এক_চিলতে_রোদ- ২,৩৫,৩৬.(১ম)

0
466

#এক_চিলতে_রোদ- ২,৩৫,৩৬.(১ম)
#Writer_Nondini_Nila

৩৫.
আজ ইহানের জন্মদিন সেই সুবাদে আমি আজ রান্নাঘরে ঢুকেছি। কেকটা নিজের হাতেই তৈরি করবো। এক সপ্তাহ ধরে আমি এটা বানানো শিখেছি। আম্মু আমার এমন ছটফটানি দেখে অবাক হয়। কিন্তু কিছু বলে না। অদ্ভুত ভাবে নিরব থাকে। আমি সব কখনো ভাবিনি। আজ ও ভাবলাম না। আম্মুর স্বাভাবিক আচরণ দেখে আমি আরো সাহস পেলাম। কেক তৈরি করলাম। পাশে‌ আম্মু দাঁড়িয়েই ছিল। আমাকে বলে দিয়েছে কিন্তু আমি কোথাও হাত দিতে দেয়নি একাই করেছি‌। যে এটা আমার পরিক্ষার হল।
আম্মু দিয়ে ইহানকে কল করালাম। ইহান আসবে বলছে কিন্তু নির্দিষ্ট টাইম বলেনি। ইহান আমাদের বাসায় এলো সন্ধ্যায়। সারাদিন বন্ধুদের সাথে পরিবারের সাথে ছিল‌। কিন্তু এবার তেমন বড় আয়োজন করেনি। করার ইচ্ছে থাকলে ইহান করতে দেয়নি। কারণ তাদের এখন একটু হাত খাটা। চাচাজান ব্যবসায়ে খুব বড় একটা লস হয়েছে।‌ তাদের এখন সময় খুব খারাপ যাচ্ছে। এজন্য ইহান বাড়তি খরচ করতে দেয়নি। কিন্তু ইহানের মা তাও করার জন্য লাফালাফি করছে‌। ছেলে তার প্রাণ ভোমরা তার জন্মদিনে করতে না পারলে যেন খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এজন্য শুধু তার জেদের জন্য ছোটখাটো আয়োজন করেছিল। ইহান এতে রাগ করেছিল কিন্তু কিছু করার ছিল না।

ইহান এসে কিছুই খেল না।‌সারাদিন নাকি খাওয়ার উপরেই থাকতে হয়েছে তাকে। এসব শুনে আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। আজ সারাদিন ইহানের সব আছে এক বার কথা বলেছি কিন্তু আমি উইশ করিনি। নিজের হাতে কেক তৈরি করে তার সামনে দাঁড়িয়ে উইশ করব বলে। আর এখন তিনি বলছে কিছু খেতে টেতে পারবে না শুধু নাকি দেখা করতে এসেছে। আব্বু আম্মুর সাথে গল্প করছে আর আমি দূর দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি লুকিয়ে। ইহান এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আমাকে খুঁজছে হয়তো যাব না সামনে।
ফোন রুমে উনি ফোনে কি যেন করছে হয়তো আমাকেই মেসেজ করছে।

আমি রুমে আসতে নিলাম তখন ইহান আমাকে দেখে নিল। আমি গটগট করে রুমে চলে এলাম। আমি ইহানকে লুকিয়ে দেখছিলাম ইহান বুঝে ফেলেছে তাইতো এখন হাসছে।

আমি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আম্মুর ডাক কানে এলো।

‘ ওই ঊষা ক‌ই তুই কেকটা নিয়ে আয়। ইহান চলে যেতে চাইছে কেকটা কেটে যাক।’

আমি তারাতাড়ি বেরিয়ে এলাম। কিচেনে থেকে কেক এনে দেখি ইহান আম্মুকে বলছে,

‘ এসবের কী প্রয়োজন ছিল। আমি আজ কেক খেতে খেতে শেষ আর খেতে পারবো না জাস্ট কেটেই চলে যাব কিন্তু।’

আমি শক্ত হয়ে কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এতো কষ্ট করে উনার জন্য কেক বানালাম আর উনি কিনা তা খাবেন না বলছেন। রাগে, কষ্টে আমার চোখে জল চলে এল। আমি কেক হাতে ঘুরে দাঁড়াল দরকার নাই খাওয়ার আমি উনার কে আমার ভালোবেসে দেওয়া জিনিস খাবে কেন? সারাদিন সবাইকে এতো সময় দিয়েছে আর আমাকে এই ভাবে কষ্ট দিল।

‘ এই ঊষা কেক এখানে না এনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?’

আম্মুর কথায় চমকে দাঁড়িয়ে গেলাম।

‘ রেখে আসতে যাচ্ছি।’

‘ রেখে আসবি কেন এখানে নিয়ে আয়! ইহান কেক কাটবে তো।’

‘ দরকার নাই‌। উনার না বলে আর খাওয়া মুড নাই। সারাদিন অনেক খেয়েছে। না খেতে পারলে কাটার কি দরকার।’

‘ আরে খাবে নি। নিয়ে আয় তো। এতো কষ্ট করলি সারাদিন কেক বানাতে গিয়ে। দিবি না সেটা।’

আম্মুর কথা শুনে ইহান যেন বিস্মিত হলো।

‘ ঊষা কেক বানিয়েছে??’

‘ হ্যা। বললো তোমাকে নাকি কেক তৈরি করে খাওয়াবে। সেদিন নাকি বাজে হয়েছিল কফি তাই আজ ভালো রান্না করে খাওয়াবে।’

ততক্ষণে আমি কিচেনে চলে‌ এসেছি। হঠাৎ ইহানের আগমন কিচেনে। আমি চোখ মুছে নিচ্ছিলাম। ইহান দেখে অন্য দিকে ঘুরে গেলাম।

ইহান এসেই আমার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে ‘ সরি ‘
বলল। আমি অন্য দিকে ঘুরেই আমি।

ইহান আমাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

‘ এতো অভিমান? শশুর শাশুড়ি আছে বলে রাগ ভাঙাতে পারছি না। আগে যদি জানতাম আমার এই বাচ্চা ব‌উটা এতো কষ্ট করছে আমার জন্য তাহলে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে আসতাম।’

‘ আপনি আমাকে একটু ভালোবাসেন না।’

‘ এই তো শুরু হলো। আমি কি জানি তুমি এমন কান্ড করবে? চলো কেক নিয়ে ছি পুরো কেক আমিই খাবো কাউকে দেব না। পেট ফেটে আমি মরে গেলেও তোমার হাতের কেক খেয়েই মরব।’

আমি ইহানের মুখ চেপে ধরলাম রেগে।

‘ এমন একটা দিনে আপনি এমন বাজে কথা বললেন‌। আপনি খুব খারাপ আমাকে কষ্ট দিতে ভালোবাসেন।’

ইহান আমার হাতের উপর চুমু খেতেই হাত সরিয়ে নিলাম। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। আমি রাগী চোখে তাকালাম।

‘ এখন আর বেশি কথা বলছি না চলো। না হলে শশুর শাশুড়ি চলে আসবে ভিলেন হয়ে।

ইহান কেক হাতে চলে গেল। আমিও পেছনে পেছনে এলাম।

ইহান কেক কেটে আব্বু আম্মু কে খাইয়ে দিল। আমরা তিনজন হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বলছি চিৎকার করে। আব্বু ইহানকে গিফট দিলো। আমি ইহানের জন্য ঘড়ি আর একটা শার্ট কিনে লুকিয়ে রেখেছিলাম। দিবো কি করে ভাবছি।
আব্বুর অল আসতেই রুমে চলে গেল। আম্মু রান্না ঘরে তখন ফট করেই ইহান এগিয়ে এসে আমার মুখে কেক ঢুকিয়ে দিলো। আর সাথে সাথে সরে দাঁড়ালো।
আমি ও এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এক টুকরো কেক তুলে ইহানকে খাওয়াতে গেলাম।
ইহান আমার দিকে মিষ্টি হেসে তাকিয়ে কেক খেয়ে নিল। আমি চিন্তা মুখে আছি।
ইহান আমার চিন্তিত মুখ দেখে বলল,

‘ কি হয়েছে? মুখটা ওমন করে রেখেছ কেন?’

‘ এমনি।’

‘ বলো।’

‘ আপনার ফোনটা একটু দিন তো।’

‘ কেন?’ অবাক হয়ে আগে কখনো আমি ফোন চাইনি তাই অবাক হয়েছে ইহান।

আমি বললাম, ‘ দিন না। নাকি ফোনে কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে যা আমাকে জানানো যাবে না?’ সন্দেহ গলাতে বললাম।

ইহান ফোন আমার হাতে দিল।
আমি রুমের দিকে যেতে বললাম। লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে থাইকেন আমি আসছি। আপনি এখন চলে যান।

ইহান বোকার মত তাকিয়ে র‌ইলো। কিছু বললেও আমি দাঁড়ালাম না রুমে এসে। দরজা আটকে দিলাম।

ইহান আমার কাজে হতভম্ব হয়ে ভাবছি পাগল হলো নাকি‌। পানি খেয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইহান। আসছে না কেন?

আমি রুমে এসে ইহানের ফোনের স্ক্রিনে নিজের ছবি দেখে চমকালাম। এ তো দেখি সাজেকের ছবি দেওয়া আমার ঘুমন্ত ছবি ইহানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি। আর ইহান মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এলো।

পাঁচ মিনিট পরেই বেরিয়ে আম্মুকে বললাম,

‘ আম্মু ইহান ভাই কি চলে গেছে?’

‘ হ্যা এই মাত্র গেল কেন?’

‘ উনার ফোন তো রেখে গেছে ভুল।’

‘ বলিস কি? কোথায় ফোন দে তোর আব্বুকে দিয়ে আস্তে আসতে বলি‌ বেশি দূরে যায়নি।

‘ আব্বু তো ফোনে দরকারি কথা বলছে। আমি দিয়ে আসি‌’

‘ এই রাতে তুই যাবি না না তার দরকার নাই। তোর আব্বু কে বলি।’

‘ আরে আম্মু ইহান ভাই নিচেই হবে বড় জোর যেতে দাও প্লিজ।’

‘ না না বললাম তো।’

‘আমমু প্লিজ আমাকে যেতে দাও। আমি দিয়ে আসি!’

আম্মু আবার না করতে গিয়ে ও কি যেন ভেবে থেমে গেল। রাজি হয়ে গেল। আমি কোন কিছু না ভেবে রুমে এসে লুকিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বাইরে চলে এলাম।

ইহান লিফটের সামনে পায়চারি করছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,

‘ ধরেন’

” কি এটা?’

‘ আপনার গিফট?’

‘ কিসের গিফট?’

‘ বার্থডে গিফট। কাল এটা পরে আসবেন বাসার সামনে আমি আপনার সাথে ঘুরতে যাব।’

‘ এ্যা’

‘ আর আপনি আমার অনুমতি ছাড়া আমার ছবি তুলেছেন কেন?’

‘ নিজের জিনিসের ছবি তুলতে আবার অনুমতির কি দরকার। তুমি পুরোটাই তো আমার।’

‘ ধ্যাত আপনার সাথে কথায় পারবো না।’

বিরক্তিকর মুখ করে চলে এলাম। পরদিন আমি হালকা সাজুগুজু করে কলেজের নাম করে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে এলাম।

নিচে এসেই শুভ্রর সাথে দেখা।

‘ হাই ঊষা!’ হাত নাড়িয়ে উঠলো। আমি ভদ্রতা স্বরুপ হাই দিলাম। শুভ্র আমার কাছে এসে এগিয়ে এলো। আমি ইহানকে খুঁজছি ফোনে বললো এসে গেছি ক‌ই উনি?

‘ হে ঊষা কেমন আছো?”

‘ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

‘ কলেজে যাচ্ছ?’

‘ হ্যা কাঁধে ব্যাগ দেখছেন না!’

‘ হুম কিছু রঙ ড্রেস তো তাই মনে হচ্ছে না‌ আবার সেজেগুজে এসেছো।”

‘ তো কি হয়েছে রঙ ড্রেসে কি যাওয়া যায় না নাকি।আমি কেবল করেছে ভর্তি হয়েছি এখনো আমরা রঙ ড্রেসে যেতে পারি সমস্যা হয়না।’

‘ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। একেবারে…

‘ ঊষা…

ইহানের আওয়াজ শুনে দেখি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ইহানকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো।

‘ আরে আপনি এখানে?’ ইহান বলে উঠল।

শুভ্র বললো, ‘ এটা তো আমারই বাসা কিন্তু আপনি এখানে?’

‘ আমি এসেছে ওকে নিতে।’ আমাকে দেখিয়ে বলল ইহান। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ চলো।’

আমি পেছনে পেছনে চলে এলাম। শুভ্র ইহানকে দেখে আর কথা বললো না কারণটা আমার ও অজানা।

.
‘আবার বাইক নিয়ে এসেছেন একবার এক্সিডেন্ট করে শখ মিটে নি। এখনো এটা চালানো বন্ধ করেননি?’

রেগে বললাম আমি। ইহান উল্টা রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ ওই ছেলেটার সাথে কি কথা বলছিলে?’

‘ তেমন কিছুই না। কেমন আছি এসব জিজ্ঞেস করেছে।’

‘ ওই ছেলের সাথে আর কখন কথা বলবে না। তোমার বাবা আর বাসা পেল না। ওই ছেলেটার বাসায় ভাড়া নিল।’
বিরক্তিকর মুখ করে বললো।

‘ তো কি হয়েছে?’ অবাক হয়ে।

‘ কিছু না। কোথায় যাবে?’

‘ যেখানে নিয়ে যাবেন‌’ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।আমার দেওয়া শার্টটাই পরে এসেছে ইহান।

‘ যেখানে নিয়ে যাব সেখানেই যাবে?’ দুষ্টু হেসে!

‘ হ্যা বললাম তো‌’

‘ তাহলে চলো কাজি অফিসে যাই। বিয়েটা সেরে আসি।’

‘ হোয়াট?’

‘ কেন আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে নাই নাকি?’

‘ আছে কিন্তু তাই বলে এই ভাবে না।’

‘ ধুর। আচ্ছা চলো।’

‘ আগে বলেন এইটা কবে ফালাবেন?”

‘ কখনো না!’

‘ কিহ তাহলে আমি যাব না।’

‘ ওকে না গেলে। আমি ফারিয়াকে নিয়ে যাই‌। ও কাল থেকে আর বেরাতে যাওয়ার জন্য তোষামোদ করছে তোমার জন্য ওকে না করে দিয়েছিলাম। এখন না হয়….

‘ ফাজিল লোক। আপনি ওই মেয়েকে নিয়ে কোথাও গেলে আমি আপনাকে মেরেই ফেলবো।’

বলেই ইহানের পিঠে কিল বসিয়ে দিলাম। ইহান আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠতে বললো।

আমি সাথে সাথে উঠে পরলাম। দূরে থেকে বড় লক্ষ্য করলো শুভ্র।

রাগ করে আমি বেড়াতে এসেও কথা বলছি না ইহানের সাথে। উনি আমার সামনে ওই ফারিয়াকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলল, আজ উনার সাথে আমি কথা বলবো বলে ঠিক করেছি।

‘ কি হলো কথা বলবে না?’

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ইহান আমার পাশে ঘাসের উপর বসে পরলো আমরা একটা নদীর তীরে বসে আছি নিরিবিলি পরিবেশটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ইহান আমার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো তাই উঠে চলে গেল আমি আড়চোখে লক্ষ্য করলাম কিন্তু কিছু বললাম না। মনে মনে ভাবছি আমাকে রেখে চলে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে নাকি? কিন্তু না একটু পর আইসক্রিম ও একটা গোলাপ ফুল কোথা থেকে নিয়ে এলো। আমি মনে মনে ভাবছি প্রপোজ করবে নাকি। যাই করুক আমি আজ কথা বলবোই না।

ইহান আইসক্রিম টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো তারপর আমার পাশে বসে চুলে ফুল গুঁজে দিল।
যত‌ই রাগ করিনা কেন আমি আইসক্রিম কে অবজ্ঞা করতে পারবো না। তাই তো গাল ফুলিয়ে ই খাচ্ছি।

ইহান খালি গলায় গান ধরল,

“” চাইনা মেয়ে তুমি অন্য কারো হ‌ও,
পাবে না কেউ তোমাকে তুমি কারো ন‌ও,(২)
তুমি তো আমারই জানো না ওও, এ হৃদয় তোমারি ওওওও, তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে ও পৃথিবী জেনে যাও তুমি শুধু আ মা র।(২)
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওরে, ভেঙে যায় হৃদয় আমার অভিমানি ঝড়ে(২)
তুমি তো আমারই জানো না ওও, এ হৃদয় তোমারি ওওওও, তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে ও, পৃথিবী জেনে যাও তুমি শুধু আ মা র(২)

#চলবে…..

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

৩৬.(১ম)

সকাল থেকে আমি শাড়ি পছন্দ করছি। আজ আমি। শাড়ি পরবো‌। কথায় কথায় ইহান বলেছিল আমাকে নাকি শাড়ি খুব ভালো লাগে ওর‌। তাই ইহানের পছন্দ মতো আজ শাড়ি পরতে চাই।
ইহান নিশ্চয়ই আজ আমাকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে। সেই খুশিতে আমি বাকবাকুম করছি। আজ তো ভালোবাসা দিবস। সেই জন্য আমি এতো আয়োজন করছি। এখন ইহান আমাকে কল করেনি ঘুরতে যাওয়ার জন্য। রাতেই শেষ কথা হয়েছে। আম্মুকে আগেই ফ্রেন্ডের বাসায় যাব বলে রেখেছি। ইহান বললেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পরবো। আজ আর আমি নিজে থেকে কল করবনা।
দিন গরিয়ে রাত হয়ে গেল ইহানের খবর নাই‌। বিকেলে আম্মু ও সুন্দর করে সাজুগুজু করে বসে ছিলো আব্বু আগেই এসে তাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলো আমাকে যেতে বলেছিল আমি যাই নি। তাদের কে একাকিত্ব সময় কাটাতে দিয়েছে। আগে যত বার গিয়েছে আমি যেতাম তখন এটা বুঝতাম না। এখন বুঝি। ইহান এইভাবে সারাটা দিন আমাকে ওয়েট করালো। আমি বিকেলে মন খারাপ করেই তুলিদের বাসায় এসে বসে আছি। আম্মু কে কল করে বলেছি আজ এখানে থাকবো। আম্মু রাগ করলেও শুনিনি। আমার খুব কষ্ট লাগছে ইহান এই ভাবেই এই দিনটা আমার সাথে কথা না বলে দেখা না করে থাকলো। উনি কি আদো আমাকে ভালোবাসে? না সব নাটক। এখন তো সব নাটক ই লাগছে। না হলে আজকে এমন বিহেভ করতে পারতো না। চোখ উপচে জল চলে আসছে। বাসায় থাকলে আম্মু দেখে নিত তাই এখানে থাকা তুলি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে‌।

‘ ও আমাকে একটু ভালোবাসে না রে!’

‘ একবার কল করে দেখ কোন বিপদ আপদ হয়েছে কিনা‌!’

‘ আমি পারবো না।’

‘ এমন ছেলেমানুষি করিস না। আগের বারের কাছ মনে নাই। ইহান ভাই ইনজুরি হয়েছিল। এবার ও হয়তো কোন বিপদ হয়েছে না ফলে কখনো কি ভাইয়া তোর সাথে এমন করেছে বল। তাই পরে আফসোস না করে এখনি ফোন দে।’

আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। সেদিনের কথা মনে পরে গেছে সত্যি কি তেমন কিছু হয়েছে। না হলে সত্যি তো ইহান কখনো এমন করে না‌। আমার ভয় হতে লাগলো‌। কি অবস্থা হয়েছিল ইহানের। আজ ও যদি তেমন না না।উনি সুস্থ থাকুক আমার আর কিছু চাইনা। অভিমানের তারনায় এসব আমি ভাবিনি। আমি তুলি জরিয়ে ধরলাম ও না থাকলে আজ ও রাগ করেই বসে থাকতাম এতো অবুঝ কেন আমি। ফোন হাতে নিয়ে ফোন করার জন্য নাম্বার ডায়াল করবো তখন হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো ইহানের নাম্বার থেকেই কল আসছে।

আমি চমকে উঠলাম। ঢোক গিলে কল রিসিভ করলাম,

‘ হ্যালো।’

হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ইহানের ব্যস্ত কন্ঠ পেলাম। আমি থমকে চুপ করে গেলাম,

‘ ঊষা কোথায় তুমি? তুমি কি বাসা একা আছো? একা ভয় করছে না আমি আসছি ওয়েট ভয় পেয়ু না।’

‘ আমি একা কেন থাকবো আম্মু আব্বু আছে তো। আর তাছাড়া আমি এখন বাসায় নাই। তুলিদের বাসায় আছি।’

‘ হোয়াট কখন গেছো?’

‘ বিকেলের দিকে।’

‘ওহ তাহলে‌ থাকো আমি ওইখানেই আসছি। এড্রেস দাও।’

ঠিকানা জেনেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলো।

‘ এটা কি হলো?’

‘ আমি কি জানি‌। হয়তো এখন তোর আশা পূরণ করতে আসছে।’

‘ তাই বলে‌ রাতে?’

‘ এটাই তো ভালো। এখনো সময় শেষ হয়নি সমস্যা কি। ‘

‘ কিন্তু আমার কেন জানি তা মনে হলো না।কেমন জানি তারাহুরা করছিল। আর বলছিল তুমি বাসায় একা ভয় পাচ্ছ? এসব কি বাসায় থাকলে আমি একা কেন থাকবো আম্মু আব্বু আছে না।’

‘আসছেই তো আসলেই জেনে নিস। বাবা মা বাড়িতে নাই তুমি এজন্য ভাইয়ার সাথে দেখা করতে পারবি না হলে কি হতো। দেখা করতি কি করে।’

‘ জানি না আমি কিছু আমার মাথা ফাঁকা লাগছে।’

‘ চল তো শাড়িটা পরিয়ে দেয়।’

‘ এখন আবার শাড়ি পরার কি দরকার? আর আমি শা রেগে ছিলাম।’

‘ রাগ সব ভুলে যা তো। এতো রাগ করলে এখনো সুন্দর মুহূর্ত অনুভব করতে পারবি না। তাই এই মুহূর্তে ভুলে যা পরে ঝগড়া করিস এখন রেডি হয়ে ভাইয়া সারপ্রাইজ দে তো।’

আমার কি হলো কে জানে আমি তুলির কথায় মেনে নিলাম। এক রঙা লাল শাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সেটাই কুচি করে পরিয়ে দিল তুলি। হাতে লাল রেশমি চুড়ি পরলাম, কপালে টিপ, কানে জোমকা, চুল খোলা।রাতেই শাড়ি পরে বসে র‌ইলাম। আমার রেডি হ‌ওয়ার একটু পর‌ই ইহান এসে হাজির হলো। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি ইহানের সামনে যেতে। লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক কারণ রিলেশন এ যাওয়ার পর এতো সেজেগুজে ফাস্ট যাচ্ছি তার সামনে। তুলি টেনে টুনে নিয়ে এলো আমাকে ইহানের সামনে ইহান সোফায় বসে ছিল। আমি আসতেই যেন ঝটকা খেলো। চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেললো
আমার লজ্জা নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

‘ চলো।’

বলেই দরজার দিকে হাঁটা দিল। তুলি গলা উঁচিয়ে বলল, ‘ ভাইয়া আমি কি জেগে‌ থাকবো? আপনারা কখন ফিরবেন? নাকি চাবি নিয়ে যাবেন।’

ইহান পেছনে ফিরে বলল, ‘ কোনটাই দরকার নাই। তুমি ঘুমিয়ে পরো নিশ্চিতে ও আর আসবে না ওকে আমি বাসায় নিয়ে যাব।’

‘ কিন্তু ও তো এখানে থাকবে বলেছিল। বাসায় কেন নিয়ে যাবেন?’ অবাক গলাতেই বলল তুলি।

‘ সেটা আমি বুঝে নিব। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।’

ইহানের গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে আমিও তুলি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমি নিঃশব্দে ইহানের পেছনে চলে‌ এলাম সাথে ব্যাগটাও নিয়ে এলাম আর যেহেতু ফিরবো না। ইহান ব্যাগ নিয়ে আগে আগে যাচ্ছে আমি পেছনে পেছনে। বাইরে‌ এসে আমাদের মাইক্রো দেখে থমকালাম এটা তো আব্বু আম্মু বেরাতে যাওয়ার সময় নিয়ে গেছিলো এটা উনার কাছে এল কি করে?

আমি প্রশ্নতোক চোখে ইহানের দিকে তাকালাম। ইহান বলল,

‘ তোমার বাবার গাড়ি আমি আনতে চাইনি জোর করে দিলো। বাইকের তেল শেষ সব সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে তাই বাইক আনতে পারিনি।’

‘ আপনি বাসায় গেছিলেন?’

‘ নাহ।’

‘ তাহলে আব্বুকে কোথায় পেলেন?’

‘ হসপিটালে।’

‘ মানে? আব্বু হসপিটালে কি করছে? কি হয়েছে আব্বুর।’

‘ কিছু হয়নি ব্যস্ত হয় না।’

‘ কিছু না হলে হসপিটালে কেন গিয়েছে?’

‘ কারো কিছু হয়নি‌ সবাই সুস্থ আছে। বিলিভ না হলে গিয়ে দেখো।’

আমি শান্ত হলাম কিন্তু ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তায় ভোগছি। ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এতো সেজেগুজে এসেছো কি আমাকে পাগল করতে? আমি তো কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছি। কিছু করে টরে বসলে তখন কিন্তু দোষ দিতে পারবে না।’

বলেই একটা বেশি ফুলের মালা গাড়ি থেকে বের করে আমার মাথায় পরিয়ে দিল। তারপর আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। ইহান ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি চিন্তিত মুখে বসে আছি।কার কি হয়েছে যে হসপিটালে গেল আব্বু আম্মু ঠিক আছে তো। এদিকে ইহান স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে আমার চিন্তা দূর করছে। আমি তাই চুপ করেই আছি। গাড়ি এসে থামলো‌ দাদু বাসায়। ইহান তাদের বাসায় আমাকে কেন নিয়ে এলো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে নেমে।

‘ এখানে আসলেন কেন? সবাই কি ভাববে রাতে আমি সেজে গুজে আপনার সাথে আপনাদের বাসায় আসছি ছিহ। চাচি খুব রাগ করবে। আমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে আসুন।’

‘ ভেতরে‌ চলো।’

‘ পাগল হয়ে গেলেন নাকি।’

‘ তোমার প্রেমে আমি পাগল। ‘

বলেই আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো। আমি কাচুমাচু মুখে ভেতরে এলাম।
ভেতরে আমার জন্য এমন চমক অপেক্ষা করছিলো যা আমি কল্পনাও করিনি। আমার জীবন টা এক নিমিষেই যেন পাল্টে গেল।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here