#এক_চিলতে_রোদ,Part_50,51
#Writer_Nondini_Nila
#Part_50
ফারিয়ার মনে তো লাড্ডু ফুটছে। খুশিতে ও দিশেহারা হয়ে পরেছে। ও কল্পনাও করতে পারিনি ইহান এতো সহজে মেনে নিবে। ওর সাথে চলে আসবে ডান্স করতে ঊষাকে রেখে।
ও ইহানের পাশে থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঊষার মুখটা দেখলো। আহ কি শান্তি লাগছে ওর। ঊষার মলিন মুখটা দেখে বুকের ভেতর সুখের জোয়ার ভেসে ফারিয়ার। ও শয়তানি হাসি দিয়ে ঊষার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। ডান্স ফ্লোরে এসে হাসি মুখে ইহানের দিকে তাকালো। ওর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।
‘আমি খুব খুশি ইহান।’
ইহান কপাল কুঁচকে বললো, ‘ এতো খুশি হওয়ার কারণ কি?’
‘ তুমি যে আমার কথা রাখবে এটা আমি ভাবিনি। আমার কথা রাখার জন্য থ্যাংক ইউ সো মাচ।’
‘ আমি তোমার কি কথা রাখলাম?’
অবাক হয়ে বললো ইহান।
ফারিয়া বললো, ‘ এই যে আমার কথা শুনে আমার সাথে ডান্স করতে চলে এলে।’
‘ওহ।’
‘হুম’
ফারিয়া এগিয়ে এসে ইহানের কাঁধে হাত রাখতে যাবে তখন ইহান পিছিয়ে যায়। আর বলে,
‘ ওয়েট ওয়েট।’
ফারিয়া হাত নামিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘ কেন?’
‘ তোমার পার্টনার কে ডাকতে তো দেবে। আমাকে টানছো কেন?’
‘ হোয়াট? তুমি তো আমার সাথে ডান্স করবে তাই না। আবার কাকে ডাকবে।’
‘ আমি তোমার সাথে ডান্স করবো কখন বললাম।’
‘ করবে না বলছো। কিন্তু তাহলে আমার কথা শুনে আসলে কেন?’
‘ তোমার কষ্ট দেখে।’
‘ আমার কষ্ট দেখে মানে?’ অবাক হয়ে বলে।
‘ আমার ফ্রেন্ড ডান্স করার পার্টনার না পেয়ে মন খারাপ করে থাকবে তা কি করে হয়? তাই তো আমি পার্টনার খুঁজে দিতে এলাম।’
‘ হোয়াট? তোমাকে আমি পার্টনার খুঁজে দিতে বলিনি। পার্টনার হতে বলেছি।’
‘ কিন্তু সেটা সম্ভব কি করে বলো? আমার পার্টনার রেখে অন্যকারো সাথে কি করে আমি ডান্স করা তুমি বলো।’
‘ তাই বলে…
ইহান ফারিয়ার কথা শুনলো না পেছনে ঘুরে একটা ছেলেকে ডাকলো।
‘ মিহির।’
একটা ছেলে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।
আর ইহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কিরে ডাকছিস কেন? এই ক্যাপেলদের মাঝে আমি আসতে চাইনা। নিজের তো ফাটা কপাল একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না। এসব দেখে এইখানে কেমন জানি করে রে আমি তাই দূরে বসে আছি।’
‘ তোর জন্য একজন আছে। এই যে আমার ফ্রেন্ড ফারিয়া লন্ডন থেকে এসেছে। ওর ও পার্টনার নাই তোর ও নাই তাই আজকের জন্য দুজন দুজনের পার্টনার হয়ে যায়।’
বলেই মিহির এর দিকে এগিয়ে কানে কানে বললো,
‘ দোস্ত পটাতে পারলে গার্লফ্রেন্ড করে নে সিট খালি আছে।’
মিহির আর ফারিয়ার হাত ধরিয়ে ইহান সরে এলো।
ফারিয়া রেগে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবে ওর আনন্দ মাটি করে দেবে কল্পনা ও করেনি। কতোটা আনন্দ পেয়েছিল আর সেকেন্ড এ ওর আনন্দ নষ্ট করে ইহান। ওই ঊষার কাছে চলে গেলো। ফারিয়া ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান ঊষার কাছে গিয়ে কানে ধরে কি যেন বলছে? ঊষা গাল ফুলিয়ে মুখ সরিয়ে নিলো।
রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের। তখন ও নিজের কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পায় সামনে তাকিয়ে অপরিচিত একটা মুখ দেখে। এই ছেলেকে ইহান রেখে গেলো ওর জন্য।ছেলেটা কেমন দাঁত কেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আবার পারমিশন ছাড়াই ওকে দুলিয়ে নাচাচ্ছে। একটা জিনিস খেয়াল ছেলেটার সাথে ওর ড্রেস মিলে গেছে।ছেলেটা ও নীল রঙের কোর্ট পরে আছে। আর ফারিয়া ও নীল শর্ট ফ্রক পরেছে। এই ছেলের সাথে ডান্স করার একটুও ইচ্ছে নাই ফারিয়ার ও হাত ছারানোর ট্রাই করছে কিন্তু পারছে না ছেলেটা ওকে ছারছেই না।ও এবার মুখ খুললো তাও ছারছে না।
মিহির শুধু বলেছে,
‘ আরে আমার সাথে ডান্স করুন না আমি ওতোটাও খারাপ ডান্স করি না।’
‘ ছারুন আমি আপনার সাথে ডান্স করবো না।’
‘ আরে আপনার ও পার্টনার নাই আমার ও নাই এক দিন না হয় দুজন দুজনের পার্টনার হয়ে গেলাম। সমস্যা কি তাতে?’
ফারিয়া রাগে গজগজ করতেছে। কিন্তু ছারাতে পারেনি।
‘ আপনি আমাকে রেখে চলে গেলেন আমার কতোটা খারাপ লেগেছিলো জানেন?আমি ভেবেছিলাম আপনি ফারিয়ার সাথে নাচবেন।’
‘ আচ্ছা বাবা সরি। আর ডান্স তো করিনি তাইনা। তাহলে কেন রাগ করছিস?’
‘আমি ভয় পেয়েছিলাম।’
‘ তাহলে আটকালি না কেন?’
‘আমি কেন আটকাবো?’
‘ওকে না আটকালি আমি অন্যদের সাথেই ডান্স করি তাহলে।’
‘খবরদার এটা করলে আমি আপনাকে মেরে ফেলব’
‘না আটকালে আমি এটাই করবো।’
‘ কিন্তু আমি তো আটআতে চাই না। আমি জানি আপনি আমাকে রেখে অন্য কারো কাছে যাবেন ই না।’
‘যদি যাই তখন কি করবি।’
‘মেরে ফেলবো।’
‘ তুই আমাকে মারতে পারবি?’
‘ না নিজেকে মারতে পারবো তো।’
আমার কথা শুনে ভাইয়া রেগে গেলো।
‘ কি বললি? নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’
ভাইয়ার কঠিন কথা শুনে ভয় পেয়ে চুপ মেরে গেলাম।ভাইয়া আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বললো,
‘ তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলতো? দেখ আমার শরীর কাঁপছে এমন কথা আর কখনো বলবি না।আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি বুঝেছিস’
‘হুম।’
ইমা আপু আর রিফাত ভাইয়া নাচছে, আমি তাদের নাচ দেখছি ভাইয়ার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে। ফারিয়া আর একটা ছেলে তাদের মুখের ভঙ্গি দেখছি।আরো অনেকে। হুট করে ভাইয়া ও আমাকে নিয়ে ডান্স ফ্লোরে চলে এলো।
আমি ভাইয়াকে বলতেছি আমি নাচতে পারি না। তবুও ভাইয়া বলছে তোর নাচতে হবে না শুধু আমার সাথে তাল মিলাবি।আজকে দিয়ে ভাইয়ের সাথে আমার দ্বিতীয়বার ক্যাপেল ডান্স করা হলো। সেই দিন ছিল অনেক অস্বস্তি আর আজকে লজ্জা। লজ্জায় লাল-নীল হয়েছি ডান্স করা পুরোটা সময়।
ভাইয়া আজকে সাদা কালারের ব্লেজার পরেছে। সাদা কালারের ভাইয়াকে শুভ্র দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের ফর্সা গায়ে খুব মানিয়েছে। রানী গোলাপি শার্ট উপরে সাদা ব্লেজার সাদা প্যান্ট পড়েছে। হাতে ঘড়ি আর এক হাতে ব্রেসলেট, সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে নাচের সময় ভাইয়া ঠোটে মুচকি হাসি ছিলো।আর তার সেই নজর কারা গালে টোল। ভাইয়ার গোল মুখে তার এই টোল পড়া হাসি আমার এত পছন্দ শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
ভাইয়া ঠোট একদম গোলাপি যেন লিপস্টিক দিয়েছে। এত সুন্দর দেখতে যে আমি তাকিয়ে থাকা শুরু করলে শেষই হয় না।
নাচ শেষে ও আমি হা করে ডান্সফ্লোরে দাঁড়িয়েই তাকিয়ে আছি ভাইয়ের দিকে হা করে।ভাইয়ার ধাক্কা খেয়ে আমি হকচকিয়ে মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নাই সবাই চলে গেছে নাচ শেষ করে।
আমি এখনো ভাইয়ার কাধে দুই হাত দিয়ে রেখেছি। তাড়াতাড়ি হাত নামিয়ে আমি সরে দাঁড়ালাম
ভাইয়া হেসে আমার হাত ধরে সবার কাছে চলে এলো। কেক কাটার সময় সবাই চেঁচিয়ে আমাকে উইশ করতে লাগল।আমি চোখভর্তি জল নিয়ে সবার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে ছিলাম। এবার কেক কাটার সময় আমি কেক কেটে সবার আগে চাচী’র দিকে তাকালাম চাচী’র মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আমি মুখটা মলিন করে চাচা কে দিতে গেলাম চাচা গম্ভীর হয়ে থাকলে ও সবার সামনে কিছু বলল না আমার হাত থেকে নিয়ে নিজেই খেয়ে নিল। আমি এবার ইমা আপুকে দিলাম। আপু আমার মুখে আগে দিয়ে নিজে নিল একটু। ইলা আপু খাবেনা বলে দিলো আমি রিফাত ভাইয়া লতাকে খাইয়ে দিলাম। কেকে সাথে সবাই খাবার খেতে বসে গেল।শুধু ইহান ভাইয়াকে খাইয়ে দেই নাই সবার শেষে। ভাই এত বড় একটা কেকের খন্ড এনে আমাকে খাইয়ে দিলো না আমার দু গালে মাখিয়ে দিল। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি আর মনটা আমি কল্পনা করিনি।
মৃদু চেঁচিয়ে করে বলে উঠলাম, ‘ এটা কি করলেন?’
ভাইয়া বললো, ‘তোকে কেক দিয়ে ভূত বানিয়ে দিলাম।’
‘ধুর।’
আমি নিজের রুমে চলে এলাম মুখ ধুয়ার জন্য। ভাইয়াকে রাগ দেখিয়ে।আমার সব সাজ নষ্ট করে দিলো। আমি তোয়াল দিয়ে গাল মুছে নিচ্ছি। তখন আমার কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাস পেলাম। চমকে ঘাড় ঘুরাতে গেলে ভাইয়া আওয়াজ পেলাম।
‘ আমাকে একটু কেক খাইয়ে দিলি না। সবাইকে দিলি আর আমি বাদ পরলাম।’
আমি বললাম, ‘ ছারুন আমাকে। আপনি কি করছেন? আমার সাজ টাই নষ্ট করে দিলেন।এইভাবে কেউ মুখে কেক দেয়।’
ভাইয়া আমার সামনে এসে দাড়ালো। আর হাতে তে তোয়াল নিয়ে আমার গাল মুছে দিয়ে বললো,
‘ আজ তোকে এতোটা সুন্দর লাগছে যে আমি কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছি বারবার। আমার অনেক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।’
‘ কি সব বলছেন?’
‘ সত্যি। আমার তোকে…
থেমে গেলো।আমি জিগ্গেস করে তাকিয়ে আছি উৎসুক হয়ে।ভাইয়া আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো, তোর জন্য একটা গিফট আছে।’
আমি বললাম, ‘ আবার গিফট। এতো এতো সারপ্রাইজ গিফট দিয়ে ও আর কি দেওয়ার আছে।’
‘আছে।’
ভাইয়া একটা ইয়া বড় বক্স বের করলো সেটা খুলতে বললো আমাকে আমি বক্সে কি আছে ভেবে হাত বাড়িয়ে খুলতে লাগলাম। একটা ইয়া বড় টেডি বিয়ার বের হলো। সাদা ধবধবে তার মাথায় ক্যাপ করানো লাল টকটকে। আমি বড় বড় চোখ করে টেডির দিকে তাকিয়ে আছি। উত্তেজিত হয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ এটা আমার জন্য।’
‘ হুম।’
‘ এতো এতো সারপ্রাইজ গিফট আমি তো আজ হার্ট এ্যাটাক করবো আমি।’
‘ তুই খুশি তো।’
‘ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজকে।এমন স্বপ্নের মতো দিন আমি আজই প্রথম পেলাম। শুধু আপনার জন্য।’
#চলবে
#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_51
সকাল সকাল ইহান ভাইয়া চলে গেছে অফিসে। আমি বিছানায় বসে গিফট গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি। আমার পাশে বসে গল্প করছে লতা। তার গল্প হচ্ছে কাল সে একটা প্রপোজ পেয়েছে। সেসব বলছে আর ব্লাসিং হচ্ছে। আমি ওর কথা শুনে কম ভাবছি বেশি। কালকে রিহান কে দেখেছি। সে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো আমি একা হতেই রিহান আমার কাছে আসে আর জিজ্ঞেস করে,
‘ শুভ জন্মদিন ঊষা। কেমন আছো?’
আমি জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?’
‘ এইতো মুটামুটি।’
আমি পেছন ঘুরে চলে আসতে চাইলাম। রিহান বলে উঠলো,
‘ তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।’
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। রিহান এগিয়ে এসে বললো, ‘ তুমি…
রিহান কথা শেষ করা আগেই ইহান ভাইয়া এগিয়ে এলো। আর রিহানকে দেখে চেয়াল শক্ত করে ফেললো। রিহান ভাইয়াকে দেখে আমার থেকে চলে গেলো। আমি রিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কি যেন বলতে চেয়েছিলেন?’
কিন্তু রিহান থামলো না চলে গেলো। ইহান ভাইয়া এসে আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ও কি বলছিলো তোকে?’
আমি সব বললাম।
ইহান ভাইয়া বললো,,, ‘ ওর সাথে আর কখনো কথা বলবি না।’
আমি আচ্ছা বলে মাথা নাড়ালাম।
ফারিয়া একটা চেয়ারে চলে রাগে গজগজ করেছে আমাদের দিকে তাকিয়ে।
সবার খাওয়া শেষ এখন বাকি আছে শুধু ওই খালাতো ভাই ( দিহান) এর। সকাল দশটা না হলে তিনি ঘুম থেকে উঠে না। চাচির আওয়াজে আমাদের ভাবনা বন্ধ হলো।
তিনি হাক ছেড়ে আমাকেই ডাকছেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম লতাও এলো।
চাচি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ওই যে দিহান বসে আছে। ওকে খেতে দে।’
আমি আচ্ছা বলে সেদিকে পা বাড়ালাম। লতা আমার সাথে আসতে গেলে চাচি লতাকে ডেকে বলে,,
‘ তুই কোথায় যাচ্ছিস?’
লতা বললো, ‘ ঊষার সাথে খাবার এনে দেয়।’
‘ নাহ তুই আমার সাথে আয়।আমার পা টিপে দিবি।
আমি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম। দিহান মাথা নিচু করে ফোন টিপে যাচ্ছে কোন দিক তাকাচ্ছে না। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি তা দেখার জন্য ওর দিকে তাকালে দেখতে পায় নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন ঘাটছে। আমি তারাতাড়ি খাবার রেখে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এই ছেলের আসে পাশে আমার আসতে মন চায়না।
আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে বাসন মাজতে লাগলাম। বাসন ধুয়ে রেখে পেছন ঘুরতেই চমকে উঠলাম। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দিহান। আমার দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে বললাম,
‘ আপনি এখানে কেন?’
দিহান সাথে সাথে বললো, ‘ লবণ লাগবো নিতে এলাম।’
আমি বললাম, ‘ কিহ? লবণ তো ওইখানেই আছে।’
দিহান এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে আতকে উঠলাম, এই ছেলেকে দেখলেই আমার ভয়ে আত্না শুকিয়ে আসে। তখন লতার আওয়াজ পেয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি।
লতা পেছনে থেকে বললো,
‘ এখানে কি হচ্ছে?’
দিহান আমার পাশে থেকে লবণ হাতে নিয়ে তা দেখিয়ে চলে যায়। আমি বুকে ফূ দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তার মানে এই লবণের জন্য এগিয়ে এসেছে।আর আমি কি না কি ভাবলাম?
এদিকে দিহান ইচ্ছে করেই ওইখানে গিয়েছিলো। কতোদিন কোন মেয়ের শরীর ভোগ করতে পারেনা। আর আম্মু এনে এখানে ওকে বন্দি করে গেলো। কিন্তু এখানে এসে এমন যুবতী দুটো মেয়ে দেখে ওর তো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রেখেছে। এদের একজন কে হলেও ওর চাই।
দুটোই কাছের মেয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। টাকা দিলে কি না হয়।টাকা দিয়ে মুখ অফ রাখবো।
শয়তানি হাসি দিয়ে দিহান খাওয়া শেষ করে।
বিকেলে ফারিয়ার রুমে দাড়িয়ে আছি। ফারিয়া আমাকে দাড় করিয়ে বলতেছে,
‘কাল খুব আনন্দ হচ্ছিল তোমার তাইনা।’
আমি বললাম, ‘ আনন্দ তো হবেই কাল আমার জন্মদিন ছিলো যে। আর কতো সারপ্রাইজ ভাইয়া দিয়েছে আমাকে।’
‘ আমার জিনিস তুমি ছিনিয়ে নিয়েছো।’
‘ আপনার জিনিস?’
‘ হুম। ইহান আমার। ওকে তোমার আগে থেকে আমি ভালোবাসি।’
‘ এসব নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা কেন করেন। যা বলার ভাইয়াকে বলেন।’
‘ ইহানকে তো তুমি বশ করে ফেলেছো ও কি বুঝবে। আমি ভালো মতো বলছি তুমি ইহানকে ছেড়ে দাও।’
‘ আমি পারবো না।’
ফারিয়া রেগে এগিয়ে আসতে গেলে চাচি এগিয়ে আসে আর আমাকে রুমের বাইরে বের করে দেয়। আজ ভেবে রেখেছি ভাইয়া এলে সব বলে দেবো। রাতের অপেক্ষা শুধু।
ছাদে এলাম কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে নেমে এলাম।আসার সময় গেস্ট রুমের যেটায় দিহান কে থাকতে দিয়েছি সেটায় নজর দিলাম। কি যেন খাচ্ছে। আমি উঁকি মেরে চলে এলাম। বাজে দুর্গন্ধ।
রাতে ভাইয়া এলো অনেক দেরিতে। আমি পেছনে গেলাম ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানায় শুয়ে পরলো। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,
‘ খাবেন না?’
ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই বললো, ‘ আমি খুব ক্লান্ত ঊষা। আমার খাবারটা এখানে নিয়ে আয়না প্লিজ। দুইদিনের কাজ করতে হয়েছে আজ।’
আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম। আমার জন্য কাল ভাইয়া অফিস যেতে পারেনি।এতো বড় আয়োজন করেছিলো।চাচা কঠিন কিছু কথা বলার জন্য বসে ছিলো কিন্তু ভাইয়া আসতে লেট হওয়ায় কিছু বলতে পারিনি। আমি ভাইয়ার খাবার নিয়ে যাব তখন দিহান কে দেখতে পায়। ও
ডাইনিং টেবিল এ থেকে পানি খাচ্ছে আর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি দেখলাম তার দৃষ্টি খারাপ আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি বুকে থেকে ওরনা সরে গেছে। কিন্তু হাতে প্লেটের জন্য ওরনা ঠিক করতে পারছি না।
দিহানের খারাপ দৃষ্টি দেখে আমি চমকে দ্রুত গতিতে সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। ভাইয়া কাছে এসে খাবার রেখে আগে বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিলাম।
‘ কি হয়েছে? ওইভাবে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়াকে এই কথা বলতে হবে এই দিহানকে আমার একটু ও ভালো লাগে না। ওর বাজে মতলব আছে।
কিন্তু এখন না ভাইয়া এখন ক্লান্ত পরে বলবো।
আমি হালকা হেসে বললাম,’ কিছু না তো।’
ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি ঢোক গিলে এগিয়ে এলাম।
‘ খান।’
ভাইয়া বললো,,
‘ আমি পারবো না তুই খাইয়ে দে।’
আমি কিছু না বলে হাত ধুয়ে এলাম। আর বিছানায় বসে ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।
ভাইয়া খাচ্ছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওরনা মাথায় দিয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার ওরনা মাথা থেকে ফেলে খোঁপা খুলে ছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘ এটা কি করলেন? এখন তো চুল আমার মুখে এসে বিরক্ত করবে আমাকে!’
‘ করবে না।’
‘ এই যে আমায় বিরক্ত করছে।’
চুল উড়ে এসে আমার চোখে মুখে এলো তা মুখ দিয়ে ফূ দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বললাম।
ভাইয়া তা দেখে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে এসে চুল কানে গুঁজে দিয়ে বলল,,
‘ এসব দেখার দায়িত্ব আমার। তুই আমাকে খাইয়ে দে তো।’
আমি আর কি বলবো। খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর ভাইয়া আমার চুল সামলাতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই আমি হাত ধুয়ে এলাম। প্লেট নিচে রাখতে যাব কিন্তু ভাইয়া আটকে দিলো।
‘ ওটা রেখে দরজা আটকে আয়।প্লেট আর রাখতে হবে না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’
আমি বললাম, ‘ তো ঘুমান। আমি যাই।’
‘ যাই মানে তুই ছাড়া আমার ঘুম হবে নাকি!’
আমি দরজা আটকে এলাম। ভাইয়া আমাকে বিছানায় বসিয়ে আমার হাটুতে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। আমি চমকে উঠলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়া আমার হাত টেনে তুলে দিয়ে বললো,
‘ তোর এই নরম তুলতুলে হাতের আমার মাথা ব্যাথা কমিয়ে দে তো।’
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইয়ার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। ভাইয়া ঘুমিয়ে পরেছে অতিরিক্ত ক্লান্তি তে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছে। আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ভাইয়া হুট করেই নড়ে উঠলো আর বেকা হয়ে আমার কোমর দুহাতে আকড়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলো। আমি হকচকিয়ে গেলাম। ভাইয়া নিঃশ্বাস আমার জামা ভেদ করে শরীরে গিয়ে ঠেকছে আমি থরথরিয়ে কাঁপছি। বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছে অনেক।
এদিকে দিহান নিচে বসে আছে নেশা করে।ও বসে আছে ঊষার জন্য। খাবারের প্লেট দিয়ে আবার আসবে তখন ও শিকারীকে ধরবে। কিন্তু বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেলো ওর শিকারী এলো না। ও রেগে রুমে চলে এলো। আর নেশার মাঝে ভাবতে লাগলো ইহানের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি। ইহানের রুমে রাতে থেকে গেলো কেন?
মাতাল দিহান ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।
#চলবে
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। )