এক_চিলতে_সিঁদুর #পর্ব_০৯,১০

0
857

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৯,১০
#অধির_রায়
পর্ব_০৯

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের দিকে টান দেয়৷ নিয়তি টান সামলাতে না পেরে নির্বণের উপর এসে পড়ে। না চাওয়া সত্ত্বেও নিয়তির ঠোঁট জোড়া লেগে যায় নির্বণের কপোলে। নিয়তি নিজেকে সংযত করে উঠে যেতে নিলেই নির্বণ তার বাহুর মাঝে আটকে ধরে। নিয়তি আমতা আমতা করে,
“কি করছেন কি? এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন কেন?”
.
নির্বণ দুষ্টামির হাসি দিয়ে,
“তোমার ভালো লাগে না বুঝি৷ তুমি তো চাও আমার সাথে থাকতে৷”
.
নিয়তি নির্বণের চোখের দিকে তাকাতেই নিয়তি লজ্জা পেয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তি লজ্জা মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“তুমি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছো? আমি তোমাকে এতো কষ্ট দিলাম৷ কিন্তু তুমি আমার জন্য তোমার জীবনের রাত দিন এক করে দিলে৷”
.
নিয়তি নির্বণের উদরে চিমটি দেয়৷ যার ফলে নির্বণের হাতের বাঁধন খুলে যায়৷ নিয়তি সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নির্বণ থেকে দূরে সরে আসে৷
.
নির্বণ নিজের উদরে হাত রেখে,
“নিয়তি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না৷ তুমি আমাকে আঘাত করতে পারো না৷”
.
নিয়তি ভেংচি করে,
“আমি আপনার সাথে এমন করতে চাইনি৷ আপনি আমাকে এমন করতে বাধ্য করেছেন৷ আমি চাইনা আপনি এমন ভুল দ্বিতীয় বার করেন৷”
.
নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ মাথা ধরে কিছুটা উঁচু স্বরে ,
“নিয়তি আমার মাথা ভিষণ ব্যথা করছে৷ আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না৷ মাথার ব্যথায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্লিজ আমার মাথাটা একটু মাসাজ করে দাও৷”
.
নির্বণের এমন আকুতি মিনতি শুনে নিয়তি বুঝে নেয় নির্বণের সত্যি সত্যি মাথা ব্যথা করছে৷ নিয়তি তেড়ে নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণের মাথায় হাত রাখতেই নির্বণ নিয়তিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ নির্বণের এমন ব্যবহার দেখে নিয়তি চকিত হয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তির গলায় মুখ লুকিয়ে,
“প্লিজ নিয়তি আমাকে ছেড়ে দূরে কোথায় যাবে না! আমাকে একটা সুযোগ দাও৷ আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যাব না৷”
.
নিয়তি নির্বণের কথা শুনে অবাক। নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তাকে এতো তাড়াতাড়ি ভালো বেসে ফেলবে৷ নিয়তি নিজের সম্মানের কথা ভেবে নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়৷ নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে,
“আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয়? যখন ইচ্ছা হবে কাছে টেনে নিবেন। আবার যখন ইচ্ছা হবে দূরে ঠেলে দিবেন৷”
.
নির্বণ নিয়তির এমন অগ্নিমূর্তির ন্যায় রুপ দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়৷ নির্বণ ধীর পায়ে নিয়তির সামনে এসে দাঁড়ায়৷ নিয়তি কাঁধে হাত রেখে,
“তোমার কি হলো? তুমি এভাবে কেন রিয়েক্ট করছো? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”
.
নির্বণের কথা শুনে নিয়তি ফীক্ করে হেঁসে দেয়৷ ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনার মতো ছেলেকে ভালোবাসতে যাবে নিয়তি৷ আপনি একটা চরিত্রহীন ছেলে৷ যে ছেলের মন এক নারী দিয়ে ভরে না৷ সে ছেলেকে নিয়তি ভালোবাসবে নিয়তি৷ আপনার টাকা, পয়সা, বাড়ি, গাড়ি দেখে নিয়তি প্রেমে পড়ে যাবে৷ নিয়তিকে আপনার লোভী মনে হয়৷ আপনার এসব চিন্তা ধারণা পরিবর্তন করেন৷”
.
নিয়তি নির্বণকে উচিত জবাব দিয়ে চলে যেতে নিলে আবারও নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তি এভার নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না৷ নিয়তির হাত ধরার সাথে সাথে নিয়তি নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ চোখ পাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে ,
“দ্বিতীয় বার নিয়তির হাত ধরার ভুল কখনো করবেন না৷ নিয়তির হাত ধরার অধিকার শুধু নিয়তির হাসবেন্ডের আছে।”
.
নিয়তি এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে দৌড় দিয়ে চলে আসে৷ বিছানা চাঁদর আঁকড়ে ধরে কান্না করতে থাকে৷ নিয়তির কান্না বাঁধ মানছে না। নিয়তি কান্না করতে করতে বলে উঠে,
“হ্যাঁ সৃষ্টি কর্তা কেন আমার জীবনে এতো কষ্ট? আমি তো চেয়েছিলাম নির্বণ আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুক৷ তবে আজ কেন এমন হলো? কেন আমি নির্বণকে মেনে নিতে পারলাম না?”

চোখের অশ্রু দিয়ে নিয়তির বালিশ ভেজে যাচ্ছে। চোখের জলের যদি কোন রং থাকতো তাহলে বালিশ তার প্রমাণ হতো৷ আজ নিয়তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই৷ সবকিছু পেয়েও হারিয়ে ফেললো৷ এক ফোঁটা সুখের দেখাও পেল না নিয়তি৷
.
নির্বণ সেখানেই বসে কান্না করে দেয়৷ নিয়তি তো ঠিক বলেছে নির্বণ কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়৷ নির্বণের চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ নির্বণ মনে মনে বলছে,
“নিয়তি তুমি একদম ঠিক বলেছো৷ আমার মতো ছেলেদের কোনদিন ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই৷ যেসব ছেলেদের মন একটা মেয়ে দিয়ে ভরে না৷ তাদেরকে কে ভালোবাসবে? আজ আমরা সমাজে ঘৃণিত। আমাদের জন্যই আজ শত শত মেয়ে নিজের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলছে৷ হ্যাঁ ভগবান আমাকে ভালো হবার একটা সুযোগ দেন৷”

নির্বণ কান্না করতে করতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে৷ কিন্তু নিয়তির চোখে কোন ঘুম নেই৷ নিয়তি ভেবে নেয় সে আর এই বাড়িতে থাকবে না৷ সে ঠিক করে তার মামার বাড়ি চলে যাবে৷ মামার বাড়ি কিছুদিন থেকে একটা জবের সন্ধান করবে৷ তারপর আর মামার বাড়ি থাকতে হবে না৷ নিয়তি কাউকে কিছু না বলে রাতে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷
.
নির্বণ নিয়তির কোন দেখা না পেয়ে ছোঁয়া নিয়তির রুমে আসে৷ ছোঁয়া রুমে এসে দেখতে পাই নিয়তি রুমে নেই৷ ছোঁয়া ভেবে নেয় তার দাদাকে নিয়ে ছাঁদে আছে৷ ছাঁদে এসেও কাউকে দেখতে পাইনা৷ অবশেষে ছোঁয়া দাদার রুমে পা রাখে৷ নির্বণের রুমে পা রাখতেই ছোঁয়ার চোখ কপালে উঠে যায়৷ ছোঁয়া চিৎকার করে বলে উঠে,
“দাদা তুমি ফ্লোরে কি করছো?”
.
ছোঁয়ার চিৎকারে নির্বণের ঘুম ভেঙে যায়৷ নির্বণ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে ফ্লোরে শুয়ে আছে৷ ছোঁয়া নির্বণের কাঁধে হাত রেখে,
“দাদা তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? কে করল তোমার এমন অবস্থা?”
.
নির্বণ মাথা নিচু করে,
“আমি ঠিক আছি৷ মনে হয় রাতে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।”
.
“দাদা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো। কি লুকাতে চাইছো তুমি? আর নিয়তি কোথায়? তাকে কোথায় তো দেখতে পাচ্ছি না৷”
.
নির্বণ চকিত হয়ে,
“মানে! নিয়তিকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? তার রুমে খেয়াল করেছে।”
.
হ্যাঁ দাদা আমি তাকে সব জায়গায় খুঁজে দেখেছি৷ কিন্তু কোথাও নেই নিয়তি৷”
.
“তুমি তার ওয়াসরুমে দেখেছো। নিয়তি মে’বি ওয়াসরুমে আছে৷”
.
“না দাদা। আমি ওয়াসরুমে কোন জলের শব্দ পাইনি৷ তাই ওয়াসরুমে দেখা হয়নি৷”
.
“চল আমার সাথে তার রুমে।”
.
নির্বণ আর ছোঁয়া মিলে নিয়তির রুমে আসে৷ রুমে এসে নিয়তিকে দেখতে পাইনা৷ ওয়াসরুমেও নিয়তি নেই৷ ছোঁয়ার চোখ আটকে যায় টেবিলের উপর রাখা চিরকুটের উপর৷ ছোঁয়া চিরকুট নিয়ে পড়তে থাকে৷ একটু পড়ে বলে উঠে,
“দাদা নিয়তি চলে গেছে৷ সে আর কোনদিন এই বাড়িতে আসবে না৷”
.
“নিয়তি চলে যেতে পারে না৷ আমাকে ছেড়ে নিয়তি কোনদিন ছেড়ে চলে যাবে না৷”
.
“তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না মানে কি? নিয়তি এখানে স্পষ্টভাবে লিখেছে সে এই বাড়িতে আর থাকতে চাই না৷ তাই সে চলে যাচ্ছে৷”
.
নির্বণ আগ্রহ দেখিয়ে,
“আর কিছু লিখেনি৷ কেন চলে যাচ্ছে?”
.
“না আর কিছু লেখা নেই।” ছোঁয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“দাদা তুমি কি লুকাতে চাইছো? তোমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে? তুমি কিছু কিছু করো নি নিয়তির সাথে৷”
.
নির্বণ আমতা আমতা করে,
“আমি কি করতে যাব নিয়তির সাথে৷ আমি কিছু করিনি নিয়তির সাথে৷”
.
“তোমার কথা আটকে আসছে কেন? আমি এখন ছোট নয়৷ আমি সবকিছু বুঝতে পারি৷ কি হয়েছে? আমাকে সবকিছু খোলে বল৷”
.
নির্বণ ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ নির্বণ বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে যাচ্ছে৷ ছোঁয়া নির্বণের কান্না দেখে অবাক৷ ছোঁয়া নির্বণকে বুঝানোর চেষ্টা করতেছে৷ কিন্তু নির্বণ কান্না করেই যাচ্ছে।
.

নিয়তি সকালের বাস ধরে সিলেটের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে৷ নিয়তি নিজের বাড়িতেও যেতে পারবে না৷ নিজের বাবার এমন রুপ দেখে কে ওই বাড়িতে যেতে চাই?
.
ছোঁয়া নির্বণকে বিছানায় বসিয়ে দেয়৷ নির্বণকে অভয় বানী দিয়ে বলে উঠে,
“নিয়তি কিসের জন্য চলে গেল? দাদা তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি৷ আমি নিয়তিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো৷”
.
“তুমি সত্যি নিয়তিকে ফিরিয়ে আনবে৷ কিন্তু নিয়তি কোথায় গেছে জানি না?”
.
“নিয়তি তো তার নিজের বাড়িতে যেতে পারে৷ তার নিজের বাড়ি কোথায়?”
.
নির্বণ চোখের জল মুছে,
“নিয়তি কোনদিন নিজের বাড়িতে যাবে না৷ নিয়তি ভুল করে হলেও নিজের বাবার সম্মুখীন হবে না৷”
.
“নিয়তির বাড়ি থেকে জানতে পারবো নিয়তি কার বাসায় যেতে পারে৷ তার আগে বল নিয়তির সাথে তোমার সম্পর্ক কি?”
.
আমি ছোঁয়ার হাত ধরে,
“আমি নিয়তিকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমি তাকে ভালোবাসার কথা বললে সে বাড়ি থেকে চলে যায়৷”
.
“কিন্তু নিয়তি তোমাকে ভালোবাসে না৷ তোমাকে ভালো না বাসার কারণ কি হতে পারে?”
.
“আমাকে ভালো না বাসার কারণ আমি তার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ আমার জন্যই নিয়তির এমন অবস্থা৷ নিয়তিকে বাধ্য করেছি এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে৷”
.
নির্বণ একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করে নিয়তির সাথে ঘটে যাওয়ার কাহিনি। নির্বণের মুখ থেকে যা শুনে তার জন্য মোটেও ছোঁয়া প্রস্তুত ছিল না৷

চলবে…..

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১০
#অধির_রায়

“আমি নিয়তিকে ঠকিয়ে বিয়ে করি৷ আমাদের বিয়ে হয় ছোটখাটো একটা মন্দিরে৷ যেন তেমন কেউ জানতে না পারে৷ নিয়তিকে প্রথম দেখাই আমার ভালো লেগে যায়৷ আমাদের বিয়েটা ছিল নকল৷ কিন্তু নিয়তিকে সারাজীবন কাছে পাওয়ার জন্য রঙের পরিবর্তনে আমি তার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়৷ বিশ্বাস করো তার সাথে আমি কোন অন্যায় করিনি৷ তাকে টার্চ করার আমার সম্পুর্ন অধিকার আছে৷”
.
“হুম বুঝতে পারলাম৷ তুমি তার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিলে৷ কিন্তু তাকে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে বানিয়ে কেন নিয়ে আসলে? মা তো তোমার বিয়ের জন্য প্রতিদিন বলে৷”
.
“সবকিছু হয়েছে নিয়তির সৎ মার জন্য৷ নিয়তির সৎমা নিয়তির বাবাকে বিভিন্ন ধরনের ভুল বুঝিয়ে এসব কাজ করতে বাধ্য করেছে৷ আমি উনার কথামতো বিয়ের দুই দিন পর একটা নকল ডিভোর্স পেপার বানায়৷ কিন্তু নিয়তি জানতে পারে কোন আদালত দুই দিনের মাথায় ডিভোর্স পেপার তৈরি করে দেয় না৷ ডিভোর্স নিতে গেলে সর্বনিম্ন তিন মাস সময় দেন৷”
.
“তারপর কি হলো? থেমে গেলে কেন?”
.
নির্বণ চোখের জল মুছে,
“নিয়তির সামনে তার বাবার আসল পরিচয় ফুটে উঠে। যদিও তিনি ছিলেন একটা মাধ্যম। আসল শয়তান ছিল নিয়তির সৎমা৷ আমি তাকে বলে দেয়, ‘আমার কাছ থেকে নিয়তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার বিয়ে দিবে।’ এজন্য বলেছি যেন নিয়তি আমাকে ছেড়ে না যায়৷”
.
ছোঁয়া এক কদম পিছিয়ে,
“ছি দাদা! তুমি এতো নিচ৷ একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দিলে। তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথাই ছিল তার সাথে তুমি……! তোমাকে আমি কতো বিশ্বাস করতাম৷ আর তুমি… ”
.
ছোঁয়া আরও কিছু বলার আগেই নির্বণ ছোঁয়ার হাত ধরে টলমল নয়নে,
“আমি যা করেছি নিয়তিকে কাছে পাওয়ার জন্য করেছি৷ আমি এমন না করলে আমার জায়গায় অন্য কোন ছেলে নিয়তির জীবন ধ্বংস করে দিত।”
.
ছোঁয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,
“শেয়ালের হাতে মুরগী দিতে চাও না৷ কিন্তু তুমি নিজেই শেয়াল সেজে নিয়তিকে ভক্ষণ করলে৷”
.
“তুমি আমাকে যা খুশি তাই বলো। আমার নিয়তিকে আমার কাছে নিয়ে এসে দাও৷”
.
“তুমি কি পারতে না তার বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নিয়তির পাশে দাঁড়াতে!”
.
নির্বণ ছোঁয়ার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। নির্বণ বিছানায় বসে ছোট বাচ্চার মতো হাঁটু ভাজ করে কান্না করতে থাকে৷ ছোঁয়া নিজের ভাইয়ের কষ্ট দেখে নির্বণের কাঁধে হাত রাখে৷
.
“যা হবার হয়ে গেছে। এখন আমাদের উচিত নিয়তির খোঁজে বের করা৷ আমাদেরকে নিয়তির বাড়িতে যেতে হবে।”


ছোঁয়া নির্বণ দু’জনে মিলে নিয়তিদের বাড়িতে যায়৷ নির্বণ কলিং বেল বাজাতেই নিয়তির বাবা দ্বার খোলেন৷ নির্বণকে দেখেই নিয়তির বাবা দরজা লাগাতে নিলেই নির্বণ জোর করে রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে৷
.
নিয়তি বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোর এতো বড় সাহস তুই আমার বাড়িতে এসেছিস৷ আমার বাড়ি থেকে এখনই বেরিয়ে যা।”
.
ছোঁয়া নিয়তির বাবার সামনে এসে,
“আমরা একটা দরকারে আপনাদের বাড়িতে এসেছি। আমি ছোঁয়া। নির্বণের ছোট বোন৷”
.
ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠেন,
“আমি তোমাদের সাথে কোন কথা বলতে চাইনা৷ তাই তোমরা ভালোই ভালোই চলে যাও৷”
.
“আমরা এখান থেকে চলে গেলে আপনার মেয়েকে খুঁজে এনে দিবে কে?”
.
নিয়তির বাবা চকিত হয়ে,
“নিয়তিকে খুঁজে যাওয়া পাচ্ছে না মানে৷ সে তো তোমাদের বাড়িতে ছিল৷”
.
“হুম আমাদের বাড়িতেই ছিল। কিন্তু আজ রাতে চিঠি লিখে চলে গেছে৷ কোথায় যেতে পারে কিছুই জানি না?”
.
নিয়তির বাবা রুমের মাঝে কোন কিছু না বলে নির্বণ আর ছোঁয়ার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসেন৷ নির্বণ কিছু বলতে নিলেই চোখের ইশারায় কথা বলতে মানা করেন৷ নিয়তির বাবা তাদের একটা নির্জন জায়গা নিয়ে আসেন৷ তিনি বলতে শুরু করেন,
“নিয়তির ভালো কোন বান্ধবী নেই৷ নিয়তি কোথাও গেলে একমাত্র যেতে পারে তার মামার বাড়ি৷ নিয়তি অভিমান করে তার মামার বাড়িতেই যায়৷”
.
নির্বণ মুচকি হেঁসে,
“নিয়তির মামার বাড়ি কোথায়? আমরা এখনই সেখানে যাত্রা শুরু করবো৷”.
.
নিয়তির বাবা চুপি চুপি তাদের ঠিকানা দিয়ে দেন। তিনি কথা না বাড়িতে তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ান৷ একটু দূরে গিয়ে,
“তোমরা এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাও৷ এখানে থাকলে তোমাদের বিপদ হতে পারে৷”
.
নির্বণ ছোঁয়া নিয়তির বাবার কথা মতো চলে আসে৷ বাড়িতে এসে কিছু পরিমাণ খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে৷
_____

নিয়তি সন্ধ্যার দিকে তার মামার বাড়িতে আসে৷ নিয়তিকে দেখে নিয়তির মামী রান্না ঘর থেকে বাহিরে আসে৷ তিনি হাসিমুখে বলে উঠেন,
“তুমি আসবে আমাকে একটা ফোন করবে না৷ তোমার জন্য পছন্দের কচু শাখ দিয়ে শুটকি মাছের চটচটি রান্না করতাম৷”
.
নিয়তি মলিন হাসি দিয়ে,
“মামী আমি তোমাদের সারপ্রাইজ দিতেই এসেছি৷ ফোন করে আসলে তোমরা সারপ্রাইজ হতে!”
.
নিয়তির মামী নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে,
“আমারও যদি তোমার মতো একটা মেয়ে থাকতো৷ তাহলে সেও তোমার মতো আমাকে ভালেবাসতো৷ কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস? আজ আমি নিঃসন্তান।”
.
মামীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে,
“আমি তোমাদের অভাব পূরণ করতে পারবো না৷ কিন্তু আমি এবার তোমাদের এখানে অনেককক দিন থাকবো৷”
.
নিয়তির মামী চোখের জল মুছে,
“কই গো! দেখো কে এসেছে? আমাদের নিয়তি এসেছে৷ দেখে যাও৷”
.
নিয়তির মামা তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন৷ নিয়তির তার মামাকে প্রণাম করে। হাসি মুখে বলে উঠেন,
“আমার ছোট মা’টা একদম শুকিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তাকে কিছু খেতে দাও৷”
.
নিয়তি হাসি মুখে,
“আমি একটুও শুকায় নি৷ বরং আগের তুলনায় আমি অনেক মোটু হয়েছি৷”
.
নিয়তি তার মামা মামীর সাথে রুমে আসে৷ তার মামার অবস্থান হলো মধ্যবিত্ত৷ নিয়তিকে পেয়ে তারা নিঃসন্তানের কথা ভুলে যায়৷ নিয়তির মা মারা যাওয়ার পর নিয়তিকে নিজেদের কাছে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির বাবা উনার মেয়েকে কিছুতেই অন্যের বাড়িতে রাখতে চাননি৷
.
নিয়তি গরম গরম ভাতের সাথে আলু ভর্তা, ছোট মাছ দিয়ে খেয়ে নেয়৷ অনেক তৃপ্তি করে খায়৷ এখান কার বিল থেকে তার মামা কিনে এনেছেন৷ নিয়তি খাওয়ার পর বলে উঠে ,
“মামী আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷ কাল তোমাদের সাথে অনেক গল্প করবো৷”
.
“ওকে সোনা। অনেক দূর থেকে এসেছো একটু ঘুমিয়ে নাও৷ ঘুমিয়ে নিলে ভালো লাগবে৷”
.
নিয়তির মামী নিয়তির জন্য বিছানা করে দেন৷ নিয়তি তার মামীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
“মামী তুমি আমাকে একটা কাজও করতে দিচ্ছো না৷”
.
“তোমাকে আমি পেটে ধরিনি৷ কিন্তু তুমি আমার কাছে আমার মেয়ের থেকে কোন অংশে কম নয়৷ তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো৷ তুমি শুয়ে পড়ো৷ আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি৷”
.
নিয়তি মামীর কথা শুনে কান্না করে দেয়৷ অশ্রু চোখে বলে উঠে,
“আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার সাথে এমনই করতো৷ তুমি আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দাওনি।”
.
নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে,
“কান্না করে না৷ আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
.
নিয়তি শুয়ে পড়ে। নিয়তির মামী নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন৷ ক্লান্ত নিয়তি কখন ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই৷ নিয়তির মাথা থেকে চুল সরে যায়৷ নিয়তির মামী নিয়তির মাথায় সিঁদুর দেখে অবাক হয়ে যান। নিয়তিকে ডাক দিতে নিয়েও ডাক দেন না৷ নিয়তির মামী খুব সুন্দর করে আগের মতোন চুল বেঁধে দেয়। যেন নিয়তি কিছুই বুঝতে না পারে৷
_______

রাত ১১ টার দিকে করিম চাচার ডাক শুনে নিয়তির মামা মামী জেগে উঠেন৷ গ্রামের দিকে রাত ১১ টা মানে অনেক রাত৷ গ্রামের মানুষদের রাত দশটার পর খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
.
নিয়তির মামা ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠেন,
“করিম চাচা আপনি! কোন কিছু হয়েছে কি?”
.
করিম চাচা ভাঙা গলায় বলে উঠেন,
“তোমাদের মেহমান এসেছে ঢাকা থেকে৷ তারা তোমার বাড়ি চিনতে পারছিল না৷ আমি গঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম৷ ফিরার পথে সাথে তাদের দেখা হয় আমার। তারা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। চলি আমি, প্রচুর ঘুম আসতেছে।”
.
করিম চাচা আর কিছু না বলে সাইকেলে চড়ে ভাঙা গলায় গান বলতে বলতে চলে যান৷ নিয়তি মামা, মামী নির্বণ ছোঁয়াকে রুমে ভিতরে নিয়ে আসেন৷ নির্বণ দেখতে পাই নিয়তির মামা মামী ছাড়া আর কেউ নেই৷ নিয়তি দেখতে না পেয়ে নির্বণ এদিক ওদিক উঁকি মারছে৷
.
নিয়তির মামী বলে উঠেন,
“এভাকে তুমি কাকে খুঁজতেছো? তুমি আমাদের বাড়িতে চুরি করতে এসেছো৷”
.
ছোঁয়া বলে উঠে,
“না মামী৷ দাদা তো নিয়তিকে খুঁজতেছিল৷”
.
নিয়তির মামী বুঝতে পারে নির্বণ নিয়তির হাসবেন্ড। তিনি মামী বলে উঠেন,
“নিয়তি আমাদের এখানে আসেনি৷ তোমরা এখন যেতে পারো৷”
.
নিয়তির মামা বলে উঠেন,
“আহ! তারা কিসের জন্য এসেছে তা জানতে দাও? আর এতো রাতে তারা কোথায় যাবে? বলো তোমরা এখানে কিসের জন্য এসেছো?”
.
নির্বণ যা বলে উঠে নিয়তির মামা তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলেন না৷

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here