#এক_চিলতে_রোদ- ২,৩৯.(৩য় অংশ)
#Writer_Nondini_Nila
আচমকা এমন ছুটে এসে জরিয়ে ধরায় ইহান কিছুটা পিছিয়ে যায় তাল সামলাতে না পেরে। কিন্তু পরতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়। ইহান ওইভাবেই ওকে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
‘ এবার বলো ফোনে কি বলছিলে?’
আমি লজ্জা পেয়ে ইহানের থেকে একটু সরে দাঁড়ালাম।
‘ লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া অফ করে আসল কথা বলো!’
‘ আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন?’
‘ তো কেমন করে কথা বলবো। আমার হবু বউকে কিনা অন্য কেউ দেখতে আসে আবার এনগেজমেন্ট করাতে চায়। এসব শোনার পর আমার অবস্থা কেমন হয়েছে ভাব। আমি যদি সারপ্রাইজ দিতে আজ না আসতাম তখন ওই বিদেশে থেকে আমার কি অবস্থা হতো ভাব!’
‘ হয়নি তো শেষ মুহূর্তে আম্মু সব আটকে দিয়েছে। এখনো তারা দুজন কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি করছে মনে হলো বিয়ে নিয়েই। আম্মু তো সব জানে আম্মু বোধহয় এবার আব্বু কে জানিয়েই দিবে।’
‘ দিক ভালোই হবে। কিন্তু আমার এক জায়গায় ভয়। চাচু এসব জানার পর আবার হিতের বিপরীত হবে না তো। যদি না মেনে উল্টা সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।’
আমি বললাম, ‘ আমার মনে হয় না এমন করবে। আব্বু ও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে আমাদের। আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই না। তিনি আমাদের মাঝে ভিলেন হবেন না। আপনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন না এবার।’
‘ ভেতরে চলো।’
বলেই গাড়িতে উঠে বসলো ইহান। আমি ও উঠে বসলাম।
‘ আমরা কোথায় যাব এখন। আম্মু আব্বু খুঁজবে আমাকে।’
‘ এতো দিন পর দেখা একটু ঘুরাঘুরি না করলেই নয়।’
‘ ওকে চলুন। বাসায় কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনার কথা বলে দেব। কেমন।’
‘ আমি এতো ভীতু নাকি যে বলার কথা শুনে ভয় পাবো। তোমার যা খুশি বলো।’
‘ ওকে তাহলে চলুন শুনেছি রাতে নাকি প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য আইসক্রিম ওয়ালা থাকে সেখান থেকে না হয় আইসক্রিম খাওয়েইন।’
ইহান ড্রাইভ করছে এই গাড়িটা নতুন কিনেছে চাচাজান। আমাকে প্রথম দিন পরিক্ষা দিতে নিয়ে গেছিল আর আজ ইহানের সাথেও ওই গাড়িতেই যাচ্ছি। আমি ইহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছি। ইহান বিদেশে গিয়ে ক্লিন শেভ করেছে। আগে দাড়ি ছিল এখন নাই। এইভাবেও মানিয়েছে খুব লোকটাকে। আমি আড়চোখে তাকে দেখছি। আর মুচকি মুচকি হাসছি হঠাৎ বলে উঠলাম,
‘ জ্যাক ভাইয়া আসে নাই?’
ইহান এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ এসেছে তো।’
‘ তাকে একা রেখেই চলে এলেন বোর ফিল করবে তো!’
‘ তিনি এখনো জেগে থাকলে তো।এসেই ঘুম দিছে।’
‘ আপনি এখানে চলে এলেন যে আপনি ক্লান্ত না। কষ্ট করে আসলেন কেন? কাল আসতে পারতেন।’
‘ বাসায় থাকলে ও আমার ক্লান্ত দূর হতো না। আমার দু’চোখ ব্যাকুল তৃষ্ণার্ত থাকতো একজনকে দেখতে। এখানে এসে যতটা শান্তি পাচ্ছি ঘুমালেও পেতাম না।’
‘ আপনাকে না খুব সুন্দর লাগছে!’
ইহান ঠাস করে গাড়ি থামিয়ে ফেললো।আর আমার দিকে পূর্ণ নজরে তাকালো।আর বলল,
‘ কি বললে?’
আমি কথাটা বলে থতমত খেয়ে গেলাম।
‘ কিছু না।’
‘ শিকার করার সৎ সাহস নাই। ওকে নো প্রবলেম।’
ইহান গাড়ি থেকে নামতে গেলে আমি বললাম, ‘ নামছেন কেন?’
ইহান পেছনে ফিরে বলে, ‘ তুমি না বলে এই রোমান্টিক ওয়েদারে আইসক্রিম খাবে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাই নিয়ে এলাম। নাম এবার।’
আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখি সামনে একটা আইসক্রিম ওয়ালা দাড়িয়ে আছে। সেখানে দিয়ে কয়েকজন কাপেল যাচ্ছে আমি বললাম আর ইহান নিয়ে আসবে আমি ভাবিনি।
চকলেট ফেভারের আইসক্রিম নিলাম একটা ইহান নিলো না। আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনি খাবেন না? আপনি কি আইসক্রিম খান না? ‘
ইহান বলল, ‘ খাই না কিন্তু আজ খাবো।’
‘ খাবেন কি করে আপনি তো নিলেন না!’
‘ নিতে হবে কেন? এই যে এই টা খাব।’
বলেই ইহান আমার খাওয়া আইসক্রিম হাত থেকে টান মেরে নিয়ে নিল। আর আমি যেখান থেকে খাচ্ছিলাম ইহান ও ঠিক সেই খান থেকেই খেতে লাগলো।
‘ ছিহ এটা কি করলেন? আপনি আমার খাওয়া আইসক্রিম খেলেন কেন? আর আপনি খেয়ে নিলেন এখন আমি খাব কি করে? আপনি এতো কৃপণ যে টাকা বাঁচাতে একটা কিনে শেয়ার করে খেতে চাইছেন।’
ইহান আমার হাত হাত টেনে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কৃপণ না ওকে। এটা করলাম কেন জানো। শুনেছি স্বামী স্ত্রীরা ভাগাভাগি করে খেলে তাদের ভালোবাসা বাড়ে। আর আমরা এখন প্রেমিক প্রেমিকা আমরা ও ভাগাভাগি করলে আমাদের ভালোবাসা বাড়বে।’
‘ এ্যা কি অদ্ভুত লজিক।’
আমি খেতে না চাইলেও ইহানের জন্য আমাকে তার সাথে শেয়ার করেই খেতে হলো আইসক্রিম। আমরা অন্ধকার রাস্তায় ল্যামপোস্টের আলোতে হাঁটলাম। তারপর ইহান গাড়িতে এসে পেছনের সিটে বসে আমাকে নিয়ে। আমার কোলে মাথা রেখে সিটেই শুয়ে পরে।আর বলে চুল টেনে দিতে।
আমি বললাম, ‘ মাথা ব্যাথা করছে?’
ইহান বলে, ‘ হুম।’
‘ আচ্ছা চোখ বন্ধ করে থাকুন কিছুক্ষণ তারপর আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন।’
‘ ওকে।’
ইহান চোখ বন্ধ করে নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শে। ওইভাবেই ওর ঘুম চলে আসে। আর ও ঘুমিয়ে যায়।আমি ইহানের ক্লান্ত মুখটা দেখে ডাকতে পারিনা আর কিছুক্ষণ থাক ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি। যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সকাল। ইহান এখনো আমার পেটে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে আর আমি সিটে হেলান দিয়ে। তারাতাড়ি ইহান কে ডাকলাম। এখন কয়টা বাজে কে জানে সূর্য ও উঠে গেছে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে আব্বু আম্মু কি করছে কে জানে আমাকে নিশ্চিত খোঁজে হয়রান হচ্ছে।
ইহানকে ধাক্কা দিতেই উঠে গেল।
তারপর ভ্রু কুঁচকে চারপাশে তাকিয়ে বলল, ‘ আমরা গাড়িতে কেন?’
‘ সব দোষ আপনার কাল যদি মাথা টিপে দিতে না বলতেন তাহলে এই কেলেঙ্কারি হতো না!’
‘ হোয়াট কি হয়েছে?’
‘ আপনার জন্য সারারাত আমরা দুজন এই গাড়িতেই ছিলাম বাসায় পৌঁছাতেই পারিনি। আল্লাহ জানে বাড়ির কি পরিস্থিতি। আমি এখন বাড়ি যাব কি করে। কি জবাব দেব।’
‘ কেন কাল না বললেন আমার সাথে গিয়েছো বলবে?’
‘ ওইটা তো এমনি মজা করেই বলেছিলাম।’
‘ কেন মজা করবে কেন? আমি তোমাকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। মজা না ওকে তাই যা সত্যি তাই বলবো!’
‘ সারারাত এক সাথে কাটিয়েছি এটা জানলে কি মিন করবে বুঝতে পারছেন।’
আমরা তো জানি আমরা খারাপ কিছু করিনি।’
‘ তবুও আমি আব্বু আম্মু কে মুখ দেখাবো কি করে? আম্মু বলেছে আমার পাশে সব সময় থাকবো।আব্বু কে তিনি রাজি করাবেন তবুও তার বিরুদ্ধে গিয়ে এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন।’
‘ প্লিজ ঊষা কুল।আমি ম্যানেজ করে নেব চলো আমার সাথে। কিছু হবে না!’
আমাকে নিয়ে বাসায় আসবে তখন আবার গাড়ি থামিয়ে ইহান চা বিস্কুট নিয়ে এলো। আমার মন খারাপ সাথে চিন্তিত তাই আমি খেতে চাইলাম না কিন্তু ইহানকে মানাতে পারলে তো। জোর করেই খাইয়েছে।তারপর গাড়ি চলতে লাগলো বাসায় উদ্দেশ্যে।
গাড়ি থেকে নেমে ইহান আমার হাতের কব্জি কেটে ধরলো। নির্ভর দিয়ে হাত ধরেই বাসার ভেতরে যেতে লাগলো। বাইরে একটা গাড়ি দেখলাম। আমার বুক ধুকপুক করছে ইহান কলিংবেল দেওয়ার আগে বলল,
‘ চাচচুর কাছে আজ আমার এই বাচ্চা বউকে চাইবো। তাকে মানাতে যা করতে হয় সব করবো কিন্তু আমার এই সুখ আমি ছিনিয়ে নিতে দেবো না কাউকে।’
আমার কপালে ছোট করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কলিংবেল চাপলো।
#চলবে…