শ্রাবণ_আঁধারে #পর্ব_২

0
879

#শ্রাবণ_আঁধারে
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“শাট আপ চিএা। ইউ জাস্ট শাট আপ। বাবার সাথে আমি কথা বলছি তো। আমাদের কথার মাঝে খানে তোর প্রবেশ নিষিদ্ধ!”

চিএা নির্বিকার নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আমার মুখ পানে চেয়ে আছে। চক্ষু থেকে তার জলের বারিধারা যেনো শ্রাবণ মেঘের মতোন বাহিত হচ্ছে। অপমান, ভর্ৎসনা, শালীনতাবোধে আঘাত সবটাই যেনো চিএাকে অভ্যন্তর থেকে নিংড়ে শুকনো কাঠের লাকড়ীতে পরিণত করছে। তার এই মুর্ছে যাওয়া বিবর্ণ রূপ আমার অন্তঃকরণে গাঢ় জং ধরার মতোন ফোরণ কাটছে। প্রতিবারের মতোন এবার ও বুকে চেঁপে রাখা লুকায়িত ক্লেশ আমি সকলের অন্তরালে রেখেছি। বাবার চক্ষু জোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আমি মালিন্য কন্ঠে বললাম,,

“প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বাবা। কারণ, এই প্রথম আমি তোমার মুখের উপর কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি। এছাড়া আর কোনো উপায় বুদ্ধি খুঁজে পাচ্ছি না আমি। চিএা আমার বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই আমরা একই স্কুল, একই কলেজ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এসেছি। শাস্ত্রে যেমন ছোট, বড় জাত আলাদা করে দেখা হয় নি, প্রত্যেকটা জাতকেই সমভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তেমনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিধ পাঠ্যপুস্তকে ও ছোট, বড় জাতকে আলাদা করে দেখার কোনো প্রথা এই অব্দি আমার দৃষ্টিলোকন হয় নি। তদ্রুপ বর্হিবিশ্বের অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থে ও এই কু-প্রথা চালু নেই। কেবল মাএ তোমার মুখ থেকেই জাত বাতের পার্থক্য নিয়মিত শ্রবণ করে আসছি। ছোট বেলা থেকে এই একই কথা ক্রমান্বয়ে শুনে আসতে আসতে আমার কর্ণকুহরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। মস্তিষ্কে মৃদ্যু ব্যাথা তৈরি হচ্ছে। চিএাকে আমি সামান্য আবির পড়িয়েছি মাএ। বন্ধু হিসেবে সেই অধিকার আমার আছে। শুধু চিএা কেনো? আমি আমার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের ও চাইলে আবির মাখাতে পারি। তবে চিএার ক্ষেএেই কেনো তোমরা জাত, বাতকে অহেতুক বিশাল অর্থে দেখছ? চিএার স্বভাব, চরিএে তকমা লাগাচ্ছ?”

পরমুহূর্তে হাত জোড় করে আমি বাবাকে বললাম,,

“এটা আর করো না বাবা হাত জোর করছি আমি। প্রতিটা সম্পর্ককে সহজ, সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করো। স্নেহ, প্রীতি দিয়ে প্রতিটা জাতকে সম্মান করার চেষ্টা করো। কারণ, ঈশ্বর আমাদের একই হাতে তৈরি করেছেন, একই হাতের স্পর্শ লেগে আছে আমাদের প্রতিটা মনুষ্যের সর্বাঙ্গে৷ যেখানে সৃষ্টিকর্তাই আমাদের আলাদা করতে শিখেন নি, সেখানে আমরা অধম মনিষ্যীরা কেনো নিজেরাই নিজেদের জাতকে আলাদা করব? আমরা নিশ্চয়ই ঈশ্বরকে টপকে ধৃষ্টতা দেখাতে পারি না? যদি তুমি একজন মনুষ্যকে তার জায়গা থেকে যথেষ্ট সম্মান করতে পারো তবেই তুমি আদৌতে একজন প্রকৃত মনুষ্য হিসেবে নিজেকে জাহির করতে পারবে। আমি ও তখন তোমাকে বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানের পাশাপাশি পরম অহং ও বোধ করব।”

বাবাকে কোনো রূপ প্রতিত্তুর করার সুযোগ না দিয়ে আমি চিএার হাত ধরে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে পিছু ঘুড়ে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
কবি বড়ু চন্ডীদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণীটি হয়তো তুমি ভুলে গেছো বাবা। তাই পুনরায় মনে করিয়ে দিলাম। এই উক্তিটি আমার প্রতিটা মর্মে মর্মে গেঁথে আছে বলেই, আমি কস্মিনকালেও ছোট, বড় জাতের পার্থক্য খুঁজে দেখি নি!”

বিরক্তি ভর করল বাবার কুঁচকে আসা কপালের ভাঁজে। বাবার অসহিষ্ণু ভাবভঙ্গিতে কোন রূপ ভ্রুক্ষেপ না করে আমি কদম বাড়ালাম স্ব অর্ধাঙ্গিনী সমেত বাড়ির আঙ্গিনার গন্তব্যে। দুতলা সিঁড়ি বেয়ে এক তলার সিঁড়িতে কদম বাড়াতেই বাবার বজ্রকন্ঠের আওয়াজ আমার কর্ণগভীরে ভয়াল সাংঘাতিত ভাবে বাজতে আরম্ভ করল। বাবা গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে আমার মা কে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,

“সুলেখা। তোমার পুএকে আজই কাশিয়ানী পাঠানোর ব্যবস্থা করো। পুনরায় তার মুখাপেক্ষী হতে চাই না আমি। বাবাকে যে যথেষ্ট সম্মান করতে পারে না, মুখে মুখে তর্কের ঝুড়ি নির্গত হয় তাকে পুএ হিসেবে গণ্য করতে আমি দুবার ভাবব।”

চিএা এইমাএ মুখের বুলি ফুটালো। কম্পিত কন্ঠে চিএা নির্বাক ভাবমূর্তি নিয়ে আমার মুখপানে চেয়ে বলল,,

“কেনো করলি তুই মুখে মুখে তর্ক? কথার পিঠে কথা আওড়ে জেঠুকে এতোটা নির্মমভাবে আঘাত করতে পারলি? মানে এই অন্যায় কাজটা করতে তোর বিন্দুমাএ ও কুন্ঠাবোধ হয় নি? এতোটা অবনতি তোর কবে হলো আরাধ্য?”

“তোর জেঠুকে আমি ইচ্ছাবশত আঘাত করতে চাই নি চিএা। তবে তোর জেঠু আমার প্রেমকে আঘাত করেছে। মনুষ্য প্রেমকে আঘাত করেছে। একটা মানুষের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় না? তখন সে বাপের বাপকে ও কথা শুনাতে কুন্ঠাবোধ করে না। আমার ও কুন্ঠাবোধ হয় নি। বরং এই ভেবে ভালো লাগছে যে, প্রথমবারের মতোন আমি প্রেমের বিরুদ্ধে করা আঘাতকে বিপরীতভাবে আঘাত করতে পেরেছি। তোর ও উচিত এই ভেবে খুশি হওয়া।”

চিএা অধৈর্য্য কন্ঠে বলল,,

“সব বুঝলাম, তবে তুই আমার সিঁথিতে হঠাৎ আবির পড়ালি কেনো আরাধ্য? এই আবিরে পূর্ণ রঙ্গিন সিঁথি নিয়ে আমি বাড়ি ফিরব কোন পথে? পাড়ার লোকজন এই রূপে আমাকে দেখলে কি ভাববেন বল তো? আর বাবাকেই বা আমি মুখ দেখাবো কিভাবে?”

“নির্বোধের মতোন কথা বলিস না চিএা। আজ শুভ দোল পূর্ণিমা। সব গোএের ছেলে, মেয়ে, পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে এই দিনে আবির খেলে। তুই ও খেলেছিস। এতে কোন জন তোকে কি বলবে, কি ভাববে একটুখানি অবগত করবি আমায়?”

চিএা ছটফটিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,,

“আমি কাউকে কিছু অবগত করতে পারব না। হাতটা ছাড় তুই৷ আমি এক্ষনি শুভিদের পুকুরঘাটে গিয়ে সিঁথি ধুঁয়ে আসব। এই রূপে আমি কোনো মতেই বাড়ি ফিরতে পারব না।”

আপন মনে আমি আওড়ে বললাম,,

“তোর সিঁথি যে আমি কিছুতেই ফাঁকা হতে দিবো না চিএা। এতে তোর আরাধ্যের অমঙ্গল হবে। আজ দেখব আমি, আমার অনুনয় তোর কাছে কতোটা রক্ষনীয়!”

গলা খাঁকিয়ে আমি চিএার মুখ পানে চেয়ে বললাম,,

“একটা আবদার ছিলো তোর কাছে রাখবি?”

“কি?”

“আগে বল রাখবি?”

“উফফ, বলেই দেখ না।”

“সিঁথির আবিরটা মুছিস না প্লিজ। আমি চাই তুই রোজ নিয়ম করে সিঁথির একটা কোণায় হলে ও একটু আবির মেখে রাখিস। অন্তত একটু আবির ছুঁইয়ে রাখিস।”

চিএা আকস্মিক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বলল,,

“তোর মাথাটা সত্যিই গুলিয়ে যায় নি তো আরাধ্য? কি যা তা বলছিস এসব তুই?”

আমি অট্ট হেসে বললাম,,

“আমার অনুনয় রাখার যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে রাখিস নতুবা ছেড়ে দিস। তোর ইচ্ছে শক্তিতে আমি কোনো রূপ হস্তক্ষেপ করতে চাই না!”

“বিবাহিত মহিলারাই শুধু সিঁথিতে রোজ সিঁদুর পড়ে আরাধ্য৷ আমি এখনো কুমারী। প্রশ্নই আসছে না রোজ সিঁদুর পড়ার।”

“আমি আবির পড়তে বলেছি, সিঁদুর নয়!”

চিএা জিগ্যাসু দৃষ্টিতে বলল,,

“কেনো? রোজ কি হলি উৎসব হবে?”

আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“কেনো? রোজ তোর সিঁথিতে আমাকে আবির রূপে ধারণ করা যায় না?”

চিএা হতবাক হয়ে আমার পানে চেয়ে আছে। নেতিবাচক হেসে আমি চিএার হাত ধরে বাড়ির আঙ্গিনা পাড় হয়ে পাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে পা বাড়াতেই বন্ধুমহলের শরনাপন্ন হলাম। ফাজিলের দল গুলো সুযোগ বুঝে আমাকে আবিরের রঙ্গে বিশ্রীভাবে রাঙ্গিয়ে দিলো। এই প্রথম আমাকে আবির মাখাতে পেরে তারা যেনো খুশিতে ফেঁটে পড়ছিলো। আমি ও কিন্তু কম যাই না, সবক’টাকে ধরে ধরে রঙ্গিন ভূত বানানোর জোগাড়ে প্রয়াত ছিলাম। চিএা জনাজীর্ণভাবে রাস্তার পাশ ঘেঁষে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুমহলের সাথে মিশছে না পর্যন্ত। চিএার এহেন অস্বাভাবিক ভাব মুর্তি দেখে নচিকেত হঠাৎ চিএার দিকে ধ্যান দিয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকে চিএার সম্মুখে দাঁড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল,,

“তোর সিঁথিতে ওটা সিঁদুর না আবির চিএা?”

চিএা খাঁপ ছাড়া কন্ঠে বলল,,

“আআবির।”

“এতো চওড়া করে তোর সিঁথিতে আবির পড়ালো কে?”

নীল রঙ্গ হাতে নিয়ে আমি নচিকেতকে ঘুড়িয়ে মৃদ্যু হেসে নচিকেতের গালে নীল রঙ্গটা মেখে বললাম,,

“আমি পড়িয়েছি। কেনো? তোর কোনো প্রশ্ন আছে?”

নচিকেত দুষ্টু হাসি হেসে চিএার মুখ পানে চেয়ে চিএার সিঁথিতে আবির পড়াবার প্রস্তুতিতে প্রয়াত হয়ে বলল,,

“তবে আমি কেনো বাদ পড়ব? তোর সিঁথিতে আবির পড়ানোর অধিকার আমি ও রাখি!”

ঈর্ষায় আমার নেএকোটর থেকে নেএ জোড়া বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। চোয়াল শক্ত করে আমি হম্বিতম্বি হয়ে নচিকেতের ডান হাতের বাহুটা আমার সুঠাম হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে দৃঢ়ভাবে চেঁপে ধরে বললাম,,

“মাএাতিরিক্ত অনাধিকার চর্চা খাটাতে আসিস না নচিকেত। নিজের সীমা অতিক্রম করার দুঃসাহস দেখাস না ভ্রান্তিতে ও। চিএার প্রতি আমার যেমনটা জোর আছে, তোর এর এক কোণা ও নেই। দ্বিতীয়বার সীমা লঙ্ঘনের অত্যধিক সাহস দেখাতে আসিস না। ফল কিন্তু খুব একটা আশানুরূপ হবে না।”

নচিকেত ছটফট করে অধিক রুষ্ট কন্ঠে বলল,,

“চিএার প্রতি তোর কিসের এতো অধিকার আরাধ্য? আজ তোকে বলতেই হবে। চিএার সাথে আড়ালে সামান্য কথা বলা নিয়ে ৫ মাস পূর্বে তুই আমার বড় দাদাকে খেলার মাঠে বেঘড়ক পিটিয়েছিলি। আজ এর কৈফিয়ত তোকে দিতেই হবে আরাধ্য।”

“তোর বড় দাদাকেই জিগ্যেস করে নিস চিএার প্রতি আমার কিসের এতো অধিকার। উনি পই পই করে তোকে প্রথম থেকে শেষ অব্দি সমস্তটা হিসেব দিবেন।”

নচিকেতের হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে আমি চিএার হাত ধরে বন্ধু মহল থেকে বের হয়ে এলাম। চিএা কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“বল না, কেনো তুই ঐদিন নিরন্জ্ঞন দা কে এতোটা নির্মমভাবে মেরেছিলো? কি অন্যায় করেছিলেন উনি?”

আমি শক্ত কন্ঠে বললাম,,

“তোর সাথে কথার বলার সাহস দেখিয়েছিলেন তাই।”

“শুধুমাএ আমার সাথে কথা বলা নিয়ে তুই এতোটা রাগতে পারিস না আরাধ্য। নিশ্চয়ই সাংঘাতিক কোনো বিষয় ছিলো। বিষয়টা কি আরাধ্য?”

প্রসঙ্গ পাল্টে আমি ম্লান হেসে চিএার সিঁদুর রাঙ্গা সিঁথিতে তাকিয়ে পর মুহূর্তে শূণ্য কপালটায় দৃষ্টিপাত করে গম্ভীর কন্ঠে বললাম,,

“কপালে বিন্দি পড়িস নি কেনো? কেমন খাঁপ ছাড়া লাগছে!”

শুভীদের (বান্ধুবী) বাড়ির গলিতে এসে কয়েকদল কিশোর-কিশোরীর হাতে আবিরের থালা দেখা মাএই আমি লাল আবিরটা তর্জনী আঙ্গুলে মাখিয়ে চিএার কপালে গোল বিন্দি এঁকে দিলাম। মোহগ্রস্ত দৃষ্টিতে চিএার অতিরঞ্জিত আদলে এক ধ্যানে চেয়ে আমি মুগ্ধিত কন্ঠে বললাম,,

“এবার দেখতে পরিপূর্ণ লাগছে। ৫ মাসে বিন্দি পড়ার অভ্যেসটা নিশ্চয়ই ছাড়িয়ে গেছে?”

জানি না আচমকা চিএার কি হলো আবিরের থালা থেকে লাল রঙ্গ তর্জনী আঙ্গুলে মেখে চিএা আমার কপালে লম্ব তিলক এঁকে ম্লান হেসে আমার মুখপানে চেয়ে বলল,,

“তিলকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো সাক্ষাৎ শ্রীকৃষ্ণ তুই, তিলক ছাড়া মনে হয় মুর্ছে যাওয়া নিষ্প্রাণ একটা জলচ্ছবি।”

আমি মিহি হেসে বললাম,,

“আর তোকে? সাক্ষাৎ দেবীর প্রতিমূর্তি মনে হচ্ছে। কতো দিবা স্বপ্নে তোকে এই রূপে কল্পনা করে প্রভাতের ঘুম উচ্ছন্নে দিয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ক্লান্তি ভর করা দু চোখে অনিদ্রার ছাপ পড়ত প্রতিবারই। তবে আজ থেকে মনে হচ্ছে সমস্ত দুঃশ্চিতা আমার মস্তিষ্ক থেকে বিদায় নিয়েছে। যাওয়ার সময় প্রতিধ্বনি তুলে বলে গেছে, আজ থেকে তুই নিশ্চিন্ত আরাধ্য। সাক্ষাৎ দেবী তোর ভাগ্যে জুড়ে গেছে।”

চিএা ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে বলল,,

“শেষ কথাটা বুঝলাম না! দেবী তোর ভাগ্যে জুড়ে গেছে মানে?”

“কিছু না। সব কথার এতো মানে খুঁজতে যাস কেনো?”

“তুই আমার জন্য এতো ভাবিস কেনো আরাধ্য? পাড়ার সব ছেলে ফেলেদের সাথে ও ঝগড়া করিস। ঐ দিন তো নিরন্জ্ঞন দা কে ও খুব পিটিয়েছিলি। কেনো বল তো? এতো সর্তক কেনো আমাকে নিয়ে?”

যতোরাজ্যের ভাবুক চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমি ম্লান কন্ঠে বললাম,,

“সদ্য ফোঁটা নীল পদ্মপাতায় কিছু শব্দ লিপিবদ্ধ রইল, হঠাৎ যদি আমি স্তব্ধ হয়ে যাই, চেয়ে দেখিস নিবার্ক শব্দরা ও আলোড়ন তুলে বলবে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি!”

চিএা হাঁটা থামিয়ে নির্বাক চিত্তে বলল,,

“তার মানে তুই আমাকে ভালোবাসিস আরাধ্য?”

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,,

“ধ্যাত, আমি তো ছন্দ বললাম মাএ। ভালোবাসার মানে তুই বুঝিস নাকি? তোর কাছে তো জাত বাতের উর্ধ্বে ভালোবাসার কোনো স্থান নেই।”

ভাবশূণ্য হয়ে আমি পিছু ফিরে চিএার ডান হাতটা পুনরায় আঁকড়ে ধরে অগ্রে কদম বাড়িয়ে বললাম,,

“কাকুর শরীরটা এখন কেমন? রক্তচাপ এখনো বাড়ে?”

“তা আবার বন্ধ আছে নাকি? এখন তো আবার নতুন করে হার্টে অসুখ ধরা পড়েছে। পূজো পাঠে ও যেতে পারে না নিয়মিত।”

উদ্বিগ্ন কন্ঠে আমি চিএার দিকে চেয়ে বললাম,,

“সংসার চলছে কিভাবে?”

চিএা জোরপূর্বক হেসে বলল,,

“কোনো রকমে।”

“নাচের ক্লাসে নিয়মিত যাচ্ছিস তো?”

“নাচ শিখে আর কি হবে? পরের ঘরে গেলে নিশ্চয়ই আমার নাচকে কেউ প্রাধান্য দিবে না। তখন তো আমার জীবনটাই হেলা ফেলার সামগ্রী হয়ে যাবে! নাচ তখন চুলোয় যাবে।”

“এতো জলদি কিসের? ভবিষ্যত ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।”

“ভবিষ্যত কোথায়? বাবা তো এখন থেকেই আমার জন্য পাএ খুঁজছেন!”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here