অতিথি,পর্ব:১০,১১

0
918

অতিথি,পর্ব:১০,১১
লেখা : মিশু মনি
পর্ব:১০

মিশুর রান্নার কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে গেল।
মর্ম রীতিমত ক্ষেপাতে শুরু করল,মিশুর হাতের রান্না খাওয়া যাবে বলে মনে হয়না।
কিন্তু খাওয়ার পর প্রশংসা করতেই হলো।মিশু অনেক ভালো রাধতে পারে।
মর্ম’র বাবা বললেন,মিশু মা, তুমি তো অনেক সুন্দর রান্না জানো।
মিশু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলো।
.
খাওয়া শেষে মিশু ও মাত্রা বসে আডডা দিচ্ছিল।
মর্ম এসে পাশে বসে মিশুকে উদ্দেশ্য করে বলল,একটা প্রশ্নের উত্তর দিবা?
– বলো।
– তুমি রাতে কখন এসেছিলা আমার ঘরে?
মিশু মাত্রার দিকে তাকালো।
মাত্রা চোখ বড় বড় করে বলল,কি বললি ভাইয়া? তোমরা দুজন রাতে একসাথে ঘুমিয়েছ?
মর্ম চেঁচিয়ে উঠল, এই আস্তে।আমরা একসাথে ঘুমাই নি।মিশু ভোরবেলা আমার মোবাইল এর চার্জার নিতে এসেছিল আমার রুমে।
– ওহ আচ্ছা।
মাত্রা স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হতে চলে গেল।
মিশু বলল,আমি নাকি অবুঝ? আপনি তো বুঝদার ছেলে,মাত্রার সামনে এই কথা টা এভাবে বলতে হয়?
– সরি।মাত্রা ছিল এটা এত টা খেয়ালে আসেনি।
– যাই হোক আমাকে ফেসবুকিং শেখাবেন না?
– ওয়েট। বাথরুম থেকে আসছি।
.
মর্ম বাথরুম থেকে এসে বলল,হুম বলো এখন। ফেসবুকিং শিখবা?
– জ্বি।আগে বলুন তো আপনি এত ওয়াশরুমে দৌরান কেন? বহুমুত্র রোগ আছে নাকি?
– আরে না।কি যে বলো।বাথরুম চাপ দিলে যেতে হবে না?
– বাথরুম কিভাবে চাপ দেয়? বাথরুম মানে তো গোসলখানা।
– এক ই কথা।
– এক ই কথা নয়।তুমি বলতে পারতে পায়খানা চাপ দেয়।
মর্ম রেগে বলল,এক ই হলো তো।
– উহু।এগুলা আলাদা শব্দ।বাথরুম, ওয়াশরুম আর গোসলখানা এক ই কথা।এগুলা তো চাপ দেয় নে।যে চাপ দেয় তার নাম হচ্ছে পায়খানা।
মর্ম রেগে গেল- তুমি এমন ক্যান?
– তুমি ভুল শব্দ বলবা ক্যান?
– তাহলে কি বলবো?
– বলবা পায়খানা করবো, হাগু করবো,প্রস্রাব করবো।
– চুপ করো।পচা মেয়ে।
– ভালো কথা বললে পচা মেয়ে? তুমি ভুল শব্দ বলবা ক্যান?
– আচ্ছা বাবা সরি।কিন্তু এই গুলা শুনতে খারাপ লাগে।ভালো শব্দ বলো।
– তুমি বলতে পারো প্রক্ষালন কক্ষে যাবো।
– কিহ! এটা আবার কি?
– প্রক্ষালন কক্ষ হচ্ছে পায়খানা।অর্থাৎ টয়লেট, হাগাঘর।
মর্ম হেসে উঠল – মিশু তুমি খুব দুষ্টু।
– সেটা আমি জানি।মিশু হচ্ছে পাজির পা ঝাড়া।
– হা হা হা।আচ্ছা আসো এদিকে।ফেসবুকিং শেখাই।
.
মিশু ফোনের দিকে ঝুকে আসল।মর্ম বলল,তোমার নাম্বারে একটা কোড নাম্বার যাবে ওটা দাও।
– আচ্ছা।
এরপর মর্ম মিশুর প্রোফাইল সম্পুর্ন করে দিয়ে বলল,এই যে দেখো আইডি রেডি।এবার লগ ইন করো তো দেখি।
মিশু লগ ইন করেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল।ফেসবুকে কিভাবে কি করতে হয় সব শিখে নিলো।
তারপর বলল,এক হাজার টা ফ্রেন্ড বানিয়ে দাও।
– এত ফ্রেন্ড দিয়ে কি হবে?
– দিতে বলছি দাও।আমার লাগবে।
মর্ম মিশুর কথা মত অসখ্য ছেলের আইডি তে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো।
মিশু খুশি হয়ে মর্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের রুমে আসল।
.
ফেসবুকে ঢুকে একটা কবিতা লিখে পোস্ট করতেই অনেকেই কমেন্ট করে প্রশংসা করল।মিশুর আনন্দ যেন আর ধরেই না।
.
দশ মিনিটে ত্রিশ টা আইডি থেকে মেসেজ পেয়ে মিশুর প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল।
ও এক ছুটে মর্ম’র রুমে ঢুকে বলল,এই এই মর্ম।
– কি?
– ত্রিশ টা মেসেজ এসেছে।প্লিজ ওদের মেসেজ আসা বন্ধ করে দাও।
মর্ম হেসে বলল,এক হাজার তাং ফ্রেন্ড লাগবে না?
– না লাগবে না।প্লিজ ব্যবস্থা করে দাও।ওরা যেন মেসেজ করতে না পারে।খুব বিরক্ত লাগছে গো।
– আচ্ছা দাও।সবাইকে আন ফ্রেন্ড করে দিচ্ছি।
মিশু ফোনটা মর্ম’র হাতে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে আসল।
মর্ম’র মা রান্নায় ব্যস্ত।মিশু জিজ্ঞেস করল,আনটি কি রাঁধছেন?
– এখনো কিছু রাধিনি।বলো কি খাবা?
– আমি হেল্প করি?
– পাগলী মেয়ে,
– করিনা প্লিজ,
– আচ্ছা করো।বলো কি খাবা?
মিশু একটু ভেবে বলল,আনটি আজ ভর্তা বানাই?
– কি ভর্তা?
– কয়েক প্রকারের ভর্তা।খাবেন?
আনটি হেসে বললেন,আমার ভালো লাগে।কিন্তু ভর্তা ভালো বানাতে পারিনা।
– আমি পারি।আমি আপনাকে শিখিয়ে দিই?
– আচ্ছা।কিন্তু কি ভর্তা?
মিশু ভেবে বলল,আলু ভর্তা,বাদাম ভর্তা,ডিম ভর্তা,তিল ভর্তা,তিসি ভর্তা, বেগুন ভর্তা,কচুপাতা ভর্তা,কলা ভর্তা,গাজর ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা,মাছ ভর্তা,শুটকি ভর্তা,টমেটো চাটনি।
আনটি অবাক হয়ে বললেন, এত্ত গুলা!
– হুম।আপনি বাজার করতে পাঠিয়ে দিন।আজ লাঞ্চ হবে চিকন চালের ভাতের সাথে কয়েকপ্রকার ভর্তা।
– বেশ হবে।আমি বাজারে পাঠাচ্ছি।তুমি হিমুকে নিয়ে সব মশলা তৈরি করে নাও।
.
এরপর মিশু লেগে পড়ল ভর্তা বানাতে।কয়েকপ্রকার ভর্তা।আনটি খুব হাসছেন।হিমু খুব খুশি,ও অনেক মজা পাচ্ছে।
মিশু বলল,আনটি মরিচ ভর্তা করতে হবে।
– কি বলো? আমার ছেলেরা ঝাল কম খায়।
– মরিচ ভর্তাও হবে।আজ আমাদের ভর্তা উতসব।
.
মিশু অনেক প্রকার ভর্তা বানিয়ে দুপুরের খাবার তৈরি করে দিলো।
সাথে আছে সালাদ আর লেবু।
.
খাবার টেবিলের সাজসজ্জা দেখে সকলেই অভিভূত!
কারো মুখে কথা আসছে না।
মর্ম’র বাবা খুশি হয়ে বললেন, এসব কি! আজ অন্যরকম খাওয়া হবে।উফফ জিভে জল এসে গেল।
কথা টা শুনেই মিশু জবাব দিলো, আংকেল জিভে পানি এসেছে?
– হ্যা মা।
– তাহলে আর.এফ.এল পাইপ লাগান।জিভ থেকে পানি উত্তোলন করা হবে।ঢাকা শহরে পানির যা দাম!
মর্ম ও মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা গেল।একদিকে এত প্রকার ভর্তা দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া! তার উপর মিশুর দুষ্টুমি ভরা কথা।
.
আংকেল বললেন,দুষ্টু মেয়ে।আগে খেয়ে নেই।পরে পানি উত্তোলন করবো।
.
একেক ভর্তার একেক রকম স্বাদ! কেউ কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।সকলের চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ দেখে মিশুর ভালো লাগছে।
মৈত্রী বলল,মাছ ভর্তা টা এত ভালো হয়েছে কি বলবো!
মাত্রা বলে উঠল, আরে ডিম আর বাদাম টা খেয়েই দেখো না।
মর্ম বলল,চাটনি টা বেশি ভালো হয়েছে!
এমন প্রশংসা সুচক বাক্য শুনে মিশু লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে।
হঠাত ই বলে উঠল, বিয়ের পর প্রতিদিন আমিই রান্না করবো কিন্তু।
সকলেই থ!
মর্ম বলল,কথা টা কাকে বললা?
– সবাইকে।তোমার আর আমার বিয়ের পর আমিই রাঁধবো।তোমার আম্মু বসে বসে খাবে।
সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।
মর্ম মাথা নিচু করে ভাবতে লাগল,আব্বু যে কি ভাবছে! হয়ত ভাবছে মিশুর সাথে আমার রিলেশন আছে।
মৈত্রী খুব মজা পাচ্ছে। ও কখনো বাবা মায়ের দিকে আবার কখনো মর্ম’র দিকে তাকাচ্ছে।
আংকেল বললেন,মিশু তুমি মর্মকে বিয়ে করতে চাও?
– আমি করতে চাইনা।আপনারা দিতে চাইবেন তাই রাজি হয়ে যাবো। আমি তো বাধ্য মেয়ে।
মৈত্রী মুখ টিপে হাসছে।
আংকেল বললেন, মর্মর সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই কে বলল?
– আমি বুঝে নিয়েছি।
মর্ম বলল,তুমি সবসময় বেশি বুঝো।
ওর বাবা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি চুপ থাকো।মিশু বলো?
মিশু মর্ম’র দিকে তাকালো।মর্ম ভয়ানক রেগে গেছে।মিশু কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
আংকেল বললেন, মিশু তুমি আমাদের কে পছন্দ করো?
– হ্যা খুউউব।নয়ত কি আপনারা চলে আসাতে এমনি এমনি কাদি?
– হুম বুঝলাম।কিন্তু তুমি তো ছোট মানুষ, এখন তো তোমাকে বিয়ে দেয়া যাবে না।
– আমি বড় হবো তারপর বিয়ে হবে।
– কার সাথে হবে?
– আপনারা যার সাথে দিবেন।
কেউ খাবার মুখে দিচ্ছে না।সকলে একবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।
হিমু দূরে দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে আর মনে মনে বলছে,খালুজান যেন মিশু আফারে পছন্দ কইরা ফালায়।আমি খুব খুশি হমু।মিশু আফারে আমি খুব ভালা পাই।
.
আংকেল বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।মৈত্রীর সাথে তোমার বিয়ে দিবো। ইন্টার পরীক্ষা দাও,তারপর।
মৈত্রী হা করে তাকালো! বাবা কি বলছে এসব!
মর্ম হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
মাত্রা হাসছে,ভাইয়ার সাথে মিশু আপুর বিয়ে হলে খুব মজা হবে!
হিমু ও খুব খুশি!
মাত্রার মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন!
মিশু লজ্জায় লাল হয়ে ছুটে রুমে চলে আসল।
বাবা ছাড়া সকলেই মাত্রাতিরিক্ত অবাক হয়ে গেছে,এ কেমন মেয়ে! নিজের বিয়ে নিজেই ঠিক করে ফেলল!
( চলবে….)

অতিথি
পর্ব:১১
লেখা: মিশু মনি
.
কেউই আর খাবার খেতে পারল না।সবাই উঠে যে যার মত চলে গেল।
মৈত্রীর মনের অবস্থা অনেক খারাপ। মিশুকে সে ছোটবোনের মত দেখে।তাছাড়া এত দীর্ঘ জীবন পেরিয়ে এসে এই বাচ্চা মেয়েটাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়া অসম্ভব।
মৈত্রী জীবনের অনেক ধাপ পেরিয়ে এসেছে।সে প্রতিষ্ঠিত একজন ছেলে।এই বয়সে এসে এমন ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে তার ঘোর আপত্তি।
মিশুর সাথে কথা বলে বাবাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।ভাবতে ভাবতে চোখ বুজে রইলো মৈত্রী।
.
মর্ম চুপচাপ হয়ে গেছে।মিশু পিচ্চি মেয়ে,ভাইয়ার সাথে ওকে একদম ই মানাবে না।ভাইয়ার জন্য একজন ম্যাচিউর মেয়ে লাগবে।মিশু ভীষণ অবুঝ।এ ধরনের নানাম কথা ভেবে মর্ম’র মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
.
মিশু বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে।আসলেই কি কাজী বিড়াল মৈত্রীর সাথে তার বিয়ে হবে? কেমন হবে যদি বিয়ে হয়?
মিশু বাসায় ওর মাকে কল দিলো।মা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই মিশু বলল,আম্মু আমার বিয়ে।
– কি! বিয়ে মানে!
– আংকেল তার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবেন বলেছেন।
– কখন বলল? আর কবে দিবে?
– বলেছে আমার ইন্টার পরীক্ষার পর বিয়ে দিবে।কাজী মৈত্রীর সাথে।
মিশুর মা অনেক খুশি হয়ে বললেন, খুব ভালো কথা।ওনারা অনেক ভালো মানুষ। তুই একটু দাড়া, আমি তোর আব্বুকে কথা টা বলেই এসে কল দিচ্ছি।
মিশু অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পর মা কল দিলেন, হ্যালো মিশু
– হ্যা মা।
– তুই কি রাজি?
– আমিতো তোমার কাছে শুনার জন্য কল দিলাম। তুমি যা বলবা তাই।
– শোন মা,তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে।আমাদের অনেক ইচ্ছে তোকে ডাক্তার বানানোর।তুই আমাদের স্বপ্ন পুর্ন করবি না?
– হ্যা মা করবো।
– কিন্তু ইন্টার পরীক্ষার পর বিয়ে হলে তুই কখনো ডাক্তার হতে পারবি না।ডাক্তার হওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে।সংসার, স্বামী, দায়িত্ব এসব পালন করতে করতেই দেখবি বয়স পেরিয়ে গেছে।আমরা তো সেটা চাই না।লক্ষী মা আমার,মন খারাপ করিস না।এখুনি বিয়ে টিয়ের চিন্তা মাথায় আনিস না।বুঝেছিস আমার কথা?
– হ্যা আম্মু বুঝেছি।তুমি খুব ভালো গো আম্মু।
– চিন্তা করিস না।আমি ওনাদের সাথে কথা বলে দেখবো।মৈত্রী একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলে।তোর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তোদের বোঝাপরায় সমস্যা হবে।মৈত্রীর জন্য একটা ম্যাচিউর মেয়ে লাগবে।তোর ডাক্তার হওয়া পর্যন্ত মৈত্রী নিশ্চয় ই অপেক্ষা করবে না।
– ঠিক বলেছ আম্মু।এইজন্যেই তুমি মা।কত্তভালো তুমি।
– তবে মর্ম’র সাথে বিয়ে দিতে চাইলে আমরা আপত্তি করবো না।কারন মর্ম প্রতিষ্ঠিত হতে আরও কয়েক বছর দেরি আছে।এবার বুঝেছিস আমার কথা?
– হ্যা বুঝেছি।আমি বিয়ের চিন্তা আর মাথাতেই আনবো না আম্মু।আমি তোমাদের স্বপ্ন পুর্ন করবো। তুমি চিন্তা করোনা।
মা হেসে বললেন, তুই ও চিন্তা করিস না।আমরা ওনাদের সাথে কথা বলে বিয়ের আলাপ বাদ দিতে বলবো। তুই তোর মত আনন্দ কর।কেমন?
– আচ্ছা।থ্যাঙ্ক ইউ আম্মু।টা টা।
.
মিশু কল কেটে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।মায়েরা এত ভালো হয় কেন?
.
বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে শুনে মৈত্রী খুশিতে লাফিয়ে উঠল। যাক,মিশুর মাথায় বুদ্ধি আছে।
.
মর্ম ও ভীষণ খুশি।মিশুর সাথে ভাইয়ার বিয়েটা কিছুতেই মেনে নেয়া যাচ্ছিল না।মিশু তো আমার বউ হবে,আমার শার্ট এ বমি করে দিবে,নাক ঝেড়ে দিবে।আহ! মন খারাপ ভাবটা দূর হয়ে গেল।
.
মর্ম ছুটে মিশুর রুমে আসল- মিশু আসবো?
– আসো।
মর্ম এসে মিশুর পাশে বসে বলল,কি করছ ভাবি?
– ওই কি বললা? আমি তোমার ভাবী?
– হ্যা ভাবী। তুমি আমার মৈত্রী ভাইয়ার বউ।
– ভালো হবে না কিন্তু সারমর্ম।আমি বিয়ে করবো না।
– আমাকেও না?
– উহু।
– কেন কেন? তুমি না আমায় বিয়ে করবা?
– আগে বড় হই,তারপর। আমিতো বাচ্চা মেয়ে।
– ইস রে বাচ্চা মেয়ে,নাক চিপলে দুধ বের হবে।
– কি চিপলে কি বের হবে তাও জানোনা? নাক চিপলে সর্দি বের হবে।
– ও হ্যা।মিশু মনির নাকে তো আবার সারাক্ষণ সর্দি থাকে।
মিশু রেগে বলল,মর্ম,তুমি যাও তো এখান থেকে।আমি ফেসবুক চালাচ্ছি।
– লাইসেন্স আছে?
– হ্যা আছে।যাও এখান থেকে।
– কার সাথে চ্যাটিং করা হচ্ছে শুনি?
– সেটা জেনে তোমার কি হবে? যাও এখান থেকে।
.
বাধ্য হয়ে মর্ম বের হয়ে আসলো। বাইরে এসে ভাবতে লাগলো কিভাবে মিশুকে জব্দ করা যায়।
চিন্তাভাবনা করে চুপি চুপি এসে মিশুর বিছানার নিচে লুকিয়ে পড়ল। মিশু ফেসবুকে ব্যস্ত,অন্যদিকে খেয়াল নেই।
মর্ম নানান রকম শব্দ করতে লাগল যাতে মিশু ভয় পায়।কিন্তু মিশু বুঝতে পেরেছে এটা মর্ম’র ই কাজ।মিশু মনে মনে ভাবলো,দাড়াও মিস্টার সারমর্ম।আমাকে ভয় দেখাতে এসেছ,আজ আমিও তোমার কি হাল করি দেখো। আমি বাসা থেকে আসার সময় ব্যাগে করে পেট খারাপের ওষুধ নিয়ে এসেছি।স্পেশালি মর্ম’কে জব্দ করার জন্য।আজ রাতের খাবারে ওটা মিশিয়ে তোমায় খাওয়াবো। তারপর তুমি শুধু বাথরুম আর বেডরুম,বেডরুম আর বাথরুম।হা হা হা…
মর্ম বিছানার নিচে থেকে ভাবলো,মিশু একা একা হাসছে কেন?
মিশু হটাত উঠে এক দূরে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
এবার মর্ম রুমে বন্দি হয়ে থাক।
.
মিশু সোজা মৈত্রীর রুমে চলে আসলো। মৈত্রী মুচকি হেসে বলল,আরে মিশু যে।আসো ভিতরে।
মিশু ভিতরে ঢুকে বলল, মর্মকে মেরে বালিচাপা দিয়ে এসেছি।
– সে কি! কিভাবে?
– রুমে রেখে দরজা লক করে দিয়েছি।
– হা হা হা।ও পরে তোমাকে জ্বালাবে দেখো।
– আমার সাথে পারবে না।আমি হচ্ছি পাজির পা ঝাড়া।
– তাই নাকি!
– হুম।শুনুন যেটা বলতে আসলাম।বাসে আপনার মোবাইল এ একটা কল রেকর্ড শুনেছিলাম। ওটা আপনার গার্ল ফ্রেন্ড তাই না?
– ছিল।
– ছিল! এখন নেই?
– ব্রেক আপ হয়ে গেছে।তিন মাস আগে।
– প্রেমে আবার ব্রেক আপ হয় নাকি? ব্রেক আপ হয় টাইম পাস এ।যারা টাইম পাস করার জন্য রিলেশন করে,ব্রেকাপ তাদের হয়।আপনি কি টাইম পাস করতেন?
– না।ভালোবেসেছিলাম।
– তাহলে ব্রেকাপ ট্রেকাপ কিচ্ছু হয়নি।ধরে নিন ঝগড়া হয়েছে।
– তুমি বাচ্চামানুষ গো।তুমি বুঝবা না।
– হুহ।আমি সব বুঝি।আমার সাথে আপুর পরিচয় করিয়ে দিন তো, আমি ঝগড়া মিটিয়ে দিচ্ছি।
– হা হা হা।তাই নাকি?
– হ্যা তাই।আমার সাথে বিয়ে হবেনা তাতে কি? আপনার গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে আপনার বিয়ে হবে।আমি হবো ঘটক আর আপনি হবেন কাজী। দিন তো আপুর নাম্বার দিন।
.
মৈত্রী নাম্বার দিতেই চাইছিল না।মিশু অনেক জোর করে নাম্বার টা নিয়ে নিজের রুমে আসলো।
মর্মকে রুমে বন্দি রেখে গিয়েছিল সেটা ওরমনে নেই।
মর্ম দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিল।মিশু দরজা খুলতেই খুব জোরে আঘাত পেয়ে মর্ম একেবারে মেঝেতে ধপাস। মিশু জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,একি! তুমি!
মর্ম’র শিক্ষা হয়ে গেছে।ও মেঝেতে পড়ে চেঁচাচ্ছে। মিশু হাত ধরে টেনে তুলতেই মর্ম বলল,দস্যি মেয়ে।আস্তে দরজা খুললে কি হত?
– তুমি আমার রুমে কি করছ?
– তুমি ই তো দরজা লক করে চলে গেছ।আমি রুমেই ছিলাম।
– হা হা।উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছ?
– সারা শরীরে ব্যাথা পেয়েছি।তুমি একবার হাগ করো, ঠিক হয়ে যাবে।
– ছিঃ আমি এখানে হাগু করবো কেন? আমি তো তোমার বিছানায় হাগু করবো।
– উহহু।হাগু নয়,জরিয়ে ধরতে বলেছি।
– হুহ।খেয়েদেয়ে কাজ নেই,আজ কি ঈদের দিন যে কোলাকোলি করবো?
– তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না।থাকো, আমি রুমে গেলাম।
.
মর্ম চলে যাওয়ার পর মিশু মৈত্রীর প্রাক্তন প্রেমিকাকে কল দিলো। মেয়েটি রিসিভ করে হ্যালো বলে জিজ্ঞেস করল,কে বলছেন?
– এই মেয়ে,অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলে রিসিভ করে সালাম জানাতে হয়।
– সরি।কে বলছেন?
– আমি মৈত্রীর মা
– আসসালামু আলাইকুম আনটি।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো মা?
– জ্বি আনটি ভালো। আপনি?
– ভালো নাই রে মা।খুব চিন্তায় আছি।চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে গেলাম রে মা।
– কেন আনটি কি হয়েছে?
– ছেলেটা বিছানায় পড়ে আছে অনেক দিন ধরে।
– কোন ছেলে?
– মৈত্রী রে মা।ওর খুব অসুখ।ছেলেটা মরে যাচ্ছে আমার।
বলেই মিশু কান্না জুরে দিলো।
মেয়েটি বলল,আনটি প্লিজ কাঁদবেন না।কি হয়েছে মৈত্রীর? কি হয়েছে?
– আজ তিন মাস ধরে ছেলে আমার খায়না ঠিক ভাবে।না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে গেছে।কিছুদিন আগেই চিকুনগুনিয়ায় ছেলেটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।এখন আবার কি যে অসুখ হয়েছে ডাক্তার ও বুঝতে পারছে না।
মেয়েটি হঠাত চুপ হয়ে গেল।মিশু বলল,হুশ নেই ছেলেটার।আজ ঘোরের মাঝে তোমার নাম উচ্চারণ করছিল।তাই কল দিলাম।কি জন্য ওকে ছেড়ে গেলা তুমি?
মেয়েটি বিব্রত হয়ে বলল,আনটি আসলে মৈত্রীর কোনো দোষ নেই।আমিই ওকে ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু ভুল ভাঙার পর ওকে কল করেছিলাম। ও বলেছিল,যে মেয়ে আমাকে বিশ্বাস করেনা আমি তার সাথে থাকতে চাইনা।
– সেটা তো অভিমান করে বলেছিল।তুমি আর কল দাওনি ওকে? ও তো তোমারি চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।তুমি এখন ও ওকে ভালোবাসো মা?
– হুম।
– তাহলে আর দেরি করোনা।আমাদের বাসায় চলে আসো।মৈত্রী তোমাকে দেখলেই সুস্থ হয়ে যাবে।বাসার ঠিকানা জানোতো?
– হুম জানি।থ্যাংকস আনটি।আমি আসছি এখুনি।
.
ফোন কেটে দিয়ে মিশু নাচানাচি শুরু করে দিলো,ঝিংকু নাকুর নাক্কু নাকুর নাক্কু নাকুর না না… ঝিংকু নাকুর নাক্কু নাকুর না….
.
তাড়াতাড়ি মৈত্রীর রুমে এসে বলল,কাজী সাহেব শুয়ে পড়ুন।
– কেন?
– প্রাক্তন প্রেমিকা আসছে।আপনি অসুস্থতার ভান করে শুয়ে থাকুন।
মিশু সবকিছু বুঝিয়ে বলল মৈত্রীকে।মৈত্রী মিশুর কথামত এই গরমে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রইলো।
মিশু বাড়ির বাইরে থেকে সিগারেট এর পরিত্যক্ত অংশ কুড়িয়ে এনে মেঝেতে ছরিয়ে দিলো। কেউ দেখলেই ভাব্বে,ছেলেটা এত ধুমপান করে! সারাঘরে সিগারেট!
তারপর মৈত্রীর গালে মেক আপ লাগিয়ে চোখের নিচ টা কালো করে দিলো।মৈত্রী মিশুর কাজকর্ম দেখে হাসছে।খুব মজা লাগছে ওর।পাশাপাশি প্রিয়জন ফিরে আসবে এই ভাবনায় অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে।
মিশু দুহাতে মৈত্রীর চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো। তারপর বলল,চুপচাপ অসুস্থতার ভান করে শুয়ে থাকতে।ওই মেয়ে এসে ক্ষমা চাইবে তারপর যেন মৈত্রী কথা বলে।তার আগে অচেতন হয়ে পড়ে রইবে।
.
বাড়ির কেউই জানেনা কি হতে চলেছে।সকলে যে যার মত ব্যস্ত।মৈত্রীর বাবা অফিসে গেছেন।আর মাকে মিশু নবরত্ন তেল মাথায় মালিশ করে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
মিশুর খুব মজা লাগছে! আজ বাসায় দারুন নাটক হতে চলেছে!
.
মেয়েটাকে দেখেই মিশু ক্রাশ খেল।খুব মিষ্টি দেখতে।মিশুর কেমন হিংসে হতে লাগল।
মেয়েটি চিন্তিত মুখে বলল,আনটি কোথায়?
– ঘুমিয়েছেন। এখুনি ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। আপনি কে?
– আমি মানে,আমি অতিথি।
– আমিও অতিথি। আসুন ভিতরে।
মেয়েটি বাসায় ঢুকে ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছে।এই বাসায় সে আজই প্রথম এসেছে।আর মৈত্রীর মায়ের সাথেও আজই প্রথম আলাপ হয়েছে।
মিশু বলল,আপনি কাকে খুঁজছেন?
– না মানে মৈত্রী কোথায়?
– ওহ আপনি মৈত্রীর অতিথি? আসুন আমার সাথে।উনি তো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। আপনি ওনার কে হন? বন্ধু?
মেয়েটি বিব্রত হয়ে বলল,হুম।
.
মিশু মেয়েটিকে মৈত্রীর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,উনি বিছানায় আছেন।আপনি যান ভিতরে।
মেয়েটি ভিতরে ঢুকলো।
মিশু এক ছুটে মর্ম’র রুমে আসলো। মর্ম ল্যাপটপে কি যেন করছে।
মিশু বলল,কি দেখছ?
– কিছুনা।বসো।
– ল্যাপটপ বন্ধ করছ কেন? খারাপ জিনিস দেখছিলে বুঝি?
– খারাপ জিনিস বলতে?
মর্ম অবাক হয়ে তাকাল।মিশু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলল,কিছুনা।শর্ট ফিল্ম দেখবে?
– কোথায়? কি?
– বড় ছেলে।
– দেখেছি।
– আরে তোমাদের বাড়ির বড় ছেলে।ফিল্ম করছে।দেখবা? দেখলে আসো।
মর্ম কিছু না বুঝে মিশুর সাথে মৈত্রীর রুমের দরজায় এসে দাড়ালো।মিশু ফিসফিস করে বলল,চুপ করে দরজায় কান রাখো। ভিতরে শুটিং হচ্ছে।
মর্ম কান লাগিয়ে মেয়েটির কণ্ঠ শুনতে পেয়েই চোখ বড় বড় করে মিশুর দিকে তাকালো! ওর বিস্ময়ের সীমা নেই!
( চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here