তোর_অপেক্ষায়,পর্ব_১৮,১৯

0
660

#তোর_অপেক্ষায়,পর্ব_১৮,১৯
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৮

চোখ খুলতেই ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখতে পেলাম মাথার উপর সিলিং ফ্যান অল্প গতিতে ঘুরছে।উজ্জ্বল লাইটের আলো চোখে লাগতে চোখ কুঁচকে উঠল।কিছুসময় পর আলোটা সয়ে আসলে ধীরে ধীরে তাকালাম।ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমার মাথাই ঘুরে উঠছে।এতক্ষণে টের পেলাম আমি শুয়ে আছি বিছানার উপর।কিন্তু এটা কার ঘর?
চটজলদি উঠে বসলাম।মাথার ভেতর কেমন যেন দুমদুম শব্দ হচ্ছে। একহাতে মাথা চেপে ধরে পুরো রুমে নজর দিলাম।বেড থেকে কিছু দূরে একটা সোফার উপর একজন পুরুষকে বসে থাকতে দেখে হঠাৎ ক্ষণিকের জন্য চমকে উঠলাম।মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে আছে।লোকটির চেহারা না দেখেও আমি নিঃসন্দেহে বলে দিতে পারছি এটা দুর্জয় ভাইয়া।মাথা নিচু করে থাকার কারণে এখনো খেয়াল করেনি আমায়।রুমের আশেপাশের আসবাবপত্র এবং সরঞ্জাম জানান দিচ্ছে আমি বর্তমানে কোনো এক হসপিটালের কক্ষে।আমার কি হয়েছিল?
চোখ বন্ধ করে সবটা মনে করার চেষ্টা করলাম।আজ সকালে খালামণির বাসা থেকে সোজা ভার্সিটি গিয়েছি।দুটো ক্লাস শেষে তৃতীয় ক্লাস করার সময় হঠাৎই মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়।এই ব্যথা মাঝেমধ্যেই দেখা দেয় কিন্তু আজকের মত জোরালো অনুভূত হয়নি কখনো।মাথা ব্যথার ধাক্কা সামলাতে না পেরে পাশে বসে থাকা মেয়েটার হাত বাজেভাবে খামচে ধরেছিলাম।শুধু এটুকুই মনে করতে পারছি।তাহলে কি আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম?অবস্থা কি এতই খারাপ ছিল যে আমাকে হাসপাতালের দরজা পর্যন্ত আসতে হয়েছে?বেডের পাশের আধখোলা জানালা দিয়ে অন্ধকার আকাশ দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলাম।ক’টা বাজে কে জানে!আমি সারাদিন সেন্সলেস ছিলাম নাকি!

গায়ের উড়না ঠিকঠাক করে দুর্জয় ভাইয়াকে ডাকার চেষ্টা করলাম।উনার সাড়া নেই।বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছেন বোধহয়।আবার এতক্ষণ কথা না বলার কারণে আমার গলার স্বরও ক্ষীণ শোনা যাচ্ছে।তাই কিছুক্ষণ থেমে কিছুটা চেঁচিয়ে ডেকে উঠলাম,

‘ দুর্জয় ভাইয়া..!’

দুর্জয় ভাইয়া ঝট করে মাথা তুললেন।উনার চোখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে।উসখুসকো চুলগুলো কপালের উপর পড়ে আছে।মুখখানা শুকিয়ে বিবর্ণ প্রায়।উনার আপাদমস্তক দেখে নিমিষেই বুঝে গেলাম বিগত কয়েকঘন্টা উনি স্থির হয়ে দুদণ্ড বসতে পারেননি।
দুর্জয় ভাইয়া ঝড়ের মত ছুটে আসলেন আমার কাছে।পাশে বসে কপালে চিন্তার ভাজ তুলে বলতে লাগলেন,

‘ স্যরি চোখটা হঠাৎ লেগে গেছিল।এখন কেমন লাগছে।আর ব্যথা নেই তো!তোর কখন জ্ঞান ফিরেছে?’

‘ আরে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করুন না!এমন তীরের মত প্রশ্ন ছুড়লে কি করে উত্তর দেব?’

দুর্জয় ভাইয়ার শুকনো ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল।
‘ ঠিক আছে।তুই একে একে সব উত্তর দে।’

‘ প্রথমত আমার হসপিটালের এই রুমে দম বন্ধ লাগছে যেমনটা আগে লাগত।দ্বিতীয়ত এখন আর ব্যথা নেই।তৃতীয়ত আমার মাত্রই জ্ঞান ফিরেছে।এবার আপনি বলুন সত্যি করে আমার কি হয়েছিল! ক্লাস করতে করতে হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হলো এরপর আর কিছু মনে করতে পারছি না।’

দুর্জয় ভাইয়া সযত্নে আমার ডানহাতটা নিজের হাতে টেনে নিলেন।কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতের উল্টো পিঠে ইচ্ছেমতো অগুনিত চুমু খেয়ে ফেললেন।এমন অসুস্থতার মধ্যেও উনার ছোঁয়ায় আমার শরীর শিউরে উঠল।হাত ছাড়াতে নিলেই আরো শক্ত করে ধরে বললেন,

‘ তীব্র মাথাব্যথার কারনেই মূলত সেন্স হারিয়েছিস।ডক্টর বলেছে এখন ভয়ের কিছু নেই।ঘুমের ওষুধ দেওয়ার কারণে এতক্ষণ ঘুমিয়েছিস।চিন্তা করিস না কাল সকালে রিলিজ করে দেবে।’

‘ কিন্তু মা কোথায়?বাড়ির লোকজন কোথায় সব?’

‘ এখন রাত কয়টা বাজে জানিস?দশটার কাছাকাছি।সবাই-ই ছিল হসপিটালে একটু আগে বলে কয়ে বিদায় করেছি।খালামণি টেনশনে অসুস্থ হয়ে গেছিল প্রায়।’

‘ হসপিটালে আপনি ছাড়া কেউ নেই?’

‘ বাইরে ইমন আর আম্মু আছে।ইমন গেছে খাবার আনতে।তুই বোস আমি ডক্টরকে ডেকে আনি।’

দুর্জয় ভাইয়া উঠে দরজার কাছে যেতেই আমি কোমল গলায় ডেকে উঠলাম,

‘ শুনুন! ‘

দুর্জয় ভাইয়া ফিরে তাকালেন।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার আগের জায়গায় এসে বসলেন।উনার শুকনো চেহারা খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললাম,
‘ আপনি কেনো বাসায় যাননি?আপনাকে দেখতে খুব ক্লান্ত লাগছে।’

দুর্জয় ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,
‘ ক্লান্ত দেখালেও আমি একদম ফিট আছি।আর তোকে এখানে ফেলে আমি বাসায় যাব ভাবলি কি করে?’

‘ দেখুন আমিও এখন ফিট আছি।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অফিস থেকে চলে এসেছেন।গায়ে এখনো ফরমাল ড্রেস।আপনি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন কাল সকালে না হয় আসবেন।’

‘ চুপ থাক! আমাকে তুই কেনো অর্ডার দিবি?অর্ডার দেওয়ার কাজ আমার।কাল তোকে রিলিজ না দেয়া পর্যন্ত আমি হসপিটালেই থাকব।বুঝলি?’

এমন ধমক শুনে আমার মুখ কালো হয়ে গেল।আমি উনাকে কোথায় অর্ডার দিলাম আজব।ভালোর জন্য বলতে গেছি উল্টো আমাকেই কথা শোনাচ্ছে।এজন্যই বলে দুনিয়াতে কারো ভালো চাইতে নেই। হাড়ে বজ্জাত লোক একটা।
উনার দিকে একঝলক কড়া চাহনি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম।যা ইচ্ছা করুক।
হঠাৎ উনি হ্যাঁচকা টানে আমাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলেন।এমন কান্ডে আমি পুরো থ।অটোমেটিক চোখদুটো বড়বড় হয়ে গেল।বামপাশের হৃদপিণ্ডটা যেন বলের মত লাফাতে আরম্ভ করল।শরীরের রক্তচলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন হয়ে উঠছে।আমি একটু নড়েচড়ে উঠতে উনার হাতের বাঁধন আগের চেয়ে শক্ত হয়ে গেল।একি জ্বালা!
আমার ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টি বারবার বন্ধ দরজার দিকে চলে যাচ্ছে এই বুঝি কেউ এসে গেল।

‘ আমি তোর সাথে থাকতে চাই প্রতিটা সেকেন্ড,প্রতিটা মিনিট! তোর ভালো সময় খারাপ সময় দুটোরই আমি সঙ্গী হতে চাই।প্লিজ থাকতে দে আমায় পূর্ণতা!তোকে ছাড়া আমি কিচ্ছু বুঝি না।আমার জীবনে যত সমস্যাই আসুক না কেনো আমি তা তোয়াক্কা না করে মেনে নেব কিন্তু তোর ব্যপারে আমি দুর্বল হয়ে যাই। তোকে হারানোর ভয় আমাকে প্রত্যেক মুহূর্তে ঘিরে রাখে।প্রতিদিন তোকে একটা বার সুস্থভাবে হাসিখুশি দেখা আমার নিত্যদিনের কাজ।আজ তোকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে কতটা ভয় পেয়েছিলাম জানিস?’

দুর্জয় ভাইয়ার কথাগুলো সম্মোহনের মত শুনে যাচ্ছি আমি।আমাকে নিয়ে উনার মনে যে ভয় আছে তা উনার কন্ঠ জানান দিচ্ছে স্পষ্টভাবে।কিন্তু ভয়টা আসলে কি নিয়ে?আমি এখনো উনার দুই হাতের মাঝে বন্দী।এমনভাবে আগলে রেখেছেন যেন এই দুনিয়া থেকে লুকিয়ে আমাকে উনার বুকের ভেতর আবদ্ধ করে রাখতে চাইছেন।

‘ আমি একজনকেও ছাড়বো না।যাদের জন্য তোর আজ এত কষ্ট পেতে হচ্ছে তাঁদের চরম শাস্তি দেব আমি।শুধু একটু সুযোগের অপেক্ষা! ‘

উনার কন্ঠে এবার কাঠিন্য প্রকাশ পেল।একটু আগে কথায় যেমন মুগ্ধতা ছিল সেটা এখন আর নেই।কিন্তু উনার কথাগুলো একটাও আমার মনপুত হয়নি।আস্তে করে বললাম,

‘ আপনি বিনাকারণে এমন রাগ দেখাচ্ছেন।আমার এক্সিডেন্টের জন্য আপনি কাদেরকে দায়ী করতে চাইছেন জানি না তবে এটা বলতে পারি আপনার সন্দেহ ভুল।আমার কষ্ট পাওয়ার পেছন করো হাত নেই।আপনি কি কিছু জানেন না! সেদিন ভার্সিটি যাওয়ার পথে একটা ট্রাক ধাক্কা মেরেছিল আমায়।পরে জানা গেছে ওটা ব্রেকফেল ছিল।ট্রাকের ড্রাইভারও আহত হয়েছে।এখানে কারো হাত নেই।যেটা হওয়ার ছিল সেটা হয়েছে।’

দুর্জয় ভাইয়া কিছুক্ষণ নীরব রইলেন।এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে চুমু খেয়ে বললেন,
‘ ঠিক আছে মেনে নিলাম তোর কথা।এখন তুই চুপচাপ রেস্ট নে আমি এক্ষুনি আসছি।বাইরে গিয়ে আম্মুকে পাঠিয়ে দেব।’

দুর্জয় ভাইয়া চলে গেলেন।আমি হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলাম।আমার মনে হলো উনি আমার কথাগুলো একপ্রকার এড়িয়ে গেলেন।অথবা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করেছেন।উফ্ এই লোকটার মনে যে কি চলে কিচ্ছু বুঝতে পারি না।ভেতরে ভেতরে কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে কে জানে!

দুর্জয় ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই খালামণি চলে আসলেন।খালামণির চেহারায়ও অবসাদের ছাপ।আমার জন্য চিন্তা করতে করতে সবার এই হাল হয়েছে বুঝি!
খালামণি মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ শরীর এখন কেমন রে?আর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো!’

‘ আমি একদম সুস্থ খালামণি।তুমি আগে বলো মায়ের কি অবস্থা? দুর্জয় ভাইয়া বলল মা নাকি অসুস্থ হয়ে গেছিল!’

‘ আমি তোদের বাসায় ফোন দিয়েছি।তোর আব্বু বলে কয়ে তোর মাকে ঘুম পাড়িয়েছে।আসলে তোকে নিয়ে তোর মায়ের চিন্তাটা বরাবরই একটু বেশি তাই সামান্য কিছুতেও ঘাবড়ে যায়।’

‘ জানো খালামণি আমাকে নিয়ে তাঁদের ভয় দেখলে ভীষণ খারাপ লাগে।মাঝেমাঝে কান্না পায়।তাঁদের মন থেকে ভয়ের রেশ কাটছে না কোনোভাবেই।’

খালামণি আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
‘ কান্নার কি আছে হুম?অসুখবিসুখ হয় না মানুষের?তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি দেখিস।আর বাবা-মা হিসেবে তাঁদের ভয় পাওয়াটাও স্বাভাবিক তাই না!সময়ের সাথে সাথে কেটে যাবে ভয়টা দেখিস।’

তখনই ইমন ভাইয়া ঢুকলেন রুমে।পেছন পেছন দুর্জয় ভাইয়া এবং সাদা এপ্রোন পরিহিত ডক্টর।
ডক্টর এসে চেকআপ করে বললেন,
‘ এখন বিপদমুক্ত। তবে ব্যথাটা হতে পারে যখনতখন। আশা করি আজকের মত এমন তীব্র হবে না।যে মেডিসিন গুলো দেওয়া হয়েছে নিয়মিত খেতে হবে কিন্তু। ‘

ডক্টরের কথায় মাথা দুলিয়ে হালকা কিছু খেয়ে নিলাম।এরপর মেডিসিন।এই মেডিসিন বোধ হয় সারাজীবনেও পিছু ছাড়বে না আমার।দিনের পর দিন এগুলো খেতে খেতে তিতা ত্যক্ত হয়ে গেছি আর এখন তো আরো কতগুলো যোগ হয়েছে।ঠেলা সামলাও পূর্ণী।

.

মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে সকালে ঘুম ভাঙলো।চোখমুখ কুঁচকে উঠে বসলাম।রিংটোনের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখি সোফায় খালামণি ঘুমিয়ে আছে।টেবিলে রাখা খালামণির ফোন বেজে চলেছে নিজের মত কিন্তু খালামণির হুঁশ নেই।আমি হাত বাড়িয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলাম।নিশ্চয়ই কালরাতে খালামণি ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি যারজন্য ফোনের শব্দেও উঠছে না।
বিছানা ছেড়ে নামতে যাব এমন সময় দুর্জয় ভাইয়া ঢুকলেন।অবাক হয়ে গেলাম পুরো। উনাকে রাতে যে পোশাকে দেখেছি এখনো সেইভাবেই আছেন।আশ্চর্য উনি সারারাত কোথায় ঘুমিয়েছেন?চোখদুটোও লাল লাল।

‘ আপনি সত্যি সত্যি কাল রাতে বাসায় যাননি?’

দুর্জয় ভাইয়া ওষুধপত্র ঘাটতে ঘাটতে নির্বিকারভাবে বললেন,
‘ দেখতেই তো পাচ্ছিস। সত্যি সত্যিও যাইনি নকলে নকলেও যাইনি।’

উনার কথায় হতাশ হলাম।কি দরকার ছিল রাতে থাকার?যাই হোক আমি কিছু বলব না বললে উল্টো আমাকেই কথা শুনতে হবে।বসে বসে নিঃশব্দে উনার কাজকর্ম দেখছি।যন্ত্রের মত সব মেডিসিন একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে চলেছেন।
কাজ শেষে আমার সামনে এসে হুট করে গালে একটা চুমো খেয়ে বললেন,
‘ ফ্রেশ হয়ে আয় বাসায় যেতে হবে।আমি একটা জরুরি কল করে আসছি।’

উনি চলে যেতেই আমি সর্বপ্রথম খালামণির দিকে তাকালাম।এখনো গভীরভাবে শ্বাস উঠানামা করছে।এদিকে ভয়ের কারণে আমার বুকও ধরফড় করছে।ভাগ্যিস খালামণি গাঢ় ঘুমে আছে।ভয়ানক লোক একটা কখন কি করে বসে আগে থেকে টের পাওয়া যায় না।

চলবে…

#তোর_অপেক্ষায়
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৯

সন্ধ্যায় সুহানা আপুর রুমে বসে গল্প করছি আর মুঠোয় মুঠোয় ভর্তি করে চানাচুর খাচ্ছি। সাধারণত আমাদের গল্পের বিষয়বস্তু থাকে ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া নানা গুরুত্বপূর্ণ অথবা হাস্যকর ঘটনা।এছাড়াও এলাকায় কোন কোন ছেলেমেয়ে গুলো প্রেমে পড়ছে,কারা ছ্যাঁকা খাচ্ছে এসব নিয়েও মাঝেমধ্যে গবেষণা করি।দুবোন একসাথে থাকলে যা হয় আরকি।
গল্পের একপর্যায়ে আমার ফোন বেজে উঠল।ফোনটা সুহানা আপুর টেবিলে জ্বলজ্বল করছে।কল রিসিভ করব কি করব না কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম।যদি দুর্জয় ভাইয়া হয় তাহলে আপুর সামনে কিভাবে কথা বলব।দুর্জয় ভাইয়াকে নিয়ে সবসময় তটস্থ থাকতে হয় আমায়।কখন কি বলে বসেন ঠিক নেই।
সুহানা আপু আমাকে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ কিরে ফোনটা বেজে চলেছে কখন থেকে দেখ কে কল দিচ্ছে।’

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেলাম টেবিলের কাছে।ফোন হাতে নিতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দুর্জয় ভাইয়া নয় কল করেছে আমার ক্লাসমেট হিমু।

‘ হ্যালো হিমু!’

ফোনের অপর পাশ থেকে চটপটে গলার উত্তর আসলো,
‘ ডিয়ার পূর্ণী তুই এবং তোর মাথা কেমন আছে এখন?হসপিটাল থেকে কখন আসলি?’

‘ সকালে এসেছি।এক মিনিট! তুই এবং তোর মাথা এটা আবার কেমন কথা?’

‘ ভুল বলেছি কিছু?তোর মাথা তোকে ত্রিশ দিনের মধ্যে পনেরো দিনও ভালো থাকতে দেয় না।গতকাল তো তোকে হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে গেছে।মাথার চক্করে তুই খামচে আমার হাতের অর্ধেক মাংস তুলে ফেলেছিস।ভালো মানুষ বলে আমি চুপ করে ছিলাম।শোন কেটে ফেলে দে এই জঞ্জাল মাথা।দেখবি আর কোনো ব্যথা নেই।না থাকবে বাঁশ,না বাজবে বাঁশরি। ‘

এইসব কথা শুনে হু হা করে হাসতে ইচ্ছে করছে আমার।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে ছটফটে মেয়ে হিসেবে বিখ্যাত হিমু।ফোনে হউক,সরাসরি হউক বকবক করতে করতে হাড়মজ্জা জ্বালিয়ে ফেলে।তবে ওকে ছাড়া কোনোকিছুই জমে না এটা সবাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।আর হিমুও এই বিষয়টার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় আমাদের অদ্ভুদ অদ্ভুদ ব্ল্যাকমেইল করে বসে।

‘ এই আমার মাথা নিয়ে আমাকে ভাবতে দে।এখন বল এই অসময়ে ফোন দিয়েছিস কেনো?’

হিমু অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
‘ বলিস কি?এটা অসময় নাকি?এখন তো দেখি তোকে ফোন করার সময় আমাকে গ্রহ-নক্ষত্র হিসাব করে রাখতে হবে?যাই হোক কাজের কথায় আসি।আজ তো তুই ক্লাসে আসিসনি তাই আইটেম বোম্বের মত খবরটাও জানিস না।’

‘ সেটা কি?’

‘ আসছে শুক্রবার সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্টদের নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান পাকাপাকি ভাবে রেডি।আজ ক্লাসে এনাউন্সমেন্ট হয়েছে।পিকনিক স্পট পতেঙ্গা সী বিচ।আমরা কিন্তু এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছি।টেনশন হচ্ছে তোকে নিয়ে।আশা করি তোর মাথা এই কয়েকদিনের ভেতর আর কোনো সমস্যা করবে না।’

পিকনিকের নাম শুনে ক্ষণিকের জন্য খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলেও সাথে সাথেই নিভে গেলাম।অযথা খুশি হয়ে কি লাভ আমাকে কি বাসা থেকে পারমিশন দেবে?পিকনিকে যাওয়ার নাম শুনে মায়ের রিয়্যাকশন কেমন হবে সেটা কল্পনা করতেই কষ্টে হৃদয় আমার খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে।
আমতাআমতা করে নিজের বক্তব্য পেশ করলাম,
‘ ইয়ে..আমি কি যেতে পারব মানে বুঝতেই পারছিস বাসা থেকে যেতে দেবে কি না সেটা নিয়ে…’

আমাকে থামিয়ে হিমু প্রতিবাদ করে উঠল।
‘ আরে ওই স্মৃতিশক্তি হারানো মহিলা ভুলে গেছিস দুদিন আগেও তো আমরা পিকনিক নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে রেখেছিলাম।এখন যদি এই কথা বলিস তাহলে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।এত ভয় পাচ্ছিস কেনো তুই?অসুস্থতার ভয় নিয়ে এভাবে কতদিন বসে থাকবি ঘরে?’

‘ তুই বুঝতে পারছিস না..’

‘ পারছি।তোর বাড়ির লোক তোকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করে এটাই তো!শোন আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না।শহরের ভেতরেই।আমরা সবাই থাকব তোর সাথে।এটাই আন্টি আঙ্কেলকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলবি।দেখ্ রোগ-বালাই তো সব মানুষেরই থাকে তাই না! এজন্য কি নিজেকে এভাবে চারদেয়ালে আটকে রাখবি?প্লিজ ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করে ফেল অন্তত আমাদের জন্য।’

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে।আমি রাজি করাবো।’

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কল কাটলাম।একদিক দিয়ে হিমুর কথাগুলো সত্যি বলে মনে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য এভাবে আনন্দ নষ্ট করার মানে হয় না।আর এখন তো আমি অসুস্থ নই। খাওয়াদাওয়া, হাঁটাচলা সবই ঠিকঠাক।

‘ এই পূর্ণী তোর মুখ শুকনো লাগছে কেনো?কে ফোন দিয়েছে আর কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস?’

সুহানা আপুর ডাকে হুঁশ ফিরল।আপু উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।এই দুঃখের সময়ে আপু কিছুটা ভরসা।দুজন একসাথে বাড়ির সবাইকে রাজি করানোর লক্ষ্যে নামতে হবে।
আপুকে সব খুলে বলতে আমাকে আশ্বস্ত করে বলল,
‘ টেনশন নিস না। সবাই রাজি হবে।’

‘ কিন্তু কিভাবে?বাড়িতে তো একজন দুজন মানুষ নয়।দেখা গেল একজন রাজি হবে তো আরেকজন বেঁকে বসে থাকবে।শেষ পর্যন্ত আমার যাওয়াই হবে না।’

‘ চিল সিস্টার।আমার কাছে অসাধারণ একটা প্ল্যান আছে।কিন্তু…আরিয়ান খান দুর্জয় কি যেতে দেবে তোমায়?’

হঠাৎ আপুর মুখে দুর্জয় ভাইয়ার নাম শুনে স্থির হয়ে গেলাম।আপু মিটিমিটি হাসছে আমাকে দেখে।এই যাহ্ আপু বুঝি সব জেনে গেল!
অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
‘ এখানে আবার দুর্জয় ভাইয়া কিভাবে..কোত্থেকে আসলো?’

‘ যেখানে দুর্জয় ভাইয়ার প্রিয়তমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে দুর্জয় ভাইয়া না এসে পারে?’

এবার লজ্জার মহাসমুদ্রে ডুবে গেলাম।অসহায় মুখে ডানেবামে তাকাতে লাগলাম।ছুটে পালিয়েও যেতে পারছি না।
আপু আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বলল,
‘ হয়েছে এত অস্থির হবার কিছু নেই।আমি আর অহনা আপু সবকিছুই টের পেয়ে গেছি।তোর প্রতি দুর্জয় ভাইয়ার রাগ,ধমক,যত্ন এসব স্পষ্ট জানান দেয় ভাইয়া কতটা সিরিয়াস তোকে নিয়ে।কিন্তু ভাইয়ার প্রতি তোর অনুভূতি কি?’

মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে হাসলাম আমি।
‘ জানি নাহ্।এখনো কিছুই বলিনি উনাকে।’

‘ ওলে বাবা!তুমি না বললেও তোমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে একটা ছোট বাচ্চাও বুঝে যাবে তুমি দুর্জয় ভাইয়াকে কতটা..’

‘ আহ্ আপু বাদ দাও না।এখন তোমার প্ল্যান টা বলো।পিকনিকে যাওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে দাও।’

‘ আচ্ছা আচ্ছা আর লজ্জায় ফেলব না তোকে।কাছে আয় বলছি।’

________________________

দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে আছি হাত-পা গুটিয়ে।বাইরে থেকে মায়ের ক্ষুব্ধ কন্ঠের আওয়াজ ভেসে আসছে।কিছুক্ষণ পরপর দরজায় করাঘাত হচ্ছে দুমদুম করে।তবুও নড়ছি না আমি।গত দুইদিন থেকে মায়ের সাথে কথাবার্তা টোটালি বন্ধ আর সকাল দুপুর খাওয়ার সময় দরজা আটকে সবাইকে প্রচুর যন্ত্রণা দিয়ে আসছি।সুহানা আপুর অসাধারণ বুদ্ধি এটাই ছিল।যদিও আমার পছন্দ হয়নি কিন্তু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে এই রাস্তাই বেছে নিয়েছি।
মাকে যখন প্রথম পিকনিকে যাওয়ার কথা বলেছি সাথে সাথেই উত্তর এসেছে ‘না’।আমি একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অনবরত চিল্লিয়ে গেছি,কান্নাকাটি করার অভিনয়ও করেছি খুব।এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি উল্টো আমার গলার তেরোটা বেজে গেছে।তবে দরজা আটকে রুমে বসে থেকেও আশার আলো তেমন দেখতে পাচ্ছি না। সুহানা আপু আমাকে মেসেঞ্জারে বলে যাচ্ছে চালিয়ে যা দেখবি কাজ হয়ে গেছে।অগত্যা তাই করছি।

বাইরে থেকে মা রাগত স্বরে বলল,
‘ তুই কি দরজা খুলবি পূর্ণী?প্রত্যেক বেলায় বেলায় এসব কি নাটক?আমি তো একবার বলেছি তোকে আমি যেতে দেব না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে এখনো মেয়ের পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি।দেখ্ পূর্ণী আমাকে রাগাস না!এক মিনিটের মধ্যে দরজা না খুললে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’

আমি তাড়াতাড়ি মোবাইলে সময় দেখলাম।একমিনিটের মধ্যে দরজা না খুললে কি হতে পারে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে আমার।
এক মিনিটের জায়গায় দু’মিনিট শেষ হয়ে গেল।দরজার ওপাশ এখন চুপচাপ।আমি তো ভাবলাম বোম মেরে দরজা বোধ হয় উড়িয়ে দেওয়া হবে।সেরকম তো কিছুই হলো না।
কিছুক্ষণ পায়চারি করে সুহানা আপুকে কল দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর তিনবারে রিসিভ করল আপু।

‘ হ্যাঁ পূর্ণী বল্!’

আপুর ঘুমঘুম কন্ঠস্বর শুনে হতাশ হয়ে গেলাম।আমি টানটান উত্তেজনার মধ্যে সময় পার করছি আর আপু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে!
হতাশা ঝেড়ে ফেলে বললাম,
‘ ব্যাপার কি আপু! মা এতক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করল কিন্তু এখন সব চুপচাপ। দেখো তো গিয়ে কাহিনি কি!’

‘ আচ্ছা আচ্ছা অপেক্ষা কর।আমি দৌড়ে যাব দৌড়ে আসব।’

‘ অপেক্ষা করতে করতে আমার বেহাল দশা হয়ে যাচ্ছে। যা করার তাড়াতাড়ি করো।’

ফোন কেটে আবারো পায়চারি শুরু করলাম।শেষ পর্যন্ত কি আমার ট্যুরে যাওয়া হবে?
দশমিনিটের মাথায় বাইরে থেকে দুর্জয় ভাইয়ার গলা শুনে থমকে গেলাম।আমি কি ভুল শুনলাম?উনি এই সময় বাসায় কেনো আসবেন?মস্ত একটা ঢোক গিলে দরজায় কান পেতে রইলাম।এই তো স্পষ্ট দুর্জয় ভাইয়ার আওয়াজ।সাথে মায়ের কথাও শুনতে পাচ্ছি কিন্তু ওরা কি বলছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।বোধহয় দরজা থেকে বেশখানিকটা দূরে।
উৎকন্ঠা নিয়ে কতক্ষণ দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলাম।এই বুঝি দুর্জয় ভাইয়া এসে দরজা খোলার জন্য ধমক দেওয়া শুরু করবে।কিন্তু না এমন কিছুই হলো না।এখন তো বাইরে থেকে কারোরই আওয়াজ পাচ্ছি না।কি ব্যাপার সবাই আমাকে বেকুব বানিয়ে কোথায় সটকে পড়ল?ঝামেলার দেখি শেষ নেই।উনি আবার কোন ঝামেলার সূত্রপাত ঘটাতে হাজির হয়েছেন কে জানে!

এবার অনেকটা কৌতূহল বশত আস্তে করে দরজা খুলে উঁকি মারলাম।কেউ নেই।দরজা থেকে সিড়ি পর্যন্ত শুনশান নীরবতা।পা টিপে টিপে একটু আগাতেই কোথা থেকে সুহানা আপু এসে হাজির।তাড়া দিয়ে বলল,
‘ চল আমার রুমে।কথা আছে।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আপু একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেল।আপুর রুমে যেতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। আপুর বেডে আয়েশ করে বসে আছেন দুর্জয় ভাইয়া।উনার পূর্ণ স্থির দৃষ্টি এখন আমার দিকে।উনি বেড থেকে উঠে বসতেই সুহানা আপু সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেল।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
‘ আপনি এখানে কেনো?’

দুর্জয় ভাইয়া দুহাত পকেটে রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।ঘরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
‘ তোর তারিফ করতে এসেছি।’

আমি কথার মানে বুঝতে না পেরে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।উনি বললেন,
‘ দরজা বন্ধ করে খাওয়াদাওয়া না করে বাড়ির সবাইকে পটিয়ে ফেলবি পিকনিকে যাওয়ার জন্য! জবরদস্ত প্ল্যান তোর।’

আমি এবার ভাব নিয়ে বললাম,
‘ ও এই ব্যাপার।তবে ঠিকই বলেছেন আপনি।দেখবেন আমার প্ল্যান অবশ্যই কাজ করবে।হাতে মাত্র তিনদিন সময়। এই তিনদিনে কাজের কাজ হয়ে যাবে।’

‘ বাহ্ বাড়ির লোককে পটানোর জন্য কত আগ্রহ কত আকাঙ্ক্ষা।আর আমি?আমার থেকে পারমিশন নিয়েছিস?’

এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলাম।আমার কি উচিত ছিল উনাকে জিজ্ঞেস করা?
গলা পরিষ্কার করে বললাম,
‘ আচ্ছা ধরুন আমি পারমিশন চাইলাম।আপনি কি পারমিশন দেবেন?’

‘ না।’

দুর্জয় ভাইয়ার উত্তর শুনে রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠল আমার।এভাবে মুখের উপর না করে দিল।আমিও কি বলদ উনার কাছে গেছি পারমিশন চাইতে।উনার পারমিশনের তোয়াক্কা করি না আমি।
চোখমুখ শক্ত করে বললাম,
‘ না করবেন জানি এজন্যই আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।শুনুন আমি বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়ে ছাড়ব এবং পিকনিকেও যাব।’

‘ সবাইকে রাজি করালেই হয়ে গেল?আমি না চাইলে তুই এক পাও বাড়ির বাইরে রাখতে পারবি না।গতকাল হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলি।দুদিন যেতে না যেতেই নাচানাচি করছিস পিকনিকে যাওয়ার জন্য? যেতে ইচ্ছে করলে আমি নিয়ে যাব তোকে।কোথায় যেতে চাস বল একবার।’

দুর্জয় ভাইয়ার কথা শুনে রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগল।উনাকে কিছু বলি না তাই বলে আমার লাইফে এসে সবকিছু নিয়ে জোর খাটাতে শুরু করবে?আমি কি উনার বিয়ে করা বউ যে যখন যা বলবে সেটাই মাথা পেতে মেনে নেব?বিয়ে করা বউ হলেও তো এভাবে মানব না কখনো।আমার কি নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা বলে কিছু নেই!
দুর্জয় ভাইয়ার সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠলাম,

‘ আপনি যখন তখন আমার উপর যেকোনো অর্ডার চাপিয়ে দেবেন এটা আমি সহ্য করব না।দয়া করে এই কথাটা মাথায় রাখবেন।আর আমি আপনার সাথে যেতে চাই না।আমি আমার বন্ধুদের সাথে যেতে চাই।আপনি না বলেছেন আপনি আমাকে হাসিখুশি দেখতে চান সবসময়! আমি আপনার সাথে না গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে পিকনিকে গেলে বেশি হাসিখুশি থাকব। তাহলে কেনো বাঁধা দিচ্ছেন আমায়?আরেকটা কথা।আমি দরজা বন্ধ করে বসে আছি এই কথা মা আপনাকে বলেছে?মা আপনাকে কল করে আসতে বলেছে তাই না?আসতে বলেছে বলে চলে আসবেন?এসেই নিজের মনমতো আমার উপর জোর খাটাতে শুরু করে দিলেন!কিন্তু স্যরি আমি এই মুহূর্তে আপনার জোর খাটানো মেনে নিতে পারছি না।’

একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম।দুর্জয় ভাইয়া শীতন চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রইলেন।উনার চোখে রাগ বা বিস্ময় কোনটা খেলা করছে বুঝতে পারছি না।আমি জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি।রাগ এখনো কমেনি আমার।
কয়েক মিনিট নীরবতার পর দুর্জয় ভাইয়া শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘ তুই যেটাতে খুশি থাকিস সেটাই হবে।আর দরজা আটকে বসে থাকতে হবে না।আমি নিজে খালামণিকে বলব পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারে।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি খালামণিকে রাজি করিয়ে দেব।হ্যাপি?’

দুর্জয় ভাইয়া ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন।আমি অবাক হয়ে দেখছি উনাকে।মনের সমস্ত রাগ হঠাৎ কোথায় উবে গেল।এতক্ষণ রাগের বশে উনাকে কতগুলো জঘন্য শুনিয়েছি তার বদলে এত শান্ত থাকছেন কিভাবে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here