বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১০,১১

0
1170

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১০,১১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১০

বৃষ্টির শাড়ির কুচি গুলো খুব মনোযাগ দিয়ে ঠিক করছে রাত। বৃষ্টির দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রাতের দিকে। ইশ তার প্রতিটা দিনই জদি এমন হতো? বাইরে থেকে মায়ের ডাক কানে এলো তাদের।
– কি রে তোদের হলো?
– এইতো মা হয়ে গেছে।
শাড়ি ঠিক করতে করতেই উত্তর দিলো রাত। কুচি গুলো ঠিক হয়ে গেলে তারাহুরা করতে গিয়ে রাত নিজেই গুজে দেয় কুচিগুলো। রাতের আঙুলের স্পর্শ পেটে লাগতেই কেপে উঠে বৃষ্টি। চোখ দুটু বন্ধ করে হাতে থাকা শাড়ির অংশটা খামচে ধরে বৃষ্টি। বাকি সব ঠিকঠাক করে আঙুল দিয়ে গালে ছোট্ট করে একটা চাটি মারে রাত।
– ম্যাডাম হয়ে গেছে এবার চলুন।
রাতের কথায় যেনো ধ্যান ভেঙে বাস্তবে ফিরে আসে বৃষ্টি। লজ্জায় মাথাটা নিচু করে হাটা ধরে রাতের পেছন পেছন।
নিচে আসতেই রাত্রি চৌধুরি বৃষ্টির সারা শরিরে চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,
– মাশাল্লাহ্। শাড়িতেই নারী। শাড়িতে যে তোমায় কতো সুন্দর লাগে এটা জদি জানতে তাহলে কখনোই তুমি শাড়ি ছারতে চাইতে না।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– ভাবি, তুমি তো দেখছি খুব ভালো শাড়ি পড়তে পারো। আমাকেও একটু শিখিয়ে দিবে।
– না আরশি তুমি ভুল ভাবছো, শাড়ি তো আমি……
এটুকু বলতেই খুক খুক করে কাঁশা শুরু করলো রাত।
বৃষ্টিও কথা ঘুরাতে বলে উঠে,
– না শাড়ি তো আমিই পড়েছি।
– তো আমি কখন বললাম যে, ভাইয়া পড়িয়ে দিয়েছে?
– তবে রে,
রাত টেবিল থেকে ফল কাটার ছুড়িটা নিয়ে তাড়া করলো আরশিকে। আরশি দৌড়ে লুকিয়ে যায় মায়ের পিছে। রাত্রি চৌধুরি একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে উঠে,
– এই তোরা কি যাবি?
তখনি সদর দরজার কাছে এসে ড্রাইভার ডাক দেয় তাদের।

বাইরে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ঘরির দিকে বার বার তাকাচ্ছে রুদ্র চৌধুরি। তাদের দেখেই গাড়িতে গিয়ে বসে সে। সন্ধা হওয়ার আগেই ওই বাড়িতে পৌছে যায় তারা। বেশ বড় সর ভাবেই পার্টিটা হচ্ছে আজ। সব ঠিকঠাক ভাবেই সাজানো গোছানো।
রিদ খুব ব্যাস্তভাবে এগিয়ে এলো তাদের দেখে।
– আঙ্কেল, ফুফি, ভাবি তোমাদের এখন আসার সময় হলো? সেই কখন ধরে অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য। আব্বু আম্মু কেও নেই পাশে। আর তোমরাও এলে এতো দেরি করে। আর রাত কোথায় ফুফি।
– আছে বাইরে, ওই তো আসছে।

– কিরে তোর এখন আসার সময় হলো? তুইও কি আজ সবার মতো মেহমান হয়ে গেলি নাকি? অন্তত তোর থেকে এটা আশা করা যায় না।
– কি করবো বল, আসতেতো আরো আগেই চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েদের ঘসামাজার বেপারে তো তুই জানিসই। তাই না?. আর এখনো তো অনেক সময় বাকি আছে। চল চল।
– হুম চল।

রিদের বাবার দু, একজন বন্ধুকেও ইনভাইট করা হয়েছে পার্টিতে। আরশিকে সাথে নিয়ে সকলের সাথেই কথা বলছে রিদ। আরশি রিদের পাশে হেটে হেটে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভাইয়া ভাবি এরা যে কই গেলো কে জানে?
হটাৎই রিদের বাবার এক বন্ধুর স্ত্রী, আরশিকে রিদের সাথে দেখেই বলে উঠে,
– সে কি রিদ, বিয়ে করে ফেলেছো নাকি?
– জ্বি, আন্টি, এই যে এই লেন্জা ছারা বাদর টাকে।
রিদের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় আরশি। কিহ্, বিয়ে? কবে?
– আমরা তো জানলাম ই না রিদ।
– সব হুটহাট হয়ে গেছে আর আমিও আপনাদের একটা সারফ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই এই পার্টিতে হুট করেই বৌ নিয়ে দাড়ালাম আপনাদের সামনে।
– যাই হোক, মেয়েটা কিন্তু খুবই মিষ্টি দেখতে। একধম তোমাদের দুজনের পার্ফেক্ট জুটি। দোয়া করি এমন করে যেনো খুব শিগ্রই আরো সারফ্রাইজ দিতে পারো।
– জ্বি আন্টি দোয়া করেন, সামনে যেনো দু,জন থেকে তিন জন হয়ে আপনাদের সামনে দাড়াতে পারি।

ওদিকে রাগে খটমট করছে আরশি। পারছেনা কিছু কইতে, পারছেনা কথাগুলো সইতে। ফিউর সিংগেল একটা মেয়েকে নিয়ে রিলেশন বাদ দিয়ে ডিরেক্ট বিয়ে পার হয়ে বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত চলে গেলো। কি সাংঘাতিক কথা বার্তা। রাগে যেনো কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে আরশির। ইচ্ছে করছে রিদকে সকলের সামনে মেরে, না কুচি কুচি করে সেই রক্ত দিয়ে লিখে দিতে,
” না, আমি ফিউর সিংগেল।

শাড়ি পরে ঠিঠাক ভাবে হাটতে পারছেনা বৃষ্টি। শাড়ির কুচিতে পা পরছে বার বার। একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলো সে। আর ওদিকে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা তা দেখছে রাত।
ওয়াশ রুম থেকে ফিরার সময় শাড়ির কুচিগুলো হাত দিয়ে উচু করে ঠোট ফুলিয়ে চার পাশে তাকাচ্ছে বৃষ্টি। রাতকে দেখে এগিয়ে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতেই কেও একজন ধরে ফেলে বৃষ্টিকে। চোখ বন্ধ করে নেয় বৃষ্টি। কারণ সে যানে এটা রাত ছারা কেও না। কোথাও পরে যেতে লাগলে রাত ঠিকই এভাবে ধরে ফেলে তাকে। আর আজ সবার সামনে? কি লজ্জা। আজ আর চোখ কুলবো না। চোখ কুলে তাকে দেখলেই আমি লজ্জায় মরে যাবো। আশে পাশে লোকজনকে দেখলে আরো সে লজ্জা দ্বিগুল হয়ে যাবে।
রাতের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে বৃষ্টি। চোখ খুলতেই যেনো আকাশ থেকে পড়লো সে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটি রাত নয়, অন্য একটি ছেলে। আর সে তার দিকে তাকিয়ে টানলো একটা প্রশারিত হাসির রেখা।
এক ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছেলেটার কাছ থেকে ছারিয়ে নেয় বৃষ্টি। রাতের দিকে তাকাতেই দেখে রাতের চক্ষুজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। নিজেকে সংযোত রেখে সেখান থেকে সরে গেলো রাত। আর বৃষ্টি শাড়িটা উচু করে ধরে আস্তে আস্তে দৌড়াতে থাকে রাতের পিছন পিছন।

– বিশ্বাস করুন আমি ওসব ইচ্ছে করে করিনি। হ্যা আমি আপনি ভেবে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ছিলাম, এটা আমার অপরাধ। এটা সম্পুর্নই একটা এক্সিডেন্ট। আর এই অপরাধের শাস্তি দিন আমায়, মারেন, থাপ্পর দেন তবুও রাগ করে থাকবেন না প্লিজ। ভালো লাগেনা আমার।
– কেনো আমি রাগ করতে যাবো? আমি পুরু পুরিই নরমাল।আর তুমি কে যে এই সামান্য কারণ নিয়ে তোমার সাথে আমি রাগ করবো? তুমি শুধু নামেই মাত্র আমার স্ত্রী, আর তাছারা তোমাকে আমি স্বাধিনতা দিয়ে দিয়েছি, এখন তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই করো। তাতে আমার বিন্দু মাত্র সমস্যা নাই।
– প্লিজ এভাবে বলবেন না। এটা একটা এক্সিডেন্ড মাত্র।
– ছেলেরা যখন ঝাপটে ধরে, তখন চোখ বন্ধ করে উপভোগ করার মজাই আলাদা তাই না? তো এভাবে আমার কাছে কান্নাকাটি করার তো কোনো দরকার নেই।
– সত্যিই কি আমি আপনার কেও না?
– না।
কথাটা বলেই ছাদ থেকে হাটা ধরে রাত। শক্ত হয়ে ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। রাত সিরি দিয়ে নামতেই তৃষ্নার মুখুমুখি হয়। কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই হাটা ধরে নিচের দিকে। তৃষ্না দৌড়ে গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পাশে।
– কি হলো কাদছো কেনো বৃষ্টি? কথাটা একটু টেনে টেনে বললো তৃষ্না। বৃষ্টির উত্তর না পেয়ে আবার বললো তৃষ্না।
– রাত তোমায় ভালোবাসেনা বলে দিয়েছে তাই তো? আমি জানি যে, রাত সত্যিই তোমাকে ভালোবাসেনা। সে এতোদিন যেভাবেই আচরণ করুন না কেনো? তা করেছে শুধু তার কর্তব্য ভেবে। রাত তোমাকে মন থেকে কোনো দিনই মেনে নিবেনা। সারাদিন আমিই রাতের পাশে থাকি, সো রাত অল্প হলেও আমার সাথে সব শেয়ার করে। সেদিন তো রাত সরাসরিই বললো তোমাকে সে তার জীবনে চায়ই না। শুধু বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে নিচ্ছে। সো, আমি বলি কি? তুমি এতো অবহেলায় না থেকে রাতের কাছ থেকে সরে অন্য কাওকে বেছে নাও, এটাই তোমার মোঙ্গল বয়ে আনবে।
আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাই তো? ওয়েট।
তৃষ্টা ফোন বের করে। একটু ঘাটাঘাটি কটে কি যেনো বের করে বৃষ্টির সামনে ধরলো। তার ধারনা এটা দেখার পর রাতের সম্পর্কে তার ধারনাটাই পাল্টে যাবে।

To be continue…………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১১

তৃষ্না ফোনটা বের করে কি যেনো বৃষ্টির দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু তা দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই বৃষ্টির। একটু আগে রাতের আচরনে অনেকটাি কষ্ট মনের মাঝে বাসা বেধে নিয়েছে। যদি তৃষ্নার দেখানো জিনিসটা খুব খারাপ কিছু হয় তাহলে তো সে সহ্য করতে পারবেনা। আর মুহুর্তও সেখানে না দাড়িয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। তৃষ্না যাই দেখাক না কেনো। আজ কিছুই দেখবেনা সে। কিচ্ছু না।

রাত অনেক হলো। বৃষ্টি রুমে প্রবেশ করে দেখে রাত বিছানায় সুয়ে আছে। রুমের লাইট অফ। জানালার পর্দাগুলোও সড়ানো। চাদের আলো কিছুটা এসে পরছে রাতের গায়ে। ওভাবেই দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। অনেক্ষন হয়ে গেছে রাতের মুখে কোনো কথা নেই। বৃষ্টি একটু এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দাটা টেনে দিলো। এবার রুমটা মোটামুটি অন্ধকার। রাত চট করে রেগে গেলো বৃষ্টির কাজে।
– এটা কি করলে তুমি? পর্দা টানলে কি আমি টানতে পারতাম না? তোমাকে কি আগ বাড়িয়ে কিছু করতে বলেছি আমি? চাঁদের আলোটা কি এমন ক্ষতি করেছে শুনি?
– এভাবে আলো থাকলে কি ঘুমানো যায়? আমি ভাবলাম আপনার হয়তো অসুবিধা হচ্ছে। আর আপনিও চাঁদের আলো দিয়ে কি করবেন শুনি?
– ঠান্ডা লাগছে তো তাই চাঁদের আলো পোহাচ্ছি। যত্তসব আজাইরা ন্যাকামি।
বলেই বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দিকে হাটা ধরলো রাত। বৃষ্টি পেছন থেকে বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছেন?
– চাঁদের আলো পোহাতে। ঘরের চাঁদ তো ভিন দেশে আলো ছরাতে শুরু করে দিয়েছে, তাই প্রাকৃতিক চাঁদের মাঝেই সেই স্বাদ খুজে নিতে হবে।
বৃষ্টি ভালোই বুঝতে পারছে, তাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো রাত। তখনও ঠোট ফুলিয়ে বললো,
– আমিও কি আসবো?
রাত বিরক্তি ভঙ্গিতে দাত কেলিয়ে বলে উঠে,
– জ্বি আসেন। দুজন মিলে জোৎস্না বিলাস করবো।
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– তাহলে তো আরো ভালো। দুজন আজ আর ঘুমাবো না, সারা রাত জোৎস্না বিলাস করবো। খারাপ না আইডিয়াটা।
রাত এবার দাত মুখ খিচে বলে উঠে,
– স্টুপিড।
বলেই বারান্দায় গিয়ে ফ্লোড়ে বসে পড়লো সে। চাঁদের আলোটা এবার বরাবরই গায়ে এসে পরছে। কিছুক্ষন পর বৃষ্টিও এসে বসলো তার পাশে। কিছু বললোনা রাত। এবং কোনো কথাও বলছেনা বৃষ্টির সাথে।
বৃষ্টি মুহুর্তেই রাতের এক হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বলে উঠে,
– সরি, আর কখনো এমন হবেনা।
রাত একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
– জানো বৃষ্টি। এমন একটা জোৎস্নার রাত নিয়েও অনেক স্বপ্ন ছিলো মনে। এরকম চাঁদের আলোয় বসে বসে বর্ষার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে কতো রাত্রি পার করে দিয়েছি তার কোনো হিসেব নেই। এভাবে ফোনে সারা রাত পার হয়ে গেলেও মনে একটা শুন্যতা কাজ করতো। কারণ তখন সে আমার পাশে থাকতোনা। শুধু তার ভয়েজ ও নিশ্বাসের শব্দ গুলোও উপলব্দি করতাম আমি। ভাবতাম, এক সময় তো এই দুরুত্বটা আর থাকবেনা। এই জোৎস্নার আলোয় দুজন মিলে বসে গল্প করতে করতেই না হয় নিন্দ্রাহিন রাত্রি যাপন করবো? কিন্তু দেখো, এখন গল্পের মোড় কোথায় গিয়ে দাড়ালো। ওসব ভাবলে মনে হয় সব ছিলো মিছে মায়া। সময়টা চলে গেছে গল্পটা রয়ে গেছে সৃতি হয়ে। সে নিজেই দুজনের মসঝখানে দাড় করিয়েছি এক বিশাল সৃতির দেয়াল।

রিদের বাড়ির ছাদে একটা ছোট্ট ফুলের বাগান আছে। ওখানে ওগুলোতে পানি দিচ্ছে সে। পেছনে আরশি এসে দাড়ায় তার। রাগে মুখটা ফোসফোস করছে তার। হাত দুটি কোমরে। ওড়না দিয়ে কোমরটা শক্ত করে বাধা। দেখে মনে হয় একেবাকে মারামারি করার জন্য প্রস্তুত সে।
– এটা কি হলো?
রিদ ফুল গাছ গুলোতে পানি দিতে দিতে বলে উঠে,
-কি?
– গতকাল রাতের কথা বলছি। সবাইকে কি বললে, আমি যেনো তোমার কি হই? আবার বৃক্ষ রোপনের আগে ফলের জন্য পার্থনা করছে, বাহ্ কি চমৎকার দৃশ্য।
– তো প্রব্লেম কি? আগে থেকে মুরুব্বিদের দোয়া নিয়ে নিচ্ছি। এতে দোষের কি দেখলি তুই?
আরশির নিজের চুল নিজে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে রিদকে চরম ভাষায় কয়েকটা বাংলা গালি ছুড়ে মারতে। কিন্তু আপসোস তা এখন কিছুই মনে পরছেনা তার। তার এই একটা সমস্যা, ঝগড়ার সময় ঠিকটাক পয়েন্টগুলো মাথায় আসেনা।
– দেখুন রিদ ভাই, মাথাটা আমার চরম ভাবে খারাপ হচ্ছে কিন্তু। কালকে লোকজনের সামনেও কিছু বলতে পারিনি আমি। এখন ইচ্ছে করছে,,,,
রিদ এবার পাত্রটা রেকে আরশির দিকে তাকায়। রিদের তাকানো দেখেই থমকে যায় আরশি। রিদ এক পা এক পা করে আগায় তার দিকে। আরশিও পিছ নামতে নামতে পেছনে থাকা ছোট দেওয়ালের সাথে আটকে যায়। রিদ তার দিকে ঝুকে বলে,
– কি ইচ্ছে করছে? বলনা,,,,
আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– ইচ্ছে করছে ,,,
– কি?
– ইচ্ছে করছে তোমাকে মাথায় তুলে ছাদ থেকে ছুরে ফেলে দিই।
– তাই? তো দে না। তোর হাতে যে আমি মরতেও রাজি স্বপ্নপরী।
আরশি রিদকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার সময় আবার বলে উঠে,
– দেখো রিদ ভাই, তুমি আমার সাথে ফাজলামি করো তা ঠিক আছে। কিন্তু ফাজলামির মাত্রাটা অতি বেড়ে গেলেও আবার সমস্যা। কালকের কাজটা তুমি ঠিক করোনি।
আরশি চলে গেলো। রিদ একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
“” সবই কি তোর কাছে ফাজলামি মনে হয়রে আরশি। আমার ছোট্ট ছোট্ট পাগলামি গুলো, মনের সুপ্ত অনুভুতিগুলো কি কখনো তোর মনকে স্পর্শ করতে পারেনি। তোর জন্যই যে বাবা মায়ের সাথে চলে না গিয়ে পড়ে আছে এই দেশে তা কি তুই বুঝিস না?””

বিকেলে সবাই চলে যাওয়ার কথা বললেও রিদ যেতে দিচ্ছেনা তাদের।
– প্লিজ ফুফি, আরো একটা দিন থাকোনা। প্রয়োজনে কালকে আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো।
– কিন্তু আরশি তো জেদ ধরেছে সে চলে যাবে। তো,,,,
– আরে ফুফি কি বলছো তুমি। এই বাচ্চা একটা মেয়ের কথায় তুমি চলে যাচ্ছো। জেদ ধরেছেতো, দুটা থাপ্পর দিয়ে বসি রাখলেই তো হয়। বাচ্চাদের আবার শ্বাসন না করলে মাথার আগায় চড়ে বসবে। আমি তো বিয়ে করলে বাচ্চা মেয়েকেই করবো যাতে ন্যাকামো করলেও ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখতে পারি।
রিদের কথায় হেসে দিলো উপস্থিত সবাই। শুধু রাগে ফুলছে আরশি। তাকে বাচ্চা বলে অপমান?
– আর তোমরা তো জানোই আমি এখানে একা থাকি। বাবা মা ও নাই। আর তোমরা তো আমার মা-বাবা…………….রি মতো।
কথাটা বলেই আরশির দিকে তাকায় রিদ। বেচারি কেমন রাগে ফুলছে।
– প্লিজ ফুফা ফুফি আরেকটা দিন থেকে যাও তোমরা প্লিজ।

পরদিন বিদায় নিয়ে চলে গেলো সবাই।
সকালে রাত অফিসে চলে গেলো। আজ আর বৃষ্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলোনা সে। মনে হয় অভিমানের পাল্লা এখনো ভারি।
শাশুরি দুপুরের সব খাবার তৈরি করালো বৃষ্টিকে দিয়ে। রাতের পছন্দের খাবার সব।
রান্না শেষে বৃষ্টিকে ফ্রেশ হয়ে হয়ে তার রেমে যেতে বললো রাত্রি চৌধুরি। শাশুরির কথা মতো তার রুমে চলে গেলো বৃষ্টি।
বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়িয়ে দিলো সে। বৃষ্টিকে নিয়ে খাবার গুলো নিয়ে গাড়িতে তুলে দেয় রাত্রি চৌধুরি। ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– দেখি এবার আমার কিভাবে রাগ করে থাকে? যেমনটা শিখিয়ে দিয়েছি তেমনটাই বলবে ঠিক আছে?
বৃষ্টি লজ্জা মাখু মুখ নিয়ে সম্মতি জানালো।

গড়ি পৌছে গেলো রাতের অফিসের সামনে। আগে একবার রুদ্র চৌধুরির সাথে এসেছিলো সে। রাত কোথায় বসে সেটাও তার মুখস্ত।
বৃষ্টি খাবার নিয়ে ধিরে ধিরে এগুতে থাকে। কেমন জেনো লজ্জা ফিল করছে সে। নিশ্চই রাত এখন তাকে এভাবে দেখলে সারপ্রাইজ’ড হয়ে যাবে। বৃষ্টি রাতের নিকটে এসেই নিজেকে একবার দেখে নেয় সে। না সব ঠিকঠাক। বড় একটা শ্বাস টেনে একটা হাসির রেখা টানে বৃষ্টি। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই, সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ’ড ট হয়ে যায় সে নিজেই। খাবার গুলো পরে যায় হাত থেকে। হাত পা কাপছে তার। কপালে জমা হচ্ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নিজের চোখ কেই যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা তার। রাতও হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

To be continue…………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here