তবু_ফিরে_আসা,পর্ব : (২)

0
564

#তবু_ফিরে_আসা,পর্ব : (২)
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু

(৫)
ঠিক সকাল আটটায় এলার্ম বাজলো ফোনে। যদিও এলার্মের প্রয়োজন ছিল না। সারাটা রাতই তার অস্থির কেটেছে। নাম ঠিকানা কিছুই না বলে এমন উড়ো শুভেচ্ছা কে পাঠালো তাকে সেই চিন্তায়ই পুরো রাত পার করেছে শ্রাবণ। এলার্মের শব্দ শোনে ফোনটা আবারও হাতে নিল। অপরিচিত নাম্বারে কল করাটা ঠিক হবে না সেটা ভেবেও শিওর হওয়ার জন্য কল দিতে বাধ্য হলো শ্রাবণ। এই ফোনকলের মাধ্যমেই জানা যাবে, ওপাশের মানুষটা কে আর তার বিষয়ে কতটা জানে! ঠিক কতটা জানলে একটা অচেনা মানুষ তার জন্মদিনের তারিখটা মনে রাখতে পারে? প্রশ্নেরা ভিড় জমালেও উত্তর তার অজানা।

দু’বার রিং হওয়ার পর ঘুমকাতুরে কেউ ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিল। যদিও শ্রাবণ টের পেল না কিছুই। কণ্ঠস্বরটা একটু ঘোলাটে মনে হলো তার কাছে। সালামের জবাব দিয়ে বলল,
“আসলে একটা দরকার ছিল। রাতে এই নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে! কে আপনি বলবেন? আমাকে কতটা চিনেন?”

এক লাফে বিছানায় উঠে বসলো মেঘ। হাত দিয়ে চোখমুখ ভালো করে মুছে উড়না দিয়ে আবারও ফোন চেপে ধরে গলার স্বরটা একটু পাল্টানোর চেষ্টা করে বলল,
“দুঃখিত! ভুলবশত চলে গেছে। আসলে আমার খুব কাছের মানুষটার জন্মদিন আজ। তার নাম্বারেই ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাম কাল। ভুলে আপনার নাম্বারে চলে গেছে। খুব খুব খুব দুঃখিত। দয়া করে আর এ নাম্বারে ফোন করবেন না আপনি।”

আর অপেক্ষা করেনি মেঘ, লাইনটা কেটে দিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে যেতে লাগলো। চিৎকার দিয়ে কান্নারাও আর আসতে চায় না। সমস্ত অনুভূতিগুলো চাপা রাখতে গিয়ে কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে সে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এমন জীবনের কোনো মানে নেই। যে জীবনে ভালোবাসা নেই, ভালোবাসার মানুষগুলো নেই, সেই জীবনে একটুও সুখ নেই। তবুও মেঘ দিনশেষে সুখী। কারণ সে নিজেকে সুখী রাখতে চেষ্টা করে প্রতিনিয়ত! গত দু’বছর আগের সমস্ত স্মৃতিগুলোকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকাংশেই সফল হলেও, শ্রাবণ প্রতিবার রিসোর্টে এসে মেঘকে দুর্বল করে দেয় নিজেরই অজান্তে। শ্রাবণ আসে, আবার চলেও যায়, কিন্তু মাঝখান থেকে মেঘকে উপহার হিসেবে দিয়ে যায় এক বিষাদময় কিছু স্মৃতি আর এক আকাশ পরিমাণ যন্ত্রণা!

(৬)
সকালের নাশতা সেরে রিসোর্টের বাইরে হাঁটাহাঁটি করছিল শ্রাবণ। কোথায় গেলে মন খারাপটা উবে যাবে সেটাই ভাবছিল পায়চারি করতে করতে। হঠাৎ মনে হলো, গতকাল আর আজকের মেয়ের কণ্ঠস্বরটা প্রায় একই রকম। কিন্তু কীভাবে! ভাবনারা দ্রুত জট পাকাতে লাগলো মাথায়। এখানে এর আগেও এসেছে তবে এই মেয়ের কণ্ঠস্বর কখনও শুনেনি। কে এই মেয়ে? নতুন জয়েন করেছে? গতকালকের মেয়েটা যদি আজকের মেয়ে হয়, তবে তাকে সে কীভাবে চিনে? অদ্ভুত হলেও গতদিন শ্রাবণ ভুলবশত মেঘের কণ্ঠই কেন শোনলো? এর ব্যাখ্যা কী? ভাবতে ভাবতেই বাইরে যাওয়ার প্রোগ্রামটা ক্যান্সেল করে পূণরায় রিসোর্টে প্রবেশ করলো সে।

রুমে এসে লাগেজ থেকে মেঘের দেওয়া সেই পুরনো ক্যানভাসগুলো বের করে বিছানায় রাখলো। তাতে আলতো হাতে স্পর্শ করে বলল,
“তুমি চেয়েছিলে, আমি আনিকাকে ভুলে এই মনে তোমার জন্য জায়গা করে নেই। দেখো মেঘ, আজ আমি সেটা পেরেছি। আমার মনের বিশাল জায়গা তোমার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। অথচ সেই জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে শুধু তোমার অভাবে। আমি তোমায় ভালোবাসতে পেরেছি মেঘ, কিন্তু ততদিনে তুমি আমার নাগালের বাইরে। আজও জানি না, কে সেই আবির? কী কারণে কিডন্যাপ হলে তুমি? আর কেনোইবা আমার কাছে রাত্রি সেজে এলে? আদনান, নওরিন, এমনকি তোমার বাবা-মা কেউ আমাকে কিচ্ছু জানাচ্ছে না। সবাই বলছে, আমি নাকি তোমার কেউ হই না। তুমিও কি সেটাই মানো মেঘ? এজন্যই আমাকে অনুতাপের আঘাতে জর্জরিত করে হারিয়ে গেছো! ফিরে আসবে একবার আমার জীবনে? একটা সুযোগ দিবে আমায়, গোটা একটা জীবন তোমার সাথে কাটানোর? তোমায় ভালোবেসে বাঁচতে চাই মেঘ। প্লিজ ফিরে এসো। কথা দিয়েছিলে, ছেড়ে যাবে না। অথচ অভিমান আর জেদের কাছে সে কথাতে টিকিয়ে রাখতে পারলে না। চলেই গেলে দূরে!”

নাহ্, মনটা আরও ভার হয়ে গেল শ্রাবণের। চোখদু’টো জ্বালা করছে ভীষণ। এত দমফাটা কষ্ট কেন হচ্ছে তার? তার অবহেলায় মেঘও কি এতটাই কষ্ট পেয়েছিল? খুব বেশি কষ্ট না পেলে এমন জেদ যে মেঘের মাথায় চাপতোই না কখনও। ওযে ভীষণ জেদী, অভিমানী আর একরোখা মেয়ে। মেঘকে বুঝতে সে সত্যিই অনেক দেরী করে ফেলেছে। তাইতো মেঘ আজও তার ধরাছোঁয়ার বাইরেই আছে! দু’চোখ বন্ধ করলে আজও শ্রাবণ মেঘের দেয়া সেদিনের সেই স্পর্শগুলো অনুভব করে। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে তার। যন্ত্রণা বাড়তে থাকে তখনই।

সারাদিন রিসোর্টের ভেতরেই কাটিয়ে দিল শ্রাবণ। মেঘের স্মৃতি তাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে আজ। বড্ড নষ্টালজিক হয়ে পড়েছে সে। স্মৃতিগুলো এভাবে কেন সব স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে হুট করে? এইযে সারাদিন সে মেঘের ভাবনাতেই কাটিয়ে দিল, মেঘ কি সেটা করেছে? নাকি ক্যানভাসে আঁকা সেই অচেনা মানুষটা আজও তার কাছে অচেনাই রয়ে গেছে? সব ভুলে কেমন আছে মেঘ? ভালো আছে কী?

(৭)
সিলেট উপশহরেই মেঘ নিজের খালায় বাসায় থাকে। এখান থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দু’ঘণ্টার জার্নি করে গ্রীন রিসোর্টে যেতে হয় তাকে। এতে অবশ্য তার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু এখন সমস্যা তৈরি করেছে শ্রাবণ। চাকরিটাও বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না তার। যেভাবে শ্রাবণ তার যাতায়াত বাড়িয়েছে এখানে তাতে করে এখান থেকে দ্রুত অন্যত্র চলে যাওয়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মেঘের মাথায়। সারাদিন ধরে এসবই ভাবছিল আজ। কোনোভাবে শ্রাবণের চোখের আড়াল হয়ে এখান থেকে সরে যেতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। সিডনীতে মন টিকেনি বলে ঢাকায় ফিরতে গিয়েও শ্রাবণের মুখোমুখি হবে না বলেই খালার বাসায় থাকতে হচ্ছে তাকে। নিজের দেশ আর আপনজন ছেড়ে প্রবাসে কেউ সুখে থাকে নাকি! ইরা আর সামি তো এতদিনে সিডনীতে সেটেল্ড হয়ে গেছে। শুধু মেঘই অতীত ভুলতে অজানা জীবনের পিছনে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে আজ দুটো বছর ধরে। অথচ কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছে না।

অনেক ভেবেচিন্তেও সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত খুঁজে পেল না মেঘ। সবচেয়ে স্বস্তির কাজ এটাই যে, মারা যাওয়া। একটা মানুষ মরে গেলেই পৃথিবীর সমস্ত বিষাদময় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। বেঁচে থাকলে এমন বিষাদময় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি হয় না সহজে। কিন্তু মৃত্যু কি এতই সহজ? চাইলেই ধরা দিবে হাতের মুটোয়? যদি তা হয়, মেঘ তো সেই মৃত্যুকেই ছুঁতে চায় দ্রুত। নইলে যে এ জীবনে শ্রাবণকে ভুলে থাকা হবে না তার। ভাবনায় বিভোর মেঘ খেয়ালই করেনি বিকেল হয়ে গেছে। আজ তো রিসোর্টে যেতেই হবে। শ্রাবণের জন্মদিন যে! আড়াল থেকে একবার কি তাকে দেখার সুযোগ পাবে? কতদিন ওই চেহারাটা দেখা হয় না তার! কতদিন ক্যানভাসে রঙ ছোঁয়া হয় না! কত নির্ঘুম রাত কেটেছে ওই চেহারার মানুষটার কথা ভেবে! এসব যে থেকে থেকে বার বার কাঁদিয়ে যায় মেঘকে।

ঝটপট রেডি হয়ে রুমের বাইরে আসে মেঘ। খালামনি তখন টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখাতে ব্যস্ত। মেঘকে বের হতে দেখে বললেন,
“কত করে বললাম, চাকরিটা ছেড়ে দে। এভাবে একা একটা মেয়ে মানুষের এতদূর চাকরি করাটা কতটা রিস্কের বুঝিস তুই? আপা বার বার আমাকে বলছেন তোকে দেখে রাখতে। আর তুই কিনা খেয়াল খুশিমতো চলে নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলছিস।”
“বিপদের ভয়তো সেই দু’বছর আগেই কেটে গেছে খালামনি। তাহলে আর ভয় কীসের? আমি বের হচ্ছি। চিন্তা করো না। সকাল সকাল ফিরবো। আর তোমার কাছেই ফিরবো। আজকেই আমি রেজিগনেশন লেটারটা দিয়ে দিব ভাবছি। এই চাকরিটা আর করা হবে না আমার।”
“সত্যি বলছিস? তাহলে তাই কর। পরে যদি সময় না কাটে তবে কোনো স্কুলে জয়েন করে নিতে পারবি। এখানে আমার চেনাজানা অনেকেই আছে।”
“ঠিক আছে। আজ তাহলে আসি। আম্মুকে বলো, বেশিদিন আমার জন্য অপেক্ষা না করতে। আমরা শীঘ্রই ঢাকা যাচ্ছি। নওরিনের বিয়েতে এ্যাটেন্ড করার ইচ্ছে আছে।”

মেঘ বেরিয়ে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। এতদিন পর মেয়েটা বাড়ি যেতে রাজি হয়েছে, এটাই বা কম কীসের! ভালো থাকার জন্য বাবার মতো ছায়া আর মায়ের আঁচল যে, যেকোনো সন্তানের জন্য জান্নাত সমতুল্য। এভাবে ভালো থাকাতেও সুখ আছে, যারা বাবা-মা হারিয়েছে তারাই এই সুখ থেকে বঞ্চিত।

(৮)
রিসোর্টের বাইরেই একঝাঁক ছোটো বাচ্চাদের ছোটাছুটি চলছে। শ্রাবণ দোলনায় বসে ওদের সেই খেলাধুলা দেখছিল বেশ মনোযোগ দিয়ে। হঠাৎ একটা নয়-দশ বছরের বাচ্চা এসে শ্রাবণের হাত টেনে দ্রুত নিয়ে গেল তাদের মাঝখানে। শ্রাবণ ঘাসের উপর হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চাটার দুটো হাত ধরে বলল,

“কী চাই?”
“আমাদের সাথে খেলবে। ওভাবে মন খারাপ করে বসেছিলে কেন?”
“তুমি কীভাবে খেয়াল করলে আমার মন খারাপ?”
“ওই আন্টিটা বললো।”

বাচ্চা মেয়েটা দূরে আঙুল দিয়ে কাউকে দেখালে শ্রাবণ সেদিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। রিসোর্টের ভেতরে নীলাশা, শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে নিজেও হেসে উঠলো। শ্রাবণ এবার বলল,

“তাহলে মনটা ভালো করে দাও। দেখি তো কেমন পারো!”

বাচ্চাটা দ্রুত একটা রুমাল এনে শ্রাবণের চোখে বেঁধে মাঠের মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে সবাই মিলে চারপাশে ছোটাছুটি করতে করতে কানামাছি ভুঁ ভুঁ গাইতে শুরু করলো। শ্রাবণ একটু হেসে বলল,
“আমি তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। কীভাবে ছোঁবো?”
“বড্ড বোকা তো দেখছি তুমি। কানামাছি খেলা বুঝি দেখে দেখে খেলে। ওটাতো না দেখেই খেলতে হয়। আসো তো, আমাদের খুঁজে বের করবে এবার।”

বাচ্চাটার কথা শোনে বোকা বনে যায় শ্রাবণ। আসলেই তো তাই। তবে কি তার মন দিনদিন বুড়ো হয়ে যাচ্ছে? কানামাছি খেলাটাই সে ভুলে যেতে বসেছে, এমনটাও কি হওয়ার ছিল! আনমনেই একটু হেসে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলাতে মনোযোগ দিল শ্রাবণ। বাচ্চারা তার চারপাশ ঘুরে ছোটাছুটি করছে আর সে হাত বাড়িয়ে এদিক-ওদিক হোঁচট খাচ্ছে বাচ্চাদের ধরার জন্য। বহুদিন পর, নিজের মধ্যে শিশুসুলভ আচরণ টের পেয়ে চঞ্চল হয়ে উঠলো শ্রাবণ নিজেও। বয়সের পার্থক্য ভুলে বাচ্চাদের নিয়ে মেতে উঠলো কানামাছি খেলায়।

রিসোর্টের মেইন গেটের সামনে এসে মেঘ জয়কে ফোন করলো। দু’তিনবার ফোন দিয়েও জয়ের কোনো পাত্তা পেল না। বাধ্য হয়ে গেটের ভেতরে প্রবেশ করে জয়কে ফোনে ট্রাই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মেঘের দৃষ্টি ফোনের দিকে। কপাল কুঁচকে চেহারায় রাগ নেমে এসেছে তবুও জয়কে যদি কাজের সময় পাওয়া যায়। ফোন টিপতে টিপতেই রিসোর্টের সামনে থাকা ফুলেভরা বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে ধীরপায়ে হাঁটছিল মেঘ। হঠাৎই অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ধাক্কায় হাত থেকে ফোন ছিটকে পড়লো দূরে। ফোন হাতে তুলে সেটা ঠিক আছে কিনা চেক করে সামনে থাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো মেঘ।

সেই পুরনো অনুভূতি হৃদয়ের কোথাও নাড়া দিয়ে উঠলো হঠাৎ করেই। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে রাগী চেহারায় শ্রাবণের দিকে তাকালো একবার। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল দ্রুত। অযথাই চোখে জল জমতে শুরু হলো। শ্রাবণের চোখ তখনও বন্ধ। কারও গলার আওয়াজ না পেয়ে হাতড়িয়ে একবার কাউকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতেই মেঘ দ্রুত দূরে সরে গেল। শ্রাবণ তখন বলল,
“আ’ম সরি। চোখ খুলতে পারছি না। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাটা ভীষণ ইনজয় করছি। আপনি কে? কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ শুনলাম। কিছু কি ক্ষতি হয়েছে বলুন, ম্যানেজ করে দিচ্ছি।”

মেঘ বোবার মতো তাকিয়ে রইলো ভেঙে যাওয়া ফোনের দিকে। আকস্মিকভাবে শ্রাবণের সাথে এই ধাক্কাটা তাকে টেনে নিয়ে গেল দু’বছর আগের সেইসব দিনে। যদিও এসব আর মনে করাটাকে অযথাই টাইম পাস বলে মনে করে মেঘ। তবুও কেন যেন খুব করে সেসব স্মৃতি, অভিমান আর অবহেলাগুলো মনের পর্দায় ভেসে বেড়াতে লাগলো। দু’চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ছেড়ে কেবল মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,

“দু’বছর আগে যে ক্ষতি তুমি করেছো, সেটার হিসেবটাই তো এখনও বাকি শ্রাবণ। এই ভাঙাচোরা ফোনটাকে আর কীইবা ম্যানেজ করবে, যেখানে গোটা হৃদয়টাই ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছো!”

শ্রাবণ চোখের বাঁধনটাকে টেনে কপালে তুলে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। যেখানে কিছুক্ষণ আগেই কারও সাথে অনিচ্ছাসত্ত্বে ধাক্কা খেয়েছে, কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ শোনে ভরকে গেছে সেখানে চোখ খুলে কাউকে দেখতে না পেলে তো অবাক হওয়াটা স্বাভাবিক যে কারো জন্য!

চলবে…

(ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here