চিরেকুটের_শব্দ (পর্ব ৮)

0
1209

#চিরেকুটের_শব্দ (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

অর্ণব অর্থির কাছে গিয়ে বললো,
– সরি অর্থি, ওই দিনের কাজের জন্য আমি লজ্জিত। আমার এমন টা করা মোটেও উচিৎ হয় নি।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো তখন। অর্থি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুয়ে দিচ্ছে সে।
অর্ণব আবারও বললো,
– বৃষ্টি তোমার কুব পছন্দ অর্থি?
অর্থি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সুচক সম্মতি জানালো।
অর্থি কিছু না বলে রুমে চলে গেলো। হাত মুছে একটা কাগজে কি যেন লিখল। আর তা অর্ণবের দিকে এগিয়ে দিলো।
‘আমার না ছোট ছোট অনেক স্বপ্ন আছে। আর তার মাঝে একটা হলো, প্রিয় মানুষটার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা। ভিজবেন আমাকে নিয়ে?’

অর্ণব চুপচাপ অর্থিকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আজ যত ইচ্ছে ভিজবে সে।
ছাদে পা রাখতেই দুই হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টির তালে তালে নাচছে অর্থি। আর অর্ণব এক পাশে দাড়িতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

এতটুকু বলতেই ইনস্পেক্টর সাঈদ তাকে থামিয়ে একটা প্রশ্ন করলো,
– মেয়েটা এতোই বোকা ছিলো? মানে তার সাথে এতোকিছু হলেও সে সব চুপচাপ মেনে নিতো?
অর্ণব একটু হেসে বললো,
– হুম, ছোট বেলা থেকেই অবহেলা পেতে পেতে হয়তো সব সিচুয়েশন স্বাভাবিক ভাবে নিতে শিখে গেছে সে। খুব বোকা ছিলো মেয়েটা, অল্পতেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলতো।
সাঈদ ভ্রু-কুচকে বললো,
– আর আপনি তার সুজুগ নিয়েছিলেন?
– হুম,,,
– আচ্ছা, তখন আপনার কাছে এসব ঠিক মনে হলেও এখন বেঠিক মনে হচ্ছে কেন? মানে কেন আপনার মাঝে অনুসূচনা জেগে উঠেছে?
এবার অর্ণবের দু’চোখ ভিজে উঠলো।
– ওর কথা এখন খুব মনে পরছে আমার। ইচ্ছে করছে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। একবার নয়, হাজার বার সরি বলি তাকে। কিন্তু সেই সুজুগ তো আর নেই। আমি আমার বাচ্চার মুখে বাবা ডাক শুনতে পাইনি। ওই দিনের পর থেকে দু’কান জুড়ে শুধু ছোট বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ ভেষে আসে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি আমার সন্তান টা কাঁদছে। আমি আমার বাবাকেও হারিয়ে ফেললাম ওই ঘটনার জন্য। মা তো বলেই দিয়েছে, আমার মতো কুলাঙ্গারের চোহারা দেখলে সেও আত্মহত্যা করবে। এসবের থেকে মুক্তি চাই আমি। আমার মৃত্যু দন্ড হোক এটাই আমি চাই। আমার মতো মানুষের অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার।
,
,
আজ অর্থির মন জুড়ে আনন্দের জোয়ার এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছে। অর্ণব আজ নিজেই তাকে কতো সময় দিচ্ছে। আগের মতো বিরক্তি দেখাচ্ছে না। দেখে মনেই হচ্ছে না অর্ণবের মাঝে এমন একটা খারাপ মানুষ লুকিয়ে আছে।

ছাদ থেকে কোলে করে নিয়ে আসে অর্থিকে। লজ্জায় দুই হাতে অর্ণবের গলা জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছে অর্থি।

দুপুরের দিকে থেমে গেলো বৃষ্টি। আকাশ এখনো পরিস্কার হয় নি।
আজ অর্থিকে রান্না করতে হয় নি। অর্ণব যেতে দেয় নি। এমন কি দুপুরে অর্থিকে হাতে তুলে খাইয়েও দিলো অর্ণব। অর্থি ভাবছে এই বুঝি সব ঠিক হয়ে গেলো। এই বুঝি অর্ণব তাকে বুঝতে পেরেছে। এই বুঝি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ভাবতেই তার মন আকাশের পাখি গুলো ডানা মেলে উড়তে লাগলো।
কাগজে কিছু একটা লিখে অর্নবের দিকে এগিয়ে দিলো অর্থি,
‘আপনাকে একটা সু-খবর দেওয়ার আছে।’
অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি?
অর্থি আবারও লিখে বললো,
– পরে বলবো, এটা সারপ্রাইজ।
,

বিকেলে আকাশ প্রায় পরিস্কার। বেলকনিতে বসে আছে অর্থি। তখনি ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
– কেমন আছিস বোন?
অর্থি রিপ্লে দিলো,
– আলহামদুলিল্লাহ্, ভাইয়া তুমি?
– অর্ণির তো বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেছিস?
– কি বলো, ও তো এখনো ছোট।
– পাত্র ভালো তাই হাতছাড়া করতে চাইনি।
– আচ্ছা, কি করে পাত্র?
– নিজেদের অনেক বড় বিজনেস আছে।
– আচ্ছা, অর্ণি কি রাজি?
– প্রথমে রাজি হয়নি, এর পর ছবি দেখে রাজি হয়ে গেলো।
– আচ্ছা, বিয়ে কবে?
– আগামি মাসের ১৫ তারিখ। মানে আর ২০ দিন আছে।
– অর্নির বিয়ে তো টিকই হয়ে গেলো, এর পর তো বাড়িটা পুরো খালি হয়ে যাবে। তাই না?
– হুম রে, তোকে অনেক মিস করছি।
– কিন্তু আমি তো তোমাদের কাছে বোঝা ছিলাম।
– কে বললো?
– তা না হলে কি, আমার বিয়ে হচ্ছিলো না দেখে মা আমার হাতে বিষের বোতল এনে দিয়ে বলছিলো, এটা খেয়ে আমাকে মুক্তি দে। বোঝা না হলে কি এসব বলতো?
– ওসব নিয়ে এখনো ভাবিস? ওসব এখন অতিত। আর অতিত ভেবে কষ্ট পাওয়া ঠিক না।
– কিছু অতিত কখনো মন থেকে একেবারে মুছে ফেলা যায় না। তবুও ভুলে থাকতে চেষ্টা করি। ভালোই তো আছি। অর্ণব খুব ভালো ছেলে।
,
,
সন্ধায় অর্ণব একটা নীল শাড়ি এনে অর্থির হাতে দিলো। আর বললো,
– এটা পরে নাও। রাতের বেলায় ঘুরতে বের হবো আমরা।
অর্থির বোকা মন খুশিতে হকচকিয়ে উঠে। সে এক মুহুর্তও দেড়ি করলো না সেজে গুজে একেবারে রেডি।

অর্ণবের সাথে বের হলো সে। নীল শাড়ি আর হাতে নীল চুড়ি, একটু দুরে গিয়েই কিছু গোলাফ কিনে অর্থির হাতে দিলো অর্ণব। অর্থি আজ খুব খুশি। খুশি তে রাস্তায়ই জড়িয়ে ধরলো অর্ণবকে। অর্ণব তাকে ছাড়িয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
– এটা রাস্তা, বাড়ি না।
অর্থি লজ্জা পেলো। হুট হাট এতো কিছু পেয়ে হয়তো নিজের আবেগ কনট্রোল করতে পারেনি সে। তাই এমন টা করলো।

এর পর অর্থিকে নিয়ে একটা বড় হোটেলে গেলো সে। অর্থি চার দিকে চোখ বুলাচ্ছে। অর্ণব ওদের সাথে কি যেন বলছে তা সে বুঝতে পারছে না। কারণ সে হোটেলের সব দিকে তাকাচ্ছে।
এর পর অর্ণব তাকে নিয়ে হাটা ধরলো। অর্থিও চুপচাপ চার দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে অর্ণবের সাথে হাটতে লাগলো।
এর পর একটা রুমে ঢুকে গেলো তারা। অর্থির সাথে সব সময় কাগজ আর কলম থাকে। সে অর্ণবের দিকে একটা লিখা এগিয়ে দিলো,
‘আমরা কি আজ এখানেই থাকবো?’

কিন্তু অর্থির কথায় উত্তর দিলো না অর্ণব। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
একটু পর ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এলো একটা লোক। তাকে দেখেই চক্ষু ছড়ক গাছ অর্থির।
এটা তো অর্ণবের অফিসের বস ফরহাদ চৌধুরী। অর্থি এবার অর্ণবের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো। যার অর্থ লোকটা এখানে কেন?
অর্ণব সোজাসুজি ভাবেই বললো,
– আজ রাত টা ওর সাথে থাকতে হবে তোমাকে। এর পর সকালে এসে তোমায় নিয়ে যাবো আমি।
মুহুর্তেই অর্থির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। এই মুহুর্তে কোথায় যাবে, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
সে দ্রুত একটা লিখা লিখে অর্ণবকে দিলো।
– প্লিজ আপনি আমায় মারুন, কাটুন যাই করেন,, প্রয়োজনে আমায় মেরে নদীতে ফেলে দিন। তবুও এতো বড় পাপের মাঝে আমায় ছেড়ে যাবেন না। আপনি ছারা আর কাউকে আজ পর্যন্ত আমার হাতও স্পর্শ করতে দিই নি। সেখানে আমি পারবো না,,,,,,,,,

কিন্তু অর্ণবের মাঝে একটুও দয়া হলো না। ঠাস করে অর্থির গালে একটা থাপ্পর দিয়ে বললো,
– যা বলছি চুপচাপ তাই করবি।
অর্থি দ্রুত আরেকটা লিখা লিখে,
– প্লিজ আল্লাহ্ সইবে না এতো বড় জুলুম। আমার জীবনে এতো বড় পাপ জুড়ে দিবেন না আপনি। আপনার দুটু পায়ে ধরি আমি।

এর মাঝেই মাঝেই ফরহাদ চৌধুরী তার কাছে এসে চুল গুলো ছুয়ে দিয়ে বললো,
– অর্ণব খুব মারে তাই না? ব্যাপার না। আজ দেখবে আমি খুব আদর করবো তোমায়, যা এর আগে কখনোই পাওনি তুমি।
অর্ণব কিছু বলছে না। চুপচাপ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই অর্থি ফ্লোরে পরে অর্ণবের পা জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করে দেয়। কিন্তু তবুও মায়া হলো না অর্ণবের। অর্থিকে লাথি মেরে সরিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সে।

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here