গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১,পর্বঃ- ০৫,০৬
লেখা:- Rafsan Sydul
পর্বঃ- ০৫
ধর্ষিত হতে যাচ্ছে আরও একটি দেহ। যে রোজ ধর্ষিত হয়েও সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ সে আবারও কলঙ্ক জড়াতে যাচ্ছে নিজ দেহে স্ব-ইচ্ছায়। এ মহলে যে একশো একটি ধর্ষিতা নিজ কলঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছে.
ক্লান্ত শরীরে শুয়ে আছে অন্তু, বুকের উপর মহিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে ভয়ে।
“অন্তু?”
“হ্যাঁ! বলো।”
“তুমি কি আত্মা বিশ্বাস করো? কিংবা ভূত?”
“কেনো! হঠাৎ এগুলো জিগ্যেস করছো যে?”
“না এমনি। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে তুমি এ মহলে আর আসবে না।”
“কেন আসব না?. আমিতো রোজ আসব তোমার কাছে। তোমার স্পর্শে।”
“পারবে না। আমি তোমাকে ডাকব সময় হলে।”
“ডাকা পর্যন্ত যে আমার সহ্য হবেনা। আজকের স্বাদ আর কি কখনো ভুলতে পারি? আমার তো রোজ তোমাকে চাই। আমার কামনায় তুমি।”
“তুমি চাইলেও আর আসতে পারবে না। ”
বলেই হা হা করে হেসে দিয়েছে মহিমা। অন্তুর গলা থেকে রক্ত ঝড়ছে, কখন যে মহিমার দাঁতের আঘাত অন্তুর গলায় ফুটেছে কারোই খেয়ালে নেই।
চিৎকার দিয়ে ওঠে মহিমা। কাঁপা হাতে ইশারা করে দেখায় অন্তুকে। তার গলা থেকে রক্ত ঝড়ছে। সামান্য রক্ত। কুসুম গরম রক্ত। অন্তুর কাছে এটা সামান্য হলেও দেয়ালের ওপাশে থাকা অন্ধকার ছায়ার কাছে অমৃত। ছায়াটা দেখছে দুজনার দেহ খেলায়। ক্রোধ ক্রমশই বেড়ে গেছে তার। অন্তু নিজের গলা পরিষ্কার করে, জামা-কাপড় পড়ে অন্তু বাহির হয় রাস্তার উদ্দেশ্যে। সাথে মহিমাও।
নিস্তব্ধ এ মহলে ভয়ে ভয়ে প্রবেশ করে রমিজ। চারদিকে কড়া নজরে রেখেই হুট করে মহিমার রুমের মধ্যে প্রবেশ করে। একশো এক নাম্বার রুম। যে সাধারণত জমিদারের আমলে জলসা ঘর হিসাবেই ব্যবহৃত হত। তখন এ ঘরেই শতশত নারীর যৌনতায় মগ্ন থাকত জমিদার বাহাদুর শাহ।
আজও মহিমার শরীর ভোগ করছে এ ঘরেই। অদৃশ্য ছায়ার রুপে।
রমিজ মিয়া রুমের ভিতরে প্রবেশ করে দেয়ালে টাঙানো নীল পাথরে আবৃত
ছবিটাকে নামিয়ে ছোট্ট একটু ছিদ্র থেকে দেয়ালটাকে আলাদা করে ফেলে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে বেরিয়ে আসে গুপ্ত ঘর।৷ একশো এক নাম্বার রুমের নিচ দিয়েই শুরু এ গুপ্ত ঘরের। অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে নামছে রমিজ মিয়া, কিছু দেখার প্রয়োজন নেই তার অভ্যস্ত সে এ অন্ধকারে। কিছুক্ষণ নামার পরেই সামনে বড় এক বদ্ধ ঘর। দেয়ালে টাঙানো ছোট্ট বোর্ডে ধুলো জমে গেছে রমিজ মিয়া হাতের তালু দিয়ে বোর্ডের উপর থাকা ধুলো মুছে দিতেই স্পষ্ট হয় লেখাটা “পার- নেফার” মমি তৈরির কক্ষ।
পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে পাশের মশালটায় আগুন জ্বালিয়ে ঢুকছে ভিতরে। একশো দুইটি কফিন। চারদিকে সাজানো কফিনের মাঝের কফিনটা বাহাদুর শাহ এর। রমিজ মিয়া এসেছে সে কফিনের কাছেই। রজন গাছের আঠালো রস নিয়ে। এ রস মৃত দেহের পচনশীল রোধ করে সম্পূর্ণ ভালো রাখে। তার জন্যই রমিজ মিয়া এখানে এসেছে।
হঠাৎ করেই রমিজ মিয়ার মশালটা নিভে যায়, পকেটের দিয়াশলাই ও হারিয়ে গেছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কফিনের ভিতর থেকে অল্প অল্প করে শব্দ হচ্ছে,
রমিজ মিয়া মনে মনে দোয়া পড়ছে। উপরওয়ালাকে স্মরন করছে বারবার।
ঘাড়ের উপর শীতল কিছু অনুভব করে। ভয়ংকর ঠান্ডা সে স্পর্শ, হাতের আকৃতি হলেও সমস্ত শরীরে সে যতগুলো হাতের স্পর্শের অনুভব পাচ্ছে এক এক দু জোড়া নয়। চোখ বুঝে পিছু হাঁটছে। তারা রমিজ মিয়ার চোখ খোলার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছে। দেহের নরমাংস রমিজ মিয়ার বুকে মুখেও স্পর্শ করাচ্ছে। তবুও তাদের প্ররোচনায় আসেনি রমিজ মিয়া। হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির কাছে এসে চোখ খুলছে, সেই কক্ষের অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব সুন্দরী কতশত নারী। ফর্সা দেহে কোনো কাপড় জড়িয়ে নেই। রমিজ মিয়ার বয়স সত্তর। নিজের ভিতরে এখন একজন তরতাজা যুবকের শক্তি অনুভব করছে, লম্বা চুলের মেয়েটার কোমড়ের লাল তিল আকৃষ্ট করে। চোখে নেশা লাগে তার। সামনে যাবে তখনি হোঁচট খায় রমিজ মিয়া, ভ্রান্তি থেকে বেড়িয়েই তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে আসে। দেয়ালটা আগের মত করে চলে যায় রমিজ মিয়া। পড়ে থাকে নীল পাথরে আবৃত ছবিটি।
লাইব্রেরীর সবচেয়ে পুরানো সেইসব বইগুলো বের করে দেখছে মহিমা। এ শহরের সমস্ত ইতিহাসের দিনগুলো আজও সংরক্ষণ করা এ লাইব্রেরীতে। সে খোঁজ পেয়েই এসেছে মহিমা।
“পার- নেফার”
নামক বইটা ছুয়ে দিতেই কেমন যেন অদৃশ্য অনুভূতি আক্রমণ করে তাকে। কৌতুহল বইটা খুলতেই প্রথম পৃষ্ঠায় লাল রঙের রক্ত দিয়ে লেখা,
“তুমি যা খুজবে তা তোমার সামনেই পাবে। বইয়ের শেষ কিংবা শুরু দুটোর সমীকরণ এটাই, ১.০.১”
“চলবে”
গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১
লেখা:- Rafsan Sydul
পর্বঃ- ০৬
“তুমি যা খুজবে তা তোমার সামনেই পাবে। বইয়ের শেষ কিংবা শুরু দুটোর সমীকরণ এটাই, ১.০.১”
বইয়ের পৃষ্ঠা নামের মতই রহস্যে ঘেরা। “পার- নেফার” যাকে মমি তৈরির কক্ষ বলা হয়। সেই মমি বানানোর কক্ষে কত রহস্য লুকিয়ে থাকে তা অজানা আজও। সেরকম রহস্য এ বইয়ের মাঝে। প্রথম পৃষ্ঠায় লাল রক্তের আবরণ তার পরের পৃষ্ঠাগুলো একদম ফাঁকা। সাদা পৃষ্ঠায় বাধানো একটি বই।দ্বিতীয় থেকে শেষ পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ ফাঁকা। মহিমার বিশ্বাস ভাঙতে লাগল। কানের পাশ বেয়ে ঠাণ্ডা ঘাম হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করছে। এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে মহিমাকে ফিরতে হবে। বইটা সাথে করে নিয়ে আসে মহিমা অন্ধকার এ মহলে। গাড়িটা নিজেই চালিয়ে আসছে মহল পর্যন্ত। মহলের গেটে এসে মহিমা গাড়ি থেকে নামতেই মহলের পাশ দিয়ে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। ” অসময়ে কান্নার আওয়াজ? কে কাঁদছে এ নির্জনে, কেউ কি মারা গেছে? না না এ কি ভাবছি আমি?”
নিজের জিভে কামড় দিয়ে মহিমা চললো মহলের পাশ দিয়ে। দেখার জন্য কে ওখানে। যত কাছে আসছে কান্নার আওয়াজ ততোই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। একসময় কান্নার আওয়াজ থমকে যায়। মহিমা চারদিকে খুঁজেও কিছু পায়নি চারপাশে। কিন্তু এতক্ষণ কে কান্না করছিলো? কিছুই তো নেই। শেওলা পড়া দেয়ালের উপর খামচানো সে দাগ দেখে চমকে ওঠে মহিমা। এ দাগ কিসের? কিংবা কেনো এ দাগ? মনে হচ্ছে অসহ্য যন্ত্রণায় কেউ নিজের সমস্তকিছু এ দেয়ালের সাথে মিটিয়েছে।
রাত হয়ে গেছে চারদিকে। মহিমা চারদিক খুঁজে যখন কিছু পায়নি তখন সে রুমের মধ্যে এসে, নিজের সমস্ত কাপড় খুলে খাটে বসতেই একশো এক পাথরে বাঁধানো ছবিটি। নীল পাথরটি মহিমাকে কিছু ঈঙ্গিত করছে। মহিমা পাথরটি না ছুয়ে চোখ দিয়ে দেখে যাচ্ছে। চকচকে সে পাথর ক্রমশই উজ্জ্বল হচ্ছে। লাইব্রেরীর সে বইটা থেকে ভয়ংকর সব আওয়াজ ভেসে আসছে। মহিমা নিজের ভ্রান্তি ভেবে আবারও নীল পাথরে মনযোগ দেয়।
হঠাৎ মনে হলো মহিমার নরম দেহে কিছু এসে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ছে। মহিমা অনুভব করলেও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। মহিমা বুঝতে পারছে সে এসেছে। মহিমাও নিজেকে ঘুরিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে সোজা হয়ে শুইয়ে থাকে। অদ্ভুত সে শিহরণ, চোখ বুঝে সবকিছু অনুভব করতে করতে এখন তার নেশায় পরিনত হয়েছে এটা। ভাবতে অদ্ভুত লাগলেও অদৃশ্য কিছুর সাথে মিলিত হওয়া মহিমার আনন্দের প্রাপ্তি।
যতক্ষণ নিজের সুখের সাগরে তরি ডুবে আওয়াজ করছে তখন মোবাইলের
রিংটোন তার সমস্ত শরীরের ঘাম ঝরিয়েছে। অন্তু ফোন করেছে মহিমার কাছে। বিরক্তির সাথে মোবাইলটা রিসিভ করে বললো
“হ্যালো!”
“মহিমা, ভালো লাগছে না।”
“আমি কি করব তাহলে?”
“তুমি’ই তো আমার অবেলায় মন খারাপের কারণ। তোমার উষ্কখুষ্ক চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ, ভিজে ঠোঁটের স্পর্শে সুখের সাগরে দুজন ভিজছি”
“থাক! আর গভীরে যেতে হবে না।”
“এ গভীরতা যে খুব ফিরতে পারছি না”
“তাহলে কি করবে?”
“আমি আসছি তোমার কাছে। থাকব দুজন একসাথে অনেকটা সময়।”
“খবরদার, ভুলেও না।”
কথাটা বলার আগেই অন্তু ফোনটা রেখে দেয়। দেয়ালের আড়ালে আবছা ছায়াটাও ক্রুদ্ধ মনে প্রতিহিংসায় জ্বলছে। সামনেই ফার্মেসি, প্রটেকশন কিনে রওনা হয় ভালোবাসার কাছে। কে জানতো এ যাওয়াটা অন্তুর শেষ যাওয়া। জীবনের শেষ কথা তার। মহলের সামনে দাঁড়িয়ে অন্তু। আগেকার ভয় এখন সে পাচ্ছে না, মহিমা যখন মেয়ে হয়ে এ মহলে একা রাত কাটাতে পারে তাহলে এ মহলে তেমন কিছুই নেই। ভেবেই যখন অন্তু মহলের ভিতরে ঢুকবে তখনি পাশ থেকে একটা মেয়ে অন্তুকে ডাক দেয়।
“এইযে ভাইয়া”
অন্তু তাকায় তার দিকে, আকর্ষণী মেয়েটা এত রাতে এ নির্জন জায়গায় কি করছে? মেয়েটা আবার বললো..
“এক্সকিউজমি”
এবার অন্তু বাস্তবে আসে, বিপরীতে বলে
“জ্বি বলেন?”
“আসলে আমি একটা বাসার ঠিকানা খুঁজছিলাম কিন্তু পাচ্ছি না, আমাকে একটু সাহায্য করবেন?”
এমন এক মেয়ে সাহায্য চাইছে এত রাতে যদি সাহায্য না করি তাহলে আমার পুরুষত্বই হারিয়ে গেছে। কারো কাছে এসেছি তো কি হয়েছে অন্য কারো সাথে ট্রাই করতে তো দোষের কিছু না। ভারি দেহ, সাদা চামড়ায় আবৃত, কাজল কালো চোখ সব মিলিয়ে মাতাল করা এ নারী। ভাবে অন্তু তাত্ক্ষণিক জবাব দেয়
“হ্যাঁ অবশ্যই”
মেয়েটা মুচকি হেসে অন্তুকে ঠিকানাটা দেখায়। অন্তু তাকিয়ে আছে মহলের পাশ কাটিয়ে নির্জন গলির ভিতর থেকে পরের বাড়িটাই।
“চলেন” বলেই অন্তু তাকে তার পিছু আসতে বলে। মেয়েটাও অচেনা খেয়ালে অন্তুর পিছু হাঁটছে, নির্জন গলির ভিতর দাঁড়িয়ে অন্তু। এর মাঝে মেয়েটা অন্তুর পাশেই হাঁটছে, হঠাৎ করেই অন্তু ঝাপটে ধরে তাকে। পুরানো দেয়ালের সাথে হেলিয়ে। ছুটতে চাইছে মেয়েটা হতাশ সুগঠন শক্তিশালী মাংসপেশির সাথে পেরে উঠতে পারছে না মেয়েটা। নেশাগ্রস্ত অন্তু ঘাড়ে ঠোঁটে নিজের নেশার প্রভাব ফেলছে। শরীরের জামাটা কয়েক যায়গা থেকে টেনে ছিড়ে নেয় অন্তু।
মেয়েটা হালকা হাসি হেসে, মোহে আবৃত দেহ ছেড়ে ধুতরে যাওয়া চামড়ায় আবৃত এক কুৎসিত মেয়েতে পরিনত হতেই অন্তু চমকে উঠে। দু’পা পিছুতেই তার শরীরের সমস্ত শক্তি তার দূর্বলতায় পরিনত হয়। নড়তে পারছিল সে। মেয়েটা যখন তার পৈশাচিক রুপে ধারন করে তখন তার ছায়াটা দেয়ালের পিছনে থাকা ছায়াটার আকৃতি নেয়। ছলনাময়ী চাল চেলেছে সে, পুরুষের আত্মা তো পুরুষের’ই। পুরুষের দূর্বলতা সহজেই ধরে নিতে পারে।
পুরুষের হিংসা ভয়ানক, সেটা আত্মার ই হোক না কেনো। অন্তুর দেহ মাটি থেকে কয়েক হাত উপরে ঝুলছে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।
মহিমা ঘুমাচ্ছিল, হঠাৎ করেই ওর পিঠের উপর ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে, ঘুরে তাকাতেই দেখল অন্তু। মহিমা আবারও চোখ বুঝে। অন্তু মহিমার দেহটা তুলেই ফলকাটা ছুড়িটা মহিমার ডান চোখে আঘাত করেই বের করে ফেলে চোখটা, চিৎকার দিয়ে ওঠে মহিমা, উষ্ণ গরম তাজা রক্তের নেশায় আসক্ত অন্তু, চোখ চেপে ধরে আছে মহিমা অন্তু তার তৃষ্ণার্ত মুখ তার চোখের কাছে নিয়ে যাচ্ছে….
“চলবে”