#আজল
#পর্ব-চার
১০.
রাতে রুমে ঢুকতেই ফুয়াদ বললো-
“সাঁচি, দুকাপ কফি বানিয়ে আনো তো। আজ তোমার সাথে একসাথে বসে কফি খাবো আর গল্প করবো।”
সাঁচি তো মহা খুশি। ফুয়াদ নিজের মুখে বলেছে আজ গল্প করার কথা। সে কিছুক্ষণের মধ্যে দু কাপ কফি বানিয়ে আনলো। রুমে এসে বসতেই ফুয়াদ বললো-
“এখানে না, আসো বারান্দায় যাই। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নাও। ঠান্ডা বাতাস আছে।”
“হুম নিচ্ছি। ”
সাঁচি আলমিরা খুলে একটা পাতলা শাল বের করে গায়ে জড়ালো। তারপর বারান্দায় গেলো। ফুয়াদ বসার চেয়ার গুলো সাইড করে পাটি পেতেছে। সাঁচি আরো একবার চমকিত হলো। সে মনে মনে ভাবছিলো পাটি পেতে বসার কথা আর ফুয়াদ যেন সেটা শুনতে পেয়েছে! ইশ! ইচ্ছে গুলো কি সুন্দর পুরোন হয়ে যাচ্ছে? ফুয়াদের প্রতি মনটা কৃতজ্ঞ হয়ে উঠলো।
বারান্দায় মুখোমুখি বসা দুজন, দুজনের দু হাতে দুটো কফির মগ। কিছুক্ষণ দুজনই নিরব থেকে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। ফুয়াদ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। আর সাঁচি মাঝে মাঝে আড়চোখে ফুয়াদকে দেখছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফুয়াদই নিরবতা ভাঙল-
” তোমার পড়ালেখার কি খবর বলোতো?”
” মাস্টার্স এর প্রথম সেমিস্টার শেষ। দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে ১৫ তারিখ থেকে।”
” ভালোই হলো! বাবা মা চলে গেলে তোমার আবার একা একা লাগতো। আমিতো কাজের চাপে তোমাকে সময় দিতে পারবো না অতো। ক্লাস শুরু হয়ে গেলে ক্লাস, পড়ালেখা নিয়ে বিজি থাকবা, লোনলি লাগবে না।”
” জ্বী।”
” তোমার ক্লাস কয়দিন সপ্তাহে? ”
“সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস।”
” ঠিক আছ। তোমার যেদিন যেদিন ক্লাস থাকবে সেদিন আমাকে আগে থেকে জানিয়ে দেবে। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”
সাঁচি ঘাড় নাড়ালো। ওর আজকে চুপ থেকে ফুয়াদের কথা শুনতে ভালো লাগছে খুব। ওর গলার ভয়েজটা একদম অন্যরকম। কথা বললে মনেহয় কবিতা আবৃতি করছে।
” কি হলো? কিছু বলো? আজ তো আমিই বকবক করছি। ”
” হুম, বলুন না! আমার ভালো লাগছে আপনার কথা শুনতে। আচ্ছা, আপনি কি আবৃতি করতেন? এতো সুন্দর করে কথা বলেন কিভাবে?”
সাঁচির কথায় শব্দ করে হাসলো ফুয়াদ-
“হুম, করতাম এক সময়। তুমিও তো খুব সুন্দর করে কথা বলো। একেবারে চিকন রিনরিনে গলা, কানে বাজতে থাকে।”
” আপনার মতো না। আপনার টা শুনলে মনে হয় খেয়ে ফেলি এক্কেবারে। ”
বলেই জিভ কাটলো সাঁচি। এই রে! কি বলে ফেললো! দুর! এই লোকের সামনে সবসময় এমন বেসামাল হয়ে যায় কেন ও!! এমন ছেচড়ামো পনার কোনো মানে হয়!! লোকটা নিশ্চয়ই ওকে বেহায়া ভাববে?? কিন্তু কি করবে ও? কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ফুয়াদ যেন ওকে চুম্বকের মতো টেনেই যাচ্ছে। লজ্জায় সাঁচির গাল দুটো লাল হয়ে গেল।
ওদিকে সাঁচির কথা শুনে ফুয়াদের কাশি উঠে গেল। এই জন্যই ভয় লাগে ফুয়াদের। মেয়েটা শুরু থেকেই ওর প্রতি দূর্বল। ইদানীং সেই দূর্বলতা বেড়েছে বুঝতে পারে ফুয়াদ। ভয় লাগে নিজেই না কখন হার মেনে যায় মেয়েটার কাছে। তারপর মান অভিমান অশান্তি। কোন কিছু না যেনে বুঝে জীবন শুরু করাটা বোকামি মনেহয় ফুয়াদের । তাইতো মেয়েটার সাথে লুকোচুরি খেলছে প্রতিনিয়ত। এক অসস্তিকর নিরবতা নেমে এসেছে দু’জনার মাঝে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না কেউই। তাই তো দুজনেই চুপ করে আছে। একসময় সাঁচিই কথা বললো-
” আসলে, আমি কিন্তু ওরকম না। আপনার সামনে আসলে কি যে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। সরি! আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি নি! হঠাৎ করেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেছে! ”
“ইটস ওকে, সাঁচি! এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে! তুমিতো তোমার হাজবেন্ড কেই বলেছো! কোনো পর পুরুষ কে তো বলোনি? আসলে আমিই মনেহয় হাজবেন্ড টাইপ বিহেব করছি না, তাই না!?”
ফুয়াদের কথা শুনে সাঁচি আরো লজ্জিত হয়ে বসে রইলো চুপচাপ।
“আচ্ছা, প্রেম করেছো কখনো?”
“নাহ”
“প্রস্তাব পেয়েছো নিশ্চয়ই। ”
“হুম। অনেক,বাট বাবার নিষেধ ছিলো। আমি ফ্যামিলির বড় কিনা, ওসব প্রেম ভালোবাসা আমার জন্য না! তো আমি ভেবেছিলাম যার সাথে বিয়ে হবে সে তো আমার নিজের হবে! অধিকার থাকবে তার উপর আমার। নিজের সমস্ত আবেগ ভালোবাসা তাকেই দেখাবো। এই জন্যই হয়তো আপনার সাথে এমন কথা বলে ফেলি যা বলা উচিত না। আপনি হয়তো আমাকে বেহায়া ভাবেন। তবুও বলছি, আপনাকে দেখলে আমার মনে ভয়ঙ্কর সব ইচ্ছা জাগে। বিয়ের জন্য পাত্র হিসেবে যেদিন আপনার ছবি দেখেছিলাম সেদিন ই আপনাকে পচ্ছন্দ করে ফেলেছিলাম। তারপর যতদিন গেছে আপনার প্রতি আকর্ষন তত বেড়েছে। একদিকে আপনার নির্লিপ্ততা, অন্যদিকে আপনার কেয়ারিং বিহেভিয়ার, মনেহয় দুটো কারনেই আপনার প্রতি আমায় বেশি আকর্ষিত করেছে। হয়তো ভালোবাসতে শুরু করেছি আপনাকে। আমি আসলে বুঝতে পারছি না। আগে তো কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরিনি তাই বুঝতে পারছি না।”
একনাগারে বলে দম ফেললো সাঁচি। নিজের মনের সব কথা ফুয়াদকে বলতে পেরে নিজেকে হালকা লাগছে অনেক। যেন এক মন পাথর এর ভার নেমেছে বুক থেকে।
আর এদিকে সাঁচির কথা শুনে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ফুয়াদ। এই মেয়ে যে এরকম অসম্ভব কথাবার্তা এভাবে অবলীলায় বলে ফেলবে তা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর! কি করবে ও এখন??? ওর কথা শুনে ফুয়াদের শরীর গরম হয়ে গেছে, কান দিয়ে ধুয়া বের হচ্ছে। ও সাঁচির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে দু বার বড় বড় নিশ্বাস টানল। তারপর মাথাটা ঠান্ডা করে সাঁচির দিকে ফিরলো। ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। সাঁচি অবিশ্বাস্য চাহুনী নিয়ে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ফুয়াদ বলতে শুরু করলো-
” সাঁচি, এখন কিছু কথা বলবো। খুব মন দিয়ে শুনবে, কেমন?”
সাঁচি মাথা নাড়লো।
” সাঁচি, আমাদের এ্যারেন্জ ম্যারেজ হয়েছে, তাই না? আমরা কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতাম না, একে অপরকে জানতাম না। এরকম পরিস্থিতিতে দুটো অপশন হাতে থাকে। কি কি বলোতো??”
” কি?”
” এক. দুজনে দুজনকে না জেনেই শারীরিকভাবে ভাবে সম্পর্কটাকে শুরু করতে পারি। পরে দুজনার একে অপরকে জানাজানির ব্যাপার। এক্ষেত্রে পরে দুজনের মনের মিল না হলেও শুধু শারীরিক ভাবে একে অপরকে কাছে পাওয়ার জন্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা কঠিন হয়ে যাবে!
দুই. দুজনাই একটু কস্ট করে দুজনকে সময় দিলে, একে অপরকে চিনলে ভালো হবে না, বলো??? একে অপরের চাওয়া, পাওয়া,ইচ্ছা, অনিচ্ছা এগুলো জেনে নিয়ে মিউচুয়াল আন্ডার্স্ট্যান্ডিং এ জীবন শুরু করলে আমার মনে হয় জীবনটা অনেক আনন্দের হবে।
আমি চাই তুমি আমাকে সম্পূর্ণ জানো, বোঝো, চেনো তারপর আমরা আমাদের জীবনে আগাবো। আমার অনেককিছু জানানোর আছে তোমাকে, সাঁচি! তুমি কি শুনবে না সেগুলো!? আমি আমার জীবনে একজন স্ত্রী নয় একজন বন্ধু কে চাই সাঁচি! আমার একজন বন্ধুর খুব দরকার জীবনে।”
ফুয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করলো সাঁচি। সেই চোখটা কি চাইছে? আকুতি নাকি নির্ভরতা? আলো আধারির মাঝে কিছু বুঝতে পারলো না সাঁচি। শুধু বুঝলো ওর হাতে ধরা ফুয়াদের হাত দুটি মৃদু কাঁপছে। সেটা কি আবেগে নাকি ভয়ে বুঝলো না সাঁচি।
“তবে আমি এই ডিশিসন তোমার উপর ছেড়ে দিলাম সাঁচি। তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবে ই আগাবো। জীবনে আমি বহুবার কম্প্রোমাইজ করেছি, আরো একবার না হয় করবো! বলো তুমি কি চাও?”
“ঠিক আছে! আপনার যেভাবে ঠিক মনেহয় সেভাবেই আগাবো। আমার কোনো আপত্তি নেই।”
“অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, সাঁচি। সম্পর্কের শুরুটা তবে বন্ধুত্ব দিয়েই হোক? ক্যান উই বি ফ্রেন্ডন্স?”
ফুয়াদের চোখে উত্তরের আশা। সাঁচি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। বলে দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সাঁচি। কোনে পুরুষ যদি নিজেকে এভাবে অসহায়ের মতো নিবেদন করে তবে ও মেয়ে হয়ে কি করবে? সে তো আর এটা বলতে পারে না যে, না এটা আমি মানবো না। মেয়ে হয়ে জন্মেছে যখন সবকিছু সহ্য তো করতেই হবে। আর তাছাড়া, সারাজীবনের ভালোর জন্য এটুকু তো করতেই হবে তার! মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া- এটাই তো মেয়েদের জীবন। তবে, খুব আপন কারো জন্য মেনে নেওয়াতে মনে হয় কস্ট নেই! তাতে যদি তার ভালো হয় তাহলে তো কথাই নেই! ডিশিসনটা নিয়ে সাঁচির নিজের কাছেই ভালো লাগলো।
আর ফুয়াদ এতই খুশী হলো যে সে নিজের হাতে ধরে রাখা সাঁচির হাত দুটিতে দুটো চুমো এঁকে দিলো।
১১.
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে সাঁচি। ফুয়াদের বাবা মা আজ টাঙ্গাইল চলে যাবে। তাই আজ সাঁচি সকালেই ঘুম থেকে উঠেছে। সকালের নাস্তাটা আজ নিজের হাতেই তৈরী করেছে। সেই সাথে শশুর শাশুরির যাতে বাড়ি যেয়ে রান্না না করতে হয় তাই হরেক পদের তরকারি রান্না করে দিচ্ছে সাঁচি। রান্নাটা ভালোই পারে সাঁচি। বাড়ির বড় মেয়ে বলে কথা। এই কদিন ওর শাশুড়ি মা একদম রান্নাঘরে যেতে দিতো না। বলতো-
“আমি বাড়ি গেলে কোরো। তখন তো তোমাকেই করতে হবে।এখন বরং তুমি আমাদের চা বানিয়ে খাওয়াও।”
আজ সাঁচিকে এতো রান্না করতে দেখে বকা দিলেও মনে মনে যে খুশি হয়েছেন সাঁচির শাশুরি তা ওনার চেহারা দেখে বুঝতে পারলো সাঁচি। ওর ও বেশ ভালো লাগছে শাশুড়ির জন্য কিছু করতে পেরে।
ভালো লাগার কারনও আছে যে! সেদিনের পর থেকে ওর আর ফুয়াদের সম্পর্কটা খুব সহজ হয়ে গেছে। এই কয়েকটা দিন বেশ সাবলীল ভাবে ফুয়াদ ওর সাথে গল্পগুজব করেছে, ওকে সময় দিয়েছে। ওকে সাথে নিয়ে এজায়গা ওজায়গা বেড়াতেও গেছে। ওর ভার্সিটিতেও গেছে ভর্তি সংক্রান্ত খোজখবর নিতে। বাহিরে থাকা কালীন ওর পচ্ছন্দের খাবার কিনে দিয়েছে। মোটকথা
সময়গুলো বেশ ভালো কেটেছে সাঁচির। গতকাল থেকে ফুয়াদের অফিস শুরু হয়েছে। ও খুব ব্যস্ত হয়ে গেছে। সাঁচির একটু খারাপ লাগলেও ও মেনে নিয়েছে। সাঁচি ওর শশুর শাশুড়ি কে নাস্তা দিচ্ছিলো আর ওর শাশুড়ি মা ওকে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে জানাচ্ছিলো। তখনই ফুয়াদ সাঁচিকে ডাকছে-
“সাঁচি,এই সাঁচি! একটু এদিকে আসবে?”
সাঁচি দৌড় দিলো বেড রুমের দিকে। ওর মনেই নাই ফুয়াদের আজ অফিস আছে। রুমে যেয়ে দেখে ফুয়াদ নেই। তবে ওকে ডাকলো কোথা থেকে? ভাবতে ভাবতে ফুয়াদ বাথরুমের দরজা সামান্য খুলে বললো-
“সাঁচি, আমার টাওয়েল টা বারান্দা থেকে এনে দাওনা প্লিজ। তাড়াহুড়ো তে আনতে ভুলে গেছি।”
“দিচ্ছি। একটু ওয়েট করুন! ”
ফুয়াদকে টাওয়েল দিয়ে সাঁচি চট করে বিছানাটা গুছিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ পরে ফুয়াদ বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। আড়চোখে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে সাঁচি মনে মনে হতাশ হলো। সেই গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়েই বেরিয়েছে। এই ছেলেটা এমন কেন! ভুলেও একবারের জন্য কাপড় ছাড়া বেড়োয় না। এতো সচেতন হওয়ার কি দরকার! একটু ভুলভাল হলে কি হয়? সাঁচির কি ইচ্ছে হয় না ওকে একবার খালি গা দেখার! আচ্ছা! ওর বুকে কি ঘন লোম আছে? মা বলতো, যেসব পুরুষের বুকে লোম হয় তারা ভীষন মায়াময় হয়। তাদের বুক ভর্তি মায়া। তারা কাউকে কষ্ট দেয় না। ওর এখনো ফুয়াদের বুকটাই দেখা হলো না! সাঁচি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
‘বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে লোকটা ওকে একেবারে বোন বানিয়ে দিলো!!??’
হুহ! মনেমনে বিরবির করে গালি দেয় ফুয়াদকে
” লাজুক বানর কোথাকার? ”
“সাঁচি, বাবা-মা রেডি হয়েছে? গাড়ি চলে আসবে এখনি। যাও তো তাড়া দাও বাবা মা কে। আমারও বেরুতে হবে আজকে মিটিং আছে একটা!”
সাঁচি রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ও জানে ওকে বের করে দিয়ে এখন কাপড় পরবে ফুয়াদ। প্রতিদিনই সে এরকম কোন না কোন কজ দেখিয়ে সাঁচিকে রুম থেকে বের করে কাপড় পাল্টায়। সাঁচি বাবা মায়ের সবকিছু গোছগাছ করে দিয়ে ওনাদের চা খেতে দিয়ে ফুয়াদকে ডাকতে এলো। রুমে ঢুকো থমকালো সাঁচি। ফুয়াদ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে। ফুয়াদ আজকে সাদা শার্টের উপর লাইট ব্লু কালারের ব্লেজার পরেছে সাথে জিন্সের প্যান্ট। চুলগুলোতে জেল দিয়েছে মনে হয়! একদম পলিশ হয়ে আছে, একটুও দুলছে না। সেভ করা গালে নীলচে আভা। আফটার শেভ দিয়েছে! নাকি পারফিউম! নাকি দুটোই? পুরো রুম জুড়ে পুরুষালি স্মেল। এতো সুন্দর লাগার কি দরকার ফুয়াদের!?
সাঁচি মাতাল হয়ে গেল। ও মোহগ্রস্থের মতো আস্তে আস্তে ফুয়াদের দিকে এগিয়ে গেল। আয়নায় সাঁচিকে দেখে ফুয়াদ ঘুরে দাড়ালো। চোখ নাচিয়ে সাঁচি কে ইশারা করলে কি হয়েছে।
সাঁচি বললো-
“চুল গুলে এমন হয়ে আছে কেন?”
“কেমন? ঠিকই তো আছে দেখলাম? জেল দিলাম।কাজের সময় চুলগুলো ওড়াউড়ি করে, খুব কাজে ডিস্টার্ব হয়।”
” ও মা মুখে কি লেগে আছে? দেখি?”
বলেই গালে হাত দিলো, তারপর সেই হাত দিয়ে একটু ঠোঁট টা ছুয়ে দিলো। ফুয়াদের পাতলা ঠোঁট দুটো সাঁচিকে ডাকছে যেন!! ফুয়াদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাঁচি আচমকা ওকে কিস করে বসলো। প্রথমে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছেয়ালো তারপর গভীরভাবে ঠোঁটের দখল নিলো।দু হাতে আলতো করে জরিয়ে ধরলো ফুয়াদের পিঠ জোড়া। ফুয়াদ ঠায় দাড়িয়ে রইল কাঠ হয়ে। না সে চুমুতে পার্টিসিপেট করলো না সাঁচিকে বাধা দিলো! কিছুক্ষণ পরে সাঁচি যখন ওকে ছেড়ে দিলো, ও দেখলো ফুয়াদ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আশ্চর্য! চুমুতে ছেলেমানুষ কাঁদে নাকি? কখনো এরকমটা শোনেনি সাঁচি। পুরুষ সব সময় আগ্রাসী হয় মেয়েদের ব্যাপারে। আর এখানে দেখছে উল্টোটা! আবেগে মেয়েরা কাঁদে এটা জানে সাঁচি কিন্তু ছেলেরা? সাঁচি খুব অবাক হয়ে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। চোখ বন্ধ অবস্থায়ই ফুয়াদ বললো-
” ফার্স্ট কিসটা এরকম না হলেও পারতো সাঁচি?”
ফুয়াদের কথাতে ঘোর কাটলো সাঁচির। এ কি করলো ও??!! এতে ছলাকলা করে কেন কিস করলো ও!? নিজেকে কেন যে বারবার ফেলনা বানাচ্ছে ফুয়াদের কাছে?? কেন এই আকর্ষন বের হতে পারছে না সাঁচি? কেন ফুয়াদকে দেখলে মাথা কাজ করে না? নিজেকে খুব হীন আর ছোট মনে হলো নিজের কাছেই। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেলো সাঁচির। ফুয়াদের চোখে চোখ রাখার যোগ্যতাও যেন হারিয়ে ফেললো। নিজেকে ফুয়াদের চোখ থেকে বাঁচাতেই যেন দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ওর মাথায় শুধু ঘুরতে থাকলো-
“আ থাউসেন্ড অব এক্সকিউজ বিহাইন্ড আ সাকসেসফুল কিস”
কিন্তু এতো এক্সকিউজ দিয়ে যে চুমুটা দিলো, চুম্বনটা কি সার্থক ছিলো? ফুয়াদতো অংশই নিলো না? ঠায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। একা একা কি শখ পূরন হয়? আর তাছাড়া এতো ছলচাতুরি করে করা এই এক তরফা চুম্বনের সার্থকতা বা কি?
চলবে—-
Farhana_Yesmin