বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ__৩

0
1112

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ__৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মেঘলা পরে যেতেই তাকে ধরে ফেললো রাজ। তার একটু দুরেই গ্লাস নামিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবন। মেঘলা সোজা হয়ে দাড়ালেও শ্রাবনকে দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো তার। একবার রাজের দিকে তাকাচ্ছে আবার শ্রাবনের দিকে তাকাচ্ছে মেঘলা।
শ্রাবন গাড়ি থেকে নেমে সোজা হেটে আসলো তাদের দিকে। এদিকে মেঘলার পরান যায় যায় অবস্থা। মেঘলার কাছে গিয়ে শ্রাবন খুব শান্তভাবে বলে উঠে,

– একটা প্রেমিক আছে দেখে কি খোলা রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে রোমান্সে মেতে উঠতে হবে?

পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত হুমকি দিয়ে মেঘলার দিতে তাকিয়ে রইলো শ্রাবন। শ্রাবনের রক্তিম চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে। তবুও করুন কন্ঠে বলে উঠে,
– ভ ভ ভাইয়া তুমি যা ভাবছো তা নয়,,,,

শ্রাবন চক্ষুজোড়া বন্ধ করে বর বড় করে কয়েকটা শ্বাস নিলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে চাইছে সে। চোখ বন্ধ অবস্থায় মেঘলাকে থামিয়ে দিয়ে আবারও বলে,,
– গাড়িতে গিয়ে বস,,,,
– ভা ভা ভাইয়া আমার কথাটা তো শুনো প্লিজ,,,

মেঘলা আর কিছু বলার আগেই স্বজোড়ে একটা চর পরে তার গালে। চরের আঘাতে রাস্তায় ছিটকে পরে মেঘলা। শ্রাবন হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠে,
– গাড়িতে গিয়ে বস,,,
শ্রাবনের ধমক আশেপাশে থাকা মানুষ গুলোর কান অব্দি পৌছে গেলো স্পষ্ট ভাবে। আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
শ্রাবন এবার রাগ সামলানোর চেষ্টা করে মেঘলাকে টানতে টানতে গাড়িয়ে বসিয়ে ড্রাইবিং সিটে বসে সেও,,,
,
স্বাভাবিকের চাইতে অনেক দ্রুতই ড্রাইবিং করছে শ্রাবন। রক্তিম চক্ষু জোড়ায় রাগ স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। তার পাশে মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে কান্না করছে মেঘলা। হাত দিয়ে পোটা ফোটা রক্ত বের হয়ে এখন নিচের দিকে পরতে শুরু করেছে। চর খেয়ে রাস্তায় ছিটকে পরে হাত ছিলে গিয়েছে তার। শ্রাবন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে ড্রাইভ করে যাচ্ছে সে।

মেঘলা মাথা তুলে তাকাতেই দেখে বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে গাড়ি। মেঘলা কে নামিয়ে দিয়েই কোনো কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো শ্রাবন।
,
,
একের পর এক কাচ ভাঙার শব্দ শুনে দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসলো বৃষ্টি চৌধুরি। ড্রয়িং টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাসগুলো একে একে ফ্লোড়ে ছুরে মেরেও নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না সে। বার বার চোখের সামনে ভেষে আসছে রাজ মেঘলার কোমড় জরিয়ে ধরে রাখার দৃশ্যটা। সোফায় বসে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শ্রাবন। শ্রাবনের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো তার মা বৃষ্টি। খুব নিখুদ ভাবে তাকালে রাগের কারণটা অজানা রইলো না তার। খুব জ্বেদি হয়েছে ছেলেটা।
– এই নে পানি খা,, রাগ কিছুটা কমবে,,,,

শ্রাবন ঢক ঢক করে গ্লাস ভর্তি পানি শেস করে নিশ্চুপ হয়ে আছে।
বৃষ্টি আবার বললো,
– আরশি ও রিদ ভাইকে বলে, বিয়েটা তারাতারি ঠিক করে ফেলি? না বললেও, আমি বুঝি তোর রাগের কারণ টা,,,,
– না মা, ও পরাশুনা শেষ করার পর এসব,, এর আগে না,, আর ওর জন্যই তো আমি ওই ভার্সিটির লেকচারার হয়ে জয়েন করেছি,,,
– এভাবে আর কতো? তোর এসব পাগলামি আমার আর ভালো লাগছে না।
তার পাশে বসা তার মা বৃষ্টির কোলে মাথা রেখে শান্ত গলায় বলে,
– আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা,,, বুকের বা’পাশটায় চিন চিন ব্যাথা করছে।
,
,
বিষন্ন মনে বসে আছে মেঘলা। তার পাশে এসে বসলো তার ছোট ভাই নিছার। মেঘলার মনটা বিষন্ন দেখে বলে,,
– আজ খুব চুপচাপ মনে হচ্ছে আপু,,, করণ কি?
– এমনি কিছু না,,,
– আমাকে তো বলতে পারিস,
– আজ সবার সামনে আমায় অপমান করেছে ভাইয়া, মেরেছেও।
– নিশ্চই আবার কোনো আকাম করেছিস?
– থাপ্পর মেরে গাল ফাটাই ফেলবো বেয়াদব। মির্জাফরি তো ভালোই শিখলি,, ঘরের মানুষ ছেরে আরেক জনের পক্ষে কথা বলছিস।
– ওমা দুলাভাই এখন আরেকজন হয়ে গেলো?
– চুপ দুলা ভাইয়ের গুষ্টি সষ্টি,,, ওর এতো প্যারা আমি সহ্য করবো সব সময়? কতো হ্যান্ডসাম ছেলে আমার পেছন পেছন ঘুরে,, সুধু হ্যা বলার অপেক্ষায়,,,
নিচার একটু ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
– তুই কি এটা নিয়ে অহংকার করছিস?
– না এটা আমার গৌরব।
নিছার এবার মেঘলার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে বলে,
– তাহলে আপু একটা গল্প শুন,, এক লোক রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো,,, রাস্তার পাশে একটা গোলাফ গাছে, একটা ফুটন্ত গোলাফ দেখতে পায় সে। গোলাফের সুন্দর্তায় মুগ্ধ হয়ে লোকটা গোলাফ কে প্রশ্ন করলো, তুমি এতো সুন্দর কেনো? গোলাফ উত্তর দিলো, এটা আমার গৌরব। তার পর লোকটা আবার বললো, তাহলে তোমার গায়ে কাঁটা কেনো? গোলাফ আবারও উত্তর দিলো, এটা আমার অহংকার। তারপর লোকটা আবারও বললো, তাহলে তুমি এতো তারাতারি ঝড়ে যাও কেনো? তখন গোলাফ দুঃখ ভরাক্রান্ত মন নিয়ে বলে, কারণ অহংকার পতনের মুল।
গল্পটার থেকে কিছু বোঝার চেষ্টা কর আপু,, তোর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর পাবি। ভালোবাসা কখনো রাগের কারণে শেষ হয় না, ভালোবাসা শেষ হয় অসম্মান, অবহেলা আর অহংকারের জন্য। হাজার ভালোবাসার পর ও তা নিয়ে ভাবা হয় কম, আর যদি এর মাঝে একটা দুঃখ দেয় তাহলে তা গায়ে লাগে বেশি। বর্তমান না ভেবে অতিত গুলো ভাব,, নিজের জায়গা থেকে সরে ওর জায়গায় নিজেকে কল্পনা কর,,, তাহলেই বুঝতে পারবি লোকটা তোকে কতোটা ভালোবাসে।
বলেই উঠে চলে গেলো নিছার, মেঘলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিছারের দিকে। মাঝে মাঝে বড় মানুষের মতো খুব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে নিছার।
,
,
রাতের আকাশের নিচে ছাদের কর্নিশে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। হালকা চাঁদের আলোয় নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে সে। হালকা বাতাস এসে চুল গুলোতে দিয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য হাতছানি।
তবে আজ লোকটার প্রতি খুব অভিমান জমেছে মেঘলার মনে। একে তো এতগুলো ছেলে মেয়ের সামনে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলো। তারপর, কোনো কিছু না শুনেই, এতগুলো মানুষের সামনে অপমান। ওই রাজের বাচ্চার কারণে সব কিছু হলো,,, ওই রাজের বাচ্চাকে তো আমি,,, ওহ্ ওয়েট, রাজ কোথায় এখন? মেঘলা তড়িঘড়ি করে ফোন বের করে, ফোন দিলো রাজের ফোনে,,,
হুম যা ভেবেছে তাই হলো, অন্যকেও ফোন ধরলো। রাজ নাকি এখন হসপিটালে,, রাস্তায় কতগুলো ছেলে ধরে বেধরক পিটিয়েছে তাকে।
হতাশার দৃষ্টিতে আবার প্রকৃতির দিকে তাকালো মেঘলা। ঝিরঝির বাতাসের সাথে বয়ে গেলো একটা বড় দির্ঘশ্বাস।

হটাৎ খেয়াল করলো, এই অন্ধকারে কেও একজন তাকে কোলে তুলে হাটা ধরেছে ঘরের দিকে। আচমকাই এমন হওয়ায় ভয়ে লোকটার জামা খামচে ধরেছে মেঘলা। কিন্তু লোকটা কে তা বুঝতেই, আবারও অভিমানি চেহারায় অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে সে। “”আজ আর কথা বলবো না লোকটার সাথে। একটুও না, ভুলেও না,,,,,,,,

To be continue,,,,,,,,,,

~~ আসসালামু আলাইকুম,, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here