#আজল
#পর্ব-বিশ
৩৬.
গত দু সপ্তাহ ধরে ফুয়াদের ভালোবাসার অত্যাচার চলছে সাঁচির উপর। বেশ মধুর সে অত্যাচার। কোনো কোনো দিন ফুয়াদ লুকিয়ে রাতে সাঁচিদের ছাদে চলে আসে, আবার কোনো কোনো দিন রাতে ডিনার করার জন্য কোনো রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যাবে সাঁচিকে অথবা কোনো কোনো দিন বিকেল থেকে সন্ধা অবধি দু’জনে মিলে শুধু রিকশা ভ্রমন যেদিকে দু’চোখ যায়। রিকশা ভ্রমনের দিনগুলো বেশি মজা লেগেছে সাঁচির কাছে। সন্ধার পরে রাতের ঢাকা দেখতে বেশ মজা লাগছে সাঁচির। পাশে ফুয়াদ বসে ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে। হালকা বাতাসে সাঁচির চুলগুলো দোলে। আর ফুয়াদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেটা উপভোগ করে। সাঁচি খুব টের পায় ফুয়াদের এই মুগ্ধ দৃষ্টি। ও মনে মনে বেশ একটা রোমাঞ্চ ফিল করে। বিয়ের আগে প্রেম তো করেনি জীবনে। এখন যেন দূধের স্বাদ ঘোলে মিটছে সাঁচির। ফুয়াদের সাথে বেশ একটা মিষ্টি প্রেম প্রেম ভাব জমে উঠেছে। মাঝেমধ্যে সাঁচি ফুচকা খাওয়ার বায়না ধরে। ফুয়াদ তখন রিকশা থামিয়ে ফুচকা কিনে দেয় সাঁচি কে। সাঁচি রসিয়ে রসিয়ে ফুচকা খায় আর ফুয়াদ অবাক হয়ে দেখে। ওর নিজেরও খেতে ইচ্ছে করে। সাঁচির খাওয়া দেখে নিজেও একদিন ট্রাই করেছিলো কিন্তু টক আর ঝালের ঠেলায় ফুয়াদের ফুচকা খাওয়ার শখ মিটে গেছে। এই মেয়ে খায় কিভাবে সেটা ভেবেই অবাক ফুয়াদ। মাঝে মাঝে নব্য প্রেমিকের মতো সাঁচির মুখে আগুল ছুয়ে দেয় ফুয়াদ। সাঁচি কপট রাগ দেখায় যদিও। কিন্তু ফুয়াদ জানে সাঁচি মনে মনে ভীষন খুশি হয়। ঐ মুহূর্তে ওর চেহারা দেখলেই সেটা বোঝা যায়। কি অদ্ভুত ঐশ্বরিক এক ধরনের উজ্জলতা দেখা যায় ওর মুখে। এরকম সৌন্দর্য দেখে ফুয়াদের মাথা পাগল পাগল লাগে। তার তখন খুব ইচ্ছে করে সাঁচিকে আদরে আদরে মেরে ফেলতে। কিন্তু সাঁচি কি মনে করবে এই ভয়ে আর কিছু করা হয় না। এমনিতেই মেয়েটা ওকে সুযোগ দিয়েছে এই ঢের। অতো লোভ করতে যেয়ে হেলায় হারাতে চায় না এই সুযোগ। তাই ভদ্র বাবুটি সেজে বসে থাকে ফুয়াদ।।
আজও ফুয়াদ এসেছে সাঁচিদের বাড়ির ছাদে। আজ অবশ্য অন্য কারো হেল্প নিতে হয়নি, সাঁচিকেই বলেছিলো। সাঁচি আজ নিজেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ছাদে। পাটি বিছিয়ে ফ্লাক্স ভর্তি চা বানিয়ে এনেছে। একটা কয়েলও জালিয়ে দিয়েছে। মশার অত্যাচারে বসা যায় না তাই। ফুয়াদ ছাদে এসে এসব দেখে বেশ খুশি হলো। ভাবলো, আজ সাঁচিকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলবে। মেয়ের মন ভালো আছে, রাজি হলেও হয়ে যেতে পারে। দেখা যাক সাঁচি কি বলে? একা একা বসে বসে গুনগুন করছিলো ফুয়াদ-
“শোনো গো দখিনা হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা, দিক ভুলেছি আমি
শোনো গো দখিনা হাওয়া, প্রেম করেছি আমি।
মনেতে লুকানো ছিলো সুপ্ত যে পিয়াশা
জাগিল মধু লগনে বাড়ালো কি আশা
উতলা করেছো মোড়ে, আমারি ভালোবাসা
অনুরাগে প্রেম শরীরে ডুব দিয়েছি আমি
শোনো গো মধুরও হাওয়া প্রেম করেছি আমি।”
সাঁচি বেশ অনেকক্ষণ হলো ছাদে এসেছে। উঠতে গিয়ে ফুয়াদের গান শুনেছে, তখন খুব আস্তে আস্তে ছাদে উঠে এক কোনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মগ্ন হয়ে ওর গান শুনছিলো। আজ একেবারে ভরা পূর্নিমা। চারিদিকে ফকফকা চাঁদের আলো, মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাস সাথে ফুয়াদের এই রোমান্টিক গান একেবারে অন্যরকম মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সাঁচি যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছিলো। ফুয়াদ এতো সুন্দর গান করে কিভাবে? সাঁচি চোখ বুজে তন্ময় হয়ে গান শুনছিলো। ফুয়াদের গান থেমে যেতেই সাঁচি চোখ মেললো। সামনে ফুয়াদকে দেখেই বুকটা ধক করে উঠলো। লোকটা এমন কেন? অলওয়েজ ভয় পাইয়ে দেয়? সাঁচির অবস্থা দেখে ফুয়াদ ফিকফিক করে হাসছে-
“কি ভয় পেয়েছো?”
“আপনি এতো বদ কেন? সবসময় ভয় পাইয়ে দেন? ”
“তুমিই বা এতো বদি কেন? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার গান শুনছো? ”
“বদি টা আবার কে?”
“কেন তুমি? আমি বদ, তুমি আমার বউ কি হবে? বদ এর স্ত্রী লিঙ্গ বদি।”
“ছিহ, কি পচা আপনি! যা মুখে আসে তাই বলে দেন!”
“এহ আসছে আমার পচা বলনে ওয়ালি। আগে বলো গান কেমন লাগলো?”
“বলবো না!”
সাঁচি হেটে যেয়ে পাটির বিছানায় বসতে চাইলো-
“এই দাড়াও দাড়াও, তুমি ঐ শাড়িটা পড়েছো না?”
“কোনটা?”
“যেটা আমি ঐ যে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে আনলাম, ঐইটা না?”
“ইশ, কিছু ভোলে না দেখি! এতো ভালো ব্রেন নিয়ে কি করেন আপনি? ”
“দেখছো ধরে ফেলছি?”
“এ আর এমন কি! জীবনে প্রথম বউয়ের জন্য একখানা শাড়ি কিনেছেন সেটা কি এতো সহজে ভোলা যাবে? ঠিকই ধরেছেন, এটা সেই শাড়ী।”
“দেখি একটু দেখতে দাও তো? তোমায় কেমন লাগছে দেখি?”
ফুয়াদ সাঁচিকে হাত ধরে সামনে দাড় করিয়ে দেয়। তারপরে মন ভরে দেখে সাঁচিকে। আলো আধারির খেলায় সাঁচিকে মায়াবী মায়াবী লাগছে।
“একেবারে অন্যরকম সুন্দর লাগছে তোমাকে। মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে একেবারে। একটু আদর করে দেই?”
“কিহ? এসব কি কথা?”
“না মানে কিছু না। এমনি মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।”
“কিছু না হলেই ভালো।”
“এসো বসি। আজকে কি বানিয়েছো? চা না কফি?”
কথা ঘুরায় ফুয়াদ।
“কফি! আপনি পচ্ছন্দ করেন কিনা?”
“বাহ, বেশ জমবে আজ! ”
সাঁচি দু মগ ভরে কফি ঢালে। একটা ফুয়াদের দিকে বাড়িয়ে দেয়। নিজের টাতে নিঃশব্দে চুমুক দেয়।
“তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম অনেকদিন ধরে। করবো?”
“করেন? এতো অনুমতি নেওয়ার কি আছে?”
“না মানে আবার রাগ হয়ো না কিন্তু! ”
“হবো না। বলেন কি বলবেন?”
“তুমি রেহনুমার খোঁজ কিভাবে পেলা একটু বলবা আমাকে? আমি কিন্তু অনেক চেষ্টা করসি পারি নাই।”
“উহু, আপনার চেষ্টায় ঘাটতি ছিলো তাই পান নাই। আমি মন থেকে চেষ্টা করেছি তাই পেয়ে গেছি। এর জন্য অবশ্য আমাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে অনেকদিন। ”
“কেমন?”
“প্রথমে আপনার বন্ধুদের মাধ্যমে মিলি আপুকে খুঁজে বের করসি। ”
ফুয়াদ অবাক হয়-
“আমার বন্ধুদের তুমি পেলে কোথায়? ওদের সাথে তো তোমার দু’বার মাত্র দেখা হয়েছে? ”
“আপনার মোবাইল থেকে চুরি করে নাম্বার নিয়েছি। এ আর এমন কঠিন কি?”
“ও মা! তারপর?”
“তারপর তার মাধ্যমে রেহনুমা কে। রেহনুমা অবশ্য প্রথমে দেখা করতে রাজি ছিলো না। অনেক অনুনয় করে রাজি করাই। একদিন যেয়ে কথা বললাম, আপনার কথা জানাইলাম ওকে আর ওর হাজবেন্ড কে। জানেন লোকটা না খুব ভালো। এতো হেল্পফুল হাজবেন্ড আমি আগে দেখিনাই। অন্য কেউ হলো স্ত্রীর প্রাক্তন কথাটা শুনলেই দৌড়ানি দিতো। কিন্তু উনি মন দিয়ে সব কথা শুনলেন তারপর নিজে থেকেই রেহনুমা কে বললেন দেখা করতে। উনার কথাতেই রেহনুমা রাজি হয়েছে আপনার সাথে দেখা করতে। একজন স্বামীর তার স্ত্রীর উপর কতটুকু বিশ্বাস থাকলে স্ত্রী কে প্রাক্তনের সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়? আমার জাস্ট আন বিলিভেবল লাগছিলো বেপারটা। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে। লোকটার উপর আমার শ্রদ্ধা জাগলো। লোকটা সত্যি ভালোবাসে রেহনুমা কে। সেটা ইন্টারে পড়ার সময়কার আনারি প্রেম না একেবারে পরিপক্ব ভালোবাসা যাকে বলে! এটা সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া প্রেম নয় বরং বয়সের সাথে সাথে দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাওয়া ভালোবাসা এটা। আমার কি মনে হয়েছে জানেন?”
“কি?”
“হি ইজ দা পারফেক্ট ম্যান ফর রেহনুমা। নো ওয়ান ক্যান লাভ রেহনুমা এজ লাইক হিম।
ঐ যে বলে না আল্লাহ জোড়া মিলিয়ে দেয়? ব্যাপারটা সেই রকম। রেহনুমার জন্য আল্লাহ আনিস ভাইকে পাঠাইছে। সেই পারবে ঠিকঠাক মতো রেহনুমাকে সুখী করতে। পারবে কি পেরেছে অলরেলি।”
“তাহলে তো তোমার আমার জোড়াও আল্লাহ বানিয়েছে। আমরাও নিশ্চয়ই একে অপরের পরিপূরক হবো? এই যে তুমি আমার জন্য এতো কষ্ট করে রেহনুমাকে খুঁজে আনসো এইটা কেন করসো? তুমি আমাকে ভালোবাসো বলেই না করসো! আমাকে কষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্যই না করছো? তাহলে সেই হিসেবে আমরাও মেড ফর ইচ আদার জোড়া!”
“ইশ! শখ কতো? মেড ফর ইচ আদার হবে?”
“সাঁচি একটা কথা বলি। রাখবে?”
” বলুন?”
“বাসায় ফিরে চলো। আর কতোদিন এভাবে চলবে? মা বড্ড আশা করে থাকেন তোমার!”
“এখন শুধু মায়ের জন্য যাবো? আমি কি মায়ের সাথে সংসার করবো নাকি?”
“না না, সেটা বলছি না। সংসার তো আমার সাথেই করবে। আমিও যে তোমায় ভীষণ ভাবে মিস করছি। রুমটা ফাঁকা লাগে গো! তুমি এসে আমার ঘরটা পূর্ণ করে দাও প্লিজ। একা একা আর ভালো লাগে না। চলো না প্লিজ, প্লিজ! তুমি তোমার সুবিধা মতো থাকবে। আমি মোটেও তোমাকে ডিসটার্ব করবো না। ”
ফুয়াদের বলার স্টাইল দেখে হেসে দেয় সাঁচি। অঅঅ! কি কিউট ভাবে বলছে ফুয়াদ?
“আচ্ছা, যাবো।”
“আচ্ছা, চলো তাইলে যাই।”
ফুয়াদ উঠে দাড়ালো।
“মানে, কি বলেন এইগুলা? এখন কেন যাবো? সকালে বাবা মাকে বলে নিয়ে যাবেন। যেই না হ্যা বলেছি অমনি প্রেমিক রুপ হাওয়া হয়ে গেলো? সব হচ্ছে অভিনয়!”
“আচ্ছা, সরি। কালকে নিয়ে যাবো তোমাকে। কিন্তু এটা বললা কেন? প্রেমিক রুপ হাওয়া?”
“তা নয়তো কি? বলেছি আর দৌড় শুরু? এই আপনার পটানো?”
আবার বসে যায় ফুয়াদ। অস্থির লাগছে ওর।
“কি হয়েছে? এমন করছেন ক্যানো?”
“না মানে, তুমি সামনে বসে আছো, আর কিছু করতে পারতেছি না, তাই আর কি?”
“কিহ! কি করতে পারতেসেন না?”
“আদর সোহাগ আর কি?”
“এহ, ঢং দেখে আর বাঁচিনা। এতোদিন তার সাথে একরুমে থাকলাম, এক বিছানায় ঘুমাইলাম তার ফিলিংস জাগলো না আর এখন সে আমাকে রং তামাশার কথা শুনায়?”
“আরে বুঝোনা, তখন তো অন্য ধ্যানে থাকতাম। তাই তোমাকে খেয়াল করি নাই। এখন তো তুমি আমার ধ্যান জ্ঞান তাই আর কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয়। তাছাড়া এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ, সামনে সুন্দরী বউ! নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করি বলোতো?”
“বুঝছি! মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার। আমি যাই, আপনিও বাড়ি যান। ঘুমান গিয়া। আর হ্যা, আমি বাসায় যাবো ঠিকই কিন্তু আমার সাথে এইসব করতে পারবেন না বলে দিলাম?”
“কোন সব?”
“এহ,ন্যাকা! যা বলেছি ঠিকই বুঝেছেন? যদি জোর করেন তবে খুবই খারাপ হবে। ”
“কেন? তুমি চাও না আমায়? এতোদিন তো খুব পিছনে পরে থাকতে? ”
” থাকতাম কারন তখন চাইতাম। এখন যখন আপনি আমার কাছে আসেন আমার পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। আপনি আমার সাথে যে দূর্ব্যবহার গুলো করেছেন সেগুলো মনে পড়ে যায়। জড়িয়ে ধরার অপরাধে আপনি আমায় যা নয় তাই বলেছেন। চাইলেই তো সেগুলো ভুলতে পারছি না। কানে বাজে সারাক্ষণ। আপনার কানে যেমন বাজতো রেহনুমার গলা। মনেহয় আমি খারাপ মেয়ে। তা নাহলে কি আপনার সাথে জোর-জবরদস্তি করতাম!”
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে সাঁচি। দু হাতে মুখ ঢাকে।
ফুয়াদ এগিয়ে এসে সাঁচির হাত ধরে, চোখের পানি মুছে দেয়-
“সরি, সাঁচি। আমি সত্যিই সরি! আমার যে ঐ সময়গুলোতে কি হতো, না চাইতেও তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতাম। আমার নিজের কাছেও প্রচন্ড খারাপ লাগতো। কিভাবে যে কি করতাম কিছুই বুঝতে পারতাম না!”
“এতোটাই যখন খারাপ লাগতো তবে কোনোদিন সরি বলেননি কেন?”
” অনেক বলতে চাইতাম কিন্তু পারতাম না। মুখে এসে আটকে যেত। আমার নিজের দুঃখটাই নিজের কাছে বড় ছিলে যে! প্লিজ এজন্য নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না। এমনিতেই নিজেকে আমার বড্ড ছোট মনেহয়। এরপর তুমি যদি এমন করো তবে আমি কোথায় লুকাবো বলো?”
“তার আমি কি জানি? দুঃখ দেওয়ার সময় মনে ছিলোনা সেকথা? ”
ঝাঝালো কন্ঠে বলে সাঁচি। ফুয়াদ সাঁচি কে কাছে টেনে নেয়। বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে-
“আমি আর কি করবো বলোতো? কি করলে তোমার মনের রাগ কমবে? অভিমান গুলো বুকের দেয়াল থেকে খসে পড়বে। বলে দাও, যা বলবে তাই করবো। তবুও এতো কষ্ট পেয়ো না। আজকাল আমার ও ভালো লাগে না আর। বড্ড ক্লান্ত লাগে। ভুলের বোঝা আর বইতে পারছি না। এবার একটু সুখ চাই জীবনে। তোমার রাগ কমানোর জন্য দরকার হলে মারো কাটো, যা খুশি করো আমায়, তবুও স্বাভাবিক হও।”
“কিছুই আর করার নেই। এখন একমাত্র সময়ই হলো বড় অসুধ। আমাকে সময় দিন। সব ভুলে যাওয়ার জন্য। আমি নিজেও জানি কবে মনের এই বেহাল দশা থেকে মুক্তি পাবো? আমারও কষ্ট হয় খুব। তবুও কিছু করার নেই।”
ফুয়াদ সাঁচির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চুলগুলে
সাট করে দিয়ে চুমু দেয় আলতো করে-
“যত সময় লাগে নাও কিন্তু আমার চোখের আড়ালে থেকে নয়। আমার চোখের সামনে থাকো সবসময়। তাহলে হয়তো ব্যপারটা তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবে। আমিও চেষ্টা করবো না হয়। দুজনে একসাথে চেষ্টা করলে নিশ্চিয়ই হবে?”
“হুম। ঠিক আছে।”
এর পরের সময়টুকু দুজনই চুপচাপ বসে থাকে। আসলেও মন বড় অদ্ভুত জিনিস। গতকালই যেটা খুব করে চাইতো আজ সেটা হাতের কাছে পেয়েও গ্রহন করতে পারছে না! কেন এমন হয়? এর কি কোন উত্তর আছে? অন্য কারো কাছে থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু এই মুহুর্তে এই দু’জনার কাছে এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। এরা কেবল মন হাতরে প্রশ্নের উত্তর খুজে চলেছে!
চলবে—-
Farhana_Yesmin