়ে পড়ি সবাই ।
.
বাইরে বেরিয়ে এসে হাঁপাতে লাগলো তারা । হঠাৎ তনিমা চেঁচিয়ে বলে উঠল-
সাফা ভেতরে!
.
সাফার কথা মনে পড়তেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো তারা ।
আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যেতে লাগলো দেখে শফিকুল বলল-
কিছুই করার নেই এখন!
.
রাইমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল-
কিচের রুমের পাশেই ওয়াশরুম । সাফা ঠিক আছে তো?
.
এদিকে সাফা ওয়াশরুম থেকে বেরুতে চায়লে আগুন দেখে আঁতকে উঠল । বেরুনোর কোনো উপায় না পেয়ে দরজা আঁটকে দিলো সে । চেঁচামেচি করেও কারো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়লো সাফা ।
ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে তার ।
তার চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরতে লাগলো ।
কি করবে ভাবতে ভাবতে প্রেমের কথা মনে পড়তেই, মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো তার । প্রেমই পারে তাকে এখান থেকে উদ্ধার করতে ৷
.
চোখ বন্ধ করে সে বলল-
প্রেম আমি বাঁচতে চাই, আর এটাই আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে!
.
কথাটি বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সাফা ।
.
.
ফায়ারসার্ভিস এখনো এসে পৌঁছায়নি ।
এদিকে সাফার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে তার বন্ধুরা । তনিমা বেশ কয়েকবার ভেতরে যেতে চায়লেও তাকে আটকালো সকলে ।
তাইফ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অসহায় এর মতো তাকিয়ে আছে রেস্টুরেন্টটির দিকে ।
হঠাৎ তার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো ।
সে হেঁটে রেস্টুরেন্টটির পেছন দিকটায় চলে এলো।
এদিকটা ফাঁকা থাকে ।
তার পিছুপিছু বাকিরাও এলো ।
.
তাইফ বলল-
তোরা প্লিজ যা । আমার ভালো লাগছেনা কিছু ।
সাফাকে ছেড়ে কিভাবে চলে এলাম আমি! একটাবারও ওর কথা মনে পড়েনি আমার ।
.
শফিকুল তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল-
শান্ত হো তাইফ ।
-পারছিনা হতে । তোরা যা ।
একটু একা থাকতে চাই আমি ।
..
তাইফকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো সবাই ।
হঠাৎ তারা দেখলো, রেস্টুরেন্টের পেছন দিক থেকে হাওয়ায় ভেসে আসছে সাফা, অজ্ঞান অবস্থায় ।
সাফাকে দেখে খুশি হবার বদলে সবাই বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেল । তনিমা ও রাইমা চোখ জোড়া কচলিয়ে আবারো তাকালো সেদিকে । সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ।
নাহ, তারা ভুল দেখছেনা ।
সাফা হাওয়ায় ভাসছে, এটা কিভাবে সম্ভব!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here