তনয়া পর্ব -১৪,১৫

0
650

#তনয়া
পর্ব -১৪,১৫
#সিফাতী সাদিকা সিতু
#পর্ব -১৪

তনুর পাশের সিটে বসে খুব করে দাঁতে দাঁত চেপে রেখে হাসছে মিশকাত।একদম মিচকে শয়তানী হাসি।এই মুহূর্তে খুব জোরে হাসতে ইচ্ছে করলেও সেটাকে কষ্ট করে দমিয়ে রাখতে হচ্ছে।তনুর মুখখানা দেখার মতো হয়েছে।বেচারী না পারছে সহ্য করতে না পারছে কিছু বলতে।মিশকাত যে ওদের সাথে যাবে তা তনুকে মোটেও বুঝতে দেয়া হয়নি।রাফাত শান্তা মারুফের সবটা জানা থাকায় ওরা টিকিট সেভাবেই কেটেছে।শান্তার সাথে মারুফ বসে পরেছে।তনু হাজার বলেও মারুফকে শান্তার পাশ থেকে সরাতে পারেনি।এমনিতেই বাসে উঠে মিশকাতকে দেখে একটা ঝটকা খেয়েছে তার ওপর মিশকাতের পাশের সিটে ওকে বসতে হয়েছে।সব মিলিয়ে করুণ দশা।অন্যদিকে মিশকাত বিজয়ী ভঙ্গিতে বসে আছে। আয়রা ছাড়া সবাই মিটিমিটি হাসছে যা তনু বুঝতে পারলেও আয়রা বুঝতে পারল না।রাফাতের কাছে জানতে চাইলে রাফাত চুপ করিয়ে দিয়েছে। বলেছে সিলেট পৌঁছে সবটা বলবে।তানভীর এসেছিলেন সবাইকে বিদায় দিতে।মিশকাতকে দেখে মোটেও অবাক হন নি।বরং বড় মেয়ে জামাইকে একটু ইশারায় ওদের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।সবাই খুব মজার মুডে থাকলেও তনুর সব অসহ্য লাগছে।পাশে বসা মিশকাত নিজের মতোন বসে আছে।তনুর দিকে তাকাচ্ছে না।দুহাত বুকের মাঝে নিয়ে সিটে শরীর এলিয়ে দিয়ে আরামে আছে।তনু চুপ থাকতে না পেরে বলল,

“তোমার না পরিক্ষা?”

“হুম, তো?”

“তুমি তাহলে যাচ্ছো কেন?”

“কেন, পরিক্ষা থাকলে সিলেট যাওয়া যাবে না এটা কোথাও লেখা আছে?”

“নাহ্ লেখা নেই।তবে কেউ যদি যায় তখন ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হয়!” তনু একটু ঝাঁজের সাথে বলল।

“তোর সমস্যা হচ্ছে নাকি আমায় দেখতে উল্টো লাগছে।মাথার দিকে পা আর পায়ের দিকে মাথা আছে মনে হচ্ছে যে দৃষ্টিকটু লাগবে?”

তনু চুপ করে রইলো।সে কার সাথে কথা বলতেছে তা ভুলেই গেছিলো।এটা তো ছেলে মানুষ নয় যেন আস্ত খাটাসমার্কা ঝগড়ুটে!

গ্রীন লাইন পরিবহনে বসে তনু রাগে লাল নীল সবুজ রং ধরন করছে।ইচ্ছে করছে মিশকাতের মাথার সব চুল গুলে ছিড়তে।প্রায় ছয় সাত ঘন্টা এই অসহ্য মিশকাত ফিসকাত কে সহ্য করতে হবে!এখন বুঝতে পারছে সবাই যেন তার বিরুদ্ধে এক যোগে ষড়যন্ত্র করেছে!মিশকাত চোখ বন্ধ করেও তনুর রাগটা উপভোগ করছে।

তনু রাগটা সামলানোর জন্য জানালার বাইরে মন দিলো।কিছুক্ষণ পর তনু অনুভব করলো মিশকাতের মাথাটা তার ঘাড়ের দিকে ঝুঁকে এসেছে।চট করে ঘুরে তাকাতেই দেখলো মিশকাত ঘুমিয়ে পরেছে।বাসের ঝাঁকুনিতে তনুর দিকে ঝুঁকে এসেছে। তনু একটু ঠেলে দিলো মিশকাতকে কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো মিশকাতকে নড়ানো গেল না।ঠিক আগের মতন ঝুঁকে আছে।তনুর হাসফাস লাগলো।এতকাছে মিশকাতের এর আগে কখনো আসা হয়নি।মিশকাতের নিশ্বাসের শব্দ গুনতে পারছে যেন।তনু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো মিশকাতের পানে।ঝাঁকড়া চুলের গোল গাল ফর্সা ছেলেরটার মাঝে কি এমন আছে?যে তনুকে ভুলে থাকতে দেয় না, দূরে থাকতে দেয় না।এই ছেলেটাই বা তার মাঝে কি এমন দেখেছে যার জন্য এতসব পাগলামি!
মিশকাত তনুর কাঁধে মাথা এলিয়ে ঘুমোচ্ছে অন্যদিকে তনু ভাবনায় ডুবে আছে।ছেলেরাও যে বাসে এভাবে হাবার মতন ঘুমোয় তা আগে জানা ছিল না তনুর।বুকের ভেতর কি হচ্ছে সেটা ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইছে না সে।কি হবে বুঝে?বুঝতে গেলেই তো সব তালগোল পাকিয়ে যায়।যা হচ্ছে হোক না?এই মুহূর্ত গুলো কখনও হয়ত জীবনে আর ফিরে আসবে না।কৈশোরের ভালোলাগা থেকে ধীরে ধীরে ভালোবাসা তৈরী হওয়া,সম্পর্ক শুরুর আগেই ভেঙে যাওয়া,দূরে দূরে থাকা এসব অনেক হয়েছে।কিন্তু আজকের এই আকস্মিক ভাবে এত কাছাকাছি দুজনের থাকাটাও তো অন্যরকম একটা ব্যাপার!সে তো এসব কল্পনাও করেনি।তনু এতদিন ভেবেছিল সে তার মনকে বাঁধতে পেরেছে কিন্ত না সে কখনোই পারেনি!তা না হলে মিশকাতকে দূরে সরিয়ে দিতে পারছে না কেন?সে কথা ভাবতেই বুকের ভেতর জ্বলছে কেন?

“তুমি অনেক আগে থেকেই ওদের ব্যপারটা জানতে তাই না?”
শান্তার প্রশ্নে মারুফ ফোনের স্ক্রীন থেকে দৃষ্টি সরালো।

“হুম সেই শুরু থেকেই।”

“তবে ওদের মাঝে এত ঝামেলা কেন?”

“সব সম্পর্কের ধরণ এক হয় না রে পাগলি!ভালোবাসি মুখে বলেই সব সম্পর্কের সূচনা হয় না।”

“তাহলে ওদের ভবিষ্যৎ কি?”

“সেটা তো সৃষ্টিকর্তা ভালো জানে।মিশকাত প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেখবি একদিন তনু চাওয়ার থেকেও অনেক বেশি কিছু পাবে।সেদিন ও আর মিশকাতকে ফেরাতে পারবে না!”

“আমার কিন্তু বড় মামিকে নিয়ে ভয় হয়।”

“এখন আর সেই ভয় নেই।মিশকাত সবটা জানে।ও সবটা সামলে নেবে সে বিষয়ে নিশ্চিত থাক।”

“কিভাবে জানে?”

“সে অনেক কথা।আয়রা আপার বিয়ের সময়ই জেনেছিল।”

“ওমা তাই নাকি?তাহলে মিশকাত ভাই যে ওমন হুট করে চলে গিয়েছিল?”

“কি জানিস তো?কখনও কখনও চলে যেতে হয় ফিরে আসার জন্যই।মিশকাতের চলে যাওয়াটা দরকার ছিলো।ও সেদিন চলে গিয়েছে জন্য দেখ সবটা কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে!”

শান্তা একবার পেছন ফিরে তাকালো।তনুর কাঁধে মাথা রেখে মিশকাতকে ঘুমাতে দেখে হেসে ফেলল। মারুফকে ফিসফিসিয়ে বলল,

“মিশকাত ভাই কি সত্যি সত্যি ঘুমোচ্ছে?”

মারুফ হেসে উঠল।বলল,

“তুই বুঝে নে।”

পৌঁছানোর ঠিক বিশ মিনিট আগে মিশকাত উঠল।তনুর কাঁধ শক্ত হয়ে গেছে।প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।মিশকাত আড়মোড়া ভেঙে বলল,

“তোর খিদে পেয়েছে খুব? মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেন?শোন,তুই সিলেটে এসেছিস এখানে সবকিছুতেই সজীবতা মাঝখান থেকে তুই এমন মরা মরা হয়ে থাকবি না বলে দিলাম!”

তনু হাসবে না কাঁদবে না রাগবে কিছু বুঝে উঠল না তার।গন্তব্য আসায় নেমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো। রাফাতও ইশারায় ওদের নামতে বলল।তনু ঘাড় ঠিকমতো সোজা করতে পারছে না।মিশকাতকে বসে থাকতে দেখে বলল,

“নামবে না? ”

মিশকাত অলস ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। তনুর খুব কাছে মুখটা এনে বলল,

“তোর শরীরে বিয়ে বিয়ে গন্ধ! এটার কারণ কিরে?”

তনু স্তব্ধ হয়ে রইলো।মিশকাত হাসতে হাসতে নেমে গেল। সে একটুও ঘুমোয় নি।জেগে থাকলে তনু সহজ হতে পারতো না এমনি কি এই সুন্দর সময়টাও ওদের ঝুলিতে জমা হতো না।তাই ঘুমের ভান ধরেছিল।ইচ্ছে করেই তনুর কাঁধ থেকে মাথা সরায় নি।এত বছরের দূরত্ব সে পইপই করে সবটার হিসেব তুলবে,হু।হোক না কষ্ট তাতে কি? তনু এতদিন ধরে কি তাকে কম কষ্ট দিয়ে এসেছে?

সবাই “রেইনবো গেস্ট হাউজে”উঠেছে।রাফাত দুদিন আগেই তিনটে রুম বুক করে রেখেছে।
সবাই রুমে গিয়েই ধুপধাপ করে শুয়ে পরল।আয়রা সারাটা পথ ঘুমিয়ে এসেছে তাই এখন তার ক্লান্ত লাগছে না।ওয়াশরুমে।ঢুকলো ফ্রেশ হতে।মারুফ আর মিশকাত একরুমে। শান্তা তনু এক রুমে।বিকেলে ওরা বের হবে সিলেট সদরে যে কয়টা চা বাগান আছে তার যেকোনো একটা দেখতে।তনু সবথেকে বেশি উত্তেজিত চা বাগান দেখার জন্য। এর আগে কখনও সিলেট আসা হয়নি।

তনু ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করছে।শান্তা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে তনুকে দেখে হেসে বলল,

“তোর কাঁধটা একটু টিপে দেব? ”

তনু শিউরে উঠল।লজ্জায় কথা বলতে পারলো না।দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।ঘন্টাখানেক আরাম করে খেয়ে ওরা বের হলো!” মালনীছড়া চা-বাগানের” উদ্দেশ্যে।গাড়িতে বসে তনু একবারও মিশকাতের দিকে তাকায়নি এমনকি খাবার সময় সবাই গল্পগুজব করলেও সে চুপচাপ ছিল।

চারপাশে উঁচু নিচু টিলা সাথে সবুজের সমারোহ! কারো মুখে কোনো কথা নেই।সবাই প্রকৃতির মাঝে বিভোর। রাফাত মিশকাত মারুফ আগেও সিলেট এসেছিল অথচ মনে হচ্ছে নতুন করে সব দেখছে।সৃষ্টিকর্তার কি অপরূপ সৃষ্টি! মালনীছড়া চা বাগানের প্রবেশ গেট অনেক গুলো।ওরা অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।আনন্দে তনুর চোখে পানি চলে এসেছে।এত সবুজের সমারোহ এই প্রথম কাছ থেকে দেখছে!বাকি সবার অবস্থাও একি।এই জন্যই বোধহয় সিলেটকে” দুটি পাতা একটি কুঁড়ির” দেশ বলা হয়!বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ চা বাগান এই সিলেটেই অবস্থিত।তনু এতটাই বিভোর ছিল যে মিশকাত কখন এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে।মিশকাত তনুর অনেকটা কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

“আমায় ছাড়া তোর এই প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যাওয়া কি উচিত?”

তনু চমকে উঠে পেছন ফিরতে মিশকাতকে দেখল। কিছু বলল না সে তো বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তবে মিশকাতের চোখের ভাষা খুব করে বুঝলো।সে এতক্ষণ যে মুগ্ধতা নিয়ে সবকিছু দেখছিল ঠিক তেমনই মুগ্ধতা নিয়ে মিশকাত অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে!

আয়রা খুশিতে লাফাচ্ছে প্রায়।রাফাতের শার্ট ধরে ঝুলছে বারবার।রাফাতের বুকের কাছটা কুঁচকে গেছে তবু হাসি মুখে আয়রার পাগলামি গুলো দেখছে।আয়রার যেন খুশি ধরে না।ইচ্ছে করছে রাফাত কে নিয়ে এখানেই সংসার করতে।দুজনে মিলে এই চা বাগানে কাজ করবে!রাফাত বোধহয় সেই ভাব বুঝতে পারলো।হেসে বলল,

“আয়রা এখানেই থেকে যাবে?”

“হ্যাঁ, আমার খুব ইচ্ছে করছে।”

“তাহলে আমার কি হবে?”

“আপনিও তো আমার সাথেই থাকবেন।”

“আমাদের বাবু কোথায় থাকবে?”

আয়রা সবকিছু দেখতে দেখতে উত্তর দিলো

“আমাদের সাথে।”

রাফাত জোরে হেসে উঠল।আয়রা একটু পর বুঝতে পেরে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।মুখ লুকোনোর জায়গা হিসেবে রাফাতের বুকটাই পেল।

চলবে..

#তনয়া
#পর্ব-১৫

রাতে খাবারের সময় আরাফ ফোন করলো রাফাতকে।কয়েকবার কেটে দেয়ার পরেও আরাফ বারবার ফোন করছে তাই বাধ্য হয়ে ধরলো।

“হ্যালো, ফোন দিচ্ছিস যে এত সবকিছু ঠিকঠাক আছে?”

“কিছুই ঠিক নেই।তুই এত বড় স্বার্থপর কবে থেকে হয়ে গেছিস সেটা আগে আমায় বল?”আরাফের কন্ঠে ক্ষোভ ঝরে পরছে।রাফাত জানত এমনটাই হবে তাই সে বেশি রাগলো না।বলল,

“কি করেছি আমি যে তোর কাছে স্বার্থপর হয়ে গেলাম?”

“তুই আমায় একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?হানিমুনেও তো যাস নাই, সবাইকে নিয়ে ঘুরতে গেছিস অথচ আমি কিছুই জানি না!”

“তোর সাথে কত ঘুরেছি বলত তাই এবার ভাবলাম তোকে আর বিরক্ত না করি।এমনিতেও খালু তোকে অফিস থেকে ছুটি দিতো ভেবেছিস?”

“সেটা আমি বুঝতাম।তবে তোর থেকে এটা আশা করিনি আমি?”

“দেখ তোকে খুলেই বলি,আয়রা আর আমার এটা বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে আসা।জানিস তো তোর ভাবি একটু ইনট্রভার্ট!একা আমার সাথে আসলে তেমন খুশি হতো না।তাই ওর ভাইবোনদের নিয়ে এসেছি।পরের বার তোদের সাথেও ঘুরবো।তাছাড়া তনু আসবে জন্য তোকে আমি ইচ্ছে করেই জানাই নি।পরিস্থিতি তো তুই খারাপ করে রেখেছিস।দুজনের কেউই তোরা স্বাচ্ছন্দবোধ করতি না।বিশেষ করে তনুর খুব অসুবিধা হতো।”

“তোর কি মনে হয় আমি তনুর সাথ হ্যাংলামো করেছি কখনও?”

“যা করেছিস তাতেই অনেক হইছে।তা না হলে তনুর মত নেই জানার পরও তুই ওর আশায় বসে আছিস।এটা কি হ্যাংলামো নয়?”

“আচ্ছা,বাদ দে কোন হোটেলে উঠেছিস? ”

“কেন তুই শুনে কি করবি?”

“আমি আজ রাতের গাড়িতে উঠব।সকালে সিলেট পৌঁছাব।”

রাফাত এবার ঝটকা খেল।আরাফ সত্যি বেশি বেশি শুরু করেছে।আসবে মানেটা কি?

“কি বলছিস, তুই আসবি কেন?”

“তোদের সাথে ঘুরতে।”

“দেখ রাফাত তোকে সবটা খুলে বলার পরও তুই পাগলামি করছিস কিন্তু? ”

“তুই পাগলামির কি দেখলি এখানে?তোরা সবাই ঘুরছিস আর আমি যদি তোদের সাথে যোগ হই তাহলে সেটা পাগলামি?”

“তুই কেন আসতে চাইছিস সেটা বুঝতে পারছি জন্যই তো মনে হচ্ছে পাগলামি ছাড়া কিছুই না।তোকে মানায় না এসবে বোঝার চেষ্টা কর একটু?”

“আচ্ছা ঠিক আছে সিলেটে নেমেই না হয় শুনে নেব কোন হোটেলে উঠেছিস?”

রাফাত চাইলেও কিছু বলতে পারলো না আরাফ ফোন কেটে দিয়েছে।মেজাজ চটে গেল রাফাতের। সবাই ততোক্ষণে সবটা বুঝে গেছে।মিশকাত মনে মনে হাসছে।সে জানতো এরকম কিছু হবে তাই অনেক সমস্যা রেখেও এসেছে।মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল হয় না তার।আরাফ যে সহজে তনুর পিছু ছাড়বে না তাও বুঝে গেছে।তনু তো তার থেকে দূরে এমনকি এখনও দূরে সরে আছে তবু সে এমন হ্যাংলামো করেনি।তনুর ওপর কোনোরকম চাপ প্রয়োগ করে নি।ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার জোর করে কখনও হয়না।তনুর সবটা জানার পরেও আরাফের এমন জেদ সত্যি দৃষ্টিকুটু।কারণ বাস্তবতা খুব কঠিন।এত সহজে তনুর ব্যাপারটা মেনে নিয়ে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে তনুকে ভালোবাসতে ভালো রাখতে পারবে?সে নিজেকে দিয়েই তো বুঝে!সবটা জানার পর তো সে খুব সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এতবছর ধরে পুড়ে পুড়ে খাঁটি হওয়া ভালোবাসাও ক্ষনিকের জন্য বিপাকে পরেছিল।তাই তো খুব দ্রুত তাকে অনেক কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হচ্ছে। সেও যদি আরাফের মতন স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটা নিতে তাহলে তনু আরও বেশি দূরে সরে যেত।

“ওকে আসতে দাও ভাই?আসুক না সবাই এক সাথে ঘুরবো মজা করবো ভালোই হবে।”

সবাই চমকালো মিশকাতের কথায়।সবথেকে বেশি তনু অবাক হলো।কি চলছে মিশকাতের মনে সেটা বুঝতে পারছে না।

“কি বলছো ভাই?”

“কেন সমস্যা কি আসলে?তনুকে নিয়ে তো আর পালিয়ে যাবে না।আর যদি পালায় আমরা বেঁচে যাব।ফুপার কত গুলো টাকা বেঁচে যাবে বলতো?

এমন সিরিয়াল সময়ে মিশকাতের এমন ফালতু কথায় তনুর প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। সে হনহনিয়ে চলে গেল নিজের রুমে।

মিশকাত জোরে হেসে উঠল।আয়রা বলল,

“এটা কি করলি?ওমন ভাবে বললি কেন?”

“বললাম কারণ তনু যেন রেগে এখান থেকে চলে যায় আর আমরা সবাই মিলে আলোচনা করতে পারি। ওর সামনে আরাফকে নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।”

“ওয়াও, ভাই তুই তো পুরো জমিয়ে দিচ্ছিস!মারুফ হাত তালি দিয়ে বলে উঠল।

রাফাত জানতে চাইলো,

“কি করতে চাইছো তুমি মিশকাত?”

মিশকাত বলল,

“আরাফকে বুঝিয়ে দেব তনুকে আমি ভালোবাসি।তাই তনুর থেকে দূরে থাকাই ওর জন্য ভালো হবে।আমার জানা মনে আমার আর তনুর বিষয়টা আরাফ এখনও জানে না।জানলে নিশ্চয়ই এতদূর এগোতে চাইতো না?ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে তনুও আমায় ভালোবাসে!যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে অন্যপথ ভাবতে হবে। আমি থাকতে তনুকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া হতে পারে না।”

***
সারারাত ছটফট করেছে তনু।পাশেই শান্তা বেঘোরে শান্তি মতন ঘুমিয়ে আছে।ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তনু বিছানা ছেড়ে উঠল।বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলো পুরো হোটেল কেমন ভুতুড়ে হয়ে আছে।কোথাও কেউ নেই।একটু ভয় করলেও সে হেটে এসে সুইমিংপুলের ধারে বসলো।কয়েক বছর ধরে নির্জনতা খুব পছন্দ তার।এইরকম পরিবেশে সে নিজেকে খুঁজে পায় যেন।সবার মাঝে থেকেও আজকাল খুব একা লাগে নিজেকে।আনমনে হয়ে যায় মন হুট করেই।যেন কারও জন্য অপেক্ষায় থাকে বেহায়া মনটা।সবসময় মনে হয় এই বুঝি কেউ এসে বসবে তার কাছে!পরম আদরে হাতটা ধরে বলবে,

” তনু তুমি একা নও,আমি আছি তেমার পাশে!”

হুট করে পুরুষ কন্ঠ পেয়ে ভয়ে কেঁপে উঠল।পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেছে।তাই দেখে মিশকাত মিটিমিটি হাসছে।

তনুর ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে মিশকাতকে সুইমিংপুলের পানিতে চুবিয়ে মারতে।কি অসভ্যতা শুরু করেছে তার সাথে?এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আর কিভাবে বলল কথাটা?তনুর পাশে থাকবে যেন বাংলা সিনেমার সস্তা ডায়গল!

“শোন,যেটা ভাবছিস সেটা করেই ফ্যাল। ভাবছি ভোরে সুইমিংপুলে নামতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে!”

“তুমি দিন দিন কেমন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো মিশকাত ভাই?”

তনুর কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই মিশকাত তনুর হাতটা ধরে ঝাপ দিলো সুইমিংপুলে।বিষ্ময়ে তনুর চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেছে।এমন অদ্ভুত কান্ড জীবনে কমই হয়েছে তার।

কিছুটা চিৎকার করে বলল,

“এটা কি করলে তুমি?”

“শোনেন, নবাবজাদী এই মিশকাত কখনও কারও খারাপ করে না।সারারাত তো ঘুমাস নাই এখনে কিছুক্ষণ থাক।এরপর ঘরে গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবি দেখবি কতটা ভালো লাগছে।এরপর তো আমরা ঘুরতে বের হবো।তখন ক্লান্ত লাগবে না।”

“আমার হাত ছাড়ো তুমি?”

“আমি তো কখনও তোর হাত ধরতে যাই নি রে!আজ একটু ধরতে দে প্লিজ?”

কি নিঃসংকোচ আদেবন!তনুর শিরদাঁড়া বেয়ে অজানা অনুভূতির শ্রোতা বয়ে গেল।দুজনেই নীল স্বচ্ছ পানিতে দাঁড়িয়ে আছে।কথা নেই কারও মুখেই।শুধু চলছে অনুভূতিদের দৌরাত্ম্য!মিশকাত শুধু তনুর হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।

আরাফ খুব সকালে পৌঁছে গেছে।রাত এগারোটায় গাড়িতে উঠেছিল সাড়ে চারটা নাগাদ সিলেটে পৌঁছেছে।হোটেলে আসতে পাঁচটা পার জয়ে গেছে।এত সকালে চেক-ইন হয় না।রাফাত থাকায় কোনো সমস্যা হবে ভেবেই সে এসেছে।রাফাতকে বারবার ফোন দিচ্ছে হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে।রাফাত ফোন তুলছে না।বিরক্ত হয়ে রাফাত হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের পেছনে চলে আসলো।সুইমিংপুলের কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here