বৃষ্টি শেষে পর্ব – ২৫,২৬,২৭

0
1184

বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ২৫,২৬,২৭
আমিরাহ্ রিমঝিম
পর্ব – ২৫

সামিয়া, যূথি, রাইসা তিনজন রাইসার দাদির ঘরের বারান্দায় বসে। তিনজনের হাতেই চায়ের কাপ। সিলেটের চমৎকার চা, নাফিদ নিয়ে এসেছে । দারুণ স্বাদ, ঘ্রাণও অসাধারণ। আর চা টা নাফিসা বানানোর জন্য স্বাদ যেন আরো বেড়ে গেছে।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝম করে। বৃষ্টি দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে তিন বান্ধবী। আর সেই সাথে চলছে তাদের গল্প – আজগুবি গল্প, কাজের গল্প, সংসারের গল্প, পড়ালেখার গল্প, ছোটবেলার গল্প…

– রাইসার বিয়ের পর আর তো রিতুর সাথে দেখাই হলো না।

যুথি কিছুটা মন খারাপ করে বললো। সামিয়াও তাতে সায় জানিয়ে বললো,

– হ্যাঁ, আগে চারজন একসাথে হলে বেশ মজা হতো।

হঠাৎ কি একটা খেয়াল হতেই সামিয়া খুশিতে প্রায় লাফিয়ে উঠলো।

– আচ্ছা, রিতুকে ভিডিও কল দিলেই তো হয়।

যুথিও খুব খুশি হলো সামিয়ার কথায়।

– হ্যাঁ, ভিডিও কল দে ওকে। তার আগে কল দিয়ে দেখ ব্যস্ত আছে নাকি আবার।

রাইসা কল দিয়ে ব্যস্ত নেই জেনে ভিডিও কল দিলো রিতুকে। দেখা গেলো ওদের তিনজনের মতো রিতুর হাতেও চায়ের কাপ। এটা নিয়ে হাসাহাসি হলো কিছুক্ষণ চারজনের মধ্যে।

রিতুর সাথে কথা বলা শেষ হলে সামিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো বারান্দায় কাপড় ছিল যেগুলো ঘরে আনা হয়নি। এতক্ষণে হয়তো আরো ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। মনের হতাশা মুখে ফুটে উঠলো সামিয়ার।

– কি রে, দুলাভাই আসেনি দেখে মন খারাপ?

নিজের চিন্তার সাথে সম্পর্কহীন প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুচকে যুথির দিকে তাকালো সামিয়া।

– না, সেকারণে না। তবে জামাই কাছে না থাকলে মন খারাপ থাকতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু নাকি?

– ওওওওওওওওও আচ্ছায়ায়ায়ায়ায়ায়া, এতো ভালোবাসায়ায়ায়ায়া?

যুথি টেনে টেনে বললো। এদিকে দুজনের কথা শুনে রাইসা মিটিমিটি হাসছে।

– হ্যাঁ, আমার জামাইকে আমি ভালোবাসি।

– আরেএএএএএএএএএ….! দুলাভাইকে তো জানাতে হবে তার বউ মাশা আল্লাহ তাকে এতো ভালোবাসে…..

– তোদের কেন কষ্ট করে জানাতে হবে? আমিই জানাচ্ছি।

সামিয়া ওর হাজবেন্ডকে কল দেয়। সে আজকে আসতে পারেনি নাফিদদের বাসায়, বন্ধুদের একটা গেট টুগেদারে গিয়েছে। একবার রিং হতেই অপরপাশ থেকে কল রিসিভ হয়।

– আসসালামু আলাইকুম

– ওয়ালাইকুমুসসালাম। হ্যাঁ সামিয়া বলো।

– আমি তোমাকে ভালোবাসি।

ওর হাজবেন্ডকে আর কিছুমাত্র বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় সামিয়া। যুথি আর রাইসার তো হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে সামিয়ার হাজবেন্ড ফোন হাতে নিয়ে বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি ছিলো?

যুথি বহুকষ্টে হাসি কিছুটা কমিয়ে বললো,

– দুলাভাই মনে হয় একটু পরেই আবার কল দিবে।

উত্তরে সামিয়া কিছু বলার আগেই সত্যি সত্যি ওর হাজবেন্ডের কল এলো। যুথি আর রাইসার হাসি আবার বেড়ে গেলো। হাসতে হাসতেই সামিয়াকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে বারান্দা থেকে চলে এলো যুথি আর রাইসা।

……….

দাদির ঘর থেকে দুইজন বের হতেই শুনতে পেলো রাইসাকে নাফিদ ডাকছে। যুথির কাছে চায়ের খালি কাপ দিয়ে দ্রুতপায়ে হেটে নাফিদের ঘরে গেলো রাইসা।

– ডাকছেন আমাকে?

– হ্যাঁ, শোন। ইমদাদ তোর হার দিয়ে গেছে আজকে আমার কাছে। এখন খেয়াল হলো তাই বলে রাখলাম, পরে ভুলেও যেতে পারি। যাওয়ার সময় মনে করে নিয়ে যাস।

রাইসা হারটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। কি যে একটা অবস্থা ছিলো তখন, নিজের বাবার দেয়া হার অন্যরা খুলে নিয়ে গেছে অথচ রাইসা কিছুই বলতে পারেনি।

– অবশ্য তুই চাইলে রেখেও যেতে পারিস। একই কথা।

নাফিদের কথা শুনে রাইসা অবাক হয়ে নাফিদের দিকে তাকায়, পরপরই আবার অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

নাফিদের হাতে মগভর্তি চা। চায়ে এক চুমুক দিয়ে বলে,

– চা খাসনি রাইসা?

– খেয়েছি।

– ভালো না?

– হ্যাঁ, মাশা আল্লাহ অনেক ভালো। খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। সিলেটের সব চা ই কি এতো ভালো?

রাইসার উচ্ছ্বসিত কথাবার্তা শুনে নাফিদের ভালো লাগে। ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নাফিদ বলে,

– বারান্দায় গিয়ে বসি চল?

এতোক্ষণ ধরে যে ও বারান্দাতেই বসে থেকে এসেছে সেটা আর বলে না রাইসা, রাজি হয়ে যায়।

বারান্দায় গিয়ে বসতে বসতে নাফিদ বলে,

– সিলেটের সব চা এতো ভালো না। সবরকম চা ই আছে।

– সিলেটে নাকি অনেক বৃষ্টি হয়?

– হ্যাঁ, প্রচুর বৃষ্টি হয়। পাহাড়ি ঢালে বন্যাও হয়।

রাইসা বাইরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকে। নাফিদও বৃষ্টি দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দেয়। খানিকক্ষণ নিরবতার পর নাফিদ বলে,

– রাইসা?

ডাক শুনে যেন রাইসার ঘোর ভাঙ্গে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় নাফিদের দিকে। নাফিদ চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে মগটা দূরে সরিয়ে রেখে সরাসরি তাকায় রাইসার দিকে।

– তোকে কিছু কথা বলি, শোন। কখনো যদি কোনো কারণে তুই আমার উপর আপসেট হয়ে যাস, আমার কোনো কাজে যদি কষ্ট পাস, সরাসরি আমাকে বলবি। আমার সাথে আলোচনা করে ব্যাপারটার সমাধান করার চেষ্টা করবি, পেছনের কারণ যত সামান্যই হোক না কেন। ঠিক আছে?

– চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

– হুম গুড।

নাফিদ জানে না রাইসা কতটুকু কি বুঝলো, তবে এই কথা গুলো ওকে বলা খুব জরুরি ছিলো। হাবিজাবি ছোটখাটো ঘটনা নিয়েই ওর আর লাবন্যের সম্পর্কের ধীরে ধীরে অবনতি হয়েছে, দোষ অবশ্য দুইজনেরই ছিলো। এই কথা একবার ভেবেছে রাইসাকে বলবে, কিন্তু দুইজনের মাঝখানে লাবন্যর প্রসঙ্গ টানতে মন চাইলো না।

দুইজন আবারো চুপ। বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে রাইসা বললো,

– সিলেটের গল্প বলুন না আরো।

নাফিসা এসেছিলো রাইসা আর নাফিদকে খুজতে। গরম গরম মোগলাই ভাজা হয়েছে, সাথে টক-মিষ্টি-ঝাল তেতুলের চাটনি। ডাইনিংয়ে সবাই বসে গল্প করছে আর নাস্তা খাচ্ছে। এজন্যই নাফিসা এসেছিলো ওদেরকে ডাকতে। কিন্তু দুইজনকে গল্প করতে দেখে আর ডাকলো না, ঘুরে চলে গেলো।

( চলবে ইনশাআল্লাহ)

বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ২৬
আমিরাহ্ রিমঝিম

সন্ধ্যা পেরিয়েছে তখন। বৃষ্টি না থাকলেও কাদার কারণে সাবধানে হাটতে হচ্ছে। তবুও রাস্তায় বেশ মানুষ। চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে এসব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে রাইসা।

– চলে এসেছি রাইসা।

নাফিদের কথা শুনে রাইসা খেয়াল করে ওদের গাড়িটা একটা শপিং মলের সামনে এসে থেমেছে। নিজে গাড়ি থেকে নেমে রাইসাকেও নামতে সাহায্য করে নাফিদ। তারপর উবারের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রাইসার কাছে এসে দাঁড়ায়। শপিং শেষে রাইসাকে বাসায় দিয়ে একেবারে সিলেটের বাসে উঠার প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছে নাফিদ, তাই আজ আর গাড়ি আনেনি।

রাইসা নাফিদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আপনি এতোবড় একটা ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘুরবেন?

নাফিদ হাসে। হেসে বলে,

– কোনো সমস্যা নেই। চল।

ঘুরে ঘুরে অনেক কিছুই কেনা হলো। রাইসার জন্য যা কেনা হলো সব নাফিদের পছন্দে। রাইসা ইচ্ছা করেই সব নাফিদের পছন্দে নিয়েছে। যেটাই কিনতে গিয়েছে, নাফিদকে জিজ্ঞাসা করেছে কোনটা নিবে। নাফিদ যেটা পছন্দ করেছে সেটাই দিতে বলেছে।

রাইসার জন্য চারটা শাড়ি আর চারটা সালওয়ার কামিজ কিনে দিলো নাফিদ, যদিও রাইসা আপত্তি করেছিলো নিজের জন্য এতো জামাকাপড় নিতে। রাইসার বাবা-মা, রাকিব-রাহিবের জন্যও কেনাকাটা করলো। শেষে রাইসাকে কসমেটিকসের দোকানে নিয়ে গিয়ে বললো যা ভালো লাগে নিয়ে নিতে, কিন্তু এক আইলাইনার ছাড়া রাইসার আর কিছুই পছন্দ হলো না।

কেনাকাটার পর্ব শেষ হলে একগাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে ফুড কর্নারে আসে দুইজন। আয়োজন করে ডিনার করতে গেলে নাফিদের দেরি হয়ে যাবে। তাই হালকা পাতলা কিছুই ভরসা।

এতগুলো টেবিল খালি থাকা সত্ত্বেও নাফিদ একটাতেও বসছে না, এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এতোক্ষণ ধৈর্য্য ধরে নাফিদের কাজ কারবার দেখার পর শেষে রাইসা জিজ্ঞাসা করলো,

– খাবার কি পার্সেল করে নিয়ে যাবো আমরা?

– না তো।

– তাহলে বসছেন না কেন? কতগুলো টেবিল তো খালি আছে।

– তুই কিভাবে খাবি? এখানে বসে খেতে গেলে তো আশেপাশের সবাই দেখতে পাবে।

– সমস্যা নেই। আমি নিকাব পরে খেতে পারি, অভ্যাস আছে।

রাইসা অভয় দেয়ার পর অবশেষে দুইজন একটা টেবিলে বসলো। খাবার আসতে বেশিক্ষণ লাগলো না।খেতে খেতে নাফিদ প্রশ্ন করলো,

– তুই খাস কিভাবে? নিকাব পরেই?

উত্তরে রাইসা কিছু বললো না, নিকাব পরে খেয়ে দেখালো।

……………

নোটটা সরিয়ে রেখে ঘড়ির দিকে তাকালো রাইসা। এক ঘন্টাও হয়নি পড়তে বসেছে, এখনি বিরক্ত লাগছে। এদিকে সেমিস্টার ফাইনাল চলে এসেছে আবারো। আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই পরীক্ষা, একটু যদি পড়তে ইচ্ছা করতো।

পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে যায় রাইসা। কি করবে ভাবতে থাকে। হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা আইলাইনারটার উপর। সেদিন নাফিদের সাথে শপিংয়ে গিয়ে কিনেছিলো। অবশ্য ও কিনেনি, নাফিদই কিনে দিয়েছে সব।

দুই চোখে আইলাইনার দিয়ে আয়নার দিকে তাকায় রাইসা। চোখের সাজটা পছন্দ হয় ওর।

সেদিন নাফিদের দেয়া সবগুলো শাড়ি বের করে বিছানায় রাখে। কিনে আনার পর আর শাড়িগুলো ব্যাগ থেকে বের করে দেখাও হয়নি। শাড়িগুলো দেখতে দেখতে শাড়ি পরার ইচ্ছে হয় ওর। চারটার মধ্যে একটা বাছাই করে বাকিগুলো আবার গুছিয়ে রেখে দেয়।

শাড়ি পরে নিজেকে আয়নায় দেখে রাইসা। শপিংয়ের ক্ষেত্রে নাফিদের চয়েস অনেক ভালো। শাড়িটাতে রাইসাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে। আচ্ছা, ও যে শাড়ি পরেছে এটা কি জানাবে নাফিদকে?

রিং হতে হতে যখন রাইসা ভেবে নিলো নাফিদ রিসিভ করবে না, তখনি অপরপাশ থেকে কল রিসিভ হলো। নাফিদ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,

— আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?

রাইসা আশ্চর্য হলো কিছুটা। রাত সাড়ে দশটাও বাজেনি, এখনি ঘুমাচ্ছেন?

— ওয়ালাইকুমুসসালাম।

— রাইসা?

— আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি ঘুমাচ্ছেন। ঘুম টা ভেঙ্গে দিলাম আপনার।

অপরাধী কন্ঠে বলে রাইসা।

নাফিদ হেসে ফেলে।

— রাইসা, শোন। তুই আমার ওয়াইফ। তোর যখন ইচ্ছা আমাকে ফোন করবি, দরকারেই হোক বা অদরকারে। কিন্তু পারলে রাত সাড়ে নয়টার আগে ফোন করিস, এরপর ঘুমিয়ে যাই আমি।

— এতো জলদি ঘুমান?

নাফিদ আবার হাসে।

— এখানে তো আর কোনো কাজ নেই। খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুম। আর অফিসের কাজ যদি কিছু থাকে সেগুলোই।

— ওহ আচ্ছা, আপনি ঘুমান তাহলে।

নাফিদের ঘুম এতোক্ষণে ছুটে গেছে।

— নাহ্, আয় গল্প করি।

— আপনার ওখানে শব্দ কিসের? বৃষ্টি হচ্ছে?

— হ্যাঁ, প্রচুর বৃষ্টি হয় এখানে।

— আমি কখনো সিলেট যাইনি।

রাইসা শাড়ি পরার কথা আর বলেনা নাফিদকে। ওদের গল্পের বিষয়বস্তু সিলেট থেকে শুরু হয়ে কোথায় কোথায় চলে যায়।

এদিকে মিনিটের পর মিনিট পার হয়ে ঘন্টা হয়ে যায়, ওদের দুজনের গল্প ফুরায় না।

( চলবে ইনশাআল্লাহ )

বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ২৭
আমিরাহ্ রিমঝিম

লাঞ্চ আওয়ারের পর আবার অফিসের কাজ শুরু হয়েছে বিশ মিনিট হয়। নাফিদ গভীর মনযোগে ডেস্কটপে কিছু একটা দেখছিলো, ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো তখন। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রীনে “রাইসা” লেখা। মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো নাফিদ, সাথে সাথেই অপরপাশ থেকে সালামের আওয়াজ ভেসে এলো।

— আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুমুসসালাম। কি খবর? পরীক্ষা শেষ তোর?

— হ্যাঁ, একটু আগেই শেষ হলো।

— কেমন দিলি পরীক্ষা?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে।

— যাক আলহামদুলিল্লাহ। ঠিক আছে তুই তাহলে বাসায় যা, পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

— লাঞ্চ আওয়ার শেষ আপনার?

— হ্যাঁ, পনেরো বিশ মিনিট আগে শেষ হলো।

— ঠিক আছে, রাখছি তাহলে। আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুমুসসালাম।

ফোন রেখে দিয়ে আবার কাজে মন দিলো নাফিদ। মুখের হাসিটুকু তখনো রয়ে গেছে।

কাছেই কয়েকজন কলিগ ছিলো। একজন কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— কার সাথে কথা বললেন?

নাফিদের মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হলো। জবাব দিলো,

— আমার বেটার হাফ।

এবার যেন একেকজন খুবই অদ্ভুতভাবে চেয়ে রইলো ওর দিকে। নাফিদ অনেক ভেবেও কিছুতেই বুঝতে পারলোনা এদের হলোটা কি। হঠাৎ খেয়াল হলো ও এতক্ষণ রাইসার সাথে তুই তুই করে কথা বলছিলো কলিগদের সামনে।

…………….

কিছুদিন হলো বাবা-মায়ের সাথেই আছে দিশা । এখন ভার্সিটির এসাইনমেন্ট নিয়ে পড়েছে ঝামেলায়। কালকের মধ্যে স্যারকে মেইল করে দিতে হবে এসাইনমেন্ট, কিন্তু দিশা অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি। শোভাকে সাথে নিয়ে বসে কাজ করা যাচ্ছে না, এদিকে দিশার মা বাসায় নেই আর ওদিকে দিবা ঘুমাচ্ছে। অগত্যা ঠিক করলো শোভাকে কোলে নিয়েই যতটুকু সম্ভব এসাইনমেন্ট করে রাখবে। রাইসা আর তিন্নি আসবে বলেছে, ওরা আসলে তো ওদের সাথেই গল্প করা হবে।

কলিংবেল বেজে উঠলো দরজার। আর শোভা সে কি খুশি! কলিং বেলের আওয়াজ পেলেই কে এসেছে দেখার জন্য অস্থির হয়ে যায়। দিশা দরজা খুলে দেখলো রাইসা এসেছে। সালাম পর্ব শেষ করে ঘরে ঢুকে রাইসা যখন নিকাব খুলে রাখলো শোভার খুশি দেখে কে! এতোক্ষণ বুঝতে পারেনি কে এসেছে। যখন বুঝতে পারলো দিশার কাছ থেকে রাইসার কোলে গিয়ে খুশিতে চিৎকার করতে করতে হাত পা ছুড়তে শুরু করলো। ওর কান্ড দেখে হেসে ফেললো দুজনই।

রাইসা আর তিন্নি দুজনই শোভার খুব পছন্দের। যখনি দিশা ওদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে, শোভা আশেপাশে থাকলে ওরও রাইসা আর তিন্নির সাথে কথা বলতে হবে। আর দুইজন বাসায় এলে তো কথাই নেই।

শোভা এরই মধ্যে রাইসাকে বিরক্ত করতে শুরু করেছে। শোভাকে কতগুলো খেলনা এনে দিয়ে দিশা রাইসার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে, তারপর রাইসার কাছে বসে।

— তিন্নি আসবেনা?

— ওর নাকি একটু দেরি হবে বললো।

রাইসা এদিন ওদিক তাকিয়ে বলে,

— বাসায় কেউ নেই আর?

— আম্মু একটু উপর তলায় গিয়েছে, আর দিবা ঘুমাচ্ছে। আর শোভা জ্বালাচ্ছে আমাকে। ওর জন্য এসাইনমেন্টটা আগাতে পারছি না ঠিকমতো।

— এখন করতে পারিস এসাইনমেন্ট, আমিতো শোভার কাছে আছি।

— হ্যাঁ, ঠিকই তো বলেছিস। তা তো করাই যায়।

শোভা রাইসার সাথে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে গেলো। রাইসা দিশার কাছে বলে শোভাকে খুব সাবধানে দিবার পাশে শুইয়ে দিলো। তারপর এসে দাড়ালো দিশার কাছে। দিশার এসাইনমেন্ট তখন অনেকখানি এগিয়েছে। বাকিটা কালকের মধ্যে করে ফেলতে পারবে ইনশাআল্লাহ, তাই এখনকার মতো রেখে দিলো। রাইসাকে বললো,

— চল সোফায় গিয়ে বসি।

সোফায় বসে প্রথমে দিশা তিন্নিকে ফোন করলো। এতো দেরি করছে যে! কথা শেষ হলে রাইসা জিজ্ঞাসা করলো,

— কি বলে তিন্নি?

— বললো আসছে, রাস্তায় আছে।

কিছুক্ষণ থেমে দিশা বললো,

— আচ্ছা, তোর কি খবর? নাফিদ ভাইয়ার সাথে তোর সম্পর্ক কেমন?

রাইসা প্রফুল্ল হেসে বলে,

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এখন অনেক ইজি ফিল করি উনার কাছে।

— আলহামদুলিল্লাহ, সেটা তো অনেক ভালো। তোকে কি ভাইয়া সিলেট নিয়ে যাবেন?

— না, উনিই ঢাকায় আসবেন শুনেছি। সিলেটের জব ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় জব নিবেন।

মাঝখানে পরীক্ষার জন্য অনেকদিন নাফিদদের বাসায় যাওয়া হয়নি রাইসার। সেসময় একবার নাফিদ ঢাকায় ফিরে জানিয়েছে সে একেবারে ঢাকায় ফিরতে চায়। বাবার কাছ থেকে এটা জেনেছে রাইসা।

ওদের দুজনের কথার মাঝখানেই আবার কলিংবেল বেজে উঠে। এদিকে রাইসা এসে দরজা খুলে দেয়, তিন্নি এসেছে। আর ওদিকে কলিংবেলের আওয়াজে শোভার ঘুম ভেঙে যায়, দিশা যায় ওর কান্না থামাতে। দিবার ঘুমও ভেঙে গেছে।

তিন্নি গেছে হাতমুখ ধুতে, দিবা চোখ বন্ধ করে বসে আছে, ওর চোখ থেকে ঘুম যায়নি এখনো। দিশা শোভাকে আবার ঘুম পাড়ানোর জন্য কোলে নিয়ে ঘন দিয়ে হাটছে।

রাইসা একা একা সোফায় বসে ছিলো, ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে যায়। শুধু শুধুই নাফিদের প্রোফাইল ঘাটতে থাকে। নাফিদের প্রোফাইল ছবিটা পাল্টেছে। এবারের ছবিটাও চা বাগানে তোলা, তবে এই ছবিতে নাফিদের চোখ দুটি উজ্জ্বল, আগের সেই বিষাদভাব নেই।

( ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বে সমাপ্তি )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here