#এক_চিলতে_রোদ-২,১৭,১৮
#Writer_Nondini_Nila
১৭.
জোরে ধাক্কা খেয়ে সামনে ঝুঁকে পরলাম। ফল স্বরূপ সামনে সিটে ধপাস করে বারি খেলাম কপালে। সাথে সাথে আমার ঘুম ছুটে গেলো। আমি কপাল ঠলতে ঠলতে চোখ মেলে তাকালাম। ভালো জোরে আঘাত পেয়েছি। কপাল কুঁচকে সামনে তাকালাম। আমি গাড়িতেই আছি। ইহানের সাথে রাগ করে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম খেয়াল নেই। পাশ থেকে হো হো করে হাসির আওয়াজ আসতেই পাশে তাকিয়ে দেখি ইহান দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আমি চোখ মুখ কঠিন করে তাকালাম। খচ্চর ছেলে একটা। আমি এভাবে ব্যথা পেলাম আর উনি হা হা করে হাসছে। মজা নিচ্ছে। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
‘ হাসছেন কেন?’
আমার কথা শুনে ইহান হাসির গতি বাড়িয়ে দিলো। তার এমন অসভ্যের মত হাসি দেখে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠলো। আশ পাশের সিটের কয়েকজন উঁকি মেরে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল বোকার মতো।
‘ অন্যের আঘাতে দেখে সবসময় নিজের মুখে শয়তানের মতো হাসি ফুটিয়ে রাখে শয়তান একটা।’ বিরবির করে বললাম।
ইহান হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ কি বললে বিরবির করে?’
‘ কিছু না।’ বলেই ভেংচি কেটে ঘাড় বাঁকিয়ে নিলাম। ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি।আমি আমার কাঁধের ব্যাগ থেকে বোতল বের করে চোখে মুখে পানি দিলাম জানালা দিয়ে। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলাম। হাঁটুর উপর বোতল ছিলো ব্যাগে ঢোকাতে যাব তার আগেই টান দিয়ে ইহান সেটা নিয়ে নিলো। আমি কিছু বলার আগেই বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে লাগলো। আমি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি। আমিও একটু আগে মুখ লাগিয়ে খেয়েছি এখন ইহান। কি অবস্থা! রাগ লাগলো আমার আমি আবার কিভাবে পানি খাবো উনি মুখ কেনো লাগালো। রেগে হাত বাড়িয়ে বোতল নিয়ে নিলাম। আর গমগম গলায় বলে উঠলাম,
‘ আপনি কোন সাহসে আমার বোতলে মুখ লাগালেন! এটা কেমন ধরনের ভদ্রতা। এখন আমি কি ভাবে খাব এই পানি?’
‘ কেনো আমার মুখে কি আবর্জনা আছে নাকি যে মুখ লাগালে খাওয়া যাবে না? আমি মুখ না লাগিয়ে খেতে পারি না। না হলে আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না তোমার বোতলে মুখ লাগানোর।’
‘ একদম ভাব নিয়ে কথা বলবেন না। আপনার ইচ্ছা ছিলো না মানে কি আমি কি আপনাকে জোর করে দিয়েছি। আমার বোতল আমার কাছে পারমিশন না নিয়েই খেয়ে ফেললাম। আর এতোই যেহেতু মুখ লাগিয়ে খান তাহলে নিজে পানি নিয়ে আসতে পারে না। আমার টা নিলেন কেন?’
‘ সামান্য পানির জন্য এখন তুমি আমার সাথে ঝগড়া করবে? ছিঃ মেয়েরা এতো কৃপণ হয় জানা ছিলো না। যাও তোমাকে আমি ডাবল ওয়াটার কিনে দেবো।’
‘ দরকার নাই। অসহ্য কর একটা লোক।’ বিরক্তিকর মুখে বলে উঠলাম। ইহান কিছু বলবে সামনে থেকে কে যেনো ডেকে উঠলো চলে গেলো ইহান আমি উঁচু হয়ে দেখলাম তার ফ্রেন্ডের কাছে গিয়েছে আর কি যেনো বলে হাসাহাসি করছে।
রিসোর্টে গিয়ে পৌঁছালাম। ইহান আর আসেনি সিটে আমি শান্তিতে একা বসে ছিলাম। রিসোর্টের নাম মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট। দল বেঁধে সবাই ভেতরে ঢুকলাম। আমি খোঁজে খোঁজে তুলির হাত জাপ্টে ধরলাম। একেক রুমে পাঁচ ছয়জন করে থাকতে দিয়েছে। এক বেডে আমি আর তুলি নিলাম। বাকি গুলোতে ও আছে। এসেই বাথরুমে থেকে হালকা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
তুলি এসে আমার উপর পরলো আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম উপর থেকে।
‘ আমার উপরে পরছিস কেন?’
তুলি এগিয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ইহান ভাই কি করলে রে তোকে নিয়ে গিয়ে?’
আমি ভ্রু- কুটি করে বললাম, ‘ হোয়াট কি করবে কি সব বলছিস?’
‘ তোরা একসাথে বসেছিলি তাই না?’ ঠোঁট টিপে হেসে।
‘ হুম। তো কি হয়েছে?’
‘ কিছুনা। ভাই আমাকে তখন কি বলেছে জানিস?’
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম, ‘কি বলেছে?’
তুলি বললো, ‘ তুলি থ্যাঙ্ক ইউ। আমার ঊষার সাথে কিছু প্রাইভেট দরকার তাই ওকে ওই গাড়িতে নিলাম। মিথ্যে কথাতে সায় দেওয়ার ধন্যবাদ। তুই তখন মুক্তা আপুর সাথে চলে গেছিলি আমাকে তখন ভাইয়া এই কথা বলেছে। জিজ্ঞেস করেছি কি এসব তখন।’
‘ ওওও এতে কি সমস্যা? তুই এমন করে তাকিয়ে হাসছিস কেন তাহলে?’
‘ কি জানি আমার না খালি হাসি পাচ্ছে দোস্ত রাগ করিস না।’
‘ সব পাগল ছাগল আমার কাছে কেন আল্লাহ মাবুদ।’
বলেই পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলাম। কাঁচা ঘুমে ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে টেনে তুললো তুলি। রাগে দুঃখে এখন আমার নিজের চুল টানতে ইচ্ছে করছে। সারা রাস্তা ঘুমাতে পারিনি। এতোটা জার্নি করে খুব ক্লান্ত আমি ঘুমাতে চাই কিন্তু না এই তুলির বাচ্চা আবার আমাকে টেনে তুললো কেন?
‘ সমস্যা কি তোর বলতো? এমন করছিস কেন? আমাকে কি একটু শান্তি তে ঘুমাতেও দিবি না। পার রাস্তা তো একা একা আড়ামসে ঘুমিয়ে এসেছিস আর আমি ওই হনুমান টার সাথে কতো কষ্ট এসেছি জানিস?’
‘ আরে ধুর আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন? তারাতাড়ি উঠ। খাবি না খেতে ডেকে গেছে সবাই চলে ও গেছে। আমি আর তুই আছি খালি উঠ চল’
‘ আমি খাব না এখন আমার ঘুম পাচ্ছে।’
‘ দেখ ঊষা এখন এমন করিস না। পরে কিন্তু খিদে লাগলেও না খেয়ে থাকতে হবে। সারা রাত অবশ্যই না খেয়ে থাকতে পারবি না। তাই দয়া করে ঝামেলা না করে চল ডিনার করে আসি।’
‘ ধ্যাত।’
বিরক্তিকর মুখে উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে চুল আঁচড়ে ওরনা গলায় পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলাম। সবাই খেতে বসে গেছে আমাদের ই দেরি হয়ে গেলো। ম্যাম কে সরি বলে খাবার খেতে বসে গেলাম। ভালোই খিদে পেয়েছিলো পেট পুরে খেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সবাই আগেই শুরু করেছিল তাই আগেই চলে গেছে আমরা কয়েকজন আছি রেস্টুরেন্টে। আম্মুকে কল ও করিনি রিংটোন বাজতেই কানে ধরে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলাম। ইহান ও তার বন্ধুদের আমি দেখতে পেলাম তখন দল বেঁধে এগিয়ে আসছে আমাকে ক্রস করে চলে গেলো। আমি কথা বলতে বলতে ইহানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওরা চলে যেতেই চোখ সরিয়ে নিলাম। ফোন কেটে দিতেই হাতে টান পরলো ইহান আমার হাত টেনে ধরছে।
‘ আরে কি করছেন ছাড়ুন আমার হাত।’ হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলাম। সবাই মিলে যাচ্ছে কোথায় আর আমাকেই বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম। নিশ্চিত উনার মাথায় সমস্যা আছে।
বাগানে এসে বাকিরা গোল হয়ে বসেছে আমাকে ও তাদের সাথে নিয়ে গিয়ে বসালো ইহান নিজেও বসে পরলো।
আমি রেগেমেগে উঠে দাঁড়াতে যাব। ইহান আবার টান মেরে ঘাসের উপর বসিয়ে দিল।
ইহান আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ উঠছো কেন বসো!’
‘ না আমি এখানে বসবো কেন? ছাড়ুন দেখি আমার হাত। এমন অসভ্যের মতো আমাকে টেনে আনলেন কেন আপনি?’ ইহানের মতো আমিও ফিসফিস করে বললাম।
ইহান কিছু বলতে যাব তার আগেই ফারিয়ার ককর্শ আওয়াজ কানে এলো।দুজনে তার দিকে তাকালাম,
‘ এই তোরা দুজন কি গুজুর ফুজুর করছিস? আর এমন চিপকে বলেছিস কেন দুজন? ইহান ওই মেয়ে এখানে কি করছে?’
‘ আমি নিয়ে এসেছে কেন কোন প্রবলেম?’
‘ হুম প্রবলেম তো আছে। ওই মেয়ে আমাদের ফ্রেন্ডস আড্ডাতে কেন এসেছে বল?’
‘ বললাম ই তো আমি এনেছি।’
‘ তুই ওকে কেন আনবি?’
‘ তো কে আনবে?’
‘ আমি তোর কোন কথা বুঝতে পারছি না। ও খানে কেন?’
‘ আমাদের সাথে আড্ডা দিবে তাই। আর আমি যেখানে থাকবে ঊষা তো সেখানেই থাকবে!’
‘ মানেএএএ
আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি দুজনের দিকে।ওরা কথায় বিভোর এই সুযোগে আমি উঠে এক দৌড়ে ভেতরে চলে এলাম।
#চলবে……
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
১৮.
‘ এই ঊষা এমন হাপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?’ তুলি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো।
আমি বার কয়েক শ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। তুলি আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ কিরে এমন ঢাবঢাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?’
‘ কোথায় গেছিলি। আর হাঁপাতে হাঁপাতে কোথা থেকে আসলি?’
‘ বলছি এতো পাগল হচ্ছিস কেন? এতো অধৈর্য কেন তুই!’ বিরক্ত হয়ে বললাম।
তুলি আমাকে ঠেলে বিছানায় জায়গা করে বসে বললো, ‘ আচ্ছা বল তুই কোথায় ছিলি?’
‘আমি ইহানের সাথে ছিলাম।’
‘বলিস কি? কোথায় ছিলি তোরা?’ চোখ বড় করে বললো তুলি।
আমি সব খুলে বললাম। ও শুনে হা করে বললো, ‘ ওই মাইয়ার সাথে ঝগড়া করছে তোরে না। ওরে খেলা তো জমে উঠেছে।’
‘ ধুর ওই ফারিয়া আমার দিকে যে ভাবে তাকায় আমার তো ভয়ে বুক ধুকপুক শুরু হয়ে যায়। চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবে যেন।’
‘ এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। ইহান তো আছেই তোর জন্য। শুধু শুধু চলে এসেছিস।’
‘ আমার ঘুম পাচ্ছে আর আমি কিনা ওখানে বসে তাদের পেছাল শুনবো।’ বিরক্ত মুখ করে বললাম।
তুলি আর কিছু বললো না। আমার পাশেই শুয়ে পরলো। ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো। আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। চোখ বুজে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলাম। ফোনের রিংটোন এ আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমঘুম চোখে ফোনে কানে তুলে নেয়। হ্যালো বলেই অপরপাশে থেকে বকা খেয়ে ঘুম উবে যায় আমার। চোখ কচলে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ইহানের কল। বারোটা বাজে। এতো রাতে কল করেছে কেন? পাগল নাকি এই লোকটা।
আমি ফোন কানে নিতেই গম্ভীর গলায় ইহানের কথা শুনলাম। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খট করেই ফোন কেটে দিলো। কল লিস্ট এ গিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেলো। ইহানের অনেক কল দেখা যাচ্ছে। আমি না ধরা পর্যন্ত থামবে না ভেবেছিলো বোধহয়।
পরদিন তুলির ধাক্কায় উঠে বসলাম। এতো ভোরে কে উঠিয়েছে আমাকে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,
‘ এখনো তো সকাল হয়নি ঠিকমতো। আমাকে এখনোই উঠালি কেন?
‘ তাড়াতাড়ি উঠ। ফ্রেশ হয়ে আয়।’
‘ কেন?’ সামনে তাকিয়ে দেখি বাকিরা ও উঠে গেছে। ওরা সাজু কাজু করছে দেখে বললাম, ‘ওরা রেডি হচ্ছে কেন?’
‘ ম্যাম বলে গেছে সবাইকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে। এখনি বের হবে।’
‘ ওহ। আচ্ছা।’
আকাশ পাতাল চিন্তা করে উঠে দাঁড়ালাম। ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। চুল আঁচড়ে কাঁকড়া দিয়ে বেঁধে নিলাম। মুখে পাউডার মেখে নিলাম। তুলির ও রেডি হওয়া শেষ আমরা বেরিয়ে এলাম। সবাই বের হচ্ছে। রিসোর্টে এর সামনে এসে দাঁড়ালাম সবার সাথে । আমার সাথেই তুলি আছে।
সবাই একসাথে যাত্রা শুরু করলাম। এখন আমাদের হ্যালিপ্যাডে যেতে হবে সেখানে থেকে সকালে সূর্যদদোয় দেখা হবে। আর মেঘ দেখা যাবে খুব নিকট থেকে। ম্যাম এসব বললো। বিরক্ত লাগছিলো এমন সাতসকালে উঠার জন্য কিছু ম্যাম এর কথা শুনে দেখার জন্য ছটফট করছি।
সাজেক শব্দটা মনে পরলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মেঘময় একটা পৃথিবী।এখানে ক্ষনে ক্ষনে পৃথিবী তার রুপ বদলায়।কখনো তীব্র শীত আবার কখনো বৃষ্টি। চোখের পলকে ঘোমটা টানে সাদা কালো মেঘ। এ যেন মেঘের এক উপত্যকা, মেঘেদের রাজ্য আর নিজেকে মনে হয় মেঘের রাজ্যে বাসিন্দা।
হাঁটায় আমি সবক্ষন কাঁচা। বেশি হাঁটতে পারিনা। একটু হেঁটে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।সবাই কি সুন্দর হেসে খেলে যাচ্ছে। আমি তুলিকেও হারিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছি ওকে খোঁজতে। মারুফাকে পেলাম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ দুই কদম এসেই হাঁপিয়ে গেলে ঊষা।’
আমি বললাম, ‘ না আসলে সকাল বেলা আমি কিছু করতে পারিনা অভ্যাস নাই।’
‘ আমাদের ও নাই তবুও তোমার মতো নেতিয়ে পরিনি।’
বলেই হেঁটে এগিয়ে গেলো। আমি কটমট করে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা খুব বেয়াদব। সবার সাথে বাজে বিহেভ করে ও কি শান্তি পায় আল্লাহ জানে। কেউ আমার হাত শক্ত করে ধরলো। চমকে পাশে তাকিয়ে দেখি ইহান ও ওর ফ্রেন্ডরা। ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ একা যাচ্ছ কেন? আমাকে রেখে এতো রাগ কেন তোমার?’
আমি হাঁ করে বোকা চোখে তাকিয়ে আছি ইহানের দিকে। মাথা গেলো নাকি উনার সাথে আমি রাগ করলাম কখন? আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বাকিদের দিকে তাকালাম। তারা আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ফারিয়া রাগে গজগজ করছে। আমি চোখ সরিয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলাম।
ইহান ছাড়লো না উল্টা আরো শক্ত করে ধরলো। তখন তুলি এলো আমার কাছে দৌড়ে। আর বললো, ‘ তুই খালি হারায় যাস কেন রে?
বলেই আমাদের হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আমি ভয়ংকর চোখে ওর দিকে তাকালাম। ও তোয়াক্কা করলো না।আমরা চলে এলাম হ্যালিপ্যাডে এখানে এসেই আমার সমস্ত ক্লান্তি হাওয়া হয়ে গেল। ইহান এখনো হাত ধরে ছিলো আমি হাত ছাড়িয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতেছি মুগ্ধ চোখে।
সাদা মেঘ যেন আমার মাথার উপর। হাত বাড়ালেই তা আমি ছুঁয়ে দিতে পারবো। আমি হাত বাড়িয়ে বোকার মতো তা ছুয়ে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। তাই হাত বাড়িয়েছি। ফল স্বরূপ কিছু পাইনি। ইহানের ফিসফিস করে কথায় আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।
বদমাইশ টা আমার কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে আমি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে তাকানোর আগে কিছু অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করলাম।
চোখ মেলে আর ইহানকে কড়া কথা শুনাতে পারলাম না। চোখের সামনে সূর্য দদোয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। সবাই মুগ্ধ নয়নে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
ফুরফুরে মেজাজে আমরা ব্যাক করলাম। এখনো যেন ওই সৌন্দর্যের মধ্যে যেন আমি আটকে আছি। এবার হাঁটতে আর আমার বিরক্ত লাগছে না চারপাশের উঁচু নিচু পাহাড়, সবুজ গাছ গাছালির দেখতে দেখতে চলছি। আমার হাত এখনো ইহানের হাতের মুঠোয়। আমি ছাড়াতে চাইলেও ছাড়ে না। তাই বাধ্য হয়ে তার সাথে আমার আটকে চলতে হচ্ছে।
ব্রেকফাস্ট করতে আজ ইহানদের টেবিলেই বসতে হলো। আমার একপাশে তুলি ও অন্য পাশে ইহান।
তুলি আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
‘ দোস্ত ফারিয়া তোর দিকে কেমন রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে আছে দেখ।’
আমি ওর কথা শুনে সামনে তাকালাম। ফারিয়া আমার সোজা সামনে বসেছে। আমি তাকাতেই তার কঠিন দৃষ্টিতে দেখলাম। আমি মুখ নিচু করে বললাম,
‘ আমাকে চিবিয়ে খাচ্ছে রে। একবার একা পেলে আমার কি অবস্থা করবে তাই ভাবছে।’
‘ইহান তো আমাদের সাথে আছেই টেনশন কি?’
এই লোকটার পাল্লায় আমাকেই পরতে হলো। এর জন্য আমি একজনের চোখের বিষ হতে হলো। দোষ না করেও দোষী হলাম হায় কপাল আমার।
খাবার আসতেই সবাই খাওয়া শুরু করে দিলো। আমি সবার পরে খেতে শুরু করলাম। রিমার হাতে মেসেজ এ কথা বলছিলাম তাই। খাওয়ার মাঝে মুক্তা আপু বললো,
‘ হে ঊষা তোমার ভাই বোন কয় জন?’
আমি মুখের খাবার ফিনিশ করে বললাম, ‘ আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে আমি আপু। আমার ভাই বোন নাই।
‘ ওহ আচ্ছা। তাহলে তো তুমি খুব আদরের মেয়ে।’
‘ হুম।’
আর কেউ কোনো কথা বললো না। খাওয়া শেষে আমরা আবার বেরিয়ে পরলাম।
হাজাছড়া ঝর্না, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার গুলো ঘুরতে।
#চলবে.