“রূপগঞ্জের রূপসী”
পর্ব- ১২
(নূর নাফিসা)
উৎসর্গে – Imran Mahmudul
.
.
ঘুম ভাঙলে দেখলো সে খাটে শুয়ে আছে! এটা কিভাবে সম্ভব! সে তো স্টেশনে ছিলো ঝটপট উঠে বসে পড়লো নাফিসা! চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো কারো রুমে আছে সে! এটা কার বাসা! চোখ ভালোভাবে কচলে আবার চারিদিকটা দেখলো। হ্যাঁ, সে কারো রুমে আছে। কেউ কি তাকে কিডন্যাপ করেছে! সেই যে মেসেজ পাঠিয়েছিলো, সে নয়তো আবার!
এমনি দরজা খুলে ইমরান রুমে প্রবেশ করলো! নাফিসাকে বসে থাকতে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
“মহারানীর ঘুম ভেঙেছে তাহলে! এতো ভারি ঘুম তোমার! সারারাত ঘুমাওনি নাকি?”
“আপনি! আমি কোথায়? এখানে এলাম কিভাবে? এটা কার বাসা?”
“এতো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিবো কিভাবে!”
ইমরান কথা বলতে বলতে নাফিসার একদম কাছে এসে বসেছে। অত:পর ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
” এটা তোমার শশুরের বাসা। ঘুমিয়ে পড়েছিলে স্টেশনে, এই অবস্থায় তো আর আপুর বাসায় নিতে পারবো না। তাই সেখান থেকে নিয়ে এলাম সোজা তোমার শ্বশুর বাড়ি! প্রথম শশুর বাড়ি এলে, তাও আবার আমার কোলে করে সোজা আমাদের বেডরুমে। শুধু বিয়েটা আর মায়ের বরন করে নেয়াটা বাকি ছিলো। ক্লিয়ার?”
নাফিসা খাটে হেলান দিয়ে বসে ছিলো। কথাগুলো বলতে বলতে ইমরান নাফিসার দিকে ঝুকে পড়েছে! এদিকে নাফিসার হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে! নাফিসা কিছুটা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইমরান তার অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো। তারপর নাফিসার চুল থেকে কাটা সরিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিলো এবং সোজা হয়ে বসে বললো,
“ভয় পেওনা, সামনে বিয়ে আমাদের। এতো ভয় পেলে কিভাবে হবে!”
নাফিসা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ইমরান সোজা হয়ে বসেছে। সে ধীরগতিতে খুব বড়সড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো। অত:পর ধাধানো কন্ঠে বললো,
“আপনি জানলেন কীভাবে আমি স্টেশনে?”
“তোমাকে দেখার পর থেকেই তোমার উপর সবসময় আমার নজর আছে। একবার হারিয়ে আবার পেয়েছি, এবার আর হারাতে চাই না রূপসী।”
ইমরানের মুখে রূপসী ডাক শুনে যেন নাফিসা বিরক্ত বোধ করলো৷ কিন্তু ইমরান সেদিকে তোয়াক্কা না করে বলতে লাগলো,
“শান্তা ভাবি ফোনে কথা বলার পরই আমার সন্দেহ হয়েছে তুমি এতো সকালে ল্যাবে যাবে না। নাস্তা করে ল্যাবে গিয়েছি না কোনো টেস্ট ছিলো, আর না ছিলে তুমি! তখন থেকেই খুজতে শুরু করেছি। ১০টার দিকে স্টুডিও থেকে পরিচিত একজন কল করে। একটু জরুরি ছিলো যাওয়াটা। কাজ শেষ করে স্টেশনের পাশ দিয়ে সেখান থেকে ফেরার পথেই মনে হলো একবার স্টেশনে তোমাকে খুঁজে যাই। ব্যাস, ভাগ্যের পরিহাসে সেখানেই পেয়ে যাই। তখন তুমি জেগেই ছিলে। শুধু তোমার কান্ড দেখার জন্য তোমার পাশেই লুকিয়ে ছিলাম। অত:পর দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছো!”
ইমরান একটু থেমে আবার বলতে লাগলো,
“ভেবেছিলাম কালই সব ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও তোমার আচরণগুলো আমার কাছে অদ্ভুত লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো তুমি আপুদের সাথে জোরপূর্বক কথা বলেছো, জোরপূর্বক হেসেছো! তবুও মনকে বুঝিয়েছিলাম তোমার মুখের কথায় বিশ্বাস করে। কিন্তু নাফিসা যে সহজে শুধরানোর মেয়ে না! সত্যি করে বলো তো পালিয়ে যেতে চাইছিলে কেন?”
নাফিসা গোমড়া মুখু হয়ে অন্যদিকে তাকালো। তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে! গাল গড়িয়ে পানি পড়তেও সময় নেয়নি! কম্পিত কণ্ঠে সে ইমরানের প্রশ্নের জবাব দিলো,
” ভালো লাগে না আমার এই ব্যস্ত জীবন। তিন বছর আগেই সব ইচ্ছে মরে গেছে আমার। সব দিক থেকে চাপ আর সহ্য হচ্ছে না আমার। মুক্তি চাই আমি সব কিছু থেকে। একদমই ভালো লাগছে না কিছু!”
“দূরে চলে গেলেই কি শান্তিতে থাকতে পারতে! একবারও কি ভেবেছো তোমার জন্য কেউ নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভুলে গেছে?”
নাফিসা অশ্রুসিক্ত লোচনে তাকালো ইমরানের দিকে। ইমরান আবার বললো,
“আমার কথা বাদ ই রাখলাম, এটা কি ভেবেছো পরিবারের সদস্যরা কতটা কষ্ট পেতে পারে তুমি তাদের কাছ থেকে এভাবে পালিয়ে গেলে! তুমি ই বা সবাইকে ছেড়ে একা থাকতে পারতে? আংকেল আন্টি কি ঠিক থাকতে পারতো এটা শুনে যে তাদের মেয়ে এনগেজমেন্ট এর দিন বাসা থেকে পালিয়েছে! এতে কি সম্মানহানি হতো না তোমার পরিবারের?”
নাফিসার কান্না আরও বেড়ে গেলো। সে মাথা নিচু করে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“তো কি করবো আমি? আমার কিছু ভালো লাগে না। সব ভালো লাগা মরে গেছে। একটুও ভালো থাকতে পারছি না আমি! তিন বছর আগের আঘাতগুলো আমাকে বারবার থমকে দেয়! ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারা, কারো মুখে লাইফের লেভেল নিয়ে কটু কথা শোনা, কাউকে ঠেলে দূরে সরিয়ে কষ্ট দেওয়া, আম্মার মৃত্যু, রূপগঞ্জকে হারিয়ে ফেলা সবকিছু আমার ভালো থাকা কেড়ে নিয়েছে! আগের জীবনের মতো কোনো মজা আমি পাই না আর। এখন শুধু ব্যস্ততার মাঝে সময় কাটে। একদম ই ভালো লাগে না এসব।”
নাফিসার কান্না একদমই ভালো লাগছে না। ইমরান ইতস্তত বোধ করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কান্না থামেনি। তাই সে উঠে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কারণ নাফিসা নিজেই চেষ্টা করছিলো কান্না থামানোর এবং ইমরানের মনে হয়েছে সে এখানে উপস্থিত থাকার কারণেই নাফিসা কান্না থামাতে পারছে না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর সে আবার রুমে এলো৷ এখন নাফিসা শান্ত হয়ে চোখ মুছে নিয়েছে। ইমরান আবার তার পাশে বসে বললো,
“তো এখন কি করতে চাইছো? বলো আমাকে। তোমার ভালো লাগার প্রেক্ষিতে আমি তোমাকে সাপোর্ট করবো।”
নাফিসা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো,
“আপুর বাসায় যাবো।”
“শিওর?”
নাফিসা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিতেই ইমরান বললো,
“ওকে, ফ্রেশ হয়ে এসো।”
অত:পর নাফিসা ওয়াসরুমে ফ্রেশ হয়ে এলো। ইমরান তার সামনে দুইটা বার্গার রেখে বললো,
“সকাল থেকে কিছু খাওনি। দ্রুত এগুলো খেয়ে নাও, আমি আসছি।”
ইমরান ওয়াশরুমে গেলো আর এদিকে নাফিসা ইমরানকে নিয়ে একটু ভাবলো। এতোটা অবহেলা করে পালিয়ে চলে যাচ্ছিলো তবুও কত খেয়াল রাখছে তার এই লোকটা! এতোসব জেনেও একটু রাগ করলো না কেন তার উপর! ভাবতেই চোখ দুটো আবার ঝাপসা হয়ে এসেছে। সে ওড়নায় চোখ মুছে একটা বার্গার হাতে নিলো। অত:পর বার্গার খেতে খেতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো বাড়িটা ঘুরে দেখার জন্য। এদিকে ইমরান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তাকে না দেখতে পেয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। সে কি আবার চলে গেছে! ইমরান তারাহুরো করে রুম থেকে বের হতেই দেখলো কিচেন থেকে বের হচ্ছে নাফিসা। ছোটখাটো এক নিশ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি এখানে! আমি তো ভয় পেয়ে গেছি!”
নাফিসা স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“যাইনি কোথাও। বাড়িটা ঘুরে দেখছিলাম। কিচেনটা ভালো লেগেছে খুব।”
ইমরান মৃদু হেসে বললো,
“আচ্ছা! সেটা তোমার ই। নিবে না?”
নাফিসা দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে সামনে পা বাড়িয়ে সামান্য লজ্জিত ভাবেই বললো,
“পরেরটা পরে।”
ইমরান তার লজ্জিত ভাব দেখে আরেকটু মজা নিতে বললো,
“আচ্ছা পরেই। তা এই কিচেনে তোমাকে প্রথম রান্না করতে বললে কি রান্না করবে?”
“লাল মরিচের শুটকির ভর্তা আর চূরচুরি।”
ইমরান শব্দযোগে হেসে বললো,
“হাউ ইন্টারেস্টিং!”
নাফিসা পাশের রুমের উদ্দেশ্যে বললো,
“এই রুমটা লক করা কেন? কি আছে এখানে?”
“এটা আমার আরেক জগৎ।”
“মানে?”
“ওয়েট…”
ইমরান পকেট থেকে চাবি বের করে রুমটি খুলে নাফিসাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। এবার বুঝতে পেরেছে নাফিসা, যে এটা কোন জগৎ! এটাতে তার গান গাওয়ার জন্য সব আছে। খুব সুন্দর করে গুছানো সব। ইমরান ঘড়িতে সময় দেখে বললো,
“তিনটা বেজে গেছে। আরো কিছুক্ষণ থাকবে? নাকি আপুর বাসায় যাবে?”
“আপুর বাসায়ই যাবো। সেই, বাসার সবাই কি জেনে গেছে আমি পালিয়ে এসেছি?”
“সবাই টেনশন করছিলো ফিরছো না বলে। এখন সবাই জানে ল্যাবে জরূরী কাজ থাকায় এখনো সেখানে আছো আর আমি সাথে আছি। শুধু পারভেজ ভাইয়া, সুমি আপু, শান্তা ভাবি আর পাবেল ভাইয়া জানে সত্যিটা। এখন চলো। আর বার্গারটা সাথে নিয়ে নাও, গাড়িতে বসে খেও।”
” আমি আর খাবো না, আপনি খেয়ে নিন।”
“আমি তোমার মতো এতো কেয়ারলেস না। নিজের যত্ন রাখতে পারি। আমি খেয়েছি স্টুডিওতে। বাসায় ফিরে লাঞ্চ করবো।”
আপুর বাসায় ফিরে সব স্বাভাবিকই লাগছে, নাফিসার বাবা মা ও সাঈদও এসে পড়েছে। পারিবারিক ভাবে ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এনগেজমেন্ট হবে বলে বাসায় তেমন একটা মেহমান নেই। আপু ভাইয়াদের দেখে নাফিসা মাথা নিচু করে ভেতরে প্রবেশ করতেই শান্তা এগিয়ে এসেছিলো তাকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য। পাবেল আর সুমি বাধা দেয়াতে পারেনি। দিবেই না কেন, খুব বড় ভুল যে করতে যাচ্ছিলো সে! সুমি আপু পারভেজ ভাইয়াকে ইশারা করলে, ভাইয়া নাফিসাকে গেস্ট রুমে নিয়ে এলো সাথে ইমরানও এসেছে। নাফিসা মলিন মুখে মাথা নিচু করেই খাটে বসে আছে। পারভেজ তার পাশে বসে বললো,
“নাফিসা, সত্যি করে বলো তো পালাতে চাইছিলে কেন?”
নাফিসা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। পারভেজ তাকে নিশ্চুপ দেখে বললো,
“বলো? ইমরানকে কি তোমার পছন্দ না?”
ইমরান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো পকেটে হাত রেখে, নাফিসা ব্রু সামান্য কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে ফেললো,
“না।”
মুহূর্তেই ইমরানের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। সে আর এখানে দাড়িয়ে না থেকে হাজারো অভিমান নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। পারভেজও মন খারাপ করে ফেললো নাফিসার কথায়! ইমরান ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই নাফিসা ফিক করে হেসে উঠলো। পারভেজ তার কান্ড দেখে হতবাক! নাফিসার এমন অদ্ভুত আচরণের কোন মানে খুঁজে পাচ্ছে না। বিস্ময়ের সাথে সে জিজ্ঞেস করলো,
“এটা কি হলো? তাকে আঘাত করে এখন তুমি হাসছো!”
নাফিসার হাসি থামছেই না! সে শব্দযোগে হেসে বললো,
” যান, এবার আপনার শালাবাবুকে ধরে নিয়ে আসেন। আমি প্রোগ্রামের জন্য রেডি হতে যাচ্ছি।”
“অদ্ভুত সব কাজ করে বসো তুমি! পাজি একটা।”
বলতে বলতে পারভেজ চলে গেলো ইমরানের পিছু। না জানি ইমরান এতোক্ষণে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে তা ভেবে অতি দ্রুতই পা চালাচ্ছে পারভেজ। আর এদিকে নাফিসা রেডি হতে লাগলো।
এদিকে ইমরান ছাদে চলে এসেছে। সে এতোটা সেক্রিফাইস করার পরেও নাফিসা এটা কিভাবে বলতে পারলো! এতো ভালোবাসে তাকে, সেটা একটুও কি বুঝে না সে! সবসময় তাকে কেন এভাবে কষ্ট দিয়ে যায়। তার ফিলিংস এখনো নাফিসাকে কাবু করতে পারলো না কেন! জীবন কেন এমন হয় যে, হারিয়ে পেয়ে আবারও হারাতে হয়! সে তো আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে! কিন্তু পাখি যে মুক্তি হতে চাইছে তার কাছ থেকে! মুক্তি দিয়ে কি প্রথমবারের মতো আবারও ভুল করবে সে! না, কোনো ইচ্ছে নেই এমন ভুল দ্বিতীয়বার করার। কিন্তু তার প্রিয় রূপসী যে ইচ্ছাকৃত তাকে আবারও দূরে ঠেলে দিচ্ছে!
পারভেজ প্রথমে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। বাইরে ইমরানের গাড়ি দেখে আবার ছাদে চলে এলো। ইমরানকে এখানে পেয়ে এগিয়ে এসে বললো,
“ইমরান, নিচে চলো।”
“ভাইয়া, বিয়ে টিয়ে সব ক্যান্সেল করে দিন।”
“নিচে চলো, নাফিসা দুষ্টুমি করেছে তোমার সাথে।”
“দুষ্টুমি না, সে সত্যিই চাইছে না এসব। ক্যান্সেল করে দিন।”
“আরে ভাই, সত্যিই দুষ্টুমি করেছে নাফিসা। বিশ্বাস না হলে নিচে গিয়ে দেখো সে রেডি হচ্ছে।”
এমনি নাফিসা ফোন করলো পারভেজের ফোনে। পারভেজ ফোন লাউডস্পিকার রেখে রিসিভ করলো,
“হ্যাঁ বলো?”
“ভাইয়া, হাজারো মেয়ের ক্রাশটা কোথায়?”
ইমরান ব্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকালো। পারভেজ হাসিমুখে জবাব দিলো,
“পাশেই আছে।”
“বলুন, তার নিজের ফোন চেক করতে।”
“শুনে নিয়েছে।”
“ওকে…”
সাথে সাথেই নাফিসা কল কেটে দিলো এবং পারভেজ ইমরানের উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখো ফোনে কি আছে।”
ইমরান ফোন বের করে দেখলো নাফিসা মেসেজ দিয়েছে, “এই যে মিস্টার, যেখানেই থাকুন না কেন! বাসায় এসে দশ মিনিটের মধ্যে তৈরি না হলে আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে আমার ল্যাবে রেখে আসবো। এক সেকেন্ড ও যেন দেরি না হয়।”
“এবার তো চলো।”
মেসেজ পড়ে পারভেজ হাসতে হাসতে ইমরানকে টেনে নিয়ে এলো নিচে। কিন্তু ইমরানের মুখ মলিনই আছে। মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে নাফিসা। অত:পর সে গোসল করে কালো জিন্স আর ব্লু পাঞ্জাবি পরে নিলো। ড্রয়িং রুমে গুরুজনেরা বসে আছেন। ইমরান তাদের সালাম দিয়ে ভাইয়াদের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিলো। বাচ্চারা এদিকসেদিক ছুটাছুটি আর দুষ্টুমি করছে।
নাফিসা তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো সবাই এখানে আছে। সে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছে। নাফিসা একে একে সবার দিকেই তাকালো। কেউ পুলকিত এবং কেউ রাগান্বিত! আর ইমরানের চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে সে চরম শকড নাফিসাকে দেখে! সকলের দিকে তাকানোর পর নাফিসার চেহারা লজ্জিত! কারণ, আজ সে শাড়ি পড়েছে তাও আবার গ্রাম্য স্টাইলে! যেমনটা রূপগঞ্জ গেলে পড়তো! নাফিসা এগিয়ে এসে সকলকে সালাম দিয়ে আপুদের কাছে এসে দাড়ালো। আর নাফিসার মা বসা থেকে উঠে তার দিকে এগিয়ে আসছে। এরই মাঝে নীলা বলে উঠলো,
” সবাইকে তো একেবারে চমকে দিয়েছো। মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।”
নাফিসার ঠোঁটে লজ্জাময়ী হাসি ফুটে উঠতেই এদিকে মায়ের ঝাড়ি!
“আজও তোর এমন পাগলামি করা প্রয়োজন ছিলো! শাড়ি পড়েছিস ভালো কথা কিন্তু এভাবে কেন?”
সুমি নাফিসার মাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“থাক না আন্টি, স্পেশাল দিনে একটু স্পেশালভাবে না সাজলে কেমন হবে! অনেক সুন্দর লাগছে নাফিসা।”
নাফিসা মুচকি হাসলো। তবে একটা বিষয় খুব লক্ষ্য করছিলো সে, এখানে আসার পর শান্তা আপু তার সাথে একটা কথাও বলেনি। এই মুহূর্তে সুমিকে কাছে পেয়ে নাফিসা বলে উঠলো,
“দেখো আপু, তোমার পাশের শান্তা নামের মেয়েটা কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে হিংসে হচ্ছে আমার প্রশংসা শুনে।”
শান্তা রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আর সুমি এবং নীলা হেসে উঠলো! নাফিসা মুখে চাপা হাসি নিয়ে এবার এগিয়ে এসে শান্তাকে জরিয়ে ধরে বললো,
” সরি, আর কখনো এমন কিছু করবো না। সরি তো।”
শান্তা তার পিঠে এক হাত রেখে বললো,
“হয়েছে যা এবার।”
নাফিসা এবার খুশিমনে তাকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালো। আরোশি তার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“আন্টি তুমি কোথায় যাবে?”
নাফিসা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
“তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই।”
এদিকে আরোশির আগে আরোহী বলে ফেললো,
“আন্টি তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো ইউএসএ। অনেক দিন রেখে দিবো।”
“আচ্ছা।”
এদিকে আরোশি ভেবে বললো,
“আন্টি, আমি তোমাকে নানু বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাবো।”
তখন হাসিমুখে নাফিসা আরোহীর প্রত্যুত্তরে “আচ্ছা” বললেও এবার নাফিসা লজ্জায় চুপ হয়ে আছে। তার কারণটা হাসতে হাসতে নীলা ই তুলে ধরলো,
“আরোশি, তোমার আন্টি যে সবসময় নানু বাড়িতেই থাকবে!”
আরোশির প্রশ্ন,
“কেন?”
“কারণ, অতি শীঘ্রই আন্টি থেকে মামী হয়ে যাবে। আর মামী তো মামার কাছে অর্থাৎ নানু বাড়িতেই থাকবে!”
“না, আন্টি আমাদের বাসায় থাকে তো।”
নীলা তার কথায় সায় দিলেই আরোশি খুশি হলো এবং আরোহীর সাথে অন্যদিকে চলে গেলো। আয়াশের কোনো পাত্তা নেই। সাঈদকে পেয়ে সে সব ভুলে গেছে। নীলা ও আরোশি কথা বলার সময় নাফিসা ইমরানের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখেছিলো, ইমরান ড্যাবড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইমরানের মাইন্ড ফ্রেশই মনে হচ্ছিলো। সে ব্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করেছিলো, “কি?”
উত্তরে ইমরান শুধু মুচকি হেসেছে। তার এই হাসিটাই প্রকাশ করে দিয়েছে অভিমানগুলো সব বিলীন হয়ে গেছে তার রূপসীকে মনোমুগ্ধকর রূপে সাজতে দেখে!