এক_চিলতে_রোদ,Part_43,বোনার্স পার্ট

0
1199

#এক_চিলতে_রোদ,Part_43,বোনার্স পার্ট
#Writer_Nondini_Nila
#Part_43

আমার ঠিক হতে দশ মিনিট চলে গেলো। আমি গলা জ্বলার জন্য পানি খাচ্ছি। যা ওই ছেলেটা এনে দিয়েছে।ছেলেটার নাম শামিম। ভাইয়া আমাকে পানি খাইয়ে দিলো। তারপর খুব আলতো ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

‘ এখন ভালো লাগছে? ‘

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। এমন কাশি উঠলো কেন? আমি লজ্জায় নিচের তাকিয়ে আছি। সবাই কি ভাবছে আল্লাহ জানে।
দিনাদের খাবার খাওয়া শুরু হয়ে গেছে আমরা পরে খাচ্ছি। আমি খেতে পারলাম না ঠিক মতো। খালি কাশি পাচ্ছে আমার। কিন্তু বুঝতে দিলাম না ভাইয়াকে।
ভাইয়া আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিজেও খাওয়া অফ করে বললো,

‘ কি হলো খাচ্ছিস না কেন?’

আমি বললাম,’ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘ কেন?’

‘ এমনি আপনি খান।’

ভাইয়া বললো ,’ সত্যি করে বল তোর কি এখনো খারাপ লাগছে?’

আমি ভাইয়া চিন্তিত মুখে দিকে তাকিয়ে না বললাম। ভাইয়া বিশ্বাস করছে না সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি ঢোক গিলে আছি।

ভাইয়া নিজে খাবার আমাকে খাইয়ে দিতে এলো। আমি আঁতকে আশেপাশে তাকালাম। কেউ অবশ্য আমাদের দিকে লক্ষ্য করছে না। সবাই নিজেদের খাবার নিয়ে ব্যস্ত। তবুও আমি বললাম,

‘কি করছেন? ‘

‘আমি খাইয়ে দেয় আমার হাতে খা।’

‘আমি খাব না আর। একটু খেয়েছি তো‌।”

‘ওই টুকুতে কিছু হয়নি খা বলছি।’

আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া নাছরবান্দা আমি এবার বলেই দিলাম।

‘আমার গলা জ্বলছে আমি খেতে পারবো না প্লিজ জোর করবেন না‌।’

ভাইয়া আর কিছু বললো না।
নিজে খাবার খেয়ে নিলো। ভাইয়া ও খুব একটা খেলো না কিছুটা খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।সবার খাওয়া শেষে আরো দশ পনেরো মিনিট পর আমরা বের হলাম। গাড়িতে উঠে বসে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বসে আছে। আমি সামনে তাকিয়ে আছি।

কিছু দূর আসতেই একটা দোকানের কাছে ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলো আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,

‘ একি নামছেন কেন?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দরকার আছে। তুই নামিস না কিন্তু!’

বলেই দোকানের দিকে চলে গেলো। আমি সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমাদের গাড়িতে দিনা নাই ওদের গাড়ি চলে গেছে। আমি গাড়িতে বসে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া ঠান্ডা জাতীয় জিনিস কিনছে‌।

সব নিয়ে আবার গাড়িতে এলো। আর আমার হাতে খাবার দিয়ে উঠে বসলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ এসব কেন?’

ভাইয়া বললো, ‘ দ্রুত এগুলো ফিনিশ কর।’

আমি চমকে উঠে বললাম,, ‘ মানে কি? এসব আমার জন্য এনেছেন?’

‘ তো আর কার জন্য আনবো?’

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,’ এসবের কি দরকার। আমি তো খাব না।’

‘ খাবি না কেন?’

‘এমনি আমার ভালো লাগছে না।’

‘ আমি এতো কথা শুনতে চাইনা।এসব খেতেই হবে তোকে‌।’

‘ আমি….

‘এসব খেলে গলায় জ্বালাপোড়া করবেনা। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু কর।’

ভাইয়ার জরাজরির সাথে না পেরে খেতে হলো। তিন্নি আপুদের বাসায় এসে দেখতে পেলাম সবাই নাচানাচি করছে হলুদ নিয়ে দৌড়াচ্ছে। একজন আরেকজনকে লাগিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেখানে গেলাম কিন্তু ভাইয়া আমাকে সবার সাথে আনন্দ করতে দিলো না হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

‘আমাকে যেতে দিন না।’

‘না তুই অসুস্থ।’

‘আমার কিছু হয়নি ওটা সামান্য বিষয়।’

‘যাই হোক তুই যেতে পারবি না। এখন ঘুমাবি চল এগারোটা বাজে।’

‘কিন্তু সবাই তো জেগে আছে আমি ও।’

কথা শুনলে তো টেনে আমাকে নিয়ে এলো। আর আমার মানে দিনার রুমে এলো ভাইয়া ও আমার সাথে। বিছানায় বসে আমাকে ফ্রেশ হতে বললো‌ আমি বাধ্য মেয়ের মত বললাম,

‘আপনি বের হোন আমি চেঞ্জ করবো।’

‘আমি বের হবো কেন? বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ কর!’

‘ শাড়ি বাথরুমে চেঞ্জ করলে ভিজে যাবে। এখানে করতে হবে আপনি যান।’

‘ আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলে আমার সামনেই এটা করতে বলতাম কিন্তু হলো না বলে যাচ্ছি।’

বলেই উঠে দাঁড়ালো।

‘একি আপনি ওইদিকে কেন যাচ্ছেন? বাইরে যান।’

‘ রুমে বাইরে যাচ্ছি। সেটা বেলকনিতে গেলেও হবে।’

বলেই চলে গেলো আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। এরে আমি কোন কথা শুনাতে পারবো না।

শাড়ি খুলে অন্য ড্রেস পরে নিলাম। পুরোটা সময় আমি বারান্দায় দরজার দিকে তাকিয়েছি এই বুঝি ভাইয়া এসে পরলো। তাকিয়ে আছে এমনটা মনে হয়েছে।

‘এবার শুয়ে পর।’

বলতে বলতে ভাইয়া এগিয়ে এলো আমি বিছানায় কাছে দাঁড়িয়ে আছি।

ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো একদম মুখ বরাবর। তার একহাত বাড়িয়ে আমার গালে রেখে বললো,

‘তোর কিছু হলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে ঊষা। নিজের খেয়াল রাখবি প্লিজ।’

আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার কপালে গভীর চুম্বন দিলো। আমি চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করলাম। ভাইয়া আমাকে টেনে বিছানার শুয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার চোখের কোনা দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। এতো সুখে কান্না পাচ্ছে আমার।

ওইভাবে আমি ঘুমিয়ে পরলাম। ইহান ভাই আমার ঘুমিয়ে যেতে দেখে মাথায় দেখে হাত সরিয়ে নেয়। আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরদিন ঘুম ভাঙল সকাল সকালই কারণ জোরে গান বাজছে। আটটা বাজে তখন উঠে দেখি দিনা উঠে গেছে। আমাকে বললো,

‘আরে উঠে গেছো! আর কাল কোথায় ছিলে আসার পর আর দেখলাম না। রুমে এসে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছো। তোমার কি অনেক খারাপ লাগছিলো।’

‘না তেমন না এমনি ঘুমিয়ে পরেছি।’

‘ওহ। কিন্তু বলতেই হয় ইহান ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে।কাল কতোটা উত্তেজিত হয়েছিলো। এমন একজন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’

আমি কিছু বললাম না কিন্তু আমি জানি এসব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ভাইয়ার এই ভালোবাসা সব সময় থাকবে তো?

আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম,

‘ দিনা আমাকে আশেপাশে ঘুরতে নিয়ে যাবা।’

‘ তুমি ঘুরতে চাও!’

‘হুম।’

‘আচ্ছা কিন্তু আজ তো বিয়ে। থাক গা এখন তো কিছুই নাই চলো আমরা ঘুরে আসি।’

‘আচ্ছা। আমি একবার ভাইয়ার রুমে থেকে আসি।’

‘আচ্ছা যাও।’

আমি ভাইয়ার রুমে এসে দেখলাম ভাইয়ার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই আর ডাকলাম না। ঘুরে চলে এলাম।

দিনার সাথে আসার আগে ইমা আপুকে বলে এলাম। আমরা চারপাশের ঘুরতে লাগলাম। সবুজ এই প্রকৃতি। একটা পুকুর দেখলাম যেখানে হাঁস গোসল করছে ঘুরছে। আমি মুগ্ধ হয়ে সে দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। সকাল বলে মানুষ নাই রাস্তায় আমরাই আছি শুধু। দিনা একটা স্কুল দেখালো। এটা নাকি প্রাইমারি স্কুল এখানে ও পরেছে। সামনে মাঠ খুব বড় না হলেও ছোট না।

একটা বট গাছ দেখলো ইয়া বড় জিনিসটা অসম্ভব সুন্দর। গাছটা অনেকটা জায়গা জুড়ে আমি অবাক হয়ে বললাম,

‘এটা এতো বড় কেন?’

“জানি না গো। এই গাছটা শুধু ছড়িয়ে বড় হচ্ছে। দেখো কতো জায়গা দখল করে ফেলেছে আর ওইযে সামনের খেতে দেখছো ওইটা আমাদের। আর একটু গেলে ওইটাও দখল হয়ে যাবে।’

‘ও মাই আল্লাহ বলো কি? এটা কাটে না কেন?’

‘ কে কাটবে? আগে নাকি যারা কাটতো তাদের সমস্যা হতো তাই আর কাটে না এটা যত খুশি বড় হোক।’

‘ওহ!’

চলে আসার সময়। বাসার কাছাকাছি আসতেই ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। কপাল কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।

দিনা আমার হাত ধরে বললো, ‘ দাঁড়িয়ে পরলে কেন?’

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললাম, ‘ ভাইয়া উঠে গেল।’

দিনাও ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো আমাকে নিয়ে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কোথায় গেছিলি?’

আমি বলার আগে দিনা বললো,’ ওই ভাইয়া আসলে ঊষা কে আমাদের গ্ৰাম দেখাতে নিয়ে গেছিলাম।’

আমি ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছি। এই বুঝি বকা খাবো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘ আমাকেও নিয়ে যেতেন। আমিও না হয় গ্ৰাম দেখতাম।’

‘আপনিও দেখতে চান।’

‘ হুম।’

‘ আচ্ছা চলুন তাহলে।’

‘ চলেন।’

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বললো,’ চল ।’

‘ আমি তো গেছিলাম আপনি যান‌।’

‘ তো আমি একা যাব নাকি। গেছিলি আবার যাবি।’

বলেই এগুতে লাগলো। দিনা বললো,

‘ ভাইয়া আমাকে আপনি বলেন কেন? ‘

‘ এমনি।’

‘ আমাকে তুমি বলবেন প্লিজ নিজেকে বড় লাগে।’

‘ আচ্ছা চেষ্টা করবো।’

আবার এক জায়গা দিয়ে ঘুরতে হলো। ভাইয়া আমার হাত ধরে হাটলো। আর এখন মানুষের আনাগোনা রাস্তায় পেলাম।

সকালের খাবার খেয়ে বসে আছি সোফায় আমি একাই তখন চাচি এসে বসলো আমার কাছে। আমি কাচুমাচু করে বসলাম। চাচি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ তোমার কি কিছু লাগবে চাচি?’

চাচি বললো, ‘ কেন তোর কাছে সব আছে নাকি?’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। চুপ করে গেলাম। তখন ভাইয়া এলো আর চাচির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আম্মু আমাকে আজকেই ঢাকা ব্যাক করতে হবে।’

‘কেন? বিয়ে তো শেষ হয়নি।’

‘হুম কাল একটা জরুরী মিটিং আছে। স্যার বললো এটেন্ট করতেই হবে।’

চাচি বললো আমাকে না বলে ইমাকে বল।
ভাইয়া চলে যাবে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমার সাথে আয়।’

আমি উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার পিছু ধরলাম। চাচি কটমট করে তাকিয়ে ছিলো।

কেউ মানতে না চাইলেও ভাইয়ার যেতেই হবে। যেখানে স্যার কল করে বলেছে না গেলে খারাপ দেখা যায়। তাই ইমা আপু বললো,

‘আচ্ছা যা কিন্তু এখন না বিকেলে।’

ভাইয়া তাই রাজি হলো কিন্তু সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে বললো,

‘ কেন ওকে কেন?’

‘আমি না থাকলে ও থেকে কি করবে?’

‘ বিয়ে শেষ হলে আমার সাথে যাবেনি।’

‘ দরকার নাই‌। আমার সাথে ঊষাও যাবে।’

কারো কথা শুনলো না আমাকে নিয়েই যাবে। আমি আর কি বলবো? সব নিরব শ্রোতা হয়ে শুনলাম।

চাচির এনে দেওয়া ড্রেসটা পরলাম আজ। কিন্তু আনন্দ আমার হলো না যাওয়ার তারা। বিয়ে পরানো হবে সন্ধ্যায় আর ভাইয়া আগে যেতে চায়।

আমি ভাইয়া কাছে এনে মুখ কাচুমাচু করে বললাম,

‘ চলেই তো যাব বিয়েটা দেখে যাই প্লিজ।’

‘রাত হয়ে যাবে তাহলে।’

আমি গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া ও কিছু বললো না।

কিন্তু ভাইয়া গেলো ও না। সন্ধ্যায় আগেই বিয়ে পড়ানো শুরু হলো‌ আমি থাকতে পেরে সেই খুশি‌। আপু যখন কবুল বলছিলে হায় কি কাঁদা। আমরাও কাদলাম।

বিয়ে পরানো শেষ এ বর কনেকে এক সাথে বসালো। সন্ধ্যায় আযানের আরো পর আটটার দিকে ভাইয়া আর আমি বেরিয়ে পরলাম। আমাদের গাড়িটা নিয়ে এলাম। রিফাত ভাই বলেছে তারা ম্যানেজ করতে পারবে আমরা এটা নিয়ে গেলে সমস্যা নাই‌‌।
কিন্তু কে জানতো এই গাড়ি আমাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।

গাড়িটাতে যে তেল কম আমরা জানবো কি করে? সেটা এমন একটা জায়গা গিয়ে থামলো না আছে দোকান পাট আর না আছে মানুষ জন। কেবল নয়টা বাজে এই সময়টা এই অবস্থা।কিন্তু গ্ৰামে এই সময়টা অনেক আমরা গ্ৰাম পার করতে পারিনি।
কিন্তু তিন্নি আপুদের থেকে দুই গ্ৰাম পেরিয়ে এসেছি
মানে একঘন্টা চলে এসেছি এগিয়ে।

ভাইয়া গাড়িতে থেকে নেমে গাড়িতে একটা লাথি দিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। কপালে আংগুল চেপে কিছু চিন্তা করছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ভয়ার্ত মুখ করে চারপাশে তাকাচ্ছি। অন্ধকার ঘুটঘুটে অন্ধকার। আকাশে চাঁদ নেই না আছে জোসনা‌। শহর হলে এই সময় কেন রাত এ দিনের মতো কিন্তু এখানের অবস্থা আলাদা। আমি অন্ধকার রাস্তায় দিকে তাকিয়ে কাঁপছি। ভয় ভূতের ভয় আমি পা ফেলে গাড়িতে হেলান দিলাম। আস্তে আস্তে ভাইয়া গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। ভয়ে আমি ভাইয়া হাত না পেয়ে শার্ট খামচে ধরে আছি। ভাইয়া কপালে থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে অন্ধকার এ তাকিয়ে বললো,

‘কি হয়েছে?’

আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম, ‘ আমার ভয় করছে এখানে থেকে চলুন!’

‘ এখন তেল কোথা থেকে পাবো। এখানে থেকে দোকান দেখছি না। আচ্ছা তুই ভেতরে গিয়ে বস আমি দেখছি পাওয়া যায় কিনা?’

আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,,’ না আমি আপনার সাথে যাব।’

ভাইয়া হতাশ হয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে ফোনের লাইট ধরে হাঁটতে লাগলো। আমি ভাইয়ার বাহু শক্ত হয়ে ধরে হাঁটছি। হুট করেই এলোমেলো ভাবে বাতাস আসতে লাগলো বৃষ্টি হবে নাকি?
বাতাসের বেগ বেড়ে চলেছে।
গুরিগুরি ফোঁটা গাড়ি এসে পরছে। তার মানে বৃষ্টি হবে।

‘ওই মাই গড ঝড় হবে মনে হচ্ছে। সারাদিন তো ভালোই ছিলো। এখন এমন হচ্ছে কেন?’

আমি ভাইকে আরো জরিয়ে ধরে বললাম,

‘ আজকে বের হ‌ওয়া ঠিক হয়নি।’

‘ এজন্য দিন থাকতে বের হতে চাইছিলাম। তোর তো বিয়ে দেখতে হবে।’

আমি মুখ গোমড়া করে ফেললাম।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#bonus_part

ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে জাপ্টে ধরে আছে। হাল্কা জাগানা হতেই কানের কাছে টিপটিপ শব্দ হলো। বাঁশির মতো অনবরত বেজেই যাচ্ছে আস্তে আস্তে আমার ঘুম ছুটে গেলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে ভাইয়া অস্তিত্ব পেলাম। ভাইয়া আমাকে দু’হাতে বুকে জরিয়ে আছে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। মাথা তুলে ভাইয়ার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মুখের দিকে তাকালাম।
আজ প্রথম হলে এমন ভাইয়ার বুকে নিজেকে দেখে চিৎকার করতাম যেমনটা প্রথমদিন করেছিলাম।

কিন্তু আজ তো প্রথম দিন না ইদানিং প্রায় এটা হতেই থাকে। পড়া শেষ করতে করতে আমি এখানেই ঘুমিয়ে যায় আর সকালে উঠে এমনটা আবিষ্কার করি।
আমি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার হাত সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু এই লোকটা ঘুমের মাঝেও আমাকে এমন শক্ত করে ধরে রাখে যে আমি যেতে পারিনা। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। খারাপ লাগছে না বরং ভালো লাগছে। ইদানিং এই অভ্যেস হয়ে গেছে। আমি আগে উঠে এইভাবেই ভাইয়াকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। হাত বাড়িয়ে দেয় নির্লজ্জের মতো তার খোঁচা খোঁচা দাড়িতে। আজকেও দিলাম। ভাইয়া জেগে যাবে ভেবে হাত সরিয়ে নিজেই লজ্জা পেতে লাগলাম।
তিন্নি আপুর বিয়ে থেকে এসেছি দের মাস হতে চললো। এখনো আমার সেই রাতে কথা ভাবলেই বুক কেঁপে উঠে। কি ভয়ংকর সেই রাত ছিলো ? আমার। গলা শুকিয়ে আসে। কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।
সারা রাত আমরা বাড়ি ফিরতে পারিনি সকাল নয়টায় বাসায় আসি। আমি পাথর হয়ে বসে ছিলাম গাড়িতে। ভাইয়া গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। তারপর আমাকে টেনে বারিয়ে এনে ভেতরে নিয়ে আসে।

আমি পাথর হয়ে দরজার কাছে দাঁড়ায়। লতা দরজা খুলে আমাদের দেখে সে কি খুশি। আমার কোন দিক খেয়াল নেই।ভাইয়া লতার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ঊষার খেয়াল রাখিস। আমাকে এখন অফিস যেতে হবে আসতে রাত হতে পারে।’

লতা আমার দিকে থেকে কোন কথা বা ওর দিকে না তাকানোর জন্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ ওর কি হয়েছে?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে,’ কিছু না জোর করে খাইয়ে দিস।’

বলে আমাকে দরজার কাছে রেখেই উপরে ছুটলো। লতা আমাকে নিয়ে আমার রুমে আসে আর জিজ্ঞেস করতেই লাগে। অনেক কিছু। বিয়ে কেমন খেলাম। আগে কেন এলাম! আমি ওর মুখের দিকে একনজর তাকিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। ভাইয়া চলে গেছে তার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
এগারোটার সময় তার মিটিং আর এখন দশটা চল্লিশ বাজে।

ভাইয়া কোন রকম শাওয়ার নিয়ে ড্রেস আপ পরে রেডি হয়ে ছুটে গাড়িতে উঠে বসে।
রাতে বাসায় ফিরে! আর ফিরেই আমার কাছে আসে। ক্লান্তে ভাইয়ার মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে। আমি বিছানায় গুটিগুটি মেরে বসি ছিলাম। তখন ভাইয়া এসে আমার পা মেলে আমার হাঁটুতে নিজের মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। আমি হকচকিয়ে পা সরাতে গেলে ভাইয়া দূর্বল গলায় বলে,

‘প্লিজ ঊষা! আমি খুব ক্লান্ত! সারাদিন একটু ও রেস্ট নিতে পারিনি। মাথা টান টান হয়ে আছে! তোর নরম হাতে একটু ম্যাসাজ করে দে না।’

কথা বলতে ভালো লাগছে না। আর এসব ও ভালো লাগছে না। কিন্তু তার এই আকুতি ভরা গলার স্বর শুনে আমি কিছু বলতে ও পারছিনা।
আমার খুব মায়া হলো আসলেই আমি তো সারা দিন ঘুমিয়ে কাটালাম। কিন্তু ভাইয়া তাও পারলো না। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার মাথায় হাত রাখলাম। ভাইয়া ক্লান্ত মুখে মুচকি হাসলো। আমার আরেক হাত বুকে চেপে চোখ বন্ধ করে র‌ইলো।
আমি অস্বস্তি নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

ভাইয়া অফিসে যা পরে গেছিলো তাই পরে আছে। তিনি যে ড্রেস ও চেন্জ করেনি । আমি তাই নিচু গলায় বললাম,

‘ আপনি ফ্রেশ হবেন না?’

‘ এখন না আমি খুব ক্লান্ত আগে ঠিক হয়ে নেই।’

‘কিন্তু আপনি তো ঘেমে গেছেন গোসল করলে ভালো লাগত।’

‘তোর কি আমার ঘামে ভেজা শরীরে দেখে ঘৃন্না লাগছে?’
ফট করেই তাকিয়ে বলে উঠলো।
আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমি তার ভালোর জন্য বলছিলাম। তিনি আমাকেই ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ভুল বুঝছে। ভাইয়া কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

আমি বললাম, ‘ আমি সেটা কখন বললাম। আমি তো জাস্ট আপনার ভালোর জন্য বলছিলাম।’

ভাইয়া কিছু বললো না চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমিও আর কিছু বললাম না। তিন ঘন্টা এক ঘুমে কাটালো আর হাঁটুতে ভাইয়া। আমিও ডাকলাম না ভাইয়া ও উঠলোনা‌।
উঠার পর আমার মনে হলো হাঁটু ভেঙ্গে গেছে। এতো সময় আমি নড়াতে পারছিলাম না এমন অবস্থা। ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি শাওয়ার নেব। তারপর খাবো। অনেক খিদে পেয়েছে। খাবার রেডি কর।’

বলেই কোন দিক না তাকিয়ে চলে গেলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার অবস্থা খারাপ করে দিয়ে এখন খাবার চাওয়া হচ্ছে।
কিন্তু তাও কিছু বললাম না খাবার রেডি করলাম।

তিনদিনের মাথায় চাচি এলো সাথে ইমা আপু ও আসলো। দুইদিন থেকে চলে গেলো। চাচি আমার সাথে এখন আর কথা না বলে থাকে না। আগের মতো কাজ দেয়। তা অবশ্য ভাইয়ার অবর্তমানে। সারাদিন ইচ্ছে মতো কাজ করায়।
আমি ভাইয়াকে কিছু বলিনা। এতো ঝামেলা পছন্দ না আমার। ভাইয়া আমার জন্য কলেজে ভর্তির জন্য কয়েকটা বই এনে দিলো । ভালো কলেজে তো পরিক্ষা দিতে হবে। তাই নিয়ে প্রতিদিন আমাকে রাতে এক ঘন্টা পড়ায়। এই সময়টা মাঝে মাঝে না পারলে অনেকটা সময় চলে যায় আর আমি ভুলে ঘুমিয়ে পরি।

প্রথম দিন ঘুমিয়ে পড়লাম। সেদিন সকালে উঠে আমি ভাইয়া বাহুডরে আবদ্ধ অবস্থায় নিজেকে পেয়ে একটা বড় সড় চিৎকার করে উঠি। আসলে এমন অবস্থা দেখে আমি চমকে ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আমার চিৎকার শুনে ভাইয়া ধরফরিয়ে উঠে আর আমার মুখ চেপে ধরে। আমি উম উমমম করতে লাগি।

‘ রিল্যাক্স আমি, ভালো করে দেখ আমি তোর ইহান ভাই, চিৎকার করছিস কেন? সবাই কি ভাববে?’

‘ আপনি আমার রুমে কি করছেন? আর এভাবে জরিয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেন?’

‘ আমি তোর রুমে না বরং তুই আমার রুমে!’

‘ কি?’

বলেই চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটা ভাইয়া রুম। রাতের কথা মনে পরে গেলো। আমি ঝিমুচ্ছিলাম আর পারছিলাম তখন কোনভাবে ঘুমিয়ে পরেছি। ভাবতেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলাম। খুব অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলাম। এই ভাবে ভাইয়ার রুমে ঘুমিয়ে পরলাম। ভাইয়া কি ভাবছে?
আর না ডেকে এমন জরিয়ে ঘুমালো কেন? আমার মনে অন্য কিছু উঁকি দিতে লাগলো। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ভাইয়ার দিকে,

‘ আপনি ওমন করে জরিয়ে কেন ঘুমালেন? আমি না হয় ভুলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমাকে আর ডাকলেন না কেন?’

ভাইয়া মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো,’ তোকে ডাকলে আমার এতো সুন্দর ঘুম হতো নাকি? আর যা যা করেছি তা করতে পারতাম না আমি তো লোভ সামলাতে পারিনি।’

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম কি সব বলছে ভাইয়া করেছে?
আমি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,’ কি করেছেন আপনি?’

আমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। ভাইয়া তা দেখে আমাকে আরেকটু ভয় পাইয়ে দিলো,

‘অনেক কিছু।’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে চেয়ে আছি।
কেঁদে দেবো এমন একটা অবস্থা।ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি মানে তো ভালোবাসি না। আমার সম্মতি ছাড়া এসব করলো ভাবতেই আমার ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
ভাইয়া আমার এই অবস্থা দেখে হেসে ফেললো আর বললো,

‘তুই আমাকে এমন ভাবিস? আমি তোর ঘুমের সুযোগ নেবো আমাকে এতো খারাপ ভাবিস?’

আমি ভাইয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এক হাত আমার দিকে বাড়িয়ে কপালে ছোট ছোট চুল কানে গুঁজে দিলো।

‘কাল শুধু তোকে একটা কিস করছি আর জরিয়ে ধরে তোর দিকে তাকিয়ে থেকেছি। তুই জানিস এতোটা সময় তাকিয়ে ছিলাম যে সকালের আযান পরে যায় তবু আমার মনে হয় আমি একটু সময় দেখলাম তোকে। তুই যদি আমার সামনে বসে থাকিস আমি তোর দিকে তাকিয়ে থেকে এই জীবন পার করে দিতে পারবো। কিন্তু এটা বলবো না আমার কিছু করতে ইচ্ছে হয়নি‌! হয়েছে খুব হয়েছে! যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে সব ভাবেই নিজের করে পেতেই চাই! কিন্তু এখনো সময় হয়নি তোর আঠারো বছর না হ‌ওয়া পর্যন্ত আমি নিজেকে সংযত রাখবো। আর জানি একদিন আমার থেকেও বেশি তুই আমাকে ভালোবাসবি আমি সেই দিনের অপেক্ষা করছি।’

আর কথা বলিনি সেদিন! চলতে লাগলো সময়। আমার রেজাল্ট এর সময় ঘনিয়ে এলো আর বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে গেলো আমার বারবার মনে হতে লাগলো আমি ভালো করবো তো।
ভাইয়ার মুখ রাখতে পারবো তো। এই সময় আমার যতসব উদ্ভব চিন্তা ভাবনা হতে লাগলো। আমি প্রশ্ন কমন পরেছিলো লিখেছিও কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে আমি রোল নম্বর ভুল লিখেছি‌। কোড নাম্বার লিখিনি এসব বাজে চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে গেল। কিছুতেই চিন্তা দূর করতে পারছিনা। পর পর দুই রাত রুমে ঘুমাতে পারলাম না। একটু ঘুম আসলেও বাজে স্বপ্ন দেখি‌। আমি ফেল করেছি। চিন্তা আমি শেষ। এটা হলে আমি মুখ দেখাবো কি করে ভাইয়া কে।

হাত পা কাঁপছে আমি রেজাল্ট দেখতে যাইনি রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছি। নামাজে বসে আল্লাহকে বলছি আল্লাহ আমাকে ফেল করিও না। ভাইয়া কতো চেষ্টা করেছে এখন ফেল করলে মুখ দেখানোর যো থাকবেনা।
বাইরে চাচি আমাকে বকে যাচ্ছেন!

‘ঢং দেখলে বাঁচি না। ফেল করবে তো তাই ওমন দরজা আটকে মুখ ঢেকে বসে আছে। ছাগল দিয়ে কি আর হাল চাষ হয়।এবার আমার ইহান বুঝবে। গাধাকে ঘোড়া বানানো যায়না। ওর দ্বারা কিছু হবে না। খালি অন্যের ঘাড়ে উপর বসে খেতে পারে আর আমার ছেলের মাথা খেতে পারে।’

আমি শুনছি আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। চাচির কথা কি সত্যি হবে। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি তখন ভাইয়ার গম্ভীর আওয়াজ কানে এলো আমি কেঁপে উঠলাম,
বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো। আমি কি ফেল করেছি।

দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি‌।মাথা তুলতে পারছি না।

‘এমন করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তাকা আমার দিকে?’

আমি তাকাচ্ছি না।

‘কি হলো তাকা?’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,’ ভাইয়া আমি কি ফেল করেছি? আপনি কি আমাকে খুব বকবেন? বিশ্বাস করুন আমি চেষ্টা করেছি আর পরিক্ষাও ভালো দিয়েছি! কিন্তু কি করে এসব হলো?’

‘কি পাগলের মতো আবোল তাবোল বলছিস?’

আমি কিছু বলবো ভাইয়া ফোন আমার দিকে তুলে ধরলো,

যেখানে আমার নাম, রোল সব আছে নিচে লিখে A+ আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

তাও মুখে বললাম,,’ কি?’

তুই জি পি এ ফাইভ পেয়েছিস।’

আনন্দে আমার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আমি এতো ভালো করেছি। আর কতো কিছু না ভাবছিলাম। নিজের উদ্ভব চিন্তা ভাবনার জন্য নিজেরই রাগ হচ্ছে।কি টেনশনে ছিলাম। উফ বুকের উপর থেকে যেন পাথর সরে গেলো।

ভাইয়া ফোনে কিছু করছে আমি ঝলমল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এই সব কিছু পসিবল হয়েছে এই মানুষটির জন্য। তার কৃতিত্ব। আমি আচমকা একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম।

আমি অতি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে ভাইয়ার গালে চুমু খেয়ে বসলাম। ভাইয়া আমার হঠাৎ কাছে হতভম্ব হয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি নিজের কাছে নিজেই হতবাক হয়ে গেলাম।কি করে ফেললাম উত্তেজনায় বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা কাটা আমার।
আমি লজ্জায় দরজা আটকে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
ইশ কি লজ্জা কি করে ফেললাম আমি। ভাইয়াকে মুখ দেখাবো কি করে? এমন কাজ আমি কি করে করলাম? দশ মিনিট পর ভাইয়ার ডাকে আমাকে বের হতে হলো। আমি বের হতে চাইনি কিন্তু হতে হলো। ভাইয়া আমার লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমরা একটা জায়গায় যাবো দ্রুত রেডি হয়ে নে!’

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে চমকে তাকালাম,

‘কোথায় যাবো?’

ভাইয়া বললো, ‘ গেলেই দেখতে পাবি। তারাতাড়ি রেডি হ।’

আমরা একটা হোটেলে এলাম। আমি চারপাশে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললাম,

‘ এখানে কেন?’

ভাইয়া কিছু বললো না। ভেতরে এসে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো শাড়ি। সাদা মধ্যে নীল জমিনে শাড়ি। আমি বোকার মতো শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,,

‘ এটা দিয়ে কি করবো?’

ভাইয়া বললো, ‘বেরাতে যাবো।’

‘তো রেডি হয়েই তো এলাম এখন আবার এসব কেন?’

‘ওই রেডি না আজ তুই আমার মন মতো সাজবি। আমি নিজে তোকে সাজিয়ে দিবো।’

‘আপনার সাজাতে হবে কেন?’

‘কারন তুই সাজতে পারিস না তাই।’

‘আপনি কি করে জানলেন ? যে আমি সাজতে পারিনা‌।’

‘জানি সব জানি।’

‘আপনি সাজাতে পারেন?’

‘পারিনা! তবে তোকে সাজিয়ে শিখে নেবো।’

‘শিখে কি করবেন?এসব তো বাড়িতেই করতে পারতেন?’

‘তোকে যাতে মন মতো সাজাতে পারি তাই। বাড়িতে পারতাম কিন্তু অনেক সিনক্রিট হতো। আমি তাতে তোয়াক্কা করিনা। কিন্তু তোর মন খারাপ হতো আমি চাইনা তোর তো খারাপ হোক।’

আমি চুপ করে গেলাম কতো ভাবে আমার জন্য।

‘কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না।’

‘চেষ্টা কর প্লিজ একটু্।’

‘হবে না‌ ভালো।’

‘ভালোর দরকার নাই! যেভাবে পারিস তাই পর। প্লিজ!’

আমার হাত ধরে অনুরোধ সুরে বললো আমি কিছু বলতে পারলাম না। এই অনুরোধ আমি ফেলতে পারবোনা।

ভাইয়াকে রুমে থেকে সরিয়ে শাড়ি পরার চেষ্টা করতে লাগলাম। অনেকটা সময় চেষ্টা করেও কুচি ঠিক করে পরতে পারলাম না। এক পাল দিয়ে করছি আরেক পাশ দিয়ে খুলে যাচ্ছে। শরীর ডেকে বিছানায় বসে র‌ইলাম।ভাইয়া ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করছে হয়েছে কিনা?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here