খুন,পর্বঃ- ০৩
যাবেদ খাঁন আবু বকর
(ক্রাইম থ্রিলার)
তৎক্ষনাৎ সাদিকের ডেস্কে উপস্থিত হলেন মিস অলিন। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে হনহন করে হেঁটে রুম ত্যাগ করেন যাবেদ। তার পিছুপিছু দ্রুত পা চালিয়ে হেঁটে চলেছেন মিস অলিন। অলিনের রুমে প্রবেশ করলেন যাবেদ। কিছু সময়ের ব্যবধানে উক্ত রুমে উপস্থিত হলেন অলিন। রুমে প্রবেশ করে বাম দিকের দেয়ালের সাথে থাকা বুক শেলফটির কাছে হেঁটে গিয়ে উপস্থিত হলেন যাবেদ। একটি টান দিয়ে বুকশেলফটি একপাশে সরিয়ে দিলেন তিনি। দেয়ালের সাথে লেপ্টে থাকা বুকশেলফটি উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে নিতেই দেয়ালে একটি আয়নার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আয়নায় যাবেদ এবং অলিনের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে। সচারাচর আয়নাটি দেখলেও একটি মানুষের বোঝার ক্ষমতা নেই এটি একটি দরজা। কেননা এটি একটি আয়না,যেখানে কেবল মানুষের প্রতিবিম্ব ভেসে উঠে এবং আয়নাটি সম্পূর্ণ ফ্রেশ। কোথায় কোনো খাঁদ নেই যার ফলে লোকের চোখে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। আয়নায় না আছে কোনো সুরঙ্গ না আছে চাবি প্রবেশ করাবার ছিদ্র। তাই সন্দেহ হবার কোনো কারণ নেই।
যাবেদ তার ডান হাতটি উঁচু করে আয়নায় ফুটে ওঠা প্রতিবিম্বের বুক বরাবর উঁচুতে রাখলেন। প্রতিবিম্বের বুক বরাবর আয়নায় ডান হাতটি রাখতেই কিছু সময় বাদেই একটি সবুজ রশ্মি বের হলো তবে তা কেবল হাতের চারদিকেই। সবুজ রশ্মিটা হাতের আঙুলের শীর্ষ হতে শুরু করে কব্জি পর্যন্ত স্ক্যান করতে লাগল। স্ক্যান শেষ হতেই হুট করেই সবুজ রশ্মিটি বন্ধ হয়ে যায়। রশ্মি নিভে যেতেই হাত নামিয়ে নেন যাবেদ। যাবেদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবেন অলিন তার পূর্বেই “টুং” শব্দ তুলে আয়নাটি একপাশে সরে যায়। আয়নাটি তার স্থান থেকে সরে যেতেই ভেতরে লিফটের মতো চারকোনা বদ্ধ ছোট্টো একটি রুম দেখা যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে ছোট্টো রুমটির ভেতরে প্রবেশ করলেন যাবেদ। তার সাথে চারকোনা আকারের ছোট্ট রুমটি ভেতরে পা রাখেন অলিন। রুমটির একটি কোনায় কাচের কি-বোর্ড দেখা যাচ্ছে। হাত তুলে তাতে টাইপিং করলেন 41676। হঠাৎ করে অদ্ভুত ছোট্টো রুম থেকে একটি ভয়েজ ভেসে এলো “কোড এক্সেপ্টেড”। রুমটির দরজা আপনা-আপনি ভাবে বন্ধ হয়ে গেল। একটি ঝাঁকুনি খেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলো রুমটি।
যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন অলিন;
-” তুমি আমাকে পার্কিং প্লেসে ফেলে রেখে চলে এসেছিলে কেন?”
একটি তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললেন যাবেদ;
-“ওরে পাগল! গুরুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কেসটি স্টাডি করছিলাম। তা-ই দ্রুত ছুটে চলে এসেছিলাম যার ফলে আপনার মনে হলো আপনাকে উপেক্ষা করে চলে এসেছি।”
হুট করেই রেগে গেলেন অলিন। চেহারায় রাগ চটা ভাব ফুটিয়ে বলতে লাগলেন তিনি;
-” আপনি কি হ্যাঁ! আমাকে দেখে কি তোমার বৃদ্ধ মহিলা মনে হয়? আর যার জন্য আমাকে আপনি-আপনি করে বলছ।”
বেশ ঘাবড়ে গেলেন যাবেদ। কিছুটা আমতাআমতা করে জবাব দিলেন তিনি;
-“না! তা নয়। তবে আপনি। সরি! তুমি আমার চাইতে বয়সে বড়। সেক্ষেত্রে আপনিটাই তো ঠিক আছে।”
এভাবেই কথা বলতে লাগলেন দু’জন। রুমটি হঠাৎ করে নিচে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় একটি “টুং” শব্দ তুলে দরজাটি খুলে গেল। ছোট্ট রুমটি থেকে দরজা দিয়ে বাহিরে প্রথমে পা রাখলেন যাবেদ। তারপর-পরই পা রাখলেন অলিন। তারা দু’জন একটি চৌকোনা বিস্তৃত একটি বদ্ধ রুমে উপস্থিত হয়েছেন। রুমের ভেতরে চারটে দেয়াল বিদ্যমান তবে চার দেয়ালেই সুন্দর কারুকার্য খচিত রয়েছে। এক কর্ণারে একটি ছোট্ট টেবিলের উপরে দু’টি কম্পিউটার রাখা আছে যার পাশে আছে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি এবং ডিভাইস।
রুমের মধ্যস্থানে একটি লম্বা সরু টেবিল। যার দুই পাশে দু’টি করে চেয়ার রাখা হয়েছে। টেবলের সাথে সংযুক্ত করে দাঁড় করানো আছে একটি চৌকোনা ওয়ান্টেড বোর্ড। নিখুঁত ভাবে রুমটি পর্যবেক্ষণ করছেন যাবেদ। কেমন একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে লাগছে তাদের। কিছু বলতে যাবেন অলিন তার পূর্বেই পুনরায় “টুং” শব্দ হলো। সেদিকে তাকালেন দু’জন। দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন তাবিব। সেদিকে আর তাকিয়ে না থেকে ওয়ান্টেড বোর্ড পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন যাবেদ। পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটিয়ে যাবেদের উদ্দেশ্য করে কিছু ছবি বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন তাবিব;
-“ধর ভাই! এই যে ছবিগুলো। এখন ঝটপট বলে ফেল আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি কেন?”
বেশ কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তাবিবের উদ্দেশ্য করে বললেন যাবেদ;
-“আগে থেকেই জানতাম তোর ঘিলু কম। কিন্তু এখন তো দেখছি আগে যে পরিমাণে ছিলো দিনে-দিনে তা লোপ পেয়েই চলেছে সব। আজকাল কমন থিংসগুলোও প্রশ্ন করা শুরু করেছিস।”
আর কিছু বললেন না তাবিব। হাত বাড়িয়ে ছবিগুলো নিজ হাতে নিয়ে নিলেন যাবেদ। হাতে নিয়ে ছবিগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন তিনি। অলিন কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন দু’জনের কর্মকাণ্ড। ছবিগুলো হাতে নিয়ে ওয়ান্টেড বোর্ডের সামনে দাঁড়ালেন যাবেদ। বোর্ডের সামনে থাকা একটি বক্সের মধ্য হতে কতগুলো পিন হাতে তুলে নিলেন। ওয়ান্টেড বোর্ডে একটি করে ছবি বোর্ডের একেকটি স্থানে রেখে পিন দিয়ে আঁটকে দিতে লাগলেন। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই ওয়ান্টেড বোর্ডে সকল ছবিগুলো পিন দিয়ে আঁটকে দিলেন। কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না যাবেদ। কমবেশ হলে-ও জানেন দু’জনেই ওয়ান্টেড বোর্ডে কেন ছবি টাঙানোর হয়? বোর্ডের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন যাবেদ। চারপাশে কি হয়ে চলেছে তা দেখার প্রয়োজন বোধ করছেন না তিনি।
ধ্যানে বিঘ্ন ঘটিয়ে প্রশ্ন করলেন অলিন;
-“আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি করছ! আর ওয়ান্টেড বোর্ডের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কি এমন পর্যবেক্ষণ করছ?”
অলিনের কথা শুনে সেই সাথে তাচ্ছিল্যতা যুক্ত করে অবজ্ঞার সূরে বলতে লাগলেন তাবিব;
-“কি আর করবেন তিনি। হয়তো রহস্যের সঙ্গে প্রেমালাপ শুরু করেছেন।”
বেশ কিছুক্ষণ পর ঠোঁটের কোণে বিজয়ের হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“তাবিব, অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস। রহস্যের সাথে প্রেমালাপ করতে করতে এক পর্যায়ে প্রেমটাও হয়ে গেলো। আর রহস্য প্রেমিকা আমাকে রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করলেন।”
ক্ষমার দৃষ্টিতে যাবেদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন তাবিব;
-“মাফ চাই ভাই! আমি তোর মতো এ-তো ট্যালেন্টপুলের বৃত্তি পাওয়া ছাত্র কখনোই ছিলাম না। তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে না বলে সোজাসাপ্টা বলে দে।”
একটি সুন্দর ও বিজয়ী হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে বললেন যাবেদ;
-“তা – তো বটেই।”
বেশ বিরক্তি মাখা চেহারা নিয়ে বলতে লাগলেন অলিন;
-“যাবেদ, কি হয়েছে তা খুলে বলো। এইরূপ রহস্যময় ভাবে কথাগুলো এখন বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। এবার এগুলো বন্ধ করো নয়তো আমি রুম ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”
অলিনের চেহারায় এক রাশ রাগের আভা ফুটে এসেছে। এবার মোটেই মজা করা ঠিক হবে না মনে মনে ভেবে নিলেন যাবেদ। তাই আর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে না বলে বলতে লাগলেন তিনি;
-“তবে আমার থ্রিডি চোখে দেখা ফুটেজটি চালু করা যাক।
গভীর রাত বলা বাহুল্য। একটি কালো অবয় বাড়ির মূল করিডোররের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। ডান হাতে একটি সিরিঞ্জ দেখা যাচ্ছে অপর হাতটি পকেটে পুরে রাখা। ধীরে ধীরে হেঁটে করিডোরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল কালো অবয়টি। হাতে থাকা সিরিঞ্জটি করিডোরে থাকা চাবি প্রবেশ করানোর ছিদ্রে কিছুটা পুশ করে দিলেন। অতঃপর সিরিঞ্জটি বের করে পকেটে পুরে নিলেন। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই তালাটি গলে যেতে আরম্ভ করল। কয়েক মুহূর্ত পেরিয়ে যেতেই অজ্ঞাত ব্যক্তি তার হাতদিয়ে দরজায় হাল্কা একটু জোর দিয়ে ধাক্কা দিতেই ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ তুলে খুলে গেল দরজা। ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন তিনি। ড্রয়িং রুম দিয়ে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠে চলেছেন অজ্ঞাত লোকটি। কয়েক মুহূর্ত হেঁটে উপরে উঠতেই দোতলার একটি রুমের সামনে এসে উপস্থিত হলেন তিনি। পকেট পুরে রাখা সিরিঞ্জটি বের করে আনলেন হাতে। পুনরায় দরজায় থাকা চাবি প্রবেশ করানো ছিদ্র স্থানে সিরিঞ্জটি প্রবেশ করিয়ে সম্পূর্ণ পুশ করে দিলো।
এবার আর সিরিঞ্জটি পকেটে পুরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না তিনি। ফলে সেখানেই ফেলে দিলেন সিরিঞ্জটি। পুনরায় কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই হাত দিয়ে হাল্কা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজাটি। রুমের ভেতরে প্রবেশ করলেন অজ্ঞাত লোকটি। রুমটি বেশ সজ্জিত অবস্থায় আছে। খাটের উপর একজন মধ্যবয়সী পুরুষ ঘুমিয়ে আছেন। ধীর পায়ে হেঁটে অজ্ঞাত লোকটি তার সামনে উপস্থিত হলেন। মাঝবয়েসী লোকটির গালে সজোরে একটি চড় দিলেন তিনি। হকচকিয়ে উঠলেন ঘুমিয়ে থাকা লোকটি। এদিক-সেদিক খুঁজতে লাগলেন তাকে কে চড় দিয়েছেন তা দেখার জন্য। হঠাৎ তার বিছানার পাশে কালো হুডি পরিধেয় এক অজ্ঞাত লোক দেখতে পান। হাতে তার চকচক করছে একটি ছুরি। রুমে জ্বলিত ড্রিম লাইটের আলো ছুরিতে এসে পড়ছে। যার ফলে চকচক করছে ছুরি। মধ্যবয়সী লোকটি ভয়ে কোকড়ে গেলেন। হুডি পরিধেয় লোকটিকে চিনার জন্য মস্তিষ্কে প্রেশার চালালেন কিন্তু মস্তিষ্ক তাকে সার্চিং ইরোর দেখাচ্ছে। মধ্যবয়সী লোকটি কোনো ভাবেই ভেবে পাচ্ছেন না হুডি পরিধেয় লোকটি রুমের ভেতরে অবস্থান নিলেন কিভাবে।
রুমের মধ্যে অবস্থিত একটি ছবির ফ্রেমে দু’টি মানুষ দেখা যাচ্ছে। দু’জনি মধ্যবয়সী বলা যায়। একজন পুরুষ অপরজন নারী। ছবির ফ্রেমে ব্যক্তি দু’টোর নিচে লেখা যাছে “সাদিক+তানিয়া”। ফ্রেমে থাকা লোকটির চেহারার সাথে মিলে যাচ্ছে রুমে ভয় পাওয়া মধ্যবয়সী লোকটির সাথে। সেই হিসেবে লোকটির নাম সাদিক।
হঠাৎ করেই হুডি পরিধেয় লোকটি হাতে থাকা চাকু দিয়ে সাদিকের ডান কাঁধে পোঁচ বসিয়ে দেয়। দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পরতে থাকে বিছানায়। মিস্টার সাদিক নিজের অপর হাতটি দিয়ে চেপে ধরে কাটা স্থানটি। তবে কাটা স্থানের চাইতে তার হাতের পরিমাণ ছোটো হওয়ার ফলে কাটা স্থানটি হাত দিয়ে সম্পূর্ন আবদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না তার। রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবেন সাদিক। কিন্তু তার পূর্বেই তার বুকের উপর বুটজুতো পরিধান করা পা দিয়ে সজোরে আঘাত করলেন হুডি পরিধেয় লোকটি। উক করে আওয়াজ তুলে ছিটকে কয়েক হাত দূরে উড়ে গিয়ে পড়লেন সাদিক। সেদিকে তোয়াক্কা না করে হুডি পরিধেয় লোকটি সাদিকের সামনে গিয়ে বুকের উপর একের পর এক লাথি দিয়ে চলেছেন। প্রতিটি লাথি যেনো বুকের হাড়গোড় এক স্থানে থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। বুকের খাঁচার হাড় হয়তো কয়েকটি ইতিমধ্যে ভেঙেও গেছে। হঠাৎ করে লাথি থামিয়ে নেন হুডি পরিধেয় লোকটি। পকেট থেকে একটি ব্লেড করে করে আনলেন। ড্রিম লাইটের আলোতে চিকচিক করছে ব্লেড। ব্লেডটি হাতে নিয়ে জামা-কাপড়গুলোতে পোঁচ চালালেন এক দফা। কয়েক মুহূর্ত এভাবে যেতেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে যায় সাদিকের দেহটি। অতঃপর ব্লেডটি বামহাত থেকে ডানহাতে স্থানান্তর করে নেন হুডি পরিধেয় লোকটি।
শক্ত করে ধরলেন ব্লেড ও ছুরিটি। অতঃপর একাধারে পোঁচ দিয়ে চলেছেন সাদিকের দেহে। মেঝেতে রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। গলাকাটা মুরগীর মতো কাতরাচ্ছেন সাদিক। দেহের রক্ত দিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে মেঝে। হুডি পরিধেয় লোকটির চেহারায় পৈশাচিক শান্তির হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠেছে। অস্পষ্ট হলেও গভীর ভাবে বুঝা যাচ্ছে হুডি পরিধেয় লোকটির হাতে “Salt” লবণের প্যাকেট। সাদিকের একটি অণ্ডকোষ ব্লেডের পোঁচে নিজ স্থান থেকে সরে গিয়ে মেঝেতে পরে আছে। চিৎকার করতেছে সাদিক কিন্তু কোনো লাভ হবার নেই। সম্পূর্ণ বাড়িটাই তৈরি করা হয়েছে সাউন্ড প্রুফ। বাহিরের শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না আবার ভেতরে শব্দও বাহিরে যেতে পারে না।
হুডি পরিধেয় লোকটির ডান হাতে ধারালো ব্লেডটি চিকচিক করছে তবে রক্তের আভায় কিছু স্থান চিকচিক করছে না। হুডি পরিধেয় লোকটির বাম হাতে রয়েছে লবণের প্যাকেটটি। ডান হাত উঁচু করে ব্লেডের ধারালো অংশ দিয়ে লবণের প্যাকেটটির মুখ কেটে ফেললেন তিনি। ডান হাতে থাকা ব্লেডটি পকেটে পুরে নিয়ে পকেট থেকে হাত বের করে আনলেন। অতঃপর লবণের প্যাকেটে ডানহাত প্রবেশ করিয়ে একমুঠো পরিমাণ লবণ বের করে আনলেন। উক্ত লবণগুলো সাদিকের দেহের উপর ছিটিয়ে দিতে লাগলেন। চিৎকার করতে লাগলেন সাদিক কিন্তু বিন্দু পরিমাণ মায়া হলোনা হুডি পরিধেয় লোকটির মনে। হুট করেই ডান পা উঁচিয়ে নিম্নাঙ্গে সজোরে একটি লাথি দিলেন। ওঁক করে একটি আওয়াজ করে কাঁপতে কাঁপতে লাগলেন সাদিকের দেহ। ধীরে ধীরে সাদিকের নিশ্বাস ভারী হতে লাগল। দু-চোখ দিয়ে কেবল অন্ধকার দেখছেন তিনি। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
এখানেই থ্রিডি চোখের ফুটেজ ব্যাখ্যা করা বন্ধ করলেন যাবেদ। তাবিব ও অলিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। এতোকিছু কিভাবে তার মাথায় এলো ভেবে পাচ্ছেন না তারা। এরূপ ভাবে বর্ণনা করতেছিলেন যাবেদ। তাদের মনে হচ্ছিল যাবেদ নিজেই খুন হওয়া স্থানে উপস্থিত ছিলেন। অথবা সে নিজেই খুনটি করেছেন। কিন্তু দু’টোর একটি হওয়াও সম্ভব নেই। যাবেদকে বড্ড কাছ থেকেই জানেন তারা। তারা দ্বারা বহুকিছু সম্ভব হলেও এই কাজটি করা অসম্ভব। কিন্তু বর্ণনা অনুযায়ী কিছুটা সন্দেহের ঝোঁক বসেছে তাদের মনে। অতি সন্দেহের জোরে প্রশ্ন না করে থাকতে পারলেন না তাবিব। যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন তিনি;
-“আমি বুঝতে পারছি না একটা মানুষ এতটা নিখুঁত ভাবে একটা খুনের বর্ণনা কি করে দিতে পারে।”
তাবিবের কথায় সায় দিয়ে বলে উঠলেন অলিন;
-“বলার ভঙ্গিমা এতটাই গভীর ছিলো কোনো হার্ট দুর্বল লোকের সামনে বললে নিশ্চয় সে হার্টেটাকে মারা যেত। এতটা নিখুঁত ভাবে বর্ণনা দেওয়া যায় কেবল তখনই যখন ব্যক্তি নিজে উপস্থিত থাকে অথবা সে নিজে কর্মটি করে।”
বেশ বিরক্তি মাখা ভাব চেহারায় ফুটিয়ে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-“বলা শেষ হয়েছে! নাকি আর কিছু বলবে? ক্রিমিনালকে ধরতে হলে গোয়েন্দা অথবা পুলিশ জ্ঞান দিয়ে নয় ক্রিমিনাল জ্ঞান দিয়ে ভাবতে হবে। হীরাকে কেবল হীরা দ্বারাই কাটা হয়। লোহাকে লোহা দ্বারাই কাটা হয়। ঠিক তেমনি ভাবে খুনিকে ধরতে হলে তার মতো ভাবতে হবে। আর থ্রিডি চোখ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ছবির সব এঙ্গেল থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং তার বিশ্লেষণ করা যায়। আর কিছু জানতে চাও?”
মুখ তুলে তাকালেন না তাবিব ও অলিন। বড্ড লজ্জা পেয়েছেন তারা এরূপ বোকামি প্রশ্ন করার জন্য। তবে তাদের গর্ব হচ্ছে যাবেদকে নিয়ে। যার কারণ হলো এতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন এবং এতটা মেধাবী একজন মানুষের সাথে কর্ম করতে পেরে। তাদের দু’জনকে চুপ থাকতে দেখে বাম হাত উঁচু করে ঘড়ির দিকে তাকালেন যাবেদ। ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বলতে লাগলেন তিনি;
-“তোমরা থাকো আমি চললাম। ইতিমধ্যেই ৫ টা ৩৭ বেজে গেছে। অলরেডি ৩৭ মিনিট লেট।”
এই বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে লিফটের দিকে হেঁটে চলে গেলেন তিনি। তাবিব সেখানে থাকার প্রয়োজন বোধ করলেন না ফলে তিনিও যাবেদের সঙ্গে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারা দু’জন সেদিকে যেতেই অলিন নিজেও হাঁটতে লাগলেন। লিফটের মাঝে তিনজন উপস্থিত হলেন। পুনরায় কাচের কি-বোর্ডে টাইপিং করলেন 41676। ছোট্ট লিফটটি উপর দিকে উঠতে লাগলো। কয়েক মুহূর্তে পেরিয়ে যেতেই থেমে গেল দরজাটি।” টিং ” করে শব্দ তুলে খুলে গেল দরজাটি। দ্রুত পায়ে লিফট ত্যাগ করলেন তিনজন।
,
,
,
—- ” ক্রাইম থ্রিলার ” —-
—- ” খুন ” —-
—- ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —-
চলবে
আপনাদের কি মনে হয়? হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোকটি কে? আসলেই কি খুনি যাবেদ? যদি খুনি যাবেদ না হয় তবে এতটা নিখুঁত ভাবে খুনটির বর্ণনা কিভাবে করলেন? আর যদি হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোকটি যদি যাবেদ হন তবে তার প্লান কি? কি করতে যাচ্ছেন তিনি?