এক_চিলতে_সিঁদুর #পর্ব_১৩,১৪

0
805

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৩,১৪
#অধির_রায়
পর্ব_১৩

নির্বণ নিয়তির হাত ধরতেই নিয়তির নির্বণের গাল বরাবর কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ নিয়তির এমন রুপ দেখে নির্বণ চকিত হয়ে যায়। নির্বণ বুঝতে পারছে না কেন নিয়তি এমন করল? নিয়তি নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনার লজ্জা করে মেয়েদের হাত ধরতে। আমাদের খেললা মনে করেন৷ যখন খুশি মেয়েদের হাত ধরবেন।
.
নির্বণ চকিত হয়ে,
“নিয়তি তুমি ঠিক আছে! কি হয়েছে তোমার? তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?”
.
নিয়তি ভেংচি কেটে,
“আপনার সাথে এর থেকে ভালোভাবে আমি কথা বলতে পারবো না৷ আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যান৷”
.
“তুমি আমার সাথে থাকবে৷ তুমি এখানে থাকবে কেন? আমার রুমই তো এখন থেকে তোমার।”
.
“আমি আপনার সাথে আপনার রুমে থাকবে যাব কেন? আপনি আমার কেউ হোন না৷ তাই আপনার সাথে এক রুমে আমি আর কোনদিন থাকবো না৷”
.
“তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী। মন্দিরকে সাক্ষী রেখে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি৷”
.
নিয়তি অট্টহাসি দিয়ে,
“কারো মাথায় লাল রং পড়িয়ে দিলেই তার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে না৷”
.
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসার একটা সুযোগ দাও৷”
.
“আপনি ভালোবাসার কোন মর্যাদা দিতে যানেন না৷ যে ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারে না। আমি তাকে ভালোবাসি না৷”
.
নির্বণ টলমল চোখে নিয়তির সামনে দাঁড়িয়ে,
“আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না৷ আমাকে তুমি এতটায় ঘৃণা করো৷ আমার জন্য তোমার মনে কোন ভালো লাগা কাজ করে না৷”
.
নিয়তি নির্বণ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে,
“আপনার জন্য আমার মনে কোন ফিলিংস নেই৷ যার জন্য কোন ফিলিংস নেই তাকে কিভাবে ভালোবাসবো?”
.
নিয়তির বাহু চেপে ধরে,
“কেন আমার জন্য দিনকে রাত, রাতকে দিন করেছে? কেন আমাকে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুললে?”
.
“মানবতার দিক বিবেচনা করে আপনাকে সুস্থ করে তুলেছি৷ আর আমি বাড়ির কাছের লোক৷ কাজের লোকদের প্রধান কর্তব্য হলো মালিক অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করা৷”
.
নির্বণ নিয়তির কথাগুলো নিতে পারছে না৷ খুব রাগ হচ্ছে নিয়তির উপর৷ কিন্তু নির্বণ নিরুপায়। তার জন্য নিয়তির এমন অবস্থা৷ নির্বণ টলমল চোখে নিয়তির দিকে অসহায় ভাবে বলে উঠে,
“আমি সত্যি বলছি, আমি তোমাকে সিঁদুর পড়িয়ে দিয়েছি৷ তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী।”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“এটা কলি যুগ৷ এখন কেউ শাখা সিঁদুরে বিশ্বাস করে না৷ আপনার সাথে আইন অনুযায়ী আমার কোন বিয়ে হয়নি৷ আর হ্যাঁ সত্য যুগ অনুযায়ী ধরলে, আপনি নিজ হাতে আমার সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছেন।”
.
নির্বণ হাত জোড় করে,
তখন আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন আমরা সব কিছু ঠিক করে নিতে পারি৷”
.
নিয়তি উঁচু স্বরে,
“না কোন কিছুই ঠিক হবার নয়৷ আমি আপনাকে আর বিশ্বাস করিনা৷ যাকে বিশ্বাস করি না তার সাথে কোনদিন ঘর করা যাবে না৷”
.
“আমাকে আর একবার বিশ্বাস করে দেখো৷ কোনদিন তোমাকে অমর্যাদা করবো না৷ তোমার কথা সব সময় মেনে চলবো৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনি এই রুম থেকে বের হবেন নাকি আমি চিৎকার করবো৷”
.
“আমি রুম থেকে যাব না৷ আমি তোমার সাথে এই রুমে থাকবো৷”
.
“আপনি সোজা কথায় যাবেন না৷ আমি কিন্তু চিৎকার করে বলবো আপনি আমার দুর্বলতা সুযোগ নিতে চান৷”
.
নিয়তির মুখ থেকে এমন নিচু কথা শুনবে নির্বণ কোনদিন ভাবেনি৷ নিয়তির তো কোন দোষ নেই৷ নিয়তিকে এমন বানিয়েছে নির্বণ৷ তার শাস্তি হিসেবে নির্বণ ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলছে৷ নির্বণের চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নির্বণ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷ নির্বণ আমতা আমতা করে,
“প্লিজ নিয়তি এমন করো না৷ তুমি যদি চাও আমরা আবার ধুমধাম করে বিয়ে করবো৷ সানাই বাজবে৷ তুমি আমার জন্য বউ সেজে অপেক্ষা করবে৷”
.
“সরি আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না৷ আমি আপনাকে ভালোবাসি না৷ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি৷”
.
নিয়তি অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটা শুনে নির্বণ দুই কদম পিছিয়ে যায়৷ নির্বণ এতোদিন ভেবে এসেছিল নিয়তি শুধু নির্বণের৷ আজ নিয়তির মনে অন্য কারোর বসবাস৷ সেখানে নির্বণের ছিঁড়ে ফোঁটাও নেই৷
.
নির্বণ চোখের জল মুছে আমতা আমতা করে করুন স্বরে,
“তুমি কাকে ভালোবাসাে? আমাকে ছেড়ে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসাে!”
.
“হ্যাঁ, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি৷”
.
নিয়তি আর পারছে না৷ নিজেকে যতই শক্ত রাখার চেষ্টা করছে ততই ভেঙে পড়ছে নির্বণকে দেখে৷ নিয়তি নির্বণকে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়৷ তাড়াতাড়ি করে দরজা লাগিয়ে দরজায় বসেই কান্না করে দেয়৷ নির্বণ ফুলের টপে লাথি দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে রুমের সমস্ত জিনিস ভাঙতে শুরু করে৷ পাগলের মতো করতে থাকে৷ বেলকনিতে এসে গ্রিল ধরে নিয়তির কথাগুলো ভেবে যাচ্ছে৷ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ভালোবাসলে এতো কষ্ট পেতে হবে কোনদিন জানা ছিল না৷ নির্বণ ধরে নিয়েছিল নিয়তি তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
.
নিয়তি কান্না করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে৷ নির্বণ নির্ঘুমে কাটিয়ে দেয় সারারাত। নির্বণের চোখে কোন ঘুম নেই৷ নিয়তির কষ্টে এতোটায় পাথর হয়ে গেছে যে কোন দিকে নির্বণের খেয়াল নেই৷
__________

আবির ছোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে হাত কাচুমাচু করে যাচ্ছে৷ ছোঁয়াকে কি বলতে এসেছে মনে নেই৷ চার দিন পর ছোঁয়াকে দেখতে পেয়েছে৷ ছোঁয়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে৷
.
ছোঁয়া কাশি দিয়ে,
“আবির দাদা আপনি কিছু বলবেন? এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”
.
ছোঁয়ার কথা শুনে আবিরের মুখটা প্যাচার মতো হয়ে যায়৷ আবির অসহায়ের মতো করে বলে উঠে,
“আমি তোমার কোন কালের দাদা ছিলাম৷ আমাকে তোমার কোন দিক থেকে দাদা মনে হয়৷”
.
ছোঁয়া মুচকি হেঁসে,
“দাদা রাগ করছেন কেন? আপনি আমার দাদার ভালো বন্ধু৷ দাদার বন্ধু হিসেবে আপনি আমার দাদা হোন৷”
.
“তোমার দাদার বন্ধু হয় কিন্তু তোমার দাদা নয়৷ বিরবির করে, “দাদা হিসেবে দেখো বলে তোমাকে নিজের করে নিতে পারছি না৷”
.
“আপনি কিছু বললেন? আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না৷ বিরবির করে না বলে একটু জোরে বলেন।”
.
আবির উপরের দিকে তাকিয়ে,
“কই কিছুনা। আমি কিছু বলিনি।”
.
“অ আচ্ছা আমি একটু শুনতে পেলাম৷”
.
“তো কি শুনতে পেলে?”
.
“কিছুই শুনতে পায়নি৷ কিছু বললে তো শুনতে পেতাম৷ আপনি যেভাবে ভয় পেয়ে আছেন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি একটা হুনু বিড়াল।”
.
“আমি ভয় পাচ্ছি না মোটেও। আমি তোমাকে ভয় পেতে যাব কোন?”
.
“যা বলতে আসছিলেন নিঃসংকোচে বলে ফেলেন৷ ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷”
.
আমার সাথে একটু হাঁটতে যাবে৷ না মানে সামনের ওই মাঠ টায়।”
.
ছোঁয়া কিছু না বলে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবির ছোঁয়ার উত্তরের জন্য অধীর আগ্রহে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ছোঁয়া মুচকি হেঁসে,
“ওকে চলেন এক সাথে হেঁটে আসি৷ সকাল বেলা একটু হাঁটলে মনও ভালো হয়ে যাবে৷”
_______

পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে ছোঁয়া আবির৷ তাদের মাঝে কোন কথা নেই৷ একটু পর পর একে অপরের দিকে শুধু একটু করে তাকিয়ে যাচ্ছে৷ আবির একটু কাছে আসার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারছে না৷
.
আবির চোখ বন্ধ করে মনে মনে,
“যাই হয়ে যাক। আজ আমি নিজের মনের কথা ছোঁয়াকে বলবোই।”
.
“কি হলো? দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন? হাঁটার আর ইচ্ছা নেই৷ তাহলে ফিরে যায়৷”
.
দৌড়ে ছোঁয়ার পাশে এসে,
“কে বলেছে ইচ্ছা নেই৷ তুমি পাশে থাকলে আমি সারাদিন হাঁটতে পারবো৷ যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে৷”
.
ছোঁয়া মুচকি হেঁসে হাঁটতে শুরু করে৷
আবির ধীরে ধীরে ছোঁয়ার আরও কাছে যাচ্ছে৷ এক সময় আবিরের হাত ছোঁয়ার হাতের সাথে একটু লাগে৷ ছোঁয়া আবিরের দিকে তাকাতেই আবির মুচকি হেঁসে দূরে সরে যায়৷ এতে ছোঁয়া একটু খারাপ লাগে৷ ছোঁয়া বুঝতে পারে আবির তাকে ভালোবাসে৷ বলতে পারে না৷ ছোঁয়াও আবিরের প্রেমে পড়ে গেছে৷ কিন্তু মেয়ে হয়ে প্রথমে ভালো লাগা, ভালোবাসার কথা কিভাবে বলবে?”
.
আবির এইবার সমস্ত ভয়কে জয় করে ছোঁয়ার হাত নিজের হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নেয়৷ ছোঁয়া আবিরের দিকে তাকালেই আবির বলে,
“আমার দিকে না তাকিয়ে হাঁটার দিকে মন দাও৷”
.
ছোঁয়া মনে মনে মহাখুশি। একটু হলেও আবিরের মনে সাহস হয়েছে৷ আবির আর একটু সামনে এসে নিজের বুক পকেটে থেকে একটা রিং বের করে৷ ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
“তুমি আমার জীবন সঙ্গী হবে৷ তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিবে৷”
.
ছোঁয়া আবিরের কথা শুনে চকিত হয়ে যায়৷ আবির ছোঁয়াকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে ভাবতেই পারেনি৷ ছোঁয়ার উত্তর কি হবে?

চলবে…..

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়

নিয়তি চা নিয়ে নির্বণের রুমে প্রবেশ করে৷ রুমে ঢুকেই নিয়তির চোখ আকাশ প্রান্তে৷ চোখ দুটো রসে গোল্লার মতো বড় হয়ে যায়। ঘরের সমস্ত জিনিস ভাঙাচোরা। কোন কিছুই ঠিক নেই৷ নির্বণকে কোথায় দেখতে পাইনা৷ নিয়তি ধীর পায়ে সাবধানতার সাথে বেলকনিতে আসে৷ বেলকনিতে এসে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে৷ নির্বণকে দেখে একদম চিনা যাচ্ছে না৷ হঠাৎ করে কেউ নির্বণকে দেখলে পাগল বলে সম্মোধন করবে৷
.
নির্বণের চুলগুলো উসকো খুসকো অগুছানো। চোখ দু’টো লাল বর্ণের হয়ে গেছে৷ কান্না করার জন্য আঁখি ফুলে ফেঁপে রয়েছে৷ নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রাখতেই নির্বণ গ্রিল দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে,
“দেখতে এসেছো নির্বণ বেঁচে আছে কিনা৷”
.
নিয়তি নির্বণের কথার কোন উত্তর দিল না৷ টুপ করে চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷
.
নির্বণ নিয়তির দিকে না তাকিয়েই বলে দেয়,
“তুমি কান্না করছো কেন? তুমি তো আমার সাথে থাকতে চাওনা৷ আমার কষ্টে কেন তোমার চোখে জল?”
.
নিয়তি নিস্তব্ধ কোলম স্বরে,
“আপনি সারারাত ঘুম আসেন নি৷ আপনাকে দেখে একদম পাগল লাগছে৷ ফ্রেশ হয়ে নেন৷”
.
“আমায় নিয়ে তোমায় কোন চিন্তা করতে হবে না। আজ পাগল বলেই তো আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি৷”
.
নিয়তি নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়৷ সে যেন কিছুতেই ভেঙে না পড়ে৷ নির্বণকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,
“রুমের অবস্থা এমন কেন? যদি আপনার কিছু হয়ে যেত৷”
.
“কি আর হতো? বড়োজোর একটা ভাঙা দর্পন পেটে ভেতর ঢুকে যেতে পারতো৷ ভালোই হতো৷ তাহলে তোমাকে আর আমায় সহ্য করতে হতো না৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনাকে কতবার বলছি নিজ মুখে মৃত্যু কামণা করবেন না৷”
.
নির্বণ মলিন হাসি দিয়ে,
“ভগবানের পছন্দ হলে এক্সিডেন নিয়ে যেত৷ ভগবান আমায় পছন্দ করে না৷ সেজন্য আজ তোমার সামনে অবহেলার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷”
.
নির্বণের প্রতিটি কথা নিয়তির বুকে তীরের মতো লাগছে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না কি বলবে? কোন কিছু বলার ভাষা রাখেনি৷ নাম নিয়তি নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনি ঘরের এমন অবস্থা কেন করেছেন? আপনার ঘর অন্য কেউ পরিষ্কার করে দিবে৷ কেউ পরিষ্কার করে দিবে না৷ নিজের ঘর নিজে পরিষ্কার করবেন৷”
.
মলিন মৃদু হেঁসে,
“বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই৷ কেউ তো আর বাড়ির বউ হতে চাইনা৷ তাহলে একজন কাজের লোক জানেনা রুমে অপরিষ্কার থাকলে তাকে পরিষ্কার করতে হয়৷”
.
নিয়তি বুঝতে পারে তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নির্বণ এসব কিছু করেছে৷ নিয়তি নির্বণের হাতে চা তুলে দেয়৷ ইশারায় খেতে বলে৷ কিন্তু নির্বণ চা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে,
“আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে না৷ বেলকনিসহ রুমটা একদম পরিষ্কার যেন দেখতে পাই৷ কোন ময়লা থাকলে ফলাফল ভালো হবে না৷”
.
নির্বণ এক প্রকার থ্র্যাড দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ চলে যেতে নির্বণ বলে উঠে,
“দেখি নিয়তি তুমি কতদিন আমার থেকে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারো৷ তুমি একদিন নিজেই এসে বলবে আমায় ভালোবাসো৷ আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বের করেই ছাড়বো৷”
______

ছোঁয়া আবিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ আবির ছোঁয়া হাতে রিং পড়িয়ে আলতো করে ছোঁয়া হাতে একটা কিস করে৷ ছোঁয়া আবিরের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
.
আবির ছোঁয়ার চোখে ফুঁ দেয়৷ ছোঁয়া চোখ মেলে তাকালেই আবির বলে উঠে,
“ছোঁয়া তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না৷ কিন্তু তোমার লজ্জা মাখা মুখ দেখতে অসাধারণ লাগে৷”
.
ছোঁয়া আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবিরও ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে৷ ছোঁয়া বলে উঠে,
“সব কথা মুখে বলতে হয়না৷ কিছু কিছু কথা চোখে পড়ে নিতে হয়৷” [চোখে চোখে কথা হবে, ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দিবে। ]
.
আবির দুষ্টু হাসি দিয়ে,
“কি বুঝে নিবো? আমি তোমার দাদা হয়৷ নাকি অন্য কিছু৷”
.
আবিরের কথা শুনে ছোঁয়া ক্ষেপে যায়৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনি আমার দাদা হতে যাবেন কেন? আপনাকে আমি দাদা হিসেবে মানি না৷”
.
“তাহলে আমাকে কোন চোঁখে দেখো?”
.
ছোঁয়া ক্ষেপে বলে উঠে,
“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আর কিছু বলতে পারবো না৷ আমি আপনাকে দাদা মানি না৷”
.
ছোঁয়াকে আর পাই কে? ছোঁয়া ভুঁ দৌড় দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে৷ আবির আনমনে হেঁসে ফেলে। আজ তার মনের কথা ছোঁয়াকে বলতে পেরেছে৷
__________

নির্বণ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে নিয়তি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে রুম পরিষ্কার করছে৷ নিয়তির এমন অবস্থা দেখে নির্বণের খুব হাসি পাচ্ছে৷ নিয়তি মুখটা দেখে কষ্টের মাঝেও হাসি পাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে কাঁচের টুকরো তুলে গেলেই হাত কেটে ফেলে৷
নিয়তি “আউচ” বলার সাথে নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তির আঙ্গুলে হাত দেয়। কেটে যাওয়া আঙ্গুল মুখে নিয়ে রক্ত পান করতে থাকে৷ নিয়তি অবাক চোখে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মনে মনে বলে উঠে,
“আমি আপনাকে কেন কষ্ট দিচ্ছি আপনি একদিন নিজেই বুঝতে পারবেন৷”
.
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
.
“আপনি আমার ময়লা হাত মুখে নিলেন কেন? হাতে অনেক জীবানু আছে৷”
.
ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে,
“কোন কিছু পরোয়া করিনা৷ আর সামান্য জীবাণু আমার দেহের কিছু করতে পারবে না৷ তোমাকে এসব করতে হবে না৷ অন্য কেউ করে নিবে৷”
.
“নিয়তি নির্বণের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নিয়তি চলে যেতে নিলেই,
” মিস নিয়তি আমি তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলছি৷”
.
নিয়তি মাথা নিচু করে,
“না মানে৷ এখন তো আমার কোন কাজ নেই৷ তাই এখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে চাইনা৷”
.
“তুমি এই বাড়ির কাজের লোক। আমি তোমাকে যা বলবো তুমি তাই করবে৷ আমি যখন এখান থেকে তোমাকে চলে যেতে বলবো তখনই তুমি চলে যাবে৷”
.
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নিয়তির এমন স্বভাব দেখে নির্বণের মনে ঢোল বাজাছে৷ বলতে ইচ্ছে করছে ঢাকের তালে খুশিতে মেতেছে মন৷ কিন্তু কি আর করার? নিয়তির সামনে এমন কিছু করতে পারবে না৷
.
নিয়তিকে একবার রাউন্ড করে। মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ো৷ তোমাকে দাঁড়াতে বলিনি৷ বসে থাকতে বলেছি৷”
.
নিয়তি বিরক্তি সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে বলে উঠে,
“আপনাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে৷ নাকি আমাকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে৷ আমারও দিন আসবে৷ তখন আমিও দেখে নিব কি করেন আপনি৷ গর্ত খুঁজে পাবেন না৷”
.
নিয়তির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে,
“বকাগুলো আর একটু জোরে দিলে ভালো হতো৷ কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা৷ আসলে ইদানীং কানে কম শুনি৷”
.
নিয়তি ভেংচি কেটে সোফায় বসে পড়ে৷ নির্বণ উদ্ভট গলায় গান বলতে শুরু করে৷ না আছে গানের অর্থ৷ না আছে গানের সুর৷ এতো জোরে গান বলছে নিয়তির কান ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। নিয়তি কান ধরে নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণ পোষাক পড়ে নিয়তি বলে উঠে,
“নিয়তি এই দিকে শুনে যাও৷”
.
নিয়তির কানে হাত থাকায় নির্বণের কথা ততটা কানে যায়নি৷ গান মনে করেই নিয়তি একই জায়গায় বসে আছে৷ নিয়তির কান থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে,
“তোমাকে ডাকছি৷ কথাগুলো কি কানে যাচ্ছে?”
.
“হ্যাঁ আমাকে কি করতে হবে?”
.
“দেখতে পাচ্ছো না৷ আমার শার্টের সবগুলো বাটন খোলা৷ লাগিয়ে দাও৷”
.
নিয়তি মিহি কন্ঠে,
“আমি পারবো না৷ আমি আপনার শার্টের বাটন লাগিয়ে দিতে পারবো না৷”
.
“কাজের লোকদের মুখে কোন অজুহাত শুনতে চাইনা৷ কাজের লোক কাজ করবে না তা তো নয়৷”
.
নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে নির্বণের শার্টের বাটন লাগিয়ে দিচ্ছে৷ বাটন লাগানোর পর বলে উঠে,
“অফিসে যাওয়া আপনার বারণ৷ কোথায় যাচ্ছেন?”
.
“কেউ ভালোবাসে না৷ তাই নতুন কাউকে খুঁজতে যাচ্ছি৷”
.
চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here