বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৫

0
1136

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

শ্রাবনকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই যে এতো বড় সারপ্রাইজড হয়ে যাবে তা হয়তো কল্পনার বাইরে ছিলো মেঘলার। শ্রাবনের সাথে মেয়েটাকে বিদায় দিলে একটা রিক্সায় উঠে চলে যায় সে। পেছন ফিরে হাত নাড়িয়ে শ্রাবনকে বাই জানাচ্ছে, শ্রাবনও এর বেতিক্রম নয়। রাস্তার অপর পাশে শক্ড হয়ে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। খাবারগুলো হাত থেকে পড়ে শব্দ হতেই ওদিকে ফিরে তাকায় শ্রাবন। হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় মেঘলা। শ্রাবন পেছন থেকে ডাক দিতে দিতে দৌড়ে আসে মেঘলার দিকে।
– মেঘলা শুন,,,, এই মেঘলা,,, আরে শুন না আমার কথাটা,,,,
শ্রাবন পেছন থেকে হাত চেপে ধরতেই থেমে যায় মেঘলা।
মেঘলা বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে শান্ত ভাবে বললো,
– হাত ছারুন আমার।
– মেঘলা প্লিজ ভুল বুঝিস না, আমার কথাটা শুন,,,,
– আপনাকে হাতটা ছারতে বলেছি। রাস্তার মাঝে সিনক্রিয়েট করতে চাই না আমি।
শ্রাবন মেঘলার দুই কাধ শক্ত করে ধরে তার দিকে ফেরাতেই মেঘলা একটু ছিটকে সরে ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দেয় শ্রাবনের গালে।
রাগে শরিরটা কাঁপছে মেঘলার। নিশ্বাস টাও বার বার উঠা নামা করছে।
– খবরদার আপনার ওই নোংরা হাতে ধরবেন না আমায়। ছি ছি আপনি যে এমন মানুষ তা ধরনার বাইরে ছিলো। বাসায় কেও নেই দেখে একটা মেয়েকে,,,, ছি ছি ছি,,,,,,
মেঘলার রাগের ঘোরে দেওয়া থাপ্পরটা শ্রাবনের ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দেয়। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই শ্রাবনের। শ্রাবন আবারও মেঘলার হাত চেপে ধরতেই মেঘলা আবারও একটা চর দিয়ে বলে,
– আরেকবার আমায় টার্চ করার চেষ্টা করবেন তো লোক জড়ো করবো আমি। আর খবরদার আমার পেছন পেছনও আসার চেষ্টা করবেন না আপনি।
,
,
দুপুর ১ টা ১৫ মিনিট চার দিকে শুনা যাচ্ছে আজানের শব্দ। রাগে ফোস ফোস করতে করতে বাড়িতে আসে মেঘলা। ধপাশ করে বিছালায় বসে সে। রাগটা কিছুতেই কমছেনা আজ। প্রায় দশ মিনিট খাটের এক পাশে ফ্লোরে পা ছেরে দুই হাত দিয়ে চুল গুলো পেছনে নিয়ে ঝুকে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে মেঘলা। তবুও উত্তেজনা টা কিছুতেই কমছেনা তার। রাগের মাঝে চোখ বেয়ে যে অশ্রু কনা গড়িয়ে পরছে ওদিকে কোনো খেয়ালই নেই তার।
ওয়াশ রুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেরে এবার জোড়ে জোড়ে কেঁদে চলছে সে। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ তার,,, বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে আজ। ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে তাকে।

প্রায় এক ঘন্টা পর ফ্রেশ হয়ে বের হয় মেঘলা। উপরে নিজেকে স্বাভাকির করতে চাইলেও ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তার। লোকটা কখনোই তাকে ভালোবাসি বলেনি,, তবুও বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আজ, খুব কষ্ট হচ্ছে লোকটার জন্য, খুব কষ্ট হচ্ছে আজ।
,
,
সন্ধায় বাসায় ফিরে শ্রাবন ও মেঘলার বাবা মা,,, আজ ডিনারটা এখানেই হবে সবার।
রাত তখন ৯:৩০,,, বেলকনিতে বসে আছে মেঘলা। মায়ের ডাক শুনে রুমে তাকায় সে।
– আসছি আম্মু, তোমরা বসো গিয়ে।

ড্রয়িং রুমে গিয়ে সবার সাথে খাবার টেবিলে শ্রাবনকে দেখে মেজাটা চরম লেভেলের খারাপ হয়ে যায় মেঘলার। তবুও কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে বসে মেঘলাও। দুর্ভাগ্য বসত শ্রাবনের পাশের চেয়ারটাই খালি ছিলো তখন।
সবাই খাচ্ছে শ্রাবন প্লেটে খাবার গুলো আঙুল দিয়ে নাড়াচারা করছে আর মেঘলার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মেঘলার মা আরশি শ্রাবনের প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে,,
– কি রে মেঘলা শ্রাবন বসে আছে দেখছিস না? ওর প্লেটে খাবার বেড়ে দে না,,,
মায়ের কথায় একটু নাক কুচকায় মেঘলা। মুখে এক রাশ বিরক্তি ফুটিয়ে একটু অন্য রকম ভাবেই খাবার তুলে দিচ্ছে শ্রাবনের প্লেটে। দেখে মনে হচ্ছে খাবার নয় জেদ প্রকাশ করছে। শ্রাবন একটু মেঘলার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,
– এভাবে দিলে কি খাওয়া যায়? ভালোবেসেও তো হাসি মুখে একটু দিতে পারিস।
বলেই একটু মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করে শ্রাবন।
পাশ থেকে কাজের মেয়েটা বলে উঠে,
– দেন দেন আফা, এখন থেকে অভ্যাস থাকলে বিয়ের পর আর সমস্যা হবে না।
বলেই মুখ লুকিয়ে হাসে সে।
খাবার মাঝখানে হটাৎ এমন শুনতেই একটু বিষম খায় দুজননই। আরশি ও বৃষ্টি দুজন দুটি পানির গ্লাস দুজনের দিকে এগিয়ে দিলো।
রিদ আর রাত একে অপরের দিকে তাকিয়ে একাত্রে হেসে দিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলো।
,
,
– কি ব্যাপার শ্রাবন ভাই, আপনি এতো রাতে রুমে? তাও আবার দরজা বন্ধ করছেন কেনো? বেড়িয়ে যান এখান থেকে।
শ্রাবন কিছু না বলেই দরজা বন্ধ করে মেঘলার দিকে আসতে লাগলো।
মেঘলা আবারও বলতে লাগলো,
– আমি কিন্তু এখন চিৎকার করবো। আমাকেও কি ওই মেয়েটার মতো পেয়েছেন নাকি যে, যেখানে সেখানে যার তার সাথে,,,
শ্রাবন মেঘলার ঠোঁটে একটা আঙুল দিতেই থেমে যায় মেঘলা। শান্ত ভাবে বলে,
– আগে তো আরো গভির রাতেও রুমে আসতে পারমিশন লাগতো না,, আর এখন এক দিনেই তোর পর হয়ে গেলাম?
– কারন আপনি এখন আর আমার আগের শ্রাবন ভাইয়া নেই। খুব খারাপ হয়ে গেছেন আপনি,,,,
শ্রাবন আবারও থামিয়ে দেয় মেঘলাকে। এবার ফোন বের করে কাকে যেনো ফোন দেয় সে।
ফোন রিসিভ হতেই স্পিকার অন করে মেঘলার সামনে ধরে শ্রাবন।

– হ্যালো শ্রাবন,,
– হুম কি করছিস এখন,,,
– কিছুনা শুয়ে আছি,,
– দুলাভাইও কি আছে?
– হুম আছে তো,,
– ওফ তাইলে মনে হয় রং টাইমে ডিস্টার্ব করলাম?,, তবে প্রয়োজন ছিলো যে, কি করবো বল?
– ওফ, ভঙিতা না করে বলতো, হটাৎ এতো রাতে,, কোনো সমস্যা?
– ফ্রি থাকলে একটু বারান্দায় যা কথা আছে তোর সাথে।
– ওফ কি কথা যে বারান্দায় যেতে হবে?,,,,, হুম আসছি এখন বল।
– আজ দুপুরে আমার বাসায় কেনো এসেছিলি?
– কেনো আবার? ছোট বেলার ফ্রেন্ড, এতোদিন পর দেখা হলো তুই ও বাড়ি যাওয়ার জন্য জোরাজুরি কারছিলি,, এখন এসব কি বলছিস পাগলের মতো, আজব।
– হুম, কিন্তু আমার প্রেয়সি দুপুরে তোর সাথে আমাকে দেখে এখন রুটির মতো ফুলে আছে ওটাই কারণ।
– ও তাই তো বলি,,, তো মেঘলাকে ফোনটা দে তো।
– বল ও শুনছে,,,,

কিছুক্ষন পর ফোনটা কেটে দিলো শ্রাবন।
– এবার বিশ্বাস হলো?
মেঘলা চুপ করে আছে। শ্রাবন একটা পিক মেঘলার দিকে দেখিয়ে বলে,
– এটা হলো ওদের ফ্যামিলি ফটো, এটা আরিয়া, এটা ওর স্বামী আর এটা হলো ওদের মেয়ে।
মেঘলা নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট করে বে উঠে,
– সরি,,,, তখন না বুঝে থাপ্পর দেওয়ার জন্য।
শ্রাবন এবার ফোনটা পকেটে নিতে নিতে বলে,
– সরি তে হবেনা, আর আমি সরি চাইও না। এখনো গাল লাল হয়ে আছে, আমি এর শোধ নেবো।
শোধ নেবো কথাটা শুনতেই মেঘলা দুই হাত দিয়ে নিজের গাল ঢেকে ফেলে। শ্রাবন একটু মুচকি হেসে বলে,,
– ভয় পাস না, আমি মারবো না,, হাত নামা।
গাল থেকে হাত নামিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা।
শ্রাবন একটু মুচকি হেসে বলে,
– থাপ্পর কয়টা দিয়েছিলি মনে আছে?
মেঘলা একটু অনুসুচনা নিয়ে বলে,
– দুইটা।
– দুইটা থাপ্পরে আমার গালে কয়টা আঙুল স্পর্শ করেছে?
– দশটা।
– তো এখন তোর পানিশমেন্ট হচ্ছে, প্রতিটা আঙুলের জন্য ৫ মিনিট করে দশটা আঙুলের জন্য ৫০ মিনিট আমায় চুমু খেতে হবে তোর।
মেঘলা একটু অবাক হয়ে বলে উঠে,
– এ্যা,,,,?
– এ্যা নয় হ্যা,, গালে হলে ৫ মিনিট করে ৫০ মিনিট, আর ঠোঁটে হলে ২ মিনিট করে ২০ মিনিট। নে শুরু কর তারাতারি,,,,,

To be continue,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here