এক_চিলতে_রোদ-২,০৮,০৯

0
634

#এক_চিলতে_রোদ-২,০৮,০৯
#Writer_Nondini_Nila

৮.

ইহানের পাশ কাটিয়ে খালি অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দুই একটা অটো এলো কিন্তু থামলো না। শো শো করে আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আমার বাম সাইটে ইহান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত কর মুখ করে। আমার তাকে বলেছি তার সাথে ওই বাইকে আমি যাব না। আমি অটোতে যাব। বলেই গাড়ির অপেক্ষা করছি। মেলায় থাকা লোকজন নিজের বাইক কার করে চলে যাচ্ছে যে যার মতো। রাত বলে গাড়ি ঠিক পাওয়া যায় না। আর যে কয়টা আসছে এতো মানুষ গাড়ির জন্য ওয়েট করছে যে আমি উঠার ই সুযোগ পাচ্ছি না।
বাইকের হণ বাজিয়ে আমাকে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করালো ইহান। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম তার বিরক্ত মাখা মুখ।

‘ তোমার মতো ঘাড়ত্যারা মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। সব মেয়েরা বাইকে চড়া পছন্দ করে আর তুমি এটাকে অবজ্ঞা করছো? আচ্ছা তোমার সমস্যা কি বলো তো?’

‘ আমি কতো বার বলবো আমি বাইকে যাব না। আমাকে অটো ঠিক করে দিন।’

‘ আমি কি এখন অটোর জন্য পাগলা দেওয়ানা হয়ে ঘুরবো। দেখতেই তো পাচ্ছো সবাই কেমন চালক পাখির মতো অটোর জন্য ওয়েট করছে। তোমার কি মনে হয় এরা থাকতে তুমি উঠার সুযোগ পাবে?’

‘ আপনি বাইকে বসে না থেকে নেমে চেষ্টা করুন না
তাহলেই সব হয়ে যাবে।’

‘ কিছু হবে না। এতো ঝামেলা না করে উঠে এসো রাত বারছে কিন্তু। তারাতাড়ি ফেরা উচিত। এমনিতেই এক ঝামেলা হলো ছেলেগুলো আবার এখানে না চলে আসে।দেখো আমার এখানে বর্তমান এ পরিচিত কেউ নাই তাই আমি একা কিন্তু ওদের সাথে তোমার জন্য মারামারি করতে পারবো না।’

‘ আমি কি বলেছি আমার জন্য মারামারি করেন। দরকার নাই।‌আপনি যে একটা ভীতুর ডিম আমি জানি। তাই তো ফাইট না করে দৌড় পালিয়ে এসেছিলেন।’

‘ তোমার সাহস তোমার কম না আমাকে ভীতু বলছো? আর তোমার জন্য আমি ফাইট করতে যাব কেন? কে হ‌ও তুমি? আমি এসবের জন্য কিছুটা দায়ী এজন্য জাস্ট সাহায্য করতে এসেছি। তোমার ফ্রেন্ড খুব করে রিকোয়েস্ট করেছে তোমাকে বাসায় ঠিক মতো পৌঁছে দিতে। এজন্য তোমাকে একা রেখে যেতে পারছি না। আমার তো মনুষ্যত্ব আছে এভাবে একটা মেয়েকে বিপদে পড়তে দেখেও ছেড়ে যাব। তাই এতো কিছু সহ্য করছি। না হলে কখন বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিতাম। তোমাকে নিয়ে ঝামেলা পোহাতাম না।’

ইহানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো আমার মুখটা। আমি চুপচাপ সরে দাড়ালাম।‌একটা অটো আসছে আমি হাত বাড়িয়ে থামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু নো রেসপন্স।রাগে আমার শরীর কাঁপছে। সাথে চোখ ছলছল করছে। এতো কথা বললো এখানে তো উনিই দোষী তখন দরদ দেখালো কেন আর কেন‌ই বা নিজের সাথে নিয়ে গেলো না এসব কিছুই হতো না। এখন আমাকে এতো কথা শুনালো। কিন্তু বর্তমানে কিছু বলতে চায়না। এখন ও অসহায়। সব দাঁত চেপে সহ্য করতে হবে। কারণ এখানে থেকে বাসা অবধি এই লোকটার সাথেই যেতে হবে। আমি এই রাতে একা বাসায় যেতে পারবো না। তারপর সাহায্য আমার দরকার তাই ইহানের কথায় খারাপ ও রাগ হলেও আমি চুপচাপ সহ্য করলাম।

বাইকে না উঠার কারণ হচ্ছে। আমি ছোট থেকেই বাইক পছন্দ করতাম। আমার জন্য বাবা বাইক কিনে ছিলো। আমাকে ছোট বেলায় স্কুলে দিয়ে আসতো অফিসে যাওয়ার সময়। বাবা কার রেখে বাইক ইউস করতো। একদিন আমি বাবাকে না ধরে বসে ছিলাম আর পেছনে থেকে পরে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিলাম। সেই থেকে আমার বাইকে উঠতে ভয় করে। এখনো মনে হয় উঠলেই আমি ঠাস করে পরে যাব। তাও এটা আমার বাবা থাকলে উঠতাম আর তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতাম কিন্তু এই অপরিচিত একটা ছেলের সাথে বাইকে উঠলে তাকে আমার জরিয়ে ধরতে হবে না না এই বাইকে আমি কিছু তেই উঠবো না।

এক ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে একদিকে খিদের যন্ত্রণা অন্যদিকে এই দাড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করছে এখন অসহ্য লাগছে। হঠাৎ সেই তিনজন ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেই চমকে উঠলাম। আর বাম সাইটে ইহান যে খানেই ছিলো সেদিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। বাইক সহ ইহান নাই। আমি ভয়ে এদিকে ওদিকে তাকালাম কোথাও নাই।মুখে হাত দিয়ে ভাবছি উনি আমাকে এই খানে একা ফেলে চলে গেলো? এখন কি হবে ওই ছেলে গুলো তো এদিকেই এগিয়ে আসছে ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। কেন তার সাথে তর্ক করলাম এখন আমার কি হবে? আমি বাসায় যাব কি করে? ছেলেগুলো আমার কাছাকাছি চলে এসেছে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। খুব খারাপ কিছু হবে আজকে ভাবতেই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি মাথায় হাত পেছনে ছেলের গতিবিধি দেখছি। আমার থেকে এখন এক হাত দূরে আমি কোন দিকে যাব ভাবছি তখন একটা পুরুষালী ঠান্ডা হাত আমাকে টেনে নিলো। আমি পেছনে ঘুরার আগেই আমাকে টেনে অটোতে তুলে নিলো আর সাথে সাথে অটো ছুটে চললো অজানা গন্তব্যে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে এই তো বিপদে আমার দিকে ধেয়ে আসছিলো এখন আবার কে জানি আমাকে টেনে অটোতে তুললো হায় আল্লাহ এখন কি হবে আমাকে কি কিডন্যাপ করা হলো? ইহান এভাবে বিপদে ফেলে গেলো? যাবেই তো আমি কে তার কিছু না হলে কি সাহায্য করা যায় না মানুষ হিসেবে!!
আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলাম। লোকটার দিকে তাকিয়ে আর ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না।

‘ হোয়াট হ্যাপেনস ঊষা? কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?’

পরিচিত কন্ঠ লাগলো আমি ঘাড় বাঁকিয়ে ইহানের কুঁচকানো ভ্রু দেখে চমকে কান্না থামিয়ে দিলাম। বড় বড় চোখ করে তাকালো আমাকে কিডন্যাপ করলো তাকে ইহানের মতো লাগছে কেন? পাগল হয়ে গেলাম নাকি?

‘ আপনিইইইই.

‘ আমি থাকবো না তো কে থাকবে? কার এতো ঠেকা তোমাকে সাহায্য করার? এই অটো খুঁজতে আমার কতো কষ্ট হয়েছে জানো উফ কি জেদি মেয়ে তুমি। বাধ্য হয়ে অটো খুঁজে আনতে হলো কি আর করবো দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছি পালন তো করতেই হবে!!’

‘ কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ফেলে চলে‌ গেছেন!’

‘ ভালো সেটা ভাবা স্বাভাবিক। আমি এমনটাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি মনুষ্যত্ব হীন না। ‘

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কি ভয় পেয়ে গেছিলাম।‌ বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস নিলাম। এখন পানি না খেলেই নয়। আমি বললাম,

‘ একটু পানি খাব না। না হলেই গলা শুকিয়ে মরে যাব আমি।’

ইহান নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল। সাথে বিস্কুট।

‘ বিস্কুট ক‌ই পেলেন?’

‘ কি জানি কবে কিনেছিলাম মনে পরছে না। ব্যাগ হাতালে অনেক জিনিস পাওয়া যাব। কারণ কতো কিছু রাখি কিন্তু কখনো চেক করে দেখি না। খেতে পারো ভালো এটা!’

আমি কিছু না বলেই গেলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম না করে দিলো। আমি দুইটা বিস্কুট খেয়ে পানি খেয়ে নিলাম। এক ঘন্টা লাগবে যেতে আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম। ফোন খুলে চমকে উঠলাম দুইশ মিসকল। মা অনেকবার কল করেছে সাথে তুলি ও অচেনা নাম্বার। আমি মাকে কল করলাম।

মা খুব চিন্তা করছিলো। আমি আমতা আমতা করে শুকনো ঢোক গিলে জ্বিবা দিকে ঠোঁট ভিজিয়ে মিথ্যা বললাম অনবরত। মা ফোন রেখে দিলো। মাকে বলেছি তুলিদের বাসায় লেট হয়ে গেছে এখন তুলির বাবা আমাকে পৌঁছে দিতে আসছে। তারপর
তুলিকে কল করে ইচ্ছা মতো বকলাম ওকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। ফোন কেটে ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘ বাবারে কি ঝগড়ুটে মেয়ে!’

আমি নাক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বললেন?

‘ ইয়েস। আর ওই যে ওই নাম্বারটা আমার।’

বলেই ফোন ইশারা করলো ইহান।

আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?’ অবাক হয়ে বললো।

‘ আজ কাল নাম্বার পাওয়াটা কি খুব কঠিন।’

‘ আপনি কোথায় পেলেন?’

‘ উফফ এটা তো তুলির থেকে নিয়েছি।’

মাথা যন্ত্রনা নিয়ে চুপ করে বসে ছিলাম। বাসায় আসতেই নেমে গেলাম। ইহান বাই বললো আমি তাকালাম ও না চলে এলাম। আম্মু কে কি বলবো আমি কে জানে এসব জানলে আম্মু আমাকে কি ভাববে একটা ছেলের সাথে এলাম খারাপ ভাববে খুব। কলিং বেল চাপ দিয়ে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছি।

#চলবে……..

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

৯.

আম্মু কে বুঝাতে খুব কষ্ট হবে না। কিন্তু আব্বুর জন্য ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করেছে। আব্বু এতো আগেই বাসায় চলে এসেছে আজ। ঢোক গিলে ভেতরে যায়। হাত পা কাঁপছে অনবরত। যতটা ভয় পেয়েছিলাম তার কিছু হলো না। আব্বু খুব সুন্দর করে কথা বললো। আর বললো কখনো যেন রাত না করি কোথাও গিয়ে। আমি মাথা নেড়ে রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখি আম্মু বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আম্মু আমাকে যা বললো তাতে চমকে উঠলাম। আর আমার হাত থেকে তোয়ালে ফট করে নিচে পরে গেলো।

‘ তোমার সাথে ছেলেটা কে ছিলো?’

আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। আম্মু ইহান কে দেখলো কি করে?এখন কি হবে? কি বলবো? আম্মু কি জেনে যাবে মিথ্যা কথা বলে আমি মেলায় গিয়েছিলাম। হায় আল্লাহ তাহলে তো খুব খারাপ হবে। আম্মু তেমন কিছুই না বললেও আব্বু তো খুব বকবে?

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন? ওই ছেলেটা কে ছিলো যে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো?’

‘আসলে আম্মু…

‘ সত্যি বলো। আমি কিছু বলবো না। ‘

মায়ের কথায় ভরসা পেয়ে সব বলে দিলাম। সব শুনে আম্মু খুশি হলেও পরে একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার কোন ক্ষতি হয়নি তো? ভয় পেয়েছিলে?’

‘ খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সময় মতো ইহান না আসলে ক্ষতি হতে পারতো।’

‘ ছেলেটা তো খুব ভালো।’

‘ ভালো না ছাই। তার জন্য ই তো আমি বিপদে পরেছি তাই হেল্প করেছে এখানে ভালোর কি হলো?’

‘ কিছুনা আয় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পর আজ।’

‘ হুম ‘

আম্মু চলে গেলো।
ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে হাতে নিয়ে দেখি তুলি রিসিভ করতেই চিন্তিত কন্ঠ ভেসে এলো। আমি ঠিক আছি আর বাসায় পৌঁছেছি বলেই কেটে দিলাম। তারপর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

পরদিন স্কুলে এসে কারো কারো কথা বললাম না। ওদের ইগনোর করে আলাদা সিটে বসলাম। তুলি এখনো আসে নি। বাকিরা আমার কাছে এসে সরি বলেছে কারো সাথেই কথা বলিনি। আমি যথেষ্ট শান্ত লিষ্ঠ মেয়ে ওদের সাথে কখনো ঝগড়া বা উঁচু গলায় কথা বলিনি কিন্তু আজ বলেছি। ওদের কথা শুনেই ধমক দিয়েছি। আমার ওদের দেখলেই রাগে শরীর জ্বলে উঠছে। সবাই আমাকে কতো রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গেলো আর ওরা আমার খবর না নিয়ে চলে এলো‌। এটা কোনো কথা এতোটা কান্ড জ্ঞান হীন‌। ওদের কথায় আমি রাজি হয়ে কতোটা ভুল করেছি তা হারে হারে টের পেলাম। ওরা আমাকে রাগতে দেখে আর কিছু বললো না। তুলি এসে আমার এমন রাগারাগীর কথা শুনে ঢোক গিললো। আমি ওকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছি। ওর উপর আমার রাগ বেশি আছে । সবাই চলে গেলেও আমি কষ্ট পেতাম না ও কি করে আমাকে এভাবে ফেলে গেলো। আমার পাশে এসে বসলো আমি ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে জায়গা পরিবর্তন করলাম। ও অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। কান থেকে হাজার বার সরি বললো আমি কথা বললাম না। দুইদিন রাগ নিয়ে থাকলাম। সারা দিন কল করে আমি রিসিভ করি না। স্কুলে এসেও কথা বলিনা।

শুক্রবার ঘুম ভাঙলো তুলির চেঁচামেচি তে। ওর চিৎকার শুনেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। আমার সামনে বসে আছে। ওকে দেখে এতো খুশি হলাম যে রাগের কথা ভুলে ওকে জরিয়ে ধরে কথা বলতে লাগলাম।

‘ ওই তুই আমার কল রিসিভ করিস না কেন? এতো রাগ কেনো রে বাবা সরি বলছি তো যা আর জীবনে তোর এইভাবে ফেলে আসমু না।ইহান ভাই আছে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল উনি তোকে বিপদে পরতেই দিবে না ঠিক বাসায় পৌছে দিবে। আর তাছাড়া আমি আসতে চায়নি তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তাই সবাই জোর করে আমাকে গাড়ি উঠয়েছিলো। তারপর কতো যে চিন্তা করেছি আমি জানিস। তোর সাথে কথা বলে আমি স্বস্তি পেয়েছি।

‘ এই আমি তোর সাথে কথা বলছি কেন? আমি তো তোর সাথে রাগ করেছি!

বলেই মুখ ঘুরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তুলি আমাকে জাপ্টে ধরে বললো, ‘ প্লিজ ক্ষমা কর তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো এবারের মতো মাফ কর প্লিজ।’

‘ আচ্ছা করতে পারি একটা শর্তে!’

‘ বল কি শর্ত?’

‘ আজ আমাদের বাসায় থাকতে হবে আর এখন কান রে উঠ বস কর!

‘ এ্য্যা কি সব বলছিস আমি কান ধরে উঠবস করবো?

‘ হুম।

তুলি থাকবে বলে রাজি হলো। আম্মুকে দিয়ে ওর বাসায় কথা বলানো হলো। কান ধরে দশবার উঠবস করালাম। সারাদিন দুজন অনেক আনন্দ করলাম। রাত জেগে মুভি দেখলাম। গল্প করে একটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম পরদিন সকালেই চলে গেলো তুলি বাসায় গিয়ে স্কুলের জন্য রেডি হতে। স্কুলে গিয়ে সবার সাথে মিলমিশ করে নিলাম।

কয়েকদিন পর
একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেলো আমার চোখের সামনে।স্কুলে থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমি জানালা খোলা রেখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করি। আজ ও ছিলাম। তখন একটা বাইক এর সাথে কার ধাক্কা লেগে কি বীভৎস অবস্থা। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে। আশেপাশের লোক জড়ো হয়ে গেল। সবাই ধরাধরি করে কার থেকে একটা আহত মেয়েকে বের করে আনল। আমাদের গাড়ি তাদের গাড়ির কিছুটা সামনে ছিলো। মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে হবে ইমিডিয়েটলি না হলে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সবাই বলাবলি করছে আর গাড়ি খুঁজছে কিন্তু গাড়ি পাচ্ছে না।আমি শুকনো মুখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর দেখতে। মেয়েটার কপালে আঘাত পেয়ে রক্ত পড়ে তার গাল বেয়ে পরছে। আকাশী কামিজ ডিজে একাকার। তখন মেয়েটিকে আমাদের দিকে আনা হলো আমি আতঙ্কে চোখ মুখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি এদিকে আনছে কেন?
লোক গুলো আমাদের গাড়ির সামনে এসে ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলছে আমাদের গাড়িতে মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে চান। কিন্তু ড্রাইভার আঙ্কেল রাজি হতে পারছে না। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছেন। তিনি ভাবছেন যদি আমি কিছু বলি কারণ আমি এই সবে খুব ভয় পায়। এখন ও আমি ভয় পাচ্ছি। আমার হাত-পা কাঁপছে। অসম্ভবরকম কাঁপছে। কিন্তু শুধুমাত্র নিজের ভয়ে জন্য একজন মানুষের প্রাণ চলে যাবে। না এটা হতে পারে না। আমার যত ভয় করুক না কেন! আমাদের সাহায্য করতে হবে। আমি সাহস করে এবার কাঁপা গলায় ড্রাইভার আঙ্কেলকে রাজি হতে বললাম। আর মেয়েটিকে ধরে আমার পাশে শুইয়ে দেওয়া হলো। রক্ত দেখে আমার হাত কাপছে। আমার মাথা ঘুরছে তবু আমি নিজেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম নিজেকে ঠিক রাখার। আমাদের সাথে আর কেউ আসলো না কারণ এখানে যে কয়টা পুরুষ ছিল সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আমাকে আর ড্রাইভার আংকেলকে বলে গেল আমরা যেন ওনাকে হসপিটালে ভর্তি করে দেই আর ওনার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল। পরিবারের কাউকে কল করার জন্য। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলাম। ২৫ মিনিট পর আমরা সিটি হসপিটাল এসে গাড়ি থামালো।
ফোন লক করা আমি কিভাবে কাউকে কল করবো। তাই কাউকে কল করা হলো না। কিন্তু হসপিটালে এসে দেখলাম রোগীকে সবাই চিনে। তিনি নাকি ডক্টর। তার নাম ডক্টর ইমা।হসপিটাল থেকে তার বাড়িতে খবর দিয়ে দিয়েছে কিন্তু তার আগেই ডাক্তার জানালো ইমিডিয়েটলি ও পজেটিভ রক্ত লাগবে। দরকারের সময় সবসময়ই সবকিছু ফুরিয়ে যায়। হসপিটালে ও পজেটিভ রক্ত নাই এখন বাইরে থেকে আনতে হবে। হাসপাতাল থেকে লোক পাঠানো হয়েছে কিন্তু তারা রক্ত পাচ্ছে না। কারন মাথায় আঘাত পেয়েছে গুরুতুর। ওখান থেকে রক্ত ব্লিডিং হচ্ছে তারা রক্ত বের হাওয়া থামিয়েছে। কিন্তু এখনই রক্ত দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমনকি তার প্রাণ ও চলে যেতে পারে।

কিন্তু কারো রক্তের সাথে তার রক্ত মিলছে না। কি ঝামেলা? তখন আমার মাথায় এলো ও পজেটিভ তো আমার রক্তের গ্রুপ। আমি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে সেটা জানিয়ে দিলাম। কিন্তু ডাক্তার আমার শরীর থেকে রক্ত নেবে না এত কম বয়সী কারো শরীর থেকে রক্ত নিবে না। এজন্য 18 বয়স লাগবে। আর আমার কেবল ষোলো। হায় আল্লাহ। আব্বুর অফিসে এখান থেকে কাছেই। আমি আব্বু কে ডেকে নিলাম কারণ আব্বুর রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। আব্বু এলো ১০ মিনিটে এসেই রক্ত দিয়ে চলে গেল ততক্ষণে মেয়েটির মানে ইমা আপুর বাসা থেকে কেউ আসেনি। আমাকে এখানে থাকতে বলে চলে গেল। আমিও যেতাম না আপুটার খবর নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি যাব। তখন ইহানকে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে এই দিকে আসছে।ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে চুলগুলো এলোমেলো ছুটে ছুটে আসছে আমাকে হয়তো খেয়ালই করেনি ডাক্তারের কাছে গেল একটু পরে জানতে পারলাম ইমা আপু উনার বড় বোন। কডিটরি সামনে এসে আমাকে দেখে কপাল কুঁচকালো।

আমি কিছু বলবো তার আগে আরো তিনজন একজন মহিলা দুইজন পুরুষ কান্না করতে করতে এলো।এসেই সেই মহিলা ইহান কে জরিয়ে ইমা ইমা বলে কাঁদতে লাগলো। উনি হয়তো আপুর মা তাই এতো কাঁদছে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছি।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here