তুমি_তাই,পর্বঃ১৩,১৪

0
770

#তুমি_তাই,পর্বঃ১৩,১৪
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৩

রেজোয়ানের বাসার ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি এবং রেজোয়ান। রেজোয়ান উদাস দৃষ্টি মেকে আকাশ পানে চেয়ে আছে। তাঁর খানিকটা পেছনে হাতের মুঠোয় ওড়না পাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি।
শায়েলা মুরসালীনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর থেকেই বেশ গম্ভীর হয়ে আছে রেজোয়ান। কথা বলতে ভয় হচ্ছে। তবুও ইতস্তত করে বললো,’রেজোয়ান ভাই? কি হয়েছে আপনার?’

রেজোয়ান সামনে ঘুরলো। ইশারায় পাশে দাঁড়াতে বললো তিন্নিকে। বিনা প্রতিবাদে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো তিন্নি। রেজোয়ান আলতো করে তাঁর মাথায় হাত রেখে বললো,’ভালোবাসা মানে বুঝিস??

তিন্নি উপরে নিচে মাথা নাড়ালো। এরমানে সে বোঝে। কতটা বোঝে সেটা রেজোয়ানের অজানা। ম্লান হাসলো সে। বললো,’একটা গল্প বলি তোকে। মনোযোগ দিয়ে শুনবি কিন্তু? ঠিক আছে?
তিন্নি তাঁর কথার জবাবে মলিন মুখ করে বললো,
-‘আপনার কি বেশি মন খারাপ রেজোয়ান ভাই? কফি বানিয়ে আনবো?’

-‘কিচ্ছু লাগবে না। তুই চুপচাপ গল্পটা শোন। ‘

-‘আচ্ছা। ঠিক আছে।’

-‘শুরু করছি তাহলে?’

তিন্নি ঘাড় কাত করে সায় জানালো। বলতে শুরু করলো রেজোয়ান,
-‘একদেশে ছিলো এক অহংকারী রাজা। রাজার ছিলো এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটি মানে রাজকন্যাটি ছিলো ভীষণ সুন্দরী। চারদিক থেকে রাজপুত্ররা তাঁকে বিয়ে করার জন্য দিশেহারা। কিন্তু রাজার কাউকে পছন্দ হয় না। একদিন হঠাৎ এক নবাবের ছেলে রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। নবাবের ছিলো সীমাহীন ধনসম্পদ। রাজার চাইতেও অনেক বেশি। রাজা জানতো নবাবের ছেলে অসৎ দুশ্চরিত্র, লম্পট, কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে রাজকন্যাকে নবাবের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়ে যান। কিন্তু ততদিন রাজকন্যা অন্য একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। নিতান্ত সাধারণ ঘরের ছেলে সে। রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু রাজা তাঁকে মেনে নিলেন না। ছেলেটা অনেক অনুনয় বিনয় করলো। তবুও না। উলটে রাজকন্যাকে হুমকি দিলেন সে যদি নবাবের ছেলেকে বিয়ে না করতে রাজী না হয় তবে ছেলেটাকে মেরে ফেলবে। তুই শুনছিস তো?’

-‘হ্যাঁ। শুনছি। তারপর কি হলো? রাজকন্যা নিশ্চয়ই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেলো?’

-‘না রাজকন্যা পালায় নি। পালনোর কোন পথ ছিলো না। নবাবের অনেক ক্ষমতা। পালিয়ে যাবে কোথায়? নবাব একনিমিষেই ধরে ফেলবে!’

-‘তবে কি রাজকন্যা নবাবের ছেলেকে বিয়ে করে নিলো?’

-‘হ্যাঁ। ভালোবাসার মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজকন্যা নবাবের ছেলেকে বিয়ে করে নিলো।’

-‘আর ছেলেটা?’

-‘সে এসবের কিছুই জানতো না। রাজকন্যাকে ভুল বুঝে অভিমানে দূরে সরে যায়। অনেক দূরে।’

-‘তারপর তাদের আর কখনো দেখা হয় নি?’, এক এক করে প্রশ্ন করতে থাকে তিন্নি।

-‘হয়। নবাবের লম্পট ছেলে রাজকন্যাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাবার বাড়িতে ফিরে আসে রাজকন্যা। কিন্তু সেখানেও দুর্দশার শেষ রইলো না। হঠাৎ করে রাজকন্যার ভাই এবং নবাবের ছেলে দুজনেই মারা যায়। রাজার রাজ্যও ততদিনে ছারখার। সব হারিয়ে রাজা শয্যাশায়ী। অসুস্থ পিতার দায়িত্ব রাজকন্যা নিজের কাধে তুলে নিলো।’

এইটুকু বলে রেজয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তিন্নি চুপ করে শুনছে। তাঁর ভীষণ খারাপ লাগছে। রাজকন্যা এবং ছেলেটার শেষ পরিনতি জানতে খুব ইচ্ছা করছে।

-‘তোকে এই গল্পটা কেন বলছি বুঝতে পারছিস?’

-‘না।’

-‘পারবি। একটু ধৈর্য ধর।’

আবার বলতে শুরু করলো রেজোয়ান,

-‘রাজকন্যা এবং সেই ছেলেটা দুজনেই তাদের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে। অসহ্য বেদনা নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তারা কখনো মরার কথা ভাবে নি। নিজের মত করে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। ছেলেটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, রাজকন্যা নিজের দৈন্যদশার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।’

তিন্নি এখনো বুঝতে পারে নি রেজোয়ান কি বুঝাতে চাইছে। বললো,’রাজকন্যার সাথে কি আমার কোনভাবে সম্পর্ক আছে রেজোয়ান ভাই?’

-‘আছে।’

-‘কি?’

-‘বলছি। তার আগে গল্পটা শেষ করি। গল্প কিন্তু এখনো শেষ হয় নি।’

-‘ঠিক আছে।’

-‘অনেক দিন বাদে হঠাৎ আবার রাজকন্যার সঙ্গে ছেলেটার দেখা হয়। রাজকন্যাকে দেখে ছেলেটা খুশি হয় না। মাথায় প্রতিশোধের ভুত চাপে। নানাভাবে সে রাজকন্যাকে কষ্ট দিয়ে চায়। কিন্তু দিনশেষে তার সকল চেষ্টা বিফল হয়। কারণ রাজকন্যাকে কষ্ট দিয়ে সে শান্তিতে থাকতে পারে না।’

-‘অনেক ভালোবাসে যে তাই!’

-‘হ্যাঁ। ছেলেটা রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসে। জানতে পারে রাজকন্যার আত্মত্যাগের কথা। তখন সে রাজকন্যাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের এক অবুঝ রাজকন্যাও ছেলেটিকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলে। সে অবশ্য জানে না, ছেলেটা এখনো আগের তার পুরোনো প্রেমিকাকেই ভালোবাসে। ছেলেটাও ভয়ে বলতে পারে না। কারণ জানতে পারলে যদি সে নিজের ক্ষতি করে?’

-‘ছেলেটা তো জানিয়ে রেজোয়ান ভাই?’

-‘হ্যাঁ। জানিয়ে দিলো। অনেক ভেবে দেখেছে ছেলেটা না জানালে অবুঝ রাজকন্যাকে ঠকানো হবে। জটিলতা বাড়বে। তাই শেষমেষ জানিয়ে দেওয়াটা ঠিক মনে করলো।’

এটুকু বলে পুনরায় থামলো রেজোয়ান। আড়চোখে তিন্নির দিকে চাইলো। তিন্নি মাথা নিচু করে কাঁদছে। রেজোয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আমার গল্প শেষ তিন্নি। এখন তুই বল ঐ অবুঝ রাজকন্যাটা কি করবে? সে কি মরবে?’

তিন্নি জবাব দিলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। তাঁর বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। কেন সে রেজোয়ানের ভালোবাসার রাজকন্যাটি হলো না! এমন কেন হলো!

-‘আমার মনে হয় কি জানিস? আমার মনে হয়, সেই অবুঝ রাজকন্যাটি মরবে না। সে বেঁচে থাকবে। জীবনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শিখবে। ছেলেটাকে দেখিয়ে দেবে জীবন কারো জন্য থেকে থাকে না। তারপর একদিন তার জীবনেও অন্য কোন রাজপুত্র আসবে যে রাজকন্যার পুরোনো সব দুঃখ ভুলিয়ে দিবে। যাকে পেয়ে রাজকন্যা নিজেকে পৃথিবীর সব চাইতে সুখি মানুষ মনে করবে।’

তিন্নি চোখ মুছে ম্লান হাসলো। ধরে আসা কন্ঠে বললো,’আপনি ভয় পাবেন না রেজোয়ান ভাই আমি মরবো না। আমি বেঁচে থাকবো। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার রাজকন্যার কাছে ফিরে যেতে পারেন।’

কথা শেষ করে আর একমুহূর্তও দাড়ালো না সে। ছুটে বেরিয়ে গেলো। রেজোয়ান ছলছল দৃষ্টি নিয়ে তাঁর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। তিন্নিকে সে ভালোবাসে, স্নেহ করে। সবসময় চায় তিন্নি ভালো থাকুক। তিন্নির জন্য সে নিজের গোটা পৃথিবী ছেড়ে দিতে পারে। শুধু পারে না তিন্নিকে নিলির মতন করে ভালোবাসতে। নিলি যে তাঁর প্রেয়সী! তাঁর প্রিয়তমা! তাঁর হৃদযন্ত্রের স্পন্দন! যেই স্পন্দন থেমে গেলে মানুষ আর বাঁচে না।

বেশ কয়েকদিন পরের কথা,
মন মেজাজ ভালো না থাকায় জাহিদকে নিয়ে একটা ব্যবিসায়িক পার্টিতে এসেছে রেজোয়ান। ঢাকা শহরের বড় বড় বিজনেসম্যানরা সবাই এই পার্টিতে আমন্ত্রিত। ভদ্রতার খাতিরে হলেও অ্যাটেন্ড করা প্রয়োজন।
কিন্তু এখানে এসে এমন কিছু দেখবে একথা রেজোয়ান স্বপ্নেও ভাবে নি। স্বামী স্ত্রীর মতন পাশাপাশি হাত ধরে ভেতরে ঢুকছে রেজা এবং নিলি। হাসিহাসি মুখ নিলি। সাজসজ্জার বহর! রেজোয়ানের বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো নিলির হাস্যজ্জ্বল মুখখানা দিকে। কতদিন বাদে এমন করে হাসছে নিলি। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিকে। রেজার হাত ধরে হাসছে তাঁর প্রিয়তমা! জাহিদ তাঁর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,’চলুন ঐদিকটাতে গিয়ে বসি স্যার।’

-‘চলো।’, সামনে এগোলো রেজোয়ান। ভেতরের অস্থিরতা কাটানোর জন্য বেশকিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলো। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। জ্বালা বাড়লো বইকি কমলো না!


অনেকক্ষণ যাবত নিলিকে খুঁজছে রেজোয়ান। রেজা এখানেই আছে কিন্তু নিলি নেই। খুঁজতে খুঁজতে অন্যদিকে চলে গেলো সে। আরেকটু সামনে এগোতেই দেখলো,

একপাশে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী একটা লোকের সঙ্গে কথা বলছে নিলি। প্রথম দেখাতেই লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকলো না রেজোয়ানের। তাঁর অশ্লীল দৃষ্টি বারবার নিলির সরু কটিতে গিয়েই ঠেকছে। সম্ভবত নিলিকে একসঙ্গে নাচ করার প্রস্তাবও দিয়েছে। এবং জবাবের অপেক্ষা না করেই নিলির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকটা নিলির কোমর স্পর্শ করার আগেই রেজোয়ান একজন ওকে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেলো।

কোমরে টান পড়ায় নিলি চমকে উঠে সামনের মানুষটার দিকে চাইলো। মুহূর্তেই অগ্নিবর্ণ ধারণ করলো চেহারা।

-‘হাউ ডেয়ার ইউ মি. রেজোয়ান?… হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?’

লোকটা সঙ্গে সঙ্গেই কেটে পড়লো। রেজোয়ান বিষন্ন মুখেও কিঞ্চিৎ হাসলো। বললো,’ডোন্ট বি সিরিয়াস। আই ডোন্ট হ্যাভ এন্যি ইন্টেনশন টু টাচ ইউ!’

-‘ডোন্ট ইউ?’

-‘নো। আই ওয়াজ জাস্ট হেল্পিং ইউ! লোকটা তোমার কোমরে হাত দিতে যাচ্ছিলো।’

তৎক্ষণাৎ নিজের কোমরের দিকে চাইলো নিলি। শাড়ি সরে কোমরের একাংশ দেখা যাচ্ছে। বিব্রত মুখে দ্রুত টেনে ঠিক করে নিলো। নিচে নামার জন্য পা বাড়াতেই রেজোয়ান তাঁকে টেনে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। একটা বন্ধ রুমের তালা খুলে তড়িৎ গতিতে ভেতরে ঢুকে পড়লো। নিলি ঝাপিয়ে পড়লো দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দরজা খুললো না। রেজোয়ান বাধা না দিয়ে শান্তভাবে বিছানায় গিয়ে বসলো।

-‘এই দরজা খুলছে না কেন?’, আতংকে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো নিলির।

-‘বন্ধ দরজা খুলবে কি করে?’

-‘মানে?’

-‘মানে,আমি লক করে দিতে বলেছি। বাইরে জাহিদ অপেক্ষা করছে। আমি না বলা পর্যন্ত খুলবে না।’

-‘এসবের মানে কি?’ তেঁতে উঠলো নিলি।

-‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’

-‘আমি আপনার কোন কথা শুনতে আগ্রহী নই। দরজা খুলতে বলুন নইলে আমি চিৎকার করবো।’

রেজোয়ান ফের হাসলো। হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,’ইউ ক্যান ট্রাই। তোমার যত খুশি চিৎকার করো। কোন লাভ হবে না। রুম সাউন্ড প্রুফ!’

আকস্মিক ভয়ে নিলি চোখ বড়বড় করে ফেললো। রেজোয়ান কি করতে চাইছে তাঁর সঙ্গে? দরজা বন্ধ করেছে কেন?

গায়ের ব্লেজার টা খুলে খাটের পাশে ছুঁড়ে মারলো রেজোয়ান। বডি ফিটিং শার্টে তাঁর সুন্দর পেশিবহুল ফিগার নিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে। নিলিকে অবাক হয়ে তাঁর দিকে চেয়ে ঠোঁট কামড়াল। নিলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে তাঁর মুখের দিকে। এই মানুষটার সঙ্গে একঘরে থাকতে তাঁর যথেষ্ট আত্মসম্মানে বাঁধছে। কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় নেই। রেজোয়ান কি চায় সেটা ওকে জানতে হবে।

-‘রেজার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক?…আমি যতদূর জানি তুমি তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী। তাহলে হাত ধরে এত হাসাহাসি কিসের?’ কোনরকম ভনিতা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো রেজোয়ান।

-‘দ্যাট’স নান অফ ইউর বিজনেস!’

-‘অফকোর্স ইট ইজ। আমার হবু বউয়ের সঙ্গে তাঁর কিসের এত হাসাহাসি!’

-‘এক্সকিউজমি? হবু বউ? কার? তোমার? নো মি.রেজোয়ান। পাত্রী যদিও ঠিক আছে কিন্তু পাত্রটা বদল হবে। আই অ্যাম গোয়িং টু ম্যারি মি.রেজা! ভেরি সুন ইউ উইল গেট দ্যা ইনভাইটেশন কার্ড।’

রেজোয়ানের হাসি মিলিয়ে গেলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে হাঁ করে চেয়ে রইলো নিলির মুখের দিকে।

-‘আর ইউ কিডিং মি?’

-‘উই ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট কাইন্ড অফ রিলেশনশীপ।’

-‘হাউ কুড ইউ মেরি হিম?’

-‘হাউ কুড আই মেরি হিম? ডু ইউ হ্যাভ দ্যা রাইট টু আস্ক মি দ্যা কোয়েশ্চেন?’

-‘কথা ঘুরিরো না নিলি। আমার প্রশ্নের জবাব দাও।’

-‘আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই!’

-‘না দিলে কিন্তু তুমি এখান থেকে বেরোতে পারবে না। সারারাত আমার সঙ্গে একঘরে কাটাতে হবে।’

গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে দিলো রেজোয়ান। নিলি ঝাঁঝালো চোখে চেয়ে রইলো সেদিকে। ছুঁড়ে মদের গ্লাসটা ফেলে দিতে মন চাইছে তাঁর। রাগ সংযত করে বললো,’হি প্রপোজ্ড মি!’

-‘এন্ড ইউ এক্সেপ্ট দ্যাট?’

-‘ইয়েস।’

-‘ডু ইউ লাভ হিম?’

-‘ইয়েস! এবার জাহিদ সাহেবকে বলুন দরজা খুলে দিতে। আমার ফিউন্সে আমার জন্য ওয়েট করছে!’

রেজোয়ানের মুখ ইতোমধ্যে লাল হয়ে গেছে। হাতের গ্লাসটা সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো সে। নেশায় টলমল অবস্থা। যার জন্য সে প্রতিনিয়ত মায়ের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে, যার জন্য তিন্নিকে ফিরিয়ে দিয়েছে সে কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করবে? অসম্ভব! রেজোয়ান কিছুতেই তা হতে দেবে না।
নিলির সামনে এগোতেই দুপা পিছিয়ে গেলো নিলি। এভাবে যেতে যেতে একেবারে দেওয়ালের সঙ্গে মিশে গেলো।

-‘হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?’

-‘আই ওয়ান্ট ব্যাক মাই লাভ! ‘

-‘সেটা সম্ভব নয়।’

-‘কেন সম্ভব নয়।’

নিলির চোখে পানি! এইমুহূর্তে রেজোয়ানকে ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে তাঁর। এই মানুষটা কখনোই তাঁর সুখ সহ্য করতে পারে না। এত কষ্ট দেওয়ার পরেও শখ মেটে নি। এখন নতুন করে আবার কষ্ট দিতে চাইছে। যেই শুনেছে রেজা ওকে বিয়ে করতে চায় অমনি মিথ্যে ভালোবাসার বুলি ছোটাচ্ছে। কেন এমন করছে সে?
রেজা যদি এসব জানতে পারে নিলিকে আর কোনদিন বিশ্বাস করবে না। যেই মানুষটা বিপদে আপদে নিলির পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁকে নিলি ঠকাতে চায় না।
ঠেলে রেজোয়ানকে সামনে থেকে সরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু শরীরের সমস্ত ভর তাঁর গায়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে রেজোয়ান। দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বললো,’আমি তোমাকে ভালোবাসি নিলি।’

লজ্জায় অপমানে কেঁদে ফেললো নিলি। বললো,’প্লিজ, স্টপ দিজ! আই বেগ ইউ! আমাকে যেতে দাও!’
তাঁর চোখে পানি দেখে হুশ ফিরলো রেজোয়ানের। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো নিলিকে। জাহিদকে ফোন করে দরজা খুলে দিতে বললো। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো নিলি। সে বেরিয়ে গেলে বুকভর্তি বেদনা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রেজোয়ান। নিজের ওপর অসম্ভব করুণা হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলছে।

#তুমি_তাই
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৪

অফিসিয়াল মিটিংয়ে জাহিদের সঙ্গে জরুরি আলাপে ব্যস্ত ছিলো রেজোয়ান। আচমকা টেলিফোনের রিং
বেজে উঠতেই মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলো। রিসিভার তুলে কথা না বলে ফের রেখে দিলো রেজোয়ান। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলো না। কল কেটে যাওয়ার পরেও বিরতিহীন ভাবে কল করা জারি রাখলো অপরপাশের ব্যক্তিটি। রেজোয়ান বিরক্ত হয়ে রিসিভার কানে তুলে নিলো,
-‘হ্যালো। রেজোয়ান স্পিকিং!’

-‘হ্যালো মি.মুরসালীন। রেজা হিয়ার,’

রেজার নামটা শুনে চোখ জ্বলে উঠলো রেজোয়ানের। হাতের মুঠো শক্ত করে ফেললো। জাহিদকে উদ্বিগ্ন দেখালো। ইদানীং রেজোয়ানের শরীর ভালো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় যথেষ্ট চেঁচামেচি তাঁর শরীরের পক্ষে ভালো হবে না। সে জানে না রেজোয়ান কার সঙ্গে কথা বলছে তথাপি ইশারায় শান্ত থাকতে অনুরোধ করলো ।

রেজোয়ান কাট কাট গলায় প্রশ্ন করলো,’কি চাই?’

-‘আপনাকে আমাদের বিয়েতে ইনভাইট করার জন্য ফোন করেছি মি.মুরসালীন। আগামী এগারোই ফেব্রুয়ারি আমার এবং নিলির বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে।’

রেজোয়ান চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও উঠলো না। নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললো,’

-‘কংগ্রাচুলেশনস মি.রেজা। উইশ আ ভেরি ব্যাড লাক।’

-‘সরি?’

-‘ভুল হয়ে গেছে। গুডলাক হবে।

-‘থ্যাংক ইউ।

-‘ভালোই হলো আপনি ফোন করেছেন। একসঙ্গে আমার বিয়ের দাওয়াতটা পৌঁছে দেওয়া যাবে।’

-‘আপনার বিয়ে?’

-হ্যাঁ। আমারও বিয়ে। এগারোই ফেব্রুয়ারি আমারও বিয়ে।’

রেজা যেন আকাশ থেকে পড়লো! রেজোয়ানের কথা সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না। রেজোয়ান কি তাঁর সঙ্গে মজা করছে তাও বুঝতে পারছে না। তবে অবাক হোক আর যাই হোক ব্যাপারটা জোরপূর্বক হজম করে গেলো সে। কৃত্রিম আন্তরিকতার সুরে বললো,

-‘তাই নাকি? হোয়াট আ কো ইন্সিডেন্স! এনিওয়ে কংগ্রাচুলেশনস মি.মুরসালীন।’

-‘কোইন্সিডেন্স তো বটেই আমার হবু স্ত্রীর নামও নিলি রহমান। ভেন্যুটাও সেইম।’

রেজোয়ান ইচ্ছে করে রেজার মনের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিলো। এতক্ষনে জাহিদের বোঝা হয়ে গেছে রেজোয়ান কার সঙ্গে কথা বলছে। মুখটিপে হাসলো সে। রেজোয়ান মুরসালীন একবার যার ওপর থাবা বসায় তাঁর আর মুক্তি নেই। রেজা আবার সেই থাবার শিকার হতে যাচ্ছে।

রেজোয়ান গলাটা আরেকটু খাদে নামিয়ে বললো,
-‘একটু সাবধানে থাকবেন ভাই। বিয়ের দিন কিডন্যাপ-টিডন্যাপ হয়ে গেলে তো সমস্যা। তখন তো আপনার বউ নিয়ে অন্যলোকে ভাগবে।’

শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও রেজার পেটের কেমন করছে। রেজোয়ান সরাসরি তাঁকে থ্রেট দিচ্ছে। হাড়বজ্জাত ছেলে এই রেজোয়ান! একে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই নিলিকে টোপ হিসেবে বেছে নিয়েছে রেজা এখন উল্টে তাঁকেই টোপ বানানোর প্ল্যান করছে রেজোয়ান। ভাবছে বিয়ের আসর থেকে রেজাকে কিডন্যাপ করে সে নিজে বিয়ে করবে? আচ্ছা? এত সহজ। গতবার নাহয় রেজা কিডন্যাপের কথা জানতো না। কিন্তু এবার আর তো সে জেনে গেছে। এবার আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রাখবে। দরকার পড়লে বিয়ের দিন পুলিশ পাহারা বসাবে।

-‘আপনি ব্যবসা ছেড়ে মানুষ কিডন্যাপিং কবে থেকে শুরু করেছেন?’

-‘ধুর। মানুষ কিডন্যাপ শুরু করতে যাবো কেন? আমি তো কিডন্যাপ করবো একটা নেড়ি কুত্তাকে। চিড়িয়াখানায় যাওয়ার বহুত শখ হয়েছে কুত্তাটার।’

ইনডাইরেক্টলি রেজোয়ান তাঁকে কুকুর বলছে ভেবে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো রেজা। ক্রুদ্ধস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’মুখ সামলে কথা বলুন মি.মুরসালীন।’

জবাবে রেজোয়ান অত্যাধিক নমনীয়, কোমল কন্ঠে বললো,’আপনি কেন উত্তেজিত হচ্ছেন? আমি তো আপনাকে কুকুর বলি নি।’

রেজা বুঝলো কথার মারপ্যাঁচে তাঁকে অপমান করার ফন্দি এঁটেছে রেজোয়ান। আচমকা যেমনি রেগে গেছিলো তেমনি আবার শান্ত হয়ে গেলো। ফিচেল হেসে বললো,
-‘আপনি আমাকে যাই বলুন না কেন আপনার প্রিয়তমা কিন্তু আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভক্তিতে একেবারে গদগদ। আমি চাইলেই তাঁকে দিয়ে যেকোনো কাজ করাতে পারি। এমনকি নিজের শয্যাসঙ্গীও বানাতে পারি। কিন্তু আপনার কথা ভেবে মায়া হয়। শত হলেও আপনার পুরাতন প্রেমিকা, বিয়ের আগে এমন কিছু করেছে জানলে আপনি নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাবেন। তাই ছেড়ে দিয়েছি। তবে বিয়ের পর কিন্তু আর ছাড়বো না। ‘

রেজোয়ান হাসলো। বললো,
-‘সেই চেষ্টা যে আপনি করেন নি এ আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে বাগে আনতে না পারেন নি। তাই এসব ভুজুংভাজুং শুনিয়ে আমাকে রাগাতে চাইছেন। কি তাইতো?’

ধরা খেয়ে রেজার অঙ্গ জ্বলে উঠলো। মাথায় রক্ত উঠে গেলো। একথা সত্যি যে, রেজোয়ানকে অপদস্থ করার জন্যই নিলিকে বেছে নিয়েছিলো সে। কিন্তু এর বাইরেও যে নিলির প্রতি তাঁর আলাদা লোভ নেই সেকথা মিথ্যে। ভেবেছিলো ফুঁসলে ফাঁসলে কোনমতে একবার বিছানায় নিয়ে যেতে পারলেই কাহিনী খতম। বিয়ে-টিয়ে করার দরকার পড়বে না। কিন্তু নিলি তাঁকে সেই সুযোগই দেয় নি। ঐ হাত ধরাধরি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো সবকিছু।

রেজার নিরবতা রেজোয়ানের হাসিকে প্রশস্ত করে দিলো। শীতল বাতাস বসে গেলো সমস্ত শরীরে। আবেগ মিশ্রিত গলায় বললো,

-‘সি ইজ মাই গার্ল!…আই নো মাই গার্ল, সি উইল নেভার লেট ইউ গেট দ্যা চান্স।’

রেজা রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে ফোন রেখে গেলো। যেই উদ্দেশ্যে সে রেজোয়ানকে ফোন করেছিলো সেই উদ্দেশ্য বিফল। উল্টে তাঁর নিজের মাথায় আগুন জ্বলছে। গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে রেজোয়ান আর তাঁর ঐ সতী সাবিত্রী প্রেমিকা।
নিজেকে শান্ত করা চেষ্টা করলো রেজা। প্রবোদ দিলো, আর তো মাত্র কয়টা দিন। বিয়েটা হয়ে গেলেই আসল খেলাটা শুরু করবে সে। নিজের অর্ধশত কোটি টাকা যদি রেজোয়ানের কাছ থেকে আদায় না করে ছেড়েছে তবে তাঁর নামও রেজা নয়।

রেজোয়ান ফোন রেখে জাহিদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। জাহিদ হাসছে। বললো,

-‘আপনি কিন্তু ভীষণ ঝগড়া করতে পারেন স্যার। রেজা সাহেব নিশ্চয়ই এখন রাগে ফুঁসছে।’

ঝগড়ার প্রসঙ্গ উঠতেই চট করে তিন্নির কথা মনে পড়লো রেজোয়ানের। ছাদে সেদিন কথাগুলো বলার পর থেকে তিন্নির সঙ্গে আর দেখা হয় নি। মেয়েটা ভীষণ অভিমানী। কি করে নিজেকে সামলাচ্ছে কে জানে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রেজোয়ান। এখন তিন্নির সঙ্গে দেখা না হওয়াই ভালো। নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার জন্যে হলেও কিছুটা সময় দরকার।


পাঁচসাত দিন পরের কথা
তিন্নির রেজাল্ট বেরিয়েছে। অনেকদিন বাদে দেখা করতে এসেছে রেজোয়ান। তিন্নি তখন দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমাচ্ছিলো। রেজোয়ান এসেছে শুনে তড়িঘড়ি করে উঠে গেলো। তবে কোন অস্থিরতা দেখালো না। ধীরেসুস্থে ফ্রেশ হয়ে রেজোয়ানের সামনে গেলো। সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে রেজোয়ান। তাঁর চেহারার অবস্থা দেখে তিন্নির চোখে পানি চলে এলো। চোখ মুখ বসে খুবই করুণ অবস্থা রেজোয়ানের। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে অর্ধেক হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি, মুখভর্তি দাড়ি। কেমন একটা বিষন্ন চেহারা।

গত দুরাত ঠিকমত ঘুমাতে পারে নি রেজোয়ান। দুদিন আগেই নিলির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলো। কিন্তু ফিরে এলো তিক্ত মন নিয়ে। নিলি তাঁর সামনে দিয়েই রেজাকে নিয়ে বিয়ের শপিং করার জন্য বেরিয়ে গেছে। নিলিকে সে কোনভাবেই বোঝাতে পারছে না রেজোয়ান একটা মুখোশধারী শয়তান। নিলি তাঁর কোন কথাই কানে তুলছে না। এসব ভেবে অস্থির হয়ে আছে মান।

তিন্নি নিজেকে সামলে নিলো। গলা পরিষ্কার করে বললো,’কেমন আছেন রেজোয়ান ভাই?’

রেজোয়ান চোখ খুললো। অদ্ভুত বিষন্ন এক হাসি দিলো তিন্নির দিকে তাকিয়ে। তারপরই অভিমানের সুরে বললো,

-‘তুই আমাকে বদদোয়া দিয়েছিস তাই নারে তিন্নি?’

-‘আমি? আমি আপনাকে বদদোয়া কেন দেবো?’

-‘দিয়েছিস। আলবাত দিয়েছিস। নইলে নিলির অন্য জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছে কেন?’

তিন্নির চোখে মুখে সীমাহীন বিস্ময় ফুটে উঠলো। বললো,

-‘অন্য জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছে?’

-‘হ্যাঁ। অন্য জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছে। তারওপর যাকে বিয়ে করবে বলে ঠিক করেছে সে আস্ত একটা বদমাইশ। আমি কোনভাবেই ওকে আটকাতে পারছি না। ওর ধারণা আমি ইচ্ছে করে রেজার নামে খারাপ খারাপ কথা বলছি।’

-‘তাঁর এমন ধারণার কারণ?’

-‘বদমাইশটা আমাকে জব্দ করার জন্য নিলির দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছ্র। নিলির বাবা অসুস্থ থাকাকালীর টাকা পয়সা দিয়ে ওকে সাহায্য করছে। আমার অফিস থেকে চাকরী ছেড়ে দেওয়ার পর নিলিকে নিজের পি.এস হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আর সেইজন্যই নিলি ভাবছে ওর মত বুঝি মানুষ হয় না।’

-‘ভাবারই তো কথা। দুঃসময়ে যেই মানুষটা পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁকে আপনি খারাপ মানুষ বলছেন কি করে? হতেও তো পারে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে?’

-‘ধুর। কোন ভুল হয় নি আমার। ও যে একটা বদমাইশ তাঁর প্রমাণ আমি নিজে। বদমাইশটা আমার আর নিলির পুরোনো ছবি ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে একশো কোটি টাকা দাবি করেছিলো আমার কাছ থেকে।’

তিন্নির চোখ কপালে উঠে গেলো। গোল গোল চোখে চেয়ে থেকে বললো,’একশো কোটি টাকা?’

-‘হ্যাঁ। একশো কোটি টাকা। তাহলেই বুঝ কেমন শয়তান?’

-‘আপনি টাকা দিয়েছিলেন?’

-‘পাগল নাকি। একশো কোটি টাকা কি মগেরমুল্লুক? যে চাইলো আর আমি দিয়ে দেবো? আমার ব্যবসা লাটে উঠতো তাহলে। অন্যভাবে শায়েস্তা করেছি। এবারও ছাড়বো না। সে যাই হোক তোর কি খবর? ভর্তি পরীক্ষা দিবি তো নাকি?’

-‘দেবো।’

-‘ঠিক আছে। পড়াশুনা করিস ঠিক মতো। আমি তাহলে আসি।’

রেজোয়ান বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলো। তিন্নি হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো,

-‘একটা প্রশ্ন ছিলো রেজোয়ান ভাই?

-‘কি প্রশ্ন?’

-আপনার রাজকন্যা কি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসে? না মানে সে তো অন্য একজনকে বিয়ে করছে। হতে পারে রাগ করে করছে, তবুও বিয়ে তো।’

-‘তোর মনে হয় আমি সত্যি সত্যি বিয়েটা হতে দেবো? নিলি আমার ওপর অভিমান করে এসব করছে। আমিও তো কম কষ্ট দিই নি। তাই রাগ করেছে। জানিস তো, যেখানে ভালোবাসা বেশি সেখানে রাগ, অভিমান এগুলো বেশি। এসব কোন ব্যাপার না।আমি ওকে ঠিক আমার করে নেবো।’

কথা শেষ করে রেজোয়ান বেরিয়ে গেলো। যদিও নিলির ব্যাপারে সে ভীষণ টেনশনে আছে, নিলি আদৌ তাঁকে ক্ষমা করবে কিনা, আবার তাঁরা নতুন করে শুরু করতে পারবে কিনা এসব ভেবে অস্থির লাগছে। আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা না বুঝে নিজের সর্বনাশ করতে চলেছে কিন্তু তিন্নিকে এসব কিছুই বুঝতে দিলো না। উপরন্তু কথাবার্তা বলার সময় এমন সাবধানে বলেছে যেন তিন্নির মনে তাঁকে নিয়ে বিন্দুমাত্রেও আশার সঞ্চার না হয়। রেজোয়ান চায় না তিন্নি মিথ্যে কোন আশা দিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখুক। নিজের জীবনটা সে নতুন করে গড়ে তুলুক।

রেজোয়ান বেরিয়ে গেলে তিন্নির অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বিড়বিড় করে বললো,’আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবেসেছিলাম রেজোয়ান ভাই। আপনার ঐ রাজকন্যার চাইতেও বেশি। কিন্তু আফসোস আপনি আমার ত্যাগটুকু দেখতে পেলেন না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here