বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১৭_(শেষ)

0
1734

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১৭_(শেষ)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

চোখ বাধা অবস্থায় আরশিকে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে ছেলেগুলো। আরশি একটু কথা বলারও সাহস পাচ্ছেনা। কারন তার মাথায় একটা গান ঠেকানো। চুপচাপ তাদের সাথে হাটছে আরশি। হটাৎ আরশিকে কোথাও যেনো এনে দার করালো তারা। ভয়ে রিতিমত কাপছে সে। তার একটাই ভাবনা রিদ ভাইয়া কেনো এভাবে ছেলেগুলোর হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলো এতো রাতে?
হটাৎ একটা ছেলে এসে আরশির গলায় একটা ধারালো ছুরি ধরলো। এবার আরশি নিশ্চিৎ আগামি কাল সকালের সূর্যটা হয়তো তার আর দেখা হবে না। হিচকে হিচকে কাদছে আরশি। হটাৎ পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠে,
– বস মারার আগে অন্তত চোখের বাধনটা খুলে দিন চারপাশটা একটু দেখুক।
আরশি তখনও কাঁদছে। একটা ছেলে এসে চোখ খুলে দিলো আরশি। ধিরে ধিরে চোখ খুললো আরশি। চারপাশ টা অন্ধকার। হুট করে লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে চার দিকে। সামনে তাকাতেই দেখে রিদ হাটু গড়ে একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে তার সামনে। চারপাশটা নানা রকম বেলুন নানা রমন আলোয় ঝলমল করছে।
ঢুম ঢুম করে ফাটা আওয়াজে কেপে উঠে আরশি। ছোট ছোট রঙ বেরঙিন কাগজের টুকরু গুলো মাথায় এসে পরছে তার। আরশির চোখ বরাবর চোখ রেখে বলে উঠে,
– Well you marry me???
ছল ছল দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। ভয় যেনো এখনো কেটে উঠেনি তার। রিদ আরশির অনামিকা আঙুলে রিংটা পড়িয়ে উঠে দাড়ায়। আরশির দুই গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– আজ চুপ করে আছিস যে?
আরশি বড় বড় শ্বাস নিয়ে বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়। হাসিতে নড়ে উঠে রিদের সারা শরির। রিদ হাসতে হাসতে বলে উঠে,
– কি রে বাচ্চাদের মতো কাদছিস কেনো? আচ্ছা আরো জোড়ে জোড়ে কাদতো। তোকেতো এখন পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। একেবারে ফ্রেম বন্ধ করে রাখার মতো। এই সামি, জনি দারুন লাগছেনা তোদের ভাবিকে? ভিডিও করতো।
সামি খেলনার গানটা আঙুলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলে উঠে,
– যা হয়েছে তোমার ফ্লেনেই হয়েছে মামা। ভয়ে বেচারির কলিজা শুকিয়ে গেছে তোমার জন্য। এখন তোমরা জিনিস তুমিই শামলাও। আমরা বরং বাইরে ওয়েট করি। এই সবাই চল। রুমের বাইরে চলে গেলো সবাই। আরশি এবার কান্নার গতি স্লো করে এলোপাথারি কিল দিতে থাকে রিদের বুকে। হাসতে হাসতে আরশিকে নিজের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নেয় রিদ। এবার আর কিল দেওয়ার জায়গা টুকু অবশিষ্ট রইলোনা। মিশে আসে রিদের সাথে। বেশ কিছুক্ষন পর রিদ খেয়াল করলো আরশি শান্ত হয়ে মিশে আছে তার সাথে। রিদ ওভাবেই বলে উঠে,
– ভয় পেয়েছিলি?
– হুম খুব? এমন ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ আমি কখনো পাইনি।
– আগে কখনো দেখিসনি বলেই তো সারপ্রাইজ টা এমন ছিলো। আরো একটা সারপ্রাইজ দেখবি?
আরশি এবার রিদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলে উঠে,
– না না, এমন ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ আর পেতে চাই না আমি। আমার প্রাপ্তির পরল্লা আজ পরিপূর্ণ।
– আচ্ছা, চোখ বন্ধ কর।
– কেনো?
– ওফ্ কর না।
রিদের কথায় চোখ বন্ধ করে রইলো আরশি। হুট করেই আরশিকে কোলে তুলে হাটা শুরু করে রিদ।
– কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?
– একধম চোখ খুলবি না।
রিদ আরশিকে নামিয়ে বলে উঠে এবার চোখ খোল। আরশি চোখ খুলে দেখে বাবা মা ভাইয়া ভাবি মামা মামি রিদের বন্ধুরা সবাই উপস্থিত। সামনে একটা বড় কেক রাখা। রিদ আরশির হাহে ছুরিটা দিয়ে নিজে সহ মিলে কেকটা কেটে একে একে সবার মুখে তুলে দিলো।
আরশির বুঝতে বাকি রইলো না এই প্লেনে সবাই জড়িত ছিলো।

রাত তিনটা বাজে সবাই গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। শুধু ঘুম নেই আরশির চোখে। এই মাঝ রাতে তার জন্য যে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো তা ছিলো তার ধারনার বাইরে। বার বার তাকাচ্ছে হাতে রিদে পড়িয়ে দেওয়া রিংটার দিকে। সত্যিই কি আজ রিদ ভাইয়া আমাকে নিজের করে নিলো? নাকি এটা আমার স্বপ্ন?

রিদের পাশে বসে আছে আরশি। রিদ ঘুমাচ্ছা আর আরশি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। রিদের ঠিক মাথার পাশে আরশি। রিদ কাত গয়ে আরশির কোমর ধরে জড়িয়ে নিলো। এবার জ্বিব্বায় কামর দিলো আরশি। কিভাবে ফেসে গেলো সে। এখন যেতে চাইলেও নিশ্চিৎ রিদ ভাইর ঘুম ভেঙে যাবে। কি করা যায়? আরশি ওড়নার এক কোন দিয়ে রিদের কানে শুরশুরি দিতে থাকে। তবুও নড়ছেনা রিদ। এবারও হতাশার নিশ্বাস ছারতে হলো তাকে।
দেখতে দেখতে আরো কিছুক্ষন কেটে গেলো। আরশি নিচু হয়ে রিদের দুই গালে চুমু দিলো। এর পর কপালে আবার গালে। হুট করেই রিদের চোখ খোলাতে যেনো আকাশ থেকে পরলো আরশি। জ্বিবে আবারও একটা ছোট্ট করে কামর দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে নিজে হাজারও বকা দিচ্ছে। ধুর আরশি কি হলো তোর আজ। পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? নিজের হবু বরের হাতে এভাবে ধরা মানা যায়। রিদ গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– কি করছিলি?
– ইয়ে মানে, আসলে আমি ইয়ে,,,
– সারা মুখতো চুমু দিতে দিতে ভিজিয়ে পেললি, তো আমার এই হতভাগা ঠোট জোড়া কি তোর চোখে পরেনি?আসলে দুর্নিতিতে শুধু দেশ না, তোর মনটাও দুর্নিতিতে ভরে গেছে। কোথাও ষোল আনা আর কোথাও এক আনাও নাই।
আরশি আমতা আমতা করে এক দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরশি বৃষ্টিকে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে কি উল্লাস।
– ভাবি, থ্যাংক ইউ সো মাচ। সবাই এইসব জানলো কি করে? নিশ্চই তুমি জানিয়েছো সবাইকে। আমি তো আরো ভয়ে ছিলাম বাবা মা কে কিভাবে বলতো। তুমি যে এতো সহজে সব মানিয়ে নিলে। ওয়াও যাস্ট ফাটাফাটি ভাবি। যাও তোমার জন্য এি উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে একটা ট্রিট ডান।
– আমিতো কাউকেই কিছু বলিনি।
– তাহলে?
– সেইদিন রাতে সব কি এমনি এমনি শেষ হয়ে গেলো? রিদ ভাইয়াকে সবাই জিগ্গেস করলো কেনো তুমি হটাৎ এমন করলে? তখন রিদ ভাই সবাইকে বুঝিয়ে বললো বিষয়টা।
– আর বাবা মেনে নিলো?
– মেনে না নিয়ে উপায় আছে?
– লুডু খেলবে ভাবি?
– না ইচ্ছে করছেনা। আর তুমি এমনিতেও চুরি করে খেলো।
– কি আমি চোর? যাও খেলবোই না তোমার সাথে। বিয়ের পর আমি আমার বরের সাথে খেলবো।
– হুম তা তো জানি বিয়ের পর তো তুমি তোমার বরের সাথেই খেলবা?
আরশি একটু লজ্জা ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– কি খেলমু?
– বুঝনা?
– না বুঝিনা?
বৃষ্টি হেসে বলে উঠে,
– আমি লুডু খেলার কথা বলছি। তুমি কি ভাবছিলা?
আরশি লজ্জা ভঙ্গিতে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হেসে দেয়।
বৃষ্টি আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– তুমি কিন্তু অনেক খারাপ আছো আরশি।

আরশি আর রিদের বিয়েটা এতো তারাতারি দিবেনা রিদের বাবা। আগে তাদের বিজনেস এর সব ঠিক ঠাক হোক তার পর রিদের হাতে সব বুঝিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হবে সে। তার পর বিয়ে। সব মিলিয়ে প্রায় বছর খানেক লেগে যেতে পারে। তার পর বিয়ে নিয়ে চিন্তা।
,
,
এভাবে কেটে গেলো আরো দের বছর। এখন সব ঠিকঠাক। আজ রিদও আরশির বিয়ে হলো। সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে। রিদ ও আরশি দু,জনকে দুই রুমে রেখে বাসর ঘর সাজাচ্ছে রিদের বন্ধুরা। শ্রাবন হাতে ঘড়ি পরে চোখে চশমা লাগিয়ে দৌড়াদৌরি করছে এদিক ওদিক। আর চার দিকে পিট পিট করে তাকাচ্ছে। বৃষ্টি শ্রাবনের পেছন পেছন দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান। এই কম বয়সেও শ্রাবনের ফাজলামির মাত্রাটা আকাশ ছোয়া। ঠিক মতো কথা বলতে না শিখলেও কিভাবে শয়তানি করতে হয় তা শিখে গেছে ভালো। সারাদিন চোখে চোখে রাখতে হয় তাকে। এই একটা ছেলে নিয়েই যেনো বৃষ্টির জীবন ত্যানা ত্যানা।

বাসর ঘরে বসে আছে আরশি। ফুলে ফুলে সাজানো রুম টা। রিদ দরজা খুলে ভেতরে আসতেই ঠিকঠাক হয়ে বসে আরশি। আরশি অপেক্ষায় আছে রিদ কখন এসে তার বড় ঘোমটা টা তুলে বলবে তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। এক ধম আমার স্বপ্নে আশা পরীর মতো।
রিদ এসে তার ঘোমটা তুলে থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠে মাশাল্লাহ্। তোকে আজ ঠিক আমার স্বপ্নে আসা পেত্নির মতো লাগছেরে। রাগে মুখ লাল হয়ে যায় আরশির। এই রাগটাও যেনো রিদের মুখে ফুটে উঠা হাসির কারন।
দরজার ওপাস থেকে শ্রাবন বার বার দরজায় থাপ্পর দিচ্ছে।
– পুপি পুপি দত্তা খোলো। আমি এসে গেতি।
আরশিও রিদ দুজন তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
আরশি রিদের দিকে চেয়ে বললো,
– আমি ওকে নিয়ে আসি? আমার সাথে ছারা ঘুমায় না।
– কি শ্রাবনকে নিয়ে আসবি তুই? তাও আবার আজ?
– সমস্যা কি তা না হলে এখন নিশ্চই হট্টগোল বাজিয়ে দিবে। আর শুনো তুমি আমায় এখন থেকে তুই তুই করে বলবে না। আমি তোমার বৌ হই।
– আচ্ছা বাবা, আমি তোকে তুমি করেই বলবো। তবুও আজ শ্রাবনকে আনিস না। কাল থেকে না হয় ওকে নিয়ে ঘুমাস? আজ বুঝিয়ে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দে।
বাইরে শ্রাবনের কান্নাকাটি শুনা যাচ্ছে। বৃষ্টি তাকে নিতে আসলে তার হাত পা ছোরাছুরি কান্না শুরু হলো। কারন সে আজ তার ফুফির সাথেই ঘুমাবে। শ্রাবনের কান্নাকাটিতে বাড়ির মানুষ জড়ো হয়ে গেছে ওখানে। এগিয়ে বৃষ্টি শ্রাবনকে নানান কিছুর লোভ দেখিয়েও মানাতে পারছেনা।
অবশেষে আরশি নিয়ে এতো শ্রাবনকে। তারাতারি ঘুম পারিয়ে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসবে।
প্রায় তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলো আরশি শ্রাবনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকে,
– ঘুমাও বাবা।
কিন্তু শ্রাবনের চোখে আজ ঘুমই আসছেনা। খাটের এক পাশ থেকে একটা বেলুন নিয়ে খেলা করছে সে। রিদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে খাটের এক পাশে। পাশ থেকে শ্রাবন বলে উঠে,
– তাত্তু তোমাকে কি আমি ঘুম পালানি গান তুনাবো?
– বাবা এতো পট পট না করে তুই একটু ঘুমা।
– না আমি আদ ঘুমাবো না আমি তোমাদেত থাতে গপ্প কলবো।
রিদ এবার মাথা গরম করে বলে উঠে,
– গল্প না? মাথায় তুলে আছাড় দিবো তোকে।
রিদের বকা শুনে শ্রাবন উচু গলায় বলে উঠে,
– আম্মু,,,,,,
হুট করেই রিদ শ্রাবনের মুখ চেপে ধরে বলে,
– বাবা চুপ থাক চুপ থাক।
এভাবেই কেটে গেলো রিদ আরশির বাশর টা।
,
,
শ্রাবনের পাঁচ বছর পার হলো। রাতের হাত ধরে হসপিটালের বাইরে পায়চারি করছে সে। কিছুক্ষন পর ডাক্তারের ডাকে ভেতরে গেলো সবাই। দেখে রিদের কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে। পাশেই শুয়ে আছে আরশি। শ্রাবন বলে উঠে,
– চাচ্চু ওকে একটু আমার কোলে দাও।
রাত বলে উঠে, তুমি এখন নিতে পারবেনা বাবা ও খুব ছোট আরো পরে নিও।
– আচ্ছা তাহলে চাচ্চু তুমি একটু নিচু হও আমি ওকে দেখি।
রিদ হাটুর উপর ভর দিয়ে শ্রাবনকে দেখালো। কারন নাহলে শ্রাবন এখন হসপিটালেও একটা গন্ডোগল বাজিয়ে দিবো কান্না করে।
– এই দেখো বাবা।
শ্রাবন রিদের মেয়েটার ছোট ছোট হাতগুলো ধুরে একটা চুমু দেয়। হাসি মুখে বলে উঠে,
– ওর নাম হবে মেঘলা। কারন সে শুধু শ্রাবনের আকাশেই ভেষে উঠবে শ্রাবনের মেঘ হয়ে।
শ্রাবনের কাজে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিশেষ করে বৃষ্টি আর রাত। এই পিচ্চি ছেলে বলে কি?

………….. সমাপ্ত………….

~~ গল্পটি নিয়ে আপনাদের মতামত জানাবেন। সুন্দর হলেও বলবেন আর ভুল হলেও ধরিয়ে দিবেন। কারণ ভুল থেকেই নতুন করে শিখা যায়। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি আল্লাহ্ হাফেজ।
হ্যাপি রিডিং????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here