খুন,পর্বঃ- ০৪

0
313

খুন,পর্বঃ- ০৪
যাবেদ খাঁন আবু বকর
(ক্রাইম থ্রিলার)

রাত ৩ টা ছুঁইছুঁই। রুমের ভেতর থেকে কেবল ভেসে আসছে মৃত্যুর আর্তনাদের শব্দ। মেঝেতে নগ্ন অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এক মধ্যবয়সী যুবতী। রক্তে লাল হয়ে আছে মেঝে। মধ্যবয়সী যুবতীর কণ্ঠ থেকে কেবল মৃদুস্বরে গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে কেবল। যুবতীর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হুডি পরিধেয় এক অজ্ঞাত লোক। রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলো এসে রুমের প্রবেশ করছ। যার ফলে রুমে হাল্কা আলোর আলপনা ফুটে উঠেছে। হুডি পরিধেয় লোকটির হাতে ধারালো ছুরি রয়েছে যা সোডিয়াম লাইটের আলোতে চিকচিক করছে। ছুরিতে গায়ে ভেসে আসা আলো লাগতেই তা প্রতিফলন ঘটিয়ে রুমের অন্যস্থানে আলোটি ভাসছে। সেই সাথে আলোর প্রতিফলনের ফলে ছুরির ধারালো পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে।

যুবতী মেয়েটি উলঙ্গ অবস্থায় মেঝেতে পড়ে মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরে চলেছেন। দেহে হাজারো ছুরির আঘাতের দাগ লেগে আছে। তবে আঘাতগুলো কেবল কোমড়ের নিচ থেকে পা পর্যন্ত এবং কাঁধ থেকে হাতের কব্জি পর্যন্ত আঘাত করা হয়েছে। আর উক্ত আঘাত করা স্থানগুলো থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। হুডি পরিধেয় লোকটির ঠোঁটের কোণে এক রাশ বিজয়ের হাসি ফুটে উঠেছে। অজ্ঞাত লোকটির হাতে থাকা ছুরিটি একবার ডানহাতে আরেকবার বামহাতে নিয়ে স্থানান্তর করছেন প্রতিনিয়ত। কি চাচ্ছেন তিনি সেটা বোঝা বড় দায় তবে এভাবে তিনি বেশ মজা পাচ্ছেন তার চেহারায় তা ফুটে উঠেছে। অজ্ঞাত লোকটি ধীর পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলেছেন মেঝেতে পরে কাতরাতে থাকা মধ্যবয়সী যুবতীর দিকে। হেঁটে হেঁটে গিয়ে মাথার যুবতীর মাথার কাছে বসলেন।

মধ্যবয়সী যুবতীর নামটি বাড়ির নেমপ্লেট দেখলে পাওয়া যায় সৈয়দা তামান্না খাঁন। হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোকটি সৈয়দা তামান্না খাঁনের মাথার কাছে বসতেই ভয়ে জমে গেলেন তিনি। একবিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছেন না তিনি। আঘার করা প্রতিটি হাত-পায়ে সহস্রাধিকের চাইতেও অধিক পরিমাণে ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে যা দিয়ে প্রতিনিয়ত ফিনকি দিয়ে রক্ত নির্গত হয়ে চলেছে। অবশ্য বুক থেকে নিম্নাঙ্গ পর্যন্ত তেমন কোনো আঘাত নেই বললেই চলে। হুডি পরিধেয় লোকটি সৈয়দা তামান্না খাঁনের মাথার কাছে বসতেই ভয়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে কিছু একটা বলতে চাইলেন তিনি। কিন্তু তিনি জিহ্বা বের কিছু বলতে যাবার পূর্বেই অজ্ঞাত লোকটি বাম হাত বাড়িয়ে হাতের মুঠোয় জিহ্বাটি আবদ্ধ করে নিলেন। সোডিয়াম লাইটের আলোতে চকচক করা ছুরিটি হাতের মাঝেই ঘোরাতে লাগলেন অজ্ঞাত লোকটি। “উমমম উমমম” শব্দ করতে লাগলেন তামান্না খাঁন কিন্তু সেদিকে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান দিলেন না অজ্ঞাত লোকটি। হঠাৎ করে ছুরি ঘোরানো বন্ধ করে দিলেন অজ্ঞাত লোকটি।

আচমকা ডান হাতে থাকা ছুরিটি দিয়ে তামান্না খাঁনের জিহ্বার গোড়ায় চালিয়ে দিলেন অজ্ঞাত লোকটি। লোকটির বাম হাতে সৈয়দা তামান্না খাঁনের কাটা জিহ্বার টুকরো চলে এলো। গড়াগড়ি খেয়ে কাতরাতে লাগলেন তামান্না খাঁন। জিহ্বার টুকরো অংশটুকু মাথার কাছেই ফেলে রাখলেন অজ্ঞাত লোকটি। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন সৈয়দ তামান্না খাঁনের কাতরানোর ভঙ্গিমা। এতে তার চেহারায় বেশ আনন্দের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। তামান্না খাঁনের দেহের দিকে কামনা যুক্ত ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি। হঠাৎ কি মনে করে যেনো তামান্না খাঁনের মাথার কাছ থেকে হেঁটে পায়ের দিকে যেতে লাগলেন অজ্ঞাত লোকটি। বুট জোতার পদদলিতর ফলে ঠকঠক শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে রুমের মাঝে। হাঁটতে হাঁটতে তামান্না খাঁমের কোমড় পর্যান্ত এসে নিম্নাঙ্গের দিকে তাকিয়ে থেমে যান তিনি। ছুরি হাতে নিয়ে বসে পড়লেন সেখানেই। নিম্নাঙ্গের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনের গোপন কোঠরে কিছু একটা ভেবে চলেছেন তিনি।

হঠাৎ করেই ডান হাতে ধরে থাকা ছুরিটা শক্ত করে মুঠোয় আবদ্ধ করে নিলেন। তামান্না খাঁনেত জিহ্বা কেটে ফেলার ফলে মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে তলিয়ে যাচ্ছে মেঝে। তবে দেহটি কিছুক্ষণ পরপর কাঁপুনি দিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই তামান্না খাঁনের দেহে যা রক্ত ছিল তার প্রায় আশি ভাগ রক্ত দেহ থেকে নির্গত হয়ে মেঝে তলিয়ে গেছে। অজ্ঞাত লোকটি ছুরিটি হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে তামান্না খাঁনের নিম্নাঙ্গে ছুরি দিয়ে আঘাত করে সম্পুর্ণ ছুরিটি প্রবেশ করিয়ে দিলেন। অতি ধারালো ছুরি হবার ফলে নিম্নাঙ্গের চারপাশের মাংস চিড়ে পেটের গহীনে গিয়ে ঠেকছে ছুরির মাথা।

কাঁপতে লাগলেন সৈয়দা তামান্না খাঁনের দেহটি। একটি টান দিয়ে পুরো ছুরিটি বের করে আনলে আঘাত হানা স্থান থেকে। হঠাৎ করেই অজ্ঞাত লোকটি উন্মাদনায় মথুরা হয়ে তামান্না খাঁনের পেট থেকে বুক পর্যন্ত একের পর এক ফলা কেটে যাচ্ছেন। জিহ্বা কেটে ফেলায় তেমন কোনো আওয়াজ করতে পারছেন না তিনি। সেই সাথে তামান্না খাঁনের হিতাহিত জ্ঞান নেই বললেই চলে। আঘাতের পর আঘাত খেয়ে অবচেতন হয়ে গেছেন তিনি। হঠাৎ আঘাত করা থামিয়ে দিলেন অজ্ঞাত লোকটি। নিম্নাঙ্গের স্থান থেকে উঠে এসে মুখের কাছে পুনরায় বসে পড়লেন। হাতে থাকা ছুরিটি শক্ত করে ধরে উপর দিকে উঁচু করে সৈয়দা তামান্না খাঁনের মুখের ভেতরে আঘাত হানলেন তিনি। “টাসস” একটি করে শব্দ হলো কেবল। ছুরির আঘাতে হয়তো তামান্না খাঁনের চোয়াল থেকে দাত ভেঙে গেছে। ছুরিটি সোজা ভাবে আঘাত হানার ফলে গলার ভেতরে প্রবেশ ছুরির মাথা। অধিক শক্তি দিয়ে আঘাত করার ফলে এবং অধিক পরিমাণে ধারালো ছুরি হওয়ায় ছুরিটি তামান্না খাঁনের গলা ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে ঘাড় ভেদ করে অপর পৃষ্ঠ দিয়ে বাহির হয়ে গেছে ছুরির মাথাটি। সৈয়দা তামান্না খাঁনের দেহটি দু’টি ঝাঁকি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল মুহূর্তেই।

খ্যান্ত হয়ে যায়নি অজ্ঞাত লোকটি। তামান্না খাঁনের পেটের উপর থেকে গলা পর্যন্ত একের পর এক আঘাত করেই চলেছেন। অতিব আঘাতের ফলে তার পেটের ভেতর থেকে নাড়িভুঁড়িগুলো বেরিয়ে এসেছে।
রক্তের ছিটাগুলো পিচকারির মতো এদিক-সেদিক করে ছড়াতে লাগল। তরল রক্তগুলো ছিটকে বেরিয়ে যাবার ফলে ইতিমধ্যেই হুডি পরিধেয় লোকটির পরিহিত জামা-কাপড়ে লেগে গিয়েছে। রুমের ভ্যাপসা গন্ধ তার সাথে যুক্ত হয়েছে রক্তের নেশায়ময় ঘ্রাণ। দু’টি গন্ধ এক হয়ে যাবার ফলে রুমের মাঝে তৈরি হয়েছে এক ভিন্নমত ভেটকা গন্ধ।

হুডি পরিধেয় লোকটি ছুরি দিয়ে আঘাত করা বন্ধ করে দিলেন। ছুরিটি পকেটে পুরে উঠে দাঁড়ালেন। রুম ত্যাগ করার জন্য বাহিরে পা বাড়াতেই হঠাৎ কি মনে করে পুনরায় তামান্না খাঁনের দেহের কাছে ফিরে এলেন। পুনরায় সৈয়দ তামান্না খাঁনের নিথর হয়ে যাওয়া দেহটির বুকের কাছে বসে গেলেন। পকেট থেকে ছুরিটি বের করে এনে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বুকের উপর কিছু একটি লেখতে লাগলেন। ছুরি দিয়ে লেখার কার্য শেষ করে পুনরায় পকেটে ছুরিটি পুরে নিলেন। ধীর পায়ে হেঁটে রুমের দরজা দিয়ে বাহিরে যেতে লাগলেন। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই তামান্না খাঁনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলেন। নির্জন রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোর নিচ দিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি। সোডিয়াম লাইটের আলোতে কেবল তার ছায়াটাই রাস্তার পিচে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে বুট জুতার পদদলিতে ঠকঠক আওয়াজ তুলে হেঁটে হেঁটে হারিয়ে যেতে লাগলেন অন্ধকারের গহীনে। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সুনসান রাস্তায় কারোই উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ রাস্তাই ফাঁকা। না মিলছে কোনো মানুষের দেখা আর ন মিলছে একটু আগে হেঁটে যাওয়া অজ্ঞাত লোকটির।

ঘুমিয়ে ছিলেন যাবেদ ও তাবিব। হঠাৎ বিছানা কাঁপতে থাকার ফলে ঘুম ভেঙে গেল যাবেদের। বিছানা কাঁপানোর কারণ খুঁজে চলেছেন তিনি। বিরক্তি এখন তার চরম সীমায়। সকালের স্বাদের ঘুমে যদি কেউ শান্তিভঙ্গ করে তবে বিরক্তি আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রেগে গিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। ভেবেছিলেন আজ-ও হয়তো তাবিবের ফোন বাজতেছে। মনে মনে তিনি ঠিক করে নিলেন,যদি আজ তাবিবের ফোন বাজে তবে তাবিবের অবস্থা বেহাল করবে সেই সাথে তার ফোনটাকেও বিদায় জানাবে তাদের মধ্য থেকে। কিন্তু তার সকল মৌনভাব ভেঙে গেল তখনই যখন তাবিবের ফোন হাতে নিলেন তিনি। তাবিবের ফোন হাতে নিয়ে তিনি বেশ অবাক হয়ে যান। নাহ কোনো কল আসেনি তাবিবের ফোনে।

হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার, তার ফোনটিও সঙ্গে করে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। দ্রুত বেগে ছুটে গিয়ে বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটি হাতে নিলেন। ফোনটি হাতে নেওয়া মাত্রই নিস্তেজ হয়ে গেল ফোনটি। সাটার অফ হয়ে যাওয়ার ফলে ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ প্রয়োগ করলেন। স্ক্রিনে কিছু দেখার পূর্বেই পুনরায় ফোনটি কেঁপে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখতে পেলেন যাবেদ। একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। তা দেখে রীতিমতো বেশ রেগে গেলেন তিনি। মনে মনে ঠিক করলেন তিনি। ফোন ধরেই ফোনকৃত ব্যক্তিকে আচ্ছা মত ঝাড়ি দেবেন। এই ভেবে কল গ্রহণ করতেই ওপাশ থেকে নারী কণ্ঠে রাগী স্বরে ভেসে এলো;
-“এতো সময় লাগে ফোনটি তুলতে। সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছি তারপরে-ও ফোন তোলার নাম নেই। কি করছিলে এতক্ষণ?”
তার মনোভাব কপি করে তার উপরেই রাগ দেখানো দেখে বেশ ভড়কে যান যাবের। ঠাণ্ডা গলায় বলতে লাগলেন তিনি;
-“আপনার পরিচয়টা একটু দেবেন কি? চিনতে পারছি না কে আপনি?”
ওপাশ থেকে এবার বেশ রাগী স্বরে ভেসে এলো;
-“চিনতে পারছ না! নাকি চিনেও না চেনার ভাব করছ?”
এবার বেশ কিছুটা রাগী কণ্ঠে জবাব দিলেন যাবেদ;
-“আমি আপনাকে চিনেও না চেনার ভাব করছি মানে? আপনি আপনার পরিচয় দেবেন! নাকি ফোন রাখব? এক – তো সকাল সকাল স্বাদের ঘুমটি ভাঙিয়ে দিলেন তার উপর কি উলটা-পালটা বকে যাচ্ছেন। হয়তো পরিচয় দেন নয়তো আমি ফোন রাখছি।”
অপর পাশ থেকে এবার মিষ্টি সূরে ভেসে এলো;
-“আমি অলিন। যাইহোক দ্রুত উঠে তৈরি হয়ে অফিসে চলে এসো। শহরে আরো একটি খুন হয়েছে।”
বেশ অবাক জড়িত কণ্ঠে জবাব দিলেন যাবেদ;
-“কি বললে! শহরে আবারও খুন হয়েছে। বুঝতে পারছি না আজকাল খুন করা কি কোনো ট্রেন্ড নাকি?”
-“সে যা হবার হবে। তা দেখা যাবে। এখন তোমার কলিজার বন্ধু তাবিবকে সাথে নিয়ে দ্রুত অফিসে চলে এসো। ফোন রাখছি।”

এই বলে ফোনটি কেটে দেন অলিন। হাত থেকে বিছানায় ফোন রেখে দিলেন যাবেদ। বিছানায় ফোনটা রেখেই ঠাস করে একটি চড় দিলেন তাবিবের গালে। পুরোনো দিনের মতো আজকেও ব্যাচারা চড় খেয়ে হকচকিয়ে উঠলেন। তার সামনে রাগী চেহারায় যাবেদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিশ্চিত হন চড়টি যাবেদ দিয়েছে। পুরনো স্মৃতিচারণ করতে লগলেন তাবিব। কাল রাতে তো কোনো অপকর্ম করেনি তবে এই চড়টা কিসের জন্য। ভেবেছিলেন রাগী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করবেন যাবদকে কিন্তু যাবেদের রাগী চেহারা দেখে ব্যাচারার অভিনয়টুকুও শেষ।
কিছুটা ক্রন্দন কন্ঠে যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন তাবিব;
-“ভাই! আমার জানামতে কাল রাতে কোনো অপকর্ম করিনি। তবে এখন চড় খাবার কারণ?”
বেশ রাগী ভাব নিয়ে বলতে লাগলেন যাবেদ;
-” তা পড়ে পড়ে যে ঘুমাচ্ছিস দিন-দুনিয়ার খবর রাখছিস? আজকে আবারও আরেকটা খুন হয়েছে। তোর ম্যাম অলিন ফোন করে জানালেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে অফিসে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। আমি খাবার তৈরি করছি।”

দ্রুত বিছানা ত্যাগ করলেন তাবিব। ইতিমধ্যেই ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেছেন যাবেদ। ওয়াশরুম থেকে যাবেদ বের হতেই ভেতরে প্রবেশ করলেন তাবিব। যাবেদ নিচে গিয়ে খাবারের সকল বন্দবস্ত করে ফেললেন। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই নিচে নেমে এলেন তাবিব। চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। খাওয়া অবস্থায় উৎসুক কণ্ঠে যাবেদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখলেন তাবিব;
-“আজকাল খুন-খারাবি বেশি বেশি হয়ে চলেছে মনে হচ্ছে?”
গম্ভীর ও কিছুটা ধীর কণ্ঠে জবাব দিলেন যাবেদ;
-“আমি আগেই বলেছি। আজকাল খুন হয়ে গেছে ট্রেন্ড। এটা চলতেই থাকবে। একটা থামাবে তো নতুন আরেকটা শুরু হবে।”
-“হ্যাঁ! তাইতো দেখা যাচ্ছে।”

ইতিমধ্যেই কথা বলতে বলতে খাবার শেষ করে ফেলেছেন দু’জন। খাবার পর্ব শেষ করে বাসায় তালা দিয়ে গ্রেজ থেকে গাড়ি বের করে তাতে চড়ে বসলেন দু’জন। গাড়ি ড্রাইভ করছেন যাবেদ। গতি,ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছেন সামনের দিকে। লক্ষ্য কেবল দ্রুত অফিসে অবস্থান করা। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতেই অফিসের সামনে এসে উপস্থিত হলেন দু’জন। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রেখে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন যাবেদ ও তাবিব। দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছেন অফিসের দিকে। অফিসের মেইন করিডোর দিয়ে প্রবেশ করলেন তারা। বামদিকে একটি মোড় নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে চলেছেন। কিছুসময় অতিবাহিত হতেই মিস অলিনের রুমের সামনে উপস্থিত হলেন। নক করলেন যাবেদ এবং জানতে চাইলেন ভেতরে প্রবেশ করবেন কি না।
ভেতর থেকে জবাব দিলেন অলিন;
-“হ্যাঁ এসো।”
ভেতরে প্রবেশ করতেই রাগী কণ্ঠে যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন অলিন;
-” তা আমার রুমে প্রবেশ করতে অনুমতি প্রয়োজন হয় কবে থেকে?”
আমতাআমতা করে জবাব দিলেন যাবেদ;
-“না মানে। যদি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকেন তাই নক করে আসা।”
-“পরবর্তী সময় থেকে যেনো এগুলো আর না হয় সেদিকে আচ্ছা করে খেয়াল রাখবে।”
-“আচ্ছা মনে থাকবে। তো চলো আজকে খুন হওয়া স্থানটি থেকে ঘুরে আসা যাক।”
-“হ্যাঁ! দাঁড়িয়ে থেকে লাভ হবে না।”

বোকার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দু’জনের কথা-বার্তা শুনছিলেন তাবিব। কিছুই যে বলার নেই তার। আপাতত তার কাছে দেখে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পন্থা নেই। দ্রুত রুম ত্যাগ করলেন তারা। উদ্দেশ্য খুন হওয়া স্থানটি। ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে বিষয়গুলো নিয়ে। ফেসবুক,মেসেঞ্জার,টুইটার,ইউটিউব,ইন্সটাগ্রাম,ভাইবার,হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদিগুলোতে দেশের জনগণ ঝড় তুলে ফেলেছেন ঘটনাটি নিয়ে। কিছু মানুষ সঠিক নিউজ টেলিকাস্ট করছেন আবার কিছু অমানুষ ছড়াচ্ছেন গুজব।
যদি ঘটে এক ইঞ্চি তবে রটে যাচ্ছে কয়েক বস্তা সমপরিমাণ। ইতিমধ্যেই প্রতিটি টিভি চ্যানেল তাদের টিআরপি বাড়ানোর জন্য যে কোনো কিছু বলে যাচ্ছেন।
একে একে নৃশংস খুন হয়ে গেল দু’টি কিন্তু খুনির কোনো দেখা নেই।

কিছু সময় অতিবাহিত হতেই খুন হওয়া বাড়িটিতে উপস্থিত হলেন তাবিব,অলিন ও যাবেদ। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন তারা তিনজন। খুন হওয়া বাড়িটিতে ইতিমধ্যেই ঘিরে আছেন পুলিশ। অলিনকে দেখা মাত্রই সকলে একত্রে স্যালুট জানালেন।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেতেই নাক সিটকিয়ে নেন অলিন। রক্তের ভ্যাপসা গন্ধ এক মারাত্নক মাদকতার আনন্দ দিচ্ছে। সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলেন তারা তিনজন। ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে ফরেনসিক বিভাগের মহিলা ডাক্তারগুলো। ভেতরে প্রবেশ করে উলঙ্গ অবস্থায় একটি রক্তাক্ত দেহ দেখে লজ্জায় দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করেন অলিন। একটি সাদা কাপড় এনে দেহটিকে ঢেকে দেয়ার জন্য বলেন তিনি। কিছু সময় পরেই একজন মহিলা ডাক্তার হাতে সাদা একটি কাপড় এনে ঢেকে দিতে লাগলেন। এমতাবস্থায় রুমে প্রবেশ করেন যাবেদ ও তাবিব। এতক্ষণ দেহের সামনে যায়নি তারা দু’জন। আসে পাশেই ঘেটেঘুটে দেখেছিলেন দু’জন। সেই সাথে যাবেদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থানগুলো ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছেন তাবিব। প্রতিটি স্থান গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন যাবেদ। সাদা কাপড় দিয়ে লাশটি ঢাকতে নিলেই আচমকা দেহটির দিকে আচমকা চোখ যায় যাবেদের। দ্রুত তাদেরকে কাপড়টি একটু সড়াতে বললেন। ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারগুলো তাদেরকে এরূপ ভাবে রুমে প্রবেশ করতে দেখে বেশ রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবেন এমন সময় রুমে উপস্থিত হলেন অলিন। ডাক্তারগুলো তাকে দেখে স্যালুট জানায়। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন;
-“কি হয়েছে এখানে? রাগী ভাব চেহারায় ফুটে আছে কেন?”
-“এরা দু’জন এখনে এসে প্রবেশ করেছে অনুমতি না নিয়েই। তার উপরে সাদা কাপড় দিয়ে দেহটি ঢাকতে নিলে বাঁধা প্রয়োগ করেন।”
-“তুমি জানো এরা কার সাথে এসেছে?”
কিছুটা বিচলিত হয়ে জবাব দিলেন;
-“আসলে না।”
-“এরা দু’জন আমার লোক। যাইহোক কি হয়েছে যাবেদ?”

একটু গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলেন;
-“আসলে দেহটির বুকের উপর কিছু একটা লেখা ছিলো যেটা দেখার জন্য তাদেরকে কাপড়টি সরাবার জন্য বলেছিলাম।”
-“আচ্ছা যাইহোক। কাপড়টা বুক পর্যন্ত উন্মুক্ত কর।”
,
,
,
—- ” ক্রাইম থ্রিলার ” —-
—- ” খুন ” —-
—- ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —-

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here