#তবুও
পর্ব- ০৪ (শেষ)
লেখা: #ত্রয়ী_আনআমতা
রাগীব যেদিন আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে সেদিন আমি বাসায় ছিলাম না।
প্রায় একমাস পর নিজে থেকে মিলি আমাকে ফোন করেছিল সেদিন। ফোনে শুধু একটা কথাই বলে ও। বিকেলে ওর সঙ্গে দেখা করতে। ওর মুখোমুখি হতে ভয় করছিলো আমার। তার চাইতেও বেশি অনুভব হচ্ছিল বুকে একরাশ বেদনা। আমি যদি একদম শুরুতেই ওকে সব বলে দিতাম তাহলে হয়তো ওর কষ্টটা আরেকটু কম হতো! রাগীবের প্রতি ওর ভালোবাসাটা হয়তো এতটা প্রগাঢ় হতো না! হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণাও পোহাতে হতো না!
সব দ্বিধা-দ্বন্দ, ভয়, কষ্ট ঝেড়ে ফেলে বিকেলে ওর সঙ্গে দেখা করতে বেরোই। আমি যাবার পরপরই রাগীব নিজের মাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে।
ক্যাফেতে পৌছোতেই দেখি মিলি আগেই এসে পড়েছে। একটা চেয়ার টেনে ওর বরাবর বসতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। যেন কিছুই হয়নি। বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলল,
‘কেমন আছিস?’
আমি স্তম্ভিত হয়ে ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে ভুলে গেলাম। হঠাৎ আজ এত স্বাভাবিক কী করে মিলি?
বললাম, ‘ভালো। আমি জানি তুই ভালো নেই। তাই আর জিজ্ঞেস করলাম না।’
মিলি ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কে বলল আমি ভালো নেই?’
‘কারো বলতে হবে কেন! তোর মনের প্রত্যেকটা অলিগলির খবর আমার জানা। আফটার অল, তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড! ‘
মিলি খানিকটা বিদ্রুপ করে হাসলো। ‘সত্যিই কি তাই?’
‘মানে?’
‘মানে সত্যিই কি আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড? ‘
‘অবশ্যই! কেন এবিষয়ে তোর কি কোনো সন্দেহ আছে?’
আচমকা মিলি সিরিয়াস হয়ে গেল। ‘সন্দেহ তো অবশ্যই আছে! আমি যদি সত্যিই তোর বেস্টফ্রেন্ড হয়ে থাকি তাহলে এত লুকোচুরি কেন আমার সঙ্গে!’
আমি নরম গলায় বললাম, ‘বিশ্বাস কর মিলি আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করবো! তোর সঙ্গে লুকোচুরি করার কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু আমি কেমন করে বলতাম যে মানুষটাকে তুই ভালোবাসিস সে আমাকে…!’
মিলি আবারো একইরকমভাবে হাসলো। ‘সেজন্যেই তো জিজ্ঞেস করা, আমি কী সত্যিই তোর বেস্টফ্রেন্ড! কারণ আমার জানা মতে, বেস্টফ্রেন্ডের কাছে নিজের সবচাইতে গোপন কথাটিও নির্ভয়ে বলা যায়। অন্তত আমি তাই মনে করি এবং মেনে চলি। আমার নিজের এমন কোনো বিষয় নেই যা তোর থেকে গোপন করি। নিজের প্রত্যেকটা সুখ-দুঃখের মূহুর্তগুলোও আমি তোর কাছে শেয়ার করি। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের মনের গোপন কথাটি তোকে বলতে না পারছি আমার শান্তি লাগে না। কেমন একটা দমবন্ধ অনুভূতি লাগে। যেহেতু আমি সবসময় নিঃসংকোচে নিজের গোপনীয় কথাগুলো তোর কাছে উগরে ফেলি, সেহেতু আমি নিজেও আশা করি যে তুইও তোর মনের গোপন কথাগুলো আমার কাছে বিনা সংকোচে বলবি! ‘
আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম, ‘তুই তো জানিস আমি কেমন ভীতু! আমার ভীষণ ভয় হচ্ছিল আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হবার। আমি ভেবেছিলাম, তুই যদি জানতে পারিস রাগীব আমাকে পছন্দ করে তুই আর আমাকে ভালোবাসবি না। আর বেস্টি ভাববি না আমাকে। ঘৃণা করবি!’
মিলি কিছু একটা বলতে নিলে ওকে থামিয়ে দিয়ে আবার বললাম, ‘এছাড়া তুই রাগীবকে অনেক পছন্দ করতি, ভালোবাসতি ওকে! জীবনে প্রথমবার তোকে আমি কোনো ছেলের জন্য উতলা হতে দেখেছি। তোর চোখে ওর জন্যে গভীর ভালোবাসা দেখেছি। তোর প্রথম ভালোবাসা ছিল রাগীব! আমি কীভাবে তোর হৃদয় ভাঙতাম! এতটা নিষ্ঠুর আমি হতে পারছিলাম না মিলি! আমি তোকে বোঝাতে পারবো না ওই পরিস্থিতিতে আমার নিজেকে কতটা অসহায় লেগেছে!’
হঠাৎ মিলি জিজ্ঞেস করল, ‘তুই রাগীবকে ভালোবাসিস খেয়া?’
আমি চমকে উঠলাম। ‘ছি! কীসব বলছিস! যে তোর হৃদয় ভেঙেছে তাকে আমি ভালোবাসবো! এতটাই পাষাণ ভাবিস তুই আমাকে?’
‘ভালোবাসা তো আর কিছু মানে না খেয়া! হুটহাট হয়ে যায়! কখনো কখনো এমনও হয় ভুল মানুষটাকে সঠিক ভেবে আমরা ভালোবেসে ফেলি!’
আমি জোর গলায় বললাম, ‘আমার হয়নি ওই রাগীবের প্রতি! কখনো হবেও না।’
মিলি উচ্চস্বরে হেসে উঠল। আমি বললাম, ‘হাসছিস কেন?’
মিলি বলল, ‘এত রাগ কেন তোর রাগীবের প্রতি?’
‘রাগবো না! আমার স্থানে তুই হলে কী করতি? যদি তোর বেস্টিকে তার বাগদত্তা ধোঁকা দিয়ে তোকে প্রপোজ করতো তবে?’
মিলির দৃঢ় কন্ঠস্বর, ‘মেরে ফেলতাম!’
আমি বললাম, ‘তাহলে আয় ওকে মেরে ফেলি!’
মিলি আবারও হো হো করে হাসতে লাগল। ‘যা বোকা! তাহলে তো আমরা ক্রিমিনাল হয়ে যাব!’
ক্যাফেতে আমাদের সামনের টেবিলে কয়েকটা ছেলে বসে আছে। তাদের মধ্যে একজন বারবার মিলির দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটার মুগ্ধ দৃষ্টি। মিলি যতবার হাসছে সে ততবারই মুগ্ধ নয়নে মিলিকে পরখ করছে। এ মূহুর্তে সেও মিলির মতো দাত বের করে হাসছে। বাহ ভীষণ মিষ্টি দেখতে তো ছেলেটা! হাসলে আরও সুন্দর দেখায়। পোশাক-আশাকেও বেশ ভদ্র পরিবারের ছেলে মনে হচ্ছে! মিলির পাশে ছেলেটাকে দারুণ মানাবে!
আশ্চর্য এসব আমি কী ভাবছি! কোথাকার না কোথাকার একটা ছেলে তাকে নিয়ে মিলির পাশে কল্পনাও করে ফেললাম! শুধুমাত্র দেখতে সুদর্শন আর ভদ্র পরিবারের মনে হল বলে! আমার কী এখনো শিক্ষা হয়নি! রাগীবের সাথে পরিচিত হওয়ার পর কি আমি বুঝতে পারিনি, কেবলমাত্র বাইরের আবরণ দেখে যে মানুষ চেনা যায় না?
পোশাকআশাক কিংবা চেহারা দেখে কখনো মানুষের চরিত্র স্বমন্ধে ধারণা পাওয়া যায় না। একটা মানুষকে চেনা যায় শুধুমাত্র তার সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হবার পর, তার সঙ্গে মেশার পর। একটা মানুষের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে মেশার পর সময়ই বলে দেয় তার চরিত্রের কথা। তার গুণের কথা।
মিলি আমাকে আলতো ধাক্কা দিল। আমি ভাবনার গহীনে থেকে বেরিয়ে এলাম।
মিলি বলল, ‘কী ভাবছিস এত?’
‘কিছুনা।’
‘আচ্ছা, শোন!’
‘বল!’
মিলি বলল, ‘সেদিন আমার মায়ের অমন ব্যবহারের জন্য আমি স্যরি! মায়ের পক্ষ থেকে আমি স্যরি বলছি। মা’র তোর সঙ্গে অমন করাটা মোটেও উচিত হয়নি।’
‘কী যে বলিস না তুই! সেদিন আন্টির জায়গায় অন্য যে-কেউ থাকলে একই রকম ব্যবহার করতো। এমনকি আমার মাও। নিজের মেয়ের জীবনে এমন ঘটনা ঘটলে কোনো মা-ই নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারবে না!’
‘আন্টি মোটেও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো না। ভীষণ সরল তিনি। আমাকে কতো ভালোবাসেন! গেলে কত আদর-যত্ন করেন!’
আমি বললাম, ‘রুনা আন্টিও তো আমাকে কতো ভালোবাসতেন আগে!’
মিলি আমার হাত ধরে বলল, ‘মন খারাপ করিস না প্লিজ! দেখিস কিছুদিন বাদে মা নিজেই তোকে ফোন করে বলবে আমাদের বাড়িতে যেতে। কেন যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস এ নিয়ে আফসোসও করবে। তুই তো মাকে চিনিসই! তোকে কত পছন্দ করে!’
আমি মিলির হাত ধরে মৃদু হাসলাম। এরপর হঠাৎই আমার কান্না পেয়ে গেল। চোখ জলে ভরে উঠল। ‘মন খারাপ করছি না। তুই প্লিজ আমার উপর রেগে থাকিস না! আর কখনো ওভাবে আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিবি না বল! যতো যাই হোক যোগাযোগ রাখবি, আমাকে প্রমিস কর! ‘
বলতে বলতেই কেঁদে দিলাম বোকার মতোন। আচমকা মিলিও কাঁদতে লাগল। বলল, ‘আগে তুই প্রমিস কর! কখনো আমার কাছ থেকে কিছু লুকোবি না!’
কাঁদতে কাঁদতেই বললাম, ‘প্রমিস কিচ্ছু লুকাবো না!’
মিলি আবার বলল, ‘আমি তোর ওপর এজন্য রাগ করিনি যে আমার বাগদত্তা হয়েও রাগীব তোকে পছন্দ করে, তোকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। হ্যাঁ কষ্ট হয়েছিল ঠিকই। তবে রাগ হয়েছিল তখন যখন দেখলাম আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড হওয়া স্বত্তেও তুই আমার কাছ থেকে সব লুকালি, তোর মুখ থেকে না শুনে রাগীবের মুখে শুনতে হল সব। এটা আমি তোর কাছ থেকে একদমই এক্সপেক্ট করিনি!’
বলেই মিলি হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল।
আমি চোখ মুছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দোষ করেছি আমি, ভুল করেছি আমি! তুই কাঁদছিস কেন?’
মিলি কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিল, ‘তুই কাঁদছিস বলে!’
আমি কান ধরে বললাম, ‘আর কখনো তোর কাছ থেকে কিছু লুকোবো না মিলি। আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ!’
ভরা ক্যাফেতে আমি আর মিলি হাত ধরাধরি করে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে দুজনেরই হেঁচকি উঠে গেছে। ক্যাফে ভর্তি মানুষজন সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখেমুখে বিস্ময়। সেই সঙ্গে প্রশ্নদের লুকোচুরি । তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না এত মানুষজনের মাঝে বসে অচেনা অজানা মেয়েদুটি এমন মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে কেন!
অকস্মাৎ আমাদের দিকে সামনের টেবিলে বসা সেই ছেলেটা এগিয়ে আসতে লাগল। যাকে কিছুক্ষণ আগে মিলির পাশে কল্পনা করেছিলাম আমি। সে এসে আমাদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের দুজনের দিকে দুটো ট্যিসু এগিয়ে দিল। মিলি ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা মিলির দিকে চেয়ে বলল, ‘প্লিজ ট্যিসুটা নিন, মিস! আপনার চোখের কাজল লেটকে যাচ্ছে। ‘
মিলি ট্যিসুটা নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘ওটা আইলাইনার!’
বোকা বোকা দৃষ্টিতে মিলির দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ছেলেটা হেসে ফেলল। মিলিও হেসে ফেলল। ওদের হাসিমুখের দিকে চেয়ে আমি আবারও কল্পনা করতে লাগলাম মিলির সঙ্গে ছেলেটার জুটি কেমন দারুণ হবে!
.
বাসায় ফেরার পর মা আমাকে বলে, সেদিনের সেই ছেলেটা যে আমাদের বাসায় এসেছিল তার মাকে নিয়ে আজ আবার এসেছিল আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। মায়ের দেয়া বর্ণনা শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না মা যে রাগীবের কথাই বলছে!
আমি তৎক্ষনাৎ মিলিকে ফোন করে সব জানালাম। সব শুনে মিলি বলল, ‘এর তো দারুণ সাহস! বেটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিৎ কী বলিস?’
আমি সায় দিয়ে বললাম, ‘একদম!’
মিলি বলল, ‘দাড়া গুন্ডাপান্ডা ভাড়া করে একে যদি আমি মার না খাইয়েছি!’
আমি চমকে উঠলাম। ‘কী বলছিস মিলি! এটা তো রিস্কি হয়ে যাবে!’
‘হোক! এর অত্যাচার কতদিন সহ্য করবি তুই?’
কথা বলার একপর্যায়ে মিলি জিজ্ঞেস করে, ‘আন্টিকে সব জানিয়েছিস?’
‘না, সাহস করে উঠতে পারিনি। ‘
‘গাধি! এগুলো বলতে আবার সাহস লাগে? তোর উচিত ছিল প্রথমেই আঙ্কেল আন্টিকে সব বলে দেয়া। তাহলে আজকে আবার রাগীব তোদের বাসায় এসে হাজির হবার সাহস পেতো না। দাড়া আমি আসছি! আন্টিকে আমি নিজেই সব জানাবো।’
তখনি মিলি আমাদের বাড়িতে আসে। আর মাকে সব বুঝিয়ে বলে। সব শোনার পর মা বলে,
‘অমন মন মতলবি ছেলের কাছে আমি কিছুতেই আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো না। কাল দেখা যাবে খেয়াকেও ওর ভালো লাগছে না!’
আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম মায়ের দিকে। মা এত চতুর হল কবে?
.
পরদিন আমি আর মিলি ভার্সিটি থেকে ফিরছি। কথা বলতে বলতে হেটে হেটে ফিরছিলাম। আমাদের বাসা থেকে ভার্সিটি খুব একটা দূর না। স্বাচ্ছন্দ্যে হেটেও ফেরা যায়। তবে একটু সময় লাগে। আমি আর মিলি প্রায়ই হেটে হেটে বাসায় ফিরি। উদ্দেশ্য আরো কিছুক্ষণ গল্প করা। আজও তেমনি ফিরছিলাম। হঠাৎ কোত্থেকে এসে রাগীব আমাদের পথরোধ করে। আমার খানিক ভয় ভয় করতে লাগে। এমনিতেই এ রাস্তাটায় লোক সমাগম কম। তার ওপর রাগীব আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ রাগীব মিলিকে উদ্দেশ্য করে আমাকে বলে,
‘তোমাকে বলেছিলাম না খেয়া? মিলি বুঝদার মেয়ে, ওকে বুঝিয়ে বললে ও সবই বুঝবে? দেখেছো ও কিন্তু ঠিকই মেনে নিয়েছে আমাদের দুজনকে!’
মিলি আমি দুজনই বিদ্রুপ করে হাসলাম।
ঠিক তখনি কোত্থেকে তিনজন ছেলে এসে এলোপাথাড়ি রাগীবকে কিল-ঘুষি দিতে লাগল। বেচারা একলা রাগীব চেষ্টা করেও তিনজনের সাথে পেরে উঠছে না। আমার মনে প্রশ্ন এল, মিলি কী তবে সত্যি সত্যিই গুন্ডা ভাড়া করে ফেলেছে! কিন্তু এদেরকে দেখে তো একদমই ভাড়াটে গুন্ডা মনে হচ্ছে না!
আমি মিলি দুজনই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। মিলি বোধহয় আমার মনে জাগা প্রশ্ন শুনতে পেল। ও তৎক্ষনাৎ বলল, ‘বিশ্বাস কর খেয়া, আমি কোনো গুন্ডাই ভাড়া করিনি। আর এদেরকে তো আমি চিনিও না!’
মিলি আর আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে ছেলেগুলো রাগীবকে মারা বন্ধ করল। তাদের মধ্যে কালো শার্ট পরা একজন ছেলে রাগীবকে আরেকটা ঘুষি মেরে বলল,
‘আর কোনোদিন যদি তোকে মিলি আর খেয়ার আশেপাশে দেখি, ওখানেই পুঁতে ফেলবো! ‘
আমি চমকে উঠলাম। ছেলেগুলো আমাদের নাম জানলো কীভাবে! মিলি আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল,
‘তোর নতুন আশিক না-কি?’
‘মিলি!’
এ পরিস্থিতিতেও মিলি হেসে উঠল। আমি বললাম, ‘হাসিস না মিলি আমার ভয় করছে!’
মিলি মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বলল, ‘ভীতুর ডিম একটা! ‘
হঠাৎ মিলি আমার হাত ধরে টানতে টানতে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। ছেলেগুলোর সামনে যেতেই আমি আবারও চমকালাম। আরে! কালো শার্ট পরা ছেলেটা তো গতকালকের ক্যাফের সেই ছেলেটা! যে আমাদের ট্যিসু এগিয়ে দিয়েছিল চোখের জল মুছতে! যাকে আমি বারবার মিলির পাশে কল্পনা করছিলাম!
মিলি ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘আপনারা ওকে মারলেন কেন?
কালো শার্টওয়ালা মিলির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, ‘তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাই!’
ছেলেটার চোখেমুখে মিলির জন্যে জন্মানো আবেগেরা যেন সব উপচে পড়ছে।
আমি পুনরায় চমকালাম। ছেলেটা আমাদের সব কথাই শুনে নিয়েছিল কাল!
এরপর মনে মনে হাসলাম। বোকা মিলি! নিজের আশিককে আমার ভেবে ঠাট্টা করছিল কিছুক্ষণ আগে!
(সমাপ্ত)