ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত #পর্ব:২৮,২৯(প্রথমাংশ)

0
984

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৮,২৯(প্রথমাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২৮

অমিতের বন্ধু মেহরাজ নতুন ছয়তলা দালান তুলেছে। যার কাঠামো ঠিকঠাক দাঁড় করানো গেলেও ভেতরের অধিকাংশ কাজ আর্থিক সংকটের দরুন বন্ধ হয়ে আছে। সে চায় আগে ফ্ল্যাট বিক্রি করে তার অগ্রিম প্রাপ্ত টাকা দিয়ে দালানের বাকি কাজ শেষ করবে। অমিত সেই সুযোগটাই কাজে লাগায়। বন্ধুকে একজন ক্রেতার কথা বলে চাবি নিয়ে আসে। মেহরাজ জরুরি কাজে শহরে বাইরে গেছে। আর অনেক দিনের ভালো সম্পর্ক তার অমিতের সাথে। তাই আর গাইগুয়ি করেনি। অমিত সেই অর্ধসমাপ্ত দালানের একটা ফ্ল্যাটে এনে তুলেছে অরুনিকাকে।

অরুনিকা দম আটকে চেয়ে আছে। একটা শয়*তানি হাসি দিয়ে অরুনিকার পা থেকে হাত সরায় অমিত। আফসোস মিশ্রিত গলায় বলল—

“তোর বাপের কেন আমাকে খু*নি মনে হয় বলতো? রাসেলের মৃ*ত্যুর জন্য খালু এখনো আমাকে দোষারোপ করে। মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম আমি। রাসেল নিজেই আমাকে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে গিয়েছিল। ওই দলের ব্যাটসম্যান বল মা*রতেই রাসেলের মাথায় লেগে গেল। এতে আমার কী দোষ বলতো? তিনদিন হাসপাতালে থেকে রাসেল মা*রা যায়। আর ঠিক সেইদিন থেকে তোর বাপ আমার জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে। তার ধারণা, আমি ওকে খেলতে না নিয়ে গেলে এমন কিছুই হতো না। তোকে মেলায় নিয়ে গিয়েছিলাম এর জন্যও একবার তোর বাপ আমার গায়ে হাত তুলেছিল। তোদের বাড়িতে থাকতাম বলে কিচ্ছু বলিনি আমি। ”

অমিতের চোখের কোটর সিক্ত। অরুনিকা নিশ্চল, নিষ্কম্প, নিষ্প্রভ চোখে চেয়ে আছে। অমিত চোয়াল শক্ত করে ফেলল। দুইবার নাক টেনে বলল—

” আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। বাবা আমাকে কী পরিমাণ মে*রেছে তুই জানিস? জানিস না। কথা বলতো না আমার সাথে। এরপর আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়। একা, নিঃসঙ্গ আমি কী করে ওসব দিন পার করেছি শুধু আমি জানি।
এরপর আবার শৈবাল। তোর বাপ তো আমাকে অর্ধেক শেষ করেই দিয়েছে, বাকিটা শৈবাল। ওর কারণে আমি ইন্টারে ফেল করলাম। শুধু একটা সাবজেক্টের জন্য আমার একটা বছর নষ্ট হলো। আর এই কারণে বাবা আমাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। তিনবছর আমার মা কেঁদে কে*টে বাবার মন গলিয়েছে। আমার বাপ তো চাষা। তাই মনটাও যেমন রোদের মতো তপ্ত, ঠিক বৃষ্টির মতো শীতল। তোর বাপ আমাকে চাষার ছেলে বলত, তাই না?”

অমিতের আ*গুন ঝরা লোচনে অনিমেষ চেয়ে আছে অরুনিকা। তার কোনো ভাবাবেশ নেই।

পৃথিবী বড়ো অদ্ভুত ! আমরা সেখানে নিজ স্বার্থের বাইরে কিছু দেখি না। আপনজনের মৃ*ত্যু যেমন আমাদের বজ্রকঠোর করে তুলে, তেমনি তার প্রয়াণে আমাদের কুসুমের মতো কোমল করে তুলে। যা ঘটেছে হাসান আলী আর শৈবালের ক্ষেত্রে। দুটো মানুষ এক সুতোয় গেঁথে গেছে তাদের নিজের অজান্তে। পৃথিবী আসলে এক গোলক ধাঁধা। এখানে সবকিছু ঘটার পেছনে একটা সুক্ষ্ম কারণ থাকে। হিসাববিজ্ঞানে একটি কথা আছে, “সব লেনদেনেই ঘটনা, কিন্তু সব ঘটনা লেনদেন নয়।” অর্থের বিপরীতে ঘটা ঘটনাই শুধু লেনদেন হিসেবে বিবেচ্য। তেমনি, পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সব কিছুর পেছনে আপাত দৃষ্টিতে স্বার্থ না থাকলেও কারণ তো থাকে।
অমিত কী আসলেই দোষী? মৃ*ত্যুর ওপর তো আমাদের কারো হাত নেই। তবে কারো মৃ*ত্যুর জন্য আমরা কাউকে কী করে দায়ী করতে পারি?
অধিক শোকে নাকি মানুষ পাথর বনে যায়। হয়ে যায় প্রাণহীন এক জীবন্ত প্রাণ। তাতে কী আদৌ মনুষ্যত্ব বাঁচে? থাকে কী ছোট্ট দুই শব্দের মন? মন না থাকলে নাকি মানুষ হওয়া যায় না? তাহলে?

আমরা সবাই ভুল করি। কোনো ভুল ইচ্ছে করে, কোনো ভুল অজান্তে। আবার কোনোটা পরিস্থিতির চাপে। কারো জন্য সত্য মৃ*ত্যুর শামিল, কারো জন্য ফুলের মতো পবিত্র, স্নিগ্ধ। তবে জীবন বড়ো রোমাঞ্চকর ! কখন কী হয় বোঝা মুশকিল!

আমরা সবাই আবদ্ধ একটা চক্রে, একটা বৃত্তে। এক জীবন নামক বৃত্তে। যাতে আছে ভালোবাসা, ঘৃণা, বিরহ, মিলন, হিংসা, সহমর্মিতা ইত্যাদির সংমিশ্রণ। এই বৃত্ত কখনো আমাদের জীবনকে শুদ্ধ, নিরুপদ্রব ভালোবাসার ছায়াতলে আবদ্ধ রাখে। কখনো ঘৃণা, কপটতার যাতাকলে পিষে চলে। কখনো চোখের দর্পণে টাঙিয়ে দেয় কালো পর্দা। কখনো রঙিন করে তোলে স্বপ্ন।

আমরা কখনো চাই না আমাদের প্রিয় মানুষকে হারাতে। সবসময় চাই সে আবদ্ধ থাকুক আমার আমাতে। আমাদের ভালোবাসার বৃত্তে। যাকে আবর্ত করে রাখবে আমার আমি। আমিই তার পরিধি। যাকে ছুঁয়ে থাকবে আমার হৃদয়। সে থাকবে লাল গোলাপের সুবাসিত কাননে। যা হবে একান্ত আমাদের। আমাদের ভালোবাসার লাল বৃত্ত।

অরুনিকা ক্লান্ত স্বরে বলল—

“আব্বু ভাইয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসত, তাই তার অকাল মৃ*ত্যু সে সহ্য করতে পারিনি। আমরা তোমাকে কখনো ভুল বুঝিনি।”

অমিত বাঁকা হাসল। তাচ্ছিল্য চোখে তাকিয়ে বলল—

“তাতে আমার লাভ কী হলো বল? সব হারিয়েছি আমি। খালাকে আমি অনেকবার বলেছি তোর কথা। কিন্তু সে রাজিই হলো না। তার এক কথা, তোর বাপ তোকে আমার কাছে বিয়ে দেবে না। এমনকি মা’কে যখন দেখতে গিয়েছিল তখন আমি ওইদিনগুলো বাড়িতে ঢুকিনি শুধু তোর বাপের জন্য। ”

“অরুমিতার সাথে এমন কেন করলে? যদি শৈবাল দোষ করে থাকে তাহলে তাকে সাজা দিতে।”

অমিত খলখল করে হেসে উঠল। চোখ সরু করে বলল—

“কাউকে নিংস্ব করার জন্য তার সম্পদ, সম্মানের চেয়ে তার ভালোবাসা কে*ড়ে নিলে তাতে প্রশান্তি পাওয়া যায় বেশি। সম্পদ, সম্মান তো লোক দেখানো। কিন্তু ভালোবাসা হৃদয়ঘটিত। তার দহন কেউ দেখে না। শুধু পোড়ে, আর যন্ত্রণা হয়। প্রথমে তোর বাপ তারপর শৈবাল; দুইজনই আমার জীবনটাকে ঝাঁঝড়া করে দিলো। আর তুই তাকেই বিয়ে করলি? আর কাউকে পেলি না?”

অরুনিকার পা ঝিমঝিম করছে। উলটো করে রাখাতে হাঁটুর ভাঁজ থেকে ব্যাথা করছে। সে বিধুর চোখে তাকিয়ে বলল—

“তাতে অরুমিতার কী দোষ?”

“শৈবালকে ভালোবাসাই ওর দোষ।”

“আমাকে যেতে দাও।”

“তোকে যেতে দেওয়ার জন্য তো আনিনি। বিয়ে করব তোকে আমি। তুই কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর হয়েছিস! আমি তোকে শৈবালের থেকে বেশি সুখে রাখব। চল, আমার সাথে।”

“তুমি শৈবালের নখেরও যোগ্য নও। আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না।”

অমিত গা দুলিয়ে হাসল। বলল—

“শৈবাল তোকে ভালোবাসে? জানিস ও কী করেছে? দেখ তাহলে।”

অমিত আরও একটা অডিয়ো রেকর্ডিং শোনালো অরুনিকাকে। যেখানে শৈবাল ডাঃ সাবিনার সাথে কথা বলছে। অরুনিকা হতভম্ব ! অমিত বলল—

“শুনেছিস? নাটক করছিল শৈবাল তোর সাথে। আমি ওকে শুধু মানসিক যন্ত্রণাতে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু তুই..তোর কারণে ও আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছে। ভেবেছিলাম তুই সরে আসবি ওর কাছে থেকে। কিন্তু ওই শৈবাল যা শুরু করেছিল! আমি যদি জানতাম ও আরও আগেই ভালো হয়ে গেছে, তাহলে…।”

“তাহলে কী করতি? অরুনিকাকে আরও আগেই তুলে আনতি?”

চকিতে দুই জোড়া চোখ তাকাল রুমের দরজার দিকে। অমিতের চোখে বিস্মিত। শৈবাল! অরুনিকা তার কান আর চোখ দুটোকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। শৈবালের হঠাৎ উপস্থিতি আর তাকে অরুর বদলে অরুনিকা বলে সম্মোধন করার কারণ সে খুঁজে পেল না। অমিত থতমত খেয়ে বলল—-

“তুই! তুই এখানে?”

“হ্যাঁ। তন্দ্রার সাথে কতদিনের সম্পর্ক তোর?”

” শিট!”

অমিতের মাথায় আ*গুন জ্বলে উঠল। তন্দ্রা এইজন্য তাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছিল। অমিত বুঝতেই পারেনি।

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৯(প্রথমাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

অমিত উঠে দাঁড়াল। চওড়া গলায় বলল—

“তুই এখানে কী করে এসেছিস?”

শৈবাল একটা নিরুত্তেজ শ্বাস ফেলল। তারপর গা ঝাঁকিয়ে হেসে বলল—

“আজ আমার বিশ্বাস হচ্ছে পৃথিবী গোল। আর সত্য হীরার মতো। চকচক সে করবেই। ভালোই করেছিস অরুনিকাকে তুলে এনে। নাহলে আমি জানতাম কী করে, যে তুই আর শিমুল দায়ী অরুমিতার মৃ*ত্যুর জন্য। শালা পার্ভাট!”

অমিত ক্ষেপে উঠল। তিরিক্ষি স্বরে বলল—

“তাই নাকী? অ্যাকসিডেন্ট তো তুই করেছিস। ম*রল বেচারী অরুমিতা। আফসোস!”

শৈবাল তেড়ে এসে অমিতকে ধরতে গেলে অমিত শৈবালের চোয়ালে ঘুষি বসায়। শৈবাল হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেখানে থাকা হাতল ভাঙা এক চেয়ারের ওপর। পরক্ষণেই সেই কাঠের ভাঙা চেয়ার তুলে বাড়ি মারে অমিতকে। আকস্মিক ঘটা ঘটনা সামলাতে পারল না অমিত। সে মেঝেত ধড়াস করে পড়তেই আরও কয়েকটা বাড়ি পড়ল তার মাথায় আর পিঠে। অমিত লুটিয়ে গেল মেঝেতে। তার কানের পাশ থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। তবুও মাথা উঠাতে চাইল অমিত। ক্রোধে বিহ্বল শৈবাল তখন ঘরের কোণে অযত্নে পড়ে থাকা লোহার টুকরো কুড়িয়ে এনে গেথে দেয় অমিতের উরুতে। আর্তনাদ করে ওঠে অমিত। তার হৃদয়বিদারক চিৎকারে কেঁপে ওঠে অরুনিকা। তবুও তার চাহনি শান্ত, সমাহিত।

হাঁপাতে হাঁপাতে থামল শৈবাল। ঘরের মধ্যখানে তখন ভূলুণ্ঠিত অমিতের দেহ। শৈবাল হিং*স্র বাঘের মতো হিসহিসাতে থাকে। তারপর অরুনিকার দিকে তাকায়। পলেই শীতল হয় তার চাহনি। সে হেঁটে অরুনিকার কাছে এসে দাঁড়ায়। আস্ত নজরে অরুনিকাকে দেখে। ঝট করে হাঁটু ভেঙে বসে। অরুনিকার পায়ের দড়ি খুলতে থাকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। অরুনিকা নিতান্ত তরল চোখে চেয়ে অবাধ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল—-

“কেন মা*রলেন অরুমিতাকে?”

পায়ের দড়ির গিঁট খুলতে খুলতে প্রতিত্তর করে শৈবাল—

“মা*রতে চাইনি তো, মরতে চেয়েছি। কিন্তু বেঁচে গেলাম। হয়তো তুমি আসবে বলে!”

শৈবাল অরুনিকার হাতের বাঁধন খুলতে গেলে তার বুক মিশে যায় অরুনিকার বক্ষদেশের সাথে। চেনা ঘ্রাণ, চেনা শ্বাস, চেনা উষ্ণতা। কিন্তু, কেন যেন সব অচেনা মনে হচ্ছে! অরুনিকা একটু নড়তেই তার গাল লেগে গেল শৈবালের গালের সাথে। নোনতা জলে সিক্ত শৈবালের মুখমণ্ডল। অরুনিকা অভিমানের সুরে বলল—

“নাটক করেছেন আমার সাথে? মিথ্যে সব!”

“করেছি। তবে আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়। তা দিনের সূর্যের মতো সত্য।”

“মিথ্যে ! সব মিথ্যে।”

“মিথ্যে তো তুমিও, মিথ্যে তো আমাদের এই সম্পর্ক, মিথ্যে এই সময়। যদি আমার ভালোবাসা মিথ্যে হয়, তবে আমার বেঁচে থাকাও মিথ্যে। তাহলে ধরে নেব, পৃথিবীতে সত্য বলে কিছু নেই।”

অরুনিকার হাতের বাঁধন খুলে তার সামনে বসল শৈবাল। উজ্জ্বল চোখে চেয়ে আবার বলল—

“তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে অরুনিকা।”

শৈবাল ছোট্ট করে হাসল। চোখ দুটো তার ভীষণ মায়াময়। সে পূনরায় বলল—

“অরুনিকা! এটাই তো তোমার নাম? তুমি তো চেয়েছিলে আমি তোমাকে তোমার নামে ডাকি। আজ ডাকছি। কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, তুমি খুশি হওনি।”

“আমার সাথে অভিনয় কেন করলেন?”

কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল অরুনিকা। শৈবাল অধর কোণে হেসে বলল—

“আমি তোমাকে আমার করার জন্য নিজেকে আড়াল করেছি। অবাক হচ্ছ তাই না? হ্যাঁ, আমি সুস্থ। ঠিক সেদিন থেকে, যেদিন তুমি আমার জীবনে ফিরে এসেছিলে। ”

শৈবাল থামল। তীব্র যন্ত্রণায় কঁকিয়ে যাচ্ছে অমিত। সে বারংবার উঠে বসার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। শৈবাল মুচকি হেসে অরুনিকার চোখে দৃঢ় চাহনি রেখে বলল—

“আমি যদি তোমাকে আ*ঘাত করতাম, তাহলে তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে চাইতে। আমি যদি তোমায় কষ্ট দিতাম, তাহলে তুমি কখনো আমায় ভালোবাসতে পারতে না। তুমি আমাকে ভালোবাস অরুনিকা। আর আমি তোমার ভালোবাসাকে আমার সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার বানিয়েছি। নিজেকে আ*ঘাত করেছি দিনের পর দিন। তোমাকে আমাতেই আবদ্ধ রেখেছি। আমার ভালোবাসার বৃত্তই তোমার শ্বাসের পরিধি করেছি আমি। আমার কষ্টে তুমি কেঁদেছ, আর আমি ভালোবেসেছি। আর এই কান্না একদিন তোমার চোখ থেকে আমার ভালোবাসা হয়ে ঝড়েছে। আমাকে ভালোবেসেছ তুমি। আর ভালোবাসো বলেই তুমি আমার ছেড়ে যাবে না। কারণ, প্রিয় মানুষদের আমরা নিজের অজান্তেও কষ্ট দিতে পারি না। আর আমি সেটাই করেছি।”

অরুনিকা পা গুটিয়ে বসল। তার দৃষ্টিতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। নির্বিকার, নীরব, নিষ্কম্প চাহনি। ধীর গলায় বলে উঠল সে—

“তাহলে অরুমিতাকে কেন কষ্ট দিলেন? সে কী আপনার প্রিয় মানুষ ছিল না?”

“ছিল। কিন্তু আমি ওর অপ্রয়োজনীয় প্রিয় মানুষ ছিলাম। ”

“ওর কোনো দোষ ছিল না। শিমুল আর অমিত ওকে ফাঁসিয়েছে।”

“ছিল। ওর দোষ নয়, পাপ ছিল। দোষ আমি করেছি, পাপ ও করেছে। ড্রাগ এডিক্টেড ছিল অরুমিতা। শিমুল আমাকে তাই বলেছিল। আরও বলেছিল, ও অন্যকারো সাথে জড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন করেছিলাম আমি ওকে। জবাবও দিয়েছিল। তবে মিথ্যে। সব জেনেও ওকে বিয়ে করেছিলাম আমি। কিন্তু ও….। আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। এবোর্শন করিয়েছে। আমি তো ভেবেছি শুধু আমাকে ভুলে অন্য পথে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু ও তো তার বিছানা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তাহলে কী করে ক্ষমা করি আমি ওকে?”

শেষের বাক্য যতটা সম্ভব রোষের সাথে বলল শৈবাল। অরুনিকা ঠাওর করল, ঠিক তখন শৈবালের গলার রগ ফুলে উঠেছে। মাথার দুই পাশের শিরা ফেপে উঠেছে। শৈবালের দারাজ গলায় নিশ্চুপ হয়ে যায় অরুনিকা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here