#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১০,১১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১০
কাঁদতে কাঁদতে রিদের বুকে মাথা রেখে সুয়ে আছে আরশি। রিদ এক হাত দিয়ে আগলে রেখেছে তাকে। রিদ তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– কিছু খেয়েছিস?
কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে আরশি। হয়তো ক্লান্তিতে এতোক্ষনে ঘুমিয়ে পরেছে সে।
কিছুক্ষন পর আরশি উঠে রিদের পাশে বসে আছে। কারণ ডাক্তার এসেছে কেবিনে। রিদের সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে চলে গেলো সে।
ডাক্তার বের হতেই রাত আসলো খাবার নিয়ে। দেখে আরশি পাশে বসে আছে রিদের। আরশির হাতে খাবার দিয়ে রিদের পাশে বসে রাত।
– কিরে ভাই, এতোক্ষন লাগলো তোর আসতে?
– কি করবো বল? আমি আরো আগেই আসতে চেয়েছিলাম। বাবা বললো, মা ও বৃষ্টি এরা বাসায় একা আরো আছে দুঃশ্চিন্তার মাঝে। তাই তারা গেলে তার পর আসতাম। কি আর করার, জানিসই তো বাবা এক ঘেয়ি সভাবের। যা বলে তাই। আচ্ছা এখন খাবার এনেছি গরম গরম খেয়ে নে।
আরশি খেয়াল করে রিদের হাতে বেন্ডেজ করা। তাই প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে উঠে,
– তুমি তো আর খেতে পারবে না, সমস্যা নাই আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।
পাশ থেকে রাত হেলান দিয়ে বলে উঠে,
– আমারও ডান হাত টা খুব ব্যাথা করছেরে আরশি। মনে হয় আজ রাতে আর খাওয়া হবেনা।
আরশি একটু হেসে উঠে,
– বুঝছি আসো দুজনকেই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তিন জন আজ এক সাথেই খাবো।
রাত ও রিদ দুজনকেই খাইয়ে দিচ্ছে আরশি। সেও খাচ্ছে। রাত খেতে খেতে বলে উঠে,
– জানিস আরশি, আমাদের দাদি মানে দাদা বৌ টাও ছিলো এমন। আমাকে আর রিদকে সেই ছোট বেলায় এভাবে পাশে বসিয়ে খাইয়ে দিতো। আমার এখনো মনে আছে। আজ আবার আমার দাদার বৌ টাকে আমাদের সামনে দেখতে পেলাম।
– হুম কথার ফাকে এখন তুমি আমাকে দাদার বৌ বানিয়ে ফেললে।
খেয়ে দেয়ে বসে আছে রাত ও আরশি। রিদ সুয়ে সুয়ে রাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– তুই আজ এখানেই থাক আমার সাথে। জদি সমস্যা না হয়। গাড়ি এনেছিস তো তাই না?
– হুম,,
– তাহলে আরশিকে এক টানে বাড়ি পৌছে দিয়ে তুই আবার চলে আয়।
রিদের কথায় অবাক হলো আরশি। অনেক জোড়াজুড়ির পর সবাইকে রাজি করিয়েছে সে আজ রিদের পাশে থাবে। রিদও সম্মতি দিয়েছে থাকতে। আর এখন বলছে বাড়ি দিয়ে আসতে?
আরশি একটু রাগি ভাবেই জোর গলায় বলে উঠে,
– আমি যাবোনা, আমি এখানেই থাকবো আজ।
রিদ তার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– বারাবারি করিসনা আরশি। চুপচাপ রাতের সাথে বাড়ি চলে যা। প্রয়োজনে কাল আবার আসিস।
– আমি বলছিনা আমি যাবোনা। আমি এখানেই থাকবো যাবোনা মানে যাবোনা।
– রাত ওকে নিয়ে যাতো এখান থেকে।
– আচ্ছা আরশি থাকতে চাইছে প্রব্লেম কি?
– অনেক প্রব্লম আছে তুই বুঝবি না। যা আরশিকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়। আরশি ভালো ভাবে বলছি চুপচাপ রাতের সাথে চলে যা, কাল আবার আসিস।
– রিদ চাইছেনা তাও বেহায়ার মতো থাকতে চাইছিস কেনো। চল বাড়ি চল।
কথাটা একটু রাগি ভাবেই বলে উঠে রাত।
আরশি যেতে না চাইলেও আরশিকে নিয়ে চলে গেলো রাত। বাড়িতে পৌছে দিয়ে আবার রাতের কাছে চলে গেলো সে।
রাত ফিরে এসে রিদের পাশে বসতেই রিদের ফোনটা বেজে উঠে। ফোন তুলে দেখে বৃষ্টির ফোন।
– হ্যালো ভাবি, এতো রাতে ফোন দিয়েছো ঘুমাও নি?
– রাত পৌছেছে?
– এটা জানার জন্যই এতো রাতে ফোন দিলে? বাব্বাহ্ কি দরদ। হুম এসেছে মাত্র।
– আরশিকে এতো রাতে পাঠিয়ে দিলেন কেনো? আসার পর থেকেই শুধু রুমে বসে বসে কাদছে।
– কাঁদুক সমস্যা নাই, একটু পর ঘুমিয়ে যাবো।
– কিছু কি হয়েছে?
– না তেমন কিছু হয় নি। আসার পর থেকেই দেখলাম কাদছে। এভাবে কি কাওকে এখানে রাখা যায় বলুন। আর এখানে কিছুক্ষনপর পর নার্সরা আসছে। এতে আরো আরশির ঘুমের ডিস্টার্বই হতো। আর তার উপর এই শীতের রাত। এই ঠান্ডার মাঝে এভাবে ঘুমের ডিস্টার্ব হলে কি থাকা যায় এই হসপিটালে? তাই রাতের সাথে পাঠিয়ে দিলাম তাকে। এখানে থাকলে আরো কষ্টই হতো তার।
– বাব্বাহ, এই অসুস্থ শরির নিয়েও প্রেয়সির জন্য এতো চিন্তা?
– এই তো তোমার প্রিয়তম আমার দিকে চেয়ে আছে নাও কথা বলে নিশ্চিত হও যে ঠিকঠাক মতো পৌচালো কিনা।
,
,
পর দিন বিকেলে রিদকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি। এখন মোটামুটি সুস্থ আছে সে।
আজ বৃষ্টি বাবার বাড়ি গেলো রাতের সাথে। নিয়ম অনুযায়ি দু,এক দিন থাকার কথা হলেও রুদ্র চৌধুরি বললো, এই অবস্থায় এতোদিন থাকার দরকার নেই। এক দিন থেকেই আবার রাতের সাথে সাথে চলে আসবে সে।
আজ মেয়ে ও মেয়ের জামাই আসায় খুশি আনন্দে নানান আয়োজনে কাটলো দুপুর টা।
বিকেলে বর্ষা ও বৃষ্টি বসে আছে ছাদের দোলনাটায়। বর্ষা একটু তাচ্ছল্যের হাঁসি দিয়ে বলে উঠে,
– হারিয়ে যাওয়ার নাটকটা করে তো রাতের মনটা খুব ভালোভাবেই জয় করেছিস দেখছি।
– তুমি এখনো সেই পুরুনো কথাগুলো টানছো আপু। আমরা সব ভুলে কি আগের মতো জীবন যাপন করতে পারিনা?
– হুম অবশ্যই, আর তুই তো এটাই চেয়েছিলি। তাই তো এতো কাহিনি করলি। তুই খুব ভালো অভিনয় পারিস রে বৃষ্টি।
বর্ষার ত্যরা বাকা কথায় এবার একটু রাগ হয় বৃষ্টির। বর্ষার দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– রাতের সাথে কে কতোটা অভিনয় করেছে সেটা তোমায় নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবেনা আপু। তুমি রাতের জায়গায় নিজেকে দার করিয়ে দেখো, কতোটা অন্যায় করেছিলে তার সাথে?
– ওটা যাস্ট আমার একটা ভুল ছিলো। আর ভুল তো মানুষেই করে তাই না? তাই বলে তাকে সেই ভুল সংসোধন করতেও সুজুগ দিতে হয়। বড় বোন হয়েও তোর কাছে হাত জোড় করে কেদেছিলাম। আর হারিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে আমার সেই কান্নাগুলো অভিনয়ের চাদরেই ডেকে ফেললি তুই। তাই তো আমার ভাগ্যটা আজ এমন।
– তোমার ভাগ্য তুমি নিজেই পরিবর্তন করেছো আপু। আর আমার ভাগ্য হটাৎ পালটে যাওয়ার কারণ ও ছিলে তুমি। অজথা আমায় দোষারপ করোনা।
ধিরে পায়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। বর্ষার চোখ দুটি রাগে লাল হয়ে আছে। এক মুহুর্তের জন্য হলেও বৃষ্টিকে এখন তার চরম শত্রু মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে বৃষ্টি ও তার বেবিকে রাতের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে। রাতের সাথে বৃষ্টিকে দেখলেই সহ্য হয় না তার। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে এখন কথা বলতে বলতে ছাদের কিনারা থেকে টুপ করে নিচে পেলে দিতে। তাতেই রাতের জীবন থেকে সরানো যাবে বৃষ্টিকে। এমন পাশান হৃদয়ের বোন ও দুনিয়ায় দ্বিতিয়টা খুজে পাওয়া যাবে কিনা মনে হয় না।
বৃষ্টি নিচে নামার জন্য ধিরে ধিরে সীড়ির কাছে আসতেই অনুভ করে পেছন থেকে কারো হাতের স্পর্স। আর তা একটু জোড়েই ছিলো। নিজের ওজন সামলাতে না পেরে মনে হচ্ছে এক্ষুনি সীড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পরবে সে। যেমন টা একটা গোলাকার বস্তু সীড়ি দিয়ে ছেরে দিলে পরবে। বৃষ্টি চোখ বন্ধ করে আছে, পিট পিট করে তাকাতেই নিজেকে রাতের বুকে নতুন করে আবিস্কার করে সে। রাত তখন বৃষ্টিকে খুজতে ছাদে যাচ্ছিলো। বৃষ্টিকে এভাবে পড়ে যেতে দেখেই খপ করে ধরে পেলে সে। তবুও ব্যথায় চোক দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে বৃষ্টির। এবার পেটে হাত দিয়ে কেদেই দিলো সে। রাত রাগি চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। বৃষ্টিকে এভাবে ঘরে রাখায় পারছেনা কষিয়ে কয়েকটা চর বসিয়ে দিতে বর্ষার গালে।
ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে দশ মিনিটের ভিতর এখানে আসতে বলে রাত। বৃষ্টিকে নিচে নিয়ে গিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো সে। থাকার জন্য যে কাপর এনেছিলো তা সব ঘুচিয়ে নিলো ব্যাগে। এখনি বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে সে।
বাড়ির সামনে এসেই হর্ণ বাজালো ড্রাইভার। বৃষ্টিকে নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে সে। বৃষ্টির বাবা মা সামনে এসে জিগ্গেস করলেও কিছু বললো না রাত। শুধু রাগি গলায় বলে উঠে,
– যে বাড়িতে আমার স্ত্রীর এক মিনিটের নিরাপত্তা নেই সেই বাড়িতে আর এক সেকেন্ডও থাকবেনা সে।
– কি এমন হলো কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।
– আপনার বড় মেয়েকে জিগ্গেস করুন বিষয় টা তাহলে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন। চলো বৃষ্টি।
রাত সচরাচর কারো সাথে এভাবে কথা বলেনা। কিন্তু আজ তার কথার ধরন বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কতোটা রেগে আছে।
,
,
,
কেটে গেলো আরো কয়েক দিন। আজ হটাৎ আরশি কলেজ ছুটির পর বের হতেই দেকে রিদ গেটের বাইরে অপেক্ষা করছে তার জন্য। এতো দিন আরশির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি রিদ। আজ হটাৎ কলেজের সামনে আসায় একটু অবাক হলো আরশি।
পেছন থেকে আরশিকে কেও ডাক দিতেই পেছন ফিরে আরশি। দেখে নতুন স্যার টা(আসিফ)।
– চলে যাচ্ছো আরশি? আমি আরো ভাবলাম আজ তোমাকে নিয়ে এক সাথে লান্স করবো।
আরশি একটু ভ্রু জুগল কুচকে বলে উঠে,
– সরি?
– না মানে, তোমার জদি তারা থাকে তাহলে জোর করবো না।
– ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে সামনে।
রিদ তখন হেটে এসে আরশির পাশে দাড়ায়। আসিফ হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই ভাইয়া।
রিদ একটু হেসে বলে উঠে,
– আমি আপনার সমবয়সিই হবো।
– তবুও আপনি আরশির বড় ভাই তাই,,,,,,
– হাসবেন্ট, হবু হাসবেন্ট। আপনার জানায় ভুল আছে। আরশি আমার বোন নয় বরং আমার হবু বৌ।
রিদের কথায় এবার চোখ কপালে উঠে গেলো আরশির।
রিদ আসিফ কে বলে উঠে, একটু সাইডে আসুন কথা আছে।
– হুম এবার বলুন।
– মনে হয় সেদিনের হাতের মতো এবার গলায় আঘাত করাতে চান। গলায় কিন্তু বেন্ডেজ করেও আর কোনো লাভ হবে না। সো পড়াতে আসছেন সুন্দর ভাবে পড়াবেন, বেশি লুচ্চামু ভাব থাকলে চোখ দুটু আলাদা করে নিবো শরির থেকে। বিশেষ করে আরশির থেকে দুরে থাকবেন। নাহলে গলার অবস্থাও এই হাতের মতোই হবে। এটা আপনার ফাস্ট ও লাষ্ট ওয়ার্নিং।
রিদ সানগ্লাসটা লাগিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠে, বি-কেয়ার-ফুল। আরশির কাছে গিয়ে আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে।
– গাড়িতে উঠ।
– কোথায় যোবো আমরা?
– স্যারের লান্সের ইনভাইট টো মিস করে ফেললি। এখন আমার সাথেই চল রেস্টুরেন্টে।
– তুমি কি আমায় ভুল বুঝছো?
– না একধম না। ওই ছেলে তোকে লান্সের ইনভাইট করার সাহস পায় কিভাবে। নিশ্চই তুই এসব বলার সুজুগ দিস তাই। চল তুই আজ কতো খেতে পারিস দেখি।
এটা বলেই আরশির হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুললো রিদ।,
,
,
কেটে গেলো আরো তিন মাস।
একটু আগে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো বৃষ্টিকে। ওটির বাইরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে বাকি সবাই। রাত খুব জোড়াজোরি করে বৃষ্টির সাথে ভিতরে গেলো। বৃষ্টির হাত টা শক্ত করে ধরে আছে সে। ভয় হচ্ছে আজ তার, প্রচুর ভয় হচ্ছে তার এই পিচ্চি বৃষ্টি ও সন্তানের জন্য।
To be continue…………
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।?
#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১১
প্রচন্ড বর্ষনের মাঝে হসপিটালে নিয়ে গেলো বৃষ্টিকে। রাত তখন ১১ টা পার হয়ে গেছে। বাইরে সকলের কথা শুনা যাচ্ছে। রাত প্রায় পাগল পাড়া বৃষ্টির পাশে থাকার জন্য। অনেক জোরাজুরিতে বৃষ্টির সাথে থাকার অনুমতি দিলো রাতকে।
পাশে ডাক্তার। সাথে প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতি। বৃষ্টির হাত শক্ত করে ধরে আছে রাত।
সবাই এখন ব্যস্ত বাচ্চার জন্য। দাতে দাত চেপে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে ধরে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে আজ এই কষ্ট মৃত্যুর চাইতেও ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করেছে। বৃষ্টি সাহস দিতে চাইলেও মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা রাতের। কারণ তার নিজের শরিরও থরথর করে কাপছে। আজ মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয় নেই বৃষ্টির। মৃত্যুর জন্ত্রনা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সে। তার একটাই চাওয়া, তার সন্তান টা যেনো সুস্থ থাকে।
ডাক্তারদের মুখে হাসির আভাস। রাতের শরির এখনো কাপছে তবে এখন আগের চাইতে কিছুটা কম। নিচু হয়ে বৃষ্টির কপালে একটা চুমু দিলো রাত। বৃষ্টির শত কষ্টও যেনো এই মুহুর্তে সার্থকতায় রুপ নিলো।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার রা হসি মুখে রাতের কোলে তুলে দিলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। রাতের হাস্যজ্জল চেহারায় দু,গাল বেয়ে ঘেমে পড়লো নোনা জল। আজ এই গড়িয়ে পড়া জল দুঃখের নয় সুখের জল এটা।
রুদ্র চৌধুরির কোলে তর বংশের প্রথম নাতি। আজ খুশিতে আত্মহারা সে। নাতির ডান কানে আজান বাম কানে একামত দিলো সে। আজ খুশিতে আত্মহারা সবাই।
,
,
,
বাড়িতে একটা দোলনা প্রোজনিয় সব বিষেশ করে শত রকমের খেলনার জিনিস দিয়ে একটি রুম পরিপূর্ণ করে ফেললেন রুদ্র চৌধুরি।
বড় করে অনুষ্ঠান করে নাতিন নাম রাখলো, আহমেদ শ্রাবন চৌধুরি।
সারাক্ষন নাতিকে নিয়েই কাটিয়ে দেয় তারা। রাত্রি চৌধুরি কোলে নিয়ে হাটছে শ্রাবনকে। রুদ্র চৌধুরি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠে,
– এই বুড়ো বয়সে দুজন মিলে যুক্তি করে আমায় আবার ধোকা দিওনা শ্রাবন দাদু। ভুলেও যেনো আমার ওনির দিকে চোখ না জায়। রাত্রি চৌধুরির কোলে হাত পা নাড়িয়ে চার দিকে পিট পিট করে তাকাচ্ছে শ্রাবন।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো এক মাস। বৃষ্টির বাবা মাও এসেছে কয়েক বার। কিন্তু বর্ষা আসেনি। আসবেই বা কোন চোখে। সে তো সেদিনের কাহিনির জন্য রাত ও বৃষ্টির কাছে একটিবার ক্ষমা চাওয়ার জন্যও আসার সাহস পাচ্ছেনা।
রাত অফিস থেকে ফিরে দেখে শ্রাবনকে নিয়ে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। মুখে তার হাঁসির ঝলক। রাত ফ্রেশ হয়ে টাওয়া দিয়ে চুল নাড়তে নাড়তে বের হয়। দেখে শ্রাবনকে কোলে নিয়ে হাটছে বৃষ্টি।
বৃষ্টির কাছে গিয়ে দুই হাতে বৃষ্টির ঘার ধরে কপালে একটা চুমু একে দিলো রাত। শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– বাবু খেয়েছে?
বৃষ্টি শ্রাবনকে আদর করতে করতে বলে উঠে,
– হুম।
শ্রাবনকে বৃষ্টির কাছ থেকে নিয়ে তার সাথে দুষ্টুমিতে কথা বলতে বলতে হাটতে থাকে রাত। পেছন থেকে বৃষ্টি হাসি মুখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে তাদের বাপ ছেলের দিকে।
,
,
,
আরশি রিদকে কয়েকবার কল করলেও ফোন ধরলো না রিদ। এবার ফোন ধরেই রেগে গেলো রিদ।
– সমস্যা কি তোর? ফোন ধরছিনা তার মানে বুঝতেই তো পারছিস আমি বিজি আছি।
– আমার জন্য কি তোমার কখনোই সময় হবে না রিদ ভাই। এতো রাতেও আমি ফোন দিলে বলছো তুমি বিজি। তুমি কি ইচ্ছা করেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করো নাকি তুমি চাও আগের সব ভুলে আমি তোমার লাইফ থেকে সরে যাই?
রিদ এবার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– কি বলবি বল।
– এ ভাবে কেনো বলছো? কেমন আছো তুমি?
– ভালো। তুই কি এতো রাতে এটা বলার জন্য ফোন দিলি?
– তুমি মনে হয় বিরক্ত বোধ করছো। আচ্ছা বাই, ভালো থেকো। বেশি রাত জেগো না শরির খারাপ করবে। ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা বাই,,, বলেই ফোন কেটে দিলো রিদ।
আরশি শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে আছে মাথার উপর থাকা ছাদটার দিকে।
এই মধ্য রাতেই প্রিয় মানুষটার কথা মনে পরে সবচেয়ে বেশি। ইচ্ছে করছে সব ফেলে ছুটে যেতে তার কাছে। আরশির মনে পড়ে সেই আগের দিন গুলো। যখন রিদ এই মধ্য রাতে এসে তাকে দেখে যেত। কখনো কখনো আদর করে চুমু একে দিতো কপালে। গায়ের কাঁথাটা টেনে দিয়ে চলে যেতো আবার।
কিন্তু সেই রিদ এখন রাতে এতো কেয়ার দুরে থাক দিনের বেলায়ও দেখতে আসেনা তাকে। তুমি বুঝনা রিদ ভাই আমি যে তোমার অপেক্ষায় থাকি?
লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরে আরশি।
গালে আলতো করে কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় আরশির। দেখে চার পাশটা খোলা মেলা। আজও সেদিনের মতো ছাদে বসে আছে সে। দেখে সামনে মাস্ক পড়া সেই লোকটা বসে আছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আরশির। কারণ আর অনেকদিন লোকটা কোনো বিরক্ত করেনি আরশিকে। আরশিও মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো হয়তো আর আসবেনা লোকটা। কিন্তু আজ আবার এসে হাজির হলো সে।
লোকটা গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– যে তোমায় নিয়ে ভাবতেও চায় না তার পেছনে পরে থাকতে লজ্জা করেনা তোমার?
– সেটা আমার আর তার ব্যাক্তিগত ব্যপার। এই নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে। আর প্লিজ আমাকে আর এভাবে বিরক্ত করবেন না। আপনি কে তাও আমি আর জানতে চাই না। আগে অনেকবার জানতে ইচ্ছে হলেও তা এখন আর নেই। দয়া করে আমায় মুক্তি দিন। প্লিজ আর আসবেন না আমায় জ্বালাতে। হাত জোড় করে আপনার কাছে অনুরুধ করছি আমি প্লিজ।
লোকটা ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওকে তোমার ইচ্ছে আমি পুরণ করবো। এভাবে আর কখনো তোমার কাছে আসবো না। তবে তোমাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। তোমাকে ঠিক ঠাক মতো নিজের খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না। আর কোনো ছেলের জীবণের সাথে জড়িয়ে লাইফটা নষ্ট করবে না। ঠিক ঠাক মতো পড়া শুনা করবে। আর হ্যা, টাইম লি খাবার খাবে। যদি দেখি আমার শর্ত মতে তোমার সব ঠিক আছে তাহলে আমি আর আসবো না। আর জদি দেখি কোনো কিছুর পরিবর্তণ হয়েছে তাহলে আমি আবার আসবো।
আর কিছু মনে নেই আরশির। তার আগেই লোকটা আরশির মুখে রুমাল চেপে ধরে আবার বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে আবার চলে যায়। লোকটা চলে যাওয়ার সময় আরশি ঘুমু ঘুমু চোখে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়া,,,,,,,
লোকটা কিছু না বলে চলে যায়। হাতটা বিছানায় পরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় আরশি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিদের নাম্বারে ফোন দেয় আরশি।
রিদ রিসিভ করে ঘুমাতুর কন্ঠে বলে উঠে,
– হুম আরশি বল।
– কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে?
– কেনো বাসায়।
– মিথ্যা বলছো তুমি, আমার সাথে কথা হওয়ার পর তুমি কোথায় ছিলে?
– তার কিছুক্ষন পরই তো ঘুমিয়ে গেলাম। আর এখন তুই ফোন দিলি। কেনো রে কোনো প্রব্লেম হয়েছে?
– কিন্তু আমি তো তোমার কন্ঠ শুনেছি। লোকটা কি তুমি?
– কি সব বাজে বকছিস আরশি। কোন লোক?
– আগে বলো তুমি কি রাতে আমার সাথে কথা হওয়ার পর ঘুমিয়েই ছিলে?
– হ্যা রে বাবা। কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝছি না।
– ওহ্,,, আচ্ছা। না কিছুনা।
– তুই কি আর কিছু বলবি?
– না।
– তাহলে ঘুমাতে দে।
,
,
আরো কয়েকমাস কেটে গেলো। বৃষ্টি ও আরশি দুনেরই ফাইনাল পরিক্ষা শেষ। তবে এখনো রেজাল্ট দেয়নি।
শ্রাবন বৃষ্টির চাইতেও বেশির ভাগ সময় থাকে আরশির কাছে। আরশির আগে থেকেই বাচ্চা খুব পছন্দের।
বিকেলে ভিডিও কলে কথা হলো বাড়িতে। বৃষ্টির মা দেখতে চাইছে নাতিকে। বৃষ্টির বাবা মাঝে মাঝে আসে আসে দেখতে। বিকেলে খুব ভালো ভাবেই কথা হলো তাদের মাঝে।
পর দিন সকালে ফোন দিয়ে শুনতে পায় মায়ের কান্নার শব্দ। এক নাগারে কেদেই চলছে তার মা। একটু অবাক হয় বৃষ্টি।
– কি হলো মা কাদছো কেনো? কিছু হয়েছে?
– বর্ষা,,,,,,, আবার কেদে উটলো তার মা।
– কি হয়েছে আপুর।
আর কিছু বলার আগেই দেখে বৃষ্টির ফোন অফ হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তার ভার তার মাথায়। উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেনি তো আপু? তখন দেখলো রাত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে। বৃষ্টিকে আতঙ্কিত দেখে বলে উঠে,
– কি হলো তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো? এ্যানি প্রব্লেম?
বৃষ্টি কিছু বলার আগেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো রাত গিয়ে রকজা খুলতেই দেখে বাইরে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। রাতের পাশে এসে দাড়ায় বৃষ্টি।
সামনে থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান বলে উঠে,
– আপনাদের বাসায় বৃষ্টি কে?
রাত অবাক চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়। পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– জ্বি আমিই বৃষ্টি। বলুন কি বলবেন?
– ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট।
পাশ থেকে রাত মাথা গরম করে বলে উঠে।
– ইউ আর মেড?
– রাত সাহেব, উত্তেজিত হবেন না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কিন্তু আমার অপরাধ?
– বর্ষা নামক এক যুবতিকে খুন।
To be continue……….
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।??