লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ১৯,২০

0
1785

#লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ১৯,২০
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৯

“আপনি এত কি/প্টা কেন?” তমা একথাটা বলেই সাদের দিকে তাকালো।

সাদ সোফায় বসে ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তমা সাদের সামনাসামনি বসেই সাদকে হঠাৎ কি/প্টা বলে সম্মোধন করলো। সাদ হাত থেকে ফোনটা সরিয়ে একবার তমার দিকে তাকালো। সোফা হতে উঠে বসে বললো,” আমাকে কোন দিক দিয়ে কি/প্টা মনে হয় তোমার? তুমি কি/প্টা তাই সবাইকেই নিজের মতো মনে হয় তোমার।”

তমা সোফায় পা উঠিয়ে বসতে বসতে বললো,” আজকে একটা ইদের দিন। ভেবেছিলাম আজ আপনার পিছু লাগবো না। কিন্তু, শেষ অবধি আর পারলাম না। আপনি না বলেন আপনি আমার বড়? তো বড় হয়ে আমাকে এখনও সালামী দিলেন না কেন এখনও?”

সাদ তমার কথা শুমে এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। আজ সাদের পকেট ফাঁকা হবে এটা তো নিশ্চিত! পেছন থেকে অনিতা হঠাৎ বললো,” আসলেই তো সাদ! তুই না কি ওর বড়। তো বড় হলে যে ইদের সালামী দিতে হয় তুই জানিস না?”

সাদ বেচারা মহা বিপদে পরলো। বুদ্ধি করে তমাকে বললো,” সালামী যেহেতু চেয়েছো৷ পাবে কিন্তু সালাম তো করলে না। পা ধরে সালাম করো তারপরই সালামী দেবো।”

তমা তৎক্ষনাৎ সাদের দু”পা ধরে সালাম করলো। সাদ ভ্রু উঁচু করে বললো,” হয়নি হয়নি! এটাকে সালাম বলে না কি? তোমার সালামী বাদ! সালাম-ই করতে পারো না ঠিকঠাক ভাবে। আবার আমি সালামী কী দেবো?”

তমা অগ্নিদৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। কিন্তু সাদ নিজের মতো বসেই আছে। তমার দিকে কোনো পাত্তা নেই। তমা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের কাজে চলে গেল। সাদকে এর শাস্তি যদি সে না দিয়েছে তাহলে তাঁর নাম তাবাসসুম তমা না! তমা তো তমা-ই! সে এর প্রতিশোধ নেবেই নেবে!

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তমা অনিতার সামনে গিয়ে অনেকটা সময় ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করলো। ইদের মতো একটা এত ভালো দিনে মা আর ভাইকে না দেখলে তমার ভালো লাগবে না মোটেও। অনিতা শেষমেশ অনুমতি দিয়ে দিলো। তবে, সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকা চলবে না। তমা নতুন জুতো পায়ে দিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেল। সাদ অবশ্য নিজের বাড়িতেই আছে। নিজের মতো হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানায় পরে আছে।

ইদের পরদিনও গ্রামে বেশ উৎসব উৎসব ভাব রয়েছে। তমা অনিতার কাছে গিয়ে বায়না করে বললো,” আজকে বড় মাঠে মেলা হবে। আমাকে যেতে দাও না আম্মু।”

অনিতা তমার কথা শুনেই শুরুতেই না করে দিলো। এত বড় মেয়েকে একা একা বাইরে যেতে দেবেন না উনি। তমা মুখ ভার করে বসে রইলো। ভালো লাগে না আর! একটু যেতে দিলে কী হতো?

আঙুর বালা তমার মন খারাপ দেখে অনিতাকে বললেন,” ওয় একলা যাইবো ক্যা? তোমার পোলা সাদরে দিয়া পাঠায়া দাও। ছে/ড়িডা যখন এত শখ করতাসে। যাক একটু! ঘুইরা বেড়ানোর সময় তো এহনই। এহন না ঘুরলে আর কহন ঘুরবো? আমগো মতো বুইড়া হইয়া দাঁত ভাঙলে?”

অনিতা শাশুড়ির কথা শুনে আর কোনো যুক্তি খুঁজে পেলেন না। অগত্যা সাদকে বললেন তমাকে মেলায় ঘুরতে নিয়ে যেতে।

সাদ বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে ছিল। অনিতা গিয়ে সেই মুহূর্তে সাদকে বললো,” বাবা, কোথায় না কি মেলা হচ্ছে? তমা যেতে চাচ্ছে। এত বড় মেয়েকে আমি একা একা ছাড়তে পারবো না। তুমি একটু নিয়ে যাও তো তমাকে।”

সাদ তমার কথা শুনে ঢোক গিললো। এই মেয়ে অনেক ভয়ংকর! কখন কী ঘটিয়ে ফেলে কে জানে!যতবার তমার সাথে বাইরে গিয়েছে তমা একটা না একটা বিপদে সাদকে ফেলেছেই! সাদ তমার সাথে কোথাও যেতে মোটেও ইচ্ছুক না। তাই নিজের মাকে বললো,” আম্মু, আমি আন্দাজে ওকে কোথায় নিয়ে যাবো? আমি তো এখানকার পথ-ঘাট চিনি না কিছু।”

অনিতাকে বিনয়ের স্বরে সাদকে বললো,”এতে কোনো সমস্যা হবে না বাবা। তমা তো এখানেই থাকে। ও তোমাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এটা নিয়ে ভেবো না তুমি।এখন তাড়াতাড়ি তমাকে নিয়ে যাও। একটু পরে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এটা তো শহর না যে সন্ধ্যা হলেও সমস্যা নেই। এটা গ্রাম, তাই তুমি বের হয়ে যাও। সাবধানে যেও, নাদিয়াও ছোট মানুষ। ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেও।”

সাদ বিরক্তি মাখা মুখ করে তমাকে নিয়ে বের হলো। একটু সাবধানে সাবধানে থাকতে হবে আজ। এই মেয়ে অনেক চালাক। কখন কোন কথা বলে বিপদে ফেলে কে জানে!

তমা সাদকে পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল। সাথে রয়েছে ছোট্ট নাদিয়া। তমা নাদিয়ার হাত ধরে তাঁকে সামলে রেখেছে। ছোট মানুষ পরে-টরে আঘাত পেলে?

গ্রামের মেলা বেশ বড়সড় ভাবেই হচ্ছে। পাশের গ্রাম থেকেও লোকজন মেলায় ঘুরতে এসেছে। তমা সাদের কাছে বায়না ধরলো তাঁকে ঝালমুড়ি কিনে দিতে। গোল গোল আলু দেওয়া ঝালমুড়ি। অনেক মজার! সাদ তিনটা ঝালমুড়ি নিলো ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছ থেকে।

ছোট ছোট ঠোঙ্গায় রাখা ঝালমুড়ি খেতে খেতে সাদ এদিক ওদিক ঘুরে সবাইকে দেখছে। নাদিয়া ইতিমধ্যে একবার বায়না ধরেছে তাকে গোলাপি গোলাপি হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতে হবে। সাদ অবশ্য দু’টো হাওয়াই মিঠাই কিনে দিয়েছে। একটা নাদিয়ার;আরেকটা তমার।

মেলায় এত জনসমাগমে বেশ হইচইপূর্ণ পরিবেশ। সাদের অবশ্য ভালোই লাগছে। শহরে এসব কখনো দেখেনি সাদ। প্রতিবছর ১-২ বার গ্রামে আসলেও সেটুকু সময় ঘরে বসেই কাটানো হয় সাদের। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে খুব একটা বের হয় না সে। ভালোই হয়েছে তমার জন্য অন্তত নতুন একটা জিনিসের সাথে পরিচিত হতে পারলো সাদ।

তমার হাতে মালাই কুলফি। বাদাম আর দুধের সর দিয়ে বানানো। সাদ কিনে দিয়েছে একটু আগে। তমা দূর থেকে ছেলে-মেয়েদের চিৎকার শুনে দৌড়ে গেল। সবাই নাগর দোলায় উঠে আনন্দে চিৎকার করছে। তমা এবার সাদের কাছে নাগর দোলায় চড়ার জন্য বায়না করলো। সাদ দাম জিজ্ঞেস করতেই জানতে পেল জনপ্রতি পাঁচ টাকা দাম।

তমা আর নাদিয়া কুলফি হাতে নাগর দোলায় চড়েছে। নাদিয়া হঠাৎ সাদকে বলে উঠলো,” ভাইয়া তুমি উঠবে না?” সাদ কিছু বলার আগেই তমা বলে উঠলো,” তোমার ভাইয়া ভীতুর ডিম। এসব নাগর দোলা-টোলাকে ভয় পায়।”

সাদ তমার সঙ্গে জেদ দেখিয়ে নিজেও নাগর দোলায় চড়ে বসলো। প্রথমবার যখন নাগর দোলায় একটা হালকা ঘুরানি দিলো তখন সাদের ভালোই লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করে জোরে জোরে নাগর দোলা ঘুরতে শুরু করলো। সাদ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। সাদ হঠাৎ নিচের দিকে তাকালো ভয়ে ভয়ে। এত জোরে নাগর দোলা দুলছে দেখে সাদ জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো,” থামান! থামান! আমি নামবো! আমি নামবো! আল্লাহ বাঁচাও! আল্লাহ আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে! আম্মু! আমি নামবো! আমি নামবো!”

কিন্তু ছেলে-মেয়েদের চিৎকারে কেউই সাদের কথা কিছুই শুনতে পেল না। সাদ শেষে তমাকে বললো,” তমা এটাকে থামতে বলো! অনেক ঝাকি লাগছে! আমি নামবো!”

তমা তো সাদের অবস্থা দেখে হেসেই চলেছে! বিরবির করে সাদকে বললো,” কালকে পায়ে সালাম করা সত্ত্বেও কোনো সালামী পাইনি। এটার শোধ কী আমি তুলবো না ভেবেছেন?”

তমা সাদের বুক পকেট থেকে পনেরো টাজা নিচে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,” এই যে মামা! আমরা আরো একবার চড়বো। তিনজন, টাকা রাখেন।”

এবার নাগর-দোলা আবারও জোরে জোরে ঘুরতে শুরু করলো। সাদ নাগরদোলা ঘুরতে দেখে বললো,” আল্লাহ গো! আমাকে বাঁচাও! আমি শেষ! আমাকে নামাও কেউ! আমাকে দয়া করে নামিয়ে দাও! আমি নামবো!”

কিন্তু সবাই তো নিজের মতো চিৎকার করতেই ব্যস্ত। সাদের কথা শোনার সময় কারো আছে? সাদ আরো জোরে জোরে আল্লাহ গো! আল্লাহ গো!বলে চিৎকার করতে শুরু করলো। তমা পাশ থেকে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। বাছাধন! তুমি ঘুঘু দেখেছো কিন্তু ফাঁদ দেখোনি! কত ধানে কত চাল বোঝো এবার।

চলবে…

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২০

নাগরদোলা থেকে নামা মাত্রই সাদের মাথা চরকার মতো ঘুরতে শুরু করলো। বহুকষ্টে দুলতে দুলতে বাড়ি এলো। ঘরে ঢুকেই ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। তমাকে যদি একটা শিক্ষা না দিয়েছে তবে তাঁর নামও ইরফান রশিদ সাদ না!

তমা আর আঙুর বালা রাতে একসঙ্গে ঘুমোচ্ছে। তমার তখন সবেমাত্র চোখ লেগে এসেছে। কারো ফুঁপানোর শব্দ শুনে উঠে বসলো তমা। আঙুর বালা বালিশে হেলান দিয়ে চোখের পানি মুছছে। তমা মায়াভরা কন্ঠে আঙুর বালাকে বললো,” কী হয়েছে দাদু? তুমি কাঁদছো কেন?”

আঙুর বালা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,”আর কী হইবো? কিছু হয় নাই।”

তমা আঙুর বালার আঁচল ধরে বললো,”তাহলে শুধু শুধু কান্না করছো কেন?”

আঙুর বালা তমাকে ঝারি মেরে বললো,” আমার কান্দন আমি কান্দি। তোর কী?”

তমা এবার চুপ হয়ে গেল৷ আর কোনো কথা না বলে, আঙুর বালার পাশে বসে রইলো। আঙুর বালা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো, ” আজকা তোর দাদার কথা বার বার মনে পরতাসে। তুই আর ওয় যহন মেলায় গেলি আমার বুকটা খাঁ খাঁ কইরা উঠসে। আমি যহন বিয়া কইরা এই বাড়িতে আইলাম। তহন আমি তোর মতো। হ্যাং/লা, জুংলা একটা চিকনা পাতলা শরীর লইয়া হারাদিন টইটই করতাম। আমার শাশুড়ী আবার এডি পছন্দ করতো না। বাইরে গেলে কী গাইল(গাল) যে পারতো! একবার হুনলাম মাঠের ওইদিকে মেলা হইবো। তোর দাদারে কইলাম। হ্যায় আমারে বিকালে লইয়া গেল। কতকিছু কিনা দিলো। ঝালমুড়ি, বাদামবুট খাওয়াইলো। আহারো! মানুষটা নাই। হারাদিন খালি হ্যার কথা মনে পরে।আমারে কত ভালোবাসতো। চল হ্যানে ঘুরতে যাই। এইডা খাই ওইডা খাই। আমার আর ভাল্লাগে না রে! আল্লাহ এত মানুষের মর/ন দেয়। আমি মরি না ক্যা? আমার আর একলা একলা ভালা লাগে না। কারে লইয়া থাকুম আমি?”

আঙুর বালা চোখের জল ফেলতে ফেলতে কথাগুলো বললেন। তমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। চুপটি করে আঙুর বালাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো তমা।

সকালে তমা পুকুর পাড়ে বসে বসে পা দোলাচ্ছে। এমন সময় সাদ সেখানে এসে উপস্থিত হলো। তমা সাদকে দেখে গান ধরলো,” ১৫ আর ১৬ নাগরদোলায় দোলো।”
সাদের মাথায় যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। এই মেয়েটা ভারী বেয়া/দব তো! সাদ তমার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো,”তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো তমা! তোমাকে আমি দেখে নেবো।”

তমা ফিক করে হেসে বললো,” কাল নাগর দোলার ঘুরনি খেয়ে মাথা আছে না গেছে? সাত-সকালে এত মাতলামি না করে ঘরে গিয়ে ঘুম দিন। যান!”

সাদ এবার রেগেমেগে আগুনের জমাট বাঁধা কুন্ডলীর ন্যায় তমাকে বললো, “তোমার হাল যদি বেহাল না করেছি তবে আমার নাম সাদ না।”

তমা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো,” আপনার নাম সাদ না পাদ! হাহা!”

সাদ এবার রেগে গিয়ে তমাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিলো। তমা পুকুরে পরে গিয়ে টুপ করে ডুবে গেল। পানির নিচে শ্বাস বন্ধ করে বসে করে নিচে বসে থাকলো। সাদ পানির দিকে তাকিয়ে রইলো। তমা গেল কোথায়?পাঁচ মিনিট আগে তমাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এখনও উঠলো না যে? তমা আবার মরে-টরে গেল না তো? সাদ ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে পানিতে নামল। কিন্তু কীসের তমা কীসের কী!

পেছন থেকে শিস বাজানোর শব্দ শুনে সাদ পেছনে ফিরে তাকালো। ওমা সেকি! তমা তো পানির নিচে ছিল। তবে ওপরে উঠলো কী করে? তমা সাদকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো,” ছোটবেলা থেকে গ্রামে বড় হয়েছি।সাঁতার জানি!”

এটুকু বলেই তমা পুকুর পাড় থেকে লাফাতে লাফাতে চলে এলো। সাদ মদন হয়ে পুকুরে বসে থাকলো। অন্যকে পানিতে ফেলতে গিয়ে নিজেই কিনা শেষমেশ পানিতে পরে গেল!

সাদ ঘরে ঢোকার সময় শুনতে পেল আঙুর বালা আর অনিতা গল্প করছে। অনিতা কথা প্রসঙ্গে আঙুর বালাকে বলতে লাগলো,” সাদ যখন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি করবে। তখন, সাদ আর তমার বড় করে বৌভাতের অনুষ্ঠান করবো। তমার জন্য কত গহনা তুলে রেখেছি আমি। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরিয়ে তমাকে ঘরে তুলবো আমরা। আমার ছেলের একটা মাত্র বউ।”
সাদ এটুকু শুনে মুচকি হাসলো। তাঁর মায়ের এত স্বপ্ন তমাকে নিয়ে। একবার যদি টের পেতো তমার পেটে পেটে এত শয়তা/নি আর কু/বুদ্ধি তাহলে আর ভুলেও তমার দিকে ফিরে তাকাতো না।

ইদের ছুটি শেষ, কাল থেকে স্কুল কলেজ সব শুরু। তমারও কাল থেকে স্কুল শুরু। সাদের ও কলেজ শুধু কাল থেকে। তাই আজ দুপুরে খাবার খেয়েই সবাই রওনা দেবে।

তমার আজ মন ভীষণ খারাপ। সাদ চলে গেলে কার সঙ্গে ঝগড়া করবে তমা? কেন সাদ এত অল্প সময়ের জন্য আসে? আর কতগুলো থেকে গেলে কী হতো? কলেজে কয়দিন না গেলে কী এমন ক্ষতি হতো? তমা দুপুরে রাগ করে কিছুই খেলো না। সাদ চলে যাওয়ার আগে একবার সাদের সঙ্গে দেখাও করলো না।রাগে দুঃখে গাছতলায় মাথা নিচু করে বসে রইলো।

সাদকে অনিতা তাড়া দিতে শুরু করলেন। এখন না বের হলে দেরি হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। সাদ ঘুরে ফিরে শুধু তমাকে খুঁজছিল। তমাকে খুঁজে না পেয়ে পুকুর পাড়ে দৌড়ে গেল। তমা যে সেখানেও নেই। তবে গেল কোথায় তমা? তমাকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পেছনের গাছ তলায় এলো সাদ। তমা মাথা নিচু করে বসে আছে। সাদ তমার সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে তমাকে ডাক দিলো,”তমা!”

তমা প্রত্ত্যুতরে কোনো জবাব দিলো না। এই মানুষটার সঙ্গে কোনো কথা নেই তমার। সাদ তমার মাথাটা উঁচু করে ধরলো। কেঁদে কেটে মুখ লাল টকটকে বানিয়ে ফেলেছে। সাদ বিনয়ের স্বরে বললো,” আমি কী একেবারে চলে যাচ্ছি? আবার আসবো তো!”

তমা তবুও নিরুত্তর। সাদ তমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে গভীর মমতায় বললো,”এই কিছুদিন পরপরই তো দেখা হয়। তবুও তুমি এমন কেন করো? ফোন ও তো আছে? ভিডিও কল দেবে আমাকে দেখতে পাবে।”

তমা সাদের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,” ওখানে শুধু দেখা যায়। ছোঁয়া তো যায় না!”

সাদ এবার কিছুটা চুপ হয়ে গেল। তমার কথার কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। নিবিড় কন্ঠে তমাকে বললো,” এখন তো অল্প অল্প দেখা হচ্ছে। আমার যখন পড়াশোনা শেষ হবে তখন অনেক অনেক দিন একসাথে থাকতে পারবো আমরা। এখন যদি পড়াশোনা ঠিকমত না করি। ফাঁকি দেই তাহলে তো আম্মু তোমার সঙ্গে দেখাই করতে দেবে না।”

তমা চুপ করে বসে রইলো। সাদ স্নেহ মাখা কন্ঠে তমাকে বললো,” আমি যাই এবার? ”

তমা মাথা নাড়িয়ে বললো,” আবার আসবেন তো?”

সাদ হেসে বললো,” আবার যখন আসবো অনেক অনেক দিন থাকবো। খুব মজা করবো তখন।”

তমা হঠাৎ দৌড়ে এসে সাদকে জাপটে ধরলো। সাদ নিবিড় বন্ধনে আঁকড়ে ধরলো তমাকে। তবে, দূর থেকে অনিতার গলার স্বর শুনে আস্তে আস্তে বাঁধন হালকা করে সাদকে মুক্ত করে দিলো তমা।

“আসি তবে” সাদ এটুকু বলেই পেছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলো। তমা পেছন থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সাদ কিছু দূর গিয়েই আবার পেছন ফিরে তাকালো। অবাক করা বিষয় সে আর ক্রদনরত তমাকে দেখতে পাচ্ছে না! দেখতে পাচ্ছে লাল শাড়ি ও অলংকার পরিহিত বিয়ের সাজে দাঁড়িয়ে থাকা তমাকে।
আচ্ছা! মা যে বলেছিল তমাকে লাল শাড়ি পরিয়ে বৌভাতের অনুষ্ঠান পালন করবে। তখন কী তমাকে দেখতে এরকমই লাগবে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here