এক_চিলতে_রোদ- ২,০২,০৩

0
783

#এক_চিলতে_রোদ- ২,০২,০৩
#Writer_Nondini_Nila
২.
যে আশা নিয়ে আসা হয়েছিল তার কিছু হলো না। কারো এক ফোঁটা রাগ কমলো না। শুধু আমার খালা আর নানু আমাদের জন্য কান্নাকাটি করতে লাগলো কিন্তু নানা জানের মন গললো না। কিন্তু আমার সাথে খারাপ বিহেভ ও করেনি। আম্মু আব্বুর সাথে কথা না বললেও আমার সাথে কথা বলেছে গম্ভীর মুখ করে। এতো দূরে থেকে যাওয়া হয়েছে তাই থাকতে বললো নানু কিন্তু আম্মু রাজি না। চোখের জল মুছে তখনি বেরিয়ে এলো। আমার খুব খারাপ লাগছিল সাথে কষ্ট ও। ইশ নানাজান এমন কেন এতো গম্ভীর রাগী। মা বাবাকে মেনে নিলে কি হতো। প্রেম করে বিয়ে করলে এতোটা অপরাধী হয় নাকি। জীবনের প্রথম বার নানু বাড়ি এসেও তাদের আদর খেতে পারলাম না। সবাই মুখ ভার করে চলে এলাম নিজেদের গন্তব্যে। সারা রাস্তা আম্মু কাঁদলো আব্বু আম্মুকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি জানালাতে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মনটা খুব খারাপ। অল্পতেই মন খারাপ হ‌ওয়ার দারুন অভ্যাস আমার। আর এখন তো খুব কষ্টের মুহূর্ত কষ্ট না পেয়ে কি উপায় আছে।এতো দিন পর নিজের বাড়ি গিয়ে ও আম্মু কারো থেকে সহানুভূতি পেলো না। ভালোবাসা পেলো না। দুজন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো বলে কি খুব বড় অপরাধ করে ফেলেছিলো। আম্মু আব্বু কতো হ্যাপি কিন্তু তাও তাদের মনে শান্তি নাই। আমি কখনো নানুবাড়ির আদর পাইনা‌‌। এক রাশ আফসোস নিয়ে বসে র‌ইলাম।

বাসায় আসতে রাত হয়ে গেলো। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। আম্মুর ডাকে চোখ কচলে গাড়িতে থেকে নেমে পরলাম। সারা রাস্তা ঘুমিয়ে কাটিয়েছি এজন্য রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে টিভির সামনে বসে পরলাম। পছন্দের কার্টুন দিয়ে চিপস খেতে লাগলাম।
নয়টা বাজে আমি টিভি দেখতে মগ্ন তখন ফোনে কল এলো তাকিয়ে দেখি তুলি কল করেছে।

‘ হ্যালো,

‘ কোথায় তুই বলতো। আজ স্কুলে আসলি না কেন?’

‘ এক জায়গায় গিয়েছিলাম। কাল আসবো আগেই চলে আসিস।’

‘ কোথায় গেছিলি?’

‘ নানু বাসায়‌।’

‘ কি তোর নানা বাড়ি?’

‘ হুম।’

‘ কোনদিন তো তোকে নানাবাড়ি যাওয়ার কথা শুনি নাই। আজ হঠাৎ!’

‘ ওই এমনি, রাখছি খাবো এখনো। কাল কথা বলি।’

‘ আচ্ছা।’

আম্মু খেতে ডাকছে তাই কল কেটে টিভি অফ করে খাবার টেবিলে চলে গেলাম। আমি ও আব্বু ঠিক মতো খেলেও আম্মু খেলো না।তার মনের অবস্থা খারাপ জানি তাই কেউ কিছু বললাম না। আমি দ্রুত খাবার খেয়ে চলে এলাম।

আজ আর পড়া হবে না তাই বিছানায় শুয়ে পরলাম।
.
সিলেট থেকে এসেই লম্বা ঘুম দিয়েছে ইহান। কোথাও বেড়াতে গেলেই সারাদিন বিছানাতেই কাটাতে হয় ওর। ঘুম ভাঙে রাত এগারোটার। পেটে খিদের যন্ত্রণায়। মা বাসায় নেই তাই এভাবে বিকেলে থেকে ঘুমাতে পেরেছে শান্তিতে না হলে কতোবার যে বিরক্ত করতে আসতো। এতে ইহান অবশ্য বিছানায় থেকে নামতো না কিন্তু ইলিনা বেগম চেঁচিয়ে ছেলেকে ডেকেই যেতো। বাসায় এসে জানতে পেরেছে সকালেই মা বড় খালার বাসায় চলে গেছে। এতো রাতে কেউ তো আর জেগে নাই। নিজেকেই খাবার নিয়ে খেতে হবে। মুখে পানির ছিটা দিয়ে ড্রায়নিং টেবিলে এসে বসলো। খাবার গরম করতে যাবে কে এখন। বিরক্ত হয়ে ফ্রিজ থেকে ফল বের করে নিলো, সাথে মিষ্টি। সেসব গেয়ে রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে রুমে চলে এলো। বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন টিপছে। ফারিয়ার অনেক গুলো কল দেখলো। কিন্তু নিজে থেকে আর ব্যাক করলো না।
সকালে দরজা ধাক্কায় উঠে বসে ইহান বাইরে ইমার গলা পাওয়া যাচ্ছে। দরজা খুলতেই ইমা রেগে ঘরে ঢুকে বললো,

‘ কাল না খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলি কেন? কতো ডাকাডাকি করলাম শুনলি না তুই।’

‘ না খেয়ে ঘুমাবো কেন? আমি রাতে উঠে খেয়েছিলাম।’

‘কি খেয়েছিস? কিছু তো গরম করা ছিলো না।’অবাক হয়ে বললো ইমা।

‘গরম করা ছাড়া যা পেয়েছি তাই খেয়েছি। বাবা কোথায়?’

‘ বাবা তো অফিসে চলে গেছে। কেন?’

‘ এমনি।’

‘ আচ্ছা তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।’

‘ আচ্ছা আসছি আমি।’

ইমা চলে গেলো। একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো। ইলা, ইমা ও ইহান।
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ফারিয়ার কল এলো। ফারিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ইহান ভার্সিটিতে এসে উপস্থিত হলো। ইহান অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সবাই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর খাচ্ছে। বাইক রেখে ইহান ওদের পাশে গিয়ে বসলো। ওকে খেতে বললে খেলো না কিছু। কফি নিয়ে বসেই আছে।

‘ ইহান তোকে এক জায়গায় গান গাইতে হবে।’

‘ কিহ? কপাল কুঁচকে বললো ইহান। ও গান শখ করে গায়। সেটা বন্ধুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা নাই কিন্তু এই অনুষ্ঠানে গাওয়াটা এক দম পছন্দ করে না। বিরক্ত লাগে ওর। রাগে গজগজ করতে লাগলো ও। এই ভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর আরেকটা স্কুল আছে সেখানে নববর্ষের অনুষ্ঠান হবে খুব ধুমধাম। আর সেখানেই ইহানকে গান গাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ইহান ভার্সিটির অনুষ্ঠানে গান গেয়ে থাকে এজন্য সবাই জানে ওর মুগ্ধ গানের গলা।যা সবার পছন্দের এজন্য তিনি এই কথা বলেছে। স্কুল টা ভার্সিটি আসতে রাস্তায় পরে। কখনো যাওয়া হয়নি ইহানের। নিজাম উদ্দিন হাজারীর কথা শুনে ওরা ওর হয়ে সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। তাতে ইহান আরো রেগে গেলো।

‘ আমাকে না বলে তোরা রাজি কেন হয়েছিস? আমি কোন গান ফান গাইতে পারবো না।’

‘ প্লিজ দোস্ত এখন আর আমাদের মান সম্মান ডুবাইস না। তিনি বললো আর আমরা কিভাবে জানি রাজি হয়ে গেলাম। বিশ্বাস কর তোকে জানাতে চাইছিলাম কিন্তু নাম্বার বিজি ছিলো।’

ইহান কলেজে আসার সময় ফারিয়ার সাথে কথা বলেছে। তার মানে তখন কল করেছিলো।ডিজগাস্টিং ‌
ফারিয়া আজ ভার্সিটি আসবে না। ইহানকে রাজি করানো গেলো না। সবাই ওর পেছনে ঘুরতে লাগলো‌। রাজি করানোর জন্য। রাজি না হলে মান সম্মান সব যাবে। ইহান ধমক দিয়ে বসে আছে।
বন্ধু দের মান সম্মান যাক এমন কিছু করতে পারবে না ইহান তাই রাজি হতেই হলো। যত‌ই না করুক ওদের কথা ও ফেলতে পারেনা।

.
লাল সাদা শাড়ি হাতে বসে আছে ঊষা। ও একটু ও শাড়ি পরতে চায় নি‌। কিন্তু তুলি নাছরবান্দা অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ঊষাকে রাজি করিয়েছে শাড়ি পরে যেতে। ঊষা শাড়ি একদম সামলাতে পারে না। খুব আন‌ইজি লাগে শাড়ি পরলে। আর মনটা ভয়ে থাকে এই বুঝি খুলে যাবে।
কিন্তু সব এক পাশে ফেলে আজ ওকে শাড়ি পরেই যেতে হবে। আম্মু এসে নিজে হাতে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলো আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার শাড়ি পড়ানো দেখালাম। সাদা শাড়ি ও লাল ব্লাউজ, লাল চুড়ি, আর চুল খোঁপা করে গাজড়া দিয়ে দিলো।
সাজতে আমার কোন কালেই পছন্দ না কিন্তু শাড়ি পরে একটুও না সাজলে ভালো লাগবে না তাই আম্মু আমাকে হালকা সাজিয়ে দিলো। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলাম, মুখে ফেসপাউডার, কানে ঝুমকা। আম্মু কাজল দিতে বললো কিন্তু আমি কাজল দেয়না কখনো আজ ও দিলাম না। আমার চোখ চুলকায় কাজল দিলে। তাই এটা বাদ র‌ইল। শাড়ি হয়ে আছি বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছি।স্কুলে কখনো সেজে গুজে যাই নাই‌। আজ শাড়ি পরে যেতে আমার লজ্জা নাক মুখ লাল হয়ে উঠছে। সবাই কেমন করে তাকিয়ে থাকবে সেসব ভেবে আমি লজ্জায় লাল হয়ে বসে নখ খুচাচ্ছি।
তুলি এসে আমাকে এই ভাবে বসে লজ্জার লাল হতে দেখে বললো,

‘ এই তুই এমন লজ্জা লাল নীল হচ্ছিস কেন? নতুন ব‌উ এর মতোন।’

‘ আমি শাড়ি পাল্টে অন্য ড্রেস পরে যাই রে আমার না খুব লজ্জা লাগছে এই ভাবে কলেজে যেতে।’

‘ কিইই অসম্ভব। চুপচাপ চল।’

‘ আমার লজ্জা লাগছে বুঝতে পারছিস না।’

তুলি আমার আম্মু কে ডাক দিলো।

‘ আন্টি আপনি কোথায়? দেখুন ঊষা কী বলছে ও নাকি শাড়ি পাল্টে ফেলবে আপনি অন্তত কিছু বলেন। এই মেয়ে এতো লজ্জা কেন পায় আমি বুঝি না। যেন নতুন ব‌উ উনি।’

আম্মু এসে আমাকে জোর করে তুলির সাথে পাঠিয়ে দিলো। নিজেদের গাড়ি করে এলাম আজ।সব সময় লোকালে চলাচল করি আমি এতেই আমার ভালো লাগে। কিন্তু আজ তা করলাম না। শাড়ি পরে আমার অটোতে যেতে ইচ্ছে করছে না।

স্কুলে এসে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। কারণ সবাই শাড়ি পরে সেজে গুজে এসেছে। এটা দেখে কিছুটা লজ্জা কমলো আমার। আর গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।
আমি আর তুলি চারপাশের সাজানো দেখতে দেখতে গেটের ভেতরে ঢুকছি তখন কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে শাড়িতে পা বেজে ধপাস করে পরে গেলাম। আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। ইশ কি লজ্জা! লজ্জায় এবার মরেই যেতে ইচ্ছে করছে! মাথা নিচু করে ঘাসের উপর বসে আছি আমি। কোন দিকে তাকাচ্ছি না। তাকানোর সাহস হচ্ছে না আমার। আজকেই এইভাবে পরতো হলো। ইশ সবাই নিশ্চয়ই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে গেছে চোখের কোণে জল চলে এসেছে। আমার চোখ বন্ধ করে এই মুহুর্তে ছুটে বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে।

#চলবে…….

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

৩.
‘ ইউ ইডিয়েট গার্ল! এটা কি করলে তুমি!দেখে চলতে পারো না। আমার ফোন‌।’ চেঁচিয়ে উঠলো ইহান। ধাক্কা খেয়ে ওর হাতের ফোন নিচে পরে গেছে। শুধু পরেই ক্ষান্ত হয়নি। কানে ছিলো ফোন ধাক্কায় কিছুটা হেলে গেছিলো ইহান এজন্য ওর হাত ছিটকে ফোন বাম পাশের দেয়ালে লেগে গ্লাস ভেঙ্গে একদম খামচোড়।

নিচে বসে লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিলাম না। তখন সামনের ওই ধাক্কা দেওয়া খাটাশ লোকটার মুখে ককর্শ আওয়াজ শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার‌। লজ্জা পেলেও আজকে এই ছেলেটার ধমকানি শুনে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমি নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে পাশে তাকালাম। চুড়ি একটা ভেঙে পরে আছে আর চুড়ির আঘাতে হাত কেটে গেছে জ্বলছে। আমি সেসব ঠোঁট কামড়ে ধরে সহ্য করতে লাগলাম। তুলি আমাকে টেনে দাঁড় করালো।
শাড়ি ছিলো সাদা আহারে মাটিতে পরে ডিসকালার হয়ে গেছে।

‘ এই মেয়ে কথা বলছো না কেন? দেখে চলতে পারো না যতসব ফালতু। এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়। আমার ফোনটা গেলো।’ আফসোস সুরে বলল ইহান।

শাড়ির কুঁচি ঠিক করে ধরে ছেলেটার দিকে তাকালাম। চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে এইভাবে ফেলে দিয়ে সবার সামনে হাসির পাত্র করে এখন ধমকানো হচ্ছে কতো বড় বেয়াদব। রেগে গেলাম আমি।

‘ এই যে শুনুন। একদম আমাকে ধমক দিবেন না বলে দিচ্ছি। আমি আপনাকে ধাক্কা দিয়েছি মানে কি সব বলছেন। ধাক্কা তো আপনি আমাকে দিয়েছে। ফোনে কথা বলছিলেন এতো মগ্ন হয়ে যে এক জল জ্যন্ত মানুষ আসছে দেখেও না দেখার ভান করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন??’

আঙুল তুলে কথাগুলো বললাম। রাগে ও লজ্জায় আমার শরীর কাঁপছে। আশেপাশে অনেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তা দেখে আরো রেগে গেছি।
আমার কথা শুনে সামনে জন আরো রেগে গেলো। তার পাশে আরো কয়জন দাঁড়িয়ে আছে। একটা ফর্সা করে শর্ট ড্রেস পড়া মেয়ে এগিয়ে এলো,

‘ এই মেয়ে সুন্দর ছেলে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় তাই না।’ চেঁচিয়ে বললো ফারিয়া।ফারিয়া এসব দেখে তো রেগে আগুন। ইহান এর সাথে কোন মেয়ের ধাক্কা লেগেছে দেখেই ওর রাগ উঠে গেছে।

‘ মুখ সামলে কথা বলুন। দোষ উনার উনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।’

ইহান ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একদম ফোনের স্ক্রিন শেষ। কিছুদিন‌ আগেই কিনেছিলো আই ফোন আর তা এই ইডিয়েট মেয়েটা নষ্ট করে দিলো। তার উপর আবার ওকেই দোষারোপ করছে। ফারিয়াকে সরিয়ে নিজে আবার বলতে লাগলো,

‘ এই মেয়ে, নিজের দোষ আমার উপর চাপাচ্ছ কেন? তোমার অসাবধানতার জন্য আমার এতো দাম এর ফোনটা গেলো।ইউস ও করতে পারলাম না।দোষ করে বড় বড় কথা বলছো খুব বেয়াদব তো তুমি।’

‘ কিহহ বললেন আমি বেয়াদব। আপনি বেয়াদব। সবার সামনে ফেলে আমার শাড়ি নষ্ট করে দিলেন।’

ইহান কিছু বলতে যাবে সিয়াম ওর বাহু চেপে ধরলো। আর ফিসফিস করে বললো,

‘ প্লিজ চল এখানে থেকে।ছোট মেয়েদের সাথে এই ভাবে ঝগড়া করতে নেই। সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখ। এখানে আমরা গেস্ট! নিজেদের রেপটেশণ কেন নষ্ট করছিস।’

‘ মেয়েটা আমার ফোনটা নষ্ট করে আবার বড় বড় কথা বলছে দেখছিস না। একবার সরিও বললো না উল্টা ঝগড়া করছে।’

‘ আরে বাদ দে তো। সুন্দরী মেয়েদের রাগ বেশি থাকে জানিস‌ই তো।আর তুই ও কম ঝগড়া করছিস না।’

‘ এই তুই আমার বন্ধু হয়ে ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছিস।’

সিয়াম আর কথা না বলে ইহানকে টেনে নিয়ে গেলো।সাথে সবাই ওদের পেছনে গেলো শুধু ফারিয়া বাদে ও ঊষার দিকে কটমট করে তাকিয়ে পরে গেলো।

এদিকে
তুলি বললো, ‘ দোস্ত আমি এসব কি দেখছি? এটা কি আমার সেই ভীতু দোস্ত ঊষা নাকি অন্য কেউ?’

আমি তুলির কথা শুনে গরম চোখে করে তাকালাম।

‘ সত্যি ঊষা তুই এতো কথা বলতে পারিস আগে জানতাম না তো। এই ভাবে তালে তাল মিলিয়ে ঝগড়া করলি। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।’

‘ চুপ ফাজিল। ছেলেটা আমাকে কিভাবে অপমান করলো দেখলি তাও কিছু বললি না। চুপ করে তামাশা দেখলি শুধু।’

‘ আমি আর বলার সুযোগ কোথায় পেলাম। তুই তো কম বললি না।’

‘ তো বলবো না। এইভাবে আমাকে ফেলে কি অবস্থা করেছে দেখ। শাড়ির অবস্থা এটা পরে এখন আমি ভেতরে যাব কি করে?’

‘ তোর অবস্থা দেখেছি। কিন্তু ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটার ফোন ভেঙে গেছে রে তাই রেগে গেছিলো।’

‘ তো আমি কি করবো। তার নিজের দোষ এ তার ফোন গেছে আমার কি দোষ। উনি নিজের ফোনটাও ভাঙলো সাথে আমার অবস্থা ও নাজেহাল করলো।’

‘ এই তোর হাত তো কেটে গেছে।’

‘ হুম।’

‘ আচ্ছা তুই দাড়া আমি আসছি।’

‘ কোথায় যাবি?’

তুলি ব্যান্ডেজ নিয়ে এলো পাশের দোকান থেকে। হাতে লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ চল চেয়ারে বসে পরি। আর উঠবো না বসে অনুষ্ঠান দেখবো।’

‘ আমি বাসায় চলে যাই। এই ভাবে যেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘ আরে কেউ খেয়াল করবে না আমাদের।ওই দেখ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।সবার মনোযোগ ওইখানে আমরা চেয়ারে বসে পরলো জাস্ট প্লিজ!’

মনটাই খারাপ হয়ে গেছে ওই অসভ্য ছেলেটার জন্য। তাও ভেতরে গিয়ে চতুর্থ সারিতে বসলাম। বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
প্রথম সারিতে সেই অসভ্য ছেলেটাকে দেখলাম। হেসে হেসে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। আমি ভেংচি কেটে চোখ সরিয়ে নিলাম।
আমাদের ক্লাসের দীপ্তি নাচ করলো। ও খুব সুন্দর নাচে প্রতি অনুষ্ঠানে নাচে অংশ গ্ৰহণ করে। ছেলেরা তো লাফালাফি করছে। দীপ্তির দিকে তাকিয়ে আছি মেয়েটা ভালো নাচে কিন্তু এখন না নাচলেই ভালো হতো। কারণ ছেলেরা বাজে নজরে ওকে দেখে।
পরপর নাচ গান, নাটক হলো। বারোটা বাজে বিরতি দিলেই আমি চলে যাব।

এদিকে ইহানের গানের সময় দিয়েছে বিরতির পর। তাই ওর রেগে আছে। গান না করেই চলে যাব বলছে কারণ বিকেলে ওর ইলা আপুকে আনতে যেতে হবে এয়ারপোর্ট এ।
নাদিম চলে গেলো কথা বলতে। আর বললো বিরতির আগেই ওর গানের ব্যবস্থা করে দিবে‌।

আমি পেয়াজু খাচ্ছি। তুলি কিনে এনেছে কিছু খাবার।আমি আর উঠি নাই‌।তুলি কয়েকটা পিক তুললো আমি শুধু মুখের ছবি তুললাম।
আমার পাশে বসে আছে মায়া আর ওর বন্ধুরা। ওরা কাকে নিয়ে যেন কথা বলছে। ক্রাশ খেয়েছে বলছে। মায়া ওর বান্ধবীদের বলছে।

‘ আমি ওই যে প্রথম সারিতে দেখ কাঁধে গিটার ওয়ালা নীল রঙের শার্ট পরা ছেলেটা! ফর্সা তার উপর ক্রাশ খাইছি। কি সুন্দর হাসি রে। আর দেখতেও হ্যান্ডসাম কতো। মনে হয় গান করে কাঁধে গিটার রাখা‌।’

আমিও ওদের কথা শুনে তাকিয়ে দেখি সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা।‌ ওই খাটাশ ছেলেটার উপর ক্রাশ খাইছে আল্লাহ! তখন দেখলাম ওই ছেলে গিটার হাতে স্টেজে যাচ্ছে। এই ফাজিল ছেলেটার গান গাইবে নাকি…
ভেবে তাকিয়ে আছি স্টেজ এর দিকে।

ইহানের নাম ডাকতেই উঠে যায় ও। তারপর গান গাইতে লাগে চোখ বন্ধ করে।

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি…
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে,
বলো কিভাবে বুঝায় ভালোবাসি..
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে,
রঙ মিশে যায় রদ্ধ দুপুরে,
সেই রঙ দিয়ে তোমাকেই আঁকি আর কিভাবে বলো ভালোবাসি,
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চায় তোমাকে, ওওওতোমাকে,
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই,
আর দুটি নয়নে রোজ শুতে যাই তোমাকে ওওও তোমাকে,
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি,
রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে,
লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে,
বুকের মাঝে জাপ্টে জরিয়ে ধরবো তোমাকে…
পথ চেয়ে র‌ই, দেরি করো না যত‌ই, আর ভুলা যাবে না জীবনে কখনো তোমাকে ওওও তোমাকে, ওওও তোমাকে..
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি,
রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে,
লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….

ফাজিল হলেও গান তো ভালোই গায়। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গান শেষ করে চোখ খুললো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আর হাত তালি দিলাম না। আমি ছাড়া সবাই হাত তালি দিলো।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here