আজল #অন্তিম পর্ব

0
1808

#আজল
#অন্তিম পর্ব

৪১.

পরেরদিন ওরা গেছিলো সেন্টমার্টিন। দু’দিন সেখানে কাটিয়ে রাতে হোটেলে ফিরলো ওরা। হাসি আনন্দে কেটে যাওয়া দু’টো দিন, সবারই মনেহয় মনে থাকবে এই দুই দিনের স্মৃতি! বিশেষ করে সাঁচি কোনদিনও ভুলবে না। শেষ দিনে সবাই মিলে সমুদ্রে নেমেছিলো ওরা। সেফ জায়গা দেখেই নেমেছিলো। সাঁচির আবার একটু পানি ভীতি আছে। ও সহজে নামতে চায় না পানিতে। সবার পীরাপীরিতে পানিতে নেমেছিলো। গল্পগুজব, হাসি ঠাট্টা, ছবি তোলা, এসব করতে গিয়ে কখন যে সমুদ্রের একটু গভীরে চলে গেছে টের পায়নি সাঁচি। হঠাৎ এক বড় ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো সাঁচিকে বেশ অনেকখানি দূরে। সবাই আনন্দে এতোই মশগুল ছিলো যে কিছুই টের পাচ্ছিলো না। সাঁচির গগনবিহারী চিৎকার শুনে সবার হুশ আসলো। সবার মধ্যেই কান্নার রোল পড়ে গেলো। সাঁচি ভেসে যতদুর গেছে সেটা সাঁতার জানা কারো জন্য ব্যাপার না। কিন্তু ও যেহেতু সাতার জানে না তাই ভয়েই ও তলিয়ে যাচ্ছিলো। ফুয়াদ আর তানভীর দুজনেই ছুট লাগালো।তানভীরের আগেই ফুয়াদ পৌঁছে গেলো। অনেককষ্টে সাঁচিকে টেনে তুললো পানি থেকে। কোলে করে তুলে নিয়ে আসলো পানি থেকে। ভয়েই জ্ঞান হারিয়েছে সাঁচি। ফুয়াদ ওকে হোটেলে নিয়ে এলো। অনেক কষ্টে খুঁজে একজন ডাক্তার পাওয়া গেলো। ডাক্তার যখন আস্বস্ত করলো তেমন সিরিয়াস কিছু না তখন সবাই স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। সাঁচির এই অবস্থায় কেউই আর আনন্দ করতে পারলো না। তল্পিতল্পা গুটিয়ে দ্রুত কক্সবাজার ফিরে এলো। এই ঘটনার পর থেকেই সাঁচি আরো চুপচাপ হয়ে গেছে। সবাই বেড়াতে গেলেও ও যায় না। বেচারীর ভয় এখনো কাটেনি। ঘোরের মধ্যে আছে এখনো। বাধ্য হয়ে ফুয়াদকেও থাকতে হয় ওর সাথে।

আরো একদিন পর সকালে নাস্তা সেরে চা খেতে খেতে প্রিয়তা আর সাঁচি গল্প করছিলো।
“ভাবি, তুমি কি ঠিক আছো?”
“হুম,ঠিক আছি তো? কেন?”
“না মানে, এতো চুপচাপ থাকো? কোনো কি সমস্যা হয়েছে? তোমার এই অবস্থা দেখে ভাইয়া বেচারা তো আরো চুপসে গেছে। সেদিন যদি তুমি ভাইয়াকে একবার দেখতে? তোমার অবস্থা দেখে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো। ও নিজে কিন্তু সাঁতার জানে না অথচ কিভাবে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে তোমাকে বাঁচালো? ভাবি, ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে গো। ওকে আর কষ্ট দিয়ো না!”
“কক ক কি কষ্ট দিচ্ছি? কি বলো এসব?”
তোতলায় সাঁচি।
“শোনো ভাবি, তোমাদের ব্যাপারটা কিন্তু সবাই বুঝতে পারছে গো? ”
“সত্যি?
অস্ফুটে চিৎকার দিলো সাঁচি। প্রিয়তা মাথা নাড়ে।
“মিথ্যে বললাম। শোনো, আমি জানি না কেউ বুঝেছে কিনা তবে আমি আর তানভীর বুঝতে পেরেছি। তানভীর ই অনুমান করেছিলো। অবশ্য কেউ খুব খেয়াল না করলে বুঝবে না। সো টেনশন করো না, আমি কাউকে বলবো না।তবে শর্ত হলো,দুজনাই তাড়াতাড়ি প্যাচআপ করে নাও। এবং সেটা এই ট্রিপেই হওয়া চাই, বুঝলে?”
সাঁচি আর কিছু বলতে পারে না। লজ্জায় গাল লাল করে বসে থাকে। ওর আর ফুয়াদের ব্যাপারটা প্রিয়তা বুঝে এগেছে এটা ভাবতেই ওর লজ্জা লাগছে।

হঠাৎ প্রিয়তা প্লান করলো বার্মিজ মার্কেটে যাওয়ার। সবার জন্য কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। বসে থাকতে কারোরই ভালো লাগছিলো না, তাই সবাই রাজি হয়ে গেলো। এবার প্রিয়তা জোর করে সাঁচিকে সাথে নিলো। সাঁচি যথারীতি একটা নরমাল সুতি শাড়ী পড়লো আর ফুয়াদ আজ একটা ডার্ক চকলেট কালার শার্ট পরেছে অফ হোয়াইট গ্যাভারডিনের সাথে। হঠাৎ সাঁচির চোখ ফুয়াদের উপর পড়তেই যেন চোখ ধাঁদিয়ে গেলো সাঁচির। এতো সুন্দর লাগছে ফুয়াদকে,ওর উজ্জ্বল শ্যামবর্নে শার্টটা একেবারে ফুঁটে রয়েছে যেন। অনেকক্ষণ ধরে মনেহয় সাঁচি তাকিয়ে ছিলো ফুয়াদের দিকে, তাই ওর ডাক শুনতে পাচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে ফুয়াদ সাঁচির কাছে এসে তুরি বাজালো-
“এই যে ম্যাডাম, মুখটা বন্ধ করো তো, মশা ঢুকবে?”
সাঁচি থতমত খায়, ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জায় দ্রুত মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। ওর পাশে বসে ফুয়াদ শীষ বাজাতে থাকে। আজ যেন একটু বেশিই খুশি ফুয়াদ। আজ কি কোনো বিশেষ দিন নাকি?

কেনাকাটা সারতে সারতে বিকেল হলো ওদের। হোটেলে ফিরেই বাবা মায়েরা সবাই ঠিক করলো আজ রাতেই সবাই ঢাকায় ফিরে যাবে। শুনে সাঁচির একটু মন খারাপ হলো। ও তো ঘুরতেই পারলো ঠিকমতো! ভেবেছিলো আরো কিছুদিন থাকবে। তখনই ফুয়াদের বাবা বললেন যে, ফুয়াদ আর সাঁচি আরো কয়েকদিন থাকবে এখানে। সাঁচি যেহেতু অসুস্থ ছিলো এতোদিন প্লাস ওর সাথে ঘটে যাওয়া ইন্সিডেন্ট এর কারণে দুজনে ভালোমতো এনজয় করতে পারেনি তাই এই ব্যবস্থা। সাঁচি ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফুয়াদ নির্বিকার ভঙ্গিতে মোবাইল গুতোচ্ছে। ভাব দেখেতো মনেহচ্ছে কিছু শুনতে পাচ্ছে না! ঢং, যতসব! সাঁচি মনে মনে ভেংচি কাটে।
সন্ধার পর থেকে সাঁচি শাশুড়ী মায়ের লাগেজ গুছাতে হেল্প করছিলো। ওটা শেষ হতেই মা ডাকলো, তারপর প্রিয়তা।
“ভাবি তোমাকে একটা গোপন কথা বলার আছে!”
“কি বলো?”
“আজ রাতে ভাইয়ার জন্মদিন গো। তুমি মনেহয় জানোনা? আর ভাইয়াও তোমাকে বলতে নিষেধ করেছিলো। ”
“সত্যি? ”
অবাক হয়ে চেচিয়ে উঠলো সাঁচি। এইজন্যই এতো নির্বিকার বসে ছিলো ফুয়াদ। প্রিয় যেন সাঁচির মনের কথা পড়তে পারলো। তাই বলে দিলো-
“ভাইয়া কিছু জানে না গো। বাবাকে দিয়ে বলানো আমার প্লান।”
বলে উঠে গিয়ে খাটের উপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো। সাঁচির হাতে দিয়ে বললো-
” আজ রাতটা যেন ভাইয়ার জীবনের বেস্ট রাত হয়, ভাবি। আর এবারের জন্মদিনটাও যেন ওর জীবনের বেস্ট জন্মদিন হয়? আমরা যখন নিচে নেমে যাবো, ভাইয়াকে সাথে নিয়ে যাবো, এরমধ্যে তুমি তৈরী হয়ে নিও। আজ আর কোনো দ্বিধা আসতে দিয়ো না মনে। আমার এটা অনুরোধ তোমার কাছে। এই বেলায় যদি প্যাচআপ না করো তবে কিন্তু ভাইয়া ভীষণ কষ্ট পাবে।”
সাঁচি যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। নড়তে চড়তে ভুলে গেছে। ইস! কি লজ্জা! ছোট বোনের কাছে!
“লজ্জার কিছু নেই ভাবি! এরকম তো হতেই পারে, তাইনা? আমি তো তোমার বোনই, আমার কাছে লজ্জা পেয়োনা?”
সাঁচি প্রিয়কে জড়িয়ে ধরে। আজ আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
“ভাবি আজ কিন্তু আমার কথা শুনিও। তোমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর হতে চলেছে। বুঝেছো?”
সাঁচি মাথা নাড়ে। কি করবে কিছুই ভাবতে পারছে না। মনে মনে নিজেই নিজেকে বলছে-
“নিজের মগজ আজ নাই বা খাটালাম? আজ প্রিয়র কথাটাই না হয় মেনে নেই? অন্তত ফুয়াদ যে ওর জীবন বাঁচিয়েছে সেই হিসেবেও তো ও মনেহয় একটা চান্স ডিজার্ভ করে! ”

৪২.

প্রিয়তার দেয়া শাড়ীটা পড়তে যেয়েও পড়লো না সাঁচি। বরং ফুয়াদের দেয়া সোনালী কাজের শাড়ীটা বের করলো লাগেজ থেকে। খুব যত্ন নিয়ে শাড়ীটা পড়ে নিজেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজালো আজকে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে সাজটা কমপ্লিট করলো। তারপর যখন প্রিয়তার রুম থেকে ওদের রুমে ঢুকে বাতি জ্বালালো চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো সাঁচির। পুরো রুমটা সাজানো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। পাপড়ি গুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব দেখে হাত পা ঘামতে লাগলো সাঁচির। প্রিয় এই কারনেই তবে বলেছিলো যেন ওরা গেলে রুমে আসে সাঁচি। এখনো ধাতস্ত হয়নি সাঁচি, এরই মধ্যে রুমের দড়জায় নক। সাঁচি দড়জা খুলে সরে দাঁড়ালো। ফুয়াদও রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে গেলো। বোকার মতো মুখ করে বললো-
“একি,এগুলো কে করেছে? সাঁচি আমি কিন্তু এসবের কিছুই জানি না। প্লিজ, তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝো না?”
“জানি, আপনি করেননি! প্রিয়র কাজ এসব।”
“যাক, বাবা তুমি যে আমাকে ভুল বেঝোনি এতেই আমি খুশি।”
বলেই সাঁচির দিকে তাকালো। এবং অবাক হয়ে খেয়াল করলো, সাঁচি অনেকটাই বউদের মতো ওর দেয়া সোনালী শাড়ীটা পড়েছে, চুল ছেড়ে দেয়া গাড় সাজের সাঁচিকে নববধূর মতো সুন্দর লাগছে। ফুয়াদ হা করে সাঁচিকে দেখছে। মানে কি? সাঁচি ওর উপহার দেয়া বিশেষ শাড়ীটা কেন পড়েছে? ও কি তবে মেনে নিয়েছে আমাকে? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে ফুয়াদ। উত্তর তো সাঁচি দিতে পারবে।
সাঁচি মনেহয় অনেকক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছিলো। শেষে গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে হলো-
“এই কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“আর তোমার এই সাজ? এটাও কি প্রিয়….”
সাঁচি মাথা নাড়ে-
” চা খাবে? ”
কথা ঘুরায় সাঁচি।
“কোথায় চা?”
এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে ফুয়াদ।
“বারান্দায় আছে। প্রিয় বলে গেছে।”
লাজুক স্বরে সাঁচি বলে।
“বোন আমার খুব কাজের দেখা যাচ্ছে? ”
মুচকি হাঁসে ফুয়াদ।
দুজনে বারান্দায় এসে বসে। আজও জোছনা কিন্তু আকাশ মনেহয় মেঘলা। চাঁদটাকে পরিপূর্ণ দেখা যাচ্ছে না। সেই আলো আধারির মাঝে সাঁচি যেন অপ্সরী। ফুয়াদ বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে আজ। ঐ অবস্থায় চায়ে চুমুক দেয়। একবারের জন্যও পলক ফেলে না ফুয়াদ। হঠাৎ বলে-
” আজ একটা কবিতা শোনাতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। শোনাবো? ”
সাঁচি মাথা নাড়ে।
ফুয়াদ সাঁচির মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আবৃতি করতে থাকে-

★কি করছো?
– ছবি আকঁছি।
– ওটা তো একটা বিন্দু।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।
– কিন্তু আমি যে বৃত্তে আবদ্ধ হতে চাই না। আমি চাই অসীমের অধিকার।
– একটু অপেক্ষা করো। . . . এবার দেখো।
ওটা কি? ওটা তো মেঘ।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই আকাশ হবে। তুমি হবে নি:সীম দিগন্ত। আর আমি হবো দিগন্তরেখা।
– কিন্তু সে তো অন্ধকার হলেই মিলিয়ে যাবে। আমি চিরন্তন হতে চাই।
– আচ্ছা, এবার দেখো।
– একি! এ তো জল।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই সাগর হবে। তিনভাগ জলের তুমি হবে জলকন্যা। আর আমি হবো জলাধার।
– আমার যে খন্ডিতে বিশ্বাস নেই। আমার দাবী সমগ্রের।
– একটু অপেক্ষা করো। এবার চোখ খোল।
– ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।
– হ্যাঁ, এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম মমতায়, চিরন্তন ভালোবাসায়। এবার বলো আর কি চাই তোমার?
– সারাজীবন শুধু ওখানেই থাকতে চাই।★

“আমিও! আমিও তোমার হৃদয়ে থাকতে চাই সারাজীবন। ”
আনমনেই বলে ফেলে সাঁচি। বলেই জিব কাটলো সাঁচি। কি বলে ফেললো? কবিতা শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে যেন মনের কথাটাই বলে ফেলেছে?
আর এদিকে সে কথা শুনে ফুয়াদ হাসছে মিটিমিটি। সাঁচি কথা ঘোড়াতে জিজ্ঞেস করে-
“কয়টা বাজে?”
“এই তো, বারোটা বাজলো প্রায়।”
“উইশ ইউ এ ভেরি হ্যাপি বার্থডে। হ্যাপি বার্থডে, ডিয়ার হাবি।”
নার্ভাস হয়ে ফুয়াদকে উইশ করে দেয় সাঁচি।
“থ্যাংকু। বাট শুধু উইশে কাজ হবে না, গিফট কোথায় আমার? একটা কেকও তো আনোনি?”
“এই যা, ভুল হয়ে গেছে? এখন কি করবো? তুমি বলো কি চাই তোমার? কাল কিনে দেবো!”
“উহু, নগদ চাই, বাকির কোনো কারবার নাই।”
“বেশ তো বলোনা, কি চাই?”
“তোমাকে! তোমাকে! তোমাকে! দেবে না? আজকে চিরদিনের মতো আমার হওয়ার জন্য তোমাকে চাইছি সাঁচি! হবে কি আমার?”
লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনি হতে হতে অনেকক্ষণ পড়ে সাঁচি মৃদু স্বরে বলে-
“তো নাও। আমিও যে চাইছি আজ তোমার হতে!”
ফুয়াদ ততক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘাবরে যেয়ে সাঁচিও দাঁড়িয়ে যায়। ফুয়াদ এগিয়ে আসে সাঁচিও পিছিয়ে যায় আনমনেই। এবার ফুয়াদ একপা এগিয়েই সাঁচিকে হাত দিয়ে ধরে টান দেয়, বুকের উপর আনে-
“এবার?”
“কি?”
“চোখ বন্ধ করো?”
“কেন?”
“বোকা মেয়ে! আদর করবো তোমায়! লজ্জা পাবে না? তাই আগেই চোখ বন্ধ করতে বললাম।”
সাঁচি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফুয়াদ আজকে রয়ে সয়ে নয়,একেবারে জবরদখল করতে চাইছে যেন! সাঁচির ঠোঁট দু’টো নিমিষেই দখল করে নিলো। দখল দারিত্বে মরিয়া ফুয়াদ আজ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। সাঁচি ব্যাথায় আহ! আওয়াজ করতেই তার হুশ হলো। সে তখন ঠোঁট ছেড়ে অন্য কিছু দখলে বেশি মনোযোগী।
“আহ! কি করছো? ব্যাথা পাচ্ছিতো। একটু আস্তে? ডাকাত একটা!”
সাঁচির কাতর স্বর শোনা যায়।
” এতদিন তো ভদ্রলোক ফুয়াদকে দেখেছো, এবার একটু দস্যু ফুয়াদকেও দেখো!”
বলতে বলতে কোলে তুলে নেয় সাঁচিকে। রুমে এসে আলতো করে ফুলেল বিছানায় নামিয়ে দেয় সাঁচিকে। সাঁচি লজ্জায় মুখ ঢেঁকে শুয়ে থাকে। ফুয়াদ সাঁচির হাত দু’টো টেনে নেয়, দু’হাতে তার হাত দুটো ঢুকিয়ে নেয়, ফিসফিস করে ডাকে সাঁচিকে-
“তাকাও আমার দিকে?”
সাঁচি আধো আধো লাজুক চোখে ফুয়াদের দিকে তাকায়। ফুয়াদ সেই চোখে চোখ রেখে বলে-
“বউ, ভালোবাসি তোমাকে, অনেক অনেক ভালোবাসি। ”
“আমিও তোমাকে…..”
“কি?”
“ভালোবাসি…”
ফিসফিসিয়ে সাঁচিও উত্তর দেয়।

এরপর ওরা যখন একে অপরের মাঝে ডুব দিচ্ছিলো,আকাশেও যখন মেঘ সরে গিয়ে চাঁদটা দৃশ্যমান হচ্ছিল! তখন ওদের জীবনেও মান অভিমান, ভয় ভীতির মেঘ সরে গিয়ে ভালোবাসার আলো ছড়িয়ে পড়ছিলো।

পরিশিষ্টঃ মাস ছয়েক পর একদিন সাঁচি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে-” এই আমি যাবো না প্লিজ। তোমায় একা রেখে।”
“বউ,কেন জেদ করছো? মালয়েশিয়া কি অনেক দূর? আমি সুযোগ পেলেই চলে যাব আর সেমিস্টারের ব্রেকে তুমিও চলে আসতে পারবে। কেন এমন করছো বলোতো? মাত্র তো এক বছর! এতদিনের স্বপ্ন এভাবে নষ্ট হতে দেবে?”
সাঁচি মন খারাপ করে বসে থাকে। কি করতে যে এ্যাপ্লাই করেছিলো? এখন মাথার চুল ছিরতে ইচ্ছা হচ্ছে। আসলে সাঁচি মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স এ ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পেয়েছে। এক বছর থাকতে হবে তাই এখন যেতে চাচ্ছে না। আজই ওর ফ্লাইট। ফুয়াদ ওর পাশে এসে বসলো-
“আচ্ছা, বলোতো! বাচ্চারা যখন আমায় বলবে যে, মাম্মাকে তুমি পড়তে দাওনি কেন? তখন কি জবাব দেবো বলোতো?”
“বাচ্চা? কোথা থেকে আসবে?”
“কোথা থেকে আবার? তোমার পেট থেকে, গাধী? মানে ভবিষ্যতে ওরা যখন এই পৃথিবীতে আসবে তখন ওরা যদি বলে, তুমি তো তখন আমাকেই দোষী বানাবে,তাই না?”
“ও, তাহলে এইজন্য পাঠাতে চাচ্ছো?”
ঠোঁট ফুলায় সাঁচি।
“এই একদম ঠোট ফুলাবে না! খেয়ে নেবো একদম বলে দিলাম? এই পাগলি, এটাতো তোমার স্বপ্ন ছিলো, একটা বিদেশি ডিগ্রি। মানুষ সুযোগ পায়না, আর তুমি সুযোগ পেয়েছো,কাজে লাগাবে না? আর আমি তো কথা দিয়েছিলাম, তোমার সব শখ আহলাদ পূরন করবো। কথা রাখতে হবে না?আচ্ছা যাও, এবার পড়া শেষ করে আসলে আমরা বেবির জন্য ট্রাই করবো, ঠিক আছে?”
শেষের কথাটা কানে কানে ফিসফিস করে ফুয়াদ।
লজ্জা পায় সাঁচি। ফুয়াদের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে-
“সত্যি তো?”
“হুম, সত্যি! এবার জটপট তৈরি হও তো,তা না হলে কিন্তু ফ্লাইট মিস হবে।”

প্লেনটা যখন বাংলাদেশের সীমানা ছাড়ছিলো তখন সাঁচি আকাশের মেঘেদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো, অপেক্ষা শব্দটা এতোটাও খারাপ না। কোনো ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করাতেও সুখ আছে,সেটা কেবল পাওয়ার পরই বোঝা যায়। সাঁচি সেই মুহূর্তে প্রিয় পুরুষ টিকে পাশে নিয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী কল্পনা করছিলো। যে পৃথিবীতে ওর কোলে ফুটফুটে এক রাজকুমারী অথবা রাজকুমার খেলা করছিলো। সাঁচি, ফুয়াদ আর ওদের বাবুরা! একটু বেশিই সুন্দর ওর স্বপ্নটা! দোয়া রইলো এই সুন্দর জুটির জন্য!!! নতুন এক সাঁচি অথবা নতুন এক ফুয়াদ এই পৃথিবীতে আসুক,আরো একটি নতুন গল্পের জন্ম হোক এটাই কামনা!!!!!

সমাপ্ত।
Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here