#প্রেমালয়
#পর্বঃ_২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
একটা মানুষ কতটা নিচু হলে এতো মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে পারে। তা মুগ্ধকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না আমার। অথচ আমি ভেবেছিলাম, ওই লোকটার মতো ভালো আর সু-চরিত্রবান ছেলে আর একটাও নেই। কথায় আছে না, যেখানে ১০-১২ বছর সংসার করেও মানুষ চেনা যায় না সেখানে মাত্র ৩ বছরের পরিচয়ে একজন মানুষকে কি করেই বা বিশ্বাস করা যায়। না বুঝেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিলাম তাকে। এই অন্ধ বিশ্বাস আর অন্ধ ভালোবাসা টাই কাল হয়ে দাড়ালো আমার জন্য।
প্রথমে আমি এর পর মাহিমা। না জানি আরো কতো গুলো মেয়ের সাথে এমন করেছে। আর এখন আসছে তিসা আপুকে বিয়ে করতে। আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিবো না। কিছুতেই না। আমার ক্ষতি করবে করুক, তবুও আপুর জীবন নষ্ট হতে দিবো না আমি।
গভির রাতে শুয়ে আছে আর এইসব ভাবছে শিশির। পাশে তাকিয়ে দেখে তিসা আপু গভির ঘুমে বিভোর। ছোট বেলা থেকেই খুবই সরল মনের মেয়ে তিসা আপু। কিছু মানুষ আছে যাদের মনে কোনো প্যাচ নেই, অল্পতেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে, অল্পতেই কেঁদে ফেলে, আবার একটু ভালোবাসা ফেলে অল্পতেই খুশির আকাশে ডানা মেলে উড়তে থাকে। তিসা আপু ঠিক তেমনই। সে ছোট বেলা থেকে এতোটাই সরল ছিলো যে, আমি বকা খাওয়ার মতো কোনো কাজ করলে তা তিসা আপুর উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে আমি পাগার পার। তিসা আপু কিছু বুঝতো না, সুধু ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বকা শুনতো।
আমি কিছুতেই আপুর জীবন নষ্ট হতে দিবো না।
অন্ধকার কয়টা বাজলো কে জানে? শিশির তার ফোনটা খুজে পাচ্ছে না, কোথায় রাখলো কে জানে। পাশ থেকে তিসা আপুর ফোনটা পেয়ে অন করলো কয়টা বাজে তা দেখতে।
ফোন অন করতেই টাইম দেখার আগে অবাকের চরম পর্যায়ে শিশির। ওমা, তিসা আপু ফোনের ওয়েলপেপারে মুগ্ধর ছবি সেট করা। কয়দিন আগে ছবি দেখলো, এর পর আজকে বাসায় আসার পর মুগ্ধকে সরাসরি দেখলো, এতেই এতো কিছু? ও মাই গট,,,,
এই মেয়েটার মাথা থেকে মুগ্ধর ভুত ছারাতেই হবে।
ঘুম আসছে না, তাই চাঁদের আলোয় বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো শিশির। দেখে সামনের বাসায় থাকা এক জোড়া ক্যাপল বেলকনিতে বসা। তাও বসা নেই, একই চাঁদরের নিচে দুজন লুকিয়ে জমিয়ে উপন্যাসের বই পরছে। ইশ কি রোমান্টিক দৃশ্য।
মুগ্ধও প্রায় এমন বলতো, কনকনে শীতের রাত্রিতে একি চাঁদরে লুকিয়ে সে হবে আমার এক কাপ চায়ের ভাগিদার।
আমাদের গল্পটাও এমন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কিছু স্বপ্ন দেখানো টা সহজ হলেও, পূরণ হওয়াটা খুবই কঠিন সাধ্য ব্যাপার।
আচ্ছা আমি সব জায়গায় কল্পনায় মুগ্ধকে টেনে আনি কেন? আমি কি তাকে এখনো ভালোবাসি? জানিনা, উত্তর টা আমার অজানা। তবে এটা জানি এই খারাপ মানুষটাকে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না। খুব খারাপ মানুষ, আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা টা সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে।
কাধে কারো আলতো স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলো শিশির। তারাতারি করে চখের জল মুছে নেয় সে। পেছনে তাকিয়ে দেখে তিসা আপু মুখে হাত দিয়ে বড় করে একটা হাই দিয়ে ঘুম কাতুর চখে বলে উঠলো,,
– এতো রাতে কি করছিস এখানে?
– ভালো খারাপের পার্থক্য মিলাচ্ছি আপু।
তিসা শিশিরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
– এখনো সেই অতিত ভেবে কেন কষ্ট পাস তুই?
– কষ্ট না আপু, এক রাশ ক্ষোভ।
– চল ঘুমাতে চল, এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে থাকতে হবে না তোর।
তিসা আপু আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। আমার পাশে শুয়ে আমায় বুকে টেনে নিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতে লাগলো। আমায় বলতে লাগলো,
– কিছু ভুলের কখনো ক্ষমা হয় না। আবার সেই বেঈমানের জন্য কষ্ট পাওয়াটাও বোকামি।
আমি নিরবে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আমার আপুকে আমি কিভাবে এমন একটা ছেলের হাতে তুলে দিবো? আর আপুকেই কি করে বুঝাবো যে, তুই যেই মানুষটাকেই অল্পতেই ভালোবেসে ফেললি সেই মানুষটা এতোটা খারাপ। সেই মানুষ টাই আমার প্রতি রাতে কাঁদার কারণ।
এতো ভালোবেসেও তাকে আমার করে রাখতে পারলাম না।
(দেখা যাক মুগ্ধ আর শিশিরের মাঝখানে কি হয়েছিলো)
ফ্ল্যাসব্যাক,,,
২,
দোকান থেকে ডিম কিনে বাসায় ফিরছিলো শিশির। ঢাকায় অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর ওখানেই একটা বাসায় থাকে শিশির আর তার বান্ধবি মাহিমা। সন্ধায় রান্না করতে গেলে দেখে বাজার শেষ। তাই ডিম কিনতে নিচে গিয়েছিলো শিশির। হুট করে একটা গাড়ি সামনে এসে ব্রেক করে। এর পর আর কিছু মনে নেই তার।
“ওফ শেট,,,,,,
গাড়ি থেকে বের হলো একটা ছেলে। বয়স ২৩ এর মতো হবে। বেড়িয়ে দেখে একটা মেয়ে অচেতন হয়ে পরে আছে তার গাড়ির সামনে। মাথায় চোট লাগায় রক্ত পরছে কপাল থেকে।
মেয়েটাকে গাড়িতে তোলে সে। রক্ত থামছে না। ছেলেটা এক হাতে ড্রাইবিং করছে অন্য হাতে মেয়েটার কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে।
হসপিটালে একটা ব্যাড এর পাশে বসে আছে ছেলেটা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা তখন।
ওদিকে বাসার নিচে নেমে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারলো না মাহিমা। তিন ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো বাসায় ফেরার নাম নেই শিশিরের। ফোন টাও নিয়ে যায় নি। কোনো বিপদ হলো না তো? নতুন একটা শহরে কি বা চিনে সে? মাহিমাও নতুন, তেমন কিছু চিনেনা সে ও। দারোয়ানকে বলে পাগলের মতো খুজে চলছে শিশিরকে।
সাড়ে ১১ টার দিকে চোখ মেলে তাকায় শিশির। দেখে পাশে একটা ছেলে চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। ফর্সা মুখ চুল গুলো একটু বাদামি রং করা। সাদা টি-শার্টের উপর একটা কালো জ্যাকেট। গালে চিকন দাড়ির সুন্দর ভাবে কাট করা, খুব মানিয়েছে তাকে। চক্ষু জোড়া বন্ধ করে ঝিমুচ্ছে সে। আশে পাশে কেউ নেই, একটা কেবিনে তারা দুজন ছারা। শিশির একটু উঠে বসতেই মাথাটা ভার মনে হলো তার। মুখ দিয়ে “আ” সুচক একটা শব্দ উচ্চারিত হতেই ছেলেটা জেগে উঠলো।
– জ্ঞান ফিরেছে আপনার?
শিশির চার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় ছেলেটাকে বললো,
– আমি এখানে কেনো? আর আপনি কে?
– রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে সেন্স হারেয়ে ফেলেছিলেন। তাই কিছু মনে নেই আপনার। কোথায় যাচ্ছিলেন? এখন ঠিক আছেন? কিছু খাবেন?
শিশির একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
– এতো গুলো প্রশ্ন করলে কোনটা উত্তর দিবো আগে?
– ওহ্ সরি। আগে বলেন, এখন কেমন লাগছে?
– ঠিক আছি। আমি বাসায় যাবো।(একটু ভয়ার্ত গলায়)
– প্রায় ১২ টা বাজে এখন। আর ডাক্তার বলছে, রেস্টে থেকে কালকে সকালে বাসায় যেতে।
– মানে কি আমি সারা রাত এখানে থাকবো?
– কিচ্ছু করার নেই, আর ভয় পাবেন না। আপনার কোনো ক্ষতি করবো না আমি।
– তার মানে আপনিও সারা রাত এখানে থাকবেন?
– ডাক্তার বলছে আপনার পাশে থাকতে হবে। সুবিধা অ-সুবিধার একটা ব্যাপার আছে। যদি আপনার ডাউড ফিল হয় তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। তখন একাই থাকতে হবে।
শিশির চুপ করে রইলো। মনে হাজার প্রশ্ন জাগলেও কিছু বলতে পারছে না সে। চুপ থাকাই ভালো মনে হলো তার কাছে। ছেলেটা চলে গেলেও তাকে একা থাকতে হবে। আর এভাবে একা থাকাটাও তার কাছে অসম্ভব। ছোট থেকেই একা থাকতে ভয় পায় শিশির। তার উপর এমন একটা যায়গায়। হসপিটাল নামটা শুনলেই কেমন ভয় হয়। দিনে কতো মানুষ মরে তার হিসেব নেই।
আবার এই অচেনাকে পাশে রাখতেও ভয় হচ্ছে তার। যুবতি একটা মেয়ে। রুপবতি চেহারায় যে কেউই ঘায়েল হতে পারে।
এরোকম যুবক একটা ছেলের সাথে সারা রাত থাকবে। তাও নিরব এই ক্যাবিনে। শিশির ছেলেটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক বার চোখ বুলালো।
ছেলেটাকে দেখে ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই মনে হচ্ছে। তবে আচার আচরণ কেমন মনে হচ্ছে তার। অচেনা একটা মেয়ের সাথে ফট ফট করে কথা বলছে, মনে হচ্ছে আগে থেকেই চিনে আমাকে। এখন কি করতে তাই ভাবছে সে। ছেলেটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। আবার দেখে ভালোও মনে হচ্ছে। তবে চোখের দেখায় কাউকে চিনা মুশকিল। এই শহরে দিনের বেলায় সবাইকে মানুষ মনে হলেও, সন্ধা পেড়িয়ে আধার নেমে এলো কিছু মানুষ রুপি পশু দের আসল চেহারা বেড়িয়ে আসে। এক চিলতে হাসির আড়ালে হিংস্র মুখ গুলো চেনা বড় কঠিন। কাউকে বিশ্বাস করাটাও যেনো শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো। মানুষত্ববোধ খুব কম মানুষের কাছেই আছে।
এই অচেনা শহরে নিজেকে নিয়ে খুব ভয় হয় তার। খুব।
To be continue,,,,,,,
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো?