#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৫,০৬
#অধির_রায়
পর্ব_০৫
নির্বণ পাগলের মতো আবিরের মাথা নিজের কোলে রেখে বলে যাচ্ছে,
“প্লিজ অধির চোখ মেলে তাকা৷ তোর সাথে আর কখনো খারাপ ব্যবহার করবো না৷ তুই উঠে দাঁড়া।”
.
নির্বণকে দেখে মনে হচ্ছে নির্বণ আবিরের সাথে কিছু করেছে৷ অাবির অচেতন হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। কোন সাড়াশব্দ নেই৷ নিয়তি নির্বণের এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,
“কি হয়েছে? এভাবে অচেতন হয়ে পড়ে আছে কেন?”
.
নির্বণ নিয়তিকে দেখতে পেয়ে কিছুটা সাহস পায়৷ অসহায় দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমি কিছু করিনি৷ নিয়তি আমি সত্যি বলছি আমি আবিরকে ইচ্ছা করে আঘাত করিনি৷ প্লিজ তুমি আবিরকে বাঁচিয়ে দাও৷ আমার তোমার কাছে হাত জোড় করছি৷”
.
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আবিরের কিছু হবে না৷ আপনি বরং জল নিয়ে আসেন৷”
.
নির্বণ আবিরের মাথা ফ্লোরে রেখে জলে নিয়ে এসে আবিরের চোখে মুখে ছিড়িয়ে দেয়৷ তবুও আবিরের জ্ঞান ফিরছে না৷ নির্বণ মেয়ে মানুষের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রেখে,
“এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না৷ আপনি বরং এম্বুলেন্স ডাকেন।”
.
“আবিরের কিছু হবে না তো৷”
.
“আমি আছি আবিরের কাছে আপনি বরং এম্বুলেন্সকে ফোন দেন৷ যেন তাড়াতাড়ি আসে বলে দিবেন৷”
।
নির্বণ আর আবির খুব ভালো ফ্রেন্ড। সেই ছোট বেলা থেকে একে অপরের বন্ধু৷ তাদের মাঝে এর আগে এমন কখনো হয়নি৷ কখনো কেউ অন্যের দ্বারা আঘাত পায়নি৷
।
।
নির্বণের মন দিয়ে অফিসের কাজ করে যাচ্ছে৷ এমন সময় আবির নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণ আবিরের সামনে বসে বলে উঠে,
“কি রে, এতো মন দিয়ে কি কাজ করিস?”
.
নির্বণ ফাইলের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠে,
“নতুন একটা প্রজেক্টের কাজ পেয়েছি৷ আমি চাই সেই প্রজেক্টটা সর্বোচ্চ হোক৷ আর এই প্রজেক্টের সাথে আমার মান সম্মান জড়িয়ে আছে৷”
.
“চিন্তা করিস না৷ তোর প্রজেক্টই বেস্ট হবে৷ তুই সেই ছোট বেলা থেকে অফিসের কাজ করে যাচ্ছিস৷ তোর প্রজেক্টের কাছে সবকিছু হার মানবে৷”
.
“খুব ভয় লাগছে। কিছু ভুল হয়ে গেলেই সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে৷ আমার মান সম্মান সব এই প্রজেক্টের উপর জড়িয়ে আছে।”
.
“এতো চিন্তা করার কোন কারণ নেই৷ তুই প্রজেক্টে হার মানলেও আমি তোকে আমার শালা সাবু বানাবো৷”
.
শালা বাবু কথাটা নির্বণ ভালোভাবে নিতে পারল না৷ নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আবির তুই তোর লিমিটের মাঝে থাকবি৷ তুই ভুলেও আমার বোনের দিকে চোখ তুলে তাকাবি না৷”
.
আবির আধিক্যেতা দেখিয়ে নির্বণে কাছে এসে ঘুরঘুর করে বলে উঠে,
“তুই যায় বলিস না কেন? ছোঁয়া শুধু আবিরের। আবির ছোঁয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না৷”
.
নির্বণ নিজের রাগ কন্টোল করতে না পেরে আবিরকে ধাক্কা দেয়৷ আবির দেয়ালের সাথে ভারী খায়৷ সাথে সাথে আবির চিৎকার করে ফ্লোরে পড়ে যায়৷
.
নির্বণ সারা রুমে পায়েচারী করছে। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না৷ এম্বুলেন্সের লোক ফোন ধরছে না৷ নিয়তি হুট করেই বলে উঠে,
“আবিরের জ্ঞান ফিরেছে৷ আবির সুস্থ হয়ে যাবে৷ কোন চিন্তা করতে হবে না৷”
.
নির্বণ তাড়াতাড়ি করে আবিরের কাছে আসে৷ আবির পিন পিন করে আঁখি মেলে তাকায়। আবির আঁখি মেলে তাকিয়ে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ নির্বণের চোখে মুখে ভয়ের আতঙ্ক। আবির ধীরে ধীরে বলে উঠে,
“কি হয়েছে? তুই এভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেন?”
.
নির্বণ আবিরকে জড়িয়ে ধরে,
“তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয়নি তো৷ তোর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না৷”
.
“আরে ছাড় আমাকে৷ তুই যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস মনে হচ্ছে আমি এখনই মরে যাব৷ আমার কিছু হয়নি৷ আমি একদম ঠিক আছি৷”
.
নির্বণ আবিরকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়৷ আবির রুমে নির্বণকে ছাড়া আরও একজনকে দেখতে পাই৷ সে আর কেউ নয়৷ সে হচ্ছে নিয়তি৷ আবির নিয়তির দিকে তাকিয়ে,
“কে তুমি! তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না৷”
.
নির্বণ কিভাবে নিয়তির পরিচয় দিবে বুঝতে পারছে না? নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ নিয়তি পরিস্থিতি বুঝতে পেয়ে বলে উঠে,
“আমি স্যারদের বাসায় কাজ করি৷ স্যারের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি৷”
.
আবির এক পলক নিয়তির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি নির্বণের বাসায় কাজ করো৷ কে তুমি? সত্যি করে বলবে।”
.
“না আপনি ভুল ভাবছেন! আমি সত্যি সেই বাসায় কাজ করি৷ সবাই আমাকে খুব আদর করে৷”
.
“আমি ওই বাসায় আরও আগে গিয়েছি৷ কিন্তু তোমাকে কোনদিন দেখতে পাইনি৷ কোন একটা রহস্য তো আছেই৷”
.
নির্বণ আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,
“তুই যেভাবে কথা বলছিস মনে হচ্ছে তুই একজন এডভোকেট। এভার তুই চুপ করে বস। চল আমরা একসাথে খাবার খাবো৷”
.
নিয়তি খাবার তাদের সামনে রেখে বাড়িতে চলে আসে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে সে একদম ঠিক কাজ করেছে আজ৷ যদি আবিরের সামনে সত্য কথা বলে দিলে নির্বণের মাথা নিচু হয়ে যেত৷ মেয়েরা এমনই হয়৷ হাজার অপমান করার পরও স্বামীর মাথা নিচু হতে দিবে না৷ সব সময় স্বামীর পাশে থাকতে চাই৷ বাঙালি মেয়েদের কাছে এক চিলতে সিঁদুর তার কাছে অনেক মূল্যবান৷
________
নিয়তি রুমের ভিতরে পা রাখতেই ছোঁয়া পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়৷ ছোঁয়া নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমার প্রিয় দিদি৷ এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?”
.
নিয়তি ছোঁয়ার রাগ বুঝতে পারে। ছোঁয়াকে দিয়ে অনেকগুলো কাপড় পরিষ্কার করিয়েছে৷ ভাবতেই নিয়তির হাসি পাচ্ছে৷ ছোঁয়াকে রাউন্ড করে বলে উঠে,
“ছোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য রাগ ভালো নয়৷ সকল রাগকে মুছে ফেলো। জলদি খাবার টেবিলে আসো খেতে দিচ্ছি৷”
.
ছোঁয়া নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,
“আমি কিছু খাবো না৷ আমি তোমাকে দেখে নিব৷ আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না৷”
.
নিয়তির ছোঁয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিয়তির একটা পিক তুলে৷ ছোঁয়ার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে,
“ছোঁয়া রাগ করো না৷ তোমার যখন ইচ্ছা তখন আমাকে দেখে নিতে পারবে৷ প্রয়োজন পড়লে ফোনের ওয়ালপেপারেও রেখে দিতে পারো৷ আমি কিছু মাইন্ড করবো না৷”
.
ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে নিজ রুমে চলে যায়৷ নিয়তি ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে হেঁসে উঠে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“তোমাদের দুই ভাই-বোনদের আমি সঠিক পথে নিয়ে আসবো৷ গরিবদের আর অবহেলা করতে দিব না৷ আমি নিয়ে আসবো তোমাদের মাঝে সমতা৷”
______
নিয়তি নির্বণের মায়ের কাছে আসে৷ নির্বণে মা নিয়তিকে দেখে কাছে টেনে নিয়ে বসান৷ তিনি মুচকি হেঁসে বলে উঠেন,
“তুই আজ ঠিক কাজ করেছো? তুমি নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে ছোঁয়াকে দিয়ে আজ অনেকগুলো কাপড় পরিষ্কার করিয়েছো?”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার উপর রাগ করেছেন৷”
.
“আমি তোমার উপর রাগ করবো কেন?”
.
“আমি ছোঁয়াকে এতো কাজ করিয়েছি৷ ছোঁয়া এসব কাজ করতে অভস্ত্য নয়৷ কিন্তু আমি তাকে দিয়ে জোর করে কাপড় ধৌত করিয়েছি৷”
.
নির্বণের মা এক রাশি হাসি দিয়ে,
“আমি খুব খুশি হয়েছি৷ তাকে তো সবকিছু শিখতে হবে৷ এভাবে অহংকার নিয়ে বড় হতে থাকলে তার জীবনে অনেক সমস্যা আসবে৷ তুমি তোমার বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে কাজ শিখিয়ে দিবে৷”
.
নির্বণের মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে উঠেন,
“মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ আমি সব ঠিক করে দিব৷ ছোঁয়াকে একজন আদর্শ মেয়ে হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে৷ শুধু আপনি আমাকে সঙ্গ দিবেন৷”
.
নিয়তির গালে হাত রেখে,
“আরে পাগলী, আমি সব সময় তোমার পাশে আছি৷ তুমি তোমার কাজে অটুট বিশ্বাস রাখো৷ সাফল্য একদিন আসবেই৷”
.
নিয়তি এতোদিন পর কাউকে ভরসা করতে পারছে৷ নির্বণের মায়ের ভালোবাসা পেয়ে নিয়তির চোখে জল এসে পড়ে৷ নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে,
“কোন কান্না নয়৷ কান্না মেয়েদের দুর্বল করে তুলে৷ আমি চাই তুমি সব সময় হাসিখুশি থাকো৷”
.
“হুম আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আর চোখের জল ফেলবো না৷ এখন থেকে হাসিখুশি থাকবো৷ আর সকল বাঁধার সাথে মোকাবেলা করবো৷”
_____
রাতের বেলা নিয়তি চুপি চুপি নির্বণের রুমে আসে৷ নির্বণের গায়ে কম্বল দিয়ে চলে যেতে নিলেই….
চলবে…..
#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়
নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে। নিয়তি চকিত হয়ে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নিয়তির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“আপনি এখনো ঘুম আসেননি৷ আপনি জেগে আছেন?”
.
নির্বণ বিছানা থেকে উঠে,
“হুম আমি জেগে আছি৷ কিন্তু তুমি আমার রুমে কি করছো?”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আপনার গায়ে কম্বল দিতে এসেছিলাম। আপনি তো কম্বল গায়ে না দিয়েই শুয়ে ছিলেন৷”
.
নিয়তিকে চারিদিকে ঘুর ঘুর করে,
“আমার খেয়াল রাখার জন্য তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়নি৷ তুমি এখানে কাজের লোক হয়ে এসেছো৷ তুমি তোমার লিমিটের মাঝে থাকো৷ সীমা পার করার চেষ্টা করো না৷”
.
নিয়তি মাথা নিচু করে,
“বাহিরে এখন অনেক শীত৷ গায়ে কম্বল জড়িয়ে না ঘুম আসলে আপনার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে৷”
.
নির্বণ মুখ ভেংচি কেটে,
“আমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে কিন্তু তোমার গায়ে কোন শীতের পোশাক নেই৷ সেজন্য বুঝতে পারছো রুমে কোন শীত নেই৷”
.
“না মানে… সত্যিই তো রুমে কোন শীত নেই৷”
.
নিয়তি কথা কাটিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে নিলেই নির্বণ আবারও নিয়তির হাত ধরে টান দেয়৷ নিয়তি নিজেকে কন্টোল করতে না পেরে নির্বণের উপর পড়ে যায়৷ নিয়তি খোলা কেশগুলো নির্বণের সমস্ত মুখের উপর পড়ে৷ নিয়তি তাড়াতাড়ি করে নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ অদূরে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে টার্চ করবেন না৷ যে আমার হাত সারা জীবন ধরে রাখতে পারবে একমাত্র সে লোককেই আমি আমার হাত ধরার অনুমতি দিব৷”
.
নির্বণ কোন কথা না বলে নিয়তির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে৷ নিয়তি চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে৷ এখন রাত ৮ টা বাজে। সকলের তাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণকে রাতে খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়েছিল৷ নির্বণ ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিল৷ নিয়তি ভেবেছিল নির্বণ ঘুমিয়ে আছে৷ কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিতে গিয়েই নিয়তির এমন অবস্থা। নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিয়তিকে বাহিরে নিয়ে আসে৷ নির্বণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিয়তি বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না৷ আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না৷”
.
নির্বণ গাড়ির দ্বার খোলে দিয়ে,
“গাড়িতে উঠে বসো৷”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“গাড়িতে কোথায় যাব৷ আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন না তো৷”
.
নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছি৷ গাড়িতে উঠে বসো৷”
.
নিয়তি একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে। নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে নিয়তিকে কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দেয়৷ নির্বণ গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে দেয়৷ নিয়তি কান্না করতে করতে বলে উঠে,
“প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না৷ আমি এমন ভুল আর করবো না৷ আমি আপনার রুমে আর কোন দিন যাব না৷”
.
নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আর একটা কথাও বলবে না৷ চুপচাপ বসে থাকতে পারো না৷”
নিয়তির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে,
“চোখের জল মুছে নাও৷ এক ফোঁটাও যেন চোখ থেকে জল না বের হয়৷”
.
নিয়তি কোন কথা না বলে কেঁদে যাচ্ছে৷ নির্বণ গাড়ি নিয়ে বড় একটা শপিং মলে দাঁড় করায়৷ নিয়তি কিছুই বুঝতে পারছে না৷ গাড়ি শপিং মলে কেন নিয়ে আসলো? নিয়তি আবুলের মতো নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকে নিজের সাথে করে শপিং মলের ভিতরে নিয়ে যায়৷ নিয়তি চকিত হয়ে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকপ শপিং মলে নিয়ে এসে বলে উঠে,
“তোমার শীতের পোশাক যেগুলো পছন্দ হয় সেগুলো নিয়ে নাও৷”
.
নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“কার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করবো৷ আমি তো কারোর পছন্দ জানি না৷”
.
নির্বণ মাথায় হাত দিয়ে,
“কার জন্য মানে? আমার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করো৷”
বিরবির করে বলে উঠে,
“মেয়েদের নিয়ে একটাই সমস্যা। তার শীতের পোশাক নেই সেজন্য নিয়ে আসলাম৷ এখন বলছে কার জন্য শীতের পোশাক কিনবে।”
.
নিয়তি একটু দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে,
“আপনার শীতের পোশাক নেই আগেই বললেই পারতেন। সেগুলো না বলে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে আসলেন৷ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
.
নিয়তি নির্বণের জন্য কয়েকটি জ্যাকেট পছন্দ করে৷ কাউন্টারে জ্যাকেট নিয়েই আসতেই নির্বণের চোখ রসে গোল্লার মতো বড় হয়ে গেছে। নির্বণ চকিত হয়ে,
“তুমি ছেলেদের পোশাক পড়বে।”
.
নিয়তি চোখ বড় করে,
“আমি ছেলেদের পোশাক পড়তে যাব কেন? এগুলো তো আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। ”
.
নির্বণ দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে উঠে,
“আমি আমার জন্য নিয়ে আসতে বলেছি৷”
.
“একটু আগে তো আপনিই বললেন আপনার শীতের পোশাক নেই৷ আর আপনার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করতে বললেন৷”
.
নির্বণ নিজের কপালে আঙ্গুল গিয়ে দুই দিকে স্লাইড করে বলে উঠে,
“তোমার বুদ্ধি কি হাঁটুর নিচে? কিছুই বুঝতে পারো না৷ আমি তোমার জন্য শীতের পোশাক নিতে বলেছি৷”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“আমার জন্য মানে? আমার শীতের পোশাক তো আছেই৷ আমার কোন শীতের পোশাক লাগবে না৷”
.
নির্বণ কিছু না বলে নিজেই নিয়তির জন্য পোশাক পছন্দ করতে থাকে৷ নিয়তি দাঁড় করিয়ে দেখক তার সাইজে ঠিক আছে কিনা৷ নিয়তি দু’চোখ ভরে নির্বণকে দেখে যাচ্ছে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“আপনি আমার এতো খেয়াল রাখছেন৷ কিন্তু আমাকেই মেনে নিতে পারছেন না৷ আমাকে একবার ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেন৷ কোনদিন আপনাকে ছেড়ে যাব না৷
________
ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“আমি খুব খুশি হয়েছি৷ আজ এই নিয়তিকে দাদা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করেই ছাড়বে৷ মনে হয় দাদার রুমে পারমিশন ছাড়া ঢুকেছে৷”
.
নির্বণের মা উঁচু স্বরে বলে উঠেন,
“তোমার মুখে বাজে কথা ছাড়া অন্য কিছু আসে না৷ তুমি যেমন সবাইকে তুমি তাই ভাবো৷”
.
ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
“মা তুমি তোমার নীতির কথা বন্ধ করো৷ তুমি দাদাকে এখনো চিনতে পারোনি৷ দাদা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছোঁয়াকে বের করে দিবে৷”
.
নির্বণের মা উঁচু স্বরে,
“মুখে লাগাম দাও৷ তোমার মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করে দাও৷ তোমার চিন্তা ধারণা খুব নিম্ন৷”
.
ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠে,
“মা তোমার কাছে কাজের মেয়েটা বড় হয়ে গেল। আমি তোমার কাছে কেউ না৷ তুমি আমার কথা না ভেবে তুমি কাজের মেয়ে নিয়তিকে নিয়ে ভাবছো৷”
.
ছোঁয়া রাগ দেখিয়ে খাবার টেবিল থেকে চলে যায়৷ অন্য একজন সার্ভেন্ট এসে বলে উঠে,
“ছোট সাহেব নিয়তিকে গাড়ি করে কোথায় জানি নিয়ে গেছে৷”
.
নির্বণের মা চকিত হয়ে,
“কোথায় নিয়ে যেতে পারে। চিন্তার বিষয়৷ মেয়েটা নতুন৷ একটা ভুল করেছে তাই তাকে এত বড় শাস্তি দিতে হবে৷”
________
নির্বণ নিয়তির দিকে ঝুঁকে,
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে না দেখে পোশাক গুলো দেখো।”
.
“আসলে কেউ আমাকে কোনদিন এভাবে কোন শপিং মলে নিয়ে আসেনি৷ আপনিই প্রথম আপনি আমাকে শপিং মলে নিয়ে আসলেন৷”
.
“মন খারাপ করতে হবে না৷ আমি জানি তোমার সম্পর্কে সবকিছু।”
.
নিয়তি চোখ বড় করে চকিত হয়ে,
“আপনি জানেন কিভাবে?”
.
“অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এখন থেকে আমি মাঝে মাঝে নিয়ে আসবো৷”
.
“এতোগুলো পোশাক আমার জন্য।”
.
হ্যাঁ সবগুলো তোমার জন্য৷
.
নির্বণ সেখানেই একটা শীতের সুয়েটার নিয়তির গায়ে পড়িয়ে দেয়৷ বাকিগুলো গাড়িতে রেখে আসে৷
.
নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁয় নিয়ে আসে। নির্বণ নিয়তির পছন্দ মতো সকল খাবার অর্ডার করে৷ নিয়তি কোন ভুল করলে নির্বণ তাকে সংশোধন করে দেয়৷ নিয়তি যেন কোন সংকোচ বোধ না করে সেজন্য তাকে সব কিছুতে সাহায্য করে যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি ভাবছে,
“আগে নির্বণ আর আজকের নির্বণের মাঝে অনেক পার্থক্য। আমি তো এমন কাউকে নিজের পাশে চেয়েছিলাম৷”
.
ডিনার শেষ করে রাত ১১ টার দিকে তারা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে আসছে৷ হঠাৎ করে…..
চলবে…..