#প্রেমালয়
#পর্বঃ_৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
মুগ্ধ একটা মুগ্ধতার হাসি হাসলো। তার পর বাইক নিয়ে চলে গেলো বাইরে। হয়তো আজকে আর ক্লাস করবে না।
বুকে হাত দিয়ে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো শিশির। আজ প্রথম দিন এসেই এমন একটা ঝামেলা তার উপর হুট করে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসলো। ভয় টা একটু বেশিই ছিলো। তবে এখন প্রায় কমে গেছে ভয়।
ক্লাসে প্রবেশ করে মাহিমার পাশে গিয়ে বসতেই মাহিমা একটু উত্তেজিত ভাবে বলে উঠে,
– কিরে কে ডেকেছিলো বাইড়ে? নিশ্চই সকালের ওই ভাইয়াটা? কেন ডেকেছে, আর কি বলেছে তোকে?
শিশির একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
– তুই থামবি?
– আচ্ছা থামলাম, এবার বল কি হয়েছে?
– এখন ক্লাস চলছে দেখছিস না? বাইরে গেলে বলছি।
এর মাঝে ম্যাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– এটা কথা বলায় জায়গা নয়।
-সরি ম্যাম।
ভার্সিটির ক্লাস শেষ হতেই বেড়িয়ে এলো দুজন। মাহিমা শিশির কে বললো,
– কিরে বলছিস না কেন? বাইরে কি হয়েছে? কে ডেকেছিলো তোকে?
– আচ্ছা কয়দিন আগের ওই ঘটনার কথা মনে আছে তোর?
– কোন ঘটনা?
– ওই যে আমি রাতে হসপিটালে ছিলাম। একটা ছেলে আমাকে হেল্প করেছিলো,,,,
শিশির আর বলার আগেই মাহিমা বললো,
– মুগ্ধ?
– হুম, এখানেই পড়ে সে। মাস্টার্সে।
– কি বলিস, সত্যি?
– হুম, সে ই তো ডেকেছিলো। আমি তো আরো ভয় পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সকালের ছেলেটা।
– মুগ্ধ কি বললো তোকে?
– না এমনি ডাকলো, সকালে নাকি আমাদের দেখেছিলো তাই।
– আমার কথা কিছু বলেছে?
– না।
সবাই প্রায় চলে গেছে। শিশির আর মাহিমাও চললো, বাসার উদ্দেশ্যে। হুট করে সামনে পড়লো সকালের সেই হৃদয় নামের ছেলেটা। সাথে কয়েকজন ছেলে। শিশিরকে ডাক দেয় একটা ছেলে। শিশির কোনো রেসপন্স না করে সোজা হেটে যাচ্ছে।
এবার একটা ছেলে গিয়ে শিশিরের হাত ধরে টেনে এনে হৃদয়ের সামনে দাড় করায়।
শিশির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
– এটা কেমন অসভ্যতামি ভাইয়া? দেকেন সকালে ভুলটা আমার একার ছিলো না, তাও আপনাকে সরি বলেছি। তবুও কেন এমন করছেন আমার সাথে?
হৃদয় একটু তার দিকে এগিয়ে বললো,
– এতো দেমাগ কিসের?
সে তার হাতের ক্রিকেট বল টা একটু দুরে ছুরে মেরে বললো,
– ওটা নিয়ে আসো লক্ষি মেয়ের মতো, কুইক।
– আমাকে কি আপনার বাবার বারা করা কাজের মেয়ে মনে হয় আপনার? এতোক্ষন অনেক সম্মান দিয়ে কথা বলছি, আর এখনো বলছি। তাই নিজের সম্মান নিজে রক্ষা করতে শিখুন।
বলেই হাটা ধরে শিশির। হৃদয়ের সাথের একটা ছেলে পেছন তেকে তার হাত চেপে ধরতেই, শিশির ঘুরে টাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে।
ওখানে আর এক মুহুর্তও দাড়ালো না সে। মাহিমার হাত ধরে হেটে চলে গেলো সেখান থেকে।
হৃদয়ের চোখ দুটু আগুনের ন্যায় জ্বলছে।
একটা রিক্সা ডেকে উঠে যায় শিশির ও মাহিমা। শিশিরের হাতের আঙুল গুলো কাপছে খুব। পাশ থেকে মাহিমা বললো,
– এটা কি করলি তুই? চলে আসতে চাইলি সেই অব্দি মানা যায়। কিন্তু,,,?
– তো কি করবো আমি, দেখলি না কেমন অসভ্যতামি করছিলো?
– দেখ, ওরা সিনিয়র আমাদের থেকে। আর ভার্সিটি লাইফে টুকটাক এমন হয়। মানিয়ে নিতে হবে।
– আমি অন্য সবার মতো না যে এইসব সহ্য করবো।
– তাই বলে চর কেন মারলি? এখন যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করে তারা।
– দেখ আমি ইচ্ছে করে মারিনি, এটা হুট করে হয়ে গেছে।
বাসায় এসে শাওয়ার নিলো শিশির। এর পর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। মাহিমা বের হলে এক সাথে খাবে।
ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করলো শিশির। একটু ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করবে এই আসায়।
তখনই ফোন টা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ভেষে উঠলো সুশান্ত ভাইয়ার নাম। এই লোক টা প্রতিদিন ফোন না দিলে যেনো তার মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যায়। মা কি এক সিকিউরিটি পেছনে লাগিয়ে দিলো কে জানে।
,
,
খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় দাড়ালো হৃদয় ও তার সাথে থাকা ছেলেগুলো।
তখন চর খাওয়া ছেলেটা হৃদয়ের পাশে গিয়ে বললো,
– আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলায় সাহস পেলো না, আর ওই মেয়ে আজ আমার থাপ্পর মারলো। আর আপনি কিছুই বললেন না ভাই?
– না,,,
– কিন্তু কেন ভাই?
হৃদয় ছেলেটার কাছে হাত রেকে বললো,
– মেয়েটার অনেক সাহস তাই না?
– আমাকে থাপ্পর মেরেছে ভাই।
– ভাল্লাগছে।
– কি ভাই?
– মেয়েটার এটিটিউড ভাল্লাগছে আমার। তুই ওর সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে আমায় দিবি।
বলেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো হৃদয়।
,
,
লাল হয়ে সূর্যি টা পশ্চিম দিগন্তে ধিরে ধিরে তলিয়ে যাচ্ছে। তেজ যুক্ত আলো পেড়িয়ে ধীরে ধীরে সন্ধা মেনে এলো। আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো আলোকিত নয়। সূর্যি পেড়িয়ে চাঁদের আগমন, দৃষ্ট টা খুব কমই হয়।
সন্ধার পর পড়তে বসলো দুজন। এর মাঝেি দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। শিশির গিয়ে দরজা খুলে দেখে দারোয়ান। হাতে একটা কাগজ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দারোয়ান তাকে কাগজ টা দিয়ে চলে গেলো। শিশির খুলে দেখে একটা ছোট লেখায় ক্ষুদে একটা চিরেকুট।
‘একটু বেলকনিতে আসলে, এক অপদার্থ মানবের অপেক্ষার অবসন ঘটবে’
কাগজ টা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো শিশির। দেখে নিচে মুগ্ধ দাড়িয়ে। শিশিরকে দেখে হাত নাড়ালো মুগ্ধ। বিনিময়ে একটু হাসলো শিশির।
মুগ্ধ শিশিরকে হাত দিয়ে ইশারা করছে নিচে যেতে। কথা আছে তার সাথে। শিশির মাথা দুলিয়ে অসম্মতি জানালো। যার অর্থ সে যাবে না। মুগ্ধ এবার হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝালো, না গলে সে উপরে আসবে।
এমনিতেও বারিওয়ালা রুল্স দিয়েছো কোনো ছেলেকে বাড়িতে আনা যাবে না, ফ্যামিলি মেম্বার ছারা। তাই ঝামেলা না বাড়িয়ে আসছি বলে ভেতরে চলে গেলো শিশির।
ভেতরে গিয়ে মাহিমাকে বললো,
– তুই তাক আমি একটু নিচে যাচ্ছি।
– কেন?
– দরকার আছে।
– দেখিস আবার ওই দিনের মতো হারিয়ে যাস না।
নিচে এসেই মুগ্ধর সামনে দাড়ায় শিশির।
– কি হইছে? নিচে ডাকলেন কেন?
– আপনি আসলেন কেন?
– আপনি ডাকলেন তাই?
– আমি ডাকলেই আসতে হবে? আমি আপনার কে?
– ওকে ফাইন তাহলে চলে যাচ্ছি।
– এই দাড়ান দাড়ান মজা করছি। আচ্ছা একটা কথা বলি?
– হুম বলেন,,
– যে কেউ ডাকলে এভাবে নিচে চলে আসবেন না।
– হুম, আমাকে তো পাগলে কামড়াইছে, যে কেউ ডাকলেই চলে আসবো?
– তার মানে আমার উপর আপনার ট্রাস্ট আছে?
– মোটামুটি বলতে পারেন। ওই দিন রাতেই বুঝেছি। আপনি মানুষ টা ভালো।
– হিহিহি, এতো অল্পতেই কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক না। তো এখানেই দাড়িয়ে কথা বলবো?
– সরি, কোনো ছেলে মানুষ কে ভেতরে নিয়ে যাওয়া বাড়ি ওয়ালার রুল্স এর বাইরে।
– এটলিস্ট কোথাও তো বসতে পারি তাই না?
– এখানে তো বসার কোনো যায়গা দেখছি না।
– একটু সামনেই একটা নতুন কপি শপ হলো, ওখানে সব ধরনের ভালো মানের কপি পাওয়া যায়। এই ধরেন, ওখানে এ্যামিরিকানো, ক্যাপেচিনো, বিশেষ করে কোল্ড কপি গুলো, এক কথায় বলতে গেলে কপি শপ টা হওয়ার পর থেকে আমি এখানেই আসি প্রায়। কি যে ভালো লাগে,,,,,
মুগ্ধকে থামিয়ে দিয়ে শিশির বললো,
– কপি শপে বসতে চান তাই তো?
মুগ্ধর সাথে হাটছে শিশির। উপরে বারান্দা থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে মাহিমা।
কপি শপে এক সাথে কপি খাওয়ার সময় মুগ্ধ শান্ত গলায় বললো,
– কলেজে কি হয়েছিলো আজকে?
শিশির যেনো কিছুি যানে না এমন ভাব নিয়ে বললো,
– কই কিছু হয়নি তো।
-কিছু তো একটা হয়েছে। এমনি এমনি কিছু তো আর আমার কানে আসার কথা না।
– আচ্ছা হয়েছে তো? আপনি কি করবেন ওসব নিয়ে। ছেলেগুলো খুব খারাপ। এসব নিয়ে না ভাবাই ভালো।
– তার মানে সত্যিটাই কানে এসেছে আমার। আচ্ছা চলেন আপনাকে বাসায় পৌছে দিই।
– আচ্ছা আপনি এটা জিজ্ঞেস করলেন কেন?
– না এমনি, আমি চলে এসেছিলাম তো। কয়েকজনের মুখে শুনলাম। তাই সত্যি টা জানার জন্য।
– জেনে আপনি কি করবেন।
– নিউজ তৈরি করবো এটা নিয়ে, বুঝছেন? এইবার চলুন।
– আচ্ছা চলুন।
To be continue……….
~~ ব্যস্ততার কারণে ইডিট করা হায়ি, তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন??