“রূপগঞ্জের রূপসী” পর্ব- ৯

0
1185

“রূপগঞ্জের রূপসী”
পর্ব- ৯
(নূর নাফিসা)
উৎসর্গে – Imran Mahmudul
.
.
“সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও কুরআন পড়ে আর ঘুমায়নি নাফিসা। মাকে কিছুক্ষণ সাহায্য করলো কাজে, কেননা মেহমান আসবে বলে সকাল থেকেই মা লেগে গেছে কাজে। তিনিও কাজের ফাঁকে বলে উঠলেন,
“নাফিসা, আজ ল্যাবে যাবি না।”
“ওফ! মা, আমি বাসায় থেকে কি করবো! সবাই আমার পরিচিত মেহমান ই। আর কাল ও সবার সাথে আমার দেখা হয়েছে।”
“বেশি কথা না বলে যা বলছি তা কর।”
“ধুর! আমি যাবোই, আমার যাওয়া প্রয়োজন।”
মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমে এসে ল্যাবের জন্য রেডি হতে লাগলো সে। হঠাৎ মেসেজের কথা মনে পড়ে গেলো! সত্যিই যদি আবার কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তাকে! তখন কি হবে! থাক! সব দিক থেকে যখন বাধা আসছে, আজ না হয় না ই যাক! অত:পর তার ফ্রেন্ড মিরাকে কল করে জানিয়ে দিলো আজ যাবে না সে।
তারপর সবকিছু গুছিয়ে আবার ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখতে লাগলো। সাঈদ এসে কান ঝালাপালা করে ফেলছে রিমোর্ট দেওয়ার জন্য। সে কার্টুন দেখবে। তারপর রিমোট নিয়ে কতক্ষণ যুদ্ধ চললো ।আর সেদিকে কিচেনে থেকে চেচামেচি শুনে মা কথার বুলেট ছুড়ে বকে যাচ্ছে। বিজয়ী হলো সাঈদ। দুষ্টুর নায়ক দের সাথে কি আর পারা যায়! রিমোর্ট তো নিয়েছেই তারউপর সাঈদের মন্তব্য,
” তুমি বাসায় না এলেই ভালো থাকি। কেন যে আসো!”
“আমি বাসায় না থাকলে ভালো থাকিস তাই না! দাড়া দেখাচ্ছি তোকে কার্টুন। এখন আমি টিভি অফ করে দিবো, প্রয়োজনে ফ্ল্যাট এর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ অফ করে দিবো।”
কথাটা বলার সাথে সাথে সাঈদের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে যেই দৌড়ে ড্রয়িং রুম থেকে পালানোর চেষ্টা করতে গেলো, মনে হলো কারো সাথে ধাক্কা খেলো! এবার সামনে তাকিয়ে দেখতে পেল ইমরানকে! সাথে সাথে দুই কদম পিছিয়ে গেলো সে! সাঈদকে মারতে পেরে যেই আনন্দটা পেয়েছিলো তা মুহুর্তেই বিলীন হয়ে গেছে! ধাক্কা খাওয়াতে চরম লজ্জা পেয়েছে সে! সাঈদ তাকে মারার জন্য উঠে আসছিলো, ইমরানকে দেখে সে আর এগিয়ে আসেনি। নতুবা রিপিট করে দিতো মাইর! ধাক্কা খাওয়ায় নাফিসার চশমাটা একটু নড়ে গিয়েছিল তা ঠিক করে নিলো সে। তবে ভাবনা একটাই ছিলো, সে এখানে এলো কিভাবে! কলিং বেল বাজলো না! দরজা খুললো কে!
অত:পর মনে হলো, একটু আগে বাবা বাইরে বেরিয়েছে তাহলে তারপর আর দরজা লাগানো হয়নি! নাফিসা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো একে একে সবাই ঢুকছে। আপুরা আগেই ঢুকেছিলো কিন্তু তাদের খেয়ালই করেনি! কি করে করবে! দুজন তো ঝগড়ায় মেতে ছিলো! ইশ! ধাক্কা খেয়ে কি লজ্জাটাই না পেলো সে। ইমরান উক্ত জায়গা থেকে না নড়ে এখনো তার সামনে দাড়িয়ে আছে বিধায় কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না নাফিসা। অত:পর ইমরানকে টপকিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে বাচ্চাদের দিকে এগিয়ে গেলো দুষ্টুমি করতে। এবার ইমরান সোফায় বসেছে পাবেলের সাথে। নাফিসাকে এখানে দেখে মা এসে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” তোর এইসব বাচ্চামো আর গেলো না! যা গিয়ে গোসল কর!”
নাফিসা আর দেরি না করে চলে গেলো গোসল করতে। গোসল শেষে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো তার রুমের বারান্দায় ইমরান ও পারভেজ ভাইয়া দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নাফিসা আবার বাথরুমে এসে ভেজা কাপড়চোপড় রেখে রুমে এলো। কোনোমতো চুল মুছে মাথাটা আচড়ে নিলো সে। পারভেজ তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকে ডাকলো। অত:পর নাফিসা বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
” জ্বি ভাইয়া?”
“নাফিসা, এই মেসেজ কে সেন্ট করেছে?”
নাফিসা গতরাতের মেসেজ দেখে মনে মনে বললো,
“ওফ! ভাইয়ার হাতে কিভাবে পড়লো!”
অত:পর প্রকাশ্যে জবাব দিলো,
“জানিনা ভাইয়া। কাল রাতে এসেছে।”
“ড্রয়িং রুমে তোমার ফোন ছিলো, মনে হয় তোমার ফ্রেন্ড কল করেছে। ফোন হাতে নিতেই অসাবধানতা বশত টাচ লেগে মেসেজে চোখ পড়লো। মেসেজটা দেখে এই নম্বরে ডায়াল করেছি কিন্তু ফোন বন্ধ! তোমাকে কি কেউ ডিস্টার্ব করে?”
” না ভাইয়া।”
“তাহলে এই মেসেজ কে পাঠাতে পারে! তোমার কাউকে সন্দেহ হয়? এসব নিয়ে তো ফ্রেন্ডের মাঝেও দুষ্টুমি ভালো না। দেখো যদি এমন কোনো প্রব্লেম থাকে তাহলে বলো আমাকে।”
“না ভাইয়া এমন কিছু নেই।”
“আগে কখনো কেউ ডিস্টার্ব করেছে?”
“২বছর আগে আমাদের বয়সের একটা ছেলে আমাকে ফলো করে পিছু পিছু বাসায় আসতো, তারপর বাবা বুঝতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং শাসিয়ে দেয়। এরপরও আসতো। আমাকে ডিরেক্টলি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলো। বিষয়টা বাবাকে জানালে বাবা তাকে রাস্তায় পেয়ে দুইটা থাপ্পড় দেয়। এবং কড়াভাবে পুলিশের ভয় দেখিয়ে শাসিয়ে আসে। এরপর আর কখনো আমার সামনে আসেনি। আর এমন কোনো প্রব্লেমও হয়নি। তাছাড়া আমি এই সিম তো নতুন নিয়েছি। আমার পরিবার আর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া কারো কাছে নম্বর নেই। হতে পারে, এটা ভুলে আমার ফোনে এসেছে।”
“হুম, হতেও পারে। আচ্ছা, তবুও সাবধানে থেকো।”
“হুম।”
“আচ্ছা, রেডি হয়ে বাইরে এসো। আমরা যাই।”
নাফিসার হাতে ফোন দিয়ে পারভেজ বাইরে বেরিয়ে গেলো। পিছু পিছু ইমরানও। নাফিসাও বারান্দার দরজা দিয়ে রুমে প্রবেশ করতে যাবে, তখনই ইমরান আবার ব্যাক করে তার সামনে এসে দাড়ালো। নাফিসা কিছুটা ভরকে গিয়ে আবার একটু পিছিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। হঠাৎ এভাবে আসায় সে চমকে গিয়েই বলে উঠলো,
“আপনি? কিছু বলবেন?”
“হুম।”
“কি?”
ইমরান ব্রু সামান্য কুচকে বললো,
“মনে হচ্ছে আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন। সামনে এলে বারবার পালানোর চেষ্টা করেন। কারণ কি?”
নাফিসা ব্যাপারটা হাস্যকর ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করতে মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
“এরিয়ে চলবো কেন! আর নাফিসা পালানোর মেয়ে না।”
“রেইলি?”
“অফকোর্স!”
“তা আমাকে ঠিক চিনতে পেরেছেন তো, মিস নাফিসা?”
“হ্যাঁ, আপনাকে না চিনার কি আছে! আপনি একজন আর্টিস্ট। কমবেশি সবাই আপনাকে চিনে। তাহলে আমি কেন নয়!”
“আর অন্য কোনো পরিচয়ে?”
“হুম, আপনি আমার বোনের বরের বড় ভাইয়ের বউয়ের ভাই।”
ইমরান নিচু শব্দে হেসে বললো,
“খুব ভালো চিনেছেন। সম্পর্কে বেয়াইন হয়ে গেলাম! আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?”
নাফিসা ইমরানের প্রস্তাবে বিনা ভাবনায় জবাব দিয়ে ফেললো,
“না।”
ইমরান মোটেও আশ্চর্য হলো না। তবে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করলো,
“আমি যখন ইউএসএ যাই তখন কোনো এক মেয়ে আমাকে ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য প্রপোজ করে। আমি উত্তর হ্যাঁ দিয়েছিলাম। কারণ আমি স্বভাবতই ফ্রেন্ডলি আচরণ করি। বন্ধুত্ব করতে ভালো লাগে। তা আপনি কেন না বললেন?”
“আমি নিশ্চয়ই ইমরান মাহমুদুল না।”
“হুম, তা ঠিক। কিন্তু নাফিসার উত্তর না হলো কেন?”
“আমি সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব করি। আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় হবেন। তাই….!”
“ও আচ্ছা তাহলে তো ভাইয়া বলে ডাকতে পারেন। ভাইয়া ডাকেন না কেন? বন্ধুত্ব বিনা বড়দের নাম ধরে ডাকতে নেই, এখন থেকে ভাইয়া ডাকবেন।”
“আপনি তো আমাকে আপনি করে সম্বোধন করছেন, তাই ভাইয়াও বলতে পারছি না।”
ইমরান মজা পেলো তার কথায়! তাই সে হেসে বললো,
“কথা অনেক প্যাচাতে পারেন আপনি। অহ, সরি। কথা অনেক প্যাচাতে পারো তুমি।”
“একটা পার্সোনাল কুয়েশ্চন করি?”
“করতে পারো, সম্ভব হলে আনসার দিবো।”
“আপনার গার্লফ্রেন্ড, মানে প্রেমিকা আছে?”
ইমরানের মুখ সাথে সাথেই মলিন হয়ে গেছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই সে উত্তর দিলো,
“হুম, আছে।”
কথাটা বলে ইমরান নাফিসার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। হয়তো কিছু ভাবছিলো। এদিকে নাফিসা মনে মনে খুশি হলো, গার্লফ্রেন্ড যেহেতু আছে, বিয়েটা নিশ্চয়ই হচ্ছে না তাহলে!
নাফিসার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ইমরান জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”
নাফিসা চঞ্চলতার সাথে জবাব দিলো,
” হুম, আমার বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সব ই আছে। শুধু প্রেমিক নেই।”
“কেন? এখন তো কেউ সিঙ্গেল নেই বললেই চলে।”
“অবশ্যই আছে, আমিও তাদের মধ্যে একজন। চালুন, সবাই বসে আছে সেখানে যাই।”
” হুম।”
সেদিকে বড়রা কি কথা বললো জানেনা নাফিসা। যোহরের নামাজ পড়ে সবার লাঞ্চ করা শেষ হলো। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখলো সবাই। তারপর আবার কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো। চলে যাওয়ার সময় হয়ে এলে পাবেল বললো,
“নাফিসা, রেডি হও না কেন?”
” আমি এখানে থাকবো কিছুদিন।”
সুমি ব্রু সামান্য কুচকে বললো,
“কেন? এখানে থাকবি কেন? পড়াশোনা নেই?”
“আছে।”
“তাহলে?”
“এমনি।”
নীলা বলে উঠলো,
“কেন? সেখানে আমরা আছি বলে প্রব্লেম?”
নাফিসা হাসিমুখে বললো,
” না আপু। এমনি থাকতে চাইছি এখানে। বাবার বাসায় তো বেড়াতে আসি, সেজন্যই।”
“এখানে পরে বেড়াতে এসো। আমরা যেহেতু সেখানে বেড়াচ্ছি তুমি থাকলে মজাটা বাড়বে। এখন আমাদের সাথে না গেলে বুঝে নিবো আমরা আছি বলেই প্রব্লেম।”
“ফাসিয়ে দিচ্ছেন!”
“হুম, দিচ্ছি ফাসিয়ে। তারাতাড়ি রেডি হও। আর আমাকে তুমি করে বলবে।”
“ওকে।”
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের সাথে চলে যেতে হলো নাফিসাকে।
আপুর বাসায় রাতে আরোশির দাদা-দাদি ও ইমরানসহ বাকি মেহমানরা একসাথে খেতে বসেছে।
আর বাকি সদস্যরা তাদের পর খাবে। পাবেল আরোশির দাদির ওষুধ আনতে বাইরে গেছে। নাফিসা প্লেটে খাবার নিয়ে আয়াশ, আরোহী ও আরোশীকে খায়িয়ে দিচ্ছে। আর পারভেজ ভাইয়ার সাথে বসে টিভি দেখছে। বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হলে, তাদেরকে রুমে নিয়ে গেলো ঘুমানোর জন্য। আয়াশকেও ঘুম পাড়িয়ে রেখে এলো। এদিকে খাওয়ার পরপরই সুমন ও ইমরান ঘুমানোর জন্য চলে গেছে ইমরানের বাড়িতে। এখানে মানুষ বেশি, তাই ঘুমের সমস্যা হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে অন্যদের কিছু না জানিয়ে তারা দুজন কৌশলে অন্য কারণ দেখিয়ে এমনিতেই বেরিয়ে গেছে। নাফিসাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে নীলা বললো,
“বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেছে?”
“হুম।”
” তুমি তো দেখছি এক্সপার্ট।”
পারভেজ জবাব দিলো,
“নাফিসা বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। বাচ্চারাও সব নাফিসার পাগল।”
নীলা মৃদু হাসলো। নাফিসা পারভেজের উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাইয়া খেতে আসেন। পাবেল ভাইয়াও এসে পড়েছে।”
অত:পর সবাই খাবার টেবিলে বসলো।যাদের খাওয়া শেষ তারা সোফায় বসে আছে। পাবেল বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে বললো,
“ওফ! টায়ার্ড লাগছে খুব। খেতে দাও…”
এমন হাপিয়ে আসতে দেখে নাফিসা পাবেলের উদ্দেশ্য বললো,
” ভাইয়া কি এশার নামাজ পরেন নি?”
“বিশ্বাস করো, খুব ক্লান্ত আমি।”
“আপু, খাবার দিবে না ভাইয়াকে। নামাজ পড়ে আসুন আগে, এটাই ক্লান্তি নাশের মহা ওষুধ।”
পাবেল এক গ্লাস পানি পান করে উঠে যেতে লাগলো। কেননা সে-ও ভাবলো নামাজটা পড়ে নেওয়া উচিত। এতো দেরি করে নামাজ পড়তে যাচ্ছে তাই শান্তা বললো,
“নামাজ টা টাইম মতো পড়লে কি হয়! এখন আবার বসে থাকি কতোক্ষন!”
পাবেল রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
“কে বলেছে তোমাকে বসে থাকতে! খেয়ে নাও।”
পাবেল দুষ্টুমির ছলে বললেও শান্তা তার কথায় রেগে উঠে চলে গেলো বাচ্চাদের ঘুমিয়ে থাকা রুমের দিকে। কেননা সে কি জানে না, শান্তা তাকে রেখে খাবে না। জেনেশুনে এমনটা বললো কেন! শান্তাকে হনহনিয়ে চলে যেতে দেখে সুমি বললো,
“এই ছেলেটাও না! আস্ত একটা ফাজিল! এতোক্ষণ ধরে তার জন্য বসে আছে, এখন কথাটা বলা প্রয়োজন ছিল! আমি যাই শান্তাকে মানিয়ে নিয়ে আসি।”
নাফিসা সুমিকে থামিয়ে দিতে বললো,
“তুমি বসে থাকো, যার বউ সে ই যাবে।”
পারভেজ ফোনের দিকে তাকিয়েই নাফিসার সাথে একমত হয়ে উচ্চারণ করলো,
“হুম। নাফিসা ইজ রাইট।”
অত:পর সুমি খাবার রেডি করতে লাগলো, পারভেজ ফোনে গেমস খেলছে, আর নাফিসা নিচু শব্দে প্লেট বাজাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পাবেল ভাইয়া এসে শান্তাকে না দেখতে পেয়ে বললো,
“ম্যাডাম আবার কোথায় গেল?”
নাফিসা আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
” আগুনে ঘি ঢেলে এখন জিজ্ঞেস করছেন কোথায় গেছে!”
পাবেল চেহারায় বিস্ময়কর ভঙ্গি এনে বললো,
“ম্যাডাম রাগ করেছে?”
সুমি জবাব দিলো,
“রাগিয়ে গেলে তো রাগ করবেই। যাও, ডেকে নিয়ে এসো।”
পাবেল এখান থেকেই হাক ছাড়লো, “ব……উ…..”
এদিকে তারা একজোটে হেসে উঠলো এভাবে হাক ছাড়ায়। দুই মিনিটের মধ্যেই পাবেল তার ম্যাডামকে মানিয়ে সাথে নিয়ে চলে এলো। সাথে শান্তার কোলে আয়াশ ও!
সুমি বিদ্রুপ স্বরূপ বললো,
“এতো তারাতাড়ি বরফ গলে গেলো!”
পাবেল দাত চেপে হেসে বললো,
” টেকনিক!”
এদিকে নাফিসা বলে উঠলো,
” বাহ! দারুণ টেকনিক তো! বউয়ের রাগ ভাঙাতে গিয়ে ছেলের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে!”
নাফিসার সাথে তাল মিলিয়ে পারভেজ হাসলো। নীলা আয়াশকে দেখে এগিয়ে এসে বললো,
“শান্তা, আয়াশকে আমার কাছে দাও। এবার তোমরা খেয়ে নাও।”
অত:পর সবাই খাওয়া শেষ করলো। সুমিকে পাঠিয়ে দিয়ে নাফিসা আর শান্তা এবার সব গুছিয়ে রাখলো।
সুমি নীলার কাছে এসে বসতেই আয়াশ নীলার কাছ থেকে সুমির কোলে চলে গেলো। অপরিচিত লোকদের কাছে সে থাকতে চায় না। তবে অন্যান্য বাচ্চাদের মতো আবার এতটা কান্না করে না। কোলে নিতে চাইলে সে যায় তবে বেশিক্ষণ স্থির হয় না। নীলা বললো,
” সুমি তোদের জয়েন ফ্যামিলি দেখে আমার হিংসে হচ্ছে।”
সুমি মৃদু হেসে বললো,
“যেকেউ আমাদের বাসায় এলে একই কথা বলে।”
“বলবেই। তোরা দুই জা, খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছিস। খুব ভালো লাগছে দেখে।”
“হুম আপু। শান্তার সাথে আমার কখনো তর্কবিতর্ক ও হয়নি। আপন বোনের মতোই মনে করে আমাকে। একবার আমি ওকে একটু বকেছিলাম, তাই রাগ করে বসেছিল। কিছুক্ষণ পর আবার আমি যখন তার সাথে কথা বলতে গেলাম, তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আর ও এ বাড়িতে প্রথম এসেই আমাকে সে নিজেই বলেছে, ‘আমি যদি কোনো ভুল করি, আমার ভুলটা শুধরানোর জন্য বলবে আর আমাকে বকে পিটুনি দিও। কিন্তু কখনো ঝগড়া করে দূরে সরিয়ে দিও না।’
যে মেয়ে এমন কথা বলতে পারে, তার সাথে না মানিয়ে থাকা যায় আপু!”
” সত্যিই অসাধারণ!”
“হুম, নাফিসাটাও আমাদের মতো বসে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দুভাই না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত খাবে না। প্রতিদিন রাতের খাবার টা সবার একসাথে খাওয়া হয়। আর আমাদের গোছালো আর অগোছালো কাজে মা-বাবাও কিছু বলে না। প্রতিটি পরিবার এমনই হওয়া উচিত। সুখের অভাব হবে না। আমি মনে করি সবচেয়ে সুখী পরিবারে আছি আমি।”
“হুম, সত্যিই আমার দেখা অন্যতম সুখী পরিবার।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here