#বিনি সুতোর টান,পর্ব-১৫,১৬
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৫
জানতে পরলাম মিহি বিয়ে করে নিয়েছে গতকাল। কথাটা শুনার পর আমি একদমই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ গতকাল রাতেও মিহি আমাকে বলেছিল তাকে যেন বাসা থেকে নিয়ে আসি। আমি ওকে জবাব দিয়েছিলাম সে যেন ধৈর্য ধরে আমি তাকে সময় মতো পরিবার ম্যানেজ করে নিয়ে আসব। একটা বারের জন্যও সে বলেনি তাকে দেখতে এসেছে বা বিয়ে করিয়ে নিয়ে যাবে। বললে হয়তো গতকাল রাতেই মিহিকে নিজের কাছে নিয়ে আসতাম। মিহির বাবার কথা শুনে আমার বুক থরথর করে কাঁপতে লাগল। কিছুই বলার অবকাশ পাচ্ছি না। তবুও জোর খাটিয়ে বললাম
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না মিহি বিয়ে করেছে।”
“দেখো নীল আমি তোমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। যতদূর মিহি, মিহির মা আর প্রেরণার মুখে শুনেছি ততদূর বুঝতে পেরেছি তুমি মিহিকে ভালোবাসো। তবে তোমার এ আবেগ ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী আবেগকে আর বেশিদূর না এগিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। আর তুমি মোটেও মিহির যোগ্য ছিলে না। মিহি যাকে বিয়ে করেছে সে মিহিকে হাত খরচেই দিবে লাখের উপর।”
আমি মিহির বাবার কথার মাঝে বলে উঠলাম
“আমিও দিতে পারব। সে ক্ষমতা তো আমার বাবা মায়ের আছে।”
মিহির বাবা জোরে হাসলেন। হেসে কটাক্ষ করে উত্তর দিলেন
“যোগ্যতা তোমার বাবার আছে তোমার নেই। আর মিহিকে তুমি ভালো রাখতে পারবে না। মিহির যে জায়গায় বিয়ে হয়েছে সেখানেই মিহি সুখী হবে। ছেলে ম্যাজিস্ট্রেড। আর তোমার কী যোগ্যতা আছে বলো? এখন পর্যন্ত তো একটা চাকুরিও নিতে পারো নি। বাবার টাকায় বসে বসে খাচ্ছ। মিহির আশা বাদ দাও। মিহি এখন বিবাহিত এটাই মাথায় রাখো।”
মিহির বাবা যতই বলছিলেন মিহি বিয়ে করেছে ততই আমার মনে হচ্ছিল তিনি হয়তো মিথ্যা বলছেন। মিহি হয়তো বিয়ে করেনি কিন্তু আমি যেন মিহিকে ছেড়ে দিই তাই এমন বলছে। আমি মিহির বাবার অফিস থেকে দ্রূত বের হলাম। মিহিকে কয়েকবার কল দিলাম লক্ষ্য করলাম ওর ফোন বন্ধ। বাধ্য হয়ে প্রেরণাকে কল দিলাম। প্রেরণাও যখন জানাল মিহি বিয়ে করে নিয়েছে তখন আমার বিশ্বাসটায় ফাটল ধরতে শুরু করল। প্রেরণাকে হাত জোর করে বললাম মিহির সাথে একটু কথা বলার সুযোগ যেন করে দেয়। প্রেরণা মিহির সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিল। মিহি কল ধরে হ্যালো বলতেই আমি বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম
“তুমি কি সত্যিই বিয়ে করে নিয়েছো? আমাকে ছাড়া তুমি অন্য একটা ছেলেকে কী করে বিয়ে করলে? আমি কি দোষ করেছি বলো?”
মিহির কণ্ঠসুর বদলে গেল। যে মেয়েটা গতকাল রাতেও তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঁদছিল,আমাকে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছিল সে মেয়েটা সেদিন মুখের উপর বলে দিল
“নীল তোমার কোনো যোগ্যতায় নাই আমাকে বিয়ে করার। আমি আমার বাবা মায়ের কথা মেনে নিয়েছি। বাবা মা কে আমি কষ্ট দিতে পারব না। আর যাকে বিয়ে করেছি সে তোমার থেকে অনেক যোগ্য।”
মিহির কথা শুনে আমি বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম
” সে যোগ্য তবে আমার মতো ভালো তো তোমাকে সে বাসতে পারবে না। মিহি আমি তোমাকে ছাড়া থাকব কী করে? তুমি কী করে পারলে আমাকে ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে? একটা বার বলতে বাসা থেকে জোর করছে আমাকে নিয়ে যাও। আমি তো তোমায় আমার কাছে নিয়ে আসতাম। কেন তুমি আমাকে কিছু না বলে এমন কাজ করলে। কেন মিহি আমাকে ছেড়ে গেলে? আচ্ছা তুমি কী আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো ভুলে গেছো? মজা করে করা বিয়েটার কথা কী একবারও মনে পড়েনি। মনে পড়েনি ৬-৭ টা বছরের স্মৃতি। যখন কবুল বলেছিলে তখন কী আমার মুখটা তোমার সামনে ভেসে উঠেনি? কেন এমনটা করলে তুমি বলো। আমি কীভাবে থাকব তোমাকে ছাড়া? তোমার সাথে কাটানো মুহুর্ত আমি কী করে ভুলব। যখন যা চেয়েছো দিয়েছি। টাকার তো আমার অভাব নেই তাহলে কেন অন্য কাউকে টাকার জন্য বিয়ে করলে।”
মিহিও আমার কথা শুনে তার বাবার মতো বলে উঠল
“টাকা তোমার বাবার অভাব নেই তবে তোমার তো কিছু নেই। তোমার মুরোদ নেই আমাকে নিয়ে সংসার করার। সে যোগ্যতা তোমার নেই। আর আমি আমার বর্তমানে নিয়ে হ্যাপি আছি। আর মানুষ চাইলেই সব ভুলতে পারে। তুমিও ভুলে যাবা একটা সময়। নিজের মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নাও। আর নীল আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম এটা অসত্য না। তবে পরিস্থিতির কাছে সব বৃথা হয়ে গিয়েছে। আমি তোমার কষ্টটা অনুভব করতে পারলেও কিছু করতে পারছি না। তুমি তোমার মতো নিজেকে গুছিয়ে নাও। আর কথা বলতে পারব না। আমাকে একটু পর তুলে নিবে।”
মিহির কথাটা শুনে আমি আর স্থির রইলাম না। প্রেরণার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে মিহির খালার বাসায় চলে গেলাম। মিহির বিয়েটা সেখানেই হয়েছে। আমি খালার বাসার সামনে যেতেই মিহির মুখোমুখি হলাম। মিহি তখন গাড়িতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মিহির দিকে তাকিয়ে আছি আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে জল পড়ছে। কোনো কথা বলতে পারছি না। মিহি শেষবারের মতো আমার দিকে তাকাল। তার সে চাহনি এখনও আমার চোখে ভাসে। জানি না আমার ভেজা চোখ তার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছিল কি’না। তবে সে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজেকে অনেকটা শান্ত করে গাড়িতে উঠে গেল। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। প্রেরণা এসে আমার পিঠে হাত দিয়ে বলল
“ভাইয়া আপনার এ কষ্টের জন্য আমি দায়ী। আমি যদি মিহির সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে না দিতাম তাহলে হয়তো মিহির জন্য এত কষ্ট পেতেন না। আপনি মিহিকে অনেক ভালোবাসেন তাই না?”
প্রেরণার প্রশ্নটা শুনে দাঁড়ানো থেকে মাটিতে ধপাশ করে বসে কাঁদতে লাগলাম। একজন ছেলে হয়েও মেয়েদের মতো কাঁদতে লাগলাম আমি। কোনো জবাব দিলাম না। প্রেরণার হাত টা ধরে উঠে সেখান থেকে চলে আসলাম রেল লাইনের কাছে। মা, বাবা, সবাই পাগলের মতো আমাকে কল দিচ্ছিল। আমি কারও কলেই ধরছিলাম না। কখন যে দিন পেরিয়ে রাত নামল খেয়াল নেই। রাত বাজে বারোটার উপর। আমি মিহিকে ছাড়া নিজেকে কল্পনার করতে আর পারছি না। এ সময়টায় আমি মিহির সাথে কথা বলতাম। আর আজকে মিহি আমার জীবনে নেই। এতদিনের অভ্যাস কী করে আমি ভুলি বুঝতে পারছিলাম না। আমার না হওয়া সংসারটা যেন অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে। মিহির সাথে মনে হত না আমি প্রেম করেছি মনে হয়েছিল আমি ওর সাথে সংসার করছি। এক টুকরো কেকের দেনমোহরে আমাদের পাতানো সংসার ছিল। সে মানুষটাকে এক নিমিষে আমি কী করে ভুলব বুঝতে পারিনি। কষ্টটাই প্রবল ভাবে আমাকে আঘাত করতে লাগল। এ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন লাগছিল। নিজেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। কানে ধেয়ে আসলো ট্রেনের ঝকঝক ধ্বনি। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম সিদ্ধান্ত নিলাম মিহিকে ছাড়া থাকার চেয়ে মরে যাওয়ায় অনেক ভালো। আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। দ্রূত পায়ে রেল লাইনের দিকে হেঁটে গেলাম। রেল লাইনের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই অদ্ভূত একটা ঘটনার সম্মুখীন হই। আর সে ঘটনা থেকেই জীবনটা পাল্টে গেল অনেকটা।
বলেই নীল চুপ হয়ে গেল। এতক্ষণ নীলের চোখ দিয়ে গড়গড় অশ্রু পড়লেও এখন তাকে বেশ স্বাভাবিক লাগছে। তবে নীলের চাপা কষ্টটা আমি একটু হলেও অনুভব করতে পারছি। আমি নীলের নীরবতাকে কেন্দ্র করে বললাম
“কী হয়েছিল তখন?”
নীল পুনরায় বলতে শুরু করল।
চলবে?
#বিনি সুতোর টান
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৬
নীল পুনরায় বলতে শুরু করল।
আমি যখন ট্রেনের নীচে ঝাপ দিতে যাব ঠিক তখন এক বৃদ্ধা আমাকে এসে ধরল। আমাকে টেনে রেললাইন থেকে খানিক দূরে নিয়ে গেল। জরাজীর্ণ শরীর হলেও গায়ের জোর বেশ ছিল। আমাকে টানতে টানতে কিছু দূর নিয়ে বসাল। আর আমি বোবার মতো পাথর হয়ে বসে আছি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। প্রচন্ড রকম খারাপ লাগা আর না পাওয়া ঘিরে ধরেছিল আমাকে। বৃদ্ধ লোকটা মোলায়েম গলায় বলল
“তুমি আত্মহত্যা কেন করতে যাচ্ছ?”
আমার কষ্টের মাত্রা এতই প্রখর হয়েছিল যে আমি বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনা বলতে লাগলাম। বৃদ্ধ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে লাগল
“বাবারে এ রেললাইনে আমার মেয়টাও নিজেকে বলি দিয়েছিল। তার প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে সে ও দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। তাকে বাঁচানোর জন্য কেউ ছিল না। আজকে সে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কী পেয়েছে বলো? আমার আর্তনাদ কি কমাতে পেরেছে? সব তো আমার গেল। একটা বারও ভাবলো না তার বাবা, মা তাকে ছাড়া কীভাবে থাকবে। পাঁচ বছরের ভালোবাসা হারিয়ে সে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল অথচ ২৪ বছরের ভালোবাসা হারিয়ে আমরা কেমন আছি সে কী জানে? আর যার জন্য মরেছিল সে তো দিব্যি সংসার করছে। তার মৃত্যুর জন্য কী কিছু থেমে আছে? কেনরে বাবা নিজের জীবন দিতে হবে? নিজেকে সামলাও। তুমি চলে গেলে তোমার বাবা মায়ের কেমন লাগবে একবার ভাবো। তারা তো তোমায় এত বছর এত মায়া ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করেছে। আর যে মেয়েটা তোমাকে ছেড়ে গিয়েছে তোমার মৃত্যু সংবাদ শুনে তার কয়েকটা দিন একটু অফসোস হবে তারপর ঠিকেই সুখে সংসার করবে। তোমার মৃত্যুতে তার কিছু যাবে আসবে না। বরং তোমার বাবা, মা তোমাকে হারাবে। আমার মতো তোমার জন্য ধুকে ধুকে মরবে। কেন তুমি মরে গিয়ে তাকে জবাব দিতে চাও। বরং তার সামনে ম্যাজিস্ট্রেড হয়ে তাকে আর তার বাবাকে জবাব দিয়ে দাও।।তোমার তো সময় চলে যায় নি। নিজের যত্ন নাও। আর নিজেকে গুছিয়ে তাকে উপযুক্ত জবাব দাও। জীবনটাকে এত ছোটো করে দেখো না। এ জীবনটা আল্লাহর দান। নিজেকে সামলাও বাবা।”
বৃদ্ধ লোকটার কথা শুনার পর আমার ভেতরে আচমকা এক পরিবর্তন আসলো। লোকটাকে আমার কেন জানি না ফেরেস্তা মনে হচ্ছিল। তিনি সেদিন না আসলে হয়তো আমার জীবনটা সেখানেই থমকে যেত। তিনি এসেছিলেন বলেই আমার জীবনটা আমি গুছানোর সাহস পেয়েছি। সেদিন রাতে বৃদ্ধ লোকটার কথা শুনে আমি আর আত্মহত্যার পথ বেছে নিই নি। সরাসরি বাসায় চলে আসি। মা আর বাবা আমাকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। বুঝতে পেরেছিলাম আমার কিছু হলে তারা কতটা কষ্ট পেত। আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে বাবা আর মাকে বললাম
“আমি ঠিক আছি। আমাকে ঘরে যেতে দাও। সকালে তোমাদের সাথে কথা বলব। একটু একা থাকতে চাই।”
বলেই ঘরে আসলাম। ঘরে আসার পর যতবার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতাম ততবার মিহির চোখটা ভেসে উঠত। তীব্র যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করত। মিহিকে ভুলার মতো দুঃসাহস আমি করিনি। কারণ আমি জানতাম আমি মিহিকে ভুলতে পারব না। তবে তার দেওয়া যন্ত্রণাটাকে হাতিয়ার বানিয়ে সামনের দিকে এগুতে পারব। আমি ঠিকেই নিজেকে বদলে নিয়েছি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। সেদিনের পর বৃদ্ধ লোকটার অনেক খুঁজ করেছি তবে উনার দেখা আর পাইনি। আমার এখনও বিশ্বাস হয় যে ঐ লোকটা আল্লাহ প্রেরিত কোনো ফেরেশতা ছিলেন। আজকে আমি প্রতিষ্ঠিত। তবে আমার শূন্যতার জায়গা একটাই আমি মিহিকে পাইনি।
কথাটা বলেই নীল চুপ হয়ে গেল। নীলের গাল বেয়ে অশ্রু পড়ছে। আমার ভেতরেও যেন শ্বাসবদ্ধ হয়েছিল। কোনোরকন দম ছেড়ে নীলকে জিজ্ঞেস করলাম
“আর মিহির কী খবর? সে কেমন আছে?”
নীল চোখের জলটা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বলল
” জীবনে যে যতটুকু করে তার ফিডব্যাক তো পায়। মানুষ শাস্তি না দিতে পারলেও উপর আল্লাহ ঠিকেই শাস্তি দেন। মিহিও শাস্তি পেয়েছে। মিহির বিয়ের ১ বছর পরেই ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার জীবনে আসতে চেয়েছিল তবে দুটো শর্ত দিয়েছিল। হয় তাকে বিয়ে করে মডেলিং করতে দিতে হবে নাহয় বাসা থেকে আলাদা থাকতে হবে। আমি মিহিকে ভালোবাসতাম তবে তার শর্ত দুটো মানা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি তাকে প্রত্যাক্ষান করি। সে আর আমার অপেক্ষা করেনি। মডেলিং করে। এরপর তার আবার বিয়ে হয়। সেখানে একটা বাচ্চা হয় এবং আবার ডিভোর্স হয়। এরপরও অনেকবার আসতে চেয়েছিল। তবে পরিবার চায়নি তাই আর আনতে পারিনি। আর এতকিছুর পর তার প্রতি আমার বিশ্বাস ও উঠে গিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তার প্রয়োজনে শুধু আমি ছিলাম। প্রিয়জনের জায়গাটার তালিকায় আমার নামটা অনেক আগেই সে কেটে দিয়েছে। এখন সে সিনগেল মাদার। জানি না কেমন আছে খোঁজ খবর নেই। শুধু দোয়া করি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। আমার মুখোমুখি যেন কখনও নাহয়।”
আমি বিস্ময় নিয়ে নীলকে জিজ্ঞেস করলাম
“আপনার মুখোমুখি হলে সমস্যা কোথায়?”
নীল থুতনীর নীচে হাত দিয়ে বলল
” ওর চাহনিই সমস্যা। জানেন আমি এখনও মিহিকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। মিহি যতবার আমার কাছে সুযোগ চেয়েছে ফোনে চেয়েছে। ভয়ে সামনে আসেনি। ও যদি সামনে এসে মাফ চাইত আমি তার চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে তাকে মাফ না করে থাকতে পারতাম না। আজও তার প্রতি আমার দুর্বলতা কাজ করে। তাই মন থেকে চাই তার মুখোমুখি যেন আমার কখনও হতে না হয়।”
কেমন জানি নীলের কথা শুনে এক অদ্ভূত রকম শূন্য লাগছে। মিহিকে একটুর জন্য হলেও দেখতে ইচ্ছা করছে। মেয়েটার মধ্যে কী এমন ছিল যার জন্য নীল এখনও তার স্মৃতি বহন করে বেড়াচ্ছে। এখনও তার জীবনে অন্য কাউকে আনতে পারছে না। পুনরায় নীলকে জিজ্ঞেস করলাম
“মিহি যদি আবার আপনার সামনে আসে আপনি কী তাকে মেনে নিবেন?”
“সময় বদলেছে। বয়সও বেড়েছে। মিহিকে আমি ভালোবাসি এখনও বাসি তবে এ পর্যায়ে এসে তাকে আমি মেনে নিতে পারব না। ভালোবাসা এক জিনিস আর ভালোবাসাকে পেতে চাওয়া অন্য জিনিস। আমার মধ্যে ভালোবাসা কাজ করলেও ভালোবাসা পেতে চাওয়ার কোনো মোহ কাজ করে না। আর আমি মিহিকে আমার জীবনে আর মানতে পারব না। মিহির চাপ্টার অনেক আগেই ক্লোজ করে দিয়েছি। মিহিকে আমার জীবনে চাইলে ওকে অনেক আগেই মেনে নিতাম। তবে ওকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে আর সম্ভব না। ”
“বিয়ে কেন করছেন না?”
“বিশ্বাস করতে পারি না কাউকে। একবার ধাক্কা খেয়েছি তো আবার ধাক্কা খাওয়ার প্রবল ভয় কাজ করে। যেদিন কারও প্রতি বিশ্বাসটা আসবে সেদিন কাউকে বিয়ে করব ভালোবাসব। ”
“আপনার তো বয়স বাড়ছে সে খেয়াল কী আছে?”
“বাড়ুক। আমার তাতে মাথা ব্যাথা নেই। আর বিয়ে নিয়েও চিন্তা নেই। বিয়ে শেষ বয়সেও করা যাবে।”
কথাটা বলে নীল চুপ হয়ে রইল। আমিও চুপ। ফজরের আযানের ধ্বনি বাইরে থেকে ধেয়ে আসছে। গল্প শুনতে শুনতে কখন যে সকাল হয়ে গেল টেরেই পেলাম না। কাহিনটা শুনার পর থেকে কেমন জানি অস্থির লাগছে। নিজেকে অনেকটা সামলে নিলাম তারপরও।
চুপচাপ বসে আছি দুজন। মিনেট দশ পার হলো। হুট করে পেটটা ভীষণ মুচরাতে লাগল। বুঝতে পারছিলাম আমার ওয়াশরুমে যেতে হবে। তবে ক্রাশের সামনে কীভাবে ওয়াশ রুমে যাব বুঝতে পারছি না। আমি নীরবতা ভেঙে নীলকে বললাম
“আপনি চলে যান এখন। পরে কথা হবে।”
নীল আমার মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা চমকালো তবে কোনো প্রশ্ন করল না। তিনি সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। এখন এদিকে আমি পড়েছি বিপাকে। একা একা ওয়াশরুমে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। উঠে দাঁড়াতেই পারি না ঠিক করে। মাজেদা খালাও নেই যে তাকে ডাক দিব। আন্টিকেও ডাক দেওয়ার কোনো উপায় পাচ্ছি না। তাই বেশ পাকনামি করে নিজে নিজে ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে ধপাশ করে পড়লাম। পড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে বিষয়টা ভালো হত তবে এর বিস্তৃতি যে এত গভীর পর্যন্ত তলাবে কে জানত?
চলবে?