নিরালায় ভালোবাসি-১১,১২
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১১ .
এস,কে স্যার এর ক্লাসটা আজ ইচ্ছের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। তিনি মাঝে মাঝেই ক্লাস নিতে আসেন। রক্তিমা ইচ্ছেকে আগে থেকেই বলে রেখেছে, এস,কে স্যার ভীষণ রাগী। তবে ইচ্ছের এই 50 মিনিটের ক্লাসে মোটেও স্যারকে রাগী মনে হয়নি। তিনি বেশ ভালোই হেসে হেসে লেকচার দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইচ্ছের ভাবনাটা হুট করেই যেনো পরিবর্তন হয়ে গেল।
রোল কলের সময় সবাই নিজের অ্যাটেনডেন্স দিলেও একমাত্র বাদ যায় ইচ্ছে। নিজের নাম পেরোতেই সে উঠে দাঁড়িয়েছিল। সেই মুহূর্তে ও পাশের মেয়েটিকে ইশারা করলেও সে স্যার কে জানায়নি যে 10 রোলের মেয়েটি এখানে অ্যাটেন্ড রয়েছে। ইচ্ছের মনে আছে প্রথম দিনের ক্লাসে রক্তিমা সেই দিনের প্রতিটা ক্লাসে ইচ্ছের সমস্যার কথা স্যারদের বলেছিল। তারপর থেকে প্রতিটা ক্লাসে স্যার নিজেই ইচ্ছের অ্যাটেনডেন্স দিয়ে দেয়। কিন্তু এস, কে স্যার সম্পূর্ণ নতুন ইচ্ছের কাছে। দুজনেই দুজনকে চেনে না। আর পাশের মেয়েটাও কিছু না বলায় ইচ্ছে উঠে দাঁড়ায়। ততক্ষনে এস, কে স্যার অ্যাটেনডেন্স এর খাতা টা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছেকে দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে মেয়েটি অ্যাটেনডেন্স দিতে ভুলে গেছে । তাই তিনি ধমক দিয়ে বললেন, ” আমি সবাই কে প্রথম দিনই জানিয়েছি, যে আমার ক্লাস মানে মনোযোগটা আমার পড়ানোর দিকেই থাকবে। কিন্তু তোমার দেখি উল্টো। মন কোথায় ছিল, বাড়িতে?
প্রতিটা ধমকেই কেঁপে উঠলো ইচ্ছে। ইচ্ছের মাথার সিঁদুর দেখে স্যার বুঝলেন যে ইচ্ছে বিবাহিত।
– ” ও তোমার মন তবে সংসারে রেখে এসেছ না। পড়াশোনা করতে না চাইলে করবে না। কিন্তু ক্লাসে ডিস্টার্ব আমি একদম পছন্দ করি না। এইবারের মতো মাফ করছি। নেক্সট টাইম থেকে যখন ক্লাসে এন্ট্রি নেবে আশা করি ক্লাসটা সুষ্ঠু ভাবে করতেই আসবে। ”
ইচ্ছে মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। সব থেকে বেশি খারাপ লাগলো এটা দেখে যে ক্লাসের 26 টা ছেলে মেয়ে কেউ কিছু বললো না। সবাই যে যার মতো বসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছুই বললো না। হয়তো এই পরিস্থিতিতে ওদের বেশ আনন্দ লাগছে ওকে দেখে।
-” নাম কি ? ”
বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ আগেই গুছিয়ে রাখা খাতাটা ব্যাগ থেকে বের করে পেনটা বের করতে যেতেই স্যার ধমকে উঠলেন।
– ” নিজেকে কী ভাবো? ভাব নিচ্ছো আমার সামনে! বললাম না তোমার নাম কী? বাংলা বোঝো না? ”
ইচ্ছে পেন দিয়ে খাতায় কিছু একটা লিখতে গেলো। স্যার পুনরায় রেগে গেলেন। ইচ্ছের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে খাতাটা কেঁড়ে নিয়ে বললেন, “গেট লস্ট। তোমাকে এখানে আমি দেখতে চাইছি না। ”
তখনই বোধ হয় পাশের মেয়েটি একটু সদয় হলো। তাই অবশেষে স্যার কে বললো, ” স্যার ওর নাম ইচ্ছে। ”
– ” বাহ্ ইচ্ছে। তো ইচ্ছে নামটা বাবা মা শখ করে ইচ্ছে রেখেছে বলে নিজে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছো। খুব ভালো। তবে নিজের মন মর্জি চলতে চাইলে অন্য কোথাও চলো। আমার ক্লাসে এই সব আমি চাই না। আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
ঘাঁড় নাড়ে ইচ্ছে। স্যারের মনে ইচ্ছেকে একটু অন্যরকম লাগলো। মেয়েটিকে দেখে তার মনে হচ্ছে যে এই মেয়েটি তাকে ভয় পাচ্ছে। কিংবা ভয় পাওয়া তার স্বভাব। কিন্তু মেয়েটি এমন কথা না শোনার মতো বিহেবিয়র করছে কেনো? কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি আর কিছু বলতে চাইলেন না। ইচ্ছের ঘাঁড় নাড়া দেখে ওকে পুনরায় সাবধান করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।
সেই মুহূর্তে কেউ কেউ ইচ্ছেকে দেখে হাসলো। তো কেউবা স্যার কে সত্যিটা বলতে পারলো না বলে মনে কষ্ট লাগলো। এই ক্লাসের প্রতিটা ছেলে মেয়ে এই স্যারকে ভালোই ভয় পায়।
সবার সামনে নিজেকে আর হাসির পাত্র করতে পারলো না ইচ্ছে। ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। আগেই ও নীরবকে টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও একা বাড়ি ফিরতে পারবে। সেই মতোই ইচ্ছে বেরিয়ে গেলো। ক্যাম্পাসের বাইরে আসতেই টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। কিন্তু ইচ্ছে বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটা দিলো। আজকের অপমানটা খুব কষ্ট লাগছে। আগেও খারাপ লাগতো। একটু আগেই নীরবের বলা কথা তারপর ক্লাসের ঘটনা কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কিচ্ছু না।
ইচ্ছে যখন বাড়িতে গেল তখন বৃষ্টি তে ভালোই ভিজে গেছে ও। একে শীতকাল, তার উপর বৃষ্টি সব মিলিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে ফিরেছে ইচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে এসেই একটা পোঁড়া গন্ধ নাকে এসে লাগলো ইচ্ছেই। বাড়িতে একেই রুমা দেবী নেই। তার উপর আজ আশাও কাজে আসেনি। তাহলে কী পুড়ছে? কথাটা ভেবেই ইচ্ছে রান্না ঘরে ছুটলো। ঠিক তখনই নীরব উপর থেকে ছুটে নেমে এলো। ইচ্ছে গিয়ে দেখে নুডলস্ পুড়ে কিচ্ছু নেই। পুরো কালো হয়ে গেছে। নীরব ছুটে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ আগেই ও নুডলস্ টা ওভেনে বসিয়ে উপরে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বসের কল। কয়েক দিন একটা নিউ প্রজেক্টে ওরা ব্যস্ত থাকলেও আজ প্রজেক্টটা সাবমিট করে দিয়েছে নীরব। তার জন্যেই অফিস নীরবের অফ কয়েকদিন। বিয়ের ছুটিটা তখন নীরব পাইনি, তাই এখনই ওর ছুটিটা অফিস থেকে গ দেওয়া হয়েছে। ওই কথা বলা শেষে নীরবের নাকে উটকো গন্ধ টা এসে লাগে।
ইচ্ছে ততক্ষনে ওভেন থেকে কড়াই নামিয়ে সব নতুন করে আবার বসিয়ে দিয়েছে। ও বুঝতে পেরেছে নীরবের হয়তো খিদে পেয়েছে। নীরব চুপ করে ইচ্ছের দিকেই তাকিয়ে রইলো। কিন্তু ইচ্ছেকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। তাই কথা না বাড়িয়ে ওকে জোর করে ঘরে নিয়ে গেল।
– ” যা আগে গিয়ে চেঞ্জ কর। শরীর খারাপ করবে।”
ইচ্ছেও চুপচাপ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। নীচে গিয়ে ইচ্ছে এক দিকে নুডলস্ বানাচ্ছে। অপর দিকে নীরব চা করতে লাগলো। নুডলস্ এর সাথে চা খেতে ওর বেশ ভালো লাগে।
বিকেলের শেষ আলোয় দুজনে মিলে বারান্দায় বসে বসে নুডলস্ আর চা খাওয়ার ছলে নীরব ইচ্ছেকে আজ রাগিয়ে ইচ্ছের ভাগের নুডলস্ খেতে চাইলেও সেই কাজে সফল সে হয়নি। কারণ ইচ্ছে নুডলস্ ছুঁয়েও দেখছে না। ফাঁকা চায়ের কাপেই চুমুক দিয়ে চলেছে সেই কখন থেকে। কোন খেয়ালে সে আছে কে জানে?
(চলবে)
নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১২ .
আজকের দিনটা ইচ্ছের অন্যরকম ভাবেই শুরু হয়েছে। সকালে চোখ খুলেই সে আজ নীরবকে দেখেনি ঠিকই তবে নীরবের পরিবর্তে পাশের টেবিলে দুই কাপ চা ও ঠিকই দেখেছে। এতে অবশ্য অবাকও খুব হয়েছে। তবে ইচ্ছের মনে আছে নীরব আগেও ছুটির দিনে টুকটাক রেসিপি রান্না করতো। রুমা দেবী আগে যখন ওয়ার্কিং ওমেন ছিলেন তখনও সে তার মাকে অনেক কাজে হেল্প করেছে। রুমা দেবীর আসতে দেরী হলে কতো দিন নিজেই রান্না করেছে, বাসন পর্যন্ত মেজেছে। সময়টা ছিল এমন নীরব মায়ের এসে কাজ করতে কষ্ট হবে বলে বিকেলে খেলতে না গিয়ে রান্না করতো, আর ধীর আর ইচ্ছে এসে ওকে তাড়া মারত খেলতে যাবার জন্যে। মাঝে মাঝে ওর হাতে হাতে অনেক কাজও করে দিতো।
কিন্তু এখন নীরবকে কিছুই করতে হয় না। সব আশা, রুমা দেবী আর ইচ্ছে মিলেই করে। কিন্তু আজ যেই সুযোগ পেয়েছে ঠিক কাজে লেগে গেছে।
ইচ্ছেকে সংয়ের মতো বসে থাকতে দেখে নীরব গিয়ে ওর মাথায় টোকা মেরে বললো,
– ” কোন খেয়ালে আছেন ম্যাম? উঠুন! সকাল হয়েছে। ইউনিভার্সিটি যেতে হবে তো নাকি!”
ইচ্ছে চুপচাপ উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফিরে আসতেই নীরব নিজেই গিয়ে তোয়ালে দিয়ে ইচ্ছের মুখটা পরম যত্নে মুছিয়ে দিয়ে ইচ্ছের হাতে তুলে দিলো, আধ কাপ সবুজ রঙের জল। ইচ্ছে তাই মুখে পুরে নিলো। সেই জল মুখের মধ্যে যেতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো ইচ্ছে। কোনো মতেই যেনো তেতো রসটা ইচ্ছে ঘিটতে পারলো না। মুখ দিয়ে বের হতে চাইলেই নীরব মুখটা চেপে ধরলো, যাতে ইচ্ছে খেয়ে নেয়। কিন্তু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের জিহ্বা যে ততক্ষনে ইচ্ছেকে ভালো মতোই বুঝিয়ে দিয়েছে, সবুজ জলটা ছিল বাসক পাতার রস। নির্ঘাত পাশের বোস কাকুদের বাড়ি থেকে চুরি করে এনেছে। কারণ পাড়ায় ওই একজনের বাড়িতেই এই গাছ আছে। কেউ জানতে পেরে তার থেকে কয়েকটা পাতা চাইলেও তিনি তা দেওয়া তো দূর, উল্টে অস্বীকার করেন।
– ” আমি কতো কষ্ট করে এইগুলো এনেছি তুই কী আর জানবি। উল্টে ফেলে দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি খা। ”
পুরো মুখটা যেনো তেতোতে ভরে গেছে ইচ্ছের। এতোটাই তেতো যে সাড়া শরীর ইচ্ছের কাঁটা দিয়ে উঠছে। নীরব ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে এক চামচ চিনি ওর মুখে পুরে দিলে ইচ্ছের একটু ভালো লাগে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো নীরব আজ হঠাৎ করেই এই তেতো রসটা খাওয়ালো কেনো?
– ” কী ভাবছিস?”
ঘাড় নারলো ইচ্ছে না করলো। কিছুই ভাবেনি ও।
– ” আজ ওই ভোলুর তাড়া খেয়ে তবে এই বাসক পাতা আমি আনতে পেরেছি। ভাবছি নিজেই একটা চারা কিনে বসাবো। ” নীরবের বলতে দেরি ইচ্ছে গোল গোল চোখ করে কেশে দিলো।
– ” ভয় পেতে হবে না। বসাবো না। পাগল নাকি, তখন দেখবো আমাকেই ঐটা গিলতে হবে। থাক দরকার নেই। নেহাত কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিলি। নাহলে কী আর এই তেতো তোকে সকালে খাওয়াতাম নাকি! তারপর বউয়ের মুখ দিয়ে তেতো বুলি বেরোলে আমারই কষ্ট। যদিবা তুই তো আমার সাথে কথাই বলিস না। মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানিস, তুই আবার বোবা হয়ে যাসনি তো! ”
ইচ্ছে চুপ করে এক জায়গায় বসে রইলো। একটা কথা বললো না। যেনো কোনো স্ট্যাচু। নীরব ওকে চা দিয়ে আলমারির কাছে গেলো জামাকাপড় নিতে, রেডি হতে হবে। ইচ্ছেকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে। ওখান থেকে একবার গিয়ে রুমা দেবীকেও আনতে হবে।
————————
কলেজে ঢুকেই ইচ্ছে ক্লাসে যাইনি। মাঠেই বসে রয়েছে। গাড়িতে আসার সময় হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর গ্রুপে তরুণ স্যার টেক্সট করে জানিয়েছেন যে, তিনি আজ কলেজে আসবেন না। 9,30 টার ক্লাসটা এস, কে স্যার নেবে। তাই আর ক্লাসের দিকে পা বাড়ায় নি ইচ্ছে। হয়তো আজকেও তিনি কিছু বলবেন ইচ্ছেকে। কথায় বলে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইস দি লাস্ট ইমপ্রেশন। এটাই হয়তো এখন ইচ্ছের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্যার হয়তো এটাই ভাববে এই মেয়েটা কাউকে গুরুত্ব দেয় না। এই 9;30 ক্লাস টা একটু তাড়াতাড়িই হয়। তাই এখনও তেমন কেউ আসেনি। দুই একজনকে কেবল দেখা যাচ্ছে যারা বাইরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
অপর দিকে নীরব আজ দারুন আছে। অফিস তো ছুটি। এই নিয়ে অবশ্য ও ইচ্ছেকে বলেছে যে, “দেখ এখন আমি ছুটিতে আছি। তোর তো ছুটিও নেই। খালি পড় আর পড়েই যা। আহা কি আরাম। আজ আমি সারাদিন ঘুমোবো, বিকেলে যখন ফুচকা কাকু আসবে ফুচকাও খাবো। কিন্তু তোর তা হবে না। তোর তো গলায় ব্যথা। টক জল খাওয়া বারণ। তুই আমার হাতের হালুয়া খাস, আমি করেছি।” কিন্তু নীরব জানে ডক্টর এখন অল্প ছাড় দিয়েছে। কিন্তু নীরব চায় ইচ্ছে পুরোপুরি আগে সুস্থ্য হোক।
নীরবের একেকটা কাজে ইচ্ছের যখন তখন এখন হাসি পায়। এখনও পাচ্ছে। কিন্তু হাসতে ঠিক মতো পারলো না। তার আগেই এস, কে স্যারকে দেখলো ইচ্ছে। এই তিনি কলেজে আসছেন। অলরেডি 9, 45 হয়ে গেছে। এটা উনি বলে ঠিক আছে। ওনার ক্লাসের কোনো স্টুডেন্ট হলে সোজা বলতেন, ” যেখানে এতক্ষণ ছিলে সেইখানেই যাও। ক্লাসে তোমার কোনো দরকার নেই। ”
এস, কে স্যারকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু অবাক হয় ইচ্ছে। নিশ্চয়ই কালকের মতো বকবে। কিন্তু ইচ্ছে অবাক করে তিনি বললেন, ” এখানে কী? ক্লাস কে করবে? চলো। ”
স্যারের গলায় কোনো গাম্ভীর্যের ছোঁয়া ইচ্ছে আজ পায়নি। তবুও ভয়ে ভয়ে ক্লাসে গেলো। কিন্তু আরও বেশি অবাক হলো যখন ক্লাসে স্যার সবার সামনে ইচ্ছের
সামনে সকল স্টুডেন্টকে বকে ইচ্ছের অসুবিধার কথা বলেছে। এমনকি ইচ্ছেকে বলেছে, ” আমার কথায় কিছু মনে করো না ইচ্ছে। আমি বুঝিনি। সারাজীবন ছাত্র ঠেঙ্গিয়েছি বলে মনে হয় চোখ কখনো ভুল করবে না আমার। তাই তোমাকে কাল ওইভাবে বলেছিলাম। কাল ছুটির আগে আমার সিনিয়র দের একটা ক্লাস ছিল ওই ক্লাসেই তোমাদের সকলকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখনই আমি তোমার ব্যাপারটা জানতে পারি।
——————————
দুপুর 12,45 নাগাদ নীরবের ঘুম ভাঙ্গলো। রুমা দেবী কে বাড়িতে এনেই ও গিয়ে ঘুমিয়েছে। এখনও স্নান অবধি করেনি। নীচ থেকে রুমা দেবী অনেকক্ষণ থেকেই ডাকছে। নীরব আজ একটু অঘোরেই ঘুমাচ্ছিল। তাই মায়ের ডাকে হুট করেই জেগে ওঠে। নীচে নামতেই চোখে পড়ে ইপশি আর রজতকে। ওরা দুই জনে রুমা দেবীর সঙ্গে গল্প করছে। কিন্তু এরা এখানে ঠিক কী জন্যে এসেছে কথাটা ভাবতেই কয়েকদিন আগের ঘটনাটা মনে পড়লো। মাথা গরম হয়ে গেল। কিন্তু মা কে দেখে নীরব কিছু বলেনি। ওর মা জানলে খুব বকবে ওকে।
– ” তোমরা দুজন?”
– ” ওরা ইচ্ছের কাছে এসেছে নীরব। ” রুমা দেবীর মুখ দেখেই নীরব বুঝে গেছে ওর মা সব জেনে গেছে।
– ” ইচ্ছের কাছে কী জন্য?”
ইপশি চুপ করে রইল। রজত বললো, ” ইপশি কিছু বলতে চায়। ”
ভ্রু কুঁচকে নীরব ইপশিকে পর্যবেক্ষণ করলো।
– ” সরি নীরব, আমি সেইদিনের বিহেবে খুব দুঃখিত। অপরাধ বোধে ভুগছিলাম। তখন রজত বললো, ইচ্ছের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে। তাই আমি আজ এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে আমি ইচ্ছের কাছে আরও লজ্জিত হয়ে গেলাম। কী বলে ক্ষমা চাইবো কে জানে? ইচ্ছের আগের স্বামী…… ” থামলো ইপশি। নীরব ও গভীর শ্বাস ফেললো। আবারও ইপশি বললো, ” ও যে কথা বলতে পারে না আর সেটা শুনে আমি শকড বিশ্বাস কর। ওর মতো ছট্ফটে, সারাক্ষণ বকা মেয়েটা কিনা,,,,,”
ইপশি কী শকড তার থেকে বেশি হাই পাওয়ারের শকড বোধহয় নীরব পেলো। রেগে গিয়ে বললো, ” কী যা তা বলছিস। ইচ্ছে কথা বলতে পারে না মানে? কী সব বলছিস? কে বলেছে এইসব ফালতু কথা?”
রুমা দেবী শক্ত গলায় নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ” আমি বলেছি। আমার যতদূর মনে পড়ে আমি তোকেও বলেছিলাম। ”
চমকে ওঠে নীরব। কই ও তো শোনে নি। কখন বললো?
তাই রুমা দেবী নিজেই মনে করিয়ে দিলো। সেইদিন বিয়ের কথা বলার সময় নীরব অনেকক্ষণ কানে হেডফোন লাগিয়ে ছিল। আর তখনই কথা গুলো রুমা দেবী বলেছিল ওকে। কিন্তু ও তো শোনেই নি।
এতদিন এই কথাটা জানা থাকলে ও কখনোই ইচ্ছেকে কেনো কথা বলে না জিজ্ঞেস করতো না। এমনকি কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ও ইচ্ছেকে, ইরাকে কথা শেখাতে বলেছে। আর আজ ইচ্ছেকে তো সরাসরি বলেছে, ইচ্ছে মনে হয় বোবা হয়ে গেছে।
নীরব আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ওর এক্ষুনি ইচ্ছের কাছে যেতে হবে। নির্ঘাত সকালের কথায় ওর খুব কষ্ট হয়েছে। কোনো দিক বেদিক না দেখেই নীরব বাইরের দিকে দৌড় দিয়ে বললো, ” মা আমি ইচ্ছের কাছে যাচ্ছি।”
পিছন থেকে রজত হেসে বললো, ” তার আগে এই হাফ প্যান্টটা একটু ছেড়ে যেও।”
নীরব দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর তো মনেই নে। ওর পরনে এখন হাফ প্যান্ট আর টিশার্ট রয়েছে। তাই আগে নীরব উপরের দিকে ছুট দিলো। লাঁফিয়ে লাঁফিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি বাদ দিয়ে নিজের ঘরে গেলো রেডি হতে।
নীরব অপরাধ বোধে জর্জরিত। ও তো কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ইচ্ছেকে। ইচ্ছের কষ্ট ওর আর এখন সহ্য হয় না। কই আগে তো হয়নি? এখন কি তবে ওদের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন হয়েছে বলে এই পরিবর্তন? নাকি এই কষ্ট প্রিয় জনকে দুঃখ দেবার জন্যে? নাকি নীরব সত্যিই ভালোবেসে ফেলল তার ইচ্ছেকে?
(চলবে)