#সেই_রাতে,পর্ব_5,6
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_5
.
-” কার কাছে ফোন দিচ্ছেন এত? ফোন টা সুইচ অফ দেখাচ্ছে তাও এত ট্রাই করে কি হবে?”
-” অনেক সময় কিছু হবে না জেনেও কিছু কিছু কাজ আমরা বার বার করি। হয়তো জানি এটা আদো সম্ভব না কিন্তু মন টা কেন জানি মানতে চায় না,ব্রেন বার বার সায় দেয় আর একবার করার জন্য। এই যে ফোন টা সুইচ অফ। কখনো অন হবে কিনা জানিনা। কিন্তু মন বলে ,”আর একটা বার ট্রাই কর,যদি অন হয় এবার?”
-” আপনার এই সাহিত্যিক কথা- বার্তা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আমার ফোন টা দেন ঘুমাবো।”
-” আর একটা বার ট্রাই করি প্লীজ ।”
প্রিতম একটু হতাশ ভঙ্গিতে বলল,
-” আচ্ছা করেন ট্রাই । আমি তো বিপদে পরছি,আপনার সব কথাই শুনতে হবে।”
-” হয়েছে,এই নিন আপনার ফোন।”
-” আচ্ছা একটা কথা বলুন তো কার নম্বরে এতক্ষন ফোন দিলেন। আপনার কাহিনী টা কি বলবেন?”
নিঝুম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
-” কোন কাহিনী নেই। আপনার ফোন তো দিয়ে দিলাম এবার শুয়ে পরুন আর ডিস্টার্ব করব না।”
-” আপনি ঘুমাবেন না?”
-” না,চোখ দুটি হরতাল ডাকছে আজকে ঘুমাবে না।”
-” আপনি এমন আশ্চর্য রকমের কথা পান কোথায়?”
-” আশ্চর্য রকম কথা কি আবার?”
-” এই যে বললেন চোখে হরতাল ডাকছে।”
-” শুনেন, যে পাগল হয় সে বুঝতে পারে না যে সে পাগল হয়েছে। আর যে আশ্চর্য রকমের কথা বলে সেও বুঝতে পারে না যে তার কথার ভিতর আশ্চর্য কিছু আছে।”
-” বাব্বাহ!! কি সুন্দর উদাহরন টানলেন। আপনার তো দেখছি বুদ্ধি ভরা মাথা।”
-” বুদ্ধি ভরা মাথা না মাথা ভরা বুদ্ধি। ভাবছেন আমায় আপমান করবেন আমি বুঝতে পারব না।”
-” যাক তাহলে ব্যাপার টা বুঝে গেলান।আপনার মাথায় মিনিমাম কমন সেন্স থাকলে এত রাতে বাসা থেকে বের হতেন না।”
-” কেন বাসা থেকে বের হলে কি হয়?”
-” যা বলছি সহজ ভাবে বুঝার চেষ্টা করেন। কোথায় যাবেন ,কোথায় থাকবেন তা না ভেবে বাসা থেকে পালিয়ে আসলেন।”
-” সব ই ভাবছি কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এই অবস্থা।”
-” মানে কিসের পরিস্থিতির স্বীকার বলেন তো? আপনার রহস্য কি?”
নিঝুম একটু ভাব নিয়ে বলল,
-” কোন রহস্য ই। আমি তো জানি আপনি আমায় রিসিভ করতে যাবেন তাই বাসা থেকে পালিয়েছি।”
প্রিতম মেজাজ খারাপ করে বলল,
-” এই মেয়ে এই আমি আপনায় কখন রিসিভ করতে গেলাম। অদ্ভুধ মেয়ে তো আপনি!”
-” মেয়ে মেয়ে করেন কেন? আমার নাম মেয়ে না আমার নাম নিঝুম । আর আপনি আমাকে রিসিভ করতে না গেলে আমি আপনার বাসায় আসলাম কিভাবে?”
-” প্লীজ আপনি চুপ করবেন? আপনায় বাসায় আনা টা আমার উচিত হয় নি তা অনেক আগেই বুঝছি। আপনি রাস্তায় ই ভালো ছিলেন।”
-” আচ্ছা আমি চুপ।তবে যদি পারমিশন দেন আর একটা কথা বলল?”
-” কি কথা?”
-” আসলে আমার রাস্তায় থাকতে একটুও ভালো লাগে না।”
-” ব্রেন এর ভালো ডাক্তার দেখান নয়তো কোন মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি হন।”
-” আচ্ছা ভেবে দেখব।”
-” আমি ঘুমালাম। দয়া করে আমায় আর ডিস্টার্ব করবেন না। রাত প্রায় শেষ এখন একটু ঘুমাতে দেন।”
প্রিতম সোফায় শুয়ে পরল। মনে মনে ভাবল,আমি এত বোকা কেন? একটা মেয়ে কে নিজের রুমে জায়গা দিলাম,আবার তার জন্য খাট ছেড়ে সোফায় ঘুমাতে হবে। এত রাতে ডিম ভাজতে হয়েছে। আরও কত কি! এসব ভাবতে ভাবতে প্রিতমের নিজের উপর রাগ হচ্ছে । আর মেয়ে টা কি বিচ্ছু! কোন কৃতজ্ঞতা তো নেই ই,উল্টো আমায় উল্টা-পাল্টা কথা শুনায়।
নিঝুম বেলকুনিতে দাড়িয়ে গায়ে চাঁদের আলো মাখছে। আজকে এসব কিছু তে ই মন ভালো হচ্ছে না। যা ই হোক! লোক টা যথেষ্ট ভালো। এত বিরক্ত করা ঠিক হয় নি। লোকটার অনেক ধৈর্য্য।
.
বেলকুনিতে দাড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। ঘুমও আসছে না। অসহ্য লাগছে সব! রুমে গিয়ে শুয়ে থাকা ই ভালো।
লোক টা সোফায় শুয়ে আছে। মানুষ এত ভালো হয় কিভাবে ? নিঝুম ফোন টা হাতে নিয়ে শুয়ে শুয়ে স্মৃতিচারন করছে আর চোখের জল ফেলছে।চোখ গুলো খুব ফুলে গেছে আর কাঁদতে পারছে না। মন খারাপ এর সময় গুলো এত দীর্ঘ হয় কেন? একটু কষ্টের মাঝে সব ধরনের কষ্ট এসে উকি দেয়। সব স্মৃতি এসে ভীড় করে । এমন টা কেন হয়?
হাত থেকে ফোন টা রেখে দিল নিঝুম । কি দরকার স্বার্থপর মানুষ গুলোর জন্য চোখের জল ফেলার?
কিন্তু হাজার চেষ্টায়ও আটকে রাখতে পারছে না। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গাল বেয়ে জল পরছে। কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনলে এখন মন্দ হয় না।সময় কেটে যাবে ।কিন্তু ইয়ার ফোন তো আনি নি।
উনার কাছে এখন ইয়ার ফোন চাইলে কষিয়ে চড় মারবে। ইয়ার ফোন ছাড়া গান শুনলে উনার ঘুম ভেঙে যাবে।দেখি রুমে কোথায়ও ইয়ার ফোন পাই কিনা!
খাটের বিছানার নিচে,টেবিলের উপর কোথায়ও দেখি না ইয়ার ফোন। যাক শেষ পর্যন্ত ড্রেসিং টেবিলের উপর পাওয়া গেল।
কানে ইয়ার ফোন গুজে ফুল সাউন্ডে ইমরানের গান শুনতে কেন জানি খুব বেশী ভালো লাগে।
চোখ ভরা পানি আর কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনা খারাপ লাগছে না।
হঠাৎ করে নিয়েছ ঠাই,তোমাতে মনোযোগ তুমি ছাড়া ভালো লাগে না এ কেমন রোগ?
আনমনে তুমি আমি হয়েছি নিখোঁজ ভোরের শিশির মাখা প্রতিটি প্রহর বলে যেন এভাবে চলে রোজ।
থামছো কে যেতে হবে আরও অনেক পথ।
এমন তো ছিল নেওয়া তোমার আমার শপথ…….
গান শুনতে শুনতে নিঝুমের চোখ লেগে আসছে। হঠাৎ কারো হাটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে যা দেখে তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না।
.
চলবে…..
#সেই_রাতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_6
.
নিঝুম তাকিয়ে দেখে প্রিতম অগ্নিমূর্তি হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোক টার চোখে স্পষ্ট রাগের চিহ্ন । ওর দিকে চোখ লাল করে চেয়ে আছে। নিঝুম কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর হাত থেকে ফোন আর ইয়ার ফোন টান দিয়ে নিয়ে গেল।
নিঝুম বিস্মিত হয়ে গেল! লোক টা এরকম অদ্ভুধ আচরন করছে কেন? ও তো কোন ভুল করে নি।
-” এই বের হন আমার রুম থেকে । কি চান আপনি বলুন? আপনি এত বেয়াক্কেল কেন? মাথায় কি কোন সেন্স নেই?”
নিঝুম বিস্ময়ের চরম শিকরে পৌঁছে গেল। লোক টা অযথা কি খারাপ বিহেব করছে। মানছি উনি আমার উপকার করছে। এজন্য এমন বিহেব করতে হবে। খুব কান্না পাচ্ছে আবার ,চোখে জল টলমল করছে। নিঝুম নিচু স্বরে বলল,
-” আমি কি কোন ভুল করেছি? হ্যাঁ চলে তো যাবো ই। রাত টা থাকতে দিবেন কথা তো এমন টা ছিল।”
প্রিতম রাগে কটমট করছে ,
-“না ,না আপনি কোন ভুল করেন নি। আপনি শেষ রাতে ফুল সাউন্ডে গান বাজাচ্ছেন। সেই কখন থেকে জ্বালাচ্ছেন ,এত করে বললাম যে এখন আমি ঘুমাবো কোন ডিস্টার্ব করবেন না। তা আপনি আপনার ইচ্ছা মত কাজ করছেন।”
নিঝুম অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বলল,
-” আমি তো ইয়ার ফোন দিয়ে গান শুনছিলাম যাতে আপনার ডিস্টার্ব না হয়। কিন্তু…
নিঝুমের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রিতম ওকে থামিয়ে দিল।
-” ইয়ার ফোন দিয়ে গান শুনলে তার সাইন্ড আমার কানে কিভাবে গেল? এত রাতে গানের শব্দ শুনলে বাবা-মা এবার সত্যি ভাব্বে আমি পাগল হয়ে গেছি। শেষে বাকী টা জীবন আমার পাগলা গারদে কাটাতে হবে।”
প্রিতমের চোখ পরল ইয়ার ফোনের দিকে,
-” এটা কি আপনার ইয়ার ফোন? ”
নিঝুম সংকুচিত কন্ঠে বলল,
-” না ,মানে আমার কাছে ইয়ার ফোন নেই তাই আপনার ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা ইয়ার ফোন পেয়েছি ওটা দিয়ে গান শুনতেছিলাম।”
প্রিতমের এবার রাগের মাঝেও সত্যি খুব হাসি পেল।
-” নষ্ট ইয়ার ফোন দিয়ে ফুল সাইন্ডে গান শুনছেন তাই না? সেটাও একবার খেয়াল করলেন না?”
নিঝুম এবার সত্যি খুব লজ্জা পেল। ছিঃ কেমন একটা কাজ করে ফেলল। একটা বার খেয়ালও করল না।
-” আসলে আমি খুব ডিপ্রেসনে আছি তো তাই খেয়াল করি নি।”
প্রিতম আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরল।
নিঝুম নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। এই লোক টা কি করে বুঝবে তার মনে অবস্থা। যে বুঝার সে ই তো বুঝল না। কত তা ডিপ্রেসনে আছে সে!
এত গুলো কড়া কথা না শুনালেও পারত। কিছু হলেই শুধু বাড়ি থেকে যাওয়ার হুমকি দেয়! প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে এখন। কান্নাও থামছে না একদম আউট অফ কন্ট্রোল
এসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে গেল।
.
ভোর আট টা বেজে গেছে। প্রিতম তো এত বেলা পর্যন্ত কখনো ঘুমায় না। প্রিতম বাবা প্রিতমের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” আপনার শাহজাদা পুত্র এখনো উঠে নি?”
-” আমার ছেলে শাহজাদা ই। কালকে অনেক রাতে ঘুমিয়েছে তাই হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে।”
প্রিতমের বাবা ব্যঙ্গ সুরে বলল,
-” আপনার ছেলে অনেক রাত পর্যন্ত কি এমন শুভ কাজ করছে। ও তো এগারো টা বাজেই অফিস থেকে বের হয়ে আসছে।”
-” এই তুমি আমার ছেলে কে এভাবে বলছো কেন? ভালো হচ্ছে না একদম । হয়তো বন্ধু- বান্ধব এর সাথে কোথায়ও গিয়েছিল ।”
-” অত রাতে বন্ধু- বান্ধবের সাথে কিসের এত আড্ডা?”
-” দেখ প্রিতম এখন আর ছোট নেই। ও এখন বড় হয়েছে। এখন ওর নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে।”
-” দেও দেও স্বাধীনতা । কোন দিন দেখবা কোন অপকর্ম করে বসে আছে।”
-” আমার ছেলের উপর আমার বিশ্বাস- আস্থা সব আছে। আমার ছেলে কেমন তা আমি জানি।”
-” হয়েছে চুপ কর। ওকে নাস্তা খেতে ডাক দেও । আজকে একটু তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে জরুরী মিটিং আছে।”
-” আচ্ছা তুমি বসো আমি ওকে ডেকে আনছি।”
দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল প্রিতমের । চোখ জ্বলছে খুব । মোটেও উঠতে ইচ্ছে করছে না। দরজা নক করেই যাচ্ছে । কালকের রাতের কথা মনে পরতেই লাফিয়ে উঠল । মেয়ে টা এখনো ঘুমাচ্ছে। কি করবে এখন! মা- বাবা কি ভাব্বে এসব জানলে? কত কষ্ট পাবে কেউ কি আমার এই আজগুবি কথা বিশ্বাস করবে।
-” এই মরার ঘুম ঘুমাচ্ছিস নাকি? কতক্ষন ধরে দরজা নক করছি?”
প্রিতমের মাথায় কিছু আসছে না। কি করবে এখন! মেয়ে টা সজাগ থাকলেও হত। এখন তো ডাকাও যাবে না। কি উটকো বিপদে পরল।
-“মা,আমি আসতেছি। যাও তুমি।”
-” আরে তুই দরজা খোল আগে।”
-” আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি যাও তুমি।”
-” দরজা খোলতে তোর সমস্যা কি? দরজা খোল তোর চাঁদ মুখ খানা দেখি।”
প্রিতম খাটের কাছে গেল। মেয়ে টা বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে। নড়াচড়া করছে না। হে আল্লাহ! মরে গেল না তো আবার।
-” কিরে কি হয়েছে? কি করিস তুই বল তো?”
ধুর! আম্মুও বা দরজা খোলার জন্য এত জোর করছে কেন? প্রতিদিন তো ডেকে ই চলে যায়।
প্রিতম কোন উপায় না পেয়ে নিঝুমের পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিল। মেয়ে টা তাও সজাগ হচ্ছে না। সত্যি কি মরে গেল?
নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। যাক বেচে আছে তাহলে । কপালে হাত দিয়ে দেখে গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । মেয়ে টা মনে হয় সেন্স লেস হয়ে আছে।
মেয়ে টা কে তো এই অবস্থায় ওয়াশরুমেও রাখা যাবে না। প্রিতম কোন উপায় না পেয়ে পাজা কোলে করে খাটের নিচে শুইয়ে দিল। বিছানার চাদর ফ্লোরের ছোয়াছে করে দিল।
তারপর দরজা খুলে দিল।
-” এতক্ষন কি করছিস? দশ মিনিট ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি।”
প্রিতম ভয়ে যথারিতী ঘামতে শুরু করল।
-” আরে আমি ওয়াশরুমে ছিলাম।”
-” ওয়াশরুমে কি করছিস এতক্ষন? এখনো ফ্রেশ হস নি।”
প্রিতম থতমত খেয়ে গেল।
-” আম্মু এত জেরা করছ কেন? আমি কি এখন টয়লেটেও যেতে পারব না?”
-” তুই ই তো বললি ওয়াশরুমে গেছিস। আবার বলিস টয়লেটে সমস্যা কি তোর? তোকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”
-” কালকে অনেক রাতে ঘুমাইছি তাই খারাপ লাগছে।”
.
চলবে……