“রূপগঞ্জের রূপসী” পর্ব- ১৮

0
1470

“রূপগঞ্জের রূপসী”
পর্ব- ১৮
(নূর নাফিসা)
উৎসর্গে – Imran Mahmudul
.
.
অত:পর শুরু হলো তাদের মূল আলোচনা। নীলা বেশিদিন থাকবে না বাংলাদেশে। তাই ঘুরাফেরার কথা চিন্তা করছিলো তারা। ছোটাখাটো একটা ফ্যামিলি পিকনিক হলে ভালো হয়। আলোচনায় ফোন কলে নীলাকেও সাথে নিয়েছে। ইমরান নাফিসার বিয়ের আগেই তারা কোথাও যেতে চাইছে। বিয়ের পরেও যাবে আরও কোথাও। প্রথমে তারা কক্সবাজার সিলেক্ট করলো। কিন্তু সুমি আপত্তি জানালো। সামনে বিয়ে। বিয়ের কত কাজকর্ম ছড়িয়ে আছে। তাই কক্সবাজার বেড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সময় এখন নেই। কক্সবাজার গিয়ে যদি তিন চারদিন না কাটায় তাহলে মজাটাই নষ্ট হবে। তারাহুরোর ট্রিপে কোনো মজা নেই। যদি কোথাও যেতেই হয় তাহলে ঢাকার ভেতরই জায়গা সিলেক্ট করা হোক। অত:পর সব ভেবে তারা সিলেক্ট করলো বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানা যাবে। এতে বাচ্চারা আনন্দটা বেশি উপভোগ করবে।
রাতে আর ইমরানকে যেতে দেয়নি। ভাইয়ারা তাকে সাথে নিয়ে রাত এগারোটা পর্যন্ত বাইরে থেকে আড্ডা দিয়ে এসেছে আর ইমরানকে থেকে যেতে বাধ্য করেছে। ইমরান এবাড়িতে থাকলে নাফিসা আপুর রুমে ঘুমায় আর পাবেল ইমরানের সাথে গেস্ট রুমে।
সকালে সবাই দ্রুত ঘুম থেকে উঠে সকল কাজ সেড়ে নাস্তা করে নিলো। বাচ্চাদের গোসল করিয়ে রেডি করিয়ে নাফিসাও গোসল করে জামা পড়ে রেডি হয়ে গেলো। তারপর গেস্ট রুমে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হিজাব পড়ছিলো৷ এমনি ইমরান এলো রুমে। এতোক্ষণ হয়তো সে রেডি হয়ে বাইরে ছিলো। নাফিসা আয়নাতেই দেখলো তাকে। সে কালো শার্ট, নাফিসাও কালো ড্রেস। অজান্তেই ম্যাচ হয়ে গেছে! ইমরানও আয়নায় নাফিসার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চুপচাপ খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো। নাফিসা হিজাব পড়তে পড়তে বললো,
“কিছু বলবেন?”
“হুম।”
“কি?”
“হাতের ব্যান্ডেজটা কি খুলে ফেলব নাকি আরো রাখতে হবে?”
“রাখতে প্রব্লেম কি?”
“রাখলে তো তোমারই প্রব্লেম।”
“মানে!”
“পিকনিকে আমাকে খায়িয়ে দিতে হবে।”
“উহ! চামচ ধরে তো খেতেই পারেন। সেখানে তো আপনাকে আর ভাত খেতে দিবে না যে মেখে খেতে হবে!”
নাফিসাকে বিব্রত করতে পেরে ইমরান হেসে উঠলো এবং বললো,
“আচ্ছা, ভয় পেয়ো না। খায়িয়ে দিতে হবে না। তোমার হিজাব পড়া শেষ হলে এবার এটা চেঞ্জ করে দাও। গোসল করতে গিয়ে ভিজে গেছে। এজন্যই এসেছি।”
নাফিসা ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিতে নিতে বললো,
“ভয় পাইনি আমি। খায়িয়ে দেওয়া ব্যাপার না। আরোশী আয়াশকে খায়িয়ে দিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।”
“তাহলে তো ভালোই! নেক্সট জেনারেশনে কাজে লাগবে।”
নাফিসার চেহারায় লজ্জা ফুটে উঠেছে। সে চুপচাপ ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে খাটে ইমরানের পাশে বসলো। হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেখলো কাটা জায়গা গুলো একটু শুকিয়ে গেছে। ইনফেকশনের আর তেমন ভয় নেই। তাকে এভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেখে ইমরান বললো,
“কি দেখছো এভাবে? জ্যোতিষীর মতো হাতের রেখা দেখা শুরু করেছো নাকি!”
ইমরান আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে তাই কথায় কথায় বিদ্রুপ ও লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে! যেটা মন্দ লাগছে না নাফিসার। সবসময় এমন ফুরফুরে মেজাজেই থাকুক। এভাবেই নাফিসার ভালো লাগে তাকে। নাফিসা স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলো,
“না, রেখা দেখছি না। কাটা জায়গা শুকিয়ে গেছে তাই আর ব্যান্ডেজ না করলেও চলবে।”
“তাহলে আর প্রয়োজন নেই। রেখে দাও।”
“কি দরকার ছিল ইচ্ছে করে এমনটা করার! কতগুলো দাগ বসে গেছে। নেক্সট টাইম এমন কিছু করতে গেলে আমি তার চেয়েও বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলবো।”
“আমি ইচ্ছে করে করিনি। কিভাবে হয়ে গেছে জানিনা। আপুরা মনে হয় সবাই রেডি, চলো।”
নাফিসা ড্রয়ারে বক্স রেখে বাইরে বেরিয়ে গেলো। সবাই রেডি। নীলা ও সুমন ইমরানের গাড়িতে মিরপুর গিয়ে তাদের সাথে যুক্ত হবে। এদিকে পাবেলও নেই। সাঈদকে আনতে চলে গেছে শ্বশুর বাড়ি। সাঈদকে নিয়ে সে-ও সরাসরি মিরপুর চলে যাবে। আর বাকিরা এবাড়ির গাড়িতে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা চিড়িয়াখানায় চলে এলো। সাঈদ ও পাবেল তাদের আগেই পৌছে গেছে। আর নীলা ও সুমন তাদের পৌছানোর পরপরই এসেছে। আজ ছুটির দিন হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে চিড়িয়াখানার ভেতর থেকেই তারা হাওয়াই মিঠাই কিনলো। সাঈদসহ সব বাচ্চারা খেতে খেতে নাকে মুখে লাগিয়ে নিয়েছে হাওয়াই মিঠাই।
গল্পগুজব সহিত সম্পূর্ণ এরিয়া ঘুরে সেখান থেকে বেড়িয়ে লাঞ্চ করে নিলো তারা। এখন মাত্র ৩টা বাজে। এখন বাসায় যাবে না। তাই আরেকটু ঘুরাফেরার জন্য সবাই চলে এলো বোটানিক্যাল গার্ডেনে। চিড়িয়াখানায় অনেক মানুষ থাকলেও এখানে তেমন মানুষ নেই। জায়গাটা নাফিসার বেশ পছন্দ। কারণ, সবসময়ই তার প্রাকৃতিক পরিবেশ পছন্দ। প্রকৃতি যেন তাকে চুম্বকীয় আকর্ষণে টানে!
বেশ কিছুক্ষণ বোটানিক্যাল গার্ডেনে হাটাহাটির পর তারা ফাঁকা জায়গায় মাঠের মধ্যে সবাই ঘাসের উপর গোল হয়ে বসলো গেম খেলার জন্য। এখানে তো আর কুশন নেই! কিন্তু আয়াশের হাতে ছোট ফুটবল আছে। তাই খেলা হবে আয়াশের ছোট ফুটবল নিয়েই। নাফিসা রাউন্ডের বাইরে আরোহী ও সাঈদের কাছে ফোন দিয়ে এলো মিউজিক অন/অফ করার জন্য। রাউন্ডের কাছে এসে দেখলো তাকে বাদ দিয়েই তারা গোল হয়ে বসে আছে! তাই বললো,
“আমি বসবো কোথায়?”
ইমরান হুট করেই বলে উঠলো,
“তোমার বসার জায়গা নেই! আমার কোলেই বসো তাহলে।”
এটা মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমি মনে হলো নাফিসার কাছে! সে সব ভাইয়া আপুদের সাথে ফ্রি হতে পারে কিন্তু নাফিসা তো নীলা আপু, কিংবা সুমন ভাইয়ার সাথে তেমন ফ্রি না! বাকিদের কথা বাদ রেখেও তাদের সামনে কি করে তাকে এভাবে লজ্জায় ফেলতে পারে স্টুপিডটা! নাফিসার এখন ইচ্ছে করছে ডট ডট ডট….! রাগটা কন্ট্রোল করে সে সেকেন্ডের মধ্যেই ইমরানের উপর শোধ তোলার উপায় খুঁজে পেল। রাউন্ডের মাঝে আরোশী আর আয়াশ ছুটাছুটি করছিলো। নাফিসা তাদের ডেকে এনে ইমরানের কোলে বসিয়ে দিয়ে বললো,
“খুব কোলে নেয়ার শখ হয়েছে না আপনার! এবার নিয়ে বসে থাকুন।”
সবাই তখন মুখ চেপে হাসলেও এবার অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে! ইমরান দুজনকে কোলে নিয়ে বসে থেকেই নির্লজ্জের মতো হেসে বললো,
“তবুও তো তোমার বসার জায়গা নেই!”
নাফিসা মুখ মোচড় দিলো। এদিকে আপুরা একটু পেছনের দিকে চেপে বসে তাকে বসার জায়গা করে দিলে সেখানে বসলো সে। অত:পর শুরু হলো খেলা। যার কাছে মিউজিক স্টপ হলো, বিপরীত জন তাকে প্রশ্ন করবে আর সে সঠিক উত্তর দিবে। প্রথমবার সুমির চান্স ছিলো। প্রশ্ন করেছে নীলা। দ্বিতীয় বার চান্স হলো ইমরানের। আর ইমরানকে প্রশ্ন করলো পাবেল,
” ইমরান জীবনে কতবার প্রেমে পড়েছো?”
ইমরান উত্তরে জানায়,
“প্রেমে পড়েছি বহু জিনিসের উপর ভিন্নভাবে বহুবার, কিন্তু জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য একজনের উপরই বহুবার।”
পাবেল উল্লাসিত হয়ে বললো,
“ফ্যান্টাস্টিক!”
খেলা চলতে চলতে নাফিসার চান্স এলো সপ্তমে। অন্যকেউ বলার পূর্বে ইমরান বলে উঠলো,
“নাফিসাকে আমি প্রশ্ন করবো।”
সবাই সম্মতি দিলে সে বললো,
“শতভাগ সত্যি বলবে।”
“ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন?”
“না, সত্যিটা জানার।”
“কথা না ঘুরিয়ে প্রশ্ন করুন।”
“রূপগঞ্জ থেকে ফিরে আসার পর গত তিন বছরে আমাকে কতবার মনে পড়েছে?”
এমন প্রশ্নে নাফিসার খুব রাগ হলো। তাই সে কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলো সেখান থেকে।
নীলা ইমরানের উপর বিরক্ত হয়ে বললো,
“দিয়েছিস তো মেয়েটার মুডটা নষ্ট করে!”
ইমরান বসা থেকে উঠে যেতে যেতে বললো,
” তোমরা খেলো। আমি আসছি।”
.
নাফিসা দ্রুত পা ফেলে পুকুর পাড়ে চলে এসেছে। জুতা খুলে পানিতে পা রেখে নিচের সিড়িতে বসে আছে। খুব কান্না পাচ্ছে তার! এখানে এমন প্রশ্ন করার কোন মানে হয়! এ কেমন মানুষ! সবকিছু জেনে-বুঝে কেন বারবার তাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে! সে কি জানে না তাকে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারেনি! সে কি বুঝে না, তার সাথে কথা বলতে গেলেই নাফিসা লজ্জাবোধ করে। সেখানে তার সম্পর্কে অন্যের সামনে এভাবে জানার কি আছে! বারবার কেন তাকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে!
মনে মনে কথা বলতে বলতে নাফিসা চোখের পানি ফেলছে। অতি রাগ অতি কষ্টে আসা এই চোখের পানি! একটু পর ইমরানও এসে তার পাশে বসে পড়লো এবং পানিতে পা রেখে বললো,
“আপুদের সামনে এই উত্তরটা দিতে পারো না তুমি রাগ করে ফেলো। আর সেদিন শপিংমলের কতগুলো লোকের সামনে এভাবে হেসেছো যেটা ছিলো আমার প্রিয় হাসি!”
নাফিসা বিস্মিত হয়ে অশ্রুসিক্ত লোচনে তাকালো তার দিকে! এবং বললো,
“সেজন্য প্রতিশোধ নিচ্ছেন আমার উপর?”
ইমরান মাথা দু’দিকে নেড়ে বললো,
“প্রতিশোধ নিতে যাবো কেন? কাউকে ভালোবাসলে তার উপর প্রতিশোধ নেওয়া যায় না। কথাটা এজন্য বললাম কারণ, আমি চাই না আমার ব্যক্তিগত প্রিয় বিষয়বস্তু অন্যের সামনে কারণে অকারণে এভাবে হাস্যকরভাবে উপস্থিত হোক। তুমি জানো, সেদিন সবাই তোমাকে পাগল ভাবছিলো! এসব পাগলামো গুলোতো আমার একক প্রিয় থাকবে। সেগুলো অন্যের সমালোচনায় কেন যাবে। তাছাড়া এখানে তো ফ্যামিলির বাইরের কেউ নেই। এইটুকু একটা প্রশ্নে তুমি এতোটা রাগ করবে আমি ভাবতে পারিনি। তাদের সামনে আমি যতটা ইজি ছিলাম তোমাকেও ততটাই ইজি ভেবেছিলাম। এখন দেখলাম তুমি মোটেও ইজি না।”
“সব ক্ষেত্রে ইজি হওয়া যায় না। আপনার ব্যাপারে আমি অন্যের কাছে ইজি হতেও চাই না। ওইযে, যেমনটা বললেন একক প্রিয়।”
ইমরান মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললো,
“আচ্ছা, সরি।”
নাফিসা তার কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ। এবার ইমরান তার দিকে একটু চেপে বসলো। নাফিসা আরেকটু দূরে সরে গেলো। ইমরান আরো কাছে এসে বসলো। নাফিসা বিপরীত দিকে আরেকটু সরে বসলে, সেও আরো কাছে এসে বসলো। নাফিসা আরও একটু সরে বসলে ইমরান একই কাজ করলো। এবার নাফিসা সিড়ির শেষ মাথায় এসে পড়েছে। আর চাপার জায়গা নেই! অজান্তেই তার খুব হাসি পেলো। অন্যদিকে তাকিয়েই নিশব্দে ফিক করে হেসে দিলো তার কান্ড দেখে। আর ইমরানের উক্তি,
“বাহ! মুখে হাসি আর চোখে জল! এমন ভঙ্গির নাম কি শুনি?”
নাফিসা হাসি থামিয়ে একটু গম্ভীরমুখে বলার চেষ্টা করলো,
“এখানে কি আপনার? আপু ভাইয়াদের কাছে যান।”
ইমরান মুচকি হেসে তার জবাব দিলো,
“প্রথমত, এখানে আমার হবু বউ। দ্বিতীয়ত, ভয় হয় তোমাকে একা ছাড়তে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে যেই থ্রেড দিয়েছো! যদি সত্যিই নিজের কোন বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলো!”
নাফিসা গোমড়া মুখু হয়ে তাকালে ইমরান বললো,
“নৌকায় ঘুরবে?”
নাফিসার মুখভঙ্গি ইতিবাচক হয়ে উঠলো তাই ইমরান বললো,
“ওয়েট, আসছি।”
ইমরান সিড়ির বিপরীত পাশে গিয়ে পায়ে চালানোর নৌকা নিয়ে এলো নাফিসার সামনে। তাকে নৌকায় উঠানোর জন্য ইমরান হাত বাড়ালো ঠিকই কিন্তু হাত মুঠ করে। এভাবে হাত বাড়ালে সে উঠবে কিভাবে! তাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাফিসা। ইমরান মৃদু হেসে বললো,
“আমার তো টাচ করা নিষেধ। তুমি আমাকে টাচ করতে পারবে। আমার হাত ধরে উঠো।”
নাফিসার খুব হাসি পেলো তার কথায়। সে মুখচেপে হেসে তার হাত ধরে উঠে পড়লো এবং তার বিপরীতে বসলো। ইমরান ধীর গতিতে নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে আর নাফিসা পানিতে হাত ভিজিয়ে খেলা করছে। এখানে কেউ নেই, চারিপাশের গাছের ছায়ায় শীতল জায়গা ও মৃদু বাতাস খুব ভালো লাগছে পরিবেশটা। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরার পর কেউ বলে উঠলো,
“এতো আস্তে নৌকা চালালে তো এক যুগ লেগে যাবে এই পুকুর ঘুরতে।”
নাফিসা, ইমরান দুজনেই অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো পাবেল ভাইয়া শান্তা আপু, আর আয়াশ তাদের পাশে এক নৌকায়! নাফিসা লজ্জা পেলো পাবেলের কথায়। সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরো দুই নৌকা। একটিতে সুমন, নীলা আর আরোহী। অন্যটিতে সাঈদ, পারভেজ, সুমি ও আরোশী। এদিকে পাবেলের কথায় ইমরান বললো,
” ধুর! দিলেন তো প্রেমের বারোটা বাজিয়ে! চাইছিলাম ই তো যেন এক যুগ চলে যায়।”
নাফিসা মনে মনে ইমরানকে স্টুপিড বললো আর পাবেল হেসে উঠে বললো,
“সরি ভাই সরি।”
পাবেল হাসতে হাসতে নৌকা টেনে একটু সামনে নিয়ে গেলে ইমরান বললো,
“রূপসী, দেখেছো সব নৌকায় কাপল প্লাস বাচ্চা আছে । মনে হচ্ছে প্রত্যেক নৌকাতে এক একটি পরিবার। শুধু আমাদেরটা ই মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড প্লাস বয়ফ্রেন্ড। আমাদেরও পরিবার বানানোর জন্য একটা বাচ্চা দরকার ছিলো, তাইনা?”
ক্ষণে ক্ষণে এমন লজ্জা দেওয়ার কারণে নাফিসা রেগে তার গায়ে পানি ছিটাতে লাগলো।
” সবসময় শুধু আমাকে লজ্জায় ফেলার সুযোগ খুজেন তাই না!”
ইমরান হাসতে বললো,
” আরে ভিজে যাচ্ছি তো!”
অত:পর নাফিসাকেও পানি ছিটাতে ছিটাতে সে বললো,
“এতোক্ষণ ধরে তো এটাই চাচ্ছিলাম যেন পানি ছিটানোর ফার্স্ট স্টেপটা তুমিই নাও।”
” এখানে কিছু থাকলে পানি ঢেলে এখন আপনাকে গোসল করিয়ে ছাড়তাম। নৌকা ডুবালে তো আমিও ভিজে যাবো, তাই বেচে গেলেন।”
“হা হা হা… তুমি বললে, আমি পুকুরে ঝাপিয়ে পড়তেও রাজি আছি। দেব নাকি ঝাপ?”
“না, কারো অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী হতে পারবো না।”
ইমরান হাসলো। এতোক্ষণে পারভেজ তাদের নিকটে এসে গেছে।
“আমাদের রেখেই নৌকায় ঘুরাঘুরির প্ল্যান করেছো বুঝি!”
ইমরান বললো,
“সেই সুযোগ আর কোথায় পেলাম! সবাই তো এখানে।”
পারভেজ হেসে উঠলো। নাফিসা হুট করেই বলে উঠলো,
“ভাইয়া একটা রেস হয়ে যাক চার নৌকায়?”
“ওয়াও! গ্রেট! তাহলে আর দেরি কিসে! চলো শুরু করা যাক।”
পারভেজ সবাইকে ডেকে জানিয়ে দিলো রেস এর কথা। সবাই নৌকা একপাশে নিয়ে গেলো। এখন সবাই প্রস্তুত। সুমন বললো,
“স্টার্ট করা যাক তাহলে?”
নাফিসা বললো,
“দাড়ান ভাইয়া, আগে বলে নেই। যে ফার্স্ট হবে বাকিরা মিলে তাকে একটা গিফট দিবে।”
“ওকে ডান।”
নাফিসা ফিসফিসিয়ে ইমরানকে বললো,
“ফার্স্ট না হতে পারলে খবর আছে আপনার!”
ইমরান শরীর কপিয়ে হেসে বললো,
“গিফট এর জন্য?”
নাফিসা চেহারায় রাগান্বিত ভাব ফুটিয়ে তুললে ইমরান হেসে বললো,
” রাগ করো কেন! মজা করলাম।”
শুরু হয়ে গেলো প্রতিযোগিতা। সবাই খুব দ্রুত চালাতে লাগলো। ছেলেরা সবাই নৌকা চালাতে ব্যস্ত আর মেয়ে ও বাচ্চারা নৌকায় বসেই যার যার মাঝিকে চিতকার করে উৎসাহিত করতে লাগলো , অবশেষে ফার্স্ট হলো নাফিসাদের নৌকা অর্থাৎ ইমরান। আর সেকেন্ড সুমন, থার্ড পাবেল ও লাস্ট পারভেজ। হবেই না কেন! পারভেজের নৌকায় তো চার জন ছিলো। তবে ক্রম যেমনই হোক, সবাই খুব মজা পেলো রেস এ। তাদের চেচামেচিতে আশপাশ থেকে কয়েকজন এসেছে দেখার জন্য। নাফিসা উল্লাসিত হয়ে বললো,
“ইয়েএ…! আমাদের টা ফার্স্ট। গিফট টা তাহলে আমরা পাচ্ছি।”
সবাই হেসে উঠলো আর সুমি বললো,
“ওকে ওকে, গিফট পেয়ে যাবি।”
অত:পর সবাই নৌকা থেকে নামতে লাগলো। নাফিসাদের নৌকা একটু পেছনে, তাই সবার পরে নামবে তারা। নাফিসা হাতে একটু পানি নিয়ে ইমরানের মুখে ছিটিয়ে দিয়ে বললো,
“থ্যাংক ইউ।”
ইমরান মুচকি হেসে বললো,
“আমার গিফট তো আমি পেয়ে গেছি।”
“কি?”
“তোমার এই মনকাড়া হাসি আর আনন্দ।”
“ইশ! নৌকা সাইডে নিন, নামবো।”
অত:পর সবাই খুশি মনে বাসায় চলে এলো। তাদের গিফট বিয়ের পর দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here