অস্পষ্ট_সে(৪র্থ পর্ব)

0
763

গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে(৪র্থ পর্ব)
লেখায়ঃ#তাজরীন_খন্দকার

এই মানুষটার আচরণ এতো অস্পষ্ট কি করে হতে পারে?
কি আছে এর পেছনে?
ভাবতে ভাবতে চিত্রার মাথায় যেন পাথর চেপে বসলো।

এদিকে দ্বীপ ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে, এর মধ্যে কিছু কথা এমন ছিল

___অথৈ আমাকে তোমার মতো ভেবো না ওকে? কিভাবে ভাবছো হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে আমার মেলামেশা হয়ে যেতে পারে! আরে আমার তো এখনো কথা বলতেই ইচ্ছে করেনি। আর হবেও না বুঝছো?

এইসব বলতে বলতে দ্বীপ ফোন হাতে ডানপাশের দরজা খোলে বারান্দায় চলে গেলো। চিত্রা ড্রেসিংয়ের সামনে রাখা টুলটায় ধপাস করে বসে পড়লো। দ্বীপের কোনো কথা কিংবা কাজ মিলাতে পারছেনা। শেষে যে বললো,, দ্বীপকে অথৈ এর মতো না ভাবতে, তার মানে অথৈ এর কোনো দূর্বলতা আছে। আর ফোনেও অথৈ বলছিলো তাদের কোনো ব্যপার নিয়ে ঝামেলা চলছে।
কি হতে পারে সেটা তার মাথায় আসছেনা৷ ঝামেলা চললে আবার কথা হচ্ছে কেন ওদের? আবার দ্বীপই বা ওর কাছে নিজেকে ভালো বুঝাতে চাচ্ছে কেন? এদিকে চিত্রার সাথে দ্বীপ এমন ব্যবহার করছে কেন??
নাহহ এই ভাবনায় চিত্রা আর পেরে উঠছেনা।

সে কোনো রকম চুলের পেঁচ খুলে তারাতাড়ি শাড়ী বদলে নিলো। বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হবে তখনি সে বাঘ দেখার মতো চমকে উঠলো।
একদম বরাবর দ্বীপ দাঁড়িয়ে আছে, সে দরজা থেকে বের হবে সেই রাস্তাটাও আঁটকে রেখেছে।
এই মূহুর্তে দ্বীপের এই কান্ড চিত্রার কাছে অসহ্যকর লাগছে। এক মেয়ের সাথে লটরপটর করবে আবার এদিকে চান্স নেওয়ার চেষ্টাও করবে,কি পেয়েছে আজব!

এই প্রথম যেন চিত্রা চোখের সামনে একটা দুমুখো রূপ দেখতে পাচ্ছে। এতো ওভার এক্টিং কিভাবে করতে পারে মানুষ, সেটা এই ছেলেকে না দেখলে চিত্রা কখনোই বুঝতে পারতোনা। এতো মিথ্যা কথা ছি!
তবে চিত্রা মোটেও ছেড়ে দেওয়ার মেয়েনা। আজকে এই বাড়িতে নতুন বউ, তাই প্রবল ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করছে।
কিন্তু অনেকবার এদিক ওদিক পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও যখন দ্বীপ তার পথ ছাড়ছিলো না, তখন হাত দিয়ে দ্বীপের বুকের উপরে জোরে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরে আসলো। দ্বীপ এতো জোরে ধাক্কা খেয়ে বাঁকা চোখে চিত্রার দিকে তাকালো।

দ্বীপ বুঝে গেছে চিত্রার এমন রেগে যাওয়ার কারণ। সে কিছু না বলে একগাল হেসে বলতে লাগলো..
___ তুমি আমার কথায় রেগে গেছো তাইনা?
ভাবছো দুইদিকে আমি সফল অভিনয় করে যাচ্ছি!
আসলে হয়েছে কি, ওই যে মেয়েটা সে সুবিধার না।
তার আরো অসংখ্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে যেগুলো আমি জানি। সেদিনও এই ব্যপার নিয়ে তার সাথে আমার কঠিন ঝামেলা হয়েছে।
কিন্তু আমি বেশি রিয়েক্ট করে তাকে ছেড়ে আসতে পারিনি,,কারণ আমার যে চাকরিটা সেটা শুধুমাত্র ওর মেঝো চাচ্চুর জন্য হয়েছে। সে চাইলে এক মূহুর্তে আমার চাকরিটা খেয়ে দিতে পারে। সেই ভয়ে আমি তার সাথে একের পর এক মিথ্যা বলে যাই। মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে এই বিয়েতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম,,এটা বলেই তাকে বুঝিয়েছি। এরপর যা কিছু তো তুমি জানোই।

চিত্রা দ্বীপের কথায় হ্যাঁ কিংবা না কোনো জবাব দিলো না।

চিত্রা বিছানা ঠিক করতে ব্যস্ত, এদিকে দ্বীপ আস্তে আস্তে এসে চিত্রার পেছনে দাঁড়ালো। চিত্রা সেটাকে না দেখার ভান করে তার মতো গুছানোতে লেগে আছে। দ্বীপ এদিক ওদিক একটু পায়চারী করে আবারও চিত্রার কাছে আসলো। এবার সাহস করে চিত্রার অনেকটাই কাছে এসে বললো..
___ শাড়ীই যখন পরবে তাহলে সেটা বদলালে কেন?

বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো চিত্রার জবাবের আশায় কিছু কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবার বলতে লাগলো..
___ অবশ্য আমার বউটাই সুন্দর, যেটা পরে একদম পরীর মতো লাগে! আর ঠিকি আছে ওই শাড়ীটা ভারী ছিল তাইনা? ভালো হয়েছে বদলে ফেলেছো।

এবারও চিত্রা কোনো জবাব দিলো না। দ্বীপ এবার চিত্রার ১ সেন্টিমিটার ব্যবধানে দাঁড়িয়ে, ধীরে ধীরে হাতটা কোমরের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে চিত্রার কাঁধে থুতনি ঠেকাবে ঠিক সেসময় চিত্রা বিছানা থেকে স্টিলের চার্জার টর্চটা নিয়ে চোখ বড় বড় করে রেগে বললো..
___খবরদার আমাকে ছুঁতে আসবেন না, আপনার কোনো কথা আমি বিশ্বাস করিনা। আপনি ওইদিকে ঠিক রাখতে মিথ্যা বলেন, আবার আমাকেও মিথ্যা বলে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। আবার কাছে দ্বারে আসার চেষ্টা করলে এটা দিয়ে একদম মাথাকে দুভাগ করে দিবো! কালসাপ একটা। মেয়ে দেখলে হুঁশ থাকেনা তাইনা?

চিত্রার হঠাৎ এমন রূপ দেখে প্রথমে দ্বীপ লাফিয়ে উঠে বুকের উপর থুঁ থুঁ দিয়ে লা হাওলা পড়তে শুরু করে দিলো…

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here