#ধর্ষিতা বউ
#পর্বঃ ০৩
#জুনায়েত -হাসান (লিখন)
তার মানে আপনি আমাকে দয়া দেখিয়েছেন? আমি বললাম আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আসলে আমার মায়ের অপারেশন এর জন্য অনেক টাকার দরকার ছিলো। সেই টাকা গুলো আপনার বাবা আমাকে দিয়েছেন বিনিময়ে আপনাকে আমার বিয়ে করতে হয়েছে। বলতে পারেন টাকার জন্যই আমি আপনাকে বিয়ে করেছি। আমি কথা গুলো শেষ করে ভাবলাম এগুলো শুনে নীলা হয়তো আমাকে আরো বেশি ভুল বুঝবে। কিন্তু নীলা কোন কথা বলছে না। আমি নীলাকে ডাকলাম আর জিজ্ঞেস করলাম কথা বলছেন না কেন? রাগ করলেন নাকি? নীলা বললো আর কোন অভিযোগ নেই। কারন আপনি আপনার মাকে বাঁচিয়েছেন তাই। আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম আর বললাম আপনি ঘুমিয়ে পরুন। একটু পর মাথাটা তুলে দেখালাম নীলা একটা ছোট বাচ্চার মতো গোটি শুটি মেরে শুয়ে আছে। কী বলবো আপনাদের? কী যে মায়াবী দেখাচ্ছিলো ওর মুখ খানা। দেখলাম কাথাঁ ছাড়া শুয়ে আছে নীলা। আমি একটা কাথাঁ নিয়ে নীলার শরীরে জড়িয়ে দিলাম। প্রায় ৩০ মিনিট এর মতো করে নীলার পাশে দাড়িয়ে ওকে দেখে ছিলাম। ওকে দেখে আমার মনের সাধ মিটছিলো না।
একটু পর আমি ও শুয়ে পরলাম। খুব ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠে পরলাম। উঠে বাথরুমে গেলাম গোসল করতে। কিন্তু ভুল করে বাথরুমের দরজা লক করতে ভুলে গেছি। আমি গোসল করছিলাম আর হুট করে নীলা ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে ঢুকে পরলো। ভাগ্যিস শর্ট পেন্টটা পরে গোসল করছিলাম। নয়তো কী হয়ে যেতো বলুন তো? নীলা বাথরুমে ঢুকেই চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। আর বললো সরি সরি। আমি বুঝতে পারি নি ভিতরে আপনি ছিলেন। আমি দুঃখিত! আমি লজ্জায় শেষ! আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। নীলা বাথরুম থেকে বাইরে চলে আসলো। আমি গোসল শেষ করে বাইরে এলাম। কিন্তু আমি এতটাই লজ্জা পেয়েছি যে নীলার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। নীলা মাথা নিচু করে মিটি মিটি হাসছে। আমি নীলাকে বললাম কী করছিলেন বলুনতো? বাথরুমে একটু নক করে ঢুকবেন না? নীলা আমাকে বললো সব দোষতো আপনার। আপনি বাথরুমের দরজা লক করবেন না? আমি কী করে বুঝবো যে ভিতরে আপনি আছেন? আমি বললাম হ্যা তাও ঠিক বলেছেন। সরি! আসলে ভুলে দরজা লক করতে ভুলে গিয়ে ছিলাম। নীলা একটু হেসে বললো আরে ঠিক আছে আমি কিছু মনে করিনি।
মা আমাকে আর নীলাকে ডাকছে। মা বলছে খেতে আয় তোরা দুজন। আমি নীলাকে বললাম চলুন মা খেতে ডাকছে। খাবার টেবিলে নীলা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। কিন্তু আমার খুব লজ্জা লাগছিলো। ওই বাথরুমের ঘটনার পর থেকে। তাই আমি নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ মা বললো তোরা তো শহরে থাকবি। নীলা তো নিজের হাতে খেতে পারে না। তুই ওকে খায়িয়ে দিবি। আমি বললাম কি বলছো এই সব মা? মা বললো হুম। মা আরো বললো তুই ওকে খায়িয়ে দিতে পারবি তো? আমি কোন কথা বলছি না। মা বললো আচ্ছা আমার সামনে তুই ওকে একবার খায়িয়ে দে তো? আমি বলছি এখনি কেন মা? মা রেগে বললো যা বলছি তাই কর। আমি আবার মায়ের কথার অবাধ্য কখনো হয়নি। কিন্তু আমার খুব লজ্জা লাগছিলো। আমি চোখ বন্ধ করে নিলার মুখে খাবার তুলে দিলাম। নিলা শুধু একটু একটু হাসঁলো। মা বললো এই তো এবার ঠিক আছে। ঠিক এই ভাবেই ওকে প্রতিদিন তুই খায়িয়ে দিবি। কিন্তু মাকে এখনো পর্যন্ত বলা হয়নি যে নীলা একটা ধর্ষিতা মেয়ে। আমি জানি না মা এ কথা শুনার পর নীলাকে বউ হিসাবে মেনে নেবে কিনা?
কিন্তু এই কয়েক দিনে নীলার প্রতি আমার একটা অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়ে গেছে। আর ও যে একটা ধর্ষিতা মেয়ে এই কথা ভাবতেই ওর জন্য আমার মনটা মায়ায় ভরে যায়। আমি জানি না আমার কেন এমন অনুভূতি হচ্ছে। কেন ওর জন্য আমার এতো মায়া হয়। ও কাঁদলে আমার এতো খারাপ লাগে কেনো? তাহলে এই কয়েকদিনে আমি কী নীলাকে ভালবেসে ফেলেছি? একেই কী ভালবাসা বলে বুঝি? হ্যা সত্যি আমি নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এই সব ভাবতে ভাবতে আমি মনে মনে হাসছিলাম। তখন নীলা রুমে এসে গেলো। আর আমাকে বললো কি ব্যাপার এতো খুশি খুশি লগছে যে আপনাকে? আমি একটু সরম পেলাম। বললাম না মানে তেমন কিছু না। আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম ভালবাসা কাকে বলে? নীলার প্রতি আমার যেটা কাজ করছে ওটা কে কী ভালোবাসা বলে বুঝি? খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি নিচে আর নীলা উপরে শুয়ে ছিলাম।
আমি নীলাকে বললাম একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে? নীলা বললো হুম করুন। আমি নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম কিছু মনে করবেন না তো? নীলা বললো না কিছু মনে করবো না। বলুন। আমি বললাম আচ্ছা ভালবাসা কাকে বলে? আপনি কী জানেন? নীলা আমার প্রশ্নটা শুনে একটু অবাক হলো। আর বললো হঠাৎ এই প্রশ্ন যে? কাউকে ভাল টালো বেসে ফেললেন নাকি? আমি বললাম আরে না। এমনি জানতে ইচ্ছা হলো তাই বললাম। বলুন না ভালবাসা কাকে বলে? নীলা বললো যখন আপনি মন থেকে কাউকে চাইবেন। যাকে ছাড়া আপনার দুনিয়া আঁধার। যাকে না দেখলে আপনার কিছুই ভাল লাগবে না। যার কষ্টে আপনার কষ্ট। তাকেই বলে ভালোবাসা। তবে অনেক সময় ভালবাসা গুলো এক তরফাও হয়। একতরফা ভালবাসা গুলো খুবই কষ্টের হয়। আমার ভালবাসাটা ছিলো একতরফা। যাকে বিশ্বাস করে ছিলাম। সে আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আমার সর্বনাশ করে আমার জীবন থেকে চলে গেছে। এই কথা গুলো নীলা বলেই মাথাটা নিচু করে বসে রইলো। মনে মনে আমি ভাবলাম মেয়েটার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। আমি নীলাকে বললাম মন খারাপ করবেন না প্লিজ। আমি নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার আর আমার মধ্যে সম্পর্ক কী? নীলা আমার দিকে তাকিয়ে। অবাক সুরে বললো আমরা তো স্বামী স্ত্রী। আমি বললাম এছাড়া আমাদের মাঝে আর কোন সম্পর্ক আছে কী?
নীলা বললো হুম আছে তো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী?নীলা বললো আমরা দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু। বন্ধু? নীলা বললো কেন কী ভেবেছিলেন আপনি? আমি বললাম না কিছু না। দেখলাম নীলা মুচকি মুচকি হাসছে। আমি আর কিছু বললাম না। শুয়ে পরলাম। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরলাম। উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম। নীলা বললো ও নাকি এই গ্রামটা ঘুরে দেখতে চায়। তাই ওকে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে বেরুবো ভাবছি। ঠিক সেই সময় মা এসে বললো তোর ছোট মামা ঘাটে এসে দাড়িয়ে আছে যা উকে আনতে যা। এদিকে নীলাও আবার গ্রাম ঘুরে দেখবে বলছে। আবার ও দিকে ছোট মামা ঘাটে এসে বসে আছে। আমার বিয়ের কথা শুনে ছোট মামা আমাদের বাড়িতে আসছে। আমি আমার কাকাতো বোন অবনিকে বললাম যা তুই তোর নীলা ভাবিকে গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাতে নিয়ে যা।
আমি ছোট মামাকে আনতে যাবো আর কিছু সময়ের মধ্যেই চলে আসবো। অবনি বললো ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি নিশ্চিন্তে যাও আমি ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে বেরুবো! পুরো গ্রামটা ভাবিকে ঘুরিয়ে দেখাবো নি। আমি ছোট মামাকে আনতে ঘাটে চলে আসলাম। বাড়ি ফিরতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেলো। ছোট মামাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়িতে ফিরেই দেখলাম অবনি বাইরে বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কিরে ঘুরতে যাসনি তোর ভাবিকে নিয়ে? অবনি বললো গিয়ে ছিলাম। রাস্তায় কিছু ছেলে আমাদের পথ আটকে দাড়িয়ে ছিলো। আর বাজে বাজে ভাষায় আমাদের সাথে কথা বলেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম নীলা কোথায়? অবনি বললো ভাবি মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে? আরো জিজ্ঞেস করলাম ছেলে গুলো কোথায় আছে?
অবনি বললো বড় রাস্তার ধারে বসে আছে সবাই। আমার খুব রাগ হলো। আমি ঘরে গিয়ে নীলার হাতটা ধরে বললাম চলুন আমার সাথে। নীলাকে নিয়ে বড় রাস্তার ধারে চলে আসলাম। দেখলাম কয়েকজন ছেলে বসে আছে।ওরা আমাকে দেখে দাড়িয়ে পরলো। ওদের দলনেতা আমাকে সালাম দিলো আর বললো ভাইয়া আপনি এখানে? আমি নীলাকে দেখিয়ে বললাম এটা আমার স্ত্রী। এই কথা বলা মাত্রই ওরা নীলার পায়ে পরে গেলো। আর বললো ভাবি আমাদের ক্ষমা করে দিন। আসলে আমাদের এলাকায় আমার বাবা একজন ক্ষমতাবান লোক ছিলো। যদি ও কাল ক্রমে বাবা হারিয়ে গেছে কিন্তু বাবার আদর্শে সবাই আমাকে ভয় পায়। নীলা আমাকে বললো ওদের ক্ষমা করে দিন। আমি ওদের বললাম নেক্সট টাইম যদি ওর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাস তার চোখ উপরে নিবো আমি। নীলা শুধু বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। নীলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। নীলা আমাকে বললো একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? আমি বললাম হুম বলুন। নীলা বললো ওরা আমাকে ডিস্টার্ব করাই আপনার এতো রাগ হলো কেন? আমি চুপ করে আছি। ভাবলাম আমি যে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছি এই সত্যি কথাটা বলে দেই।
চলবে তো?