অতিথি,পর্ব:১৪,১৫

0
734

অতিথি,পর্ব:১৪,১৫
লেখা: মিশু মনি
পর্ব:১৪

মিশু আত্মহত্যা করেছে।
মিশুর মা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।সকলে কাঁদছে।
মর্ম মিশুর লেখা চিঠি টা নিয়ে পড়ে আছে।মিশু লিখেছে,”মর্ম,আমি জানিনা তুমি আমাকে খারাপ ভাবছ কেন? বিশ্বাস করো আমি কারও সাথে প্রেমালাপ করিনি।খুব সহজ ভাবেই কথা বলেছি।ভাবিনি তুমি কষ্ট পাবে।আমি তোমার অপমানজনক কথা গুলা সহ্য করতে পারছি না।চলে গেলাম।”
মর্ম চিঠি পড়তে পড়তে ডুকরে কেঁদে উঠল। চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
এমন সময় ঘুম ভেঙে গেল মর্ম’র। ও বিছানায় উঠে বসল।তারমানে এটা দুঃস্বপ্ন ছিল।কিন্তু এরকম স্বপ্ন কেন দেখলাম?
মর্ম চোখ মুছল।স্বপ্নেই খুব কেঁদেছে ও।সামান্য একটা স্বপ্ন দেখে চোখ ভিজে গেছে।তাহলে মিশু নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে।
বিছানায় বসে ভাবছে মর্ম- মিশু তো তেমন কোনো অপরাধ করেনি।ও সহজ সরল মনে না হয় কিছু ছেলের সাথে কথাই বলেছে।তাতে কি এমন হয়ে গেল? আমি নিজেই তো অনেক মেয়ের সাথে চ্যাট করি। অযথা মিশুকে অপমান করলাম।খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।
একে একে রাতের সব কথা মনে পড়ে গেল মর্ম’র।খুব উত্তেজিত হয়ে মিশুকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করা হয়েছে।ভাবতে ভাবতে মর্ম’র মনে অপরাধবোধ জেগে উঠল। হয়ত এমন হত না,কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন টা দেখেই মিশুর প্রতি এক ধরনের মায়া কাজ করছে।যা কালকে অব্দি ছিল না।অবচেতন মনের একটা স্বপ্ন ই মিশুর জন্য অনেক ভালোবাসার জন্ম দিয়ে দিলো।মিশুর কিছু হলে সত্যিই খুব খারাপ লাগবে।
বারবার স্বপ্ন টার কথা মনে পড়তে লাগল।বাধ্য হয়ে মর্ম উঠে পড়ল। এইমুহুর্তে মিশুর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।নয়ত মনে অশান্তি কাজ করছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে তিন টা বাজে।যত রাত ই হোক,মিশুকে ঘুম থেকে তুলে মাফ চাইতে হবে।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
ভাবতে ভাবতে মর্ম মিশুর ঘরের দিকে ছুটল।
.
মিশুর রুমের দরজা খোলা দেখে মর্ম অনেক অবাক হয়ে গেলো।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই বুকের ভিতরে বড় একটা ধাক্কা এসে লাগল।
মিশু কেমন অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।মেঝেতে বমি করেছে,মিশুর মোবাইল টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে।মর্ম বিছানার কাছে এসে থমকে দাড়ালো।মিশুর ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে আছে,চোখের কোনে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
মিশুকে দেখে খুব মায়া লাগল মর্ম’র।মেয়েটাকে খুব অসহায় দেখাচ্ছে।
কৌতুহল বশত কপালে হাত দিয়ে দেখল ভয়ানক জ্বর। মর্ম’র মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।সবকিছুই কেমন যেন হয়ে গেছে।মিশু স্বাভাবিক নেই।
মর্ম কি করবে বুঝতে না পেরে ওর মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। মা মিশুকে দেখে কেঁদে ফেললেন। কেউ মেয়েটার খেয়াল রাখেনি।এই অবস্থায় পড়ে আছে মেয়েটা।
মা মিশুর মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করলেন। ততক্ষণে বাড়ির সবাই জেগে গেছে।সকলেই মিশুর রুমে এসে দাড়িয়ে আছে।কেমন যেন একটা সহানুভূতিতে মন ছেয়ে গেছে সবার।
মা মিশুর মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে মর্মকে জিজ্ঞেস করলেন,ওর এই অবস্থা কখন থেকে?
– জানিনা আম্মু।
– এতরাতে তুই ওর ঘরে কেন?
মর্ম বিব্রত হয়ে বলল,মিশুকে রাতে বকেছিলাম।একটু আগে স্বপ্নে দেখলাম মিশু মারা গেছে..
মা রাগ হয়ে বললেন, কি সব বাজে কথা বলছিস।দুয়া কর যাতে তাড়াতাড়ি মেয়েটা ভালো হয়ে যায়।ও অসুস্থ শুনলে ওর আব্বু আম্মু ভেঙে পড়বে।
মর্ম বলল,স্বপ্ন টা দেখে আমার খারাপ লাগছিল।তাই ভাবলাম মিশুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।সেজন্যই এসেছিলাম। এসে দেখি এই অবস্থা।
– এসেই ভালো করেছিস।কিন্তু কি এমন বলেছিলি যে ক্ষমা চাইতে হবে?
মর্ম মিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে মায়া লাগছে।
মর্ম’র মা বললেন, ওর মোবাইল ভেঙেছে কে?
– মিশু নিজেই হয়ত। আমি এটা জানিনা।
– ওর আব্বুকে কল দাও একজন।
.
মৈত্রীর বাবা মিশুর বাসায় কল দিয়ে মিশুর অসুস্থতার কথা জানালেন।দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলেন।
.
বাকি রাত টা কেউই আর ঘুমায় নি।সকালবেলা ডাক্তার এসে প্রেসক্রিপশন করে দিলেন।
ওষুধ খাবার পর মিশুর জ্বর আশ্চর্যজনক ভাবে কমে গেলো।
মাত্রার বাবা অবাক হয়ে মিশুকে জিজ্ঞেস করলেন,এখন কেমন লাগছে?
মিশু বলল,ভালো। এত চিন্তা করতে হবেনা।আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি।ওষুধ খেলেই কাজ হয়ে যায়।দুই ডোজ খেলেই সুস্থ হয়ে যাবো দেখবেন।
– হুম।দুয়া করি মা,সুস্থ হও।এখন বলোতো মোবাইল ভেঙেছ কেন?
মিশুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবারো রাতের কথা গুলা মনে পড়ে যাচ্ছে।
আংকেল বুঝতে পেরে উঠে বাইরে আসলেন।
মর্মকে ডেকে বললেন, তুমি মিশুকে কি বলছ?
মর্ম মাথা নিচু করে রইলো। বাবা রেগে বললেন, মেয়েটা আব্বু আম্মুকে ছেড়ে এখানে এসে আছে।আর তোমরা ওর সাথে খারাপ আচরণ করো? ওর মত মেয়ে হয়? কত বিশুদ্ধ একটা মন মেয়েটার।
মর্ম নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছে।বাবার কথা শুনে আরও খারাপ লাগছে।
বাবা বললেন,মিশুর আব্বু বলেছে ওকে নিয়ে একটা লং জার্নিতে গেলেই ও সুস্থ হয়ে উঠবে।তুমি ওকে নিয়ে বেড়াতে যাও।
– মিশুর তো জ্বর।
– মেয়েটা ঘুরতে বড় ভালবাসে।অনেক দূর ঘুরতে নিয়ে যাও।ওর ভালো লাগবে।আসার পর থেকে তো বাসা থেকে বের হয়নি।
মর্ম মনে মনে অনেক খুশি হলো।এটাই সুযোগ, মিশুর রাগ ভাঙাতে হবে,ক্ষমা চাইতে হবে।
মর্ম বলল ঠিক আছে যাচ্ছি।কখন যাবো?
– মিশুকে জিজ্ঞেস করে শুনে নাও ও কখন যেতে চায়।আর মিশু যেখানে যেতে চায়,সেখানেই নিয়ে যেও।গাড়ি নিয়ে যেও কিন্তু।
– আচ্ছা আব্বু।
.
মর্ম’র খুব আনন্দ হচ্ছে।আজ মিশুর সাথে ঘুরতে যেতেই হবে।
মর্ম মিশুর রুমে ঢুকতেই মিশু মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
মর্ম বলল,সরি মিশু।
মিশুর চোখে পানি এসে গেল।
মর্ম ওর বিছানার কাছে বসে বলল,আমার কাল অনেক রাগ হচ্ছিল তাই কিসব বলে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
মিশু কিছু না বলে চুপ করে আছে।
মর্ম বলল,আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা।আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
– ভুল বুঝার কিছু নাই।ঠিক ই বলেছ।আমি বোকা,আমি ফালতু, আমি বেয়াদব। আমার একসাথে অনেক গুলা ছেলে লাগে।দুই টা ছেলেকে দিয়ে হয়না।
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিলো।এই কথাগুলোই কাল সে মিশুকে বলেছে।খুব ভুল হয়ে গেছে।
মিশু বলল,আমি আসলেই বোকা।আমি মনে করি সবাই আমাকে ভালবাসে।কিন্তু ভুল টা আমার ই,আমি তো বোকা তাই বুঝতে পারিনা কেউ সত্যিকারে আমায় ভালবাসে না।
মর্ম ‘র খারাপ লাগছে।এই কথাগুলো সে কিভাবে মিশুকে বলতে পেরেছে সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে।
.
মর্ম বলল,আমার ভুল হয়ে গেছে মিশু।প্লিজ মাফ করে দাও।প্লিজ,
মিশুর হাসি পেল মর্ম’র ক্ষমা চাওয়া দেখে।ও মর্ম’র দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
মর্ম’র ভিতর টা কেপে উঠল। মনে হচ্ছে এই হাসিতেই সে মিশুর প্রেমে পড়ে গেছে।
ও মিশুকে বলল,তুমি সত্যিই খুব ভালো মিশু।খুব ভালো একটা মেয়ে।
মিশু বলল,তোমার পাতলা পায়খানা সেরেছে?
– হ্যা।পুরোপুরি সুস্থ আমি।তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ তো?
মিশু হেসে বলল,মিশুর অত ফালতু এটিচিউড নেই।আমি কারও উপর রাগ করতেই পারিনা।
– গুড গার্ল।শোনো, তুমি আর আমি লং জার্নিতে যাবো। কবে যেতে চাও বলো?
মিশু উতফুল্ল হয়ে বলল,আজ ই।এক্ষুনি যাবো।
– তোমার তো জ্বর।
– তবুও যাবো। এক্ষুনি যাবো প্লিজ।
মর্ম’র ভালো লাগল।মিশু এভাবে তাকে ক্ষমা করে দিবে এটা সে কল্পনাও করেনি।
বলল,ওকে।রেডি হয়ে নাও।
– আচ্ছা।তোমার মোবাইল থেকে আম্মুকে একটা কল দাও তো। কথা বলবো।
মর্ম নিজের ফোনটা মিশুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলো। তার জন্যই মিশু রাগ করে মোবাইল ভেঙে ফেলেছে।নিজের উপর রাগ হচ্ছে মর্ম’র।
.
মিশু সেজেগুজে বসে আছে।মর্ম বাসায় নেই।মিশুকে রেডি হতে বলে কোথায় চলে গেল কে জানে!
মিশু বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে আর অপেক্ষা করছে কখন বেড়াতে যাবে।
.
মর্ম এসে মিশুকে দেখে হাসল।খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে মিশুকে! মেয়েটা যে অসুস্থ,সেটা বোঝাই যাচ্ছে না।
মিশু রেগে বলল,কই ছিলা? কখন থেকে বসে আছি।
– মার্কেটে গেছিলাম।
– কেন!
– তোমার জন্য।
বলেই ব্যাগ টা মিশুর দিকে এগিয়ে দিলো।
দেখেই মিশুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল! মিশু হা করে তাকালো মর্ম’র দিকে।
মর্ম বলল,পছন্দ হয়েছে?
মিশু অবাক হয়ে বলল,এত সুন্দর মোবাইল টা আমার জন্য!
– হ্যা। আমার উপর রেগে তুমি মোবাইল ভেঙেছ।তাই তোমার জন্য এটা নিয়ে আসলাম।
মিশুর চোখে বিস্ময়! এত সুন্দর মোবাইল টা তার জন্য!
মিশুর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে- কত দাম নিলো?
– ১৬ হাজার।
– কি! ১৬ হাজার! এত দামি মোবাইল আমার জন্য! বিশ্বাস ই করতে পারছিনা।
মর্ম মিশুকে একটা চিমটি দিয়ে বলল,বিশ্বাস হচ্ছে এবার?
– হুম।কিন্তু কি দরকার ছিল বলোতো?
মর্ম দুহাতে নিজের কান ধরে বলল,ফরগিভ মি প্লিজ।
মিশু হেসে বলল,হুম।ক্ষমা করেছি।এখন চলো।
.
মর্ম নিজেই গাড়ি চালাবে শুনে মিশুর মজা লাগছে।
মর্ম গাড়ি স্টার্ট করতেই মিশু হাত তালি দিতে লাগল।
মর্ম বলল,কোথায় যেতে চাও ম্যাম?
– গাজীপুর।
– কেন? অন্যকোথাও যাই?
– উহু।আমি নুহাশ পল্লীতে যাবো।
– আচ্ছা।
.
মর্ম খুব জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছে।মিশুর জ্বর আরও কমে গেছে।খুব আনন্দ হচ্ছে দুজনের ই।
মিশু বলল,আজ আমার সর্দিও আছে,বমিও আছে।দিবো নাকি শার্ট এ করে?
– এই না না।
– আমি তোমার নানা নই,নানী।
– হা হা।তাই নাকি? তা নানী,রাত্রে বৃস্টিতে ভিজেছিলেন?
– হুম।এক ঘণ্টা ভিজেছি।খুব কষ্ট দিয়েছ আমাকে।
– জানি।সেটা দূর করার চেষ্টা করছি।
– আস্তে গাড়ি চালাও।
মর্ম বলল,তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।ঠিক রাস্তার পাগলীদের মত।
মিশু প্রথমে হাসতে যাচ্ছিল।কিন্তু পরে পাগলীর সাথে তুলনা করাতে হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
মিশু বলল,তাহলে আর তাকাবা না আমার দিকে।আমি বেয়াদব মেয়ে।
– আহা! রাগ করোনা মিশু।
– যা সত্যি তাই বললাম।
– ঝগড়া করলে কিন্তু গাড়ি থামাবো মিশু।
মিশু বলল,তাহলে আমার বমি খাওয়াবো তোমায়।
মর্ম গাড়ি থামিয়ে বলল,ওয়াক থু।কিসব পচা কথা।
– হ্যা।কারন আমি ফালতু মেয়ে।গাড়ি থামালে কেন?
– বমি খাওয়ার কথা বললা কেন? ওয়াক,আমার নিজের ই বমি আসছে।
মিশু হঠাত নাক ঝেড়ে মর্ম’র শার্ট এ মুছে দিলো।
মর্ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,ছিঃ মিশু।এটা কি করলা?
মিশু বলল,গাড়ি চালাও।স্টার্ট…
মর্ম ক্ষেপে আছে।বলল,টিসু দিয়ে সর্দি মুছে দাও।
– বয়েই গেছে।
– মিশু,নিজের সর্দি নিজেই মুছে দাও বলছি।
মিশু মুখ বাকিয়ে বলল,দিবো না।গাড়ি স্টার্ট দাও।
মর্ম রেগে বলল,আমিও দিবো না।মিশু টিসু কোথাকার।
– ওই আমি টিসু?
– হ্যা তুমি টিসু।ফেসিয়াল টিসু নয়,টয়লেট টিসু।
মিশু রেগে বলল,ঝগড়া লাগাবা না বলছি।
মর্ম চুপ করে গেল।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ।
মর্ম আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মিশুর জয় হলো এবার।মিশু হাসছে আর নতুন মোবাইল বের করে বিভিন্ন স্টাইলে সেলফি তুলতে লাগল।
মর্ম হাসছে।
মিশু বলল,মর্ম দেখি একটু এদিকে আসো, একটা ছবি তুলি।
মর্ম গাড়ি থামিয়ে মিশুকে জাপটে ধরল।আর ওর শার্ট এ লেগে থাকা সর্দি মিশুর গলায় লেগে গেল।
মর্ম দাত কেলিয়ে হাসছে- এইবার ঠিক হইছে।এবার কেমন লাগে?
মিশু মুখ বাকিয়ে টিসু বের করলো।
( চলবে…)

অতিথি
পর্ব:১৫
লেখা: মিশু মনি
.
মিশু টিসু বের করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
মর্ম ও দ্রুত নেমে এসে বলল,কি হলো? নেমে পরলা যে?
– চা খাবো, চা।
– এখানে চা কোথায় পাবা?
– ওই যে সামনে একটা টং দোকান দেখতে পাচ্ছ? ওইখানে।
– এখানে চা খাবা!
– অবাক হওয়ার কি আছে? এইজন্যেই বড় লোকের উপর রাগ উঠে।সামান্য ব্যাপারে হা করে থাকে।এখানেই চা খাবো।
– চা খাওয়ার জন্যই হা করছি।চলো।
মিশু হেটে দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। দোকানিকে বলল দুই কাপ চা দিতে।

মর্ম ও এসে মিশুর পাশে বসলো। মিশু বাচ্চাদের মত পা নাচাচ্ছে।মর্ম মনে মনে বলল,অযথাই কাল মেয়ে টাকে এত বকা দিলাম। মিশুর মত মেয়েই হয় না।

মিশু চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,চা নাও।

মর্ম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,বাহ! দারুন তো!
– হুম।বলেছিলাম না?
– সত্যিই অসাধারণ!
– সবাই ভালো চা বানাতে পারে না।
– চায়ের কথা বলছি না।তুমি,তুমি অসাধারণ!
– আমিতো বেয়াদব মেয়ে।বেয়াদব মেয়েরা অসাধারণ ই হয়।
– মিশু প্লিজ এভাবে বলিও না।
মিশু আর কিছু না বলে চা শেষ করে উঠে পড়ল।
.
মর্ম আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মিশু চুপ করে আছে।
মর্ম বারবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।
মিশু বলল,ওই হাসছ ক্যান?
– তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
– তাই জন্য হাসতে হবে? হাস্যকর সুন্দর তাই না?
– সত্যিই সুন্দর লাগছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
– তাহলে দুই টাকা দাও।
– দুই টাকা! কেন?
– আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে,তোমার ভালো লাগছে।তাই দুই টাকা দাও।
– হা হা হা।এখন খুচরা পয়সা নেই।পরে দিই?
– সুদ সহ নিবো কিন্তু।
– আচ্ছা,চার টাকা দিবো।
– ওকে ডান।
– আচ্ছা মিশু,তোমাকে একটা ফোন গিফট করলাম। একবার থ্যাঙ্কু বললা না?
– মনে ছিল না।থ্যাংকস।
– আমি থ্যাংকস নিবো না।অন্যকিছু নিবো।
মিশু অবাক হয়ে বলল,কি নিবা?
– তুমি যতদিন ঢাকায় আছ ততদিন আমার সাথে ঘুরতে বের হবে।প্রতিদিন ই,অন্য কারও সাথে নয়।শুধু আমার সাথে।
– আহারে! শখ কত!
– হ্যা শখ অনেক। বলো ঘুরতে বের হবা তো?
– কেন?
– তাহলে আমার ভালো লাগবে।মনে হবে তুমি আমার পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড।
মিশু রেগে বলল,কি বললা? পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড?
– হুম।হা হা হা।
– আমি কোনো পার্ট টাইম হতে চাইনা।
– তাহলে ফুল টাইম?
– নাহ।কোনো টাই হতে চাইনা।আমি “অতিথি”

মর্ম হেসে বলল,হুম।তুমি অতিথি। দুদিনের অতিথি, মায়া বাড়িয়ে চলে যাবা।
– যাবো ই তো।
– আচ্ছা টিসু,তুমি প্রেম করবা কবে?
– ২০২১ সালে।
– হা হা হা।তাই নাকি? প্রেম মানে কি বুঝো?
– খুব বুঝি। প্রেম মানে তেতুল খাওয়া।
– বাহ! অনেক কিছুই বুঝো তো! প্রেম মানে তেতুল খাওয়া, একটু ব্যাখ্যা করে দাও তো।
– তেতুল খেলে সবাই চোখ মাড়ে, প্রেম পড়লে ও চোখ মাড়ে।আর তাছাড়া প্রেম মানেই বিয়ে,বিয়ে মানেই বাচ্চা আর বাচ্চা মানেই তেতুল খাওয়া।
– হা হা হা।বেশ মজার কথা বলতে পারো তো!
মিশু হেসে বলল,আমিতো জোকার।সবাইকে হাসানো আমার কাজ।
– জোকার মিশু? হা হা হা।
– এই দ্যাখো, তুমি কত হাসছ।পাঠক রাও হাসবে মিশু মনির কথা শুনে।তাহলে আমিতো জোকার ই।
– পাঠক মানে?
– পাঠক মানে যারা পড়ে।
– সেটা তো জানি।আমাদের মাঝে পাঠক আসল কোথ থেকে?
– তুমি জানো না আমি গল্প লিখি? বাসায় ফিরেই তো এটা নিয়ে গল্প লিখা শুরু করবো। গল্পের নাম দিবো “অতিথি ”

মর্ম অবাক হয়ে বলল,সত্যি তুমি গল্প লেখো?
– আজ্ঞে হা।
– বাহ! টিসু মনির কত্ত গুন!
মিশু মুচকি হেসে বলল,দুই টাকা দাও।
– আবার?
– হ্যা।আবার তোমার ভাল্লাগছে,আবার দুই টাকা দাও।
– এটাও বাকি থাক,ছয় টাকা পাবা।
– আচ্ছা।তোমার কাছে দশ টাকার নোট আছে তো?
– হুম আছে।কেন?
– আমি তাহলে মজার মজার কথা বলি? একটা মজার কথার জন্য দুই টাকা, আবার আরেকটা মজার কথার জন্য দুই টাকা। ব্যস,দশ টাকা হয়ে যাবে।আর তুমি পকেট থেকে দশ টাকা বের করে আমাকে নগদ দিয়ে দিবা।তাহলে তোমার সুদ তা কেটে দিবো, আর বিনিময়ে আরেকটা মজার কথা শুনাবো।

মর্ম হো হো করে হেসে বলল,মিশু প্লিজ থামো। আর হাসতে পারছি না।পেট ফেটে যাবে।প্লিজ থামো।
– উহু।আমি কি করে থামবো? গাড়ি চালাচ্ছ তো তুমি?

মর্ম হাসতে হাসতে গাড়ি থামালো।
মিশু বলল,থামালে কেন? হিসু করবা?
– পাজি মেয়ে,এভাবে হাসতে থাকলে accident হয়ে যাবে।আগে তোমার দশ টাকা শোধ করি,তারপর গাড়ি চালাবো।নাও,শুরু করো তোমার জোকারগিরি।
মিশু হেসে বলল,আচ্ছা।বলোতো আমি লাস্ট কবে দাত ব্রাশ করছি?
– কাল সকালে?
– উহু হয়নি।আমি বাসায় দাত ব্রাশ করছি।রংপুরে ব্রাশ করে বাসে উঠেছি।ঢাকায় আসার পর একদিন ও ব্রাশ করিনি।
– কিহ! সিরিয়াসলি?
– জ্বি।আমি অলওয়েজ সিরিয়াস কাঞ্চন।
– সিরিয়াস কাঞ্চন?

মর্ম হো হো করে হাসতে লাগল।
মিশু নাকি সিরিয়াস কাঞ্চন!
মর্ম হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল মিশুর গায়ে।
মিশু বলল,মজা পাইছ? দুই টাকা হলো কিন্তু।মোট আট টাকা।
– হুম।আট টাকা হয়ে গেল।আর দুই টাকার জোগারগিরি করো।

মিশু হেসে বলল,আমি কিন্তু আজ সকালেও দাত মেজেছি।
– তুমি না বললা সেই রংপুরে ব্রাশ করে এসেছ?
– হ্যা।আর এখানে আসার পর ব্রাশ করিনি।ব্রাশ আনতে ভুলে গেছিলাম। তাই জন্য কি দাত না মেজেই থাকবো? এই মধ্যমা আঙুলের ডগায় টুথ পেস্ট লাগিয়ে দাত ঘষে ঘষে মেজেছি।

মর্ম আবারো হাসতে লাগল।
হাসি থামাতেই মিশু বলল,আবার দুই টাকা। দশ টাকা হয়ে গেল কিন্তু।
মর্ম মানিব্যাগ বের করে দশ টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নাও।
– থ্যাঙ্কু।বাট মিশু তো সুদ খায়না।এইবার সুদের টাকা টা শোধ করতে হবে।
– হুম আবারো জোকারি শুরু করো।
মিশু বলল, দুই লাইনের কবিতা শুনাই?
– আচ্ছা শুনাও,
মিশু বলল,বৃস্টি পড়ে টাপুরটুপুর…
বদনা হাতে আব্দুল গফুর….
আকাবাকা মেঠোপথে কাজি মর্ম’র বাড়ি যায়….
মর্ম কিছুক্ষণ হেসে হাসি থামিয়ে বলল,মিশু ওরফে সিরিয়াস কাঞ্চন, তুমি সত্যিই জোকারি ভালো পারো।ট্রেন আর বাসে কিংবা ঢাকা শহরে জোকারগিরি শুরু করে দাও।ভালো ইনকাম হবে।সবার কাছে দুই টাকা করে নিবা।
– ছিঃ এত বড় কথা বলতে পারলা? আমি তোমায় ভালবাসি বলেই তোমার কাছে দুই টাকা করে নিলাম। আমি বুড়ি হলে নাতি নাতনী দের দেখাবো এই দশ টাকা টা। বলবো এটা আমার “অতিথি ” দিয়েছে।আর তুমি আমায় জোকারি করতে বললা?

মিশু মুখ কালো করে বাইরে তাকালো।
মর্ম নিজের কান ধরে বলল,সরি।মজা করে বলেছি।প্লিজ রাগ করেনা সোনামনি,মিশু মনি,হিসু মনি,প্লিজ।
মিশু তবুও মুখ কালো করে বসে আছে।
মর্ম বলল,আমার অতিথি প্লিজ রাগ করেনা।সিরিয়াস কাঞ্চন, প্লিজ রাগ করেনা।এই টিসু,
মিশু কিছুতেই হাসছে না।
মর্ম বলল,আমার গুল্লুগুল্লু,চুন্নুমুন্নু,টুনি পাখি টা।
এইবার মিশুর হাসি পেল।
মিশুকে হাসতে দেখে মর্ম বলল,আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না।এই যে কান ধরছি।
– আচ্ছা এবার গাড়ি স্টার্ট দাও।এভাবে গাড়ি চালালে আজ আর নুহাশ পল্লী যাওয়া হবে না।
মর্ম গাড়ি ছেড়ে দিলো।
.
দুজনের মনটা ভীষণ ভালো। মর্ম মনে মনে বলছে,মিশু পাগলী টা যেন আজীবন এমন পাগলী ই থাকে।
দেখতে দেখতে ওরা নুহাশ পল্লী তে পৌছে গেল।
.
গাড়ি থেকে নেমেই মিশু দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। মর্মকে রেখেই ছুটছে এদিক থেকে ওদিক।মর্ম মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই চঞ্চল মেয়েটাকে!

মিশু মর্ম’র কাছে এসে বলল,এই বাড়িতে নয় নম্বর বিপদ সংকেত ছবির শুটিং হয়েছে।তাই না?
– জানিনা।এই নামে ছবি আছে তাই জানতাম না।
– জানবাই না তো।ভালো জিনিসে তোমাদের নজর পড়ে না।
মর্ম কিছু বলল না।মিশুর পাশে হাটতে লাগল।
মিশু বলল, এখান থেকে বেড়িয়ে ভাওয়াল,সাফারি পার্ক,আর বলিয়াদি জমিদারবাড়ি যাবো কিন্তু।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,এতকিছু চেনো কিভাবে?
– মিশুকে কি ভাবো বলোতো তুমি? আমি চিনবো না? কি ভাবো আমাকে?
– আমার পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড।

মিশু ক্ষেপে গেল।মর্ম হাসতে লাগল।
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here