এক_চিলতে_রোদ,Part_22,23

0
1266

#এক_চিলতে_রোদ,Part_22,23
#Writer_Nondini_Nila
#Part_22

আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। চাচি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোকে ইহানের আশেপাশে যেতে মানা করছি না। তাও কোন সাহস এ যাচ্ছিলি।”
আমি চাচির রাগী কন্ঠ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
চাচি রেগে বলতে লাগলো,,
“বিয়েটা যেতে দে! তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। লেখাপড়া করে ডিপ্টি হ‌ওয়ার শখ মেটাবো।”
বলেই চাচি গরম চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রান্না ঘর থেকে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম। চাচি তো খুব রেগে আছে কি যে হবে? আমি ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। ইহান ভাইয়া তো আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে সেও রেগে গেল বোধদয় কিন্তু চাচির সামনে আমি বা কি করতাম।আর তখন এতো রেগে কেন ছিলো ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
আর ইহান ভাই এর খোঁজ নিতে পারলাম না। চাচি আমার উপর কড়া নজর রাখলো।রাতে ভাই খেতে এলো না। আমার চোখ দুটো তার জন্য অপেক্ষা করে নিরাশ হলো।
সবার খাওয়া শেষ হতেই ইমা আপু আমাকে বলল তার রুমে যেতে খেয়ে।
আমি খাওয়া শেষ করে আপুর কাছে গেলাম আপুর বিয়ের পোশাক বের করে রেখেছে আমি যেতেই আপু সব দেখালো। গায়ে হলুদ এ হলুদ সবুজ রঙের কাতান শাড়ি, সাথে ফুলের গহনা।বিয়েতে লেহেঙ্গা কালো খয়রি মধ্যে ক্রিম কাজ, ওরনা হালকা গোলাপি রঙের। বৌভাতের ড্রেস শশুর বাড়ি তাই সেটা দেখতে পেলাম না।
সব ড্রেসের প্রশংসা করলাম হাত দিয়ে ছোঁয়ে ছোঁয়ে দেখলাম। আপু আমাকে একটা শাড়ি দিলো কাঁচা হলুদ গায়ে হলুদ এ পড়ার জন্য। আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। গিফট পেতে কার না ভালো লাগে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে আছি শাড়িটার দিকে।
এটা আমার আপু?
হুম তোর হলুদ এ এটা পরিস।
আচ্ছা।
তোর পছন্দ হয়েছে?
খুব।
ঊষার উজ্জ্বল মুখ দেখে ইমার মুখে হাসি ফুটলো। ও নিজে পছন্দ করে এনেছে এই ড্রেস। বিয়েতে পরার জন্য ও একটা এনেছে সেটা বিয়ের দিন দিয়ে ওকে সারপ্রাইজ হবে।
আমি আপুকে দিয়ে এলাম শাড়ি। পরশু দিন নিয়ে পরবো আপুর থেকে।আপুর রুমে থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলাম নাচতে নাচতে। আমার খুব খুশি লাগছে। আমি নিচে নামার জন্য পা বাড়াবো তখন হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাত আমার হাত চেপে ধরে। আমি কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে পেছনে তাকানোর আগেই সেই লোকটা আমাকে টেনে একটা রুমে নিয়ে আসে। ততক্ষনে আমি বুঝে গেছি এটা কে এটা তো ইহান ভাই। কিন্তু আমাকে এভাবে টেনে রুমে নিয়ে এলো কেন?
ভাইয়া আমাকে রুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো আমি ভয়ার্ত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে এক হাতে আমার হাত ধরে আছি অন্য হাতে আমার কোমর পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।
আমি বড়সড় চোখ করে ভাইয়া চোখের দিকে ঢোক গিললাম। ভাইয়া চোখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সে আমার দিকে সেই ভয়ংকর চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একেতে ভাইয়ার এতো কাছে আমি তার জন্য আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।আমি কাঁপা কাঁপি করছি এখন আবার রাগ আমি ভয় চোখে তাকিয়ে আছি। তখন কফি না আনার জন্য কি ভাইয়া এমন করছে?
ভাইয়া আমার মুখোমুখি হয়ে বললো, কফি তোকে আনতে বলেছিলাম।
ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লাম।
তাহলে লতাকে কেন পাঠালি?
কি বলবো আমি পিটপিট করে চোখ মেলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,
কি হলো উওর দে? চুপ করে না থেকে!
আমি আসলে…
কি হলো আমতা আমতা করছিস কেন?
আমি ভাইয়া কঠিন চোখ মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।কথা বলতে পারছি না।
তোকে আমি কোচিং এ পাঠিয়ে ছিলাম সেখানে ওই ছেলেটা কোথায় থেকে আসলো? রিহানের সাথে তোর কি সম্পর্ক সত্যি করে বল।
রিহানের কথা ভাইয়ার মুখে শুনে শক খেলাম।ভাইয়া কি করে জানালো রিহানের সাথে এসেছে আর কিসের সম্পর্কের কথা বলছে। আমি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি।
রাগে গলার আওয়াজ উঁচু করে উঠলো,,আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
ভাইয়া উঁচু কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কুঁকড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
আমার চোখ ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।
ভাইয়া তা দেখে কিছু শান্ত হলো আমার থেকে সরে এলো মাথা চুলে দুই হাত চেপে ধরে বিছানায় বসলো।
আমি ভাইয়া অস্তিত্ব না পেয়ে চোখ খুলে দেখি ভাইয়া বিছানায় বসে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। এমন করছে কেন? মাথা ব্যাথা নাকি?
আমি এগিয়ে এলাম ঢোক গিলে। ভাইয়া সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
ভাইয়া আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে? করলে বলতে পারেন আমি মাথা টিপে দেব। দেখবেন ভালো লাগবে।
বলেই ভাইয়ার রিয়াকশনের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
ভাইয়া মাথা থেকে হাত সরিয়ে রক্ত লাল চোখে তাকালো।কেমন যেন দেখা যাচ্ছে ভাইয়াকে আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি হয়েছে ভাইয়ার এমন লাগছে কেন?
ভাইয়া বিছানায় শুয়ে পরলো ফট করে আমি তার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে মাথা টিপতে ও বলে নাই সে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি হাত কচলাতে কচলাতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।চলে যাব নাকি নিজে থেকে মাথায় হাত রাখবো।
ভাবনার মাঝে ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো আর আমার দিকে তাকালো আমি তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলাম। কি ভয়ংকর চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
টিপে দেবো।
ভাইয়া হাতের ইশারায় ডাকলো আমি বুঝতে পারলাম টিপতে বলছে। আমি তারাতাড়ি ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে আছে।
আমি কাঁপা হাত এগিয়ে নিলাম ভাইয়ার মাথায় সিল্ক চুলের দিকে।আমার হাত কাঁপছে অসম্ভব রকমের।
চোখ বন্ধ করে হাত চুলের মাঝে রেখে চোখ খুললাম। ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আছে চোখ বন্ধ করেও । আমি আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। আমার বুকের ধুকপুক বাড়ছে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে শুনা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমার কাপাকাপি কমে এলো আমি আরামে ভাইয়ার মাথা টিপতে লাগলাম।
রিহানের সাথে সাক্ষাৎ হলো কি করে বললি না?
ভাইয়া চোখ বন্ধ থেকেই কথাটা বলছে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি‌।
তারপর সব বলি কি করে তার সাথে দেখা হলো।ভাইয়া সব শুনে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে আমি ঝুঁকে ছিলাম ভাইয়ার তাকানো দেখে চমকে সোজা হয়ে বসলাম।
আর কফি?
চাচি বলেছে আপনার আশেপাশে না আস্তে বলেছিলাম না।
আমার কথা শুনে থমকালো ভাইয়ার তারপর চোখ বন্ধ করে র‌ইলো। ঊষার নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ নিজের কপালে অনুভব করতে লাগলো।
হুট করেই ইহান ঊষার বামহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো আমি আচমকা ভাইয়ার স্পর্শ নিজের হাতে পেয়ে চমকে উঠলাম।
ভাইয়া আমার হাত টেনে নিজের বুকের বাম পাশে চেপে ধরলো আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23

আচমকা ভাইয়া আমার হাত স্পর্শ করতেই আমি শিউরে উঠি। হকচকিয়ে মাথা থেকে হাত সরিয়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার মুখ ও হাতের দিকে তাকিয়ে। ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই আমার হাত নিজের বুকে চেপে ধরেছে। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া কি ঘুমিয়ে পরলো নাকি? ঘুমের মধ্যে কি ভুলে আমার হাত টেনে ধরেছে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালো করি করে।
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। বুঝতে না পেরে আমি কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে নিচু করে বললাম,
” ভাইয়া আপনি কি জেগে আছেন?”
ভাইয়ার কাছে বসে মাথায় কাছে বসে ছিলাম তাই কথাটা কানে ভালো মতোই গেলো সাথে সাথে চোখ মেলে আমার চোখের দিকে তাকালো।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। আর ফট করেই আমার হাত ছেড়ে বুকে থেকে সরিয়ে দিলো।
আমি বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া বলল,
“তুই যা এখানে থেকে।”
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। নরছি না যেতে কেন বলছে আর হাত বা ধরলো কেন জিজ্ঞেস করবো। হুম করি করতে যাব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“যেতে বললাম তো তোকে। আমি ঘুমাবে এখন যা তুই।”
বলেই ঘার বাঁকালো।আমি ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে চমকে বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম।
ভাইয়া অন্য দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি কিছু ই বুঝতে না পেরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে চলে এলাম। দরজার কাছে এসে পেছন ঘুরে দেখি ভাইয়ার নেশাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম সাথে ভাইয় চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি হতভম্ব হয়ে নিজের রুমে এলাম।
বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভেবে চলেছি কিন্তু কোন কিনারা খোঁজে পেলাম না।
গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম। না পেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙল সকালেই।বাসায় আজ থেকে বিয়ের কাজ শুরু হবে। কাল গায়ে হলুদ আজ বাসা সাজানো স্টেজ রান্নার যোগার সব হবে।
ঘুম থেকে উঠে আমি বারান্দায় চলে এলাম বাগানে হলুদের স্টেজ হবে।
বাইরে এসে চা কফি করে নিলাম।চাচি চাচা সবাই উঠে গেছে তারা সোফা বসে কি যেন হিসাব করছে আমি তাদের চা দিলাম। লতা রান্নার যোগার করছে।আমি চা নিয়ে ইমা আপু ইলা আপু কে দিয়ে ইহান ভাই এর রুম এ এলাম চাচি জানতে পারলে বকবে তাও এসেছি ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে।‌তাকে বলতে হবে আমি বিয়ের দুইদিন কোচিং যাব না সেটা যেন জানিয়ে দেয়।ভাইয়া বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ দেখা যাচ্ছে লজ্জায় লাল নীল হয়ে দরজা শব্দ করে আওয়াজ করে ঢুকলাম ভাইয়া জেগে গেলো আর উঠে বসলো ঘুমে তাকাতে পারছে না। আমি বললাম,
আপনার কফি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে কফি নিলো।আমি কফি দিয়ে চলে আসি সব সময় আজ তা না করে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে কিভাবে বলবো ভাবছি‌।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকালো কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“কিছু বলবি?”
আমি ওরনার কোণা আগুলে পেছাতে পেছাতে বললাম, ” আমি দুইদিন কোচিং এ যাব না‌।”
“কেন?”
আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
” আপুর বিয়ের আর আমি তা রেখে কি কোচিং এ যাব।”
“হুম যাবি সমস্যা ক‌ই। ” শা‌ন্ত গলায় বললো।
‘এ্যা , হা হয়ে চোখ বড় করে।
ভাইয়া বলল, “একদিন ছুটি নিয়ে দেব আজ কাল যেতেই হবে আমি নিয়ে যাব তোকে। হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হ‌ওয়ার আগেই আসতি পারবি।”
আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। ধুর কোথায় ভাল্লাগে না। কাজ ও তো আছে এই নিয়ে যে কি করবে চাচি আমাকে আল্লাহ মালুম জানে।
সকালের নাস্তা শেষ করে বাইরে চলে এলাম আমি আর লতা স্টেজ সাজানো হচ্ছে আমরা উজ্জ্বল মুখ করে তাকিয়ে দেখছি। হাতে হাতে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। আরেকপাশে কয়েকজন লোক খাবার তৈরির আধা, রসুন বাটছে। পিঁয়াজ কুচি করছি। সব রেডি করছে। গেট সাজানো হচ্ছে। বাতি ফুল, ক্যান্ডেলা দিয়ে সাজাচ্ছে।
দুপুরের রান্না করতে হলো না যাদের রান্নার জন্য আনা হয়েছে তারাই রান্না করলো সেই খাবার সবাই গেলো। বাসা ভেতরেও সাজানো হচ্ছে আমাদের কাজ নেই এখন অনেক লোক আছেই তারাই সব করছে।
বিকেলে,,
ভাইয়া গেটের কাছে ছিলো কি যেন বলে দিচ্ছিলো লোক গুলো মাথা নাড়ছে। আমি আর লতা সেখান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি আর এটা ওটা বলছি।
তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার আর লতার সামনে এসে দাড়ালো। আমরা হকচকিয়ে গেলাম।
“ঊষা তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোর কোচিং যেতে হবে তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।”
বলেই চলে গেলো।
আমি রাগ করে চলে গেলাম। রেডি বলতে চুল ভালো করে বেঁধে আর মুখ ধুয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চাচির দেখা তখন আমার দিকে অড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
” এমন ফিটফাট হয়ে ক‌ই যাস।”
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
” এতো কাছের মধ্যে তুই কোচিং যাচ্ছিস? খুব ভার বেরেছে তোর। রুমে এগুলো রেখে কাজ কর।”
“চাচি কাজ সবাই তো করছে। আমি আর কি করবো।”
“ও কাজ পাচ্ছিস না চল তোকে কাজ দেই।”
“কিন্তু আমি তো কোচিং এ যাচ্ছি। পরে করে দেয়।”
“না এখন ‌ই করবি আর কোথা ও এখন যাওয়া হবেনা তোর।”
আমার কথা চাচি শুনছে না ধমক দিয়ে দিলো আমি রুমে যাচ্ছি মাথা নিচু করে তখন কোথা থেকে ভাইয়া এসে ডাক দিলো।
“ঊষা তারাতাড়ি চলো। এতো সময় লাগছে কেন?”
আমি থমকে গেলাম একবার চাচির দিকে তো একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
ভাইয়া চাচির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আম্মু ও এখন কোচিং এ যাবে।তোমার এতো দরকারি কাজ থাকলে কাজের লোকদের বলো।”
“ইহান ঊষা কোথাও যাবে না। আমার কাজ করবে। তুই জোর করিস না।”
“সরি আম্মু আমি তোমার কথা মানতে পারলাম না। তুমি লতাকে বলো।”
আমার দিকে তাকিয়ে আসতে বললো আমি চুপ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।চাচির সামনে আমার যাওয়ার সাহস নাই‌। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো।চাচি কটমট করে তাকিয়ে র‌ইলো।
গাড়িতে বসে,
আজকে না গেলেই ভালে হতো।এতো কাজ বাসায় কিছু তো করা দরকার।
ড্রাইভ করতে করতে বললো,
“তুই কি কাজ না করলে কাজ থেকে যাবে।এতো লোক রাখা হয়েছে তাদের বদলে তোর কাজ এগিয়ে দিতে হবে এতো কাজ শিখে গেছিস।”
শক্ত গলায় বলল।আমি ভাইয়া বাম গালে দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলছে কথাটা‌।
” না আসলে তা না।”
ঢোক গিলে বললাম।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। কোচিং নামিয়ে দিলো আমি নেমে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে বের এলাম। একাই যেতে হবে ভাবছি। কিন্তু টাকা তো নাই টাকার কথা ভুলে গেছি। এখন যাব কি করে।নিচে এসেই দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন চাপছে।ভাইয়া আকাশি রঙের শার্ট ও ব্রাউন প্যান্ট পরেছে।
আমি বিস্মিত হয়ে এগিয়ে এলাম ভাইয়া কি এতো সময় এখানেই ছিল। নাকি চলে গেছিল আবার এসেছে।
আমি এগিয়ে এসে বললাম,” আপনি যাননি।”
ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না‌।
গাড়িতে উঠে বসলো।আমিও আর কিছু না বলে উঠে বসলাম।
সারা রাস্তা আর কোন কথা হলো না আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কথা না বলে কি থাকা যায় কিন্তু ভাইয়া তো বলে না তাই কষ্ট হলেও চুপ করেই থাকলাম। বাসায় আসার পর চাচি তার রুমে নিয়ে আমাকে সারা রুম পরিস্কার এর দায়িত্ব দিলো।আটটা পর্যন্ত সেখানেই র‌ইলাম।ক্লান্ত হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম না খেয়ে‌।এগারোটার দিকে জাগানা পেয়ে উঠে বাইরে এসে খাবার খুঁজে একটু খাবার পেলাম। তারপর খেতে লাগলাম। খিদে পেয়েছিলো অনেক। এক লোকমা মুখে দিতেই হাত জ্বলে উঠলো।
হাত কেটে ফেলেছি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে‌ এটা। পেটে খিদে হাত ব্যাথা কি করবো।এখন আমার চোখে জল চলে এলো।জ্বালা হাত দিয়ে আবার খাবার মুখে দিলাম কিন্তু কষ্ট আমি শেষ পারছি না। তখন দরজা খুলে কেউ ভেতরে এলো তাকিয়ে দেখি ইহান ভাই‌।
নীল ট্রাউজার ও কালো গেঞ্জি করে এলোমেলো চুলে ভেতরে এলো।আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকালো ভাইয়া এখানে কেন কোন দরকার নাকি?
ভাইয়া এগিয়ে এসে বলল,
“কি হয়েছে হাতে দেখি?”
বলেই আমার সামনে থেকে খাবার সরিয়ে নিজে বসে পরলো আমার সামনে আর হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। আমি কেঁপে উঠে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া জানলো কি করৈ আমার হাতে আঘাত পেয়েছি।
বিষ্ময় ভড়া চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার এঁটো হাত নিজের হাতে নিয়ে দেখছে তার হাতেও খাবার লাগছে সেদিকে খেয়াল নেই‌।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here