নিরালায় ভালোবাসি-১৫,১৬

0
1050

নিরালায় ভালোবাসি-১৫,১৬
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৫ .

ঠিক বিকেল পাঁচটার সময় বর অর্থাৎ ধীর যাবে বিয়ে করতে। আর তারজন্যে বিয়েবাড়ির প্রতিটা ব্যক্তি সাজ সজ্জায় ব্যস্ত। নীরব ও কয়েকজন ধীরের বন্ধু মিলে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধীর রয়েছে বাড়ির ভিতরে, কী সব নিয়ম রয়েছে। সেই কাজেই সে ব্যস্ত। আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নীরবের পা ব্যথার জোগাড়। অপরদিকে ধীরের বন্ধু গুলো একে অপরের নানা পোজে পিক তুলে দিচ্ছে। অসহ্য লাগছে নীরবের। ইচ্ছেটাও রেডি হচ্ছে। ও এলে ওকে খানিক রাগালে ভালো লাগতো নীরবের। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সেঁজুতি আসছে। গাড়ির কাছেই আসছে। পরনে তার অফ হোয়াইট লাহেঙ্গা, বেশ মানিয়েছে মেয়েটিকে। তার উপর চোখে একখানা চশমাও দেখা যাচ্ছে। কই নীরব আগে তো মেয়েটিকে চশমায় দেখেনি। তবে মানিয়েছে বেশ। কিন্তু মেয়েটিকে দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না সে সাজগোজ করেছে নাকি না।

– ” এই যে সেঁজু, তুমি কি জানো না মেয়েদের বেশি সাজলে ভূতের মতো লাগে। আর কম সাজলে মনে হয় খাবার ডায়টিং এর ন্যায় সাজহীন রয়েছে। তো তুমি কীসের ন্যায় এইমুহুর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছো?”

– ” আমার নাম সেঁজুতি, সেঁজু নয়। ”
কথাটুকু বলেই গাড়ির একেবারে পিছনের দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বসে গেলো সেঁজুতি। নীরব ও গিয়ে মাঝের সাইটের দরজাটা খুলে বাইরে পা ঝুলিয়ে গাড়িতে বসে গেলো। এই মেয়েটাকে এই মুহূর্তে একটু রাগাবে ও।

– ” আরে ওই একই হলো। তোমার সাজ এতো কম কেনো, আমি তো তাই ভাবছি। মনে হচ্ছে সাজগোজ করেছো আবার করোনি। ”

সেঁজুতি চোখের চশমাটা হাত দিয়ে একটু নাড়িয়ে বললো, ” আমিও তবে আপনাকে বলতে পারি আপনি একটু কমই সাজগোজ করেছেন। আপনার উচিৎ ছিল আরও ঘণ্টা খানেক মুখে মেকাপ করার। ”

– ” আর বলো না সেঁজু, এই লুকেই বউ আমার ফিদা। আরও ঘণ্টা খানিক সাজগোজ করলে বেচারি হয়তো ডবল ফিদা হয়ে যাবে। তখন আবার তোমাদেরই সামলাতে হবে। তোমাদের কষ্ট দিই কীকরে বলো। তোমরা এখন ঘুরবে, প্রেম করবে তা না করে তোমাদের ডিস্টার্ব করলে চলবে বলো। ”

নীরবকে অসহ্য লাগলো সেঁজুতির। পুনরায় নামের পিন্ডি করে দিয়েছে। ধীর ওকে বলেছিল অবশ্য, নীরব হলো প্রচুর ঘাঁড়তাঁড়া। সেঁজুতি কথা বাড়ায় না, কানে হ ইয়ার ফোন গুঁজে নেয়। নাহলে ও নির্ঘাত নীরবের মাথা ফাটিয়ে দিতো।

– ” তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে সেঁজুতি? না মানে আমার এক বন্ধু আছে ওউ ঠিক তোমার মতো নাকের উপর রাগ। ঘটকালি করবো তবে।”

সেঁজুতি বোধহয় শোনেনি কথা গুলো। শুনলে নীরবের হাল বেহাল হওয়ার ছিল। আর সেটাই ভাবালো নীরবকে, যে এই মেয়ে কিছু বলছে না কেনো? কিন্তু নীরব ভাবেনি বিয়ে বাড়ির মতো হইহুল্লোড় জায়গায় এই মেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে রয়েছে। তবে নীরব ও কম যায় না। সেঁজুতির কান থেকে ইয়ার ফোনটা নিয়ে নিজের কানে গুজে দিলো। যেখানে একটা ইংলিশ সং হচ্ছে, যা নীরবের পছন্দ হলো না। যখন তখন যা তা গান শুনতে ভালো লাগে না।

– ” কী সব গান শোনো, একটু কোথায় ভালো ভালো গান শুনবে তা না। কিসব ড্রিম, ক্রিম গান শুনছো।”

সেঁজুতি রাগী চোখে নীরবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই ছেলেটার সাহস কম নয়। ওর জিনিসে হাত দিতে যেখানে সকলে ভয় পায় সেখানে এ কিনা ডাইরেক্ট কেঁড়ে নিয়ে নিলো। আর একটু আগে কী যেনো বললো, ওর বিয়ে! বিয়ে করবে তো ও তবে নীরবের ঘাঁড় যেইদিন মতকাটে পারবে সেই দিন।

– ” হেই সেঁজু, এতো রাগো কেনো? আমি কিন্তু এতটা রাগী না। তবে আমার বন্ধু খুব রাগী। তোমাকে টেক্কা দিয়ে চলে যাবে।”

গাড়ির সিটে সেঁজুতি জোরে একটা ঘুষি মারলো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো সেঁজুতি, আবারও বিয়ে, অসহ্য। নীরব এই মুহূর্তে গান না শুনলে ঠিকই বুঝতে পারতো যে এই মেয়ে কী পরিমাণ রাগী।

নীরব তখনও বাইরে পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে। কানে চলছে নীরবের অপছন্দের গান। খানিকটা দূরেই নীরব আর ধীরের বাড়ি। ওখান থেকে সকলে বেরিয়ে আসছে। এক্ষুনি গাড়ি ছাড়বে। বিয়ের মণ্ডপে যেতেও তো সময় লাগবে। তপতীর বিয়ের ডেকোরেশন যেখানে হয়েছে সেটা এখান থেকে প্রায় 20 কিমি। নীরবের কানে বাজতে থাকা গানটা শুনে নীরব বললো, ” এতক্ষণে একটা ভালো গান এলো। নীরবও গানটা গেয়ে উঠলো,
” এক মুঠো স্বপ্ন এসে ছুঁয়ে যায় সারাক্ষণ চেয়ে থাকি আমি তার আশায়। একমুঠো ইচ্ছে রাখি লুকিয়ে হৃদয়ে, হয়না সাজানো ভালোবাসা…….. ভালোবাসার এ কী জ্বালা।”

গানের প্রতিটা শব্দের উচ্চারণের মাঝেই যেনো নীরবের চোখ দুটো কোথাও একটা আটকে গেলো। হ্যাঁ ইচ্ছের দিকেই আটকেছে। দক্ষিণী রমণীর ন্যায় তার পরনে কাঞ্জিভরম শাড়ির পাশাপাশি সেখানকার স্টাইলের গহনা। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর পড়ে চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করা। নীরব খানিক দূর থেকেই বুঝেছে এটাই ইচ্ছে।
কথায় বলে তোমার স্পেশাল মানুষটা যখন তোমার চোখের সামনে আসে তখন তোমার অনুভূতি হয় কেমন যেনো একটা। ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে নীরব বোধহয় অনুভব করতে পারছে। তবে এই অনুভূতি কতোটা ঠিক কে জানে? হাঁ করে তাকিয়ে থাকা নীরবকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল সেঁজুতি। ভূত দেখলো নাকি, এই রকম ভাবে বাইরে কাকে দেখে এই ছেলে?

– ” এই যে শুনুন দাদা, কিছু কি হয়েছে আপনার? ”

নিজের বুকের বাম দিকের পাঞ্জাবির খানিক অংশ মুঠোয় ভরে নেয় নীরব। সেঁজুতির কথায় বলে, ” হয়েছে, কঠিন এক রোগ হয়েছে আমার। কই আগে তো কখনো এমনটা হয়নি, এই কদিন ঠিক কী এমন হলো? এটা কি ম্যাজিক? ”

– ” কী ম্যাজিক?”
– ” আমার দৃষ্টির অর্ধেকের বেশি অংশ যেনো ব্লার। শুধু সেই দৃশ্যমান। এ কী করে হয় বলো? তবে তুমি খুকি বুঝবেনা। ”

সেঁজুতি রাগী চোখে নীরবের দিকে তাকালো, ” কী বুঝবোনা? আমি কি বাচ্চা নাকি যে বুঝবোনা! ”

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো নীরব। একটু সামনে এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে এসে বলে গেলো, ” ভালোবেসেছ কোনোদিন?” বলেই হাওয়া।

তপ্ত শ্বাস ফেললো সেঁজুতি। ভালোবাসা আবার কী? ভালোবাসার সারমর্ম বোঝার মত ক্ষমতা তো ওর নেই। আসলেই নেই। সামনের সিটে নীরবের রেখে যাওয়া ইয়ার ফোন কানে গুজে নিলো ও। বিরবির করে বললো, ” ভালোবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি যদি আমি অনুভব করতে পারি, তাহলে বুঝবো আমিও ভালোবাসতে পারি।”

——————————————————————

বসন্তের বিকেল আর দারুন মিষ্টি হাওয়া দেবে না তাই বুঝি হয়, হয় না। ঝড়ের গতিতে গাছের পাতা গুলো নড়ে চলেছে। ইচ্ছের একদিকে এই হাওয়া ভালো লাগছে তো অপর দিকে ইচ্ছের শাড়ির তা ভালো লাগছে না। পতাকার ন্যায় উড়ে চলেছে। কিছুতেই এই আঁচলটা কে সামলাতে পারছে না ইচ্ছে। আর ইচ্ছেই এই কষ্টটা নীরবের ঠিক সহ্য হলো না। তাইতো ছুটতে ছুটতে ইচ্ছের কাছে এসে ইচ্ছের উড়ন্ত আঁচলটা ধরে ইচ্ছের কাঁধের অপর পাশে ফেলে দেয়। চমকে ওঠে ইচ্ছে, নীরবও তাকায় ওর দিকে। এই দৃষ্টিতে ছিল ভালোবাসার অনুভূতির অজস্র মেলা, অজস্র প্রজাপতি।

– ” কী করছিস এখনও, চল গাড়ি ছাড়বে তো।”

ঘাড় নাড়ে ইচ্ছে। এগিয়ে যায় গাড়ির কাছে। তবে নীরবের মনটা কেমন যেনো অশান্ত হয়ে যায়। মন বলে ওঠে একবার এই রমণীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু নীরব তো তা পারবে না। আদৌ এটা ভালোবাসা কি ও তো ঠিক জানে না। তবে সূক্ষ্ম অনুভূতির হাত বাড়িয়ে নীরব ইচ্ছের হাত ধরে সামনে হাঁটা দেয়। শুধু পারে না একবার জড়িয়ে ধরতে।

( চলবে )

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৬ .

– ” এ কী দাদা, গাড়িটা এই রাস্তা দিয়ে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন? শর্টকার্ট দিয়ে গেলেই তো ভালো হতো।”

গাড়ি ভর্তি সকলে হাহা করে হেসে ওঠে। ধীরের এক বন্ধু তো বলেই দেয়, বিয়ে করার জন্যে কি তোর আর তরসইছে না? এই দাদা আপনি যেখান দিয়ে যাচ্ছেন সেখান দিয়েই চলুন। পারলে আরও আধা ঘন্টা লেট করে চলুন। আমরাও সকলে একটু দেখি বন্ধুর কষ্ট।

আবারও গাড়িতে হাসির রোল পড়ে গেলো। তারা সকলে বিয়ে দিতে চলেছে। যে রোড দিয়ে যাবার কথা সেই রাস্তা দিয়ে কেনো যে নিয়ে যাচ্ছে না, তাতেই টেনশন ধীরের। যদিও বা এই গাড়িটা বোধহয় একাই এই রোড দিয়ে যাচ্ছে। বাকি গাড়ি গুলো শর্টকার্ট রাস্তা দিয়েই নিশ্চয় যাবে! কিন্তু ধীরের ভাবনাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে গাড়ির ড্রাইভার বলে উঠলো, শর্টকার্ট রোডে তো কাজ চলছে। তাই সব গাড়ি এইখান দিয়েই যাচ্ছে।

– ” কী? ”
– ” হ্যাঁ স্যার, এই রোড দিয়েই আমাদের যেতে হবে।”

থেমে গেল ধীর,তারমানে ইচ্ছেও এক রোড দিয়েই যাবে। কিন্তু ইচ্ছে যদি ভুলেও এই রোড, সেই বাড়িটার টের পায় তবে তো, না না কি হবে এবার? ধীরের খুব রাগ হয়। নিজের উপর নয়, তপতীর বাবার উপর। কতো করে বলেছিল, বিয়েটা যেনো বাড়ি থেকে দেওয়া হয়। কী দরকার আধা ঘণ্টার রাস্তা ছেড়ে তিন ঘণ্টা জার্নি করার। কিন্তু রিটায়ার আর্মি অফিসারের ইচ্ছে বিয়ের জন্যে বড়ো একটা লজ তো ভাড়া করতেই হবে। ধীর মাঝে মাঝে ভেবে পায় না, ওর বোনের নামের সাথে মানুষের অদ্ভুত ইচ্ছের কী দরকার। যার নাম ইচ্ছে সেই নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করবে। বাকিরা কেনো করবে। এখন তো তার জন্যে ওর চিন্তা হচ্ছে নাকি।
—————-

সকল বরযাত্রী বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছে। বিয়ে এখনও শুরু হয়নি। রাত আটটা নাগাদ বিয়ের লগ্ন। নীরব দের গাড়িটা সবার শেষে লজের সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। চারিদিকে নানান লাইটের কারুকার্যে সকলের পোশাক থেকে শুরু করে শরীরের রঙটাও সেই রঙের ন্যায় হয়ে গিয়েছে। নীরব ইচ্ছেকে রাস্তার এক ধারে দাঁড় করিয়ে সামনের দিকে কিছু কারণে গিয়েছে। সেঁজুতি পাশের এক অজ্ঞাত ব্যক্তির রয়েল এন্ড ফিল্ড গাড়িতে বসে বসে ইচ্ছে কে দেখছে। নীরব যাওয়ার আগে ওকেই দায়িত্ত্ব দিয়েছে ইচ্ছেকে যেনো দেখে রাখে।

– ” ইচ্ছে দি!”

পিছন ফিরে সেঁজুতির দিকে তাকায় ইচ্ছে। চোখের ইশারায় জানতে চায় , কিছু বলবি?

– ” বিয়ে করার জন্যে এই ঘাড় তেঁড়াকেই পেলে। পৃথিবীতে কতো সুন্দর সুন্দর ব্যাক্তি রয়েছে। যেমন, এই যে আমি যে এই গাড়ির উপর বসে রয়েছি, এই লোকটাকেই দেখো না। ওই যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে কিন্তু দেখতে পাচ্ছে এক অচেনা মেয়ে এই গাড়িতে বসে রয়েছে। কিন্তু সে কিছুই বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। ”

সেঁজুতির দেখানো পথে ইচ্ছে তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। তবে সেখানে যে কেউ ছিল তা কিছুক্ষণ আগেই ইচ্ছে তের পেয়েছে।

– ” ওই এসে গেছে তোমার বর, সরি বর্বর। ”

– ” আমি বর্বর নয়, তোমার বর হবে বর্বর। রোজ মদ খেয়ে এসে তোমাকে ঠাঙ্গাবে, তোমার শাশুড়ি তোমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাবে। আমি তোমার বরকে বলে দেবো, তোমাকে যেনো সবসময় মারের মধ্যে রাখে। তাহলেই তখন বুঝবে, কে বর, আর কে বর্বর! ”

নীরবের কথায় সেঁজুতি হাঁ করে নীরবের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ফুলিয়ে নিলো। যে বিয়ে করবে না তার বর কিনা বর্বর। হুই।

নীরব ইচ্ছের হাত ধরে সামনে হাঁটা দিলো।
-“ইচ্ছে চল এখান থেকে।” একবার পিছন ফিরে সেঁজুতি কে বললো, “আর এই যে বর্বর পত্নী বর্বরি যাও ভিতরে যাও। এখন থেকে দেখে রাখো কিভাবে বিয়ে হয়। ”

নীরব, ইচ্ছের যাবার দিকে তাকিয়ে সেঁজুতি বসে থাকা প্রিয় গাড়ির মিররের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উঠলো, ” ফালতু লোক।”

– ” এই যে মিস!”

কারোর ডাকে পিছনে ফিরতেই কারোর রাগী চোখ দেখে সেঁজুতি ভয় পেলো না, তবে বিস্মিত হয়েছে বটে। এই লোকটি আর কেউ নয় এই গাড়ির মালিক।

– ” গাড়ি থেকে আপনি নেমে দাঁড়ালে আমার খুব ভালো লাগতো। সো প্লিজ,”

ছিটকে সরে দাঁড়ালো সেঁজুতি। হুট করেই লোকটাকে বড্ড ভয়ংকর লাগছে। মনে হচ্ছে এক নিমেষে কাউকে খুন করতেও পিছু পা হবে না। লোকটি কোনো কথা না বলেই গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। মুখে তার বিরাজ করছে এক ভয়ঙ্কর হাসি, যে হাসিতে কারোর জন্যে মুগ্ধতা না, রয়েছে গভীর এক রহস্যের গন্ধ।
———–
নীরব আর ধীর যেই মুহূর্তে বিয়ের আসরে গেলো, তখন মালা বদল হচ্ছে। ধীর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে তপতীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আসলে মনে মনে বড্ড তার লজ্জা লাগছে। প্রেয়সিকে বুঝি এতো লোকের ভিড়ে প্রাণ খুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখা যায়। হয়তো হুট করেই কেউ এখন বলে উঠবে, এতো দেখিস না, তোরই বউ। তপতী লাজুক দৃষ্টিতে একবার ধীর কে দেখে চোখের পাতা নামিয়ে নিলো। হুট করেই যেনো বুকের মাঝে কেমন একটা হচ্ছে। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে ঠিক হলেও, দুজনেই দুইজনকে ভালো মতো চিনে নিয়েছে। একে একে বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে। নীরব ইচ্ছের হাত ধরে বিয়ের মণ্ডপের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইচ্ছের অপর পাশে রয়েছে সেঁজুতি।

– ” ইস, এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা এই ভাবে ধুমধাম করে করলেও হতো। কী বলিস? ”

নীরবের কথায় ইচ্ছে বেশ লজ্জা পেলো। তবে সেঁজুতি ফট করে বললো, হ্যাঁ করুন না কে মানা করেছে। তবে ইচ্ছে দি কে আপনাকে আর দেবো না। আপনি ঠিক মত তার খেয়াল রাখেন না।

খেঁপে গেলো নীরব, ইচ্ছের হাত ধরে ওকে ওর অপর পাশে জড়িয়ে ধরে বললো, বললেই হলো। আমার বউ আর আমারই থাকবে। তুমি বেশি ফটর ফটর করো না। না হলে কাউকে একটা ধরে এই মুহুর্তেই তোমার গলায় তাকে ঝুলিয়ে দেবো। দেন আমি বলবো, বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা। সরি ওটা বাঁদরী হবে।

নীরবের কথায় প্রতিবারই সেঁজুতি হেরে যায়। এই বারেও তাই। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু এই সবের মাঝেও ইচ্ছের কী হলো কে জানে। নীরবের এতক্ষণ জড়িয়ে থাকায় অসম্ভব ভালো লাগা তৈরি হলো। আবেশে নীরবের এক হাত জড়িয়ে ধরলো। নীরব ভাবছিল ইচ্ছের কথা। এতো দিনে এটুকু ও বুঝেছে ইচ্ছেকে ছেঁড়ে ও থাকতেই পারবে না। আর আলাদা হবার চিন্তা অনেক দূর। হঠাৎই ইচ্ছের হাত জড়িয়ে ধরায় নীরবের কী হলো কে জানে। ইচ্ছের মাথায় পরম যত্নে, পরম অনুভূতির সংমিশ্রণে নিজের অধর স্পর্শ করলো। আর ইচ্ছে সে তো কেঁপে উঠলো। যা দেখে নীরব না হেসে পারলো না।

————

বিকেলের এক ঝড়ো হাওয়ার মাঝে ইরার সঙ্গে ইচ্ছে ছাদের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটা সপ্তাহ হলো নীরবকে ঠিক মতো কাছেই পায় না সে। নীরব কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেছে। ইচ্ছেকে দেখেও যেনো দেখে না। এই যে ইচ্ছে আজ নিজের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে নীরবের বারান্দার দিকে তাকিয়ে নীরবকে দেখছে, সেই খেয়াল বোধহয় নীরবের নেই। হয়তো ও জানেও না যে ইচ্ছে কাল রাতে এই বাড়িতে এসেছে। এখনও ফিরে যায়নি। নীরব হয়তো এটাও ভুলে গেছে ইচ্ছে এই কদিনের মতো হাসি খুশি আর নেই। হারিয়ে গিয়েছে আগের অন্ধকারে। অথচ সেই বিয়ের রাতে নীরবকে মনে হয়েছিল সে হয়তো ইচ্ছেকে খুব খুব ভালোবাসে। কফি কাপে চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো নীরব। রেলিঙে হেলান দিয়ে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠল ইচ্ছের সঙ্গে কাটানো সময় গুলো। এই বারান্দায় তারা দুজনে এই দুই মাস কতো স্মৃতি কাটিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরব। মন বলে সত্যের মুখোমুখি না হলেই তুই পারতিস নীরব। যদিবা হলি আবেগে ভেসে যাবার পর। তলিয়ে যাবার আগে উঠে আয়, সেইটাই বোধহয় ভালো।

ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ইচ্ছের চোখে চোখ পড়তেই ঘুরে গেলো নীরব। কিন্তু ইচ্ছে সে তাকিয়ে রইলো নীরবের দিকে। শব্দহীন অনুভূতি গুলো বলে উঠলো ,

“আমার হৃদয়ের লুকানো বারিধারার স্রোত তোমাতেই আবদ্ধ। তোমার হৃদয়ের খরস্রোতা নদী আমি। ভালোবেসে যত্ন করে আগলে রাখতে পারো না! কষ্ট দিতে বুঝি ভালো লাগে? তুমি কি বোঝো না আমারও কষ্ট হয়!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here