#বলবো_না_ভালোবাসি,#পর্বঃ_৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আরশির বিয়ের ব্যাপারে যে যাই বলুক, সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আমার আম্মু। সে ছোট বেলা থেকেই চাইতো আরশিকে আমার থেকে দুরে রাখতে। আরশি আমার আশে পাশে থাকবে এটা সহ্য হতো না তার। আর তার প্রধান কারণ হলো, আমার মামাতো বোন আনিকা।
কারণ আম্মু চায় আমার মামাতো বোন আনিকা কে তার পূত্র বধু বানাতে। আরশির সাথে আমার সম্পর্ক টা ভালো ভাবে নেয় না সে। আম্মু চায় আমাদের দুরুত্বটা থাকুক অনেক।
যতটা দুরুত্বে থাকলে কারো কথা কারো মনে পরবে না আর। তাহলে দুরুত্ব কি ভালোবাসা কমায়? না, কথাটা মোটেও যুক্তি যুক্ত নয়। সত্যি কারের ভালোবাসার কখনো ক্ষয় হয় না, আর যেটার হয়, তা কখনোই ভালোবাসা ছিলো না, ছিলো একটু মায়া। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলোর মাঝখানে বিচ্ছেদের দেওয়াল টা যতই বড় হোক না কেনো, দেওয়ালেও ওপাড়ের মানুষটার কথা মনে পরে প্রতিটি পয়েন্টে। চোখের আড়াল মানেই দৃষ্টির আড়াল নয়। হুম এটাই চিরন্তর সত্য। কিছু ভালোবাসা থাকে অপ্রকাশিত, তবে গভিরতা অনেক। হুম আমরা দুজনই এমন। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি না। আবার একে অপরকে ছারা থাকতেও পারি না। বিষয় টা খুব অদ্ভুত তাই না? হুম আমরা এমন ই। কারণ ভালোবাসাটা খুব দামি একটা শব্দ, যা বার বার প্রকাশ করতে গেলে, এক সময় বিপরিত মানুষটার প্রতি তা সস্থা হয়ে যায়। প্রথম ‘ভালোবাসি’ শব্দ টা আর পরের ‘ভালোবাসি’ শব্দটার অনুভুতি অনেক পার্থক্য থাকে।
ভালোবাসা হোক লুকিয়ে, তবে গভির।
,
,
আজকে আনিকা রা আসবে এখানে। আনিকার ইন্টার এক্সাম শেষ। আর আরশি এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। আনিকার থেকে এক বছরের ছোট আরশি।
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ফোন টিপছিলাম। কলিং ব্যাল এর শব্দে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখি মামি, মামিকে সালাম দিয়ে মত বিনিময় করলাম। মামি আমায় বললো,
গাড়ি থেকে মিষ্টি আর কি কি আছে ওগুলে নিয়ে আসতে। আর আনিকাও আছে বাইরে।
আমি বাইরে বের হতেই হুট করে আনিকা এসে আমার গলা জড়িয়ে বললো,
– কেমন আছো ভাইয়া।
আমি তাকে ছাড়িয়ে বললাম,
– ভালো তুই?
– হুম ভালো। ভাইয়া চলো একটা সেলফি তুলি,,
– মানে কি?
– ওমা, এতোদিন পর আসলাম, তো দুজন মিলে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করতে হবে না,,
– তো ক্যাপশন কি দিবি শুনি?
– কতো ক্যাপশনই আছে, এই ধরো, জীবন টা ব্যার্থতায় ভরা, তবুও আমার গল্পে তুমিই সেরা। মানাবে না এটা? আর সাথে তোমাকেও ট্যাগ দিয়ে দিবো।
– আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা। কানের নিচে একটা দিমু তিন দিন শুধু বিটিভির মতো ঝির ঝির করবি।
– না আসতেই তুমি বকা শুরু করে দিয়েছো? আমি এখনি গিয়ে ফুফির কাছে বিচার দিবো। এ্যা এ্যা,,,,
আমি ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে রইলাম, কি মেয়েরে বাবা, এটারে তো ন্যাকামিতে এ্যওয়ার্ড দেওয়া উচিৎ। কিসব আলতু ফালতু পোষাক পরে আবার ছবি তুলে এই ছবি ফেসবুকেও দিবে, তাও আবার আমায় ট্যাগ করে। লজ্জা সরম উঠে যাচ্ছে দেশ থেকে।
একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে পেছন ফিরে দেখি আরশি দাড়িয়ে আছে। আর ঠোট ফুলিয়ে দুই হাত দিয়ে ওড়নার কিছু অংশ মোচড়াচ্ছে। দেখে বুঝাই যাচ্ছে রাগে গদ গদ করছে।
আমার সামনে এসে টি-শার্ট টা মুঠু করে ধরে রাগি গলায় বললো,
– আনিকা আপু আপনাকে জড়িয়ে ধরলো কেনো?
আমি নরমালি উত্তর দিলাম,
– ওর ইচ্ছে হইছে তাই ধরছে,
– তো আপনি বাধা দেন নি কেন?
– এটা আমার ইচ্ছে, কেন কোনো সমস্যা?
– মেয়ে মানুষে জড়িয়ে ধরলে খুব ভালো লাগে তাই না?
– হুম কার না ভালো লাগবে এটা?
– সবার ভালো লাগতেই পারে তবে আপনার না।
– কেন কেন?
– কারণ আমার সহ্য হয় না, আপনাকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলে।
– এবার বুঝতে পারছিস আমি কেন এমন পাগলামি করতাম?
বলেই জিনিস গুলো নিয়ে আমি ভেতরে চলে গেলাম। আর আরশি আমার পেছন পেছন আসলো। ঘরে ঢুকতেই আম্মু বললো,
– কি রে তুই নাকি আনিকাকে ধমক দিয়েছিস?
এবার রাগটা মাথায় উঠলো আমার। এই মেয়ে কি দিয়ে তৈরি? ন্যাকামির একটা লিমিট থাকা দরকার। আমি কিছু না বলে চলে গেলাম ওখান থেকে। আম্মু আরশিকে বলে উঠে,
– কি রে দাড়িয়ে আছিস কেন, মেহমান আসছে দেখছিস না, যা কিচেনে যা আমি আসছি।
আরশি এক রাশ বিষণ্নতা নিয়ে হাটা ধরলো। হুট করেই তার মন জুড়ে একটা আফসোস বয়ে গেলো। ইশ আজ যদি আমারও বাবা থাকতো, আমাদের ফ্যামিলিটাও ঠিক থাকতো, তাহলে আমিও এভাবে মেহমান হয়ে আসতাম। আনিকা আপুর মতো আমাকেও বুকে টেনে নিতো মামুনি। প্রতিদিন এভাবে কাজের মেয়ের মতো করতো না।
,
,
বিকেলে আম্মু বললো, আনিকা কে নিয়ে ঘুরতে বের হতে। না চাইতেও বের হলাম। আম্মুর আদেশ বলে কথা। যা অমান্য করা একটু টাপ।
বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালাম। আনিনা একটা রিক্সা ডেকে আমায় ডাক দিয়ে উঠতে বললো, এখন কি তার সাথে রিক্সায়ও চড়তে হবে আমার?
ছাদের এক কোন থেকে দুটি চোখ স্থির হয়ে আছে আমাদের দিকে। আরশি উকি ঝুকি দিয়ে ততোক্ষন তাকিয়ে রইলো, যতক্ষন আমরা তার দৃষ্টির আড়াল হলাম।
সন্ধার সময় বাসায় ফিরলাম আমরা। আরশিকে একবার দেখলাম আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলে গেছে, এর পর আর দেখিনি তাকে।
এর পর খাবার টেবিলে এক সাথে বসলাম সবাই। আমার মুখুমুখি টেবিলে বসলো আনিকা। সেই কখন থেকে আমার পায়ে সুড়সুরি দিচ্ছে। বেপার টা কেউ খেয়াল না করলেও আরশি ঠিকই নজর রেখেছে আমার দিকে। আরশিকে জ্বালানোর জন্য হলেও ব্যাপার টা একটু ইনজয় করতে লাগলাম আমি। হুট করে খেয়াল করলাম, আরশি বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে উঠে চলে গেছে না খেয়েই। একটু পর আমিও উঠে গেলাম। কেমন যানি আর ইচ্ছে করছিলো না খেতে।
আম্মুকে দেখলাম কেমন চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
পকেটে হাত গুজে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম আমি। অন্ধকারাচ্ছন্য রাতে হিম শীতল ভাব টা বরাবরই ভালো লাগে আমার। চোখ বন্ধ করলেই যেনো এক অদৃশ্য প্রকৃতির হাতছানি অনুভব করা যায়।
মুহুর্তেই একটা কিছুতে শক্ড হয়ে গেলাম আমি। কেও এক জন আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
– আপনি এমন কেনো করছেন রিদ ভাই? আপনি তো আমার সাথে এমন করেন না। বিশ্বাস করুন আমার কোনো দোষ নেই। রেদোয়ান কে আমি শুধু ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। আর আমি এমন টা করতাম আপনাকে জ্বালানোর জন্য। কিন্তু সে আমার হুট করে প্রপোজ করে বসবে আমি ভাবতেও পারিনি। বিশ্বাস করেণ এর পর আমি কোনো যোগাযোগ রাখিনি ওর সাথে। ও রাতে আমাকে সরি বলতে ফোন দিয়েছিলো। আমি ইচ্ছে মতো বকা দিয়ে আর কথা বলিনি ওর সাথে। রেদোয়ান আমার কে? সে আমার কেউ না। কাউকে লাগবে না আমার। আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলবো না আমি। প্লিজ আমি আগের আপনিকে ফেরত চাই। হুট করে এমন বদলে গেলেন কি করে আপনি? আমি অন্য কাউকে কখনোই বিয়ে করতে পারবোনা, কখনোই না,,,,
To be continue……..
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?