এক_চিলতে_রোদ,Part_16,17

0
1265

#এক_চিলতে_রোদ,Part_16,17
#Writer_Nondini_Nila
#Part_16

ঠান্ডায় কেপে কেপে উঠছি। তাই বসে না থেকে চোখ মুখ ডেকে চাদর দিয়ে গা ঢেকে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করতেই তখন কার কথা মনে পরলো কি হচ্ছিলো? কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। তখন ভাইয়া আমার এতো কাছে ছিলো আর তার ঠোঁটের স্পর্শ আমি আমার কাঁধে পেয়েছিলাম। আমি তখন অন্য কোন রাজ্যে চলে গিয়েছিলাম। তখন হঠাৎ বাজ পরার শব্দে ভাইয়া আমার থেকে ছিটকে সরে দাঁড়ায় আর একদম চিলে কোঠার ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়।
আমি নিজের কোমর থেকে ভাইয়ার হাত সরে যাচ্ছে বুঝতেই বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করি। ভাইয়ার এহেন কাজে আমি হতদম্ব। কি হচ্ছিলো বুঝার চেষ্টা করছি। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তার আলোতে দেখলাম সারা ঘরে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এটা দেখেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।
ভাইয়াকে ডাকলাম।
মৃদু স্বরে কিন্তু কেউ নাই ভাইরে ঘুরুম ঘুরুম আওয়াজ ভয়ে এবার কেঁদেই দিলাম।
আমি এগিয়ে দরজা কাছে আসতেই নজর পরলো ঘুরুম ঘুরুম বৃষ্টির মাঝে একটা ছায়া ছাদের রেলিং এ দাড়িয়ে আছে বিদ্যুৎ এর আলোয় স্পষ্ট দেখালাম ওইটাই ভাই আমি কোন কিছু না ভেবে ফুপাতে ফুপাতে ভাইয়ার কাছে এগিয়ে গেলাম বৃষ্টির মধ্যেই।‌ আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার শার্টের কোন ধরলাম। আকাশে ঘুরুম ঘুরুম করছে তার সাথে সাথে আমিও কেঁপে উঠছি।
আমার স্পর্শ পেয়ে ভাইয়ার আমার দিকে তাকায় আমি বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে দেখতে পেলাম ভাইয়ার চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।

আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত শরীর থেকে সরিয়ে বলে,
তুই এখানে কি করছিস?
আমি কাঁপছি বৃষ্টির ঠান্ডা পানির স্পর্শে ওইভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরে তারপর বললাম,
আমার একা ভয় করছে। আপনি আমাকে রেখে এখানে চলে এসেছেন কেন ভিজে।
ভাইয়ার কপাট রাগ নিয়ে বলল,
ভয় পাস একা থাকতে। আমাকে ভয় পাস না?
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি কি বলছে ভাইয়া তাকে কেন ভয় পাব।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
আপনাকে কেন ভয় পাব?
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল,
এই অন্ধকার, ঝড়ের থেকেও আমি তোর জন্য বিপদজনক বুঝেছিস?
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না বোকা হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
মানে?
ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার সামনে আসিস না তোর ক্ষতি হবে।আর বৃষ্টির মধ্যে এখানে এসেছিস কেন?
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হতদম্ব হয়ে গেলাম।
কি সব বলছে ভাইয়া? তার কাছে এলে আমার ক্ষতি কেন হবে?
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সাদা ওরনা গলায় সাথে লাগানো নিচে নাই আমি ওরনা ঠিক করলাম কিন্তু হচ্ছে না জর্জেট ওরনা বৃষ্টিতে ভিজে আছে। জামা ও শরীর এর সাথে একদম মিশে আছে ভিজে হালকা লজ্জা পেলাম এজন্য ভাইয়া আমার দিকে তাকাচ্ছে না‌।
আচমকা ভাইয়া আমার হাত ধরলো আমি তার স্পর্শ এ কেঁপে উঠলাম।
ভিজেই যেহেতু গেলি এখানে থেকে আর কি হবে নিচে চল।
বলেই ভাইয়া আমার হাত ধরে সিঁড়ির কাছে এলো। দুজনে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছি। ছপছপ শব্দ হচ্ছে পানির উপর দিয়ে যে হাঁটছি আমার পা পিছলে যাচ্ছে কারন আমার পায়ে তো জুতা নাই। পরে পরে যেতে চাইছি তাই আরেক হাত বারিয়ে আমি ভাইয়ার বাহু খামচে ধরলো।
সাথে সাথে ভাইয়া হাঁটা থামিয়ে ফেলল। আমি হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আমার ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কাচুমাচু মুখ করে বললাম,
আমার পা পিছলে যাচ্ছে তাই।
ভাইয়া আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
তোর জুতা ক‌ই?
আমি বললাম, নিচে কেন?
জুতা ছাড়া এসেছিস কেন?
আমি ভাবছি ময়লা হবে তাই।
ইডিয়েট একটা।
বলে হাঁটতে লাগলো সিঁড়ির কাছে এসে হাত ছেড়ে দিলো আমি কাঁপতে কাঁপতে নিচে আসলাম সবাই আমাদের চিন্তায় সোফায় বসে আছে। উপরে থেকে দেখলাম। ভাইয়া আমাকে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে বলে নিজে নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে এসেই দিয়া আপুর মুখোমুখি হলাম, আপু আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে তারপর বলল,
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর এতো ভিজলে কি করে?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
তোমাকে আর ওদিকে ইহানকে দুজনকে খাওয়া যাচ্ছিলো না। বলেই আপু কিছু একটা চিন্তা করে বললো, বাই এনি চান্স তোমরা একসাথে ছিলে না তো।
বলেই সন্দেহ চোখে তাকালো। কিছু বলবো তার আগেই ইমা আপু এলো আর আমাকে এমন ভেজা অবস্থায় দেখে চমকে উঠলো,
একি এমন ভিজলি কি করে? কোথায় ছিলি? কখন থেকে খুঁজছি তোকে। বাইরে কতো ঝড় হচ্ছে দেখছিস।
হুম আমি ছাদে ছিলাম।
হোয়াট কেন? তুই তো ঝড় ভয় পাচ্ছ একা কি করে ছিলি সব সময় তো আমার হাত ধরে কাপিস?এদিকে ইহানকেও পাওয়া যাচ্ছে না ফোন ও রুমে রেখে গেছে‌‌।
আমি কি বলবো ভাইয়া আমার সাথে ছিলো।
বলতে গিয়ে ও বললাম না।
আপু আমাকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসতে বলল।আমি দাঁড়ালাম না এমনিতেই আমার শীত এ জান যাচ্ছে।
কাঁপতে কাঁপতে বাথরুমে ঢুকে পরলাম। এসে দেখি কেউ রুমে নাই বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি সবাই ভাইকে নিয়ে জেরা শুরু করেছে। আমি আর গেলাম না কাঁপুনি কমে নি কি ঠান্ডা পানি উফ শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। কাঁপতে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
বর্তমান এ।
আমি এখন ঘুমে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছি ঘুম ভেঙ্গেছে আপুর ডাকে খাওয়ার জন্য ডেকেছে।
আমি শুয়ে থেকে বললাম তোমরা যাও আমি খাব না।
সেকি কেন?
আপুর কথায় বললাম।
আমার গা ব্যথা করছে উঠতে ইচ্ছে করছে না শীত করছে তোমরা খেয়ে নাও।
আপু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আমার মাথা হাত রাখলো তোর তো জ্বর এসেছে ঊষা।
আমি বললাম ওহ।
ইহানের থেকে শুনলাম তোরা নাকি আটকা পরে গেছিলি বৃষ্টিতে তাই চিলেকোঠার ঘরে গিয়েছিলি।
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
এখন বৃষ্টি কমে গেছে তাহলে আর একটু সময় থেকে আসতি ভিজে তো জ্বর বাধালি। তুই নাকি ভিজেই আসার জন্য জেদ করছিলি।
আমি আপু কথা হা করে গিলছি কি বলছে এসব। ভাইয়া এসব বলেছে।

আপু নিজের মত কথা বলল তারপর জোর করে নিচে নিয়ে এলো খাবার টেবিলে আমি বসতেই সবাই আমার দিকে তাকালো।
ভাইয়াও তাকালো তারপর খেতে লাগলো।
আমি খেতে পারছি না আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি ভাত মুঠোয় নিয়ে বসে আছি।
খাচ্ছ না কেন?
রিহানের কথা শুনে চমকে তাকালাম আমার মতো সবাই রিহানের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি সবার তাকানোতে লজ্জা পেলাম খুব।
রিহান বলল, তোমার চোখ মুখ লাল লাগছে ঊষা তুমি কি অসুস্থ?
রিহানের কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো,
তখন ইমা আপু বলল।
হুম ওর জ্বর এসেছে খুব।
সবাই দুঃখ প্রকাশ করলো খালি ইলা আপু বাদে।
ইহান ভাই কিছু বলল না চুপচাপ খাওয়া শেষ করে সবার আগেই চলে গেল। আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম কেন জানি কষ্ট হলো খুব ভাইয়ার কিছু না বলাতে।
দুই লোকমা খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। তেতু হয়ে আছে মুখ। ভাইয়ার ব্যবহার ভালো লাগলো না।
খুব খারাপ লাগা কাজ করলো আমার মধ্যে কেন জানি না আমি চাইছিলাম ভাইয়া কিছু বলুক কিন্তু কেন?
অজান্তে আমার চোখ জলে ভরে উঠলো।রাতে জ্বর বারলো আপুর আছে ওষুধ ছিলো খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু তবুও কমলো না পরদিন আমাকে নিয়ে বসে আছে বেরাতে যাওয়া হচ্ছে না। আমি যেতে বলেছি কিন্তু আপু যাবে না এভাবে রেখে তখন ইলা আপু এলো,
এই জন্য ওকে আনতে চাইছিলাম না। এসেই আকাম করে বসলো ওর জন্য আমাদের আনন্দ টাই মাটি হবে।
রেগে বলল। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
ইমা আপু বলল, ইলা এসব কি ও অসুস্থ।
তো কি? ওকে রেখে চল।ও অসুস্থ বাসায় থাকুক। ওর জন্য আমরা কেন সাফার করবো।
দিয়া বলল, সত্যি তো ইলা ঠিক বলেছে ইমা আমরা চল যাই ঊষা বাসায় থাকুক। সব তো আছে ।
কিন্তু ওকে একা রেখে অসম্ভব আমি যাব না।
প্লিজ চল।
না অসুস্থ অবস্থায় ফেলে আমি যাব না তোদের এতো ইচ্ছে তোরা যা।
ইমা আপুকে কেউ রাজি করাতে পারছে না তাই আমি আপুকে ডেকে বললাম ,
আপু প্লিজ তুমি যাও‌।
না ঊষা আমাকে জোর করিস না।
প্লিজ আপু তুমি না গেলে সবার যাওয়া মাটি হবে।আর এতে সবাই আমাকে রেসপনসিবিলিটি করবে তার থেকে তুই যাও‌। আমার কিছু হবে না আমি ঠিক থাকবো দেখো।
আমি,,
আপু তুমি কি চাও আমাকে সবাই দোষা রোপ করূক।
আচ্ছা যাব। নিজের খেয়াল রাখবি তারাতাড়ি চলে আসবো।
আপুরা সবাই চলে যায় আমি বাসায় একা বসে আমি।
শুয়ে পরলাম সাথে সাথে ঘুম তখন মনে হলো কেউ আমার কপালে কোমল স্পর্শ দিচ্ছে একটা হাত আমার গালে আমার ঘুম ছুটে গেল।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_17

চোখ খুলে আমি ভয় পেয়ে গেলাম রুমে কেউ নেই। সারা রুমে চোখ বুলিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। কেউ নাই তাহলে আমার কপালে স্পর্শ করলো কেন? আমার হাতটা আপনা আপনি কপালে চলে গেল। কে ছিলো আর সে গেল কোথায়? ভয়ে কাঁপতেছি আমি। ঢোক গিলে ভীতু মুখ করে ভাবছি কে ছিলো? সবাই তো ঘুরতে গেছে তাহলে আমার রুমে কে এসেছিলো। কাঁপা কাঁপা গলায় কে বললাম কারো সারা শব্দ পেলাম না‌।
ভয়ে উঠে দাঁড়ালাম। রুম থেকে বের এলাম। কে ছিলো তখন চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে হঠাৎ শব্দ পেলাম কারো কথার। আমি চমকে উঠলাম কথা কে বলছে। বাসায় আমি একা তাহলে কথা বলতে কে? আমি আওয়াজের সেদিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। এটা তো ভাইয়ার রুম কে কথা বলছে ভেতরে ঢুকে দেখি ইহান ভাই দাড়িয়ে আছে কানে ফোন কারো সাথে কথা বলছে।
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কথা বলতে বলতে আমার দিকে তাকালো আমাকে বিস হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফোনের লোকটাকে কিছু বলে রেখে আমার সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ভাইয়ার কথায় আমি বললাম,
ভাইয়া আপনি এখানে? আপনি যাননি?
ভাইয়া বলল, না।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন?
ভাইয়া কথা ঘুরিয়ে বলল, তুই উঠে এসেছিস কেন? তুই না অসুস্থ?
আমি স্পর্শ কিছু বললাম না,
আমি তো কারো আওয়াজ পেয়ে এলাম ভয় পেয়েছিলাম।‌আমি তো বাসায় একা ছিলাম তাই।
কিন্তু আপনি কেন জাননি তা বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া বলল, আমি ও হালকা অসুস্থ বোধ করছি তাই ফিরে এলাম।
আমি ভাইয়া দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনার কি হয়েছে?
এমনি মাথা ব্যথা।
আমি কফি করে দেবো।
এক চর মারবো যা শুয়ে থাক।‌ এই শরীর নিয়ে আবার কফি করতে চাইছিস পাগল তুই।
আমি ভাইয়ার ধমক শুনে চুপ মেরে আমতা আমতা করে বললাম, আমার অভ্যস আছে তাই।
ভাইয়া কড়া চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আর বললাম না।
ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি এই স্পর্শ আমার চেনা একটু আগেও যেন এই স্পর্শ পেয়েছি তাহলে কি ভাইয়া ছিলো তখন। ভাইয়া ছাড়া তো আর কেউ নাই।

আপুরা আগেই চলে এসেছে এসেই বলল, আমি তাই নাই আবার ভাই যায় নাই তাই নাকি বেশি জায়গায় যায় নাই।
বিকেলে ভর সবাই বসে আড্ডা দিলো।
তখন একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো।
সবার সামনে দিয়া আপু ইহান ভাইকে প্রপোজ করে বসলো। আমরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছি। ইহান ভাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইমা আপু রাগে কটমট করছে।
আমার মুখটা বিষ্ময় হা হয়ে গেছে।
ইহান ভাই রেগে চোখ মুখ লাল করে সবার সামনে থেকে গটগট করে চলে গেল।
আমরা সবাই থ মেরে বসে আছি। ইমা আপু রেগে দিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
তোকে এতো মানা করা শতেও এটা কি ভাবে করলি?
দিয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। ইহান ভাইয়ের ব্যবহার এ যে কষ্ট পাইছে তা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কি হলো কথা বলছিস না?
দিয়া আপু হাত ছারিয়ে ছুটে রুমে চলে গেল আর আমরা সবাই হা করে সব দেখছি।
রুমে এসে দিয়া আপুর কান্না দেখলাম নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে।
ইমা আপু রেগে আর কথা বলল না। সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল আমি গালে হাত দিয়ে দিয়া আপুর দিকে তাকিয়ে আছি আপুর কান্না দেখে এখন কষ্ট হচ্ছে আমার তখন ভাইয়ার কথা মনে পরলো ভাইয়া ও তো অনেক রেগে আছে। রেগে গেল তখন। ভাইয়ার জন্য কি কফি নিয়ে যাব?
ভাবতে ভাবতে উঠে কফি করলাম শরীর কাঁপছে আমার তবুও করলাম অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আমার আছে ওই বাসায় কখনো অসুস্থ তার জন্য বিশ্রাম নিতে পারিনা‌।
কফি নিয়ে ভাইয়ার রুমে এলাম ভাইয়া কপালে হাত রেখে বসে আছে। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে?
আমি গুটি‌‌ গুটি পায়ে এগিয়ে ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ভাইয়ার আমার উপস্থিতি টের পায়নি মনে হয়।
আমি ভাইয়াকে ডাকলাম।
ভাইয়া আপনার জন্য কফি এনেছিলাম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করেন।
ভাইয়া আমার দিকে রেগে তাকালো আমি ঢোক গিললাম। কিন্তু কেন জানি আমার এখন হাসি পাচ্ছে। খুব হাসতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া সিনিয়র কারো থেকে প্রপোজ পেয়ে এই অবস্থা।
ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,,তোকে কে কফি আনতে বলেছে?
আমি বললাম, আমি একাই আনছি খান না প্লিজ।
“এই শরীর নিয়ে এসব না করলে চলে না তাই না‌।
এই তুই হাসছিল কেন?
আমি মিটিমিটি হাসছি হাসি আটকাতে পারছি না। ভয় হচ্ছে তবুও হাসি আটকাতে পারছি না।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া আপনি এতো রাগ করছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আপনার তো খুশি হওয়া উচিত।
আমার কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
হোয়াট তুই কি বলতে চাইছিস? আমার ওই আপুর থেকে প্রপোজ পেয়ে খুশি হ‌ওয়া উচিত।
হুম আপু মনে হয় সত্যি আপনাকে ভালোবাসে কাঁদছিল অনেক।
সো হোয়াট।
না এমনি বললাম।
যা এখান থেকে একদম এসব বলতে আমার কাছে আসবি না।
আপুটা সুন্দর ছিলো কিন্তু।
যাআআআআ
আমি চুপ মেরে গেলাম।কফি বারিয়ে বললাম,
এটা খাবেন না।
ইহান না করতে গিয়ে ও করলো না উষার দিকে তাকিয়ে।
ইহান হাত বাড়িয়ে কফি নিলো। ঊষা চলে গেলো।
রুমে এসে দেখি দিয়া আপু শুয়ে আছে আরেক পাশে ইমা আপু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি তো থ একটু আগে না আপু বকাবকি করলো।
আমি বিস্মিত হয়ে গিয়ে বসলাম।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
ক‌ই গেছিলি?
ভাইয়াকে কফি দিয়ে এলাম। কিন্তু তুমি এসব একটু না রাগ করলে।
হুম কিন্তু করে কি হবে আমি তো ওকে চিনি জানি মনে কথা চেপে রাখতে পারে না বলে দিয়েছে রাগ হয়েছিল কিন্তু রেগে কি হবে? তাই বুঝালাম ওর এসব পাগলামো ভালোবাসা না জাস্ট সৌন্দর্য এর প্রেমে পরেছিলো। বুঝেছি কিনা জানি না।

পরদিন বিকেলে আমরা আগুন পাহাড় এ এলাম সবাই।এখানে অবস্থিত একটা ছোট পাহাড়। যেখানে একটু পুকুর এ থেকে প্রচন্ড বেগে গ্যাস বুদবুদ করে বের হয়ে আসছে। দেখলে মনে হবে যেন পুকুরের পানি ফুটছে।
সন্ধ্যায় পরে আমরা এলাম সেলফি ব্রিজ। এটি মূলত কাজির বাজার ব্রিজ। সুরমা নদীর উপরে এই ব্রিজটি অবস্থিত।
মানুষের গিজগিজ। আমি দিয়া আপুর সাথেই যাচ্ছি। আমার শরীর এ এখন জ্বর নেই কমে এসেছে কাল আমরা ব্যাক করলো ঢাকা সকালেই।‌ তাই আজ রাতটাই শেষ বেরানো। হঠাৎ রিহান ভাই এলো আর হাসি মুখ বলল,
হাই ঊষা।
আমার তাকে পছন্দ না তবুও হাসি ফুটিয়ে বললাম,
কেমন আছেন ?
ভালো তোমার সাথে একটা পিক তুলি।
বলেই ফোন তাক করলো।আমি না করতে গিয়ে ও করতে পারলাম না ছেলেটা ফট করে তুলে ফেললো।
তারপর আমার দিকে ধরে বলল,
দেখো কি সুন্দর হয়েছে আমাদের কি সুন্দর লাগছে একসাথে তাইনা।
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি‌। আমাদের একসাথে মাঝে কি বলতে চাইছে‌।
তখন ইহান ভাইয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম,
ভাইয়া রেগেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে কাছে ডাকলো। আমি ভাইয়ার রাগের কারনে না বুঝে কাছে গেলাম।
ভাইয়া সবার থেকে আলাদা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো আমি কিছু বুঝলাম না। আমার হাত ভাইয়ার হাতের মুঠোয় ছিলো এবার হাত ছেড়ের দিলো আর ফট করে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।চোখ আমার ইয়া বড় বড় হয়ে গেছে।
ভাইয়ার চোখে মুখে আগুন ঝরছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার স্পর্শ আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here