হ্যাকার,পর্বঃ ০৩

0
866

#হ্যাকার,পর্বঃ ০৩
লেখকঃ আবির খান।

শুভঃ আবির তুই আমাকে চিনতে পারিসনি। তুই আমার ভালবাসাকে আঘাত করেছিস। তোকে যে আমি কি করবো শুধু দেখ।

শুভ ওর ল্যাপটপটা নিয়ে কিসব কোড যেন লেখা শুরু করে। আর সাথে সাথেই ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে। শুভ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ওর মেইলে কে যেন একটা ভিডিও পাঠিয়েছে। ও ভিডিওটা ওপেন করা মাত্রই আঁতকে ওঠে আর চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। ওর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। কারণ ভিডিওতে যা আছে সেটা অন্য কেউ দেখলে ওর ভীষণ ক্ষতি হতে পারে। কিংবা বলা যায় ওকে জেলের ভাতও খেতে হতে পারে। শুভ দ্রুত ওর টেবিলের ডয়ার খুলে একটা টেবলেট খেয়ে নেয়। এবং আস্তে আস্তে একটু শান্ত হয়। তারপর ও আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত মেইলটা কে পাঠিয়েছে এবং কোন লোকেশন থেকে এসেছে তা হ্যাক করতে বসে যায়। হ্যাঁ শুভ একজন হ্যাকার। আর একটু আগে যে ও টেবলেটটা খেলো সেটা একটা দামী ড্রাগস। যেটা শুধু দেশের বাইরেই পাওয়া যায়। আর একটু আগে যে ভিডিওটা শুভ পেয়েছে, সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে শুভ টাকা দিয়ে এই ড্রাগসটা কিনছে। ও কল্পনাও করতে পারে নি কেউ ওকে এভাবে ধরে ফেলবে। ভিডিওটা আসার আগে শুভ আবিরের ফেইসবুক আইডিটা হ্যাক করতে নিয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা আপাতত অফ। এখন শুধু খুঁজে বের করতে হবে কে এবং কোথা থেকে এই ভিডিও এসেছে। শুভ পাগলের মতো হ্যাকিং করতে থাকে। টানা ছয় ঘণ্টা চেষ্টা করেও যে মেইল থেকে এই ভিডিওটা পেয়েছে তার সিকিউরিটি ব্রেক করতে পারে নি। বরং ও যখন বার বার ফেইল করছিল ওর সাথে যেন মজা নেওয়া হচ্ছিলো। যেন সামনের জন্য ইচ্ছা করেই ওর সাথে খেলা করছে। ঘড়িতে এখন সকাল ৮ টা নাগাদ বাজে। শুভ সারা রাত জেগে ছিল। কপালে এখনো বিন্দু বিন্দু ঘাম লেগে আছে। চোখের নিচটা হালকা কালো হয়ে গিয়েছে। খুব ক্লান্ত আর ফ্রাস্ট্রেটেড লাগছে শুভকে। ও এত বড়ো একজন হ্যাকার হওয়া স্বত্ত্বেও ও একটা সামান্য মেইলকে ক্র‍্যাক করতে পারলো না! শুভ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। হঠাৎই আবার নোটিফিকেশন আসে। শুভ দ্রুত মেইলটা খুলে দেখে, মায়ার একটা ছবি। শুভ ছবিটা দেখা মাত্রই মাটিতে ধপ করে পড়ে যায়। কারণ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মায়া সাওয়ার নিয়ে মাথার চুল শুকাচ্ছে। যেন ওর সামনেই কেউ এই ছবিটা তুলেছে। কিন্তু এটা অসম্ভব! মায়াকে দেখলেই বুঝা যাচ্ছে যে ও জানেই না কেউ ওর ছবি তুলছে। তাহলে কে এই ছবি তুললো? আর কিভাবেই বা তুলল? আর ওকেই বা কেন এই ছবি পাঠালো? শুভর চোখ গুলো ভীষণ বড়ো বড়ো হয়ে আছে। ও ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কে এই ব্যক্তি যে ওকে এভাবে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। শুভ দ্রুত আরেকটা টেবলেট খায়। আর সাথে সাথে ও অচেতন হয়ে যায়।

ভার্সিটিতে,
নেহাল, রনি আর আবির একসাথে বসে আছে। রনি বারবার শুভকে ফোন দিচ্ছে। বাট ফোন রিসিভই করছে না শুভ। রনি বলে উঠে,

রনিঃ বুঝলাম না শুভর হলোটা কি। ও ফোন ধরছে না কেন? ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র আধা ঘণ্টা আছে। ও কি আজকে আসবে না নাকি!
নেহালঃ চল ওর বাসায় যাই। শালার কি হইছে দেখে আসি চল।
আবিরঃ হ্যাঁ আমিও তাই ভাবছি। তোমাদের যাওয়া উচিৎ।
রনিঃ কিন্তু এখন গেলে তো আমাদের ক্লাস মিস হবে। আজকে তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।
আবিরঃ ধুর কি যে বলো না! বন্ধুর চেয়ে কি ক্লাস বড়ো নাকি? চলো আমিও যাবো।
নেহালঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।
রনিঃ আচ্ছা।

ওরা যেই উঠে শুভর বাসায় রওনা হবে ওমনি রনির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। ও দেখে শুভ ম্যাসেজ দিয়েছে। ওপেন করে পড়ে দেখে শুভ লিখেছে,

— দোস্ত তোরা ক্লাস কর আমি একটা জরুরি কাজে বাইরে বের হয়েছি। তাই আজকে আর আসা হবে না।

রনি জোরেই ম্যাসেজটা পড়ে শোনায় সবাইকে। নেহাল বলে উঠে,

নেহালঃ যাক শালায় তাহলে ভালো আছে। ও কেমন কল দিয়ে আমাদের জানাবে না!
আবিরঃ হয়তো সময় পায় নি। কালকে আসলে জিজ্ঞেস কইরো কি হয়েছে ওর।
রনিঃ হ্যাঁ তাই ই করতে হবে দেখছি।
নেহালঃ এখন তাড়াতাড়ি ক্লাসে চল। আমাদের গুলা অপেক্ষা করছে। আবার কোন ছেলে পটায় না ফেললে হয়। হাহা।

সবাই হেসে দেয়। আবির মাঝ দিয়ে বলে উঠে,

আবিরঃ আচ্ছা তোমরা দুজন যাও আমি একটু লাইব্রেরি থেকে আসছি।
রনিঃ আচ্ছা। নেহাল চল।

নেহাল রনিকে নিয়ে চলে গেলে আবির ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করে একটা ভিডিও করে নেহাল আর রনির চলে যাওয়ার। ভিডিওটা সেইভ করে ফোনে রেখে দিয়ে আবির হাসতে থাকে। এই রহস্যময় হাসির কারণ কেউ জানে না। তারপর আবির লাইব্রেরির দিকে চলে যায়। সেখানে যাওয়া মাত্রই দেখে করিডরের শেষ প্রান্তে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে কি যেন করছে। আবির একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে, ছেলেগুলোর মাঝে একটা মেয়ে। আবিরের বুঝতে আর বাকি নেই সেখানে কি হচ্ছে। ও দ্রুত মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়। আস্তে করে পিছনে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

আবিরঃ এখানে কি হচ্ছে?

ছেলেগুলো আবিরের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে,

— তোর জানতে হবে না। তুই যা।

আবির মেয়েটার হাত ধরে ছেলেগুলার মাঝ থেকে বের করে হাঁটা শুরু করে। ছেলেগুলো খপ করে আবিরের হাত ধরে ফেলে আর রাগী কণ্ঠে বলে,

— কিরে তুই ওরে নিয়া কই যাস? তোরে একা যাইতে বলছি। ওরে নিয়া কই যাস?

আবির কোন কিছু না বলে সজোরে একটা ঘুষি মারে ওই ছেলেটার নাক বরাবর। তারপর চোখ দুটো লাল করে বলে,

আবিরঃ প্রথমত আমি তোদের বাপেরও বাপ। দ্বিতীয়ত আমার সাথে লাগতে আসিস না, নাহলে তোরা আর কোন দিন এই ভার্সিটিতে পড়তে পারবি না৷ তোরা এতক্ষণ যা যা করছিলি সব ভিডিও করে ফেলেছি এবং আমার বন্ধুর কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার কিছু হওয়া মাত্রই ভিডিওটা ডিনের কাছে চলে যাবে। সো এবার ভাবতে থাক কিভাবে নিজেদের বাঁচাবি।

ছেলেগুলো সাথে সাথে আবিরের পায়ে পড়ে আকুতি মিনতি করতে থাকে। আর বলে,

— ভাই ভুল হইছে। আর এমন হবে না। প্লিজ ভিডিওটা ডিনকে দিয়েন না।
আবিরঃ ওর কাছে মাফ চা। বল, আপু আপনি আমাদের বোনের মতো। আমাদের মাফ করে দেন। তাড়াতাড়ি বল।

ছেলেগুলো আবিরের কথামতো দ্রুত মাফ চেয়ে ওখান থেকে সরে যায়। মেয়েটা আবিরকে দেখে পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আবির জিজ্ঞেস করে,

আবিরঃ ঠিক আছো তুমি? কোন সমস্যা হইনি তো?
মেয়েঃ না না কোন সমস্যা নেই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আবিরঃ আপনি করে কেন বলছো? তুমি তো আমাদের ক্লাসেরই মেয়ে।

মেয়েটা আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

মেয়েঃ আপনি আমাকে চিনেন!
আবিরঃ হুম। কিন্তু তোমার নামটা জানি না৷
মেয়েঃ ওহ, আমার নাম অনু।
আবিরঃ বাহ! খুব সুন্দর নাম। তো ওই ছেলেগুলো তোমার সাথে এমন করছিল কেন?
অনুঃ আমি নিজেও জানি না। লাইব্রেরি থেকে বের হয়েছি ওমনি ওরা আমাকে এখানে এনে আমার ফোন নাম্বার, ফেইসবুক আইডি এসব জোর করে চাচ্ছিল। আমি দিতে না রাজি হওয়ায় ওরা আমার সাথে…
আবিরঃ বুঝেছি, থাক আর বলতে হবে না।
অনুঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি না আসলে ওরা আমার ক্ষতি করতো। আপনি সত্যিই অনেক ভালো।

আবির মুচকি হেসে বলে,

আবিরঃ আরে এটা আমার দায়িত্ব। চলো ক্লাসে যাবে। দেরি হচ্ছে।
অনুঃ জি জি। চলুন।

আবির আর অনু পাশাপাশি হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছিল। অনু আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,

অনুঃ আচ্ছা আপনি ওদের ভিডিও কখন করলেন? আমি তো করতে দেখিনি।

আবির অট্টহাসি হেসে বলে,

আবিরঃ কে ভিডিও করবে ওদের! আমি তো মিথ্যা বলে ওদের ভয় দেখিয়েছি। হাহা।

অনু আবিরের কথা শুনে অবারও অবাক হয়। আর ওর হাসিটা দেখে খুব লজ্জা পায়। অনু লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

অনুঃ আপনি সত্যিই অনেক সাহসী আর চালাক। গতকাল এসেই মায়াকে সায়েস্তা করে ফেলেছেন৷ আবার আজ আমাকে ওদের কাছ থেকে বাঁচালেন।
আবিরঃ হাহা। ও কিছু না। আসলে মায়া হলো একটা বাচ্চা মেয়ের মতো বুঝলে। বাচ্চা না হলে এত বড়ো হয়ে এসব কেউ করে নাকি?

আবিরের কথা শুনে এবার অনু হেসে দেয়। আবিরও অনুর হাসি দেখে মুচকি মুচকি হাসে। আর বলে,

আবিরঃ বাহ! তোমার হাসিটাও তো তোমার মতো অনেক সুন্দর।

অনু আবিরের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ওরা কথা বলতে বলতে কখন যে ক্লাসের সামনে চলে এসেছে তা খেয়ালই করেনি। আবির দেখে মায়া ওদের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। আবির অনুকে ক্লাসে চলে যেতে বলে। অনু মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে চুপচাপ চলে যায়। মায়া আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,

মায়াঃ কালকে আসতে না আসতেই ইনোসেন্ট মেয়েদের পটানো শুরু হয়ে গিয়েছে? বাহ! বাহ!

আবির মুচকি হেসে বলে,

আবিরঃ কেন তোমার কি লাগছে? তাহলে তুমি পটে যাও। দ্যা গ্রেট বিউটি কুইন মিস মায়া আবিরের কাছে পটে গেছে। আহ! ভাবতেই জোস লাগছে কিন্তু।

মায়া রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। তাও নিজেকে সামলে আবিরকে আস্তে করে বলে,

মায়াঃ ক্লাস শেষ করে আমার সাথে ভার্সিটির পিছনে যে ফাঁকা জায়গাটা আছে সেখানে দেখা করবে। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আবির মায়ার দিকে একটু ঝুকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,

আবিরঃ কি প্রপোজ করবে নাকি? তাহলে আগেই হ্যাঁ বলে দিলাম। হাহা। (রসিকতা করে)

মায়াও কিঞ্চিৎ হেসে বলে,

মায়াঃ সেটা আসলেই বুঝবে।
আবিরঃ যদি না আসি।
মায়াঃ তাহলে ভাববো দ্যা গ্রেট আবির একজন কাপুরষ।

কথাটা বলেই মায়া ক্লাসের ভিতর চলে যায়। আর আবির পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে। এরপর ও ক্লাসে চলে যায়। আবির ক্লাস ঢুকলে রনি আর নেহাল ওকে ওদের সাথে বসতে বলে। কিন্তু আবির দেখে অনু এক কোণায় একা বসে আছে। তাই ও নেহাল আর রনিকে একটা চোখ টিপ দিয়ে অনুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

আবিরঃ এখানে বসতে পারি?

অনু যেন প্রস্তুতই ছিল না। ও স্বপ্নেও ভাবেনি আবির ওর পাশে বসতে চাইবে৷ ও থতমত খেয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

অনুঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই বসুন।

আবির বসতে বসতে বলে,

আবিরঃ তুমি এখনো আমাকে আপনি করে বলছো! তুমি করে বলো প্লিজ।

অনু লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে আমতা আমতা করে বলে,

অনুঃ না মানে আসলে আমি কখনো কোন ছেলের সাথে কথাই বলি নি। তাই কাউকে হঠাৎ করে তুমি করে বলতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে। তাই আরকি…
আবিরঃ হাহা। আচ্ছা আপনি করেই বলো। সমস্যা নেই।

অনু মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকগুলো হিংসাত্মক চোখ ওর দিকে রাগী আর বেশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। অনু বেশ ভয় পায়। আর ঘাবড়ে গিয়ে আবিরকে জিজ্ঞেস করে,

অনুঃ কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?
আবিরঃ হ্যাঁ অবশ্যই।
অনুঃ আপনি এত মেয়েকে রেখে আমার পাশেই এসে বসলেন কেন?
আবিরঃ কারণ তুমি একা বসে আছো তাই। তোমার মতো এত ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে একা বসে থাকতে মানায় বলো?

অনু আবার লজ্জা পায় আবিরের কথা শুনে। যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না ও। এরপর যথারীতি ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আবির মন দিয়ে ক্লাস করছিল। অনু বারবার আড় চোখে আবিরের দিকে তাকাচ্ছিল আর লজ্জা পাচ্ছিল। মায়া কিন্তু সামনে বসে সেটা লক্ষ্য করছিল। ও মনে মনে বলছে,

মায়াঃ আবির যত মজা আজই করে নে। কারণ কাল থেকে তুই আর ভার্সিটিতে আসতে পারবি না। আজ সে ব্যবস্থা করেছি তোর জন্য। খালি ছুটির পর একবার দেখাটা করতে আস। তাহলেই বুঝবি মায়া কি জিনিস। হাহা।

দেখতে দেখতে ক্লাস শেষ হয়ে যায়। আবির অনুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রনি আর নেহালের কাছে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলতে থাকে। এরমাঝে মায়া আবিরকে চোখের ইশারায় আসতে বলে। আবির মুচকি হেসে চোখ টিপ দেয় একটা। মায়া রাগ করে বের হয়ে যায়। তারপর আবির রনি আর নেহালকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আবিরঃ তোমরা বাসায় চলে যাও। আমার এখানে একটু কাজ আছে।

নেহাল আবিরকে গুতা দিয়ে টিটকারি করে বলে,

নেহালঃ কি বন্ধু কারো সাথে ডেইটে যাবে নাকি? হ্যাঁ হ্যাঁ?

আবির হাসে আর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। নেহাল আর রনি হাসতে হাসতে চলে যায় ওকে সাব্বাশ বলে। এবার আবির ওর ফোনটা বের করে চালাতে চালাতে মায়ার কথার মতো ওর বলা জায়গায় চলে যায়। গিয়ে দেখে মায়া নেই। জায়গাটা একদম নিরিবিলি। তেমন কেউ নেই। আবির মায়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ফোন চালাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। হঠাৎই মায়া আবিরকে ডাক দেয়।

মায়াঃ কি চান্দু তুমি এসেছো? খুব ভালো। এবার তোমার খবর আছে বাছা। দেখো কাদের সাথে নিয়ে এসেছি।

আবির ফোনের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে হকি স্টিক হাতে মায়ার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া এবার শয়তানি হাসি হাসতে হাসতে আবিরের কাছে আস্তে আস্তে এসে বলে,

মায়াঃ কি যেন বলে ছিলেন মিস্টার আবির? ওহ মনে পড়েছে। আমার সাথে লাগতে এসো না, খুব খারাপ হবে! হাহা। এবার ওদের মার খেয়ে কয়েকমাস হাসপাতালে পড়ে থাক। তারপর আমার খারাপ করিস। কিরে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন মার ওকে। আমি মন ভরে দেখি।

মায়া আবিরের দিকে আর আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া অপেক্ষা করছে। কিন্তু ওর পিছনে থেকে কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না। মায়া দ্রুত পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা প্রাণীও নেই। আবির আর ও সম্পূর্ণ একা। মায়া এবার আবিরের ভয়ংকর অট্টহাসি শুনতে পায়। ও মুহূর্তেই আঁতকে ওঠে আবিরের দিকে তাকায়। আবির রীতিমতো হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। আসলে মায়া যে ছেলেগুলোকে এনেছে তারা সকালেই অনুর জন্য আবিরকে ফেইস করে এসেছে। তাই আবিরকে আবার দেখে ভয়ে পালিয়েছে। আবির হাসতে বলে,

আবিরঃ আমার লাইফে এত্তো হাসি নি যা আজ তুমি আমাকে হাসালে। হাহা। সিরিয়াসলি অসম্ভব মজা পেলাম। হাহা।

মায়া পুরো অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ ওর পুরো শরীর এবার থরথর করে কাঁপছে। বেচারির খুব ভয় হচ্ছে। কারণ এতক্ষণ আবিরকে যাতা বলেছে। এবার আবির ওকে যে কি করবে সেটা ভেবেই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মায়া আর কোন কিছু না ভেবেই উলটা দিকে দেয় এক দৌড়। কিন্তু লাভ হয় নি। তার আগেই আবির মায়ার হাত ধরে এক টান মেরে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলে,

আবিরঃ কিগো মিস মায়া কোথায় যাচ্ছিলেন? আমাকে হাসপাতালে পাঠাবেন না? হাহা।

মায়ার মায়াবী মুখখানায় আঁধার নেমে এসেছে। পুরো শরীর ভয়ে কাপছে। বেচারি মাথা নাড়িয়ে না না করছে আর বলছে,

মায়াঃ প্লিজ আবির আমাকে ছেড়ে দেও। আমার ভুল হয়েছে। প্লিজ…

আবির আস্তে করে মায়ার আরও কাছে গিয়ে ওর থুতনিটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আর….

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here